পরিচয় পর্ব-২৬৫
পরিচয়(পর্ব-২৬৫)
মোহন শেখ এর বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হবার পর বেড়িয়ে যায় বিমল আর প্রকাশ । ওরা এতো রাতে কোথায় যাবে? মনে প্রশ্ন জানে নিশানের । নিশানের চেহারা দেখেই হয়তো নিশানের প্রশ্ন বোঝে মুন্নি । বলে, “ওরা তো এখানে সব সময় থাকে না, ওদের থাকার আরও ভালো একটা জায়গা আছে ।” নিশান শুধু, “ওওও…।” বলল । একটু পর ঘরের লাইটটা নিভে গেলো তারপর চারপাশে অন্ধকার ছাড়া কিছুই নজরে এলো না নিশানের ।
ওদিকে মোহন শেখ এর বাড়িতে পৌঁছে গেলো আবির আর অপু । বাড়ির সামনে মিডিয়ার লোকজনের ভিড় আর পুলিশের গাড়ি দিয়ে ভরা । অপুকে কিছু মিডিয়ার লোক পথ আটকে ধরলে অপু বলল, “দেখুন আমি মাত্র যাচ্ছি, কিছু হলে আমি আপনাদের জানাবো ।” বলে ঘরের দিকে গেলো অপু । সম্ভবত অপু না আসা পর্যন্ত আর কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় নি । অপুর জুনিয়র এক পুলিশ দরজার সামনেই ছিল । অপুকে দেখে স্যালুট করে বলল, “স্যার!” অপু জানতে চাইলো, “ভেতরে কি কেউ গিয়েছে?” লোকটা জবাব দিল, “না স্যার, আমাদের বলা হয়েছে আপনি আসা পর্যন্ত কাউকে যেন ঢুকতে না দেয়া হয় ।” অপু বলল, “ঠিক আছে, এখন কাউকে ঢুকতে দেবার দরকার নেই, আমি আর আবির যাচ্ছি । আপনি এখানেই থাকুন ।” বলে ভেতরে চলে গেলো অপু আর আবির । বাড়ি দেখলেই বোঝা যায় বিলাসিতার অন্ত নেই । ঢুকতেই এক কাজের লোক এগিয়ে এলো ওদের কাছে । ঠিক এগিয়ে এলো বললে ভুল হবে, এদিকেই আসছিলো হয়তো অন্য কোন কাজে, অপুর প্রশ্নে দাঁড়িয়ে গেলো । “আপনার নাম?” প্রশ্ন করেছিলো অপু । পাকা চুল ওয়ালা রোগা এবং বয়স্ক এই লোকটা জবাবে বলল, “যে, আমি আব্বাস! আব্বাস আখতার!” অপুর আবার জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি করেন এই বাড়িতে?” আব্বাস জবাবে বলল, “যে, আমি বাড়ির সব কাজ করি, শুধু রান্নাবান্নার জন্য আরেকটা লোক রাখা আছে, তা ছাড়া বাকি সব আমি-ই করি ।” আব্বাসের কথার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সে একটু ভয় পাচ্ছে । অপু ওকে নির্ভয় দিয়ে বলল, “ভয় পাবেন না, আপনার সাথে আরও কথা বলবো, তবে তার আগে আমাদের মোহন শেখ এর কাছে নিয়ে চলুন ।” আব্বাস ডানে মাথা কাত করে আবির আর অপুকে নিয়ে যেতে লাগলো মোহন শেখ এর রুমের দিকে । যেতে যেতে অপু জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা, এ বাড়িতে আর কে কে থাকেন?” আব্বাস বলল, “বড় সাহেব একাই থাকে ।” অপু আবার জিজ্ঞেস করল, “কেন? উনার স্ত্রী?” আব্বাস বলল, “আজ্ঞে উনার সাথে আফার ডিভোর্স হইয়ে গেছে । আফা এহন এইহানে থাহে না । ইন্ডিয়া থাহে ।” কথা বলতে বলতে রুমে পৌঁছে গেলো আব্বাস, অপু আর আবির । দরজা খুলে আব্বাস বলল, “সাহেব, আপনার লগে দেখা করতে একখান পুলিশ অপিসার আর একখান লোক আইছে ।” ভেতর থেকে “হুহ!” ধরণের একটা আওয়াজ এলো । হয়তো ইশারা করে ভেতরে আসার অনুমতি প্রদান করেছে, তা বোঝা গেলো আব্বাসের অপু আর আবিরকে ভেতরে যাবার কথা বলায় । অপু আর আবির ভেতরে গেলো । ঘরটা বেশ এলোমেলো । একপাশে বুকশেলফ, কিছু বই বোধ হয় রাগের বশে ফেলে দিয়েছে যার জন্য এলোমেলো হয়ে আছে । মেঝেতেও পড়ে আছে কিছু । অন্য পাশে একটা ডেস্কটপ । সেখানে মোহন শেখের মেয়ের ছবি । সেই ছবির দিকে চোখ রেখে বিছানায় যে লোকটা বসে আছে সে-ই হল মোহন শেখ । আবির আর অপু একদম অবাক হয়ে গেলো । তিনি বসে বসে মদ খাচ্ছেন, অথচ গত ঈদেই তার একটা নাটক বেড়িয়েছিল যেটা ছিল মাদকাসক্তির বিপক্ষে আওয়াজ তোলা নিয়ে । তার চুলগুলোও কেমন এলো মেলো । চেহারার অবস্থা খুব খারাপ । টিভির পর্দায় তো আর ওপর মেকআপ থাকে, তাই ভালো লাগে, এখানে অদ্ভুত । অপু বলল, “দেখুন আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি!” লোকটা কিছু না বলেই আবার মদ খাওয়া শুরু করল । অপু এগিয়ে যেয়ে লোকটার হাত থেকে মদের বোতল নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো । তারপর বিরক্তির সাথে বলল, “সেলিব্রেটি বলে ভাববেন না পুলিশ আপনাকে আটকাবে না!”
তন্দ্রা প্রায় চলে এসেছিলো নিশানের চোখে, কিন্তু এমন সময় ভেঙ্গে গেলো লাইট জ্বলার কারণে । এতো অল্প তেজের আলো হলেও চোখে বেশ লাগছে এই আলো । কারন এতক্ষণ অন্ধকারে ছিল যে । একটু পর প্রকাশ বিমল আর অন্য একটা লোক ভেতরে এলো । অন্য লোকটা বোধ হয় লাক্সমান । তার কাঁধে অজ্ঞান হওয়া একটা মেয়ে । নিশানের বুঝতে অসুবিধে হল না, এটাই সেই মোহন শেখের মেয়ে ।
আগামী পর্বেঃ
নিজের চেয়ারে বসে আবিরকে সামনে বসতে বলে বলল, “আ’ম সো সরি আবির, এমনিতেই তোর একটা টেনশন, তার ওপর আমি তকে সে বাড়িতে নিয়ে গেলাম ।” আবির বলল, “না, বিপদে শক্তি রেখে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হয় । আর সেখানে গিয়ে বোধ হয় আমি ব্যর্থ হই নি । আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পেয়েছি । আল্লাহ আমাকে পথ দেখাচ্ছেন ।” অপু জিজ্ঞেস করলো, “কি ক্লু?”