পরিচয় পর্ব-২৩৮
পরিচয়(পর্ব-২৩৮)(সিজন-৮)
চয়নিকা
ভ্যাক করে কেদে দিলো । সাবিত চয়নিকাকে বলল, “আ! কাদে না! আচ্ছা যাও, এখানে চিটিং হয়েছে, তাই শপথ আমি ফিরিয়ে নিলাম ।” চয়নিকা কান্না
থামিয়ে বলল, “এবার তো বলুন, সুখবরটা কি!” আবির বলল, “আমি বলি ভাই?” সাবিত বলল, “অবশ্যই,
কি জেনেছিস, আমিও একটু শুনি ।” আবির চয়নিকাকে বলল, “চুনি, তুমি খালামনি হতে চলেছো!”
চয়নিকা কি যেন ভাবতে লাগলো । সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “কি হল! খুশি হও নি তুমি?” চয়নিকা
বলল, “আমি খালামনি হবো, মানে মায়ের বোনকে খালামনি বলে, তাই না?” সাবিত আবিরকে বলল,
“বাহ, তোর বউ তো দেখছি সম্পর্কের মারপ্যাঁচ-ও বোঝে না ।” আবির চয়নিকাকে বলল, “সেকি!
আচ্ছা, তাহলে শোন, তোমার নানা, তার বড় নাতনী, তার ছেলে, তোমার কে?” চয়নিকা কিছুক্ষণ
ভেবে বলল, “ধুরু! কি যে ধরছো!” সাবিত বলল, “হয়েছে, আর দিদি নাম্বার ওয়ান খেলা লাগবে । শোনো চুনি, তোমার
বোন, মানে আমার স্ত্রী মা হতে চলেছে ।” কথা শুনে খুশিতে চুনির চোখ মুখ ইয়া বড় বড় হয়ে
গেলো । আবির বলল, “এতো বড় হ্যাঁ কোরো না, তোমার
বাচ্চা পড়ে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে যাবে ।” চয়নিকা আবার বিরক্ত হয়ে আবিরকে হালকা মেরে
সাবিতের কাছে যেয়ে বলল, “ভাই! কি যে বলবো! কি যে খুশি হয়েছি! আচ্ছা ভাই, মিষ্টি কোথায়?”
সাবিত মিষ্টির প্যাকেটটা বাইরের রুমে রেখে এসেছিলো । “এক মিনিট!” বলে মিষ্টির প্যাকেটটা নিয়ে এলো ওদের কাছে । তারপর আবির আর চয়নিকা দুজনেকেই
মিষ্টি খাইয়ে দিলো । সাবিত দেখল, ওদের রুমে লাগেজ । সেটা দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি, হানিমুনের
গোছগাছ হচ্ছে নাকি?” চয়নিকা বলল, “জি ভাই ।”
“যাচ্ছ
কবে তোমরা?” জিজ্ঞেস করলো সাবিত ।
“পরশু
যাচ্ছি ভাই, সকাল ১০টায় ফ্লাইট ।” বলল আবির
।
“ও,
চুনির মা তো কাল লন্ডনে যাচ্ছে ।” বলল সাবিত ।
“জি
ভাই, আমরাও কাল যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু টিকিট পাইনি ।” বলল আবির ।
“ভাই!
তুমি আর আবির একটু বাইরের রুমে বসো! আমি চা করে আনছি!” বলে চয়নিকা যে-ই উলটো ঘুরতে যাবে, সাবিত
বলল, “আরে, সমস্যা নেই চুনি, আমি এখন আমার মা বাবার বাসায় যাচ্ছি । সময় নেই, অন্য কোনোদিন
এসে খাবো চা ।” আবির চয়নিকাকে বলল, “এই, আমার জন্য করো একটু!” চয়নিকা ভেংচি কেটে,
“নিজে করে খাও!” বলে রান্নায় মন দিলো । সাবিত বলল, “আমি তাহলে আসি!” চয়নিকা বলল, “আচ্ছা
ভাই, আবার আসবেন কিন্তু!” আবির বলল, “চলো
ভাই, তোমাকে নিচ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি ।” বলে সাবিতের সাথে গেলো নিচে আবির । চয়নিকা
আবার রান্নার কাজে লেগে পড়লো ।
পরদিনের
কথা । সোমবার দুপুর ১টা ৩০বাজে। ৩টায় চয়নিকার মায়ের লন্ডন যাওয়ার ফ্লাইট । আবির আর
চয়নিকা নিশানকে আর অয়নকে সাথে করে এসেছে ওদের মা কে বিদায় দিতে । চয়নিকা বলল, “আবার
কবে আসবা মা?”
“টেনশন
করিস না মা, এইতো, ১ মাসের মধ্যেই ফিরে আসবো
। কাল তো তোরা যাবি কক্সবাজার, সাবধানে যাস
কিন্তু! আর শোন, পারলে আজ আঁখির সাথে দেখা করিস ।” বলল চয়নিকার মা ।
“আচ্ছা
মা ।” বলল চয়নিকা ।
“আল্লাহ
হাফেজ আন্টি!” বলল আবির ।
চয়নিকার
মা নিশান আর অয়নকে আদর করে বিদায় জানিয়ে এয়ারপোর্ট-এর ভেতরে গেলো । আবির চয়নিকাকে বলল,
“চুনি, ওদিকে একটা ক্যাফেটেরিয়া আছে, তুমি নিশান আর অয়নকে নিয়ে ওখানে বসে কিছু খাওয়া
দাওয়া করো, আমি একটু মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসি ।” চয়নিকা, “আচ্ছা!” বলে অয়ন আর নিশানকে
নিয়ে গেলো ক্যাফেটেরিয়ার দিকে, আর আবির গেলো মসজিদের দিকে নামাজ পড়তে ।
সেদিন
রাতের কথা । দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই দরজা খুলে দিলো সাবিত । দেখল, চয়নিকা আর আবির
দাঁড়িয়ে । আবির আর চয়নিকা সালাম দিলো সাবিতকে । সাবিত বলল, “আরে! এসো এসো!” চয়নিকা
সাবিতের হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল, “ভাই, এটা নেন, আপুর জন্য কিছু ফলমূল এনেছি ।”
সাবিত বলল, “আরে! এগুলোর কি দরকার ছিল আবার!” চয়নিকা বলল, “কি আনবো, ভেবে পাচ্ছিলাম না, তাই এগুলো আনলাম ।” সাবিত বলল, “এটা
তো তোমাদেরই বাসা, আর নিজেদের বাসায় কেউ এগুলো আনে? চলো, তোমাকে আঁখির কাছে নিয়ে যাই
।” বলে সাবিত আবির আর অয়নকে নিয়ে আঁখির রুমে গেলো । আঁখি শুয়ে ছিল । ওদের দেখে উঠে
বসবার চেষ্টা করলো, চয়নিকা বলল, “আরে! শুয়ে থাকো আপু, সমস্যা নেই ।” চয়নিকা খাটের ওপরেই
বসলো, আবির একটা চেয়ারে বসলো, সাবিত দাঁড়িয়েই রইল । আবির বসতে বলেছিল, কিন্ত সাবিত
বসে নি । আঁখিকে আবির জিজ্ঞেস করলো, “এখন কেমন আছেন আপু?” আঁখি বলল, “এইতো, আছি । তোরা
তো কাল যাচ্ছিস, না?” চয়নিকা বলল, “জি আপু, কাল সকাল ১০টায় ফ্লাইট, এজন্য তোমায় দেখতে
এলাম ।” আঁখি বলল, “মা-ও আজ গেছে, পৌঁছেও গেছে বোধ হয় । দেখতে যেতেও পারলাম না ।” সাবিত
বলল, “হুম, আমিও যেতে চেয়েছিলাম, তা সকালে জরুরী একটা মিটিং ছিলো ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস
করলো, “পেটে ব্যাথা আছে?” আঁখি বলল, “আছে রে, তবে তেমন বেশি না । মাথা ব্যাথা করছে
।” সাবিত বাড়ির কাজের মেয়েকে ডাকলো, “রুবিনা!” কাজের মেয়ে এলো । সাবিত বলল, “যাও তো
আম্মু, একটু চা করে নিয়ে এসো তোমার আপু আর ভাইয়ার জন্য ।” রুবিনা মাথা ডানে কাত করে
সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো । আবির আর চয়নিকা আঁখি আর সাবিতের সাথে কথা বলতে লাগলো ।
আগামী
পর্বেঃ
এমন
সময় কোত্থেকে মাইশা এসে অয়নের পিছে নিশানের হাত ধরে দাঁড়ালো । অয়ন প্রথমে না বুঝতে
পেরে বলে উঠলো, “দেখেছো! এখন মাইশার হাত………………মাইশা!” বুঝতে পেরে পেছন ফিরে তাকাল ।
হালকা লজ্জাও পেয়ে গেলো । আবির আর চয়নিকা হেসে উঠলো । আবির বলল, “কি, তোর গার্লফ্রেন্ড
এসে গেছে!” অয়ন বলল, “ভা…ভা…ভা…ভা…ভা…ভা…ই! রা…রা…রা…খছি!” বলে ফোন কেটে দিলো অয়ন ।