0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয়(২৫০)


পরিচয়(পর্ব-২৫০)(সিজন-৮)

 

চয়নিকা “অসহ্য!” বলে মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালাতে লাগলো ।

সেদিন যা ঘুরে ঘুরে দেখার চয়নিকা একাই দেখল । আবির ফোন নিয়ে সেই যে বেড়িয়েছে, এখনও ফেরেনি । বিকেলের দিকে রুমে এলো আবির । রুমে এসে চয়নিকাকে বলল, “চল আমাদের বেরোতে হবে ।” চয়নিকা আবিরের দিকে তাকিয়ে । চেহারায় একটা অভিমানের ছাপ । আবিরের ব্যাগ গোছানো শেষ । চয়নিকার দিকে চোখ পড়তেই দেখল, চয়নিকা এখনও তাকিয়ে, একইভাবে বসে আছে । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” চয়নিকা উঠে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা গলায়ই বলল, “কথা কি এরকম ছিল আবির?” আবির হালকা বিরক্ত হয়ে বলল, “দ্যাখো চুনি, আমি একটা কাজ ধরেছি, সে কাজ আমি পরিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করতে চাই ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কি এমন কাজ করছ তুমি যেটা আমাদের  হানিমুনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?”  আবির “দেরি কোরো না, এখনের জাহাজ আর একটু পরই ছাড়বে!” বলে বেড়িয়ে গেলো । চয়নিকা-ও  মোবাইলটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো । পুরো জাহাজে আবির ছিল ফোন কলের ওপর । চয়নিকা জাহাজের রেলিং-এর পাশে একা দাঁড়িয়ে । ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট জমা হচ্ছে । হোটেলে এসেও আবির চয়নিকার সাথে রুমে এলো না । মাগরিবের আজান একটু পরেই দেবে, আবির চাইলেই চয়নিকাকে রুমে পৌঁছে দিয়ে যেতে পারতো । কিন্তু তা না করে কি একটা কাজে চলে গেলো । চয়নিকা ব্যাগটা একপাশে রেখে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো । তারপর কাঁদতে শুরু করলো ।

এদিকে আবির গেছে রেস্টুরেন্টের পেছনে একটা পার্কে সুরুজ তালুকদারের সাথে দেখা করতে । সুরুজ তালুকদার একটা মেহেগনি গাছের নিচে ছিল তখন । আবিরে এগিয়ে যেয়ে বলল, “দিয়েছিলেন আপনার জামা?” সুরুজ তালুকদার বলল, “হ্যাঁ, দিয়েছি । কিন্তু হঠাৎ এ পদক্ষেপ কেন?” আবির বলল, “দেখুন, আমার সন্দেহ সত্যি হলে আমি তখনই আপনাকে জানাবো, তার আগে বলতে চাই না ।” সুরুজ তালুকদার বলল, “আপনার সন্দেহ সত্যি হলে কি অপরাধী ধরা পড়বে?” আবির বলল, “না, তবে অপরাধী ধরার পরার পথ জানা যাবে ।”

মাগরিবের নামাজ শেষে রুমে এসে আবির দেখল, চয়নিকা কাঁদছে । আবির চয়নিকার কাছে যেয়ে চয়নিকার কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে! চুনি! কি হয়েছে!” চয়নিকা আবিরকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো । আবির, “চুনি! শান্ত হও! আমি বলছি তোমাকে! শান্ত হও!” বলতে বলতে ধীরে ধীরে চয়নিকার কাছে এসে চয়নিকাকে জড়িয়ে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো চয়নিকার কান্না থামানোর উদ্দেশ্যে । একটু পর চয়নিকার কান্না অনেকটা থামলে চয়নিকার চোখ মুছে দিয়ে আবির বলল, “দ্যাখো,  আমার কাছে একজন সাহায্য চেয়েছে । তাও এমন ব্যাপারে, যেখানে তার মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে, সেখানে আমি কি করে শান্ত হয়ে বসে থাকি বলো?” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “তাই বলে আমাদের হানিমুনটা এভাবে নষ্ট করে?” আবির বলল, “দ্যাখো, হানিমুন, ঘোরাঘুরি, এগুলো আমরা পরেও করতে পারবো, কিন্তু  একটা মানুষকে বাঁচানোটা-ও তো জরুরী, না?” চয়নিকা একটু থেমে তারপর জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু ব্যাপারটা কি?” আবির চয়নিকাকে সবটা খুলে বলল । সবটা শুনে চয়নিকা শান্ত হল । তারপর বলল, “তাহলে এখন ওই গামছা আর সুরুজ তালুকদারের জামা তুমি হেলিকপ্টারে করে অপুর কাছে পাঠিয়েছ, ও কবে জানাবে রিপোর্ট?” আবির বলল, “অপু তো বলেছে আজকেই চেষ্টা করবে ।” চয়নিকা মাথা নিচু করলো । আবির চয়নিকার দুই হাত নিজের গালে ছুয়ে বলল, “এবার একটু হাসবে?” চয়নিকা বলল, “না ।” আবির বলল, “প্লিজ একটু হাসো?” চয়নিকা বলল, “এতো ন্যাকামির সময় নেই ।” আবির উঠে দাঁড়ালো । তারপর মোবাইল বের করে একটা গান ছাড়ল । “সাধের লাউ! বানাইল মোরে বৈরাগী………………।” তারপর গানের সাথে সাথে মেয়েলি ভঙ্গিতে হাত পা ছড়িয়ে নেচে চেষ্টা করলো চয়নিকাকে হাসানোর আবিরের চেষ্টা ব্যার্থ হল না । চয়নিকা হেসে দিলো । আবিরের নাচ শেষ হলে চয়নিকা হাসি থামিয়ে বলল, “তুমি পারোও! বাপরে বাপ!” আবির চয়নিকার কাছে এসে বলল, “তাই না?” বলে চয়নিকাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেলো ।

রাত ১০টার দিকের কথা । নিজের রুমেই জানালার কাছে  দাঁড়িয়ে সুরুজ তালুকদার । এক মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে রাতুল, রাহেলা আর স্ত্রীদের কথা । জানালার সামনের রাস্তায়-ই এক লোক তার মেয়েকে কোলে নিয়ে নানান মজার কথা বলে মেয়েকে হাসাচ্ছে । সুরুজ তালুকদার এই দৃশ্য দেখছে, আর মাঝে মাঝে লোকটাকে নিজের সাথে আর লোকটার কোলে থাকা মেয়েটাকে রাহেলার সাথে তুলনা করছে । পরক্ষণেই আবার মুচকি মুচকি হাসছে । এমন সময় দরজায় নক করার আওয়াজে কল্পনা থেকে ফিরে এলো সুরুজ তালুকদার । দরজার দিকে তাকিয়ে আওয়াজ করলো, “খোলা আছে!” দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো  আবির । তাড়াতাড়ি করে সুরুজ কাছে এসে উৎফুল্লের সাথে বলল, “আমি যা সন্দেহ করেছিলাম, তা মিলে গেছে!” সুরুজ তালুকদার বলল, “তাই! কি সন্দেহ করেছিলে?” আবির বলল, “আজ আমি আর আমার স্ত্রী সেইন্টমার্টিন গিয়েছিলাম । নামার সময় আমার চোখে পড়ে অতুলকে, সেই আপনাকে যে বলেছিলাম আপনাদের বাসায় যে জায়গীর হিসেবে রয়েছে । সে মাছ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়ার কাজে নিয়োজিত । কাজ শেষে খুব সম্ভবত গোসল করার জন্য গায়ের জামাটা খুলেছিল ও, আমি প্রথমে স্পষ্ট দেখতে পাই নি । কিন্তু পরে কাছে যেয়ে ওর গা থেকে গামছা খুলে দেখি ওর বুকের মাঝে একটু ডানে কাল দাগ ।” সুরুজ তালুকদার বলল, “কি!” আবির বলল, “হ্যাঁ, তারপর আমার সন্দেহ হয়, এ আপনার ছেলে অতুল নয় তো? তাই  আমি ঢাকার পরিচিত পুলিশে কর্মরত বন্ধু অপুর মাধ্যমে অতুলের গামছা আর আপনার জামা হেলিকপ্টারে ঢাকায় পাঠাই । সেখানে ডিএনএ টেস্ট করে দুই জামার ডিএনএ সেম পাওয়া গেছে!” সুরুজ তালুকদার বলল, “তার মানে! অতুলই আমার ছেলে রাতুল!” আবির ওপর নিচ মাথা নাড়ল ।

 

আগামী পর্বেঃ

দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ । মালেকা বলল, “কিরে, বইয়া আছোস ক্যান? দ্যাখ না কিডা আইল!” রেহানা বলল, “এখন আমার পছন্দের সিরিয়াল চলতেছে, আমি এখন যাবো না । সাবিনা, তুই যাইয়া দ্যাখ ।” সাবিনা, “উফফফ! ইউ আর সো লেইজি!” বলে বিরক্ত মাখা চেহারায় ঘরের দরজা খুলে বেড়িয়ে উঠোন পেড়িয়ে গেলো প্রাচীরের দরজার কাছে । দরজা খুলতেই সাবিনার চক্ষু চড়কগাছ । দাঁড়িয়ে একদল পুলিশ, সাথে হাতখড়া পড়ানো অবস্থায় অতুল । সাবিনা তোতলিয়ে বলল, “পু…পু…পুলিশ!”