পরিচয় পর্ব-২৪৩
পরিচয়(পর্ব-২৪৩)(সিজন-৮)
বলে
বিদায় নিয়ে সুরুজের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো আবির ।
“টুকি!”
বলে রুমে দরজা দিয়ে উকি দিলো । চয়নিকা বসে আছে বিছানায় । রেগে যে আছে তা ওর চেহারা
দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আবির যেই না ভেতরে ঢুকল, চয়নিকা অমনি একটা ঝাড়ু খাটের নিচ থেকে
তুলে পাশে রাখলো । আবির হালকা ভয় পেয়ে বলল, “এ…এ…এটা ক…কোথায় পেলে?” চয়নিকা বলল, “এখানে ছিল, তাই পেলাম!”
আবির বলল্, “এটা তুমি কেন ধরলে, হতে পারে এটা দিয়ে কেউ টয়লেট পরিষ্কার করেছে, বা কমোডে
ঢুকিয়ে সাফ করেছে ।” চয়নিকা আরও রেগে গিয়ে
ঝাড়ু হাতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “তাহলে তো আরও ভালো, লাগাবো তো তোমার গায়েই!” আবির, “শোনো,
এমন করে না, প্লিজ!” বলতে বলতে চয়নিকার হাত থেকে ঝাড়ু নিয়ে দূরে ফেলে দিলো । চয়নিকা
আবার বসে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমি কেন আমাকে একা রেখে গিয়েছিলে?” আবির জানালার পাশে
দাঁড়িয়ে বলল, “আহারে, তিন বছরের বাচ্চাকে একা রেখে গিয়েছিলাম ।” চয়নিকা আবার ক্ষেপে
গিয়ে বলল, “তুমি এখনও ইয়ার্কি করছো?” আবির হালকা
হেসে বলল, “কই না তো, ইয়ার্কি কেন করবো?” চয়নিকা আবিরের কাছে আসতে গিয়ে পড়ে
যেতে নিলো, আবির ধরলো চয়নিকাকে । ডান হাত দিয়ে হাত, বা হাত দিয়ে কোমরের পেছনে জাপটে
ধরল । তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে
। জানালা দিয়ে একটা দমকা হাওয়া এলো । চয়নিকার চুলগুলো
উড়তে লাগলো । আবির তাকিয়ে চয়নিকার দিকে, চয়নিকা তাকিয়ে আবিরের দিকে, দুজনের
চোখে দুজনেই দুজনকে দেখতে পাচ্ছে । আবির নিচু মিষ্টি একটা কণ্ঠে প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল,
“আই লাভ ইউ!” চয়নিকাও আবিরের মতো করে বলল,
“আই লাভ ইউ টু!” আবির একইরকমভাবে বলল, “এরকম কেন করো?” চয়নিকাও একইভাবে বলল, “কোথায়,
তুমিই তো করো!” আবির আবার একইভাবে বলল, “আমার
একটা কথা শুনবে?” চয়নিকা একইভাবে বললো, “একশবার, বলো ।” আবির বলল, “হাগু চেপেছে, যাই?”
এবার চয়নিকা আবিরকে দূরে সরিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল, “ইস!! কিসের মধ্যে কি! ধ্যাত!” বলে
চয়নিকা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো । আবির হাসতে হাসতে টয়লেটে ঢুকলো ।
সেদিন
আবির আর চয়নিকা একসাথে অনেক সময় কাটালো । সমুদ্রপাড়ে ভেজা বালুর ওপর হাটল, কিছুক্ষণ
পর পর পানির ঢেউ পায়ের ওপর আছড়ে পড়ছে । আবির আর চয়নিকা দুজন দুজনের হাত ধরে হাটলো ।
হাওয়াই মিঠাই কিনে দুজন দুপাশ থেকে হাওয়াই মিঠাই কামড়ে খেলো । চয়নিকা দৌড়োয়, বাতাসে
চয়নিকার ওড়না উড়তে থাকে, আবির সেটা ধরার জন্য দৌড় দেয় । চয়নিকা আইসক্রিম খেতে যেয়ে
নাকে আইসক্রিম লেগে যায়, আবির সেটা মুছে দেয় । তারপর যখন সূর্যাস্ত হয়, তখন আবির আর
চয়নিকা সমুদ্রপারে বসে আবিরের কাধে চয়নিকা মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখে সময় পাড় করলো ।
রাত
১০টার দিকের কথা । আবির বসে বসে সকালের সুরুজ তালুকদারের কথাটা ভাবছিলো । চয়নিকা বসে
বসে অয়নের সাথে কথা বলছে ।
“সারাদিন
ফোন ধরলা না, তোমার ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে খেলো!” বিরক্ত হয়ে বলল অয়ন ।
“কোথায়
ও? দে ওকে ।” বলল চয়নিকা ।
“এই
যে, তুমি কল দিয়েছো দেখে আব্বুর কাছে পালিয়েছে ।” বলল অয়ন ।
“ও,
আব্বুর কি অবস্থা?” জিজ্ঞেস করলো চয়নিকা ।
“আব্বুর
আমার চেয়ে ভালো আছে । তোমার ছেলে আব্বুর কাছ থেকে আদর খাচ্ছে, আর আমার কাছে এসে বদমাইশি করছে ।” বলল অয়ন ।
“আচ্ছা
বাবা, হয়েছে থাম ।” বলল চয়নিকা ।
“ভাই
কই?” জিজ্ঞেস করলো অয়ন ।
“এই
যে তোর ভাই ।” আবিরের দিকে ক্যামেরা ধরে আবিরকে দেখিয়ে বলল চয়নিকা ।
আবির
হালকা হাসবার চেষ্টা করে হাত নাড়িয়ে হাই জানালো অয়নকে । অয়ন বলল, “কি ভাই? আপুর জ্বালানী
কেমন লাগে?” চয়নিকা নিজের দিকে ক্যামেরা ঘুড়িয়ে রেগে গিয়ে বলল, “অ্যাঁই! আমি জ্বালাচ্ছি
তোর ভাই রে?” অয়ন বলল, “সে তো শিওর হয়েই বলতে পারি আমি ।” চয়নিকা আরও কিছু একটা বলতে
যাবে অয়ন ইচ্ছে করে, “টাটা আপু, কল এসেছে!” বলে ফোন কেটে দিলো । কল কেটে যাওয়ার পর
চয়নিকা নিজেই নিজেকে বলল, “ছেলেটা খুব বদমাইশ! আর আমার ছেলেকে বদমাইশ বলে । ঠিক হয়েছে নিশান ওকে জালাচ্ছে!” আবির কিছুই বলছে না
। কিছু শুনছেও কি না, সন্দেহ । চয়নিকা উঠে বসে আবিরকে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে তোমার?
বাইরে থেকে আসা থেকে দেখছি এভাবে বসে আছো?” আবির হালকা হেসে বলল, “কই, কিছু হয়নি তো,
ডিনার করতে যাই চল ।” চয়নিকা বলল, “না, আগে বলো কি হয়েছে?” আবির চয়নিকার কাধে হাত রেখে
বলল, “আরে, কিছুই না । রাতের খাবার খাবে, নাকি
আমি একাই যাবো?” চয়নিকা বলল, “না, যাবো । চলো যাই ।” আবির আর চয়নিকা খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টে
গেলো ।
আগামী
পর্বেঃ
আবির
বাথরুমের দরজার দিকে হাত বাড়ালো । পুরনো দরজায় জং ধরলে খোলার সময় যেরকম একটা আওয়াজ
হয়, ঠিক সেরকমই একটা আওয়াজ করতে করতে ধীরে ধীরে দরজা খানিক খুলল । একটু খুলতেই আবির
ভেতর উঁকি । দিলো যেই না আবির ভেতরে তাকাল, অমনি একটা গোঙানির আওয়াজ করে বাথরুমে থেকে
সরে এসে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারালো । চয়নিকা কেদে চিৎকার করে উঠলো, “আবির!”