ব্রো এর ঝুলি - শাঁকচুন্নির গল্প-২
(১)
হ্যালো ব্রো রা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি সবাই
আল্লাহর রহমতে ভালো আছো । তো, আজ আমি ভাবলাম ঠাকুরমার ঝুলির গল্পই যেহেতু বলি, তাহলে
ঠাকুরমার ঝুলির গল্পের সিকুয়াল বানালে কেমন হয়? এই যে, যেমন বিভিন্ন মুভির সেকেন্ড
পার্ট বের হয় তেমন! সেই চিন্তাধারা থেকেই আজ আমি বলবো শাঁকচুন্নির গল্প । শাঁকচুন্নির
গল্পের শেষে শাঁকচুন্নিকে ওঝা শেষে শেওড়া গাছের
একটা ডাল কেটে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলেছিল । কিন্তু তার মানে তো এই নয়, শাঁকচুন্নি
অন্য কোথাও সংসার পাতার ফন্দি আটবে না? কেমন হয় সেই শাঁকচুন্নি এই যুগে এলে? সো, তোমরা
তাহলে চুপ করে বসো, আমি আমার ঝুলি থেকে গল্প বের করি ।
শহরের নাম বাদালদি । শহরে গাছ তেমন না থাকলেও সেই
শহরের শেষ প্রান্তে একটা পরিত্যাক্ত বাড়ির পেছনে এখনও রয়েছে একটা শেওড়া গাছ । শাঁকচুন্নির
বাসা এই শেওড়া গাছেই । গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে সে কিছুটা আধুনিকও হয়ে গেছে । সে এখন ফেসবুক
চালায় । এ পর্যন্ত কয়টা যে আইডি খুলেছে, তার হিসেব নেই । শাঁকচুন্নি নামে নিজের আসল
ছবি দিয়ে তো আর ছবি তুলতে পারে না । তাই রূপ আর নাম পাল্টে ফেইক আইডি খুলে ছেলেদের
অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করে । কিন্তু হায়রে
জীবন! এখনকার যুগে যে পরিমাণে বিয়ের আগে রিলেশনের
সংখ্যা বেড়েছে, তাতে বেচারি শাঁকচুন্নির জামাই
খুঁজে পাওয়া ভার । ক্লাস থ্রি বাচ্চাও গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড, ভাবা যায়! এখন তাই বলে
নবাগত শিশুর সাথে তো আর বেচারি শাঁকচুন্নি
সংসার বাঁধতে পারে না । এই এলাকার সবচেয়ে বেশিদিন টেকা রিলেশন তাজ আর বিন্নি । ওরা
প্রায়ই এই পরিত্যাক্ত জায়গায় এসে একাকি সময় কাটায়, গল্প করে । তাই দেখে কষ্ট হয় শাঁকচুন্নির
। শেওড়া গাছে বসে সে আফসোস করতে করতে বলে,
“একা একা গাছে থাকি!
আমি শাঁকচুন্নি!
সুখে আছে তাজের
গার্লফ্রেন্ড বিন্নি!
গায়ে বড় জ্বালা ধরে!
মনে জাগে হিংসে!
রুপে গুণে আমি নই,
কম কোন অংশে!
তাজের ওই বিন্নি
তবু থাকে দেমাগে!
ডাকলো না কেউ আর,
বেবি বলে আমাকে!!!”
এদিকে এক শুক্রবার বিকেলের কথা । তাজ ভার্সিটি
থেকে বিন্নিকে ফোন করে বলল, “বেবি, আজ সন্ধ্যার আগে একটু শেওড়া গাছের কাছে যেতে পারবে,
কিছু কথা ছিল ।” ফোনের ওপাশ থেকে বিন্নি বলল, “কি কথা, ফোনে বলা যাবে না?” তাজ হালকা
হেসে বলল, “উহু, ওটা সামনাসামনি বলতে হবে । আসবে কি না বলো!” বিন্নি বলল, “কোনদিন যাই
নি?” তাজ হালকা হেসে বলল, “আচ্ছা, এসো তাহলে । বাই, লাভ ইউ!” বিন্নিও লাভ ইউ বলে ফোনটা
রেখে দিলো । তাজ ব্যাগ কাঁধে নেবার জন্য মোবাইলটা বেঞ্চের ওপর রেখে উঠে দাঁড়ালো, এমন
সময় তাজের এক বন্ধু, রিদু এসে বলল, “দোস্ত! তাড়াতাড়ি চল! সাদিক অ্যাকসিডেন্ট করেছে!
নিউক্লিয়াস হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে ওকে!” সাদিক তাজের খুব ভালো বন্ধু, তাই প্রিয় বন্ধুর
হঠাৎ অ্যাকসিডেন্ট করার খবর শুনে চমকে উঠলো তাজ । বলল, “কি বলছিস এসব! কি করে হল!”
- “পড়ে বলছি, আগে যাবি কি না বল!” তাড়াহুড়ার সাথে
বলল রিদু । তাজ বলল, “অবশ্যই, চল!” তাজ গেলো রিদুর সাথে । কিন্ত ভুলে ফোনটা রেখে গেলো
বেঞ্চের ওপরেই । হসপিটালে পৌছতে পৌছতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো । আইসিইউ তে ভর্তি সাদিক ।
আইসিইউ-এর গোল কাচের কাছে এসে উঁকি মারল তাজ । সাদিক সেন্সলেস । ডাক্তাররা যা যা করার
করে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেছে সাদিককে । এরই মধ্যে রিদু ডাক্তারের দেখা পেয়ে জানতে
পারলো, কন্ডিশন আগের চেয়ে ভালো আছে, তবে বিপদ এখনও কাটে নি । প্রচুর রক্তপাত হয়েছে,
রক্ত দেয়া হয়েছে, তবে তা কেন যেন সাদিকের শরীর খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না । এখন আল্লাহর
কাছে দোয়া করা ছাড়া উপায় নেই । তাজ আর রিদু বসে পড়লো আইসিইউ এর ওপর রাখা কিছু আসনের
ওপর । তাজের খেয়াল নেই, ও সন্ধায় বিন্নিকে আসতে বলেছে শেওড়া গাছের কাছে ।
(২)
“মা, আমি একটু বেরবো!” বলেই বাড়ি থেকে বেরোতে যাচ্ছিলো বিন্নি, এমন সময়
মা এসে বলল, “কোথায় যাচ্ছিস এই সন্ধ্যে বেলায়, তাও হিজাবটাও পড়িস নি!” বিন্নি হালকা
বিরক্ত হল । ওর হিজাব পড়তে ভালো লাগে না । তবুও মায়ের কথা শুনে
পড়তে হয় । ওর ইচ্ছে, ওর এতো সুন্দর লম্বা চুল! এতো বড় চুল! ছেলেরা দেখে আকর্ষিত হবে, অন্যান্য
মেয়েরা দেখলে হিংসে করবে, তা না, মা ওকে বলে হিজাব পড়তে । হিজাব পড়ে বন্ধুদের সাথে
গ্রুপ স্টাডি করবে বলে বেড়িয়ে গেলো বিন্নি । শেওড়া গাছের দিকে এতে যেতে মাথার হিজাবটা খুলে ফেলল । নিজেই নিজেকে বলল, “উফ! কেন
যে মা এসব হিজাব টিজাব পড়তে বলে!”
এদিকে শাঁকচুন্নি মিনা নামে একটা ফেইক আইডি খুলে
কথা বলছিল জারিফ নামের একটা ছেলের সাথে । শাঁকচুন্নি লিখল, “তুমি আমার জামাই হবে?”
জারিফের রিপ্লাই এলো, “ধুরু, না জেনে, না শুনে
এভাবে কারো জানাই হওয়া যায় নাকি!” শাঁকচুন্নি জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে আমাকে তোমার জিএফ
বানাও! আমাকে তুমি বেবি বলে ডাকবে!” জারিফের
রিপ্লাই- “না, আমি আর বিয়ের আগে এসব রিলেশনে জড়াতে চাই না ।” শাঁকচুন্নি ঠোঁট
বাকাল । মনে মনে বলল, “মানুষ গার্লফ্রেন্ড খুইজা পায় না, আর এ পাইয়াও নেয় না!” শাঁকচুন্নি
বলল, “কেন, কোন সমস্যা আছে কি? মানে পরিবার থেকে মানা, এরকম?” জারিফ বলল, “পরিবার থেকে
মানা তা নয়, আমি আগেও একজনের সাথে রিলেশনে ছিলাম । সে আমাকে ঠকিয়েছে । তারপর থেকে আমি
এসব বিয়ের আগের রিলেশনে বিশ্বাসী নই ।” শাঁকচুন্নি মনে মনে বলল, “ঠকিয়েছে? ঠকায় আবার কিভাবে!” শাঁকচুন্নি
প্রশ্ন করলো, “ঠকিয়েছে! কি করে!” জবাবে ছেলেটা জানালো, সে একটা মেয়েকে পছন্দ করতো ।
নিজের চেয়েও মেয়েটাকে বেশি পছন্দ করতো । মেয়েটাকে
কতো কি-ই না সে দিয়েছে, অথচ শেষমেশ মেয়েটা অন্য একটা ছেলের সাথে অন্য একটা ছেলেকে নিয়ে
চলে গেলো । সেই থেকে জারিফ এখন ছেকা খেয়ে ব্যাকা । জারিফের কাহিনী শুনে চোখে জল এলো
শাঁকচুন্নির । শাঁকচুন্নি জারিফকে বলল, “শোনো, তুমি আমাকে গার্লফ্রেন্ড বানাও । আমি তোমাকে অনেক খুশি রাখবো
।” জারিফ একটা সেন্টি খাওয়া ইমোজি দিয়ে বলল, “তা হয়না । তুমি খোঁজ নিয়ে দ্যাখো, মানচিত্রে
বাংলাদেশ খুঁজে পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি এই বাংলাদেশেই প্রকৃত গার্লফ্রেন্ড
বয়ফ্রেন্ড খুঁজে পাওয়া কঠিন । আমার কথা, সারাজীবন একসাথে থাকতে যখন পারবেই না, তখন
ক্ষণিকের সাথী হয়ে কি লাভ, এতে নিজের যেমন
ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদেরও ক্ষতি করছে । এসব কারণে অনেক লোকের সংসারও ভাঙছে ।” কথাগুলো
শুনে শাঁকচুন্নি ইমোশনাল হয়ে গেলো । মনে মনে বলল, “আহারে! মানুষগুলো আমার মতো ভালো
গার্লফ্রেন্ড চায়, আর এরা এদের ঠকায়!” শাঁকচুন্নির ওই মেয়েটার ওপর রাগ ধরতে লাগলো ।
লিখল, “নাম কি ওই ফাজিল মেয়েটার?” জারিফের রিপ্লাই আসার আগেই শাঁকচুন্নির নজর গেলো
সামনে । একা একা দাঁড়িয়ে বিন্নি । এখানে কেউ সচরাচর তো আসেই না, এলেও সন্ধ্যা বা রাতে
আসে না, এলেও একা একা আসে না । শাঁকচুন্নি মনে মনে বলল,
“আরে! আরে! কাকে দেখি!
তাজের বেবি না!
দেবো ঘাড় মটকে!
টের পাবে কেউ না!”
বলেই মনে মনে হাসা শুরু করে দিলো । তারপর নিচে
নেমে এলো এক বৃদ্ধার রূপে । তারপর বিন্নির কাছে যেয়ে বলল, “কে তুমি! বিন্নি না?” বিন্নি
ভদ্রতার সাথে বলল, “আগে হ্যাঁ বুড়িমা, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না?” বৃদ্ধারুপী
শাঁকচুন্নি বলল, “আমি তোমার বিল্ডিঙের দোতলায় থাকি । নতুন এয়েছি । বাড়িওয়ালার কাছেই তোমার নাম শুনেছি ।” বিন্নি বলল,
“ও আচ্ছা । কিন্তু, আপনি এখানে কি করছেন? শুনেছি জায়গাটা ভালো না ।” বৃদ্ধা বলল,
“ভালো না বলতে?” বিন্নি শেওড়া গাছটা দেখিয়ে বলল, “ওই যে গাছটা, শুনেছি, ওখানে নাকি
একটা শাঁকচুন্নি থাকে । দেখতে খুব কুৎসিত!” বৃদ্ধারুপী শাঁকচুন্নি বলল, “ও, আমিও শুনেছি
।” তারপর বৃদ্ধা এক ভয় সৃষ্টিকারী কণ্ঠে বলল, “তাকে দেখলে শরীরের রক্ত হিম হয়ে যায়! যে দেখে! সে আর কখনো এদিক পানে আসতে
চায় না!” বিন্নি অবাক হয়ে গেলো । বুড়ি এরকম ভয় দেখিয়ে কথা বলছে কেন? এমন সময় শাঁকচুন্নি
রুপী বুড়ি ধীরে ধীরে আবার শাঁকচুন্নিতে পরিণত হতে হতে বলল, “দেখতো! শাঁকচুন্নি দেখতে ঠিক এরকম কি না!” বলেই অট্টহাসি হেসে উঠলো শাঁকচুন্নি
। বিন্নি হতবাক হয়ে গেলো । “ওরে বাবা!” বলে
বিন্নি দিলো এক দৌড়! কিন্তু দুর্ভাগ্য । দৌড়ানোর সময় বাতাসে উড়তে থাকা বিন্নির চুলগুলো
হাত লম্বা করে টেনে ধরে ফেললো শাঁকচুন্নি!
(৩)
তারপর
কাছে টেনে ছোট টেনিস বলের সমান করে ফেলল বিন্নিকে । শাঁকচুন্নি ওকে নিয়ে ডান
হাত, বা হাতে ছুঁড়ে ছুঁড়ে খেলতে খেলতে বলতে লাগলো,
“এইবারে থাকো তুমি, শেওড়া গাছে বন্দি,
ফেইক আইডি ছেড়ে আমি, সংসারে মন দিইই
হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা!”
তারপর শেওড়া গাছের একটা কোটরে বিন্নিকে রেখে নিজে
বিন্নির রূপ নিলো । তারপর রওনা হল বিন্নির বাড়ি ।
এদিকে তাজ আর রিদু বসে ছিল আইসিইউ-এর সামনে, এমন
সময় তাজের মনে পড়ল ও বিন্নিকে আসতে বলেছিল শেওড়া গাছের নিচে । তাজ পকেটে হাত দিয়ে এতোদিনের টিউশনির টাকা দিয়ে কেনা সোনার আংটিটা বের করলো যা বিন্নিকে
দেবার জন্যই বিন্নিকে ডেকেছিল । তাজ পকেটে
হাত দিয়ে দেখল, ওর মোবাইল নেই । তাজ উঠে দাঁড়িয়ে
প্যান্টের পেছনের পকেটেও খুজল, কিন্তু পেলো না । রিদু তাজকে দেখে বলল, “কিরে! কি হয়েছে?”
- “আমার মোবাইলটা বোধ হয় রেখে এসেছি রে!” বলল তাজ
।
- “ওহহো! তুই তাহলে যা, আমি সামলাচ্ছি?” বলল রিদু
।
- “নারে, সমস্যা হল, ওকে বিন্নিকে এক জায়গায় যেতে
বলেছিলাম সন্ধ্যায় । তা তো যেতে পারলাম না, না জানালে খারাপ মনে করবে ।” বলল তাজ ।
- “আমার কাছে তো বিন্নির নাম্বার নেই রে, পুরনো
নাম্বারটা আছে, নতুনটা নেই ।” বলল তাজ ।
- “নতুনটা তো আমারও মুখস্থ নেই রে, এখন কি করি?
সাদিকরেও এই অবস্থায় রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না ।” বলল তাজ ।
এমন সময় ডাক্তার এলো । বলল, “আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের
বন্ধু এখন আশংকামুক্ত । এখন ও রেস্ট নিচ্ছে
।” তাজ আর রিদু দুজনেই বলল, “আলহামদুলিল্লাহ
।” তারপর রিদু বলল, “দোস্ত, এখন তো ঠিক আছে, তুই তাহলে দ্যাখ, বিন্নির কাছে যা । আমি
এদিকটা সামনে নেবো । মোবাইল কাল নিস তাহলে ।” তাজ বলল, “আচ্ছা দোস্ত ।” বলে চলে এলো
। ওদিকে বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি পৌঁছে গেলো বিন্নির বাড়ি । দরজায় যেয়ে নক করলো । একটু
পর বিন্নির মা এলো । বিন্নির মা ওকে দেখে অবাক
হয়ে বলল, “একিরে! তুই হিজাব খুলে ফেলেছিস!” বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি অবাক হল । বলল,
“হিজাব!”
- “এমন ভাব করছিস যেন চিনিসই না! বেরোনোর সময়ই
তো পড়ে গেলি! খুলেছিস কেন তুই? অনেক অসভ্য হয়ে গেছিস তুই! কাল আসুক তোর আব্বা! আমি
তোর আব্বাকে তো বলবই!” বলে চলে গেলো বিন্নির মা । শাকচুন্নির মনে পড়ল, ও বিন্নির হাতে
একটা জিনিস দেখেছিলো । ওটা হাতে করে নিয়েই
এসেছে শাঁকচুন্নি । বিন্নির মা খেয়াল করেন নি । শাঁকচুন্নি সেটা হাতে নিলো ।
তারপর মনে মনে বলল, “কি করে পড়ে এটা?” মুখের চারপাশে হিজাবের যে গোল অংশ কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে
সেটা নজরে পড়ল শাঁকচুন্নির । তারপর “ও! বুঝেছি!” বলে সেই গোল অংশটা গলায় পড়ে নিলো
। তারপর বিন্নির মায়ের সামনে গেলো শাঁকচুন্নি
। হাসিমুখে বলল, “মা, দ্যাখো, আমি হিজাব পড়েছি!” বিন্নির হিজাব পড়ার আজিব ধরণ দেখে
জ্ঞান হারাল বিন্নির বা । শাঁকচুন্নি রুপী বিন্নি আৎকে উঠলো । বুঝল, কিছু একটা ভুল
তো সে করেছে । তাড়াতাড়ি করে মোবাইল বের করে হিজাব পড়ার টিউটোরিয়াল দেখে হিজাবটা পড়লো
তারপর বিন্নির মায়ের চোখে মুখে পানি ছিতিয়ে জ্ঞান ফেরাল বিন্নির মায়ের । ধীরে ধীরে
চোখ খুলল বিন্নির মা ।
- “মা,
ঠিক আছো?” বলল বিন্নিরূপী শাঁকচুন্নির ।
- “হ্যাঁ, তুই ঠিক আছিস?” বলল বিন্নির মা ।
- “হ্যাঁ মা, এইযে দ্যাখো, আমি ঠিক মতো হিজাব পড়েছি
। তখন তো আমি ইয়ার্কি করেছিলাম ।” বলল বিন্নিরূপী
শাঁকচুন্নি ।
- “হুম, সর, রাতের রান্না করা বাকি আছে এখনও । ওটা সেরে ফেলি ।” বলল বিন্নির মা ।
- “না মা, তোমার শরীর ভালো নেই, আমি আজ রান্না
করবো ।” বলল বিন্নিরূপী শাঁকচুন্নি ।
- “ঠিক আছিস তুই? যে তুই রান্নাঘরের ধারের কাছে
যেতি না, সেই তুই রান্না করবি?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো বিন্নির মা ।
- “উফ মা, আমায় একটু পালটাতে দাও তো । তুমি রেস্ট নাও, আমি রান্না করি ।” বলেই রান্নাঘরের
দিকে গেলো শাঁকচুন্নি । বিন্নির মা অবাক হয়ে শুধু তাকিয়েই রইল, কিছু বলল না ।
রান্না ঘরে গিয়ে বিন্নিরূপী শাঁকচুন্নি বলল,
“শাঁকচুন্নি এবারে,
করবে মজার রান্না,
সুখের দিন এলো মোর,
আর নয় কান্না!
হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা”
(৪)
আমাবস্যার
রাত । শহর ভরা আলো থাকলেও, এই শেওড়া গাছের এখানে অন্ধকার । একে তো অন্ধকার, তারওপর দুর থেকে আসা হালকা আলোর জন্য জায়গাটা
আরও অন্ধকার হয়ে আছে । অনেক কষ্টে তাও খানিকটা দেখা যাচ্ছে । তাজ সেভাবেই তাকাল চারিদিকে
। ডাকলো, “বিন্নি!” কোনো সাড়া এলো না । তাজ আবারো বলল, “বিন্নি!” আওয়াজ এলো না । আবির
আবারও ডাকলো, “বিন্নি!” কোন সাড়া নেই । তাজ তাও কোন সাড়া পেলো না । তাজ যখন চলে আসতে
নেবে, সেই সময় তাজ একটা আওয়াজ শুনতে পেলো । কারো নাক মুখ চেপে ধরলে গলা থেকে যে একটা
আওয়াজ আসে, সেই আওয়াজ । তাজ একবারটি পেছন ফিরে
তাকাল । কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না । যদিও মনে হচ্ছে এই শেওড়া গাছ থেকেই আওয়াজ আসছে,
কিন্তু তবুও, শব্দটাকে দুরে শহরের শব্দের মাঝ থেকে আসছে বলে মনে করে সেখান থেকে চলে
এলো তাজ ।
ডাইনিং
রুমে এসে বিন্নির মা দেখল, বিন্নি টেবিলে দুটো থালায় ভাত, ডাল, তিল ভর্তা আর কচু ভর্তা
করে রেখেছে । বিন্নির মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “একিরে! যে তুই পিজ্জা, পাস্তা, বিরিয়ানি
এসব ছাড়া খেতেই পারতি না, সেই তুই কি না ডাল ভাত কচু এসব করেছিস!” বিন্নি বলল, “মা,
তোমায় বললাম না, আমায় এবার একটু বদলাতে দাও?” বলে একটু হেসে উঠলো । বিন্নি মা আর বিন্নি
চেয়ারে বসলো । দুজনে খাওয়া শুরু করলো । বিন্নির মা কচু ভর্তা আর ডাল দিয়ে খেতে খেতে
বলল, “কচু আর ডালটা বেশ হয়েছে, একটু লেবু হলে
খাসা হতো ।” বিন্নি বলল, “লেবু খাবেন মা, দাঁড়ান দিচ্ছি ।” বলে বিন্নি উঠে এলো লেবু
আনতে । মনে মনে নিজেই নিজেকে বলল, “আগের বার হাত লম্বা করেছিলাম বলে বামুনের মা টের
পেয়ে গিয়েছিলো । এবার আর সেই ভুল করা যাবে না ।”ফ্রিজ থেকে লেবু এনে টেবিলে রেখে এক
হাতে আঙ্গুলের নখ বড় করে কাটতে লাগলো বিন্নি । হাতের নখ লম্বা করার এ দৃশ্য দেখে বিন্নির
মা হতবাক! মনে মনে বলল, “ঠিকই ধরেছি! বিন্নির কিছু একটা হয়েছে! কিন্তু ভুতে ধরেছে,
নাকি বিন্নির ভুত সেজে এসেছে তা তো বুঝতে পারছি না । এখন চুপ করে বসে থাকি বাবা!
কাল সকালে বিন্নির বাবা এলে দেখা যাবে । কিন্তু ততোক্ষণ আমি কি করবো?”
টিং
টং! দরজার কলিংবেল বেজে উঠলো । বিন্নি গোসল করতে ঢুকেছে । তাই বিন্নির মা এসেই দরজা
খুলল । দরজা খুলে বিন্নির মা দেখল, তাজ দাঁড়িয়ে । তাজ বলল, “সরি আনটি, লাস্ট মাসে আপনি
আমাকে আর বিন্নিকে একসাথে দেখে ক্ষেপে গিয়েছিলেন । কিন্তু আজ আমি উপায় না পেয়ে এসেছি……………………” তাজের কথা শেষ হতে না হতেই
বিন্নির মা বলল, “বাবা, তোমাকে আমি বিন্নির সাথে
এবার বিয়ে করিয়ে দেবো, তুমি শুধু আমাকে বাচাও!” তাজ অবাক হয়ে গেলো । বিন্নির
বা বলছে বিন্নির সাথে ওর বিয়ে দেবে! এতো ভুতের মুখে রাম রাম! তবুও তাজ জিজ্ঞেস করলো, “জি বলুন, কি হয়েছে? আগে বিন্নির
বিন্নি বাসায় আছে কি না, ঠিক আছে কিনা!” বিন্নির
মা বলল, “হ্যাঁ বাবা, বিন্নি ঠিক আছে, কিন্তু একটু সমস্যা আছে!” তাজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস
করলো, “সমস্যা! কিসের সমস্যা?” বিন্নির মা সব কথা খুলে বলল তাজকে । তাজ বলল, “ও, তাহলে
আমার মনে হয় লোকে যে বলে, শেওড়া গাছে শাঁকচুন্নি আছে, এ সেই শাঁকচুন্নি । ও নিশ্চয়
শেওড়া গাছে বন্দি আছে, এজন্য আমি শেওড়া গাছে বিন্নির আওয়াজ শুনেছি ।” বিন্নির মা বলল,
“হায় আল্লাহ! আমার বিন্নি শেওড়া গাছের ওখানে ওই ভুতুরে স্থানে কি করতে গিয়েছিলো!” তাজ
বলল, “আমিই তো ডেকেছিলা………।” বলতে বলতে নিজেকে সামলে নিলো তাজ । বিন্নির মা ভ্রু কুঁচকে
তাজের দিকে তাকিয়ে বলল, “মানে! তুমি আমার মেয়েকে ওখানে নিয়ে যেয়ে কি করো!” তাজ, “আনটি
আমি হুজুর ডাকতে যাচ্ছি!” বলে সেখান থেকে চলে গেলো । মূলত মুখ ফসকে বেড়িয়ে যাওয়া কথার
প্রেক্ষিতে বিন্নির মায়ের করা প্রশ্নের জবাব না দিয়েই তাজ এটা করলো ।
(৫)
বিন্নির মা দরজা বন্ধ করে নিজের
রুমে যেয়ে বসলো । মনে মনে ভয় পেতে লাগলো । কখন যে কি হয় । যদি হঠাৎ ওই শাঁকচুন্নিটা
ঘাড় মটকে দেয়!! “মা!” “আআআআআআ!” বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নির হঠাৎ ডাক শুনে চিৎকার দিয়ে
উঠলো বিন্নির মা । বিন্নির হাতে মোবাইল । মায়ের দিকে বিন্নি রুপী শাঁকচুন্নি বলল,
“তুমি ঠিক আছো মা?” বিন্নির মা ভয় কমিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছি ।” বিন্নিরুপী
শাঁকচুন্নি বলল, “তুই কি যে করো না ।” বিন্নির মা কিছু বলল না । বিন্নি মোবাইলের নেট
অন করতে করতে মায়ের কাছে এসে বলল, “মা, কেউ কি এসেছিলো?” বিন্নির মা হালকা চমকে উঠে
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “ওই, তোর বাবা! আসলে কাজ শেষ বলে চলে এলো ।” বিন্নি প্রশ্ন
করলো, “তাহলে গেলো কোথায়?” বিন্নির মা বলল, “ওই আরকি, আমার পায়ে ব্যাথাটা একটু বেড়েছে
তো, তাই ডাক্তার ডাকতে গেছে ।” এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ এলো । ঘরে ঢুকল তাজ আর একটা
হুজুর । বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি কেঁদে কেঁদে বলল, “ছি মা! আমার বয়ফ্রেন্ডকে নিজের স্বামী
বানালে!” তাজ বলে উঠলো, শয়তানী শাঁকচুন্নি! তুই আমার গার্লফ্রেন্ড না!” তাজের কথা কানে
গেলো না বিন্নি রুপী শাঁকচুন্নির । ও একটা মেসেজ দেখে থমকে গেছে । সেই যে জারিফের কাছে
জানতে চেয়েছিল, জারিফকে ছেকা দেয়া সেই মেয়ের নাম কি, জারিফ তার রিপ্লাইতে লিখেছে,
“মেয়েটার নাম বিন্নি ।” বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নির চক্ষু চড়কগাছ । বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি
একটা অডিও রেকর্ড পেলো । তাতে জারিফ নামের ছেলেটা যা পাঠিয়েছে তা প্লে করে শুনতে লাগলো
বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি, সাথে শুনল বিন্নির মা, আর তাজও । আরও শুনতে লাগলো হুজুরও ।
জারিফ বলেছে, “আমার জন্য বিন্নির সাথে প্রেম করাটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল । এজন্যই বোধ
হয় বিয়ের আগে প্রেম করা তেমন শুভ নয় । আমাদের প্রায় ২ বছরের রিলেশন ছিল । কোন এক বৃষ্টির সকালের কথা
। সেদিন আমার কলেজের শেষ দিন ছিল । প্রচুর বৃষ্টি । কলেজে আর কেউ ছাতা আনে নি । আমি
ব্যাগে হাত দিয়ে দেখি, আমি একাই ছাতা এনেছি । এখন বন্ধুদের সামনে দিয়ে গেলে সবাই জোরাজুরি
করবে ছাতা নেয়ার জন্য, একজনকে নিলে অন্যজন রাগ করবে, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম অন্যদিক দিয়ে
বেরবো । সবার মেইন গেইটের কাছে বিল্ডিঙের নিচে দাঁড়িয়ে, আর আমি সে সময় পকেট গেইট দিয়ে
বেড়িয়ে গেলাম । রাস্তায় এসে ফুটপাতে পা রাখলাম, হঠাৎ একটা বাস ছাউনি থেকে একটা মেয়ে
আমার আমার ছাতার নিচে এসে দাঁড়ালো । আমি বললাম, কি করছেন কি! মেয়েটা আমাকে বলল, মাইন্ড
করবেন না প্লিজ, আমাকে একটু নিয়ে চলুন, এইতো, একটু দুরেই আমার বাসা, মাত্র ৪০ মিনিটের
পথ । আমি মেয়েটাকে মানা করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু সেই সময় মেয়েটা আমার দিকে তাকাল । মেয়েটার
অপরূপ রূপ দেখে আমি আর না করতে পারলাম না । সেদিন ওকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেই । এরপর
থেকে কেন যেন ওর সাথে আমার প্রায়ই দেখা হতো । আমারও ভালো লাগতো । এভাবে একদিন আমাদের
ভালোবাসা হয়ে যায় । কতো কিছুই না ওকে আমি দিয়েছি নিজের করার জন্য । কিন্তু একদিন আমাকে ও-ই এসে বলে ও নাকি আর আমাকে
ভালোবাসে না । আমি এরকম ছেকা খেয়ে যাই । ভেঙ্গে হয়তো এতোটাও পড়তাম না, যদি না এরপরই
কোন একদিন আমি ওকে দেখতাম আরেকটা ছেলের সাথে ঠিক একই ভাবে কোন এক বৃষ্টির দিনে আমার
সাথে ছাতার নিচে এসেছিলো, একই ভাবে ওই ছেলের ছাতার নিচেও যেতে । তখন আমি বুঝলাম, ও
ভালোবাসার জন্য করে এসব । এসব ওর জন্য জাস্ট টাইম পাস আর ছেলেদের ইউজ করা ছাড়া কিছুই
না । ও আমার খোঁজ না রাখলেও ওর বান্ধবীদের মাধ্যমে গোপনে আমি এখনও ওর খোঁজ রাখি । শুনেছি এখন ওই ছেলের
সাথেই ও প্রেম করছে । এবং এও শুনেছি
খুব শীঘ্রই ও এই ছেলেকেও ছেড়ে দেবে ।” এই জায়গায় রেকর্ডটা থেমে গেলো । আর সাথে সাথে
তাজ বলে উঠলো, “আর এই ছেলেটা আমি-ই!” তাজও
যেন ভেঙ্গে পড়েছে প্রচুরভাবে তা দেখে বোঝা
যাচ্ছে না । বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নিও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে এতক্ষণ ও কি শুনল
। বিন্নির মা তো শাঁকচুন্নির ভয় ভুলে বিন্নির ভয়
করতে লাগলো । আর হুজুর বলে উঠলেন, “আহারে, ছেলেমেয়েরা ধর্মীয় নীতিশিক্ষা আর
পারিবারিক যত্নের অভাবে দিন দিন অসভ্য হয়ে
উঠছে ।” বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি হুজুরকে দেখেই
ভয়ে দরজার আড়ালে চলে গেলো ।
(৬)
হুজুর বলল, “আরে আয় তুই, সামনে
আয় । ভয় পাইস না ।” বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি বলে উঠলো, “হুজুর! মারবেন না তো?” হুজুর
বললেন, “আরে আয়, মারবোনা, বের হয়ে আয় ।” বিন্নিরূপী শাঁকচুন্নি দরজার আড়াল থেকে বেড়িয়ে
এলো । তারপর শাঁকচুন্নি তাজের চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, “না, এই ছেকা খাওয়া
ছেলের সাথে সংসার যদি করি, এমনিতেই আমি ব্যাকা, আরও ব্যাকা হয়ে যাবো ।” তাজ এখনও প্রায়
কান্নার স্বরে বলল, “আমি নিজের কানকে বিশ্বাস
করতে পারছি না । যা শুনলাম, তা কি সত্য!” শাঁকচুন্নি বলল, “দাঁড়াও, আমি এখনই ওই বজ্জাত
মেয়েটাকে আনছি ।” বলেই বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নি দু হাত ওপরে তুলে তিনটে তালি দিলো । তখনই
হাওয়ায় ভেসে ভেসে বল আকৃতির হয়ে থাকা বিন্নি চলে
এলো শাঁকচুন্নির হাতে । শাঁকচুন্নি
বিন্নিকে বড় করলো । বিন্নি উঠে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে গেলো মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “মা! শাঁকচুন্নি আমাকে বেধে
রেখেছিল!” বিন্নির মা বিন্নিকে ঠাস করে একটা
চড় লাগিয়ে বলল, “বেশ করেছিলো!” বিন্নি কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর তাজের কাছে যেয়ে বলল, “বেবি! জানো একটা কুৎসিত দেখতে শাক………।”
তাজও বিন্নিকে ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে বলল, “কুৎসিত বলবে না, তোমার চেয়েও ভালো আছে
।” বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নির গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেলো । বিন্নি এতক্ষণ বিন্নিরুপী শাকচুন্নিকে
দেখতে পায় নি । এখন বিন্নিরুপী শাঁকচুন্নির
দিকে তাকালো । ভয়ে ভয়ে আসল বিন্নি বলল, “কে!
কে তুমি!” শাঁকচুন্নি নিজের রূপে ফিরে এলো । আর শাঁকচুন্নিকে আবার দেখে বিন্নি
জ্ঞান হারাল । জ্ঞান ফিরেলে বিন্নি দেখল বিছানায় শুয়ে আছে । ওর এক পাশে দাঁড়িয়ে শাঁকচুন্নি
আর তাজ, অন্য পাশে হুজুর, আর পাশে বসে মা । তাজ তখন বিন্নিকে দেখিয়েই শাঁকচুন্নিকে
বলল, “শাঁকচুন্নি, তোমাকে আমি একটা জিনিস দেবো ।”এরপর পকেট থেকে ডায়মন্ড এর রিং নিয়ে
শাঁকচুন্নির হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলল, “এটা আমি তোমায় দিলাম, সত্যটা জানিয়ে দেবার জন্য
। আজ বিন্নিকে এটা দেবো বলে ডেকেছিলাম, কিন্তু বিন্নি তো এটা পাওয়ার যোগ্যতা আর রাখতেই
পারলো না ।” শাঁকচুন্নি আংটি পেয়ে শাঁকচুন্নি বেশ খুশি হল । প্রথমে চাইলো তাজকে সংসার
করার অফার করবে, কিন্তু পড়ে ভাবল এ তো এখন ওই জারিফের মতো ভেঙ্গে পড়বে এর সাথে অন্তত
সংসার করে মজা পাওয়া যাবে না । তাই শাঁকচুন্নি নীরবতা পালন করে গেলো । এদিকে বিন্নির
মা বিন্নিকে সব খুলে বলে যখন জানতে চাইলো, “কিরে্ বল! এগুলো কি সত্যি?” বিন্নি সব
স্বীকার করে নিলো । তারপর আর কি, পুরনো আমলের বাংলা সিনেমার মতো বিন্নি মা কান্না জুরে
দিলো । তাজ তো আগেই ছেঁকা খেয়ে ব্যকা হয়ে আছে । শাঁকচুন্নি বলল, “আমি তাহলে যাই?” হুজুর
বলল, “এই শাঁকচুন্নি, শোন………।” হুজুরকে কথা শেষ
করতে না দিয়েই শাঁকচুন্নি বলল, “আমি জানি,
যাবার আগে শেওড়া গাছের ডাল
ভেঙ্গে যেতে হবে, তাইতো? আমি তাই-ই করবো ।” বলে শাঁকচুন্নি উড়ে চলে গেলো । হুজুর বলল, “যা! আমি তো ওকে এই ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করতে যাচ্ছিলাম ।” হুজুর আর তাজ দুজনেই
ওই বাসা থেকে চলে গেলো । বিন্নি নিজের ভুল বুঝতে
পেরে কান্নাকাটি শুরু করলো ।
পরদিন সকালে কিছু স্মৃতিচারণ করে
সেই পরিত্যাক্ত জায়গায় যায় তাজ । গিয়ে দ্যাখে, শাঁকচুন্নি শেওড়া
গাছ গোড়া থেকে উপড়ে ফেলে
চলে গেছে ।
দুপুরের দিকে ভার্সিটি থেকে বাসার পথে ফিরছিল
তাজ । বেশ বৃষ্টি পড়ছে । এমন সময় তাজ
খেয়াল করলো একটু দূরে যাত্রি ছাউনি
থেকে একটা মেয়ে একটা ছেলের ছাতার নিচে
হুট করে ঢুকে গেলো । মেয়েটা আর কেউ না, বিন্নিই ।
ওদিকে শাঁকচুন্নি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্য এলাকার শেওড়া গাছে হাতের আংটি দেখতে
দেখতে বলল, “যাক, ভালো কাজ করে ভালো লাগছে । পুরস্কারও পেলাম । কিন্তু আমার সংসার করা হল না!!!” বলে কাঁদতে শুরু করল শাঁকচুন্নি । আহারে,
বেচারির কি কষ্ট ।
আমার গল্পটি ফুরল, নটে গাছটি মুড়ল ।