পরিচয় পর্ব-২৩৬
পরিচয়(পর্ব-২৩৬)(সিজন-৮)
এক
মাস পরের কথা । “এই যে! তুমি এখনই তোমার এই
শার্টটা নিতে ভুলে যেতে!” আবিরকে বলল চয়নিকা । আবির লাগেজ গোছাচ্ছে । চয়নিকা
ওয়াড্রোব থেকে জামাকাপড় বের করে আবিরকে দিচ্ছে আর কথা বলছে । কথাটা বলেই আবিরের হাতে
আবিরের শার্টটা দিলো চয়নিকা । আবির শার্টটা নিয়ে ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “এইতো!
বলেছিলাম তোমায়, কি যেন ভুলে যাচ্ছি । হানিমুনের জন্যই যেটা কিনলাম, সেটাই তুলিনি!”
চয়নিকা আর আবিরের হানিমুন । যাবে কক্সবাজার । আবির জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, তুমিও দ্যাখো, তোমার কিছু বাদ পড়লো
কি না ।” চয়নিকা বলল, “আমি তোমার মতো ভুলোমনা নই । বুঝেছো!” আবির বলল, “ওরে আমার কামহিলা!
সে নাকি নয় ভুলোমনা!” চয়নিকা ড্রয়ার আটকে বিছানায় বসে হালকা রাগ করে বলল, “যে রকমই
হই! তোমার চেয়ে কম ভুলোমনা আছি । সেদিন তো
নিজের মোবাইলটা কোম্পানিতে রেখে এসেছিলে!”
আবির বলল, “আরি বাবা! তুমি তো নিজের মোবাইল নিজের বান্ধবীর বাসায় রেখে এসেছিলে!
তোমার মোবাইলের দাম আমার মোবাইলের চেয়ে বেশি । তাই তুমিও আমার চেয়ে ভুলোমনা বেশি! কাহিনী
খতম!” বলেই হালকা হাসল আবির । চয়নিকা কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল, “হায়রে আমার কপাল! আমি বুঝিনা এই কাপুরুষের মাথায়
এসব গোবর মাখা যুক্তি কি করে আসে!” আবির বলল, “হয়েছে থামো । যুক্তিতে হেরে এখন গোবরে
মাখা যুক্তি বলছে ।” চয়নিকা কিছু বলল না । একটু পর আবির ব্যাগের ভেতর বাকি জামাকাপড়গুলো তুলতে তুলতে বলল, “আচ্ছা, নিশান কোথায়?”
চয়নিকা বলল, “ওকে মায়ের বাসায় পাঠিয়েছি । মা কাল লন্ডন যাবেন তো, ওখান থেকে যা যা আছে
সব নিয়ে আসবেন আর নিশানের স্কুলের ভর্তির জন্য লন্ডনের স্কুল থেকে ওই প্রত্যয়ন পত্র
লাগবে, সার্টিফিকেট লাগবে, সেগুলো আনবেন ।
তাই বলল আজ নাতিকে একটু নিজের কাছে রাখবেন
।” আবির বলল, “আমি বললাম তোমায় নিশানকে আমাদের
সাথে নিয়ে যাই, তুমি শুনলে না আমার কথা ।” চয়নিকা বলল, “তুমি কি পাগল! দ্যাখো,
আমাদের বাসর রাতে তোমার কথায় ও আমাদের সাথে ছিল । এখন আমার কথায় ও আমাদের সাথে যাবে
না কক্সবাজারে ।” চয়নিকার কথা বলার সময় আবির
ব্যাগের চেইন আটকে চয়নিকার পাশে এসে বসলো ।
বলল, “বাচ্চা একটা ছেলে, মা-ও লন্ডনে যাবেন, বাবা প্রায় সারাদিন অফিসে থাকে বলা যায়
। কোথায় থাকবে ও?” চয়নিকা বলল, “সমস্যা নেই । অয়নের সেমিস্টার ব্রেক চলছে । ওর নতুন
সেমিস্টার শুরু হবার আগেই তো চলে আসবো আমরা ।” আবির বলল, “করো, তোমার যা ইচ্ছে ।” বলে
সেখান থেকে চলে গেলো আবির । চয়নিকা আবিরের ওপর হালকা রাগ করে বলল, “করো যা ইচ্ছে! মানে
ছেলেটা যে কি! যাই, রান্না বসাতে হবে আবার
।” বলে রান্নাঘরের দিকে গেলো চয়নিকা ।
“টিংটং!”
চয়নিকার মায়ের বাসায় কলিংবেল বেজে উঠলো । চয়নিকার বাবা রুম থেকে বলে উঠলো, “অয়ন দ্যাখতো
কে এসেছে!” নিশান বলল, “লাভ নেই নানা, মামা এখন কানে হেডফোন দিয়ে পাবজি খেলছে ।” চয়নিকার
বাবা বলল, “এ ছেলে শুধরাবে না!” পাশেই চয়নিকার মা বসে কি যেন লিখছিল । উঠে যেতে যেতে
বলল, “দাড়াও, আমি দেখছি ।” বলে চয়নিকার মা গেলো দরজা খুলতে । দরজা খুলে দেখল, সাবিত
দাঁড়িয়ে । চেহারায় বিমর্ষতার ছাপ । দুহাত পেছনে । চয়নিকার মা প্রথমে হাসিমুখে বলল,
“আরে সাবিত বাবা! তুমি!” পরবর্তীতে সেই হাসি সরে মনে একটা চিন্তার ছাপ নিয়ে জিজ্ঞেস
করলো, “কিন্তু কি হয়েছে, তোমার মন খারাপ কেন?” সাবিত বলল, “আনটি, একটা……।” থেমে গেলো
সাবিত । চয়নিকা মা ডেকে উঠলো । “আঁখির বাবা! এই আঁখির বাবা! তাড়াতাড়ি একটু এসো এদিকে
।” ডাক শুনে একটু পরই আঁখির বাবা এলো । জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে!” আঁখির মা টেনশন নিয়ে
বলল, “দ্যাখো না! সাবিত বাবা কি যেন বলছে!” নিশানও এসেছে নানার সাথে । আঁখির মা জিজ্ঞেস
করলো, “কি হয়েছে বাবা! আমার আঁখির কিছু হয় নি তো?” সাবিত কিছু বলে না । আঁখির বাবা-ও
টেনশনে পড়ে গেলো । জিজ্ঞেস করলো, “কি হল বাবা! আমার মেয়ের কিছু হয় নি তো? কিছু বল!”
সাবিত বলল, “আজ সকালে………।” থেমে গেলো আবার । আঁখির মা জিজ্ঞেস করলো, “বাবা, আমাদের
টেনশনে রেখো না! কি হয়েছে আজ সকালে!” সাবিত বলল, “মা আজ সকালে আঁখি রান্নাঘরে মাথাঘুরে
পড়ে গিয়েছিলো ।” চয়নিকার মা ভয় পেয়ে বলে উঠলো, “কি বলছ এসব!” চয়নিকার বাবা এগিয়ে এসে
বলল, “কোথায় আমার আঁখি! কোথায় ও! কেমন আছে এখন!” সাবিত বলল, “আঙ্কেল আমি ওকে হসপিটালে
নিয়ে গিয়েছিলাম ।” আঁখির মা জিজ্ঞেস করলো, “কি বলেছে ডাক্তার?” সাবিত বলল, “ডাক্তার
বলেছে……………।” কিছুক্ষণ থেকে রইল সাবিত । একটু পর হঠাৎ ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো, প্রচন্ড
খুশি হয়ে বলে উঠলো, “আঁখি মা হতে চলেছে!” কথা শুনে আঁখির মা বাবা দুজনে খুশি হয়ে বলে
উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ্!” হাত পেছন থেকে সামনে আনল, হাতে মিষ্টির প্যাকেট । আঁখির
মা-কে খাওয়ালো, “এই নিন মা, মিষ্টি!” তারপর আঁখির বাবাকেও খাওয়ালো । আঁখির বাবা বলল,
“আজ সকালটাই তুমি আমার ভালো করে দিলে বাবা!”
সাবিত বলল, “সবই আপনাদের দোয়ায় বাবা ।” আঁখির মা জিজ্ঞেস করলো, “আমার আঁখি মা আসে নি?”
সাবিত বলল, “মা, ডাক্তার আজকের দিনটা রেস্ট নিতে বলেছে, তাই আর ওকে আনলাম না ।” এরপর
সাবিত হাটুগেড়ে বসে নিশানকে মিষ্টি দিয়ে বলল, “এই নাও নিশান! মিষ্টি খাও!” নিশান মিষ্টি
হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “খালু, তার মানে আমার একটা ভাই হবে!” সাবিত নিশানের মাথায়
হাত বুলিয়ে বলল, “হ্যাঁ সোনা, তোমার একটা ভাই হবে ।” নিশান খুব খুশি হল কথা শুনে ।
সাবিত উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কই, আমার শালাবাবু কই?” আঁখির মা বলল, “ও তো দিন
দিন বদের হাড্ডি হচ্ছে, রুমেই আছে, কানে হেডফোন গুজে পাবজি খেলছে ।” সাবিত বলল, “যাই,
ওকে তাহলে দিয়ে আসি মিষ্টিটা ।” সাবিত গেলো অয়নের রুমে । সাথে নিশান-ও গেলো । আঁখির
মা আঁখির বাবার কাছে এসে বলল, “কি যে ভালো লাগছে, তাইনা?” এমন সময় দরজা থেকে একটা মেয়ে
কণ্ঠের আওয়াজ এলো, “আসতে পারি?”
আগামী
পর্বেঃ
চয়নিকা
বলল, “মানে! ঠিক আছে, আমি রান্না-ই করবো না!” আবির ইয়ার্কি করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমি এভাবে বলতে পারলে!
যেন তোমার হাতের রান্না না খেলে আমি মরে যাবো! এলাকায় তো রেস্টুরেন্ট আমায় খেতে দেবে
না, তাই না!” “এই নে টিস্যু!” হঠাৎ আবিরের দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো সাবিত । আবির প্রথমে বুঝে
উঠতে পারে নি । চয়নিকা কথা শুনে চাল ধোয়া থামিয়ে দিলো । আবির টিস্যু নিয়ে বলল, “থাঙ্কস
ভাই………ভাই!” আবির এতক্ষণে খেয়াল হল ভাই এসেছে । চয়নিকা পেছন ফিরে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
“আরে সাবিত ভাই, তুমি?” সাবিত বলল, “এই ঢাকা শহরে দরজা খোলা রাখে কোন পাগলে একটু শুনি?”