পরিচয়(পর্ব-২৪৭)
পরিচয়(পর্ব-২৪৭)(সিজন-৮)
আবির জিজ্ঞেস করলো, “কোন ডাক্তার?” রেহানা বলল,
“এইযে, আমাগো গেরামেই একখান ডাক্তার আছে, মইন ডাক্তার, হের কাছেই গেছিলাম ।” আবির তখন
জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, আপনাদের এই যে, জাইগীর দেখলাম, অতুল, ও কবে থেকে পড়াচ্ছে রাহেলাকে?”
সাবিনা বলল, “সে এবাউট ৫মাস হবে ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “আপনাদের কি………।” কিছু একটা
জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থেমে গেলো আবির । কারণ দরজা খুলে তখন ঘরে ঢুকেছে অতুল । আবির বলল,
“এই যে মিস্টার, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম ।” অতুল যেয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো ।
আবির জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, একটা প্রশ্ন, কিছু মনে করবেন না । আপনি এতো বাড়ি থাকতে
এই বাড়িতেই কেন উঠলেন, যেখানে কোন পুরুষ মানুষ নেই, ৪জন মহিলা থাকতেন, যার মধ্যে একজন
আবার অবিবাহিত ।” অতুল কিছু বলার আগেই সাবিনা বলে উঠলো, “না না, ও তো আমাদের ছেলের
মতো । হি ইজ সো গুড বয় ।” আবির বলল, “আমি কি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?” সাবিনা আবার
মাথা নিচু করলো । অতুল বলল, “দেখুন, আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, তাই বলছি, আমি সেরকম
নই বলেই এখানে এসেছি ।” আবির বলল, “কিন্তু
উনারা আপনাকে কেন রাখলেন, একজন অজানা অচেনা ছেলেকে?” কেউ কোন কথা বলে না, সবাই
নিরুত্তর । আবির তখন অতুলকে জিজ্ঞেস করলো, “এমন নয় তো, যে আপনি রাহেলাকে খুন করেছেন?”
অতুল এবার উঠে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল, “দেখুন! আমি মোটেও সেরকম নই, উনারা আমাকে
কেন তুলেছেন তার জবাব আপনারা উনাদের কাছ থেকেই নিন না, সামনের মাসেই আমি চলে যাবো,
তাই এসব উটকো ঝামেলায় আমি জড়াতে চাই না ।” বলেই দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ।
আবির একবার সুরুজ তালুকদারের সব বউয়ের দিকে তাকাল । তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার আজকের
কাজ শেষ, দরকার হলে আবার আসবো ।” রেহানা জিজ্ঞেস করলো, “বলছি কি, কিছু খেয়ে গেলেন না
তাই বলে?” আবির বলল, “বললাম তো, একদিন সুরুজ ভাই এর সাথে এসে খাবো ।” সাবিনা জিজ্ঞেস
করলো, “আমাদের হাজবেন্ড কথা এখন?” আবির হালকা হাসিমুখে বলল, “আছেন, ভালোই আছেন, সময়
হলে উনি ঠিকই ফিরে আসবেন ।” বলে আবির বেরোতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, “ও, ভালো কথা,
একটা কাগজ কলম দেয়া যাবে?” সাবিনা, “অবভিয়াসলি! ওয়েট এ মিনিট ।” বলে উঠে গেলো একটু
পর এক টুকরো কাগজ আর একটা কলম নিয়ে এলো । আবির তাতে নিজের ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে বলল,
“এটা আমার ফোন নাম্বার, কোন দরকার পড়লে কল করবেন ।” বলে বেড়িয়ে গেলো আবির । বাড়ির দরজা
দিয়ে বেড়িয়ে উঠোন পেড়িয়ে প্রাচীরের গেইট দিয়ে বেড়িয়ে একটা রিকশা ডাকতেই হঠাৎ আবিরকে
কে যেন ডাকলো । “ও ভাই! প্লিজ, একটু দাঁড়ান!” আবির তাকিয়ে দেখল, সাবিনা দাঁড়িয়ে । একটু
পর সাবিনা আবিরের দিকে এগিয়ে এসে আসেপাশে একটু তাকাল । তারপর প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল,
“ইউ নো, আমি আপনাকে একটা ইনফরমেশন দিতে এসেছি ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি ইনফরমেশন?”
সাবিনা বলল, “এই যে ছেলেটা আছে না, একে বাড়িতে নেয়ার ইচ্ছে কিন্তু আমার আর রেহানা আপার
একটুও ছিল না । এই মালেকা আপাই যতো এক্সট্রা ঢং করে ছেলেটাকে বাড়িতে থাকতে দিলো । আমরাও না করিনি । কিন্তু, এই মেয়ে এই ছেলের
সাথে খুব মিশতো, একজন হাজবেন্ড ও যেন তার ওয়াইফের
সাথে এভাবে মেলামেশা করে না । আমার মনে হয় কি, এই ছেলেটার সাথে রাহেলার কোন রিলেশন
ছিল, মালেকা আপা-ও জানত, তাই ছেলেটাকে এনে রেখেছিল । এইতো, মেয়েটা মরার আগের দিনও ওদের
মধ্যে ঝগড়া হতে শুনেছি আমি । আমার তো মনে হয়, এই অতুলই খুন করেছে রাহেলাকে! দেখলেন
না, আজ কেমন রিয়েকশনটা দিলো!” আবির বলল, “আপনার ইনফরমেশনের জন্য ধন্যবাদ, আরও কিছু জানাতে চাইলে আমাকে কল করবেন
।” বলে আবির মহিলার কাছে বিদায় নিয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হল ।
রেস্টুরেন্টে ফিরেই আবিরের দেখা সুরুজ তালুকদারের
সাথে । আবিরের জন্যই অপেক্ষা করছিল । আবিরের রিকশা লোকটার নজরে আসতেই লোকটা একটু হাসিমুখে
এগিয়ে এলো রিকশার দিকে । রিকশার থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার,
টেনশন হচ্ছে নাকি?” সুরুজ বলল, “তা তো অবশ্যই, হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি?” আবির বলল,
“চলুন, রেস্টুরেন্টে বসে সব বলি আপনাকে ।” বলে আবির সুরুজ তালুকদারের সাথে রেস্টুরেন্টে
গেলো ।
রেস্টুরেন্টে আবিরের কাছে সব শুনে সুরুজ তালুকদার
একটু অবাক হয়ে গেলো । বলল, “এই অতুল ছেলেটা আবার কে?” আবির বলল, “আমি ভেবে দেখছি, কি
করা যায় । এখনও যেটুকু আমি জেনেছি, সেটুকু আমার ইনভেস্টিগেশনের জন্য যথেষ্ট নয় । এখনও
আরও অনেক কিছু জানার রয়েছে । দেখি, আপনাদের বাড়ি যখন চিনলাম, তখন যাবোই ।” এমন সময়
হঠাৎ মজা করার ছলে আবির বলল, “ও, আমি আপনার বাড়িতে আপনার রিটায়ার্ড পুলিশ ছোট বন্ধু
হিসেবে গিয়েছিলাম কিন্তু ।” কথা শুনে হেসে
উঠলো সুরুজ তালুকদার । তারপর বলল, “বাহ, ভালোই একটা পদবী বেছে নিয়েছো ।” আবিরও লোকটার
সাথে তাল মিলিয়ে হালকা হাসল ।
আগামী পর্বেঃ
সুরুজ তালুকদার কাগজগুলো দেয়ার সাথে সাথে আবিরকে
বলতে লাগলো এই কাগজের পেছনের ইতিহাস । আবির কান দিয়ে সেসব কথা শুনছিলো, আর চোখ দিয়ে
কাগজগুলো দেখছিল । দেখতে দেখতে হঠাৎ কানে ওর সুরুজ আওয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেলো । আবির
সুরুজ তালুকদারের দিকে তাকাল । দেখল, ব্যাগ
থেকে কি এক কাগজ বের করে হাতে নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সুরুজ তালুকদার ।