পরিচয়(২৫৩)
পরিচয়(২৫৩)(সিজন-৮ এর অন্তিম পর্ব)
মালেকা ভ্রু কুচকে ভয় নিয়ে আবিরের দিকে তাকাল ।
আবির বলতে লাগলো । মালেকা আপা ছিলেন সরল মনের অধিকারিণী । তিনি নিজের মেয়ের পাশাপাশি
রাতুলকেও ভালবাসতেন । তাই তিনি রাতুলকে বিশ্বাস করেছিলেন । রাতুল তাকে বলেছিল কিছু
খারাপ ছেলের নজর লেগেছে রাহেলার দিকে, তাই রাহেলাকে রক্ষা করতে রাতুল এসেছে, সাথে আরও
জুড়ে দেয়, বাড়ির অন্য দুই বউ, হেলেনা আর সাবিনা নাকি এই ষড়যন্ত্র করেছে । তাই রাতুল
চায় নি, মালেকা আর রাহেলা ছাড়া অন্য কেউ ওকে চিনুক । আর এবার ক্লিয়ার হলেন তো, কেন
মালেকা অচেনা ছেলেক বাড়িতে রাখতে চেয়েছিলো? আর রাহেলার সাথে রাতুলের সম্পর্ক অনেকে
খারাপ চোখে দেখত, কিন্তু ওরা ভাই বোন তাই ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক ওদের মধ্যে থাকাতাই স্বাভাবিক,
তবে রাতুলের একটা মতলব ছিল । সেটা হল সন্তান চলে যাওয়ার কারনে অন্য বউদের কথা শোনার
ব্যাপারটা ভাল লাগে নি রাতুলের, তাই ও চেয়েছিল রাহেলাকেও খুন করতে । তাই ও ছদ্মবেশে
মালেকা আপার সাহায্যে বাড়িতে ঢুকল, আর মালেকা আপারই মেয়েকে হত্যা করলো ।” আবির থেমে
গেলো । মালেকা আপা থ হয়ে দাড়িয়ে আছে । তার জীবনের চলমান সময় যেন থেমে গেছে । খানিক
পরই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো মালেকা । হেলেনা আর সাবিনা এগিয়ে এলো মালেকার কাছে
। সুরুজ তালুকদার কথা বলতে পারল না । কি বলবে, কিছু বলার মুখ থাকলে তো বলবে । একটা
চেয়ারে বসে পড়লো । আবির সুরুজ তালুকদারকে বলল, “আমার দায়িত্ব শেষ, এবার আপনি কি করবেন,
সেটা আপনার ব্যাপার, এখানে পুলিশ আছে, আইন অনুযায়ি যেটা সবচেয়ে ভাল হয়, আমি আপনাকে
সেটা করতে রিকমান্ড করবো । ভাল থাকবেন ।” বলে সেখান থেকে চলে গেলো আবির ।
“এইতো সোনা আর কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে আসবো ।” মোবাইলে
ভিডিও কলে নিশানকে কথাগুলো বলল চয়নিকা । নিশান ওপাশ থেকে বলল, “তাড়াতাড়ি এসো না প্লিজ!
অয়ন ভাইয়া সারাদিন কি গেম খেলে, শুধু বলে এনিমি এনিমি, আর বলে চিকেন ডিনার, বাট হি
ডাজেন্ট গিভ মি টাইম, আমার সাথে খেলেও না ।” পাশে বসে গেম খেলতে থাকা অয়ন বলল, “কীরে,
তুই আপুর কাছে আমার নামে গুজব ছড়াচ্ছিস? দ্বারা……এই! তোর পিছে! তোর পিছে এনিমি!......দ্বারা
না, ম্যাচটা শেষ হোক, তোর আমি কি করি দ্যাখ!” চয়নিকা হালকা হেসে বলল, “আচ্ছা সোনা,
আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো প্লিজ!” নিশান “হুম, করি, আর কি ।” বলেই ফোনটা কেটে দিল
। চয়নিকা ফোন পাশে রেখে শুয়ে পড়লো । একটু পর বিষণ্ণ চেহারায় ঘরে এলো আবির । চয়নিকা
উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো, “কি হল ওদিকে, তোমার মন খারাপ কেন, সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?”
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “হ্যাঁ, সব ঠিকঠাকই আছে, শুধু মনটা কেমন বিষণ্ণ হয়ে
গেলো ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কেন, অপরাধী ধরা পড়ে নি?” আবির বলল, “পড়েছে, তবে মন
খারাপ অন্য কারণে ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কি কারণ?” আবির সব খুলে বলল চয়নিকাকে ।
তারপর বলল, “মানুষ কত খারাপ হয়, কিছু কিছু মানুষ স্বার্থটাই বোঝে, কেউ ভালোমন্দ বুঝলেও
ভালোবাসা বোঝে না, কেউ ভালোবাসা বুঝলেও ভালোমন্দ বোঝে না । এরই মাঝে ঘটিয়ে বসে কত কিছু
। আচ্ছা, তুমিই বল, যেই তাহেরাকে সুরুজ তালুকদার ভালবেসেছিল, সেই তাহেরা-ই এত বড় একটা
কাজ করে ফেললো? কেবল নিজের স্বার্থটাই দেখল, ভালোবাসা দেখল না? এতা সত্য তাহেরাকে রাহেলা
একটু ইগনোর করতো, কিন্তু এটাও সত্য, রক্তের সম্পর্ক যতই ইগনোর করা হোক, মনের কোথাও
না কোথাও সে সম্পর্কের সাথে একটা ভালোবাসা থেকেই যায় । আর এই যে রাতুল, মাকে ভালোবেসে
রাহেলাকে হত্যা করলো । সে শুধু মায়ের ভালোবাসা প্রকাশে এটা করলো, কিন্তু ভালো মন্দের
বিচার করলো না । কেমন অদ্ভুত এই পৃথিবীটা!” চয়নিকা বলল, “শোনো, পৃথিবীতে সবাই দোষী
। আমরা সবাই কোন না কোন দোষ করেই থাকি । কারও দোষ খুব সূক্ষ্ম, কারও দোষ অনেক বেশি
। এরি মধ্যেই তো আমাদের বেচে থাকা, তাই না, যারা বিবেক খাটিয়ে ভালোটা বেছে নেবে, তারাই
সফলতা পাবে, আর যারা খারাপটাকেই আপন করে নেবে তারা ব্যর্থ হবে, আল্লাহ তাদের জাহান্নামে
পাঠাবেন ।” আবির ওপর নিচে মাথা নেড়ে হুম করলো শুধু, কিছু বলল না । চয়নিকা বলল, “শোনো,
এখানে বেশিদিন থাকা ঠিক হবে না, এতে তোমার মনও খারাপ থাকবে, আর ওদিকে নিশানও ফিরতে
বলছে, তাই বলছি কি, চল কালই ফিরে যাই ঢাকায় । যাবে?” আবির কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বলল,
“কথাটা খারাপ বলোনি তুমি । এখন তো অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ি চল । সকালে ভেবে দেখি
।” চয়নিকা বলল, “হুম, তুমিও খুব ক্লান্ত, ঘুমিয়ে পড় ।” এরপর চয়নিকা আর আবির লাইট অফ
করে ঘুমিয়ে পড়লো । দুজন দুজনকে বলল, “গুড নাইট!”