পরিচয় পর্ব-২৪০
পরিচয়(পর্ব-২৪০)(সিজন-৮)
চয়নিকা
বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, “অসহ্য!”
কক্সবাজারে
ওরা উঠেছে “হোটেল ফর টুডে” তে । রুম বুক করা ছিল ঢাকা থেকেই । রুম নং ৮৮ । রিসিপশন
থেকে ৮৮ নাম্বার চাবিটা নিয়ে রুমের লোকেশন জেনে লিফটে উঠলো । তিনতলায় ওদের রুম । লিফটে
ওদের সাথে একজন বয়স্ক লোক উঠেছে । লিফটের চারদিকে রিফ্লেক্ট করে এমন কিছু দেয়া । যেখানে
চেহারা স্পষ্টও দেখা যায় আয়নার মতো । চয়নিকা আড়চোখে লিফটের একপাশে তাকিয়ে সেখানে বয়স্ক
লোকটার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলো । লোকটার মন খারাপ । মাথা নিচু করে আছে । আবিরের মুখে
এই এক মাসে চাপদাঁড়ি হয়েছে, লোকটার মুখী তার চেয়ে বেশি দাঁড়ি । খুব সম্ভবত লোকটার বুড়ো
বয়সে পদার্পণ কেবলই শুরু হয়েছে । লিফট থেকে বেরোলো ওরা । রুমের দিকে যাচ্ছে । ওরা দেখল,
বয়স্ক লোকটাও ওদের সাথে যাচ্ছে । চয়নিকা মনে মনে
ভাবছে, বয়স্ক লোকটা না থাকলে আবির এখন প্রশ্ন করতো লোকটার সম্পর্কে, কিন্তু
লোকটা সাথে আছে বলে পারছে না । ভেবেই মুচকি মুচকি হাসছে চয়নিকা । রুমে কাছে এসে দাঁড়াতেই
দেখল, বয়স্ক লোকটাও এসে দাঁড়িয়েছে । আবির দরজা খুলতে যাবে, এমন সময় বয়স্ক লোকটা বলল,
“এক্সিউজ মি, এটা আমার রুম ।” আবির দরজা না খুলে লোকটাকে বলল, “বাট এটা তো আমরা বুক
করছি ।” লোকটা বলল, “কেন, এই যে, আমার চাবির ওপরে লেখা, আটাশি!” আবির বলল, “চাবিটা
উলটো করুন!” লোকটা চাবি উলটো করলো । ওপর পাশে লেখা চুয়াল্লিশ । তারপর আবির বলল, “আপনার
রুম চুয়াল্লিশ । বাংলা লেখা দেখে আপনি হয়তো ভুলে আটাশি ভেবেছেন ।” বয়স্ক লোকটা লজ্জা
পেয়ে হালকা হেসে বলল, “ও হ্যাঁ হ্যাঁ! তাই তো দেখছে! আ’ম এক্সট্রিমলি সরি!” আবির বলল, “না না, ইটস ওকে ।” বয়স্ক লোকটা চলে গেলো । আবির
আর চয়নিকা রুমে ঢুকলো । হোস্টেলের নিচে একটা আলাদা রেস্টুরেন্ট আছে । অনেকে সেখানে
যেয়ে খেয়ে আসে, অনেকে সেখানে জানিয়ে রাখে, সময়মতো রুমে খাবার দিয়ে যায় । আবির আর চয়নিকা
নিচে যেয়েই খাবে । আপাতত দুজনে রুমে বিছানায় বসলো । আবির বালিশটা টেনে শুয়ে পড়লো । চয়নিকা উঠে জানালা খুলে দিলো ।
এখান থেকে বিচটা স্পষ্ট দেখা যায় । চয়নিকা
সেটা দেখে বলে উঠলো, “ওয়াও!” আবির ইয়ার্কি করে বলল, “কি কাকে দেখে ওয়াও বললে?” চয়নিকা
আবার বিরক্ত হয়ে বলল, “আমি তোমার মতো না । সেই এয়ারপোর্ট থেকে জালাচ্ছো!” আবির বলল,
“ফায়ার সার্ভিস ডাকবো?”
“মানে?”
ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো চয়নিকা ।
“না
এই যে তুমি বললে আমি তোমাকে জালাচ্ছি, তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি ।” চয়নিকা ব্যাগের দিকে
যেতে যেতে বলল, “অসভ্য!” তারপর ব্যাগ থেকে জামা আর টাওয়েল বের করে “আমি গোসলে গেলাম
।” বলে বাথরুমে ঢুকে পড়লো চয়নিকা । আবির চয়নিকাকে শুনিয়ে বলে উঠলো, “গেলো, আগুন নেভাতে
গেলো ।” চয়নিকা পাত্তা না দিয়ে ঢুকে দরজা আটকে দিলো ।
দুপুরের
কথা । চয়নিকা নামাজ পড়ে উঠতেই আবির নামাজ পড়ে এলো রুমে । তারপর চয়নিকাকে বলল, “চল যাই,
লাঞ্চ করতে যাই ।” বলে চয়নিকাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলো আবির । একটা টেবিলে বসলো ।
খাবার অর্ডার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার চলে এলো । আবির খেতে খেতে খেয়াল করলো,
“ওর পাশের টেবিলেই সকালের সেই বয়স্ক লোকটা বসে । মন খারাপ এখনও । খাচ্ছেন, আবার কি
যেন ভাবনায় ঢুকে যাচ্ছেন, খাচ্ছেন, আবার কি যেন ভাবনায় ঢুকে যাচ্ছেন । আবির লোকটাকে
দেখতে দেখতে খাচ্ছিল ।” খাওয়া শেষে নিজেদের রুমে গেলো আবির আর চয়নিকা । বিছানায় আবার
শুয়ে পড়লো আবির । বলল, “আমার পেট ভরে গেছে!
এখন দেবো লম্বা একটা ঘুম!” বলে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়লো আবির । চয়নিকা ভেংচি কেটে
বলল, “হুহ! তোমার আর কি, শুধু খাওয়া আর ঘুম ।” বলে আবিরের পাশে শুয়ে মোবাইল চালাতে লাগলো চয়নিকা ।
“হ্যাঁ
আপু! এই ত্রি-পিসটা মাত্র ৩০০০ টাকা, এখনই যদি তোমরা ৫টা শেয়ার করো তাহলেই পেয়ে যাবে
ফ্রি হোম ডেলিভারী! এই সুযোগ মিস করবে না! তাড়াতাড়ি করো! এখন এটা দেখাচ্ছি, এটা খুব
সুন্দর! দারুন একটা ডিজাইন, ফুলগুলো দেখে মনে হচ্ছে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে!........................।”
আবিরের পাশে শুয়ে ইউটিউব-এ জামাকাপড় বিক্রির এসব ভিডিও দেখছিল চয়নিকা । জোরে সাউন্ড
দেয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো আবিরের । আবির চোখ খুলে নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল, মাত্র
আধ ঘণ্টা হয়েছে ঘুমানোর । হালকা রাগ করে বলল, “কি শুরু করেছো তুমি! কানের কাছে জামা,
আপু, ফুল, ঘুমাতে দেবে না নাকি? ইয়ারফোনটাও তো নিতে পারো!” চয়নিকা বলল, “সারা বিমানে
আমায় জ্বালিয়েছো, এবার আমি তোমায় জ্বালাবো ।” বলে সাউন্ড আরও বাড়িয়ে দিলো । আবির,
“অসহ্য” বলে রুম টয়লেটে গেলো । একটু পর টয়লেট থেকে বেড়িয়ে রুম থেকে বাইরে যেতে লাগলো,
চয়নিকা জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাচ্ছো?” আবির বলল, “দু-চোখ যেদিকে যায় ।” চয়নিকা বলল,
“আচ্ছা, আসার সময় আমার জন্য শ্যাম্পু এনো তো, যেটা আনতে চেয়েছিলাম, ওটা বোধ হয় ফেলে
এসেছি ।” আবির কোন জবাব না দিয়ে বাইরে চলে এলো । নিচে যেয়ে দেখল, সেই বয়স্ক লোকটা মাত্র
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোচ্ছে । লোকটার আবারও মন খারাপ । আবির লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে লোকটা বোধ হয় নিজে থেকেই আবিরের
কাছে এগিয়ে এলো । বলল, “আপনার সাথে সকালে দেখা
হল না?” আবির বলল, “জি ।” লোকটা বলল, “তখন খেয়াল করিনি, এখন আপনাকে দেখে চিনেছি, আপনি
দ্যা ইনভেস্টিগেশন শো এর আবির না?” আবির বলল, “ইয়ে মানে, হ্যাঁ ।” লোকটার ঠোঁটে জোর
করে আনা একটা হাসির দেখা পেলো আবির । লোকটা তারপর বলল, “মাঝে তো বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো,
এরপর কাকে যে আনলো, এক আর ভালো লাগে না । আপনি ছেড়ে দিলেন কেন?” আবির বলল, “না আসলে,
পার্সোনাল কিছু ঝামেলার জন্য ছেড়েছি ।” লোকটা “ও” বলল শুধু । তারপর আবার চুপ হয়ে গেলো
।
আগামী
পর্বেঃ
আবির
জিজ্ঞেস করলো, “একি আপনি কাঁদছেন কেন?” লোকটা আরও কিছুক্ষণ কেদে তারপর বলল, “আপনি আমার
রুমে যাবেন? বসে কথা বলতাম?” আবির লোকটার কোথায় সম্মতি জানালো । লোকটার রুমে যেয়ে বসলো
আবির । তারপর লোকটাকে বলল, “এবার বলুন আপনার কথা ।” বয়স্ক লোকটা বলল, “আমি সুরুজ তালুকদার
। এই হোটেল থেকে আমার বাসা ৩০মিনিটের পথ ।” আবির জিজ্ঞেস করলো, “৩০ মিনিটের পথ, তাহলে
আপনি হোটেলে কেন?” বয়স্ক লোকটা বলল, “কি করবো, বাড়ি গেলে আমার জীবনের ঝুকি রয়েছে ।”