ফ্লেক্সিলোড করা ভালোবাসা
রাহাত তখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল । খুব খারাপ লাগছিলো ওর । কিছুতেই কোন কাজে মন বসছিল না । হঠাৎ রাহাত দেখল, একটা মাতাল ছেলে রাস্তার পাশে পরে আছে । রাহাত ওর কাছে যেয়ে দেখল, ছেলেটা গুন গুন করে আতাল অবস্থায় কি কি বলছে । গায়ে বিয়ের পোশাক । রাহাত ছেলেটার কাছে যেয়ে ডাকল, কিন্তু কোন সারা দিলো না । রাহাত ছেলেটাকে কোনরকমে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে যেয়ে হাত মুখ মুছে দিয়ে লেবু পানি খাওয়ালো । তাড়াতাড়িই ছেলেটার মাতাল ভাব । কেটে গেলো । ছেলেটা রাহাতকে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ । আমি রাহাত হাসান ।” রাহাত তখন ভাবল এটা কি সেই রাহাত কি না যার সাথে রিদির বিয়ে হওয়ার কথা । জিজ্ঞেস করলো, “আপনার সাথে কি রিদি নামের একটা মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা?” রাহাত হাসান তখন অবাক হয়ে বলল, “আপনি কিভাবে বুঝলেন?” রাহাত তখন সবটা খুলে বলল । রাহাতের কথা শুনে রাহাত হাসান বলল, “জানেন । আপনি মেয়েটাকে ঠকান নি । ঠকাচ্ছে আমার সৎ বাবা মা ।” রাহাত অবাক হয়ে বলল, “মানে?”
প্রায় দেড় মাস আগের কথা ।
“মামা একটা নাম্বার লেখ তো ।” দোকানে এসেই দোকানদারকে কথাটা বলল রাহাত । দোকানদার রাহাতের কথার কোন পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে গেম খেলছে । রাহাত আরেকবার বলল, “মামা ফ্লেক্সিলোড করবো, নাম্বার লেখেন ।” দোকানদার এবারও কথা কানে নিলো না । গেম খেলায় উনার এতোটা মনোযোগ যে এখন দোকানের মধ্যে একটা অজগর সাপ ঢুকলেও টের পাবে না । কিন্তু অজগর সাপ তো আর রেগে যাবে না, রাগবে মানুষই । রাহাতের ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম নয় । কৌটা থেকে একটা চকলেট বের করে ছুঁড়ে মারল দোকানদারের মোবাইলের ওপর । দোকানদার তখন চমকে উঠে দাঁড়ালো । রাহাত রেগে গিয়ে বলল, “কখন থেকে ডাকতেসি শুনতে পান না?” দোকানদার বলল, “ভাই কি বউয়ের লগে ঝগড়া কইরে আইসেন?” রাহাত অবাক হল । বলল, “মানে?” “না, চেইতা আসেন যে, তাই জিগাইলাম আর কি ।” রাহাত কিছু বলতে পারলো না । ওর রাগগুলো জমে পাথর হয়ে যাওয়ায় আর প্রকাশ করতে পারলো না । অবশ্য দোষীকে দোষ বলার পরও যদি উল্টাপাল্টা কথা বলে তবে রাগ হওয়াটাও স্বাভাবিক । একটু পর হঠাৎ কেউ রাহাতকে বলে উঠলো, “Excuse me.” একটা মেয়েলি কণ্ঠ । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, একটা মেয়ে । বলিউড সিনেমাগুলোতে নায়ক প্রথমবার নায়িকাকে যেমনভাবে দেখে, ঠিক তেমনি রাহাতও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল । হাওায় মেয়েটার মলিন কালো চুলগুলো উড়ছে । গায়ে লাল সালোয়ার কামিজ । মাথায় ওড়না দেয়া । কাঁধে একটা ব্যাগ । সম্ভবত ভার্সিটিতে পড়ে । গায়ের রঙ ফর্সা । রাহাত সেই যে তাকিয়ে আছে তো তাকিয়েই আছে । ওর মন যেন অন্য কোনো ভাবনায় ডুবে গেছে । হঠাৎ ওর মন সেই ভাবনা থেকে বাস্তবতায় ফিরে এলো যখন মেয়েটা হঠাৎ বলে উঠলো, “কি আমাকে দেখতে খুব সুন্দর ।” রাহাত আর কিছু বলল না । একটু অবাক হয়ে গেলো । তারপর মেয়েটাকে সাইড দিলো রাহাত । “মামা, মোবাইলে ১০০টা টাকা ফ্লেক্সিলোড করে দিয়েন তো ।” বলেই মেয়েটা চলে গেলো । রাহাত অবাক হয়ে গেলো । কারণ মেয়েটা নিজের নাম্বার ও টাকা না দিয়েই চলে গেলো । দোকানদারকে রাহাত বলল, “আচ্ছা, মেয়েটা তো নাম্বারই দিলো না, ফ্লেক্সিলোড দিবেন ক্যামনে?” দোকানদের মেয়েটার মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড দিতে দিতে বলল, “উনি তো আমার দোকানেই ফ্লেক্সিলোড কইরা যান, তাই করতে করতে আমার মুখস্থ হইয়া গেছে ।” রাহাত ইয়ার্কি করে বলল, “আপনার গার্লফ্রেন্ড?” দোকানদার বলল, “না না, ছি ছি, কি কইতাসেন । আমি উনারে আমার বোনের চোখে দেহি ।” রাহাত বলল, “তাহলে টাকা দিলো না যে?” “সারা মাস যেই টাকা হয়, সব একসাথে মাস শেষে দিয়া যান । ঐ বাকি টাইপের ফ্লেক্সিলোড ।” রাহাত আর কিছু বলল না । দোকানদার মেয়েটার মোবাইলে ফ্লেক্সি করা শেষে বলল, “কোন আপনার কোন নাম্বারে ফ্লেক্সিলোড করা লাগবো ।” রাহাত একটু হেসে বলল, “ভালোবাসা ফ্লেক্সিলোড করতে পারবেন?” দোকানদার অবাক হয়ে বলল, “অ্যা? ভালোবাসা ফ্লেক্সিলোড?” রাহাত বলল, “না কিছু না । নাম্বারটা লেখেন ।” এরপর দোকানদার রাহাতের মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড করে দিলো । রাহাত টাকা দিয়ে চলে আসতে নেবে হঠাৎ কি মনে করে দোকানদারকে বলল, “আচ্ছা, মেয়েটার নাম কি?” দোকানদার বলল, “রিদি ।” রাহাত ফোনটা হাতে নিয়ে বলল, “মোবাইল নাম্বারটা দেন ।” দোকানদার রাহাতের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল । এক প্রকার দ্বিধায় আছে । দেবে কি দেবে না ভাবছে । রাহাতই কিছুক্ষণ পর বলে উঠলো, “না, মেয়েটা জানবে না ।”
সেদিন রাতের কথা । নিজের রুমে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে বই পড়ছে রিদি একটু পর ওর মা এলো । মা আসতেই বই বন্ধ করে পা নামিয়ে বসলো রিদি । ওর মা ওর পাশে এসে বসলো । তারপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “কিরে? কি করছিলি? রিদি বলল, “বই পড়ছিলাম ।” “ আচ্ছা, রাহাত তোকে ফোন দিয়েছিলো?” “না মা । করেনি ।” রিদির মা একটু শ্বাস ফেলে বলল, “দেবে কোন একদিন । ছেলেটা অনেক ভালো । দেখিস, তোর সাথে সুখে সংসার করবে । আর বড় ব্যাবসা চালায় তো, তাই হয়তো সময় পায় না । দেখিস, কোন একদিন কল করবে । আচ্ছা, তুই কেন ওর ছবি এখনও দেখলি না?” রিদি হালকা হাসিমুখে বলল, “মা, তোমরা যাকে পছন্দ করবে, তাকে আমার অবশ্যই পছন্দ হবে । চিন্তা করো না ।” “তারপরেও, আমার রুমে ওর একটা ছবি আছে । দেখাব তোকে । আর হ্যাঁ, ও ফোন দিলে কি ইউবুক না ফেসটিউব.........” মায়ের কথা শেষ না হতেই রিদি বলল, “মা, ওটা ফেসবুক ।” “ ওই যাই হোক, ওটার কি যোগাযোগ করার কি সব ওগুলো জোগাড় করিস ।” রিদি হালকা হেসে বলল, “মা, কি যে বলো, ওটা আইডি, ফেসবুক আইডি ।” “ ঐ হল নিয়ে রাখিস ।” এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ এলো । রিদির মা উঠে যেতে যেতে বলল, “থাক, দেখে আসি কে এসেছে ।” রিদির মা চলে গেলো । রিদি আবার বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বই পড়তে লাগলো । কিছুক্ষণ পর রিদির ফোনে একটা কল এলো । অচেনা নাম্বার ফোনে ধরে বলল, “হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম ।” ফোনের ওপাশ থেকে জবাব এলো, “ওয়ালাইকুম আসসালাম । আমি রাহাত ।” এটা আসলে সকালের সেই রাহাত যে দোকানদারের কাছ থেকে রিদির নাম্বার জোগাড় করেছে । কিন্তু রিদি মনে করলো এটা সেই রাহাত, যাকে ওর মা ওর সাথে বিয়ের জন্য পছন্দ করেছে । রিদি খুশি হয়ে বলল, “ও আচ্ছা, কেমন আছেন?” রাহাত ঠিক বুঝতে পারলো না । কারণ ওকে তো রিদি চেনে না । তবুও কিছু মনে না করে বলল, “ভালো । আপনি?” “ ভালো ।” এরপর ওরা অনেক কথা বলল । রাহাত কিছু কিছু কথা ঠিক বুঝতে না পারলেও এড়িয়ে যেত । রিদিও ওর ফেসবুক আইডি নিলো, রাহাতও ওর ফেসবুক আইডি নিলো । এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ওদের মধ্যে ভাব বিনিময় হতো, কথা হতো । রিদিও ওর মাকে বলেছে রাহাত ওকে ফোন করেছে । রিদির মাও খুব খুশি । এভাবে কেটে গেলো প্রায় ১ সপ্তাহ । একদিন রাতে রিদি কথা বলছিল রাহাতের সাথে । কথার মাঝে হঠাৎ রিদি বলল, “আচ্ছা, তুমি একদিনও আমার সাথে দেখা করলে না?” রাহাত বলল, “কবে করবো বলো । তুমি যেদিনই বলবে, সেদিনই আমি দেখা করবো ।” “কাল করি, ক্যাফে ট্যুরে?” রাহাত বলল, “কখন?” “সকাল ১০ টায় ।” “ ঠিক আছে ।” “আচ্ছা শোনো, আমার মোবাইলে না টাকা শেষ একটু ফ্লেক্সিলোড করে দিতে পারবা?” রাহাত বলল, “হ্যাঁ । কত টাকা দেবো বলো?” “এই ৩০ টাকা দিয়ো ।” “৩০ কেন? তুমি না ১০০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করো?” রিদি অবাক হয়ে গেলো । বলল, “আরে, তুমি জানলে কি করে?” রাহাত বলল, “ভালবাসলে সবই জানতে হয় ।” রিদি হেসে বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে, তুমি ১০০ই দিয়ো । আমি কাল তোমার টাকা দিয়ে দেবো ।” “কেন? টাকা দেবে কেন?” রিদি বলল, “কেন, এইযে তুমি মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড করে দিচ্ছ?” রাহাত বলল, “আমি তো টাকা ফ্লেক্সিলোড করছি না ।” রিদি অবাক হয়ে বলল, “মানে?” “আমি তো ভালোবাসা ফ্লেক্সিলোড করছি ।” রিদি রাহাতের কথা শুনে হেসে দিলো । রাহাত জিজ্ঞেস করলো, “জানো, এরকম ভালবাসাকে কি বলে?” রিদি বলল, “কি?” রাহাত বলল, “ফ্লেক্সিলোড করা ভালোবাসা ।” একটু পর রিদি দেখলো, ওর মোবাইলে রাহাত ১০০টাকা ফ্লেক্সিলোড করে দিয়েছে । পরদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ক্যাফে ট্যুরে যেয়ে বসে ছিল রাহাত রিদির আসার অপেক্ষায় । ১০ বাজার ৫ মিনিট আগেই লাল সবুজ রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে এলো রিদি । হাতে হ্যান্ড পার্স । রাহাত দাঁড়িয়ে রিদিকে ওর কাছে আসতে বলল ।রিদি রাহাতের কাছে আসতেই কেন যেন অবাক ভাবে রাহাতের দিকে তাকিয়ে রইলো । রিদিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাহাত বলল, “কি ব্যাপার? এভাবে তাকিয়ে আছো যে?” “আপনাকে তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি । ফেসবুকে তোমার ছবিগুলো দেখেও মনে হয়েছিলো । আজও মনে হচ্ছে ।” রাহাত বলল, “দেখেছ হয়তো কোথাও । রাস্তাঘাটে তো অনেককেই দ্যাখো । হয়তো কোন একদিন আমকে দেখেছিলে ।” রিদি হালকা হেসে বলল, “হতে পারে ।” “এবার বসো ।” তারপর দুজনেই বসলো । অনেক কিছু খেলো, অনেক গল্প করলো । তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই এভাবে ওরা কথা বলতো । মাঝে মাঝে সময় হতো না । এভাবে কেটে যায় প্রায় ১টা মাস । একদিন রাতে রিদি রাহাতের সাথে কথা বলছিল । কথার মাঝে রিদি বলল, “আচ্ছা, তুমি একদিন এসো আমাদের বাসায় । একদিনও তো এলে না ।” রাহাত বলল, “আসবো?” “ এতক্ষন তাহলে কি বলছি” “ রাহাত হালকা হেসে বলল, “আনটি কিছু মনে করবে না তো?” রিদি বলল, “আরে ধুর? কেন করবে?” “তাহলে কাল আসি? বিকেলে?” রিদি বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে ।” বলেই ফোনটা রেখে দিলো রিদি । একটু পড়েই ওর মা এলো । মা এসে বলল, “কিরে, কার সাথে কথা বলছিলি?” রিদি কিছু না বলে কেবল হাসল । রিদির মা বলল, “বুঝেছি । আর বলা লাগবে না । আচ্ছা শোন । আমার না একটা ভুল হয়ে গেলো ।” “কি ভুল মা?” “ তুই প্রায় ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে রাহাতের সাথে যোগাযোগ করিস, দেখা করিস, কিন্তু আমি তো একদিনও ওর বাবা মার সাথে একটুও কথা বলি নি ।” রিদি বলল, “আচ্ছা মা, বাদ দাও । কাল ও আসছে ।” রিদির মা খুশি হয়ে বলল, “সেকি! তাই?” তাহলে তো ভালো । কখন আসবে?” “বিকেলে মা ।” “আচ্ছা । ও আসুক ওর সাথে কথা বলব । দেখি বিয়ের সময় নিয়ে ওর বাবা মার সাথে কথা বলা লাগবে । কাল ও এলে ওর সাথে যাব ওর বাড়ি ।” পরদিন বিকেলের কথা দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললো রিদি । তারপর বলল, “আসো, ভেতরে এসো ।” রিদি রাহাতকে ড্রইং রুমে বসালো । তারপর বলল, “রাস্তায় আসতে কোন অসুবিধা হয় নি তো?” রাহাত বলল, “আরে না । এতো টেনশন কোরো না ।” রিদি রাহাতকে ড্রইং রুমে রেখে মায়ের কাছে যেয়ে বলল, “মা, রাহাত এসেছে ।” রিদির মা বলল, “কই? চল । ইশ, আগে বলবি না, আমি রান্না করতাম কিছু ।” রিদির মা ড্রইং রুমে এলে রাহাত উঠে দাঁড়ালো । রাহাত সালাম দিলেও রিদির মা জবাব দিলো না । খুব অবাক হয়ে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “কে এটা? এটা তো রাহাত নয় ।”
রিদি অবাক হল । বলল, “কি বলছ মা?” রিদির মা বলল, “না তো! সত্যিই এটা রাহাত নয় ।” তারপর রেগে গিয়ে রিদির মা বলল, “এই ছেলে, কে তুমি? রিদি আমার মনে হয় এই ছেলে তোকে ঠকিয়েছে । একে বের করে দে । ও রাহাত নয় । ও রাহাত নয়......।” বলতে বলতে রিদির মা মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলো । তখনই রিদি রিদির মাকে নিয়ে রিদির মায়ের রুমে নিয়ে গেলো । রাহাত সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল । কিছুই বুঝতে পারলো না । একটু পরেই রিদি অন্য রুম থেকে এসেই রাহাতকে একটা চড় মারল । রাহাত বলল, “রিদি আমি রাহাত ।” রিদি রেগে গিয়ে বলল, “চুপ! একটা কোথাও বলবা না । যাও বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও ।” “রিদি আমার কথাটা তো.........” রাহাতের কথা শেষ করতে না দিয়ে রাহাত বলল, “যাও বেড়িয়ে যাও ।” “রিদি......।” আবার রাহাতকে থামিয়ে দিয়ে রিদি বলল, “আমার সাথে আর কোন কথা বলবা না । যাও বেড়িয়ে যাও ।” রাহাত অনেক চেষ্টা করলো কিছু বলার কিন্তু কিছুতেই পারলো না । অবশেষে রাহাত বেড়িয়ে গেলো । রাহাতকে রিদি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম থেকে ব্লক করে দেয় । এমনকি ফোন নাম্বারও ব্লক করে দেয় । রাহাত রিদির সাথে দেখা করার জন্য সেই ফ্লেক্সিলোড এর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে । রিদি পরিবার নিয়ে সেই বাসা ছেড়ে চলে যায় । ওর বিশ্বাস কোন না কোনদিন রিদির জন্য কেউ কিংবা রিদি নিজেই এই দোকানে ফ্লেক্সিলোড করতে আসবে । কিন্তু রিদি আর ফ্লেক্সিলোড করতে আসে না । মাঝে মাঝে যারা ফ্লেক্সিলোড করতে আসতো, তারা যদি ১০০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করতো, তবে জিজ্ঞেস করতো, “আপনি কি রিদির জন্য ফ্লেক্সিলোড করছেন?” লোকজনও ওকে পাগল বলতো । ও নাম্বারও চেক করতো । মানবার মেলে কিনা । আবার এও ভাবত, যদি রিদি ওর নাম্বার চেঞ্জ করে । এভাবে কেটে যায় আরও ১টা মাস । একদিন একটা মেয়ে আসে ফ্লেক্সিলোড করতে । ১০০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করলো মেয়েটা । রাহাত প্রতিদিনের মতো বলে উঠলো, “আপনি কি রিদির জন্য ফ্লেক্সিলোড করছেন?” মেয়েটা অন্যান্য দিনের সবার মতো অবাক হয়ে তাকালো রাহাতের দিকে । রাহাত ভাবল প্রতিদিনের মতো মেয়েটা ওকে পাগল বলবে । কিন্তু রাহাতের সেই ভাবনায় জল ঢেলে মেয়েটা বলল, “আপনি কিভাবে বুঝেলেন?” রাহাত তারাহুড়া করে বলল, “আপনি চেনেন রিদিকে?” মেয়েটা তখন বলল, “হ্যাঁ তো, চিনি । ও তো আগে এই এলাকায় ছিলো । এখন অন্য এলাকায় থাকে । আপনিই কি সেই রাহাত?” রাহাত, তখন বলল, “ আপনি জানেন কিভাবে?” “আমি রিদির বেস্ট ফ্রেন্ড । রিদি আমাকে সব বলেছে ।” “কি বলেছে?” মেয়েটা তখন বলল, রাহাত নামে একটা ছেলের সাথে রিদির বিয়ে ঠিক করে রিদির বাবা মা যাকে রিদি দেখেই নি । পরে এই রাহাতকে দেখে রিদি ভেবেছিল এটাই হয়তো সেই রাহাত । কিন্তু পরে রিদি জানতে পারে এটা সেই রাহাত নয় । রিদি তখন এই রাহাতকে ঠকবাজ মনে করে আর ওর সাথে এই রাহাতের যেন আর কোনোদিনও দেখা না হয় তাই রাহাত তখন বলে, বিশ্বাস করুন, আমি কিছুই করিনি ।” মেয়েটা তখন হালকা হেসে বলল, “আমি জানি আপনি কিছুই করেন নি । আপনার বন্ধু আকাশ আমার বয়ফ্রেন্ড । ওকে আপনি সব বলেছিলেন । তাই ওর কাছ থেকে সবটা জানার পর আমি বুঝেছি আপনি না বুঝেই ওকে ভালবেসেছেন । কিন্তু একটা কথা আপনাকে বলার খুব ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু আপনাকে খুজে পাইনি আমি । এখন সে কথা বলার জন্য খুব দেরি হয়ে গেলো । রাহাত বলল, “কি কথা?” মেয়েটা বলল, “কাল......কাল রিদির ঐ রাহাতের সাথে বিয়ে ।” রাহাত কিছু বলতে পারলো না । ওর জীবন যেন থেকে গেছে । কিছুক্ষণ পর বলল, “একটা কাজ করতে পারবেন?” মেয়েটা বলল, “কি কাজ?” এরপর রাহাতের সব কথা শুনে মেয়েটা সে অনুযায়ী কাজ করলো । রিদিকে একটা ফোন করে কান্নার স্বরে বলল, “দোস্ত একটা সর্বনাশ হয়ে গেছে । তুই আমাকে বাঁচা, যেই দোকানে তুই ফ্লেক্সিলোড করতি সেই দোকানে চলে আয় ।” এরপরই একটা চিৎকার দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো মেয়েটা । রিদিকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না । এরপর মেয়েটা চলে গেলো নিজের গন্তব্যে । আর রাহাত অপেক্ষায় রইল, কখন রিদি আসে । আধা ঘণ্টার মধ্যেই রিদি চলে আসে দোকানে । এসেই দেখতে পায় রাহাতকে । রিদি, “তুমি?” বলে রাহাতের কাছে এগিয়ে আসে । রাহাত তখন বলে, “হ্যাঁ আমি । তোমার বান্ধবীর মাধ্যমে আমার কাছে নিয়ে এলাম ।” রিদি তখন বলল, “তোমার লজ্জা করে......।” রিদির কথা শেষ করতে না দিয়েই রাহাত বলল, “সেদিন আমি কিছু বলিনি, আজ তুমি কিছু বলবে না ।” একটু থেমে রাহাত আবার বলল, “একটা দিন তোমার সাথে এই দোকানের সামনেই আমার দেখা হয়েছিলো । সেদিন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মেছিল । তারপর আমি তোমাকে ফোন করি । এভাবে তোমার সাথে আমার পরিচয় । কিন্তু আমি কখনই জানতাম না, তুমি আমাকে অন্য কোনো রাহাতের সাথে আমাকে মিলিয়ে ফেলেছো । শেষে একদিন তুমি জানতে পারলে আমি সেই রাহাত নই । আমি অন্য রাহাত, যে টাকা ফ্লেক্সিলোড করে না, করে ভালোবাসা । কিন্তু তুমি আমাকে ঠকবাজের পরিচয় দিলে । আমাকে কিছু বলার সুযোগটুকুও দিলে না ।” রিদি তখন বলল, “আচ্ছা সরি । কিন্তু এখন এসব বলে কোন লাভ নেই । তুমি যাও, নিজের মতো করে জিবন সাজাও । রাহাত তখন একটু হেসে বলল, “তোমার জীবনে অন্য রাহাত ঠিকই আছে । কিন্তু মনে রেখ । আমার জীবনে কিন্তু আর কোনো রিদি নেই । তাই আমার জন্য জীবনটা গুছিয়ে নেয়া এতোটাও সোজা নয় ।” বলেই সেখান থেকে চলে এলো রাহাত । রিদি কিছুই বলতে পারলো না । পরদিন রাতের কথা । বিয়ের সাজ সেজে বসে আছে রিদি । ওর মন ভালো নেই । রাহাতের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে ওর । কিন্তু যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো, সেই রাহাত এখনও আসে নি । ওর পরিবার ঠিকই চলে এসেছে । রিদির মা তখন রাহাতের মাকে বলল, “আচ্ছা রাহাত আর কদ্দুর?” রাহাতের মা বলল, “এইতো ভাবি চলে আসছে । ঠিক তখন রাহাতের মায়ের মোবাইলে তার ছেলে রনির ফোন আসে রাহাতের মা ফোন ধরে বলে, “কিরে রনি, কথায় তোরা?” ফোনের ওপাশ থেকে রনি বলল, “সর্বনাশ হয়েছে । রাহাত মাঝপথে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আর ফিরে আসে নি ।” রাহাতের মা তখন বলল, “কি? আবার নেশা করতে যায় নি তো?”
এদিকে এই রাহাত তখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল । খুব খারাপ লাগছিলো ওর । কিছুতেই কোন কাজে মন বসছিল না । হঠাৎ রাহাত দেখল, একটা মাতাল ছেলে রাস্তার পাশে পরে আছে । রাহাত ওর কাছে যেয়ে দেখল, ছেলেটা গুন গুন করে আতাল অবস্থায় কি কি বলছে । গায়ে বিয়ের পোশাক । রাহাত ছেলেটার কাছে যেয়ে ডাকল, কিন্তু কোন সারা দিলো না । রাহাত ছেলেটাকে কোনরকমে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে যেয়ে হাত মুখ মুছে দিয়ে লেবু পানি খাওয়ালো । তাড়াতাড়িই ছেলেটার মাতাল ভাব । কেটে গেলো । ছেলেটা রাহাতকে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ । আমি রাহাত হাসান ।” রাহাত তখন ভাবল এটা কি সেই রাহাত কি না যার সাথে রিদির বিয়ে হওয়ার কথা । জিজ্ঞেস করলো, “আপনার সাথে কি রিদি নামের একটা মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা?” রাহাত হাসান তখন অবাক হয়ে বলল, “আপনি কিভাবে বুঝলেন?” রাহাত তখন সবটা খুলে বলল । রাহাতের কথা শুনে রাহাত হাসান বলল, “জানেন । আপনি মেয়েটাকে ঠকান নি । ঠকাচ্ছে আমার সৎ বাবা মা ।” রাহাত অবাক হয়ে বলল, “মানে?” রাহাত হাসান সব ঘটনা বলতে লাগলো । রাহাত হাসান যখন ১০ বছর বয়সি, তখন ওর মা মারা যায় । ওর বাবা অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে । সেই মেয়ে আবার রাহাত হাসানের বাবাকে মেরে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে সংসার করতে থাকে । রাহাত হাসান এতো কিছু দেখে নেশাগ্রস্থ হয়ে যায় এখন ওর সৎ বাবা মা রাহাত হাসানের বিয়ে দিতে চায় কিন্তু পারে না । তাই মিথ্যা কথা বলে রিদির সাথে রাহাত হাসানের বিয়ে দিচ্ছে । রিদির বাবা মা জানে রাহাত খুব ভালো, ভালো চাকরিও করে কিন্তু রাহাত মোটেও তেমন নয় । সে নেশা করে আর বেকার । কিন্তু সে যতই খারাপ হোক, অন্যের খারাপ সে চায় না । তাই রিদিকে ঠকাতেও চায় না । সব কথা শুনে রাহাত আর রাহাত হাসান পুলিশ নিয়ে গেলো ঐ বাড়িতে । বিয়ে বাড়ির সবাই পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গেলো । এরপর সবটা জানতে পারলো সেখানে উপস্থিত সবাই । পুলিশ রাহাত হাসানের পরিবারের সবাইকে ধরে নিয়ে গেলো । রাহাত সবার কাছে মাফ চেয়ে চলে গেলো । কাজি তখন বলল, “আমি আর কি করবো তাহলে?” রিদির মা বলল, “কেন, বিয়েটা পড়িয়ে যান ।” রিদির বাবা বলল, “কার সাথে?” রিদির মা রাহাতের কাছে যেয়ে বলল, “ভালোবাসা ফ্লেক্সিলোড করা রাহাতের কাছে ।” তখনই বিয়ে হয়ে যায় ওদের দুজনের । সারাটা জীবন ওরা সুখে শান্তিতে ওরা জীবন পার করতে থাকে ।