পাশের বাসার আনটি
পাশের বাসার আন্টি
লেখকঃ সাদাত আলম প্রতীক
“টিং টং” কলিংবেলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে গেলাম দরজা
খুলতে দরজা খুলেই দেখি, পাশের বাসার রোজিনা আন্টি । আমি আন্টিকে সালাম দিলাম । আন্টি
বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম রাতুল বাবা, কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো আছি আনটি । আপনি ভালো
আছেন?” জিজ্ঞেস করলাম আমি ।
“হ্যাঁ বাবা, ভালো আছি । তোমার মা-কে একটু ডাকো
।”
আমি আন্টিকে বসতে বলে নিজের রুমে গেলাম । প্রতিদিনের
মতো আজও নিশ্চয়ই একটু কথার বোমাবাজি করে যাবে আন্টি । আমি টেবিলে বসে হাত আর চোখ দিয়ে
ফেসবুক চালাচ্ছিলাম, আর কান পেতে আন্টি আর আম্মুর কথা শুনছিলাম ।
“কি ভাবি, ভুলে টুলে গেছেন নাকি? বাসায় তো আসেন
না?” জিজ্ঞেস করলো রোজিনা আন্টি ।
“ভাবি রান্না বান্না করতে সময় হয় কোথায় বলেন, তাও তো যাই । আপনি তো তাও আসেন না ।”
আরও অনেক আজাইরা কথাবার্তা হল । ইউটিউব-এর অ্যাড
এর মতন এই আজাইরা কথাবার্তাগুলো তো আর স্কিপ করতে পারি না । তাই অপেক্ষায় রইলাম বোমাবাজির
মুহূর্তের । মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই অপেক্ষার অবসান হল । আন্টি শুরু করলো তার বোমাবাজি
।
“ভাবি, মিথিলার কথা মনে আছে?”
“কোন মিথিলা ভাবি?” জিজ্ঞেস করলো মা ।
“আরে ওইযে, পা বাঁকায় বাঁকায় হাটে যে ।”
“ও হ্যাঁ! মনে পড়েছে । কেন কি হয়েছে?”
“আর বইলেন না ভাবি, ওই মিথিলার আব্বু অফিসের কলিগের
সাথে বিয়ে করেছে । এটা শুনে তো মিথিলার আম্মু মরে যায় যায় অবস্থা ।” বস্তা খানেক ন্যাকামি
মিশিয়ে বলল আন্টি ।
“হায় হায়! বলেন কি ভাবি!” আন্টির সাথে তাল মিলিয়ে
মা-ও একটু ন্যাকামি করলো ।
“হ্যাঁ তো! লোকজন তো ছি ছি করছে । আমি আমার স্বামীর
ওপর এখন থেকেই নজর রাখা শুরু করেছি । আপনিও রাখেন । নইলে আপনার স্বামীর ওপর লোকে ছি
ছি তো করবেই, আপনার ওপরও করবে দেইখেন ।”
আমি মনে মনে ভাবলাম, আজ শিওর বাবার নিস্তার নেই
।
রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরল বাবা । ঘরের দরজার সামনেই
দাঁড়িয়ে মা । বাবা ঘরে ঢুকতেই মা জিজ্ঞেস করলো, “এই তোমার অফিসে কয়টা মেয়ে কলিগ আছে?”
বাবা ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?” মা একটু রেগে গিয়ে বলল, “কেন,
গায়ে লাগছে খুব? নাকি তাদের সাথে প্রেম ট্রেম চলে তোমার?” আমি কান পেতে শুনছি আর হাসছি
। আহারে, বাবার মুখখানা একটু দেখতে ইচ্ছে করছে । ঝগড়ার মাঝে গেলে আমার ওপর আবার রাগ
ঝাড়া শুরু করবে বলে যাওয়ার ইচ্ছে নেই । আরও বেশ কথা কাটাকাটি হল বাবা আর মায়ের মধ্যে
। সেদিন প্রায় সারারাত দুজনে ঝগড়া করেছে । এমনকি রাতেও একসাথে ঘুমায়নি । বাবা রাগ করে
গেস্ট রুমে যেয়ে ঘুমিয়েছে ।
দুদিন পরের কথা । মা আর বাবার ঝগড়ার অবসান যেদিন
হবে হবে ভাব, সেদিন আবার এলো সেই পাশের বাসার আন্টি, রোজিনা । আমি সেদিনের মতো ভদ্রতার
খাতিরে যা যা বলার যা যা করার করলাম, তারপর আবার নিজের রুমে এসে কান পেতে অপেক্ষায়
রইলাম আসল মুহূর্তের । মিনিট দশেকের মধ্যে সেই মুহূর্ত চলে এলো ।
“ভাবি রোকসানার কথা মনে আছে?”
“কোন রোকসানা?” জিজ্ঞেস করলো মা ।
“আরে, আপনার মেয়ের সাথে পড়ত ।”
“ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, ওই যে ট্যারা মতো?”
“হ্যাঁ ভাবি, ওই মেয়ে ফেসবুকে ৭-৮টা ছেলের সাথে
রিলেশন করে ফেলেছে । গতকাল সবগুলা ছেলে ওর বাসায় এসে জড়ো হয়েছিলো ।” আবার এক বস্তা
ন্যাকামি নিয়ে বলল পাশের বাসার আনটি ।
“হায় হায়! বলেন কি ভাবি!” মা-ও আবার একটু তাল দিয়ে
বলল ।
“হ্যাঁ ভাবি । লোকজন তো থু দিচ্ছে ওদের, কি যে
একটা অবস্থা ভাবি, ভাগ্যিস আমার মেয়ে নাই । আপনার মেয়েটাকে একটু সামলে রাখবেন ভাবি
। এই ফেসবুকগুলা ওদের একদম নষ্ট করে দিচ্ছে ।”
আমি তো মহাখুশি । আমার বোন রাইসা । কি যে বলবো,
সারাদিন আমার সাথে ঝগড়া করে । আজ ওকে মা নানান কথা শোনাবে, এই ভাবতেই যেন আমার আনন্দে
মন ভরে উঠছে ।
সন্ধ্যায় ভার্সিটি থেকে ফিরল আপু । মা দরজার সামনেই
ছিলো । আপু ঢুকতেই মা জিজ্ঞেস করলো, “শোন, তোর মোবাইলটা দে।” আপু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস
করলো, “আমার মোবাইল? কি করবা তুমি?” মা বলল, “তোর ফেসবুক দেখবো, তোর বন্ধু কারা আছে,
কাদের সাথে কথা বলিস সেগুলো দেখবো ।” আপু জিজ্ঞেস করলো, “মানে? এগুলো দেখে তোমার কি
লাভ?” মা বলল, “দেখতে চাই, তুই ৭-৮টা বয়ফ্রেন্ড
বানিয়েছিস কি না ।” আপু অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “এসব কি বলছো?” আমি দরজার
সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছি । মা আর আপুর কথা কাটাকাটি চলতেই লাগলো ।
ঘটনার ১সপ্তাহ পরের কথা । সেই পাশের বাসার আনটি
অনেক দিন আসে না । তাই একটু মনটা খারাপ । বসে বসে এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম, “তোর
কান্ডজ্ঞান বলে কিছু নেই? আজ আমার ব্যাগে তুই বিড়ি রেখেছিস, কেউ যদি দেখে ফেলে আমাকে
আস্ত রাখবে নাকি?...............কাল নিবি তো?...............মনে থাকে যেন……………হ্যাঁ,
আর এইসব ইয়ারকি আর কোনোদিন করবি না!” এমন সময় আবার কলিংবেলের আওয়াজ । ফোন কেটে দৌড়ে
যেয়ে দরজা খুললাম । দেখি আন্টি বেশ হাফাচ্ছে
। আমি আন্টিকে সালাম দিতেই আন্টি সালামের জবাব দেয়ার সাথে সাথে বলে উঠলো, “তোমার মা-কে
ডাকো, জরুরী কথা আছে ।” আমি মা কে ডাকলাম । আজ মনে হয় অ্যাড হবে না, সরাসরি বোমাবাজি
হবে । তাই লাইভে সব কথা শুনতে রুমের একটা টেবিলের ড্রয়ারে কিছু একটা খুজছি এমন একটা
ভান করে আন্টির সামনেই আন্টির কথা শুনতে লাগলাম ।
“ভাবি! আজ আপনাকে যা শোনাবো! তা শুনলে আপনি বিস্ফোরিত
হয়ে যাবেন!”
আমি আন্টির কথা শুনে মনে মনে ভাবছি আন্টিকে অস্কার
দেয়া উচিত । সে কি ডাইলোগ দিলো আন্টি! মা জিজ্ঞেস করলো, “কি বলেন ভাবি! শুরু করেন ।”
আন্টি বলল, “ভাবি রোহিতের কথা মনে আছে, আজ না ওর ব্যাগে গাজা খুজে পেয়েছে ওর মা বাবা
। শুধু তা-ই না, ওর লাস্ট এক্সামের খাতাও পেয়েছে । ফেইল করেছিলো, সেসব পরিক্ষার খাতা । মানুষ
তো বলছে এ ছেলেকে পুলিশে দিয়ে দেবে ।” আমি একটু কান খাড়া করলাম । কার কথা বলছে আন্টি?
মা জিজ্ঞেস করলো, “কোন রোহিত?” আন্টি বলল, “আরে ওই যে আপনার ছেলের সমবয়সী ছেলেটা । ছেলেকে
একটু চোখে চোখে রাইখেন । আপনার ছেলে ভালই আছে যদিও ।” আমি ঢের বুঝতে পারলাম । শেষ বাক্যটা
আমি সামনে থাকায় আন্টি বলল, নাহলে জীবনেও এ কথা
বলতো না । রুম থেকে চলে যেতেও কেমন লাগছে । মনে হচ্ছে, বেরোতে গেলেই যেন সন্দেহ
করে বসবে । আনটির মোবাইলে একটা কল এলো তখন । কি যেন বলে মা-কে বলল, “ভাবি, আমাকে একটু
বাসায় যেতে হবে ।” বলে আন্টি চলে গেলো । যতক্ষনে আন্টি চলে যাবে ততক্ষনে আমি নিজের
রুমে চলে যাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু না । তার আগেই মা আমাকে ডেকে উঠলো । “রাতুল!” আমি
দাঁড়িয়ে গেলাম । আন্টিটার ওপর প্রচুর রাগ উঠছে । মানে কি পরিমানে রাগ উঠছে বলতে পারবো
না । ইচ্ছে করছে আন্টিটার নামে মা-কে হাজারটা কু-কথা শোনাই । এমন সময় মা আমাকে বলল,
“আমি তোর রুমে আসছি, তোর ব্যাগ চেক করবো । তুই ভুলেও রুমে ঢুকবি না! কিছু থাকলে আগে-ভাগে
সরিয়ে ফেলতে পারিস!”
(সমাপ্ত)