পরিচয় পর্ব-২৩৭
পরিচয়(পর্ব-২৩৭)(সিজন-৮)
এমন
সময় দরজা থেকে একটা মেয়ে কণ্ঠের আওয়াজ এলো, “আসতে পারি?” চয়নিকার মা-বাবা দুজনেই দরজার দিকে তাকাল । দেখল, অয়নের বান্ধবী মাইশা এসেছে
। চয়নিকার মা বলল, “আরে! এসো মা, এসো ।” মাইশা ভেতরে এলো । মাইশা বলল, “আসসালামু আলাইকুম
আঙ্কেল আনটি ।” চয়নিকার মা বাবা দুজনেই সালামের জবাব দিলো । চয়নিকার বাবা বলল, “তা,
কেমন আছো মা?” মাইশা বলল, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল, আপনারা কেমন আছেন?” চয়নিকার
মা বলল, “এইতো মা, আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি । তা হঠাৎ কি মনে করে?” এমন সময় সাবিত
এলো । বলল, “আরে ড্যান্স পার্টনার! কি খবর!” বলে সাবিত একটা মিষ্টি নিয়ে এগিয়ে যেয়ে
মাইশাকে খাইয়ে দিলো । মাইশা মিষ্টি খেয়ে বলল,
“এইতো সাবিত ভাই, আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো । কিন্তু মিষ্টি কিসের?” সাবিত বলল, “আমি
বাবা হতে চলেছি!” কথাটা শুনে বেশ খুশি হল মাইশা । বলে উঠলো, “সত্যি! কংগ্রাটস ভাই!”
চয়নিকার মা বলল, “আমি কিন্তু জবাব পেলাম না কি মনে করে আসা ।” মাইশা কিছু বলার আগেই
সাবিত বলল, “আরে মা, বুঝতে পারছেন না, আপনার
ছেলের কথা খুব মনে পড়ছিলো মেয়েটার, তাই চলে এলো ।” চয়নিকার মা বাবা হালকা হেসে উঠলো
কথা শুনে । মাইশা লজ্জা পেয়ে গেলো । একটু পর
মাইশা বলল, “না আসলে, ভার্সিটি বন্ধ, বাসায় বসে বোর হচ্ছিলাম, ভাবলাম বন্ধুদের বাসায়
ঘুরে আসি ।” চয়নিকার বাবা সাবিতকে জিজ্ঞেস করলো, “সাবিত বাবা, অয়ন কোথায়?” সাবিত বলল,
“আঙ্কেল, ছেলে মিষ্টিও খেলো না, জাস্ট কংগ্রাটস বলেই শেষ!” চয়নিকার মা বলল, “দেখেছো!
কি শয়তান হচ্ছে দিন দিন!” সাবিত হাসিমুখে বলল, “না না আন্টি, ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ
। এই বয়সে এমন তো হবেই ।” মাইশা বলল, “আমি
তাহলে অয়নের রুমে যাই?” সাবিত আবারও ইয়ারকি করে বলল, “আরে অবশ্যই! ওটা তো তোমারই রুম
হয়ে যাবে এক সময়, তাই না?” কথা শুনে লজ্জা পেয়ে হাসিমুখে অয়নের রুমের দিকে গেলো মাইশা
। চয়নিকার মা জিজ্ঞেস করলো, “বাবা, তোমার মা বাবাকে জানিয়েছ?” সাবিত বলল, “এইতো মা, এখনই যাবো । আর
আপনাদের যেমন চমকে দিলাম, মা বাবাকেও তেমন চমকে দেবো ।” চয়নিকার মা সাবিতকে আদর করে
বলল, “আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া! আমরা তোমার আর আবিরের মতো দুজন জামাই পেয়েছি ।”
সাবিত বলল, “মা, এখন আপনি কিন্তু আমায় লজ্জা দিচ্ছেন!” চয়নিকার মা বলল, “আর একটা কথা,
আমায় একটু নিয়ে যাবে আঁখি মায়ের কাছে, আসলে
কাল তো লন্ডন যাবো জানোই, যাওয়ার আগে মেয়েটাকে একটু দেখে যাবো আরকি! যদি তোমার
কোন সমস্যা না থাকে!” সাবিত বলল, “না মা, সমস্যা কেন হবে? অবশ্যই যাবেন আমি আমার মা
বাবাকে খবরটা জানিয়ে ফেরবার পথে আপনাকে নিয়ে যাবো ।”
এদিকে
চয়নিকার রান্না প্রায় শেষ । আবির বাইরে থেকে
ফিরেছে কেবল । রান্নাঘরে এসে আবির বলল, “কি রান্না হচ্ছে আজ?” চয়নিকা বলল,
“ইলিশ মাছ লাউ দিয়ে ।” আবির বলল, “উফ! এই লাউ আমার ভালো লাগে না, আর তুমি সেই লাউই
রান্না করো!” চয়নিকা বলল, “আমি রান্না করি, আমি বুঝবো কি রান্না করবো আমি!” আবির অবাক
হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “মানে!” চয়নিকা চাল ধুতে
ধুতে বলল, “বুঝতে পারেন নি মিস্টার কাপুরুষ? আমিই রান্নাবান্না করি তো, তাই আমিই সিদ্ধান্ত
নেবো আমি কি রান্না করবো!” আবির একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, “ঠিক আছে কামহিলা, আমিও
আজ থেকে সিদ্ধান্ত নেবো আমি টাকা তোমায় দেবো নাকি দেবো না!” চয়নিকা বলল, “মানে! ঠিক আছে, আমি
রান্না-ই করবো না!” আবির ইয়ার্কি করে
কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমি এভাবে বলতে পারলে! যেন তোমার হাতের রান্না না খেলে আমি মরে
যাবো! এলাকায় তো রেস্টুরেন্ট আমায় খেতে দেবে না,
তাই না!” “এই নে টিস্যু!” হঠাৎ আবিরের
দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো সাবিত । আবির প্রথমে বুঝে উঠতে পারে নি । চয়নিকা কথা
শুনে চাল ধোয়া থামিয়ে দিলো । আবির টিস্যু নিয়ে বলল, “থাঙ্কস ভাই………ভাই!” আবির এতক্ষণে
খেয়াল হল ভাই এসেছে । চয়নিকা পেছন ফিরে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, “আরে সাবিত ভাই, তুমি?”
সাবিত বলল, “এই ঢাকা শহরে দরজা খোলা রাখে কোন পাগলে একটু শুনি?” চয়নিকা বলল, “দেখেন
না ভাই, আবিরটা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে, শুধু শুধু ঝগড়া করে । আর ঘরে ঢুকেই মেয়ে
মানুষের মতো এসে জিজ্ঞেস করে কি রান্না করলে!” সাবিত বলল, “আচ্ছা, এই ব্যাপার! তা যাই
হোক । আমি তোদের দুজনকে একটা সুখবর দেবো । তার তোদের দুজনকে একটা শপথ করতে হবে ।” আবির
আর চয়নিকা একসাথে বলল, “কি?” সাবিত বলল, “দুজনকে একসাথে শপথ করতে হবে, আমরা আর কোনোদিন একে অপরের সাথে ঝগড়া করবো না ।” চয়নিকা
বলে উঠলো, “ইমপসিবল! এ ছেলে জীবনেও এই শপথ করবে না ।” আবির বলল, “করবো ভাই, একটা শর্তে,
আগে চুনিকে শপথ নিতে হবে ।” সাবিত বলল, “ঠিক আছে, তাছাড়া লেডিস ফাস্ট ।” চয়নিকা বলল,
“ঠিক আছে! আমি বলবো। কিন্তু পড়ে যেন আবিরও
শপথ নেয়!” সাবিত বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি দেখবো ব্যাপারটা ।” চয়নিকা বলল, “আমি আর
কোনোদিন আবিরের সাথে ঝগড়া করবো না ।” চয়নিকার
বলা হবার সাথে সাথে আবির হো হো করে হেসে উঠলো । সাবিত জিজ্ঞেস করলো, “কিরে তুই
হাসছিস কেন! তুই শপথ না নিলে খবরটা কিন্তু তোকে বলবো না! শুধু চয়নিকাকে বলবো!” আবির
বলল, “দরকার নেই ভাই! তুমি যা বলতে এসেছো সেটা
একটু আগে আমাকে নিশান হোয়াটস অ্যাপ-এ জানিয়ে
দিয়েছে । সো আমায় শপথ নিতে হবে না!” বলে আবার
হাসতে লাগলো আবির । চয়নিকা ভ্যাক করে কেদে
দিলো ।
আগামী
পর্বেঃ
আঁখিকে
আবির জিজ্ঞেস করলো, “এখন কেমন আছেন আপু?” আঁখি বলল, “এইতো, আছি । তোরা তো কাল যাচ্ছিস,
না?” চয়নিকা বলল, “জি আপু, কাল সকাল ১০টায় ফ্লাইট, এজন্য তোমায় দেখতে এলাম ।” আঁখি
বলল, “মা-ও আজ গেছে, পৌঁছেও গেছে বোধ হয় । দেখতে যেতেও পারলাম না ।” সাবিত বলল, “হুম,
আমিও যেতে চেয়েছিলাম, তা সকালে জরুরী একটা মিটিং ছিলো ।” চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “পেটে
ব্যাথা আছে?” আঁখি বলল, “আছে রে, তবে তেমন বেশি না । মাথা ব্যাথা করছে ।”