ব্রো এর ঝুলি- ইচ্ছেপূরণকারী মৎস্যকন্যা
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEira2lAj4TJWU9Bi1IkJ9pq4qeNCB9cB4jYC4qsc0ju7VnkAVvlKW4T5uutrgfWWa6axe2v1ssxy8663Hn7ZuaE9ot6oDRMXrXR0VgnAQsZstBaHA_mj2PW_-Bn48Vk9EQnczQH3lpczkZd/w640-h462/hjk.jpg)
ব্রো এর ঝুলি-৩
আমাদের ৩য় গল্প- ইচ্ছেপূরণকারী মৎস্যকন্যা
হ্যালো ব্রো রা, সবাই এসে পড়েছ দেখছি, আশা করি
আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছো । তোমরা তাহলে চুপটি করে বসো, আমি আমার ঝুলি থেকে গল্প
বের করি ।
নদির মাঝে একলা মাঝি জাল ফেলে বসে আছে । মনে তার
বেশ দুঃখ । এক পা কাত করে আরেকপা ভাজ করে খাড়া
করে রেখে তার ওপর এক হাত রেখে অন্য হাতে নৌকোর ওপর ভর করে বসে আছে । মাছ আজ কপালে জুটবে কি না কে জানে । আজ মোটেও ইচ্ছে
ছিল না মাছ ধরতে আসার । কিন্তু বউয়ের কথা শুনে কষ্টে আসতে হল । বউ যদিও তাকে
ধমক দিয়ে কিছু বলে নি, স্বাভাবিক ভাবেই মনের দুঃখটা জানিয়েছে । মাঝির নাম করিম মাঝি
। তার বউ জুই । মাঝির পাশেরই বাসায় থাকে আরেক মাঝি, তার নাম রহিম মাঝি । তার বউয়ের
নাম লায়লা । রহিম মাঝি আর করিম একসাথেই মাছ ধরতে যায় । রহিম মাঝির জালে প্রায় প্রতিদিনই
বেশি মাছ ওঠে । ফলে রহিম মাঝি নিজের বড়াই করে বেশি । করিম মাঝির কাছে নিজের মাছ ধরার
দক্ষতার কথা বেশ গর্বের সাথে বলে । এতে করিম মাঝির মনে দুঃখ নেই কোন । এদিকে রহিম মাঝির
বউও রহিম মাঝির মতোই । স্বামী কিছু কিনে দিলে বড়াই করে গ্রামে গ্রামে প্রচার করে বেড়ায়
। আর সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী হিসেবে জুইকে তো বটেই । ঝুইয়ের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও
মনে মনে কষ্ট লাগে । এই সেদিনই একটা সোনার বালা আর একটা বেশ দেখতে বেনারসি শাড়ি কিনে
দিয়েছিল রহিম মাঝি তার স্ত্রীকে । রহিম মাঝির স্ত্রী লায়লা সেদিন সেসব কথা বেশ বড়াই করে জুই কে বলেছিল
। তাই আজ সে কষ্টের কথা করিমকে বলেছিল জুই । তাইতো আজ জাল নিয়ে এলো নদীর মাঝে । একটু
বেশি মাছ বিক্রি করে বউকে খুশি করতে পারে যদি । কিন্তু সেই যে সকাল থেকে বসে আছে, অথচ
একটা মাছেরও দেখা নেই । দুপুর হয়ে গেছে, বাকি
মাঝিরা নিজেদের দুপুরের খাবার খেতে বাসায় চলে
গেছে, তাও করিম যায় নি । মনের মাঝে একটা ভাবনা খেলে গেলো । রহিম মাঝি হয়তো বেশ
কয়েকদিন নিজের মাছ বিক্রির কিছু টাকা জমিয়ে সোনার হাতের বালা কিনে দিয়েছে বউকে । কিন্তু
করিম মাঝি একদিনে এতো টাকা কি করে পাবে? তাই হার মেনে বাড়ির পথে রওনা হল ।
করিম মাঝি যেতে যেতে একদম নদির মাঝে চলে গেছে ।
তাই বাড়ি ফিরতে বেশ দুরের পথ পাড়ি দিতে হবে মাঝিকে । বাড়ির পথে আসতে একটা চর পড়ে ।
সেই চড়ের পাশ দিয়ে মাঝি যাচ্ছিলো, এমন সময় একটা আওয়াজ শুনতে পেলো, “বাচাও! বাচাও!”
মাঝি চড়ের দিকে তাকাল । না, পুরো ফাঁকা চড় দেখা যাচ্ছে, কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না ।
মাঝি মনের ভুল ভেবে আবার নাও বাইতে শুরু করলো
। একটু পর আবার আওয়াজ “বাচাও! বাচাও!” করিম মাঝি এবার আরও স্পষ্ট শুনতে পেলো । মনে
মনে ভাবল, “কোত্থেকে আওয়াজটা আসছে? কেউ পানিতে পড়ে গেলো না তো? না, তাহলে তো হাবুডুবু
খেতে দেখা যেত । আর পানিতে পড়লেও তো কেউ এভাবে অন্তত কথা বলে না । তাহলে? চড়েও তো কাউকে
দেখতে পাচ্ছিনা । কাউকে জ্যান্ত পুতে দিয়ে যায় নি তো? যাই দেখে আসি ।” মাঝি “বাচাও!
বাচাও!” শব্দ শুনতে শুনতে এগিয়ে যেতে লাগলো । যতোই এগিয়ে যাচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো, কাছাকাছি
পৌঁছে গেছে । আরও কাছে যেতে প্রায় সোনালি রঙের একটা মাছ চড়ের ওপর নজর পড়ল । মাছটার
কাছ থেকেই আওয়াজ হচ্ছে মনে হয় । না না না, মাছ কি করে কথা বলতে যাবে, মাঝি এবার আরও
কাছে যেয়ে চড়ের কাছে নৌকো দাড় করিয়ে চড়ের ওপর নামলো । এবার স্পষ্ট শুনতে পেলো মাছটা
কথা বলছে । মাঝি ভয় পেলো । তোতলাতে তোতলাতে বলল, “ভু…ভু…ভুত!!!” মাছটা তখন বলল, “ভয় পেয় না মাঝি, আমি ভুত নই । আমাকে তুমি বাচাও
। আমার বাজার মূল্য ১কোটি বলে কিছু অসৎ লোক আমাকে ধরে আকাশপথে বিমানে নিয়ে যেতে চেয়েছিল
। আমি অনেক কষ্টে বেঁচে ফিরি । কিন্তু আমি এই চড়ে এসে পড়েছি । পানি ছাড়া আমি বাঁচতে
পারবো না!” মাঝি ভাবল, ১কোটি! এ টাকায় সে তো বউকে রাজরানী বানিয়ে দিতে পারবে! মাছটা
বলল, “ও মাঝি ভাই, আমাকে বাচাও, আমি তো পানি ছাড়া শ্বাস নিতে পারি!” মাঝি কি করবে বুঝতে
পারছিল না । মাছটাকে পানিতে ফিরিয়ে দেবে, নাকি বিক্রি করে দেবে! মাছ আবারও চেঁচিয়ে
উঠলো, “ও মাঝি ভাই! কি এতো ভাবছো! আমাকে পানিতে ফিরিয়ে দাও!” মাঝি ভাবল, থাক, এতো লোভ
করা উচিৎ হবে না । এতো টাকা দিয়ে কি করবে, শুধু শুধু একটা মাছের প্রাণ যাবে । তাও সাধারণ
মাছ হলে একটা কথা ছিল, এ তো কথা বলা মাছ । বেচারা সাহায্য চাইছে, তাকে কি আর বিক্রি
করা যায়? মাঝি মাছটাকের পানিতে ফেলতেই এক অপূর্ব আলোর ঝলকানি মাছের শরীর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো ।
ঝলকানিটা এতোটাই বেড়ে গেলো যে চোখ খুলে রাখাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো । একটু পর সেই মাছ
রুপান্তরিত হয়ে গেলো এক মৎস্যকন্যাতে । তার অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক মাছ । ধীরে ধীরে আলোর
ঝলকানি আবার কমতে শুরু করলো । হাসিমুখে সেই মৎস্যকন্যা মাঝিকে বলল, “তুমি অনেক ভালো
মাঝি ভাই । বলো, তোমার কি ইচ্ছে, আমি তোমার আড়াইটা ইচ্ছে পূরণ করবো ।” মাঝি হাসিমুখে
বলল, “না না, তেমন কিছু আমার লাগবে না । আমায়
শুরু কিছু মাছ দাও, যেগুলো বিক্রি করে আমি আজকের দিনটা চলতে পারি ।” মৎসকন্যা মুচকি হেসে বলল, “তুমি অনেক
সৎ মানুষও । তোমার মনের কথা আমি জানি । তুমি
তোমার বউকে খুশি করার জন্য এই মাছ ধরতে চাও । তাই আমি তোমার প্রথম ইচ্ছে হিসেবে
তোমার বউয়ের জন্য শাড়ি, আর দ্বিতীয় ইচ্ছে হিসেবে তোমার বউয়ের জন্য এই গয়নাগুলো দিচ্ছি
।” মাঝি মৎস্যকন্যার হাত থেকে জিনিসগুলো নিলো । একটা দেখতে বেশ সুন্দর শাড়ি, আর এক
বাক্স ভর্তি গয়না । যাতে আছে বালা, কানের দুল,
গলার মালা, নাকফুল যার সব সোনার তৈরি । মাঝি এতো গয়না কখনো দেখেনি । মাঝি বলল, “আরে! তুমি এ
কি করেছো, আমার তো এতো কিছু লাগবে না , একজোড়া বালা হলেই চলবে ।” মৎস্যকন্যা বলল,
“না মাঝি ভাই, লজ্জা কোরো না । নিয়ে যাও । বউকে খুশি করো । তোমার আর অর্ধেকটা ইচ্ছে
আছে । তুমি কি সেটা পূরণ করতে চাও?” মাঝি বলল, “না । থাক । আমার মনের ইচ্ছে পূরণ হয়ে
গেছে । তোমায় যে কি করে ধন্যবাদ দেই!” মৎস্যকন্যা বলল, “নানা, সমস্যা নেই । কখনো যদি
সেই অর্ধেকটা ইচ্ছে পূরণ করতে ইচ্ছে হয়, এই চড়ে এসে আমাকে ডেকো, আমি তোমার ইচ্ছে পূরণ
করে দেবো ।” মাঝি ডানে মাথা কাত করলো শুধু । আর কিছু বলল না । নৌকায় উঠে মাঝি বাড়ির
পথে রওনা হল । বাড়ির কাছের নদীর পাড় নজরে আসতেই মাঝি দেখল, নদীর পাড়ে তার স্ত্রী জুই
বসে আছে । হয়তো খুব চিন্তা করছে । মাঝি নদীর পাড়ে আসতেই তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে তার
কাছে এসে বলল, “কি গো, তুমি আমার ওপর রাগ করে এতক্ষণ কেন না খেয়ে ছিলে, শরীর খারাপ
করতো যদি!” মাঝি বউয়ের চোখের জল মুছে বলল, “কেঁদো না, দ্যাখো আমি তোমার জন্য কি এনেছি ।” বলেই মাঝি
তার স্ত্রীকে সবটা দেখাল । দেখেই মাঝির স্ত্রীর চক্ষু চড়কগাছ । মাঝির স্ত্রী বলল, “একি গো! এতো কিছু
কোথায় পেলে? চুরি টুরি করো নি তো আবার?”
মাঝি বলল, “আরে, কি যে বলো না, আগে বাসায় চলো, সব খুলে বলছি তোমাকে ।” মাঝি আর তার
স্ত্রী বাড়ির পথে রওনা হল । ওদের থেকে একটু দূরে ছিল রহিমের স্ত্রী লায়লা । করিম মাঝির হাতে এতো গয়না আর এতো সুন্দর শাড়ি দেখে সেও অবাক
হয়ে গেলো ।
বাড়ি ফিরে করিম মাঝি তার স্ত্রীকে সব ঘটনা খুলে
বলল । ঘটনা শুনতে মাঝির স্ত্রী বলল, “শোনো না, বলছি এসব কথা রহিম মাঝির বউকে বলার দরকার
নেই । তা না হলে আমার কাছে এতো কিছু দেখে উনার স্ত্রী খুব কষ্ট পাবে । আমার আভিজাত্য
দেখে কেউ কষ্ট পাক তা আমি চাই না ।” এমন সময় দরজা খুলে লায়লা ঢুকে বলল, “আদিক্ষেতা,
কিচছু বলা লাগবে না, আমি সব শুনেছি । এবার আমি আমার স্বামীকে পাঠাবো । তোর স্বামী তো
গাধা, তাই এতো কম এনেছে । আমার স্বামী দেখিস, কতো কিছু আনে!”
বলেই সেখান থেকে দ্রুত বেগে চলে এলো । করিম মাঝি তার স্ত্রীকে বলল, “হায়রে । শুনেই ফেলল । আল্লাহই জানেনে
এখন এরা কি করবে ।” করিম মাঝির স্ত্রী তখন বলল, “আচ্ছা, বাদ দাও । তুমি একটা কাজ করো,
এই এক জোড়া বালা, আর শাড়িটা আমি রেখে দিচ্ছি । বাকি গয়নাগুলো বিক্রি করে এনো । ঘরটাও
মেরামত করা যাবে, বিপদের হাত থেকে বাঁচতে কিছু টাকাও পাওয়া যাবে ।” সেদিন বিকেলেই করিম মাঝি গেলো স্যাকরার দোকানে । যেয়ে দেখল দোকান বন্ধ । পাশেই একটা ফকির বসেছিল । সেই
ফকিরকে মাঝি জিজ্ঞেস করলো, “ও ভাই, এই দোকানে যিনি বসেন, উনি কোথায়?” ফকির বলল, “উনি
তো সেই কখন বাড়ি চলে গেছে । আজ মনে হয় আসবে না । আপনি চাইলে উনার বাড়ি যেতে পারেন ।”
- “ও । তা উনার বাড়ি কোথায় গো?” জিজ্ঞেস করলো করিম
মাঝি ।
ফকির সামনের দিকে ঈশারা করে দূরে একটা তাল গাছ
দেখিয়ে বলল, “ওই যে একটা তালগাছ দেখতে পাচ্ছেন, ওটার পাশেই উনার বাড়ি । ওখানে একমাত্র
উনার বাড়ি-ই পাকা বাড়ি । তাই দেখলেই চিনতে পারবেন ।” করিম মাঝি ফকিরটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে
দুটো টাকা ফকিরকে দিয়ে সেখান থেকে চলে এলো । স্যাকরার বাসায় গেলো করিম মাঝি । স্যাকরার
সাথে গয়নার দাম নিয়ে দামাদামি করছিলো, এমন সময় স্যাকরার ছেলে এসে করিম মাঝিকে বলল,
“ও কাকু কাকু, আমি না, খুব সুন্দর মানুষ আঁকতে
পারি । দেখবেন?” ছেলেটার হাতে ইতোমধ্যে একটা ছবি আঁকা ছিল । অর্ধেকটা মানুষ
আঁকা হয়েছে সে সময় করিম মাঝির কাছে এসেছে । করিম মাঝি বলল, “হ্যাঁ, আকোতো, তোমার হাতে
অর্ধেকটা আছে । তুমি বাকি অর্ধেকটা আঁকো ।”
স্যাকরা তখন তার ছেলেকে বলল, “না না, তুমি
এই অর্ধেক মানুষটাকে দুটো পরিপূর্ণ
মানুষে পরিণত করো ।” শুনে ছেলেটা একটু দূরে বসে আঁকতে লাগলো । মাঝি স্যাকরাকে বলল,
“আপনি আপনার ছেলেকে এভাবে বললেন কেন?” স্যাকরা বলল, “আমার ছেলের একটু সমস্যা আছে ।
ও একটু প্রতিবন্ধী ধরণের । ওকে আপনি যা বলবেন, ও তার অর্ধেকটা করে । এখন অর্ধেকটা একেছে
আপনি যে বললেন বাকি অর্ধেকটা আঁকতে, তাহলে ও বাকি অর্ধেকটার অর্ধেক আকতো ।” মাঝি তখন
বলল, “তাহলে তো আপনি বলতে পারতেন একটা মানুষ আঁকো, তাহলেই তো ও বাকি অর্ধেকটা আকতো
।” স্যাকরা একটু হেসে বলল, “না না, ওর কাছে এটা তো একটাই, আমাদের কাছে অর্ধেক হলে কি
হবে । ওকে একটা আঁকতে বললে ও বলতো, আমার আঁকা তো হয়ে গেছে ।” করিম মাঝি তেমন একটা ভালোভাবে
বুঝল না । অশিক্ষিত মানুষ তো । তবে বুঝল। লোকটা যুক্তিযুক্ত কথাই বলেছে । কারণ একটু
পর উনার ছেলে সত্যিই একটা মানুষ একে এনেছে দুটো পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করার কথা বলা
সত্ত্বেও ।
রাতে রহিম মাঝি নিজের বউ লায়লার সাথে কথা বলছিল
। লায়লা বলল, “হ্যাঁগো, কাল ফজরের আজানের পরই বেড়িয়ে যেয়ো ।” রহিম মাঝি তখন বলল, “তা
যাবো । কিন্তু মাছ যদি চড়ের ওপর না পাই?” লায়লা বলল, “আরে পাবে পাবে । তুমি রূপকথার
গল্পগুলো পড় নি? এসব মাছ ওখানেই থাকে । সততার পরীক্ষার নেয়ার জন্য ।” রহিম মাঝি আর
কিছু বলল না । তবে মনে মনে যে সে মৎস্যকন্যার কাছে অনেক কিছু চাবে তা ওর চেহারা দেখেই
বোঝা যাচ্ছে ।
রাতে রহিম মাঝি ভাত খাচ্ছিল । সে সময় তার
স্ত্রী বলল, “শোনো না, বলছি কি, তুমি
নামাজ কালাম পড়া শুরু করো । আল্লাহ তোমার ওপর
রহমত করে এতো কিছু দিয়েছেন । এবার তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে
তো ।” মাঝি বলল, “হ্যাঁ গো । তুমি ঠিক-ই বলেছ । কাল ফজরের নামাজ থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ শুরু করবো ।” জুই আর কিছু বলল না । শুধু
মনে মনে একবার বলল, “আলহামদুলিল্লাহ ।” ভোর বেলার কথা । মসজিদ থেকে আজানের আওয়াজ শোনা
যাচ্ছে । আজান শুনে ঘুম থেকে উঠলো জুই । নিজের স্বামীকেও ওঠাল । তারপর জুই অযু করে
নামাজ পড়তে বসলো । করিম জুই অযু করে বেরোলে টয়লেটে ঢুকল । তারপর মাছ ধরার জালটা বাইরে
দড়িতে শুকিয়ে দিয়ে নামাজ পড়তে গেলো । এসে মাছ ধরতে যাবে বলে করিম জালটা বাইরে রেখে গেলো । মসজিদের এখান থেকে আধ কিলোমিটারের
মতো দূরে । যাবার সময় নদীর পাড় দিয়ে যেতে হয়
। করিম সেদিক দিয়েই যাচ্ছিলো, সে সময় দেখল
রহিম জাল নিয়ে নদীর দিকে যাচ্ছে । করিম রহিমকে
বলল, “চলো ভাই, নামাজ পড়ে আসি, তারপর একসাথে মাছ ধরতে বেরোবো ।” রহিম একটু বিরক্তির সাথে বলল, “তুমি যাও হে ভায়া, আমার অতো
ধম্মে কম্মে মন না দিলেও চলবে । আর তোমার সাথে মাছ ধরতে যাবো! হা হা! হাসালে তুমি । তুমি তো মাছ-ই
পাও না । আমি সব মাছ পাই আর তুমি সে মাছ দেখে কষ্ট পাও নিজে পাও না বলে, যাও যাও, তুমি
নামাজ পড়ো গিয়ে । ততক্ষণে আমি মাছের চেয়েও দামি কিছু নিয়ে আসি ।”
- “মাছের চেয়ে দামি কিছু?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
করিম ।
- “কেন ভায়া, মৎস্যকন্যা দেখেছে কে?” দেঁতো হাসি
হেসে বলল রহিম ।
- “ও । তা
সে কি এখন আর থাকবে সেখানে?” হালকা
হেসে বলল করিম মাঝি ।
- “শোনো কান্ড, থাকবে না কেন? না থাকলে ওখানে রেখে
তারপর পানিতে ছেড়ে আমি মাছ ধরব । আমার বুদ্ধি
তোমার জানা নেই ।” বলেই নদীর দিকে পা বাড়ালো রহিম মাঝি ।
- “লোক কোরো না ভাই! এটা ঠিক না,
শুনছো! ও ভায়া! যেয়ো না! অতি লোভ ভালো না ।”
বলে চেচাতে লাগলো রহিম মাঝি, কিন্তু একবারের
জন্যও পেছন ফিরে তাকাল না রহিম মাঝি । করিম মাঝি আর না দাড়িয়ে মসজিদের দিকে
গেলো । রহিম মাঝি সেই ছইওয়ালা নৌকা নিয়ে চড়ের দিকে গেলো । পুরো চড় খুঁজে দেখল, অথচ
কোথাও নেই মাছ । মনে মনে বলল, “কি ব্যাপার,
বউ তো বলেছিল এসব মাছ নাকি প্রতিদিন-ই থাকে এখানে মানুষের পরীক্ষার নেয়ার জন্য । তা
কই!” কি মুসিবতে পড়লাম ।” রহিম মাঝি চিন্তায় পড়ে গেলো । এদিকে আকাশে সকালের আলো ঠিক
মতো ফুটছেই না । কালো মেঘে ঢেকে আছে । বৃষ্টি
পড়বে হয়তো । একটু পর যখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল, তখন রহিম মাঝি নৌকায় উঠে বসলো ।
আকাশ মেঘলা দেখেই হয়তো আজ অন্য কোন মাঝু আসছে না নদীতে । বৃষ্টি পরিমাণ আরেকটু বেড়ে
গেলো । রহিম মাঝি নৌকার ছইয়ের মধ্যে যেয়ে বসলো । তারপর নিজের ওপর রাগ করে বলল, “উফফ!
আমার কপালটাই খারাপ ।” এদিকে নদীতে বাতাসে জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় মাঝি নৌকা নিয়ে ফিরে
যাবারও সাহসও পেলো না । এ সময় ডুবে যাবার ভয়ও থাকে । নৌকায় বসে বাইরের দৃশ্যটা দেখছিল,
এমন সময় নজরে পড়ল একটা সোনালি রঙের মাছ রহিম মাঝির নৌকার পাশেই বার বার লাফাচ্ছে ।
অন্যান্য মাছেদের চেয়ে এই মাছ একদম ভিন্ন । রহিম মাঝির বুঝতে বাকি রইল না, এটাই সেই
মৎস্য কন্যা । সে একটা ফন্দি আঁটল । হাতে বৈঠা নিলো । তারপর গায়ের গেঞ্জিটা একটু ওপরে টেনে মুখটা ঢাকলো, যেন মাছ ওকে চিনতে না পারে
। তারপর নৌকার কোণায় যেয়ে মাছটা যেই একটা লাফ দিলো, রহিম মাঝি মাছটাকে সজোরে একটা আঘাত করে চড়ের ওপর ফেলে
দিলো । সে সময় “ও মা রে!” বলে একটা আওয়াজ শুনল মাঝি । বুঝল, এটাই সেই মৎস্যকন্যা । এরপর মাঝি নৌকা নিয়ে সেখান থেকে চলে
গেলো । বৃষ্টি আরও জোড়ে পড়া শুরু করলো । রহিম মাঝি নৌকা নিয়ে একটু দুর থেকে ঘুরে এসে
আবার চড়ের কাছে এলো । মাছটার আর্তনাদ শুনতে পেলো দুর থেকেই । মাঝি চড়ের ওপর নেমে বৃষ্টির
মাঝেই মাছের কাছে যেয়ে বলতে লাগলো, “আহারে! এতো সুন্দর মাছটা! কে যে বৈঠা দিয়ে আঘাত
করে চড়ের ওপর ফেলে দিলো!” মাছটা তখন বলল, “তুমি জানলে কি করে, আমাকে কেউ বৈঠা দিয়ে
আঘাত করেছে?” মাঝি দাঁত দিয়ে জিভ কাটল । তারপর
বলল, “না না, এমনি, মনে হল । আসো আমি তোমাকে পানিতে ফিরিয়ে দেই ।” মাঝি মাছটাকে
পানিতে ছেড়ে দিতেই মাছ চলে যেতে লাগলো । মাঝি তখন বলে উঠলো, “আরে আরে আরে! যাচ্ছোটা
কোথায়? আমার ইচ্ছে পূরণ করবে না?” মাছ তখন আবার মাঝির কাছে এলো । মাছ থেকে মৎস্যকন্যার
রুপ নিলো । তারপর মাঝিকে মাছটা বলল, “বলো, তোমার আড়াইটা ইচ্ছে কি ।” মাঝি বলল, “আমার
অনেক অনেক টাকা চাই!”
মাঝি বলল, “আমার অনেক অনেক টাকা চাই!” মৎস্যকন্যা
বলল, “তুমি তো বললে অনেক টাকা চাও, কতো টাকা চাও, তা না বললে কি করে দেবো?” রহিম মাঝি
মাথা চুলকাতে লাগলো । কতো টাকা চাওয়া যায়? একটু ভেবে বলল, “এই যে, এই চড়ের ওপর আমি দাড়িয়ে
আছে, এই চড়ের মধ্যে সব টাকা আসবে, আর উচ্চতায় হচ্ছে একটা বিরাট দালানের মতো
।” “তোমার প্রথম ইচ্ছে পূরণ হল” বলেই মৎস্যকন্যা চড়ের ওপর অনেক অনেক টাকা এনে দিলো
। এতো টাকা, যে বেচারা রহিম মাঝি টাকার নিচে
চাপা পড়ে গেলো । সে বলল, “কি করলে এটা! উফ! সরাও! সরাও! আমি তো দম নিতে পারছি না!”
মৎস্যকন্যা বলল, “তোমার দ্বিতীয় ইচ্ছে পূরণ হল ।” সব টাকা চলে গেলো চড় থেকে । মাঝি
উঠে দাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে দম নিতে লাগলো । তারপর মৎস্যকন্যাকে বলল, “এটা কি হল?” মৎস্য
কন্যা বলল, “আমার কি দোষ, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি ।” রহিম মাঝিও ভেবে দেখল আসলেই
তো মৎস্য কন্যা যা বলেছে, সে তাই-ই করেছে । মৎস্য কন্যা বলল, “এবার
তোমার আধখানা ইচ্ছেটা কি বলো?” রহিম মাঝি সেই কথা শুনতে না পেয়ে নিজের প্রতি রাগ দেখিয়ে বলল, “ইশ! আমার মানুষ না
হয়ে গাধা হওয়া উচিৎ ছিল!” “তোমার তৃতীয় ইচ্ছের অর্ধেকটাও পূরণ হল ।” বলেই মৎস্যকন্যা
চলে গেলো । মাঝি বলল, “মানে! আমি তো কিছুই বলিনি!” এমন সময় মাঝি নিজের মুখে হাত দিয়ে
দেখল, তার শরীরের ডান পাশ গাধার মতো হয়ে গেছে আর বা পাশ মানুষের মতোই আছে । রহিম মাঝি
চড়ের ওপরেই কাঁদতে বসে পড়লো । কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, “অ্যা!!! এ আমার কি হল! অ্যা!!!”
একটু দুর থেকে মৎস্য কন্যা বলল, “তুমি লোভী মাঝি । তুমি আমাকে বুঝতে না দিলেও আমি মনের
কথা বুঝতে পারি । তুমিই আমাকে মেরে ওই চড়ে পাঠিয়েছো । লোভের শাস্তি তুমি পেয়ে গেছো
। আমার আর কিচ্ছু বলার নেই ।” বলেই মৎস্যকন্যা আবার মাছ হয়ে চলে গেলো পানির ভেতর ।
রহিম মাঝি সেখানে বসেই কাঁদতে লাগলো ।
যোহরের আজানের বেশ কিছুক্ষণ আগেকার কথা । করিম
মাঝি আজ মাছ ধরতে যায় নি ঝড়বৃষ্টির কারণে । সে গেছে বাজারে । জুই রান্নাঘরে বসে বসে
রান্না করছিলো । এমন সময় লায়লা এলো বেশ সেজেগুজে । হাতে ওর স্বামীর কিনে দেয়া বালা
। এসে জুই এর কাছে যেয়ে বসলো । জুই বলল, “আসেন আপা, বসেন ।” বলে জুই একটা পিড়ি এগিয়ে
দিলো । লায়লা তখন ঠোঁট বাকিয়ে ভেংচি কেটে বলল, “হুহ! ঢং । তোর বাসার চেয়ার নেই? ও আমি
তো ভুলেই গিয়েছিলাম, তোমরা তো গরীব । যাকগে সেসব কথা । কি রান্না হচ্ছে?” জুই বলল,
“এইতো আপা, আমার স্বামী পাঙ্গাস খুব পছন্দ করে, তাই পাঙ্গাস রান্না করছিলাম ।” লায়লা
আবার একটু হেসে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তা তো করবেই । পাঙ্গাস কম দামি মাছ কি না । আসলে
কি বলতো, তোমাদের কপালে ভালো কিছু জুটবে না তো । আমার স্বামী আর গরু, মুরগী সব কিছুর
মাংস আনবে । ওই দিয়ে আজ আমাদের বেশ ভোজন হবে ।” জুই হালকা হাসিমুখে বলল, “আলহামদুলিল্লাহ,
সে তো খুব ভালো খবর আপা!” লায়লা আবারও একটু ঢং করে বলল, “হয়েছে হয়েছে, আর নেকামি করা
লাগবে না । দেবো তোমাদের, চিন্তা কোরো না । আমারা আবার কাউকে না দিয়ে খাই না । আর গরীব
মানুষ হলে তো কথাই নেই । মানে ওদের মনের অবস্থা দেখলে না, খুব কহত লাগে ।” জুই বলল,
“না সমস্যা নেই আপা । আমরা খেতে পাড়ি তাও । গ্রামে অনেক গরীব মানুষ আছে যারা খেতে পায়
না । তাদের দিন না, তাহলে আমাদেরও ভালো লাগবে ।” লায়লা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল,
“এই! কি বললি! যতো বড় মুখ নয়, ততো বড় কথা!” এমন সময় বাইরে শোরগোলের আওয়াজ শুনতে পাওয়া
গেলো । জুই বলল, “কি ব্যাপার, এতো শোরগোল হচ্ছে কেন?” লায়লা আনন্দিত হয়ে বলল, “ওইতো!
আমার উনি এসেছেন মনে হয়! এতো দামি দামি জিনিস এনেছেন! যা দেখে লোকজন হয়তো শোরগোল শুরু
করে দিয়েছেন । আমি যাই!” বলে যেই লায়লা বেরোতে যাবে, অমনি করিম মাঝি এসে হাজির । হাফাতে
হাফাতে এসে বলল, “সর্বনাশ হয়ে গেছে! রহিম ভাইয়ের পুরো শরীরের এক পাশ গাধার মতো হয়ে
গেছে!” লায়লার চেহারায় এতক্ষণ যে আনন্দ আর অহমিকা ছিল তা মুহূর্তেই ভয় আর চিন্তায় পরিণত
হল । চিৎকার করে বলে উঠলো, “কি!” লায়লা দৌড়ে বাইরে গেলো । জুইও চুলার আগুনে পানি দিয়ে
মাথায় ঘোমটা দিয়ে উঠে এলো । করিম মাঝিও চলে গেলো
তাদের সাথে । রহিম মাঝি ইতোমধ্যে ঘরে চলে গেছে । লায়লাকে দেখে অনেকে
বলতে লাগলো, “বেশ হয়েছে, অহংকার পতনের মূল আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন । জুই ভালো মেয়ে বলে এখনও ওর সাথে মিশছে,
আমাদের সাথে এমন করলে ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিতাম ।” লায়লা কিছু না বলে ভেতরে গেলো । পেছন
পেছন জুই আর করিম মাঝিও গেলো । রহিম মাঝির চেহারা
দেখেই লায়লা মাটিতে বসে হাউমাউ করে
কাঁদতে লাগলো, “ওগো! এ তোমার কি হল গো! ওগো! আমি এখন কাকে তোমার মুখ দেখাবো!
আমার মান সম্মান সব যাবে গো!” রহিম মাঝি করিম মাঝির পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “ভাই,
তুমি কিছু করো! আমাকে বাচাও!” করিম মাঝি রহিমকে দাড় করিয়ে
বলল, “ছি ছি, এভাবে পায়ে পোড়ো না, দাঁড়াও আমি ভেবে দেখছি, কি করা যায় ।” একটু ভেবে করিম মাঝির মাথায় এলো, ও নিজের
আধখানা ইচ্ছে এখনও পূরণ করে নি । তখনই করিম
মাঝি রহিম মাঝিকে বলল, “পেয়েছি একটা উপায় । আমার সাথে চলো
ভাই ।” রহিম মাঝি জিজ্ঞেস করলো, “কোথায়?” করিম মাঝি বলল, “নদির চড়ে ।” করিম মাঝি রহিম মাঝিকে
নিয়ে অনেক কষ্টে চড়ে এলো । লোকজন যে পরিমানে ভীড় করেছে রহিম মাঝির এই রূপ দেখতে, সেই ভীর ঠেলে বেড়িয়ে আসা
দুজনের জন্য বেশ কষ্টেরই ছিল । চড়ে এসে
পৌঁছতেই বৃষ্টি আবার শুরু হল । করিম মাঝি চড়ে
দাঁড়িয়ে ডাকল, “মৎস্যকন্যা মৎস্যকন্যা, একবারটি
দাও সাড়া! আধখানা ইচ্ছে পূরণ, করতে চায়
এই উপায় হারা!” কিছুক্ষণের মাঝেই মৎস্যকন্যা এসে হাজির । মৎস্য কন্যা বলল, “আমি জানতাম, তুমি
আসবে করিম মাঝি । তুমি বেশ পরোপকারী । বলো, তোমার কি ইচ্ছে?” করিম মাঝি কিছু একটা বলতে
যাচ্ছিলো, এমন সময় তার শ্যাকরার বাসার কথা মনে পড়ে গেলো । শ্যাকরা তার ছেলেকে “এটাকে
দুটো পরিপূর্ণ মানুষে একে ফেল ।” করিম মাঝি
যা চাইবে তার অর্ধেক এখন পূরণ হবে । যদি এখন
বলে রহিম মাঝিকে আগের মতো করে দিতে বা
রহিম মাঝিকে মানুষ করে দিতে, তাহলে তো
অর্ধেক পূরণ করবে । পুরোটা পূরণ হবে না । তাই করিম মাঝি বুদ্ধি করে বলল, “আমার
বন্ধুকে তুমি দুটো পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করে দাও!” মৎস্যকন্যা হাসিমুখে
করিম মাঝিকে বলল, “তুমি আসলেই খুব বুদ্ধিমান করিম মাঝি । তোমার এই ইচ্ছে পূরণ হল ।” করিম মাঝি রহিম মাঝির
আনন্দের উল্লাস করবার আওয়াজ শুনে রহিম মাঝির দিকে
তাকিয়ে দেখল, রহিম মাঝি আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে । মৎস্য কন্যা তখন বলল, “যাও ফিরে যাও, তোমাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে
অনেক কিছু উপহার রইল । বাড়ি যাও, দেখতে পাবে ।” বলেই মৎস্য
কন্যা চলে গেলো । এরপর দুই মাঝি-ই বাড়ি ফিরে এলো । বাড়ি এসে দেখল, ওদের বাড়ি আর আগের মতো নেই! সেখানে
দেখতে পাচ্ছে একটা বিরাট বড় পাকা দালান । রহিম মাঝি তা দেখে আনন্দের সাথে বলে উঠলো,
“হাহা! গিন্নি দ্যাখো! কতো বড় বাড়ি!” রহিম মাঝির বউ আনন্দের সাথে বলল, “আরে, শুধু কি
তাই! ভেতরে গিয়ে দ্যাখো! আরও কতো কিছু আছে! সোনা দানা, জামা কাপড়! আমরা এখন রাজা!”
করিম মাঝি তখন রহিম মাঝির কাছে যেয়ে বলল, “ভাই, আল্লাহ হয়তো আমাদের ভালোর জন্যই ওই
মৎস্যকন্যাকে পাঠিয়ে আমাদের এতো কিছু দিয়েছেন । এখন চলো, আমরা আল্লাহর শুক্রিয়া আদায়
করতে মসজিদে যাই ।” রহিম মাঝি বলল, “আরে কি যে বলো, না, আমার কি এসবের কিছু দরকার ছিল
নাকি, এসব না পেলেও আমার চলতো । যাও তো তুমি, আমার অতো নামাজ পড়ার সময় নাই!” জুই নিজের
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে করিম মাঝিকে বলল, “দ্যাখ, আল্লাহ আমাদের রহমত ডান করেছেন! তুমি
যাও! এক্ষুনি নামাযে যাও!” করিম মাঝি “যাচ্ছি” বলতে যাবে সে সময় লায়লা জুই কে বলে উঠলো,
“এই মুখপুড়ি, শোন, তোদের বাড়িতে তে তো তেমন কিছু নেই তোদের বাড়ি নোংরা থাকলে কার কি
যায় আসে । শোন, আমাদের বাড়িটা প্রতিদিন একটু ধুয়ে মুছে দিস । আমাদের আবার অনেক কিছু
আছে তো । টাকা দেবো। চিন্তা করিস না ।” জুই বলল, “আমি যাই, নামায পড়তে হবে ।” আর এদিকে
লায়লা তার স্বামীকে বলল, “চলো! বাসায় যাই! আজ আমরা নাচবো! গাইবো! ফুর্তি করবো!” বলে
লায়লা আর রহিম মাঝি ভেতরে চলে গেলো । করিম মাঝি মসজিদে গেলো । মসজিদ থেকে ফিরে রহিম
মাঝি দেখল, তার নতুন বাড়ির পাশে রহিম মাঝির নতুন বাড়িও নেই, পুরনো বাড়িও নেই । আর বাড়ির
সামনে লোকজন ভীর করে শোরগোল করছে । সেখানেই জুইকে দেখে করিম মাঝি এগিয়ে যেয়ে জানতে
চাইলো কি হয়েছে । জুই বলল, “একটু আগে ওদের প্রাসাদটা উধাও হয়ে গেছে আর রহিম মাঝি ও
তার স্ত্রী লায়লা আপা এবার পুরোপুরি গাধা হয়ে গেছে । তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ।”
করিম মাঝি আর কিছু বলল না ।
এরপর করিম মাঝি তার স্ত্রীকে নিয়ে এখানে সুখে শান্তিতে
বসবাস করতে লাগলো । তো ব্রো-রা, এই গল্প থেকে কিন্তু তুমি অনেক কিছু শিখতে পারো । নিঃসন্দেহে
আমি চাইবো তোমরা এই গল্পের ভালো শিক্ষাগ্রহন করো । আরেকটা কথা, নেহাতই রূপকথার গল্প
বলে আমরা গল্পে মৎস্যকন্যা এনেছি । কিন্তু বাস্তবে মৎস্যকন্যা না এলেও আমাদের সৃষ্টিকর্তা
কিন্তু আমাদের অনেক কিছুই দিয়ে থাকেন, অনেক ভুল করার পড়েও শুধরানোর সুযোগ দিয়ে থাকেন
। আমরা যেন ভালো পথে চলতে পারি এবং সবসময় সৃষ্টিকর্তার শুক্রিয়া জ্ঞাপন করতে পারি,
সেই প্রত্যাশাই রইল ।
আমার গল্পটি ফুরলো, নটে গাছটি মুড়ল ।