পরিচয়(২৪৯)
পরিচয়(পর্ব-২৪৯)(সিজন-৮)
চয়নিকা হালকা হেসে বলল, “ও ।”
পরদিন আবির আর চয়নিকা কক্সবাজার
থেকে রওনা হল সেইন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে । আগে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রথমে টেকনাফের
দমদমিয়া জাহাজ ঘাটে যেতে হতো, কিন্তু এখন কক্সবাজার থেকেই সরাসরি জাহাজ যায় সেখানে
। একটা রিসোর্ট-এ এক রাত কাটিয়ে পরদিন আবার হোস্টেলে ফিরে আসবে বলে ঠিক করেছে । সমুদ্রের
ওপর দিয়ে জাহাজ যেতে লাগলো । চয়নিকা আর আবির রেলিং-এর পাশেই দাঁড়ানো । খুব গরম পড়েছে
আজ । আবির চয়নিকাকে বলল, “শার্ট না পড়ে গেঞ্জি পড়লে ভালো হতো বোধ হয় ।” চয়নিকা ইয়ার্কি
বলল, “একটা কাজ করো, ওখানে যেয়ে শার্ট খুলে ফেলো । দু একটা নারীর নজর পাবে ।” আবির
হেসে বলল, “কি যে বলো না, হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারি না ।” একটু পরই দ্বীপটা নজরে
এলো জাহাজবাসীর সকলের । সবাই এতো সুন্দর দ্বীপের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । তবে
এর মধ্যে কষ্টের ব্যাপার হল পাড়ের পানির কাছে
অনেক ময়লা পড়ে আছে । পানির বোতল, প্যাকেট, পলিথিন, ক্যান সবাই যেখানে সেখানে
ফেলে দিয়েছে, কিছু পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে যা
দ্বীপের সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়েছে । আর একটু পরই লঞ্চ থামবে । নোঙ্গর ফেলার প্রস্তুতি
চলছে । আর সবার মতো আবির আর চয়নিকা-ও আশপাশ দেখতে দেখতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে । এমন
সময় আবিরের চোখ আটকে গেলো একটা মানুষের দিকে । একটা কালো স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে একটা
জাহাজের ওপর থাকা কাউকে কি যেন বলছে । খুব সম্ভবত জাহাজে এখান থেকে মাছ দেশের বিভিন্ন
স্থানে পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে, তারই তদারকি এই লোকটা করছে বোধ হয় । কিন্তু সবচেয়ে বেশি
যে ব্যাপারটা আবিরের খটকা লাগলো তা হল, এটা অতুল, সুরুজ তালুকদারের বাসায় যে জায়গীর
থাকে । লঞ্চ থেকে নামলো আবির । তবে অতুলের দিকে তাকিয়েই রইল । খানিক পর অতুল একটা গাছের
গোঁড়ায় থাকা ব্যাগের কাছে গেলো । সেই তারপর গায়ে থাকা স্যান্ডো গেঞ্জিটা খুলে ব্যাগে
রাখল । পড়নে থাকা কাল প্যান্ট খুলে ব্যাগে রাখল । ভেতরে একটা হাফ প্যান্ট ছিল । হয়তো
গোসল করবে এখন । সবই ঠিক ছিল, কিন্তু কি একটা ব্যাপার আবিরের মনে একটা সন্দেহের সৃষ্টি
করলো । আবির চয়নিকাকে, “একটু দাড়াও তো!” বলে অতুলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো । চয়নিকা,
“কোথায় যাচ্ছ! আবির!” বলে উঠলো, কিন্তু আবির সে কথা শুনল না । অতুল গায়ে গামছে জড়িয়ে
সাগরের জলের দিকে যাচ্ছিলো, সেই সময় আবির এসে
অতুলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ের গামছাটা কেড়ে নিলো । তারপর যা দেখল, তাতে ওর একটু আগে হওয়া
সন্দেহটা সম্পূর্ণ মিলে গেলো । অতুলের বুকের মাঝামাঝি একটু ডানে একটা কালো দাগ । অতুল
প্রচন্ড রেগে বলতে লাগলো, “আপনি আমার পিছু লেগেছেন কেন! সমস্যা কি আপনার? আপনার কি
মনে হয়, আমি খুন করেছি রাহেলাকে? যদি আপনার তাই-ই মনে হয়, দেখান প্রমাণ করে!” আবির
কোন জবাব দিলো না । এরই মধ্যে চয়নিকা আবিরের কাছে এগিয়ে এলো । আবিরকে জিজ্ঞেস করলো,
“আবির! কে উনি?” অতুল অবাক হয়ে চয়নিকাকে জিজ্ঞেস করলো, “আবির! কিন্তু উনি তো সাকিব!” চয়নিকা অবাক হয়ে অতুলকে
বলল, “কে সাকিব? এ তো আমার স্বামী, আবির! সালমান খান আবির ।” অতুলের চ্যাঁচামেচি শুনে
আশে পাশে কিছু লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিলো । তাদেরই একজন হাসিমুখে বলে উঠলো, “আরে! আপনি দ্যা
ইনভেস্টিগেশন শো এর আবির না!” আরেকজন বলল, “আরে হ্যাঁ তাইতো! মুখে দাঁড়ি উঠে গেছে,
চেনাই তো যাচ্ছে না!” আবির দেখল, অতুলের চেহারায় একটা ভয়ের ছাপ দেখতে পেলো আবির । কিন্তু,
আসেপাশের সবাই আবিরের সাথে ছবি তোলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো । কিন্তু আবির এর মুহূর্তে সেই
সিচিউয়েশনে নেই । সবাই আবিরকে ঘীরে ধরেছে । এরই মধ্যে কোনোরকমে আবির দেখল, অতুল দৌড়ে
স্থান থেকে চলে যাচ্ছে । আবির সেখান থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করলেও লোকজন এমনভাবে আবিরকে
ঘীরে ফেলেছে, যে আবির ভিড় ঠেলে বেরোতে পারলো না । অনেক কষ্টে ছবি তোলার পর ভিড় যখন
একটু কমলো, আবির দেখল, অতুল সেখান থেকে পালিয়েছে ।
দুপুরের কথা । রিসোর্টে বিছানায়
বসে আবির নানা ধরণের চিন্তা করছে । চয়নিকা গোসলে গিয়েছিলো, ফিরে এসে বলল, “আচ্ছা ব্যাপার
কি বলতো, রিসোর্টে এসে কিচ্ছু বলিনি ক্লান্ত ছিলে বলে । কি হচ্ছিলো ওখানে? আর ওই লোকটা
কে, যার গামছা কেড়ে নিলে তুমি?” আবির চয়নিকার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, “আমাদের আজ
বিকেলেই ফিরে যেতে হবে ।” চয়নিকা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “বিকেলেই মানে! ঘুরবে না?”
আবির বলল, “দ্যাখো, আমি এখনই তোমায় কিচ্ছু বলতে পারবো না । যা জানতে চাও, কাজ হলেই আমি জানাবো ।” চয়নিকা বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোমার সমস্যা কি? হানিমুনে এসেও কি তুমি গোয়েন্দাগিরি
শুরু করেছো!” আবির চয়নিকা কথার কোন জবাব না দিয়ে সকালের গামছাটা একটা ব্যাগে ভরে রাখলো
। তারপর মোবাইলে কাকে যেনো কল করে বাইরে চলে গেলো । চয়নিকা “অসহ্য!” বলে মোবাইল হাতে
নিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালাতে লাগলো ।
আগামী পর্বেঃ
এমন সময় দরজায় নক করার আওয়াজে
কল্পনা থেকে ফিরে এলো সুরুজ তালুকদার । দরজার দিকে তাকিয়ে আওয়াজ করলো, “খোলা আছে!”
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আবির । তাড়াতাড়ি করে
সুরুজ কাছে এসে উৎফুল্লের সাথে বলল, “আমি যা সন্দেহ করেছিলাম, তা মিলে গেছে!”