পরিচয় পর্ব-২৬৪
পরিচয়(পর্ব-২৬৪)
নিজেই পুরোটা খেলো ।
বাসায় ফিরতেই আবির দেখল দরজা তালা । বুঝল, চয়নিকা ওর বাবার বাড়ি গিয়েছে । চাবিও ওর কাছে । আবিরও গেলো সেখানে ।
“টিং টং!” কলিংবেলটা বেজে উঠলো । জরিনা “আইতাসি!” বলে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে দেখল আবির দাঁড়িয়ে । কলিংবেলের আওয়াজেই চয়নিকার ঘুম ভেঙ্গেছিল । উঠে বসলো চয়নিকা । আবির দেখল চয়নিকাকে তবে চয়নিকা বিপরীতমুখী হয়ে বসে থাকায় চয়নিকা এখনও দেখে নি আবিরকে । আবির ভেতরে এলো জরিনা জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া, ছুডো ভাইয়ের কোন খোঁজ পাইলেন?” আবির হালকা চয়নিকাকে খোঁচা মেরে বলল, “আমি তো ওর বাবা না, আমি কি করে খোঁজ পাবো ।” চয়নিকা কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে আবিরের দিকে তাকাল । তারপর দৌরে এসে আবিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আ’ম সরি আবির! আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দাও!” আবির চয়নিকাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল, “আগে নিশানকে খুজে নেই, তারপর তোমাকে দেখবো আমি ।” বলে অয়নের রুমে চলে গেল আবির । চয়নিকা কিছু বলল না । তবে এবার কাদলোও না ।
রাত প্রায় ৮টার দিকের কথা । বাড়িতে কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলল আবির । পুলিশ অফিসার অপু দাঁড়িয়ে । অপু ভেতরে এলো । অপু বলল, “সরি আবির, আসলে আমি খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই খোঁজ নিতে পারিনি । এখনও কাজই ছিল, তবু চলে এলাম । কোন খোঁজ কি পেয়েছিস?” আবির বলল, “না । পাইনি । আর বস না ।” অপু বসলো । অপুর কণ্ঠ শুনে অয়নও এলো রুমে । সাবিত বাসায় ফিরে গেছে আর আগে । আবির অয়নকে বলল, “অয়ন, জরিনা আপুকে বল কিছু চা নাস্তার ব্যাবস্থা করতে ।” অপু বলল, “না না, ব্যাস্ত হস না, আগে তদন্ত পরে সব । এবার বল, কারও কল আসে নি? মানে মুক্তিপণ চাওয়া নিয়ে?” আবির বলল, “আমার মনে হয় না এটা মুক্তিপণ নেয়া কোন সাধারণ ছেলেধরা ।” অপু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, “মানে?” আবির মারুফের কাছ থেকে শোনা সমস্ত ঘটনা খুলে বলল অপুকে । অপু সেসব শুনে বলল, “ও মাই গড! এ তো সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার! কিন্তু এই বিষ্ণুনাথ ব্যাপারটা কি?” আবির বলল, “সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না । তবে যেহেতু ভারতে ওদের পাচার করে দেয়া হবে ভারতের যারা এ চক্রের সাথে জড়িত তাদের লিডারের নাম হতে পারে এটা ।” অপু ওপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, “হুম, তা হতে পারে । ছেলেধরার কেস কিন্তু একটাই না, শহরে এই ব্যাপারটা নিয়ে আতংক বিরাজ করছে । মানে কি করে কি হচ্ছে সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না!” আবির বলল, “সন্দেহজনক কিছুই কি চোখে পড়ছে না?” অপু বলল, “সেটা হলেও তো হয়ে যেত । কিন্তু ছেলেধরারা যে কি করে এসব কাজ করছে, বোঝা মুশকিল ।”
এদিকে খাঁচার ভেতর সবাই বসে । আকাশ ঘুমিয়ে গেছে । মুন্নি আর স্বর্ণা ফিসফিস করে কি সব বলছে নিজেদের মদ্ধে । পারিবারিক কথাবার্তা হয়তো । ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কি বলছে ওরা । অন্তর মন খারাপ করে বসে আছে আর এক দৃষ্টিতে কি যেন দেখছে । নিশান সে দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো, দূরে সকালের বিমল মাস্তানের খাওয়া বিরিয়ানির এক টুকরো মাংস পড়ে আছে সেটার দিকেই তাকিয়ে আছে অন্তর । দেখে বেশ খারাপ লাগলো নিশানের । কিন্তু ও আর কি করবে, ও নিজেই তো এখন বন্দি । রুমে আর একজন ছিল । সে খাঁচার বাইরে । প্রকাশ । সুন্দর বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে । ঘরের লাইটটা এখন জলছে । বোধ হয় পড়ে বন্ধ করা হবে, অথবা লাইটের আলোর তেমন তীব্রতা নেই বলে বন্ধ করা হয় না । একটু পর হঠাৎ রুমে এলো প্রকাশ । এসেই বিমলকে ডাকতে ডাকতে বলল, “হেয়! শুন! বহত আচ্ছে এক খবর হেয়! লাক্সমান সেলিব্রেটির মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে ।” বিমল বলল, “তো কেয়া হয়েছে? আমার এতো আচ্ছা ঘুম তোড় দিয়া তুমনে ।” প্রকাশ বলল, “আরে! কাভি সোচা! আগার এই বাচ্চাকে হাম ভারত না নিয়ে যেয়ে মুক্তিপণ আদায় করি, তাহলে কত পেয়সা পাবো?” বিমল বলল, “কিউ? কেয়া সেলিব্রেটিরাই বড়লোক হয়? আর কত পেয়সাওয়ালা আদমিকা বাচ্চাকে আমরা ধরে এনেছি, তাদের পাস থেকেও তো পেয়সা লে সাকতে থে হাম ।” বিমল বলল, “হুম সেটাও ত ঠিক । যাই হোক সেলিব্রেটির বাচ্চারা কিতনা সুন্দর হয়, ওদের দাম পাওয়া যাবে বহত আচ্ছা ।” বিমল বলল, “এটা ত সাচ বাত, লেকিন সেলিব্রেটির বাচ্চা খোঁজ কারনে কেলিয়ে লোক বেশি হুঁশিয়ার থাকবে । যদি হাম পাকার গায়ে তো?” প্রকাশ কিছুক্ষণ হাসলো । তারপর বলল, “হামারা টিম কেয়সে কাম কারতে হেয় উও তো তুই জানিস না ।” আরও অনেক আলোচনা হল দুজনের মধ্যে ।
হঠাৎ ফোনে কল এলো অপুর । কল ধরতেই বলল, “স্যার! জি স্যার!............হোয়াট!.........ওকে স্যার!............ওকে স্যার, আমি তারাতারি পৌঁছে যাচ্ছি!” আবির জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে?” অপু বলল, “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা মোহন শেখ এর মেয়ে দুপুর থেকে নিখোঁজ! আমি না করতাম, কিন্তু ভাবলাম একই চক্রের কাজ হতে পারে, তাই আমি যেতে চাই!” আবির বলল, “আমি আপনার সাথে যেতে পারি?” অপু বলল, “অবশ্যই!” অয়ন বলল, “আমিও যাবো!” আবির বলল, “না, তুই বাসায় থাক । কিছু হলে আমি কল করে জানাবো ।” বলে আবির আর অপু বেড়িয়ে গেলো । মোহন শেখ এর বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
আগামী পর্বেঃ
অপু আর আবির ভেতরে গেলো । ঘরটা বেশ এলোমেলো । একপাশে বুকশেলফ, কিছু বই বোধ হয় রাগের বশে ফেলে দিয়েছে যার জন্য এলোমেলো হয়ে আছে । মেঝেতেও পড়ে আছে কিছু । অন্য পাশে একটা ডেস্কটপ । সেখানে মোহন শেখের মেয়ের ছবি । সেই ছবির দিকে চোখ রেখে বিছানায় যে লোকটা বসে আছে সে-ই হল মোহন শেখ । আবির আর অপু একদম অবাক হয়ে গেলো । তিনি বসে বসে মদ খাচ্ছেন, অথচ গত ঈদেই তার একটা নাটক বেড়িয়েছিল যেটা ছিল মাদকাসক্তির বিপক্ষে আওয়াজ তোলা নিয়ে ।