0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-২৪২


পরিচয়(পর্ব-২৪২)(সিজন-৮)

বলেই সুরুজ তালুকদার আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো । আবির কিছুক্ষণ চুপ করে রইল । লোকটাকে ডিস্টার্ব করলো না । একটু পর লোকটা কান্না থামিয়ে তার কাহিনী বলা শুরু করলো । রাতুল চলে যাওয়ার পর আমার ৪বউয়ের ১টাই সন্তান থাকে, রেহালা । রাতুল চলে যাওয়ায় তাহেরা বেশ কয়েকবছর আমার ওপর রাগ করে ছিলো । বলা বাহুল্য তাহেরাকেই কিন্তু আমি বাকি স্ত্রীদের মধ্যে বেশি ভালোবাসতাম । মেয়ে রেহালাকে নিয়ে দিনকাল ভালোই চলতে থাকে । তাহেরা মালেকার ওপর খানিক হিংসে করতো, কারণ রেহালা আমাদের সব কথা মানত, রাতুল যেখানে অবাধ্য হয়ে  বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে । এই ২০০০ সালের দিকে বাড়িতে আসে টিভি, আর ২০০৯ কি ২০১০ এর দিকে এলাকায় হিন্দি সিরিয়াল দেখা শুরু হয় । সেখানে সংসারের কুটকাচালি দেখে দেখে ওদের মাথায় কি যে ঢুকে যায়, আল্লাহই জানেন । ওরা সারাদিন ঝগড়া করা শুরু করে, একেক বউ পাল্লা দিয়ে আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে । তাহেরা তো বাড়িতে যে মহিলা দুধ দিতে আসতো তার সাথেও ঝগড়া করতো । মূলত এমন হয়েছিলো যে ঝগড়া না করলে ওদের শান্তি হতো না । আর ওই যে বলেছি, তাহেরা মালেকাকে হিংসে করতো, সবসময় তো বিনা কারণে  ঝগড়া করা যায় না, তাই দুধ বাড়িতে দিতে আসা ওই মহিলার ওপর সব রাগ ঝাড়ত, দুধে পানি মিশিয়েছে, দুধে ময়লা, দুধ পাতলা ইত্যাদি বলে । এরই মধ্যে গতবছর ঘটে এক ঘটনা, বাড়িতে আমাদের আগুন লেগে যায়, তাতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাহেরা । এমনবাজে ভাবে পুড়েছে যে চেহারার কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । গায়ের জামা পুরে ছাই, শরিরের চামড়া শরীরের সাথে নেই, মাংস বেড়িয়ে গেছে, এমন বীভৎস একটা চেহারা । দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে পুড়িয়েছে তাহেরাকে । এরই সাথে সেদিন থেকে এলাকায় দুধ দিতে আসে না সেই দুধবিক্রেতা মহিলা । আমি তো বুঝেই গেলাম, তাহেরা উনার সাথে ঝগড়া করে বলে তাহেরাকে ওই দুধ বিক্রেতা মহিলা কায়দা করে পুড়িয়ে দিয়েছে । আমি পুলিশে জানালাম, কিন্তু সেই দুধ বিক্রেতা মহিলাকে খুজে পাওয়াই গেলো না । বাকি তিন বউ এদিকে আরও ঝগড়া । কারণ আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম বাড়িতে বাকি তিন বউ কি করছিলো যখন দুধ বিক্রেতা মহিলা তাহেরাকে পুড়িয়ে দিয়ে গেলো । বাড়িতে এক অশান্তি শুরু হয়ে যায় । আমার সেই অশান্তি আর ভালো লাগতো না বলে মাঝে মাঝেই একা একা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতাম । এইতো, লাস্ট মাসেও গিয়েছিলাম, গতকাল বাড়ি ফিরলাম, ফিরে দেখি……………।” লোকটা থেমে গেলো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “কি দেখলেন ফিরে?” লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ফিরে দেখি, আমার রাহেলা নাকি মারা গেছে । সবাই ওকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, মালেকাই শুধু কাঁদছে, বাকিরা রে অভিনয় করছে, স্পষ্টও বোঝা যাচ্ছে । আমি খুব ভয় পেয়ে যাই, এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, তবে কি আমার বউয়েরাই এসব করছে নাকি? যদি করে তাহলে তো আমারও এর থেকে রেহাই নেই, তাই আমি পালিয়ে এখানে এসেছি । আমি জানিনা কতদিন পালাতে পারবো ।” আবির মাথায় হাত দিলো । অবাক হয়ে বলল, “আপনি যে কাহিনী শোনালেন! এতো মনে হয় সিনেমাতেও হয় না কখনও!” সুরুজ হালকা হেসে বলল, “হ্যাঁ, মানুষের জীবন কখনও কখনও সিনেমার চেয়েও বেশি অকল্পনীয় হয়ে যায় । তবে তোমায় একটা কথা বলি, তুমি গোয়েন্দাগিরি করতে পারো বলেই যে আমি আসল অপরাধীকে তোমায় খুজে বের করতে বলছি তা কিন্তু না । বলে একটু মনের ভার থেকে মুক্ত হলাম । তুমি যদি চাও তো করতে পারো ইনভেস্টিগেশন ।” আবির বলল, “হুম, কাহিনি সত্যিই বেশ অদ্ভুত, তবে ঠিক চাক্ষুষ না দেখলে বোঝা যাবে না আসল খুনি কে ।” লোকটা কিছু বলল না । আবির তখন বলল, “আচ্ছা, তাহেরার মৃত্যুর পর আপনার বাকি স্ত্রীদের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখেছিলেন কি?” সুরুজ জিজ্ঞেস করলো, “কি ধরণের পরিবর্তন?” আবির বলল, “মানে, কিছু নিয়ে চিন্তায় থাকে, বা খুব নার্ভাস ফিল করে এমন কিছু?” হাসান বলল, “না না, ওরা কেন করতে যাবে, ওরা তাহেরাকে সতীনের মতো না, একজন ভালো বোনের মতো দেখত ।” আবির ওপর নিচ মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনাদের বাড়িতে আপনি, আপনার, আপনার স্ত্রী আর ছেলে মেয়ে ছাড়া আর কেউ কি থাকতো না?” সুরুজ বলল, “না, আর কে থাকবে ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “না, মানে, কাজের লোক বা দারোয়ান?” সুরুজ জবাব দিলো, “না না, এলাকায় তেমন চোর ছেঁচোড় নেই বললেই চলে, তাই দারোয়ানের দরকার পড়েনা, তার  চার বউ থাকতে কাজের লোক কি আর লাগে?” আবির কিছুক্ষণ চুপ করে কি যেন ভাবল । তারপর বলল, “হুম, আমি ভেবে দেখবো, কি করা যায় । চা খাবেন?” সুরুজ বলল, “না না, মাত্রই তো ভাত খেয়ে এলাম, এখন আর চা খাবো না ।” আবির বলল, “ঠিক আছে, আমি তাহলে রুমে যাই, আসলে বউকে একা রেখে এসেছি তো নইলে পড়ে আবার রাগ করবে ।” লোকটা বলল, “দেখেছো, আমিই কেমন, তোমায় আমিই আমার রুমে আনলাম, আর চায়ের অফারটা তুমি আমায় দিলে ।” আবির বলল, “না ঠিক আছে, আপনি অনেক মেন্টাল প্রেশারে আছেন, এজন্য হয়তো, আপনি রেস্ট নেন, আর ইনশাআল্লাহ আসল অপরাধী ধরা পড়বেই । আমি তাহলে আসি ।” বলে বিদায় নিয়ে সুরুজের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো আবির ।

 

আগামী পর্বেঃ

চয়নিকা উঠে বসে আবিরকে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে তোমার? বাইরে থেকে আসা থেকে দেখছি এভাবে বসে আছো?” আবির হালকা হেসে বলল, “কই, কিছু হয়নি তো, ডিনার করতে যাই চল ।” চয়নিকা বলল, “না, আগে বলো কি হয়েছে?”