0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-২৪৫



পরিচয়(পর্ব-২৪৫)(সিজন-৮)

 

চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়ে বাথরুমের দরজার দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলো চয়নিকা । এরপর যে-ই না চয়নিকা বাথরুমের দিকে পা বাড়াবে, অমনি আবির হেসে উঠলো । চয়নিকা আবিরের দিকে তাকাল আওয়াজটা কিন্তু তখনও হচ্ছে । আবির উঠে দাঁড়িয়ে লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো । চয়নিকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি জ্ঞান হারাও নি?” আবির বলল, “আমি তো আর তোমার মতো ভিতু না, যে জ্ঞান হারাবো ।” চয়নিকা এবার রেগে গিয়ে বলল, “তুমি আমার সাথে এমন কেন করলা! জানো আমি কতো ভয় পেয়েছি!” আবির বলল, “হয়েছে, হয়েছে, থামো এবার, ভেতরে বাতাসের জন্য টয়লেটের ভেন্টিলেটরের মাঝ দিয়ে বাতাস আসছিলো, সেই বাতাসে এরকম আওয়াজ হচ্ছিল ।” চয়নিকা কিছু না বলে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়লো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “একি, তুমি কিছু বলবে না?” চয়নিকা বলল, “আমি কি বলবো, ওই কান্নার আওয়াজে যা ভয় পেয়েছি তোমার অভিনয় দেখে তার চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছি ।” বলেই গায়ের ওপর কাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো । আবিরও একটু হেসে চয়নিকার পাশে যেয়ে বসলো ।

পরদিন সকালের কথা । সেদিন বুধবার । চয়নিকা আগের রাতে ভুতের ভয়ে না ঘুমাতে পেরে সকালে দেরি করে উঠেছে । ১০টার দিকে ধীরে ধীরে চোখ খুলল চয়নিকার । উঠে দেখল, আবির ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে । পোশাক দেখা মনে হচ্ছে কোথায় যাবে হয়তো । আবির প্রতিদিনই ফজরের সময় ওঠে । চয়নিকা ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই জিজ্ঞেস করলো, “কোথাও যাচ্ছো নাকি?” আবির বলল, “হ্যাঁ, একটা কাজ আছে । আমি খেয়ে নিয়েছি, তুমি রেস্টুরেন্টে যেয়ে খেয়ে নিয়ো ।” চয়নিকা উঠে আবিরের কাছে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “কি, আজও কেউ আসছে নাকি দেখা করতে?” আবির বলল, “আজ আসছে না, আজ আমিই যাচ্ছি ।” চয়নিকা আর কিছু জিজ্ঞেস  করলো না । বাথরুমে ফ্রেশ হবার জন্য গেলো ।

হোটেল থেকে নেমে একটা রিকশা নিয়ে নিলো । মিনিট দশের রাস্তা । তাই বেশিক্ষণ লাগলো না পৌছতে । সুরুজ তালুকদারের বাড়িটা একটা গ্রামের মধ্যে অবস্থিত একতলা পাকা বাড়ি । আবির বাড়িটার কাছে পৌঁছতেই চিনে ফেললো বাড়িটা । বেশ বড়ই বাড়িটা । গ্রামের অন্যান্য অনেক কাচা বা টিনের বাড়ির ভেতরে এই বাড়িটাই পাকা । দেয়াল দিয়ে তৈরি । বাড়িটার চারপাশে আবার একটা প্রাচীর-ও দেয়া আছে । সামনে থেকে দেখে যদ্দুর বোঝা যাচ্ছে, বাড়ির সামনের প্রাচীরের গায়ে থাকা দরজা দিয়ে ঢুকে একটা মোটামুটি বড় উঠোন রয়েছে । আবির প্রাচীরের দরজায় নক করলো । একটু পর ভেতর থেকে আওয়াজ এলো । “এ কেডারে?” আবির গলা খাখরে বলল, “আমি সাকিব ।” ছদ্মনাম ধারণ করলো আবির । একটু পর দরজা খুলল এক মহিলা । চুল পেকে গেছে, বয়স ওই মিস্টার হাসানের চেয়ে বছর ২-৩ কম মতো হবে । চেহারায় হালকা বয়সের ছাপ ধরতে শুরু করেছে । গায়ে একটা ময়লা সবুজ রঙের শাড়ি । ছেলে কণ্ঠ শুনে ঘোমটা মাথায় দিয়ে দরজা খুলেছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আবির বলল, “আসসালামু আলাইকুম, আমি সাকিব বলছিলাম ।” মহিলা বলল, “সাকিব?” আবির বলল, “জি, আসলে আমি মিস্টার হাসানের বন্ধু ।” মহিলা বলল, “ও, তাই কন, তা বুইড়া মাইনসের জুয়ান বন্ধু?” আবির বলল, “জি আমি আসলে উনার অনেক বছরের জুনিয়র, উনি যখন চাকরিতে জয়েন করেন, আমার তখন জন্ম হবে হয়তো এরকম । উনার সাথে চাকরিসুত্রেই পরিচয় ।” বাড়িতে ঢোকার অনুমুতি পাবার জন্য এসব বলল আবির । মহিলা বলল, “উনি তো বাড়িত নাই, আপনে আপনার মোবাইল নাম্বার দিয়া যান, উনি আইলে উনাকে বলমুনে ।” আবির বলল, “আরে না না, উনার সাথে দেখা করেই এসেছে । ভাই আমাদের  ওদিকেই একটা হোস্টেলে কাজে গেছেন ।” মহিলা বলল, “আপনি ক্যান আইছেন?” আবির বলল, “আসলে, আমি একসময় পুলিশ ছিলাম তো, আপনার এই কেস নিয়ে কথা বলতাম যদি কোন সমস্যা না থাকে ।” “পুলিশ!” মহিলার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো । হালকা ভয় পেয়েছে বোধ হয় । আবির কিন্তু এ  কথাটাও ভেতরে ঢোকার জন্যই বলেছে । আবির জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ, কেন? কোনো সমস্যা আছে কি?” মহিলা বলল, “না না, সমস্যা হইবো ক্যান? আসেন ভেতরে আসেন ।” আবির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার নামটা কি?” মহিলা বলল, “আমি হেলেনা, হেলেনা খানম ।” আবির মহিলা আবিরকে নিয়ে ভেতরে যেতে লাগলো । সত্যি একটা একটা উঠোন । উঠোনের চারপাশে  নানা ধরণের ফুলের গাছ । এক পাশে একটা কবুতরের বাসাও রয়েছে । উঠোনের একপাশে কবুতরের খাবার ছেটানো, সেখানে কবুতরেরা খাবার খাচ্ছে । আবির ঘরের দিকে  যেতে যেতে হেলেনাকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার পেটেই তো বাচ্চা ছিল না? যার জন্য সুরুজ ভাই আপনাকে বিয়ে করেছে?” হেলেনা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “হ, তয় ওই বাচ্চাও তো মইরা গেছে, বিয়া কইরা লাভই হইলো না, এই সংসারে কার যে অভিশাপ লাইগা গেলো, আগে মইরা গেলো তাহেরা আফা, তারপর মরলো মালেকা আফার মাইয়া, গতকাইলকাই তো মরলো । তারও আগে তো তাহেরা আফার পোলা বাড়ি থাইকা ভাইগা গেলো ।” আবির আবার জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, বাকিদের তো দেখছি না?” হেলেনা জবাব দিলো, “ওই গতকাল মাইয়া মইরা যাওয়ার শোকে এহনও কানতেছে মালেকা, ওরই দেখভাল করতেছে সাবিনা । ঘরেই আছে, চলেন দেহা হইবোনি ।” আবির আর হেলেনা প্রায় রুমের কাছে পৌঁছে গেছে এমন সময় রুম থেকে বেড়িয়ে এলো একটা ছেলে । বয়সে আবিরের চেয়ে বড় । কিন্তু এরকম কোন মিস্টার হাসান তো বলেছিলো উনার এখানে বউ ছাড়া আর কেউ থাকে না । তাহলে এই ছেলেটা কে?

 

আগামী পর্বেঃ

আবির জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, আপনাদের স্বামীর প্রথম স্ত্রী, মানে ভার্সিটি  লাইফের প্রথম ভালোবাসা, তাহেরা, উনি তো আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, তাইনা?” সবাই হালকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেও সাবিনা মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, “হ্যাঁ, অ্যান্ড আনফুরচুনেটলি আমি সেদিন  বাপের বাড়ি ছিলাম ।” আবির বলল, “আমি কিন্তু জিজ্ঞেস করিনি কে কোথায় ছিলেন ।”