0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয়(২৫২)


পরিচয়(২৫২)(সিজন-৮)

 

দাঁড়িয়ে আছে সুরুজ তালুকদারের স্ত্রী, সেই ভালোবাসার স্ত্রী, তাহেরা । সুরুজ তালুকদার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । তার বাকি তিন বউ-ও হতবাক । এ কে! সত্যি তাহেরা তো! সুরুজ তালুকদার আবিরকে কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “এটা সত্যি আমার বউ তাহেরা!” আবির বলল, “জি অবশ্যই ।” সুরুজ তালুকদার জিজ্ঞেস করলো, “না না, তাহলে আমরা কার লাশ দেখেছিলাম!” আবির বলল, “দেখুন, চোখে  দেখা জিনিসও কখনো কখনো মানুষকে ধোঁকা দেয় । ধরেই নিন এটাও আপনার এক ধরণের চোখে দেখা  ধোঁকা ।” সাবিনা ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলো, “তাহলে ওই ডেডবডিটা কার ছিল?” আবির বলল, “সুরুজ তালুকদার আমায় বলেছিলেন, উনার স্ত্রী তাহেরার সাথে উনাদের বাড়িতে আগে যে মহিলা দুধ বিক্রি করতে আসতেন, তার প্রচুর ঝগড়া হতো । যেদিন তাহেরা আগুনে পুড়ে মারাত্মকভাবে ঝলসে যান, সেদিন ওই দুধবিক্রেতাও আচমকা উধাও । আমার ধারণা সেদিন যে মারা গেছে সেই আসলে দুধবিক্রেতা   মহিলা, আর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তাহেরা ।” মালেকা জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু, আসলে হইসিলোডা কি?” আবির তাহেরার দিকে তাকিয়ে বলল, “সেটা উনিই ভাল বলতে পারবেন ।” তাহেরা মাথা নিচু করল । সুরুজ তালুকদার অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “না না না! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! সবটা কেমন এলোমেলো লাগছে!” আবির বলল, “বেশ, তাহলে আমিই সব ক্লিয়ার করে দিচ্ছি ।” বলে আবির একটু সবার দিকে তাকাল , সবাই আবিরের কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে । তারপর আবির বলতে লাগলো, “এরা দুজনেই আদালতে যে জবানবন্দী দিয়েছিলো সেটার ভিত্তিতেই বলছি সবটা । তাহেরার আপার মৃত্যুর খবর যেদিন ছড়ায়, তার আগে একটা ঘটনা ঘটেছিলো । যে মহিলা দুধ দিতে আসতো তার সাথে তাহেরার ঝগড়াঝাটির সম্পর্ক মিটমাট হয়ে গিয়েছিলো । ওদিকে যে মহিলা দুধ দিতে আসতো, সে-ও কম না । তাহেরার কাছে নানান সমালোচনামূলক কথাবার্তা বলতো । এর মধ্যে তাহেরা আপার কাছে যে কথা সবচেয়ে খারাপ লাগত তা হল, তাহেরা নিজের ছেলেকে সামলাতে পারে নি বলে সুরুজ তালুকদার তাহেরাকে তুচ্ছ করে দেখে আর বাকি বউরা নাকি এই ব্যাপার লোকজনের কাছে নানা অপবাদ দিয়ে নিন্দে করে বেড়ায় । সব বউয়ের নিন্দা তাহেরা আপার চোখে না পড়লেও মালেকা আপার দেয়া কষ্ট চোখে পড়ে । মালেকা নিজের মেয়েকে তাহেরার কাছে আসতে দিতো না, এমনকি তাহেরা কিছু বললেও রাহেলা তাহেরার কথার জবাব দিতো না । তাই এতে তাহেরার মন দিন দিন বিষিয়ে উঠতে থাকে, মজার ব্যাপার হল সেই বিষিয়ে ওঠা মনে সার হিসেবে কাজ করেছিলো হিন্দি সিরিয়াল । খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিনই কোন এক সিরিয়ালে একই ধরনের খুন হয়, যদিও উনি একটা ভুলের মুখোমুখি হন । উনি সেই দুধ দিয়ে যাওয়া মহিলাকে হাত করে প্ল্যান করেন গ্যাসের চুলা জালিয়ে রেখে জ্বলন্ত মোমবাতি রাহেলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে যেতে বলতে এবং সেই সময়ই যেন পুরে ঝলসে মারা যায় রাহেলা । কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বোধ হয় দুধ বিক্রেতা মহিলা অজ্ঞতাবশত রান্নাঘরেই মোমবাতি জালাতে গিয়ে নিজেই পুড়ে যায় । বাড়ির আর সব বউ বাইরে ছিল সে সময়, তাহেরা আপাও ছিল, তবে একটু দূরে । বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে তাহেরা মনে মনে হাসতে শুরু করে, কিন্তু হঠাৎ সে তাকিয়ে দেখে, রাহেলা পাশেই পুকুরে গোসল করছে । তাহেরা ভয় পেয়ে যায় । রান্নাঘরে যেয়ে দ্যাখে, পুরে যাওয়া সেই দুধ দিয়ে যাওয়া মহিলা মাটিতে প্রায় মৃত অবস্থায় কাতরাচ্ছে । তাহেরা সাহায্য তো দুরের কথা, কেরসিন ঢেলে আরও পুড়িয়ে দেয় সেই মহিলাকে, বেচে ফিরলে সত্যিটা বলে দিলে তাহেরার তো রেহাই নেই । কিন্তু এদিকে তার আরেক টেনশন চলে এলো, যদি কোনোভাবে প্রমান হয়ে যায় তবে কি হবে? তখন সে আরেকটা ফন্দি আটল । নিজের আলমারি থেকে একটা শাড়ি এনে সেই পড়া দেহের গায়ে পড়িয়ে দিয়ে সেই লাশ আবার পুড়িয়ে দিল, চেহারাটাও আরও ঝলসে দিল, যেন চেনা না যায় । সাথে সেই মহিলার কানের দুল, নাকফুল আর যা যা দেখে তাকে চেনা সম্ভব ছিল, তাও খুলে নিল । তারপর যেই বেরোতে যাবে, দেখল, বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড় । ধোয়া দেখে এসেছে, তাহেরা আপা তাই বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে পালিয়ে গেলো । আর লোকজন ধরেই নিল হয়তো তাহেরা মারা গেছে । ওদিকে দুধ বিক্রেতা মহিলা নিরুদ্দেশ, তাকেও খুজে পাওয়া গেল না । লোকজন যে সন্দেহ করবে, তারও অবকাশ ছিল না । কারন এরকম একটা ঘটনা ভাবা-ই যেন অসম্ভব ।” আবির এই মুহূর্তে এসে থেমে গেলো । তাকিয়ে দেখল, সুরুজ তালুকদার বিধ্বস্ত চেহারা আর চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে আছে তাহেরার দিকে । আবির একটু চুপ রইল । সুরুজ তালুকদার তাহেরার দিকে এগিয়ে গেলো । তারপর সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তাহেরার দিকে । তাহেরা মাথা নিচু করে কাদছে । সুরুজ তালুকদার তাহেরার মুখে থুথু ছিটিয়ে বলল, “লজ্জা হচ্ছে! লজ্জা হচ্ছে আমার যে আমি তোমাকে ভালবেসেছি!” তারপর সুরুজ তালুকদার নিজের চোখের জল মুছল । মালেকা তখন জিজ্ঞেস করল, “তারপর কি হইলো বাবা?” আবির বলল, “এরপর একদিন হঠাৎ এই রাতুল, অতুল নামে হাজির হয় এই বাড়িতে । কিন্তু বোকা বানায় মালেকা আপাকে ।” বলেই আবির মালেকার দিকে তাকাল । মালেকা ভ্রু কুচকে ভয় নিয়ে আবিরের দিকে তাকাল ।

 

আগামী পর্বেঃ

একটু পর বিষণ্ণ চেহারায় ঘরে এলো আবির । চয়নিকা উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো, “কি হল ওদিকে, তোমার মন খারাপ কেন, সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?” আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “হ্যাঁ, সব ঠিকঠাকই আছে, শুধু মনটা কেমন বিষণ্ণ হয়ে গেলো ।”