0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-২৫৫



পরিচয়(২৫৫)(সিজন-৯)

 

ভালো আছে তো? চয়নিকা অয়নকে কল করতে যাবে এমন সময় কল করলো আবির । কল ধরেই চয়নিকা বলল, “কি ব্যাপার, হঠাৎ কল দিলে যে?” আবির তখন কোম্পানির ভবনে নিজের রুমে চেয়ারে বসে আছে । জবাবে হালকা হাসিমুখে বলল, “এমনি, কাজ শেষে একটু বসেছি, তাই তোমার সাথে কথা বলার জন্য করলাম ।” চয়নিকা হেসে উঠলো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “এতে হাসির কি হল?” চয়নিকা বলল, “না, বাসায় থাকলে তো ঝগড়া করো, তাই আমার কথা হঠাৎ ভাবছো তাই হাসলাম আর কি ।” আবির বলল, “শোনো, ঝগড়াও ভালবাসার আরেকটা রূপ ।”

রান্নাঘরে পুরনো দিনের বাংলা গান শুনতে শুনতে কাজ করছিল জরিনা । মাঝে মাঝে সুরটা তোলারও চেষ্টা করছিলো । এমন সময় নিশান গেলো রান্নাঘরে । পাশেই একটা চেয়ারে বসে বলল, “হোয়াট আর ইউ লিসেনিং জরিনা আপু?” জরিনা তরকারি চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে একবার নিশানের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, “ছোডো ভাইয়া, মুই তো আগেই কইছি, ইংরেজি পারি না আমি ।” নিশান হালকা লজ্জা পেলো । লজ্জাসুচক হাসি নিয়ে বলল, “সরি আপু, আসলে লন্ডনে প্রায় সময় ইংরেজিতে কথা বলতে হয় তো, তাই  । খেয়াল থাকে না । এনিওয়ে, কি গান শুনছো?” জরিনা বলল, “এইতো ছোডো ভাইয়া, পুরানা আমলের বাংলা গান ।” নিশান বলল, “ওওও, তুমি কি এখন বিজি? আই মিন ব্যাস্ত?” জরিনা বলল, “হ ভাইয়া, দেখ না, কত কাম করি, কেন?” নিশান বলল, “না এমনি, আমাকে কেউ টাইম দিচ্ছে না । নানা ঘুমাচ্ছেন, অয়ন মামা-ও বিরক্ত হচ্ছেন । আ’ম বোরড । আমার অনেক বোরিং লাগছে ।” জরিনা বলল, “আইচ্ছা, তুমি তাইলে যাইয়া একটু টিভিত কার্টুন দ্যাহো, আমি কাম শেষ হইলেই তোমার লগে কথা কমুনে, ঠিক আছে?” নিশান ডানে মাথা কাত করে সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো, কিন্তু ওকে দেখে মনে হয় না ও তেমন খুশি হয়েছে । জরিনার গান হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো । এসে দেখল মোবাইলের চার্জ শেষ । জরিনা মোবাইলটা চার্জে দিল, কিন্তু অন না করেই আবার কাজে চলে গেলো । এদিকে নিশান টিভির রুমে যেয়ে টিভি অন করলো, কিন্তু দেখতে ইচ্ছে করছে না । দেখার মতো কিছু এখন হচ্ছেও না । বাসায় গেলেও মা এখন রান্না করবে, মা-ও সময় দিতে পারবে না । বাবা তো কোম্পানিতে, আর নানি লন্ডন । ঢাকায় ওর চেনা কেউ নেই-ও । লন্ডনে কিছু বন্ধু ছিল, এখানে তাও নেই । অনেক একা একা লাগছে নিশানের । মা বাবা যখন হানিমুনে ছিল, তখনও একা একা লাগতো, এখনও একা একা লাগছে । বরং কষ্টটা এখন বেশি লাগছে । তখন দূরে ছিল, আর এখন যেন কাছে থেকেও কাছে নেই । নিশানের মনে হচ্ছে কেউ যেন ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না । এমন সময় ওর মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধির উদয় হল । মনে মনে নিজেকে বলল, “আমার কথা কেউ ভাবছে না । এখন যদি আমি হারিয়ে যাই তখন সবাই আমার কথা ভাববে । হ্যাঁ! আমি এখন অনেক দূর চলে যাবো, সপ্তাহ দুই পর আবার ফিরে আসবো । তখন দেখি, এরা আমায় পাত্তা না দিয়ে কীভাবে থাকে ।” তারপর-ই দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো নিশান । লিফট দিয়ে নেমে গেইট দিয়ে বেড়িয়ে গেলো । নিশান যতদিন হল এসেছে বাংলাদেশে, ওদের এলাকার বাইরে কখনোই যায় নি । তাই এখন ও সিদ্ধান্ত নিলো, এলাকার বাইরে বহুদুর চলে যাবে । বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে ফুটপাত দিয়ে হাটতে লাগলো । কত বিচিত্র রকম মানুষ, দেখতে একেক রকম । লন্ডনেও এতোটা বিচিত্রতা হয়তো ও দেখেনি । আগে মা বাবা কিংবা নানা নানির সাথে বেরনোয় সেভাবে খেয়াল করে নি নিশান, এখন ও একা, সব ভালো মতো দেখছে ও । কেউ কালো, কেউ ফর্সা, কেউ খাটো, কেউ লম্বা, কেউ পড়েছে প্যান্ট শার্ট, কারও গায়ে কোট প্যান্ট, কেউ আবার সালোয়ার কামিজ, কেউ বা শাড়ি, কেউ আবার বোরখা, কেউ আবার পায়জামা পাঞ্জাবী । সামনেই মসজিদ । প্রতি শুক্রবার বাবার সাথে এই মসজিদেই নামাজ পড়তে আসে নিশান । একবার মসজিদের সামনে দাঁড়ালো । ভেতর থেকে মসজিদের মাদ্রাসার ছাত্রদের সমস্বরে কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ আসছে । এই আওয়াজ মনের মাঝে এক অজানা আনন্দের আবির্ভাব করছে । নিশান মনের অজান্তেই বলল, “আলহামদুলিল্লাহ!” এমন সময় একজন মসজিদের ইমাম নিশানকে দেখে কাছে এসে বললেন, “আসসালামু আলাইকুম নিশান বাবু, কেমন আছো?” নিশান বলল, “আপনি আমায় সালাম দিলেন ওস্তাদজি? আমারই উচিত ছিল আপনাকে আগে সালাম দেয়া ।” ইমাম সাহেব হালকা হেসে বললেন, “না  না, এমন কোন নিয়ম নেই বাবা, যে খুশি আগে সালাম দিতে পারে । সেটা হোক বড়রা ছোটকে, বা ছোটরা বড়কে । তবে তোমায় যে সালাম দিলাম, জবাব টা যে দিলে না?” নিশান বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম ওস্তাদজি, সরি!” ইমাম সাহেব নিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “ঠিক আছে বাবা, ধীরে ধীরে এগুলো শিখতে হবে তোমায় এবং তুমি শিখেও যাবে ইন শা আল্লাহ । কিন্তু তুমি একা বাহিরে, মা বাবা কোথায়?”

“আচ্ছা ঠিক আছে রাখি ।” আবিরের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলার পর এই কথা বলে ফোন রাখল চয়নিকা । এমন সময় মনে পড়ল, ও নিশানের খোঁজ নিতে কল করতে গিয়ে আবিরের সাথে এতক্ষণ কথা বলল । তাড়াতাড়ি করে কল করলো অয়নকে । কল গেলো কিন্তু কল ধরল না । কারণ অয়ন গোসল করছে । চয়নিকা কল করলো ওর বাবাকে । কল গেলো, কিন্তু ধরল না । কারণ চয়নিকার বাবা ঘুমিয়ে গেছে । চয়নিকা কল করলো জরিনাকে, কিন্তু মোবাইল বন্ধ । চয়নিকা ভয় পেয়ে গেলো । হঠাৎ সবার মোবাইল অফ! নিশান ঠিক আছে তো?

 

আগামী পর্বেঃ

কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ কে যেন নিশানের কাধে হাত রাখলো । নিশান চমকে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল সেই লোকটা মুখে একটা কুৎসিত হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে । নিশান কিছু বলার আগেই লোকটা নিশানের মুখে রুমাল চেপে ধরল ।