0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

পরিচয় পর্ব-২৪১


পরিচয়(পর্ব-২৪১)(সিজন-৮)

তারপর আবার চুপ হয়ে গেলো । একটু পর লোকটা আবার বলল, “তোমার গোয়েন্দাগিরির সাহসিকতার কথাও শুনেছি অনেক । বিশেষ করে ওই মিস্টার হাসানের কথা, অনেক ইন্টারভিউতেও তোমার ছোটবেলার গোয়েন্দাগিরির কথা শুনেছি ।” আবির বলল, “জি, আসলে কাজটা করতে আমার ভালো লাগে খুব, তাই ।”  বয়স্ক লোকটা “হুম” বলে মাথা ওপর নিচ নাড়ালো । এরপর আবার লোকটা চুপ । এবার বেশ অনেকক্ষণ । আবির লোকটার কিছু বলার অপেক্ষায় ছিল কিন্তু যখন দেখল লোকটা  কিছুই বলছে না, তখন আবিরই মুখ খুলল । আপনার কি কোন কারণে মন খারাপ? না মানে আপনার কোন সমস্যা যদি না  থাকে আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন । লোকটা কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো । তারপর আবিরকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, তোমরা কি বেড়াতে এসেছো?” আবির বলল, “জি ।” লোকটা বলল, “আর আমি এখানে পালাতে এসেছি ।” আবির অবাক হয়ে গেলো ।  ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “মানে?” বয়স্ক লোকটা হঠাৎ কেদে দিলো । আবির জিজ্ঞেস করলো, “একি আপনি কাঁদছেন কেন?” লোকটা আরও কিছুক্ষণ কেদে তারপর বলল, “আপনি আমার রুমে যাবেন? বসে কথা বলতাম?” আবির লোকটার কোথায় সম্মতি জানালো । লোকটার রুমে যেয়ে বসলো আবির । তারপর লোকটাকে বলল, “এবার বলুন আপনার কথা ।” বয়স্ক লোকটা বলল, “আমি সুরুজ তালুকদার । এই হোটেল থেকে আমার বাসা ৩০মিনিটের পথ ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “৩০ মিনিটের পথ, তাহলে আপনি হোটেলে কেন?” বয়স্ক লোকটা বলল, “কি করবো, বাড়ি গেলে আমার জীবনের ঝুকি রয়েছে ।” আবির কিছুক্ষণ চুপ করে রইল । তারপর বলল, “ঠিক আছে, আপনি গোঁড়া থেকে বলা শুরু করুন ।” সুরুজ তালুকদার বলতে লাগলো তার ঘটনা ।

“আজ থেকে প্রায় ৫৫বছর আগের কথা । আমার মা রহিমা বেগম আর বাবা আজমির তালুকদার । আমি তখন ভার্সিটির স্টুডেন্ট । আমার বাবা মায়ের বড় সন্তান । আমার আছে আরও দুই ভাই । হাশিম তালুকদার আর লিয়াকত তালুকদার । হাশিম তালুকদার আমার চার বছরের ছোট আর আজমির তালুকদার আমার সাত বছরের ছোট । ভার্সিটি পড়াকালীন আমি তাহেরা বেগম নামে এক মেয়ের প্রেমে পড়ে যাই । চাকরি শেষে বাসার সবাইকে জানিয়ে তাকে বিয়ে করবো বলে সিদ্ধান্ত নেই । এদিকে চাকরি পাওয়ার পর এক ছুটিতে তাহেরা বেগমকে নিয়ে বাড়ি এসে দেখি আমার মা বাবা মালেকা বানু নামে এক মহিলার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে । আমার মা ছিলেন হার্টের রোগী । তিনি একে আমার কথা রাখতে চান, আবার মালেকা বানুকেও কষ্ট দিতে চান না । অবশেষে মালেকা বানু আর তাহেরা বেগমের পরিবারের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আমার সাথে দুজনেরই একসাথে বিয়ে হবে । বিয়ে হল আমাদের । দুই বউ নিয়ে বেশ চলছিল । এদিকে একদিন এক মহিলার সাথে কাজের সুত্রে আমার পরিচয় হয় নাম হেলেনা খানম । একদিন সে জানায় সে নাকি মা হতে চলেছে, অথচ সে এখনও বিয়েই করে নি । লোকলজ্জার ভয়ে সে আমাকে অনুরোধ করে কিছু করতে । অবশেষে তাকে আমি নিজের বউ বলে নাটক করে চালাই, কিন্তু এলাকায় ছড়িয়ে যায় ও আমার বউ । অবশেষে ওকেও মা বাবার অনুরোধে বিয়ে করতে হয় আমার আর দুর্ভাগ্যবশত ওর পেটে থাকা সন্তান মারা যায় জন্মানোর পর পরই । হয়ে গেলো আমার তিন বউ । এদিকে একদিন মায়ের সাবিনা আক্তার আরেক মেয়েকে পছন্দ হয়ে যায় । নেহাতই মা হার্টের রোগী বলে আমি বিয়ে করতে রাজি হই, আর বিয়ের পরদিনই আমার মা মারা যায় । অবশেষে আমি আমার চার বউকে নিয়ে সংসার করতে থাকি । অবাক করা হলেও, মাত্র দেড় বছরের ভেতর এতগুলো ঘটনা ঘটেছে ।” এইটুকু বলে লোকটা একটু থামল । আবির লোকটার এই ঘটনা শুনে হ্যাঁ করে তাকিয়ে রইল । একটা কথা বলবে বলবে ভাবছিল, অবশেষে বলেই দিলো, “আমি তো সবে বিয়ে করলাম,  একমাস হল তাই-ই বউয়ের জালায় বাচি না । আর আপনি ৫৫টা বছর চার চারটে বউ নিয়ে কি করে ছিলেন!” সুরুজ তালুকদার একটু হেসে বলল, “দ্যাখো, ৫৫বছর ওরা আমাকে জ্বালিয়েছে তা কিন্তু নয় । যতদিন বাড়িতে টিভি, মোবাইল এগুলো ছিল না ততদিন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল, বাড়িতে এসব আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে সব ।”  আবির বলল, “ঠিক আছে, আপনি বলুন ।” লোকটা বলতে লাগলো, “মা মরার পর আমার আর তাহেরা বেগমের একটা সন্তান হয়, ছেলে সন্তান । ওর নাম রাতুল জাকের । ছেলে  জন্মানোর কয়েক বছর পর বাবা বেশ অসুস্থ  হয়ে যান । টেনশনে পড়ে যান আমার দুই ভাইয়ের খরচ নিয়ে । তাই সবা জমিজমা আমার নামে করে তিনি মাসখানেক পরই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন । আমি  আমার পরিবার, স্ত্রী, সন্তান ভাইদের ভরণপোষণ  চালাতে থাকি । ভাইরা একে একে বিয়ে করলে সম্পত্তি  ভাগ করে দেই, যেন পড়ে বলতে না পারে আমি ওদের বঞ্চিত করেছি । এদিকে মালেকা বানুর গর্ভে জন্ম নেয় আমার আরেক সন্তান, রাহেলা খানম । আমার মেয়ে । আমার দুই ভাই জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমায়, আর এদিকে আমি আমার চার বউ দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে থাকি । ভার্সিটি পড়াকালীন আমার ছেলে রাতুলের খুব শখ ছিল মিডিয়ায় কাজ করার । কিন্তু আমি ওকে বলেছিলাম এসব  না করে পড়াশুনা করতে । কিন্তু ও আমার কথা না শুনে একটা নাট্যদলে কাজ শুরু করে । আমাকে গোপনই রেখেছিল, কিন্তু আমি ওর এক বন্ধুর মাধ্যমে সবটা জানতে পেরে ওকে ত্যাজ্য পুত্র করে দেই । না, ও নাট্যদলে যোগ দিয়েছে সেজন্য না, ও বাবার অবাধ্য হয়েছে সেজন্য । তাহেরার এতে দ্বিমত ছিল, কিন্তু আমি শুনিনি । অবশেষে রাতুল আমার ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যায় । ছেলে বাড়ি থেকে চলে যাবার পর আমার রাগ কমে । তখন ছেলের জন্য উলটো কষ্ট হতে থাকে । অনেক খুজেও ছেলেকে আর খুজে পাইনি ।” বলেই সুরুজ তালুকদার আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো ।

 

আগামী পর্বেঃ

তাহেরা মালেকাকে হিংসে করতো, সবসময় তো বিনা কারণে  ঝগড়া করা যায় না, তাই দুধ বাড়িতে দিতে আসা ওই মহিলার ওপর সব রাগ ঝাড়ত, দুধে পানি মিশিয়েছে, দুধে ময়লা, দুধ পাতলা ইত্যাদি বলে । এরই মধ্যে গতবছর ঘটে এক ঘটনা, বাড়িতে আমাদের আগুন লেগে যায়, তাতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাহেরা । এমনবাজে ভাবে পুড়েছে যে চেহারার কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । গায়ের জামা পুরে ছাই, শরিরের চামড়া শরীরের সাথে নেই, মাংস বেড়িয়ে গেছে, এমন বীভৎস একটা চেহারা । দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে পুড়িয়েছে তাহেরাকে । এরই সাথে সেদিন থেকে এলাকায় দুধ দিতে আসে না সেই দুধবিক্রেতা মহিলা ।