0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

গোয়েন্দা আরিফ -১ - বদলা


 

বদলা

লেখকঃ সাদাত আলম প্রতীক

 

সারাটা রাত বৃষ্টি হয়েছে । সকালের আবহাওয়াটাও তেমন সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না । বৃষ্টি কখন কোন দিক থেকে আসে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই । পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে থাকার কারণে সূর্যের একটু কষ্ট হচ্ছে নিজের আলো ভরা চেহারাটা দেখাতে । সেরকমই একটা সময়ে বারান্দায় বসে চোখ বন্ধ করে কি যেন ভাবছে আরিফ । পাশে থাকা টেবিলে রাখা চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, টেরও পায় নি । একটু পর বাড়ির কাজের লোক মিজান । কাপটা হাতে নিয়ে বলল, “ও ছোট কর্তা, আপনের চা ডি তো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে ।”

আরিফ চোখ খুলে একটু হেসে বলল, “আর বোলো না কাকু । সারাদিন এতো কাজ করতে হয়, চিন্তায় চিন্তায় শেষ একদম । এই চিন্তা করতে করতেই আবার ভুলে গেছি । কিছু মনে কোরো না ।” মিজান বলল, “আহা, এতে মনে করার কি হইলো । আপনে আসেন । সকালের নাস্তা হইয়া গেছে ।” আরিফ দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “আহ কাকু, তোমাকে না বলেছি আমাকে আপনি করে না বলতে । তুমি বা তুই করে বোলো । আমি তোমার ছোট না ।” মিজান তখন বলল, “আইচ্ছা আইচ্ছা, বলমুনে । এহন চল তো ।

আরিফ বারান্দার গাছগুলো দেখতে দেখতে বলল, “তুমি যাও, আমি আসছি ।” মিজান চলে গেলো । আরিফ দেখল, বাগানে আজ নতুন ফুল ফুটেছে । বৃষ্টির পানিতে ভিজে ফুলটাকে আরও সুন্দর লাগছে । আরিফের জীবনটা এতো সহজের ছিল না । ওর বর্তমান বয়স ২৩ । ধানমন্ডিতে বিরাট একটা ম্যানশনে ও আর মিজান থাকে । আরিফ সবে পড়াশুনা শেষ করে গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দিয়েছে । পাশাপাশি ওর বাবার কোম্পানিও চালাচ্ছে । মিজান ওর থেকে বয়সে ৩৩ বছরের বড়ওদের বাড়ির কাজের লোক হিসেবে অনেক বছর আগে এসেছিলো । আরিফ তখন খুব ছোট থাকায় ছোট কর্তা বলেই ডাকতো । এখনও কাজ করছে, কিন্তু আরিফ উনাকে আর কাজের লোকের চোখে দেখে না । নিজের বাবার মতোই মনে করে । চার বছর আগে ওর বাবা মাকে কেউ খুন করে । পুলিশ ওর বাবা মার হত্যার কোন কূলকিনারা করতে পারে নি । তাই নিজেই গোয়েন্দা হয়ে খুজতে চায় ওর বাবা মার হত্যাকারীকে । আজ ওর সেই সময় এসেছে । মা বাবার খুনের রহস্য ও উদ্ধার করতে চায় আর খুনিদের শাস্তি দিতে চায় ।

ডাইনিং রুমে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়লো আরিফ । মিজান ওর সামনে খাবার এনে রাখল । ডিম ভাজি, আর পরোটা । আরিফ জিজ্ঞেস করলো, “কাকু, তুমি খেয়েছো?” মিজান গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “না, কত কাজ আছে, সেগুলো আগে সেরে নেই, তারপর খাব ।” আরিফ হালকা রাগ করে বলল, “কাকু, প্রতিদিন এক কথা বলতে ভালো লাগে না । কাজ পরে, আগে খাওয়া দাওয়া করে নাও ।” মিজান হালকা হেসে বলল,  “না না, আপনি......তুমি আগে খাও, আমি কাজ সেরে পরে খাব ।” আরিফ থালাটা ঠেলে সরিয়ে বলল, “না, প্রতিদিন তোমার এই এক কথা শুনতে ভালো লাগে না । আজ তুমি যদি না খাও, তবে কিন্তু আমিও খাব না ।” মিজান বলল, “এই দেখো, কেমন বায়না করে বসলে, আচ্ছা যাও , খাচ্ছি ।” অগত্যা মিজান খাবার খেতে রাজি হল । খাওয়া দাওয়া শেষ করে মিজান চলে গেলো মা বাবার রুমে । অনেকদিন এই রুমে আসে নি । সময়ই তো পায় না । কোম্পানির কাজ সামলানোর টেনশনে থাকে সারাক্ষণ । আগে পড়াশুনা আর কোম্পানির কাজ একসাথে সামলাতে হতো বলে আরও সময়ের অভাব ছিল । আজ শুক্রবার হওয়ায় বেশ ভালো হয়েছে ওর জন্য ।

রুমের ভেতর একটা ভ্যাপসা গন্ধ বেরোচ্ছে । একপাশে বিছানা, অন্য পাশে একটা বুকশেলফ যাতে অনেক বই রয়েছে । একটা কোণায় একটা আলমারি । দেয়ালে ক্যালেন্ডার আর মা বাবার ছবি । ঘরে ঢুকতেই মা বাবার ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আরিফ । এরপর এগিয়ে গেলো বুকশেলফটার দিকে । তিন আর চার নাম্বার তাকগুলোতে  ছিল ওর বাবার ডায়রিগুলো । ওর বাবা নিয়মিত ডাইরি লিখতেন । শেষ যে ডায়রিটা অর্ধেক লেখা হয়েছে, খুজে খুজে সেটা বের করলো । তারপর সেটা নিয়ে নিজের রুমে যেয়ে পড়তে লাগলো । জানুয়ারি থেকে । বাইরে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়েছে । এরকম পরিবেশে পড়ার মজাটাই আলাদা । পড়তে পড়তে আরিফের কিছুটা ঘুম আসতে থাকে  । কিন্তু তাও-ও এক প্রকার জোর করে পড়তে থাকে । হঠাৎ একটা লাইন দেখে ওর সব ঘুম ঘুম ভাব চলে যায় । আর সেই লেখাটা ছিল ২০১৭ সালের ২১ মে এর যার ২ দিন পরেই অর্থাৎ ২৩ মে তে ওর বাবা মা খুন হন । সেখানে লেখা, “আজ অফিসে খুব একটা ভালো লাগলো না । রাফির ভাব স্বভাব খুব একটা সুবিধার মনে হল না কাজে মন নেই, শুধু কেমন অদ্ভুত আচরণ করে । আর ইদানিং শুনছি ও নাকি বাড়িতেও খুব একটা ভালো আচরণ করছে না । নিজের ৯ বছরের বাচ্চা মেয়েটার সামনে নিজের স্ত্রীকে নাকি খুব মারে । কেউ এমনটা কখনো করতে পারে? আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেই । কিন্তু কিভাবে করবো, আমার কাছে তো কোন প্রমান নেই ।” ২২ মে ২০১৭ এর পাতায় লেখা, “আজ অফিসের এক ম্যানেজারের কে দিয়ে রাফির স্ত্রীকে অত্যাচার করার ভিডিও সংগ্রহ করলাম । এবার পালা ওকে পুলিশে দেবার । কাল মঙ্গলবার, কাজের চাপ অনেক কম । কাল সময় করে একবার পুলিশকে ডেকে আনবো ।”

আর তারপরের পাতা থেকে  বাকি ডায়রি ফাঁকা । আরিফ বইটা বন্ধ করে ভাবতে লাগলো । কি হতে পারে? রাফিই কি তবে ওর বাবাকে খুন করেছে? আরিফ উঠে তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো থানায় । নিজেই নিজের গাড়ি ড্রাইভিং করে আরিফ । থানায় নেমে চলে গেলো পুলিশ অফিসার আদিতের কাছে । অফিসার আদিত তখন কিছু লিখছিলেন আরিফকে দেখেই দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন, “আরে, আশিক স্যার এর ছেলে যে, কেমন আছো?” আরিফের বাবার নাম ছিল আশিক আহমেদ । আরিফ বলল, “মোটামুটি আছি । অফিসার আদিত তখন বললেন, “আরে দাঁড়িয়ে কেন, বসো ।” আরিফ আর আদিত দুজনেই বসে পড়লো চেয়ারে । আদিত তখন বলল, “কি খাবে বলোচা না কফি?” আরিফ বলল, “না না, এখন কিছুই খাব না ।” “তা হঠাৎ আমার এখানে, কিছু হয়েছে কি?” “না, সেরকম কিছুও হয় নি, শুধু কিছু কথা জানার ছিল ।” “হ্যাঁ অবশ্যই । বলো ।” বলেই আদিত আবার ফাইল নিয়ে লিখতে লাগলো । আরিফ একটু নড়েচড়ে বসে বলল, “আচ্ছা, আমার মা বাবার খুনের Investigation করার সময় আপনারা কি কোম্পানির সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন?” আদিত আরিফের কথা শুনে লেখা থামিয়ে দিলো । তারপর বলল, “২ বছর হঠাৎ এই প্রশ্ন?” আরিফ বলল, “দেখুন অফিসার, আমার বাবা মাকে যেদিন খুন করা হয়, সেদিন আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম যে আমি আমার বাবা মার খুনির ওপর বদলা নেবো । তাই আমি পড়াশুনা করে গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দিয়েছি । এখন আপনি আমার সাহায্যও করুন ।” আদিত হাতের কলমটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল, “দ্যাখো, গোয়েন্দারা recent বিষয়ের ওপর তদন্ত চালায় । কিন্তু তোমার মা বাবার মৃত্যুর বিষয়টা অনেক পুরনো । এখন তদন্ত করা আর ফাঁকা মাঠে গোল করা একই কথা ।” আরিফ দু হাত টেবিলের ওপর রেখে বলল, “মাঠ এখনও ফাঁকা হয় নি । শুধু গোলপোস্টটা দেখতে কষ্ট হচ্ছে । আপনি শুধু বলটা আমার কাছে পাস করুন, গোলপোস্ট খুজে গোল করার দায়িত্ব আমার ।” আদিত কলমটা কলমদানিতে রেখে বলল, “মনে হচ্ছে তুমি নাছোড়বান্দা যা হোক, ফাঁকা মাঠে গোল করার যখন এতই ইচ্ছে তোমার থাকে তাহলে বলিই সব । হ্যাঁ, ঐ আমি তোমার বাবার অফিসের সবার জিজ্ঞাসাবাদ আমরা করেছি । কাউকে বাদ দেই নি । আচ্ছা, তোমার মা সেদিন অফিসে কি করছিলেন?” আরিফ বলল, “ওইদিন আমার মা বাবার জন্য নিজে লাঞ্চ বানিয়ে নিয়ে যান অন্যান্য দিন মিজান কাকু যেতেন, কিন্তু সেদিন মা বাবার anniversary থাকায় মা বাবাকে surprise দেবার জন্য এটা করেছিলেন ।” আদিত শুধু মাথা নাড়লো । কিছু বলল না । আরিফ বলল, “আচ্ছা, আপনারা সেদিন যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, সেটার কোন লিখিত কিছু আছে কি?” “হ্যাঁ, সবার নাম, ঠিকানা, আর ফোন নাম্বার একটা ফাইলে রাখা আছে । আরিফ সেগুলো ভালো করে দেখে বলল, “যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই । আপনারা রাফি নামক একজনকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করেন নি ।” পুলিশ অফিসার আদিত আর কিছু বললেন না । আড়ভাবে আরিফের দিকে তাকিয়ে রইলেন । আরিফ তখন হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই তথ্যগুলো দেবার জন্য ।” অফিসার আবিদ হালকা হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে বলল, “আপনার জন্যও রইল শুভকামনা । আপনার ইনভেস্টিগেশন যেন খুব শীঘ্রই সফল হয় ।” আরিফ এরপর গাড়ি নিয়ে চলে গেলো অফিসে । অফিসের সেক্রেটারি লতিফকে যেয়ে বলল, “লতিফ আঙ্কেল, অফিসের সবার ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য যেমন কবে অফিসে জয়েন করেছে, জন্মদিন, ইত্যাদি এগুলো কোথায় আছে বলতে পারেন?” লতিফ আঙ্কেল বললেন, “ওগুলো তো তোমার বাবা রুমে মানে এখন তুমি যে রুমে থাকো সেই রুমের আলমারিতে আছে ।” আরিফ বলল, “কিন্তু ঐ আলমারির চাবি তো আমি অনেক খুজেছি, কিন্তু পাই নি । এজন্য আলমারিটা খুলেও দেখতে পারিনি কোনোদিন ।” “এখন আমি কি করে বলব । তবে হ্যাঁ, আমি না জানলেও প্রায়ই দেখতাম তোমার বাবা আলমারিটার নিচ থেকে কিছু বের করতেন । হয়তো ওখানেই আছে । আমি শিওর না । তুমি চাইলে একবার দেখতে পারো ।” আরিফ “অনেক ধন্যবাদ আঙ্কেল” বলেই চলে গেলো ওর বাবার রুমে । আলমারির নিচে হাত দিলো । প্রথমে হাত ঢুকাতেই ৪-৫টা তেলাপোকা বেড়িয়ে এলো । আরিফ হঠাৎ চমকে পেছনে ফিরে গেলো ।

আবার এগিয়ে এসে হাত ঢুকিয়ে চাবির মতো কিছু একটা পেলো । বের করে দেখল, এটা আলমারির চাবি । চাবিটার ভেতর সে যেন সফলতার আভাস দেখতে পেলো । “দেখিতো, এর নিচে আর কিছু আছে কিনা ।” বলেই আবার আলমারির নিচে হাত ঢুকাতেই কিছু একটা আছে বুঝতে পারলো । বের করে দেখল, ওটা ওর বাবার ডায়রি । ডায়রিটা ২০০৪ সালের । ঠিক কি কারণে ওর বাবা ডায়রিটা আলমারির নিচে রেখেছে বুঝতে পারে নি । যা হোক, ডায়রিটা বের করে টেবিলের ওপর রাখল । তার আলমারি খুলে সেই ফাইলটা খুজতে লাগলো, যেখানে রাফি নামক ঐ কর্মচারীর সব তথ্য লেখা আছে । অনেকক্ষণ খোঁজাখুজি করার পর অবশেষে সেই ফাইল খুজে পেলো । ফাইলটায় রাফির নামটা কেবল দেখেছে, অন্যান্য তথ্যগুলো দেখতে যাবে, এমন সময় বাসা থেকে মিজান আঙ্কেলের ফোন এলো । ফোনটা ধরতেই ফোনের ওপার থেকে হাফাতে হাফাতে বলল, “হ্যালো ছোট সাহেব, সর্বনাশ হয়ে গেছে । তোমার বাবার ঘরে আগুন লেগেছে ।” আরিফ আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি করে ঐ ফাইল আর ডায়রিটা নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো বাসায় । যেয়ে দেখল, আগুন এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে । অনেক সাংবাদিকরা এসেছে । আরিফ গাড়ি থেকে নামতেই অনেক প্রশ্ন করে বসলো । আরিফ কেবল একটাই জবাব দিলো, “দেখুন আমি মাত্র এলাম, আমি ভেতরের পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আসি, তারপর আপনাদের সব জানাবো ।” বলেই আরিফ ভেতরে গেলো । পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পুরো ঘরটা । ছাইগুলোর ওপর দিয়ে এখনও ধোয়া উড়ছে । ঘরের দরজার পাশে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে কাদছে মিজান । আরিফকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “এইসব কি হইয়া গেলো ছোট সাহেব, বড় বাবুর স্মৃতিগুলা এমনে পুইরা গেলো?” আরিফ কিছুই বলল না। সামনে এগিয়ে যেয়ে দেখল, ওর বাবার সব ডায়রি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে  এবং এমনভাবে পুড়ে গেছে, যেন কেউ ওগুলোই পোড়ানোর জন্য আগুনটা লাগিয়েছে । মিজান আঙ্কেলকে বলল, “আঙ্কেল, শান্ত হও । কি হয়েছিলো বলতো ।” “আমি রান্না ঘরে ভাত চাপায় দিসি, এমন সময় বাইরে থেইকা কেডা জানি বইলা উঠলো আগুন আগুন । বাইরে আইসা দেহি, বড়বাবুর ঘরে আগুন ।” বলেই আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো মিজান । আরিফ কিছু বুঝতে পারলো না কিভাবে কি হল ।

সেদিন রাতের কথা আরিফ নিজের ঘরে পায়চারি করতে করতে ভাবছে কিভাবে কি করবে । ডায়রিটা টেবিলেই রাখা ছিল । হঠাৎ চা হাতে নিয়ে ঘরে এলো মিজান । বলল, “ছোটকর্তাবাবু, আপনার চা ।” আরিফ বলল, “বলেছিনা আমার নাম ধরে ডাকবে আর তুমি করে ডাকবে?” “ও । মনে থাকে না । আরিফ, তোমার চা ।” আরিফ বলল, “এইতো । কতভালো লাগে বলতো । চা টা টেবিলে রেখে দাও আর আজকে তোমার সিরিয়াল নেই?” মিজান হঠাৎ বললো, “আয় হায়, মনেই ছিল না, আইজকা তো ছাড়েনা সে ছাড়েনা সিরিয়ালের মহাপর্ব তাড়াতাড়ি যাই ।” বলতে বলতে আরিফের টেবিলে চায়ের কাপটা রাখতে গিয়ে নজরে পড়লো আরিফের বাবার ডায়রিটা । ডায়রিটা দেখে মিজান বলল, “এই ডায়রি কই পাইলে ছোট.........আরিফ?” আরিফ বলল, “বাবার অফিসে পেয়েছি । কেন?” মিজান ডায়রিটা হাতে নিয়ে বলল, “তোমার বাপ এই ডায়রিটা অনেক খুজসে কিন্তু পায়নাই । খালি বলতো, এর মধ্যে নাকি কি সব জরুরী কথাবার্তা লেখা আছে ।” আরিফ বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে । তুমি চা রেখে যাও, তোমার সিরিয়াল শেষ হয়ে গেলো ।” মিজান চা রেখে চলে গেলো সিরিয়াল দেখতে । আরিফ হঠাৎ কি মনে করে সকালে আনা সেই ফাইলটা খুলে দেখল, রাফি নামক সেই লোকটা অফিসে জয়েন করেছে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৪-এ । তখনই আরিফের খেয়াল হল, ওর বাবার ডায়রিটা যে এনেছিলো, সেটাও ২০০৪ সালের । ডায়রিটা খুলে ৩ সেপ্টেম্বরের পেইজটা খুললো আরিফ । পুরোটা পরে ও নিজেও অবাক । তাড়াতাড়ি ডায়রি বন্ধ করে অফিসের সবাইকে একাটা মেইল করলো । তাতে লিখল, “কাল সকাল ১০টায় সবাই অফিসে আসবেন কারণ আমি আমার বাবার এবং আপনাদের সবার বস ইফতেখারের খুনির সন্ধান করে ফেলেছি । আর আপনারা কেউ ভুল করেও আমার রুমে যাবেন না কারণ ঐ রুমেই আছে আমার বাবা মার খুনির খুনের প্রমান । আপনাদের যাবার জন্য সেই প্রমান হারিয়ে যেতে পারে ।” মেইলটা সেন্ড করেই সিঁড়ি দিয়ে বাসার নিচে এলো আরিফ । মিজানকে বলে অফিসে চলে গেলো ।

পরদিন সকাল ৮টার কথা । পুলিশ অফিসার আদিত হঠাৎ এসে হাজির সেই অফিসে । অফিসের সেক্রেটারি লতিফ অফিসারকে দেখে এগিয়ে এলো তার কাছে । বলল, “আরে অফিসার আপনি?” অফিসার কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “হ্যাঁ আমি । এই কোম্পানির মালিক মিঃ আরিফ আছেন কি?” লতিফ বলল, না উনি তো অফিসে নেই, ১০টার দিকে আসবেন ।” অফিসার বলল, “ইশ! উনার সাথে খুব জরুরী কথা ছিল । উনার বাবা মা-র খুনের একটা কিনারা আমি করতে পেরেছি । যদি কিছু মনে না করেন, আমি কি উনি না আসা পর্যন্ত এখানে থাকতে পারি?” লতিফ বলল, “হ্যাঁ অবশ্যই । আসুন ।” বলে পুলিশ অফিসারকে গেস্ট রুমে নিয়ে বসালো লতিফ । লতিফ চলে আসার সাথে সাথেই পুলিশ অফিসার আদিত চলে গেলো আরিফের রুমে ।

রুমে ঢুকতেই কে যেন পেছন থেকে দরজাটা আটকে দিলো । হঠাৎ দরজা আটকাতে দেখে দরজায় হাত দিয়ে থাবা দিতে দিতে, “দরজা খোল...কে আছিস...দরজা খোল...” বলে চেঁচাতে লাগলো । ঠিক তখনই অফিসার আদিতের কাঁধে হাত রেখে আরিফ বলল, “লাভ হবে না রাফি চৌধুরীর বড় ভাই আদিত চৌধুরী ।” আদিত তখন পেছন ফিরে আরিফকে দেখেই কোমর থেকে পিস্তল বের করতে গিয়ে দেখল, পিস্তলটা নেই । আরিফ তখন বলল, “লতিফ আঙ্কেল তো খুব ভালো কৌশলে আপনার কোমর থেকে পিস্তলটা নিয়েছেন ।” অফিসার আদিত তখন রেগে গিয়ে বলল, “কি চাস তুই?” আরিফ হেসে হেসে বলল, “এ বাবা, এখনই দিতে চাচ্ছেন অফিসার আদিত, আগে পুরো কথাতো শুনুন । অফিসার আদিত তখন বলল, “কিন্তু সমস্যা কি তোর, আমি তোর মা বাবাকে খুন করতে যাবো কেন?” আরিফ তখন বলল, “ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাই নি । বাহ, খুব সুন্দর । এ যেন মেঘ না চাইতেই জল । তো বাকিটাও আপনারই কাছে শুনি ।” বলেই আদিতের কাছে এসে আরিফ হঠাৎই রেগে গিয়ে বলল, “কেন মেরে ছিলেন আমার বাবা মাকে? কেন?”  অফিসার আদিত তখন রাগের বশে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ মেরেছি । কারণ তোর ঐ বাপ আমার ভাইয়ের কুকর্ম পুলিশের কাছে প্রকাশ করতে চেয়েছিল । কিন্তু আমি তা হতে দিতে পারিনা । তাই তো আমি তোর বাবাকে খুন করেছিলাম । আর তোর মা আমাকে দেখেফেলেছিলো তোর বাবাকে খুন করতে । তাই আমি তোর মাকেও খুন করেছি ।” বলতে বলতে থেমে গেলো অফিসার আদিত । আরিফের চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল । বলল, “বাবা একটা অন্যায়ের বিচার চাইছিলেন । কিন্তু সেটা আপনার কাছে খুব খারাপ মনে হল?” অফিসার আদিত তখন বেশ জোর দিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ । আমার কাছে সেটা ছোট মনে হল । কি করবি তুই? পারবি আমারে ধরায় দিতে? পারবি? আছে প্রমান তোর কাছে? গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দিয়েও কিচ্ছু করতে পারলি না তুই।” আরিফ চোখের পানি মুছে বলল, “না, এই মাত্র প্রমান তৈরি হয়ে গেলো । অফিসার আদিত এ কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো । বলল, “মানে?” আরিফ বলল, “লতিফ আঙ্কেল, উনাদের নিয়ে ভেতরে আসুন ।” একটু পরেই দরজা খুলে ভেতরে এলো আদিতের সিনিয়র পুলিশ অফিসার, অফিসার আশিক আর উনার সাথে কয়েকজন সাধারণ পুলিশ । আদিত তখন খুব ভয় পেলো । বলল, “স্যার আপনি?” অফিসার আশিক তখন বলল, “হ্যাঁ আদিত বাবু । সবটাই এই রুমে থাকা সিসি ক্যামেরা দিয়ে দেখলাম ।” অফিসার আদিত তখন ইয়ার্কি করে বলল, “দেখেন কিন্তু শোনেন নি, তাই না?” অফিসার আশিক হেসে বলল, এই রুমে মাইক্রোফোনও আছে । এবার থানায় চলুন । আজ থেকে আপনাকে অনেক কিছু দেখতেও হবে, শুনতেও হবে ।” এরপর উনার আদেশে সাধারণ পুলিশ অফিসার আদিতকে নিয়ে গেলো জীপে তোলার জন্য । অফিসার আশিক তখন বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ আরিফ । আপনার জন্য এই বদমাইশ লোকটাকে ধরতে পারলাম । আর আপনার কথামতো আমার আরেক পুলিশ বাহিনী আপনার দেয়া ঠিকানা দিয়ে ঐ রাফিকে ধরে ফেলেছে । কিন্তু আপনি কিভাবে এগুলো করলেন বলুন তো?” আরিফ  তখন বলল, “আসলে গতকাল আমি বাবার ২০০৪ সালের একটা ডায়রি পেয়েছিলাম । উনারা বাবার অন্যান্য ডায়রি পুড়িয়েও ফেলেছে, কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই ডায়রিটা পোড়ে নি । পরবর্তীতে আমি ৩ সেপ্টেম্বরের পাতাটা খুলে জানতে পারি, এই অফিসার ঐ রাফির ভাই । তখনই আমি শিওর হয়ে যাই এই রাফিই কিছু একটা করেছে । আর তাই তো আমি প্ল্যানমতো এখানে এসে বাকি কাজগুলো করেছি । কাল সবাইকে মেইল করেছিলাম সব প্রমান আমি পেয়েছি । আমি জানতাম এই কথা শুনে রাফি বা রাফির ভাই অফিসে আসবেই । এবং তাইই হল । যদিও ভেবেছিলাম রাতেও আসতে পারে, তাই সারারাত অফিসেই কাটিয়েছি ।” অফিসার আশিক বলল, “আপনার বুদ্ধি আছে ভালো । কিন্তু আপনি নাকি গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দিয়েছেন?” আরিফ একটু হেসে বলল, “না । ওটা ছিল অপরাধীকে ভয় পাওয়ানোর জন্য আমার একটা চালাকি । আর কি জানেন তো, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তখন কিন্তু ব্যাপার সাধারণ মানুষের সাবধানে থাকাটা খুব জটিল হয়ে যায় ।” “ভালো বলেছেন । আমি তাহলে আসি । ঐ আদিত আর ওর ভাইকে একটু উত্তম মধ্যম দিয়ে আসি ।” বলেই অফিসার আশিক চলে গেলেন ।

সেদিন রাতের কথা । টেবিলে বসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিল আরিফ । পাশেই ওর বাবার ২০০৪ সালের ডায়রিটা রাখা ছিল । হঠাৎ খেয়াল হল, মিজান আঙ্কেল বলেছিল, এই ডায়রিতে এমন কিছু আছে যার জন্য অনেক খুজেছে ওর বাবা এই ডায়রিটা । ডায়রিটা তাই খুলে দেখল আরিফ । দেখলো, সেখানে একটা পাতায় লেখা, আমি যখন মারা যাব, তখন আমার ছেলে আমার সুনাম অনেক বাড়াবে ।” ঠিক তার নিচেই ছোটবেলায় বাবার সাথে খেলার সাথে তোলা কিছু ছবি আঠা দিয়ে লাগানো ছিল ।

(সমাপ্ত)