0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

ব্রো এর ঝুলি- সুইসাইড


ব্রো এর ঝুলি-২

আমাদের ২য় গল্প- সুইসাইড

লেখকঃ সাদাত আলম প্রতীক

 

হ্যালো ব্রো-রা  কেমন আছো তোমরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার রহমতে ও আশীর্বাদে অনেক ভালো আছো । খুব রিসেন্ট একটা ঘটনা, বলিউড ইন্ডাস্ট্রির খুব পরিচিত একটা মুখ, সুশান্ত সিং রাজপুত, সে হঠাৎ করেই সুইসাইড । ঘটনাটা নিঃসন্দেহে খুবই দুঃখজনক । সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে খারাপ লেগেছে  এ কারণেই উনার গতবছরের একটা মুভি “ছিছোরে”-এর মূলকথা ছিল সুইসাইড কোন সমস্যার সমাধান নয় । তবে এ ঘটনার পর পরই মানুষ কিন্তু ২ভাগে ভাগ হয়ে গেলো । এক ভাগ বলছে, তার এটা করা উচিৎ হয় নি, তার ধৈর্য ধারণ করা উচিৎ ছিল, আরেক ভাগ বলছে সে এতোটাই ডিপ্রেসড ছিল যে তার এমনটা করতে হয়েছে । আমার এ ব্যাপারে মতামত চাইলে আমি বলবো, দুটো  কথাই কিন্তু একই সুত্রে গাথা । কীভাবে? জানাবো আমার আজকের গল্পে । তোমরা তাহলে চুপটি করে বোসো, আমি আমার ঝুলি থেকে গল্প বার করি । শোনো ।

 

নীরবতা যেন  রুমটাকে জাপটে ধরেছে । কানে কানে এই নীরবতাই যেন বারবার রাফিকে বলছে “তুই মর! এছাড়া তোর কোন পথ নেই! মর তুই!” রাফি বারংবার দু’হাত দিয়ে নিজের কান চেপে  ধরছে আর কিছুক্ষণ পর পরই, ফ্যানটার দিকে তাকাচ্ছে ।

রাফি কলেজের ছাত্র । ঠিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, নাকি তৃতীয় বর্ষের, বলা যাচ্ছে না । লকডাউনের জন্য এইচ এস সি পরীক্ষাটা না হওয়ায় এখন তো সব এইচ এস সি পরীক্ষার্থীরাই বসে আছে ।  কবে হবে জানা নেই । তাদের মধ্যে রাফি-ও  একজন । মেসে  থাকে । ওর সাথে  আরও ৪ বন্ধু । বাকি ৪ বন্ধু আগেই বাড়ি চলে গেছে, ছুটি যেদিন  দিয়েছে তারপর দিনই । কিন্তু রাফি যায় নি । ও ভেবেছিলো পরীক্ষা দেরি  করে হোক, হবে, তার জন্য  পড়াশুনায়  ফাঁকি দেয়াটা উচিৎ হবে না । তাই এখানে থেকে গেছে । পড়ে পরীক্ষাটাও হল না, যান চলাচলও বন্ধ হয়ে  গেলো । ফলে এই মেসে একাই থাকতে হল । এই একাকীত্বই ওর মনে জমে থাকা যতো বিষণ্ণতা সবটা বাড়িয়ে দিয়েছে । তাই তো এখন বসে বসে সুইসাইড করার চিন্তা করছে । কি কষ্ট? বলবো ।

রাফির জন্ম ২০০১ সালের ২৩ জুলাই, এক মধ্যবিত্ত পরিবারে । ওর বাবা এক ব্যাংকের কর্মকর্তা । ওর মা গৃহিণী । রাফি পরিবারের একমাত্র সন্তার হওয়ায় মা বাবা ওর আদরের কমতি রাখত না । ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্টে মা বাবা ওকে বড় করে তুলেছে । ছোটবেলা থেকেই ওর মাঝে ওর মা নানা প্রতিভা দেখে । রাফি ভালো গাইতে পারে, ভালো নাচতে পারে, ভালো অভিনয়ও করতে  পারে, গুছিয়ে কথাও বলতে পারে, এমনকি সবকিছু ভালো মনেও রাখতে পারে । তাইতো রাফির মা ছোটবেলা থেকেই ভেবে রেখেছিলেন ছেলে খুব ভালো স্টুডেন্ট হবে । মায়ের ইচ্ছেটাও ছিলো আর সব মায়েদের থেকে ব্যাতিক্রম । অন্য সবার মা চায়, তুই ইঞ্জিনিয়ার হবি, তুই ডাক্তার হবি, আর রাফির মা চায়, তুই যা হতে চাস, আমি তোকে তাই হতে দেখতে চাই । রাফির গানের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল । তাই চাইতো গায়ক হবে । মা বাধা দিত না । এমনকি মা ওর জন্য কোন এক জন্মদিনে হারমোনিয়ামও কিনে দিয়েছিলো । বাবা কিছু বলতো না যদিও, তবে ছেলের গায়ক হওয়ার ইচ্ছায় যে তিনি খুব একটা খুশি না ছিলেন তাও স্পষ্ট বোঝা যেতো । হয়তো আর সব বাবার মতো তিনিও চাইতেন ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এরকম বড় কোন প্রোফেশনে নিযুক্ত হবে । যাই হোক । ছেলে কষ্ট পাবে ভেবে হয়তো  বলতেন না ।

রাফি স্কুলে ভর্তি হবার পরপরই সব শিক্ষকদের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে । স্কুলের প্রথম পরিক্ষায়ই রাফি ফাস্ট হয় । শুধু তাই না, স্কুলের নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও রাফির প্রশংসা সবার করতো । রাফি স্কুলে এমন একটা সুনাম কুড়িয়ে ফেলে যে, কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যদি কোন কারণে রাফির পারফর্মেন্স পড়ে থাকতো, দর্শকরা রেগে যেতো । পরীক্ষায়ও ভালো রেজাল্ট করছিলো রাফি । প্রতিটা পরিক্ষায়ই রাফি ফাস্ট হয় । এভাবে ওর স্কুল জীবন অতিবাহিত হতে থাকে । পিএসসি পরীক্ষায় বৃত্তি পায় রাফি । জে এস সিতেও বৃত্তি পায় । সাড়া দেশে মেরিট পজিশনে ২১০তম স্থান অর্জন করে । এরপর রাফি নিজের গায়ক হবার ইচ্ছেকে আরও পাকাপোক্ত করার জন্য গিটার, পিয়ানো কেনে । খুব সম্ভবত এই গানের প্রতি ঝোঁকের জন্যই হয়তো পড়াশুনার প্রতি ওর আগ্রহ কিছুটা কমে যায় , ফলে ক্লাস নাইনের প্রথম পরীক্ষায়েই রাফি ২য় স্থান অর্জন করে । কেউ যদিও এতে কোন কষ্ট পায় নি, কিন্তু তবুও রাফিকে উৎসাহ দেয় ভালো করার জন্য । পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে রাফি নিজেকে আগের পজিশনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলেও এস এস সিতে পারে না । সাড়া দেশে মেরিট পজিশনে অনেক দুর চলে যায়, এবং রাফি বৃত্তিও পায় না । তবে গোল্ডেন এ প্লাস পায় । এতেও তার এবং তার মায়ের মনে কোন কষ্ট নেই । অন্তত খারাপ রেজাল্ট তো করে নি, এই ঢের । আশে পাশে পাড়া প্রতিবেশী যদিও অনেকে অনেক আজে বাজে মন্তব্য করতো, কিন্তু তাতে কান দিত না রাফি । অনেকেই বলতো, “দেখেছো! যে ছেলে ছোটবেলা থেকেই ফাস্ট হয়েছে সে ছেলে এখন বৃত্তিও পেলো না! একে নিশ্চয় কোন খারাপ স্টুডেন্ট জাদু-টাদু করেছে ।” অনেকে আবার বলতো, “হুহ! আমি আগেই টের পেয়েছিলাম, এ ছেলে টিকবে না । নিশ্চয় খারাপ হয়ে গেছে । তাই তো পরীক্ষায়ও খারাপ করলো ।” অনেকে তো আবার বলে, “দ্যাখো গিয়ে, কার সাথে প্রেম ট্রেম করে বেরিয়েছে, কিছুদিন পড়ে তো শুনবো বাপও হয়ে গেছে!” এসব আজে বাজে কথা শুনলেই কেমন রাগটা ধরে না? এসব পাশের বাসার আন্টিদের সমস্যা কি? সমালোচনা করে কি মজা পায় এরা? ভাবতো রাফি । তবুও মনে ওর কোন কষ্ট ছিল না ওর । শুধু ভাবতো, “আরে, ধুর, এসব কাকিমারা যা খুশি বলুকতো আমার তাতে কি । অন্তত আমি তো জানি আমি ভালো আছি ।” এই চিন্তা করা রাফি আজ সুইসাইড করার চিন্তা করছে । ভাবা যায়?

রাফি গানের চর্চা চালিয়ে যায় । ইউটিউব এও অনেক ভিডিও আপলোড করে । ধীরে ধীরে সবাই ওর গান অনলাইনেও  পছন্দ করা শুরু করে । যদিও সাবস্ক্রাইব সেই তুলনায় তেমন ছিল না । আজকাল আবার ভালো কন্টেন্টের সাবস্ক্রাইবার খুব কম হয় । ছিল মাত্র আড়াই হাজার । তবুও ভিডিও ছাড়তো রাফি । ও তো এটাকে পেশা হিসেবে না, নেশা হিসেবেই আপলোড করতো ।

রাফির জীবনের এরকম সুইসাইডের মতো একটা বড় ডিসিশন নেয়ার কারণ এখান থেকেই শুরু । কলেজে রাফি বেশ জনপ্রিয় একটা কলেজে ভর্তি হয় । কিন্তু জনপ্রিয়তার আড়ালে যে কিছু কাহিনী আছে, তা রাফি জানে না । এই কলেজটা জিপিএ পাঁচ আর গোল্ডেন পাওয়া স্টুডেন্ট ছাড়া ভর্তি নেয়ই না । তাহলে ভালো তো করবেই তাই না? আজ যদি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকেও সেই কলেজে আনা  হয়, তিনিও তো ভালোই করবেন । তাহলে কলেজ কোত্থেকে ভুমিকা রাখল সে ছাত্রের ভালো রেজাল্ট করানোতে? এর চেয়ে একটা খারাপ স্টুডেন্টকে  ভালো করিয়ে তো বেশি সম্মান  পাওয়া  উচিৎ ।

যাকগে । ওসব দেখার বিষয় রাফির না । ওর কাজ ভালো একটা রেজাল্ট করে বেড়িয়ে আসা, এই । আর কিছু না । কিন্তু দেখল না, কলেজের বাইরেটা ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী দিয়ে ঢাকা, আর ভেতরটা কয়লা মাখা । এখানে চামচামির প্রতিযোগিতা চলে । যে স্যারকে যতো বেশি তেল দিতে পারবে, সে ততো বেশি নাম্বার পায় । এমনকি এখানে টিচারদের পরিচিত, ছেলে মেয়ে কিংবা ভাগিনা, ভাতিজাই বেশি । তাঁরাও বেশি সুবিধা পায় । আরেকটা সুবিধা হল কোচিং । যারা টিচারদের কাছে ১০০০টাকা দিয়ে কোচিং করে, তারাই বেশি নাম্বার পায় । রাফির না ছিল কাউকে তেল দেবার স্বভাব, না ছিল ওর কোন আত্মীয় এই কলেজের টিচার, না ছিল ওর কোচিং করার সামর্থ্য । তাই বরাবরই রাফি বেশ পিছিয়ে যায় সবার চেয়ে । রাফির বন্ধু বলতে ওর মেসের ৪জন ছাড়া আর কেউ ছিলো না । তবে ওর বন্ধুরাও চামচামি করেই চলতো । রাফিকেও ওরা বলতো চামচামি করতে, কিন্তু রাফি এসব করতে নারাজ । ওরা বুঝতো, রাফি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিন দিন খুব ডিপ্রেশনে পড়ে গেছে, তবুও ওরা রাফিকে তেমন পাত্তা দিত না । বলতো, “তুই এতো প্যারা নেস ক্যান? তুই এতো উল্টাপাল্টা ভাবোস ক্যান?” ওরা বুঝত না রাফির এসব সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়েছে । পরীক্ষায়ও রাফি খারাপ করতো । ভালোই করতো, কিন্তু   পজিশনের দিক দিয়ে শেষের সারিতেই থাকতো । সামনের দিকে থাকতো যারা চামচামি করতো, যারা কোচিং করতো,আর যারা টিচারদের পরিচিত । এমনকি কলেকের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও ওরাই পারফর্মেন্স করতো, বাকিদের সুযোগ দেয়া  হতো না । এরই মধ্যে কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় । রেজাল্ট আগের মতোই । কিন্তু রাফি এবার একটা কারণে রেগে একটা কাজ করে বসে, যার পরিনতি এতো খারাপ হবে রাফি কোনোদিনও ভাবে নি । ঘটনাটা রাফিদের  টেস্ট  পরীক্ষারই সময়ের । বেশ প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলো রাফি । দিন রাত এক করে নাওয়া  খাওয়া  বাদ দিয়ে  অনেক পড়াশুনা করেছিলো । কারণ একটাই, ওইসব খারাপ টিচারগুলো যেন কোন ভাবেই রাফির নাম্বার কাটতে না পারে । এতোটা ভালোভাবে পুরো বই আয়ত্ত করেছিলো, যে ওর পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা আগেই শেষ  হয়ে যেতো । ওর মেসের বন্ধুরা তো ধরেই নিয়েছিলো যে ও হয়তো খুব ভালো করবে । কিন্তু যেদিন রেজাল্ট দেয়, রাফি দেখলো, রেজাল্ট সেই আগের মতোই, যেমনটা পেতো সে আগে । এবারেও রাফি সবার চেয়ে পিছিয়ে  অথচ  বাকি স্টুডেন্টগুলো  মোটেও তেমন ভালো না । রাফি এবার সিদ্ধান্ত নিলো ও প্রিন্সিপ্যাল স্যার  এর কাছে যাবে । ওর বন্ধুদেরও বলেছিলো সাথে যেতে, কিন্তু ওর বন্ধুরা যেতে নারাজ । অবশেষে রাফি একাই গেলো প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমে । প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর নাম সুজিত রায় চৌধুরী ।

রেজাল্ট বেরোনোর পরদিন সকালেই প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমের সামনে এসে রাফি বলল, “আসবো স্যার?” প্রিন্সিপ্যাল স্যার কি যেন লিখছিলেন । লেখার দিকেই মনোযোগ রেখে রাফির দিকে না তাকিয়েই বলল, “হুম, এসো ।” রাফি ভেতরে ঢুকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার সামনে চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো । প্রিন্সিপ্যাল  স্যার একবারের জন্য রাফির দিকে তাকিয়ে আবার লেখার দিকে মনোযোগ দিয়ে বললেন, “বসো ।” রাফির হাতে পরীক্ষার খাতাগুলো ছিল । সেগুলো হাতে নিয়েই বসে পড়ল ।  প্রিন্সিপ্যাল স্যার বললেন, “কি কোন দরকার আছে কি?”

- “স্যার, আপনাদের স্কুলে নেপোটিজম এর জন্য যারা আসলেই মেধাবি তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । আমার খাতাগুলো আপনি দেখেন, আমি কতো ভালো লিখেছি, অথচ টিচাররা আমাকে কতো কম নাম্বার দিয়েছে ।” প্রিন্সিপ্যাল স্যার কিছুই বললেন না । যেন কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব নিয়ে লিখতেই লাগলেন । একটু অপেক্ষা করে রাফি বলল, “স্যার, কিছু বললেন না?” প্রিন্সিপ্যাল স্যার তখন বললেন, “তুমি কি যেন একটা ওয়ার্ড ইউস করলে? নেপোটিজম, না?” রাফি বলল, “জি স্যার ।”

- “তুমি কি জানো? এই কলেজের যতো টিচার আছে তার প্রায় ৬০% আমার পরিচিত?” রাফির দিকে একবার তাকিয়ে বললেন প্রিন্সিপ্যাল স্যার । রাফি হতভম্ব হয়ে গেলো । মূর্তির মতো স্যারের দিকে তাকিয়ে রইল । তাহলে তালগাছে ভুত নেই, পুরো তালগাছটাই একটা আস্তো ভুত! প্রিন্সিপ্যাল স্যার আবার লেখায় মনোযোগ দিয়ে বললেন, “যাও, নিজের পথ নিজে দেখো । এইচ এস সি কি করবে তাই ভাবো । সাহস কম না, আমাদের ব্যাপারে আমাদের কাছেই কমপ্লেইন করতে আসে ।” রাফি তখন রেগে গেলো । বলল, “এতো  খারাপ কেন আপনারা? এতো নিচ কেন? টিচাররা হন সম্মানীয়, তারা একটা শিক্ষিত জাতি গঠনে ভুমিকা রাখে । তাঁরা মেরুদণ্ড গড়ে তোলে । আর আপনারা…………।” রাফির কথা শেষ না হতেই হাতের কলম রাফির গায়ে ছুঁড়ে প্রিন্সিপ্যাল স্যারও রেগে যেয়ে বললেন, “এই তোমার সাহস কি করে হয় এসব কথা বলার? হ্যাঁ! বেশি ভাব নেও না? এতো ভালো মানুষ তুমি দুনিয়ায় এখন আর পাবা না ।” রাফি ভয় পেয়ে যায় খুব, যার জন্য কিছু বলতে পারে না । প্রিন্সিপ্যাল স্যার কিছুক্ষণ থেমে বললেন, “যাও!” রাফি উঠে যেতে লাগলো । প্রিন্সিপ্যাল স্যার কলমদানি থেকে আরেকটা কলম নিয়ে লিখতে শুরু করলেন । রাফি যখন দরজার কাছে, তখন প্রিন্সিপ্যাল স্যার হঠাৎ লিখতে লিখতেই রাফিকে বলতে লাগলেন, “যে কলেজে তোমাদের এইচ এস সির সিট পড়ে, সেই কলেজের প্রিন্সিপ্যাল আমার চাচাতো ভাই । তোমার এইচ এস সি কি করে ভালো হয়, আমি দেখে নেবো ।” সেই শুরু । সেখান থেকেই রাফির মনে ভয় জাগতে শুরু করে কি হবে ওর এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট? মা বাবা কি ভাববেন খারাপ রেজাল্ট করলে? বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছিলো রাফি, কিন্তু তারাও তেমন পাত্তা দেয় না । কেউ বলে, “আরে, চিল, তুই এতো প্যারা নেস ক্যান?” কেউ কেউ বলে, “তোর ই তো দোষ, গেলি ক্যান প্রিন্সিপ্যালের কাছে?” কিন্তু কেউ বুঝতে পারে রাফি রাফির মনে কি চলছে । পুরোপুরি ডিপ্রেসড হয়ে যায় রাফি । পরিবারকে বলতেও কেমন একটা লাগছিল রাফির । এতদিন বন্ধুরা ছিল, তাদের সাথে মোটামুটি কাটছিল রাফির । এখন বন্ধুরা যাবার পর থেকে একাকীত্ব  রাফিকে ঘিরে ফেলেছে । তাই তো আজ বার বার ফ্যানের দিকে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ বলছে “সুইসাইড কর! সুইসাইড কর!” আর কানে হাত দিয়ে চেপে ধরছে । রাফির পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হল না । উঠে দাঁড়ালো রাফি । ঘরের একপাশে একটা দড়ি ছিল । দরজা জানালা আটকে দিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে ফ্যানের নিচে রাখল । চেয়ারের ওপর উঠলো রাফি । তারপর দড়িটা ফ্যানের সাথে বাঁধল । তারপর গোল করে গেঁড়ো দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিলো তার ভেতর । কিছুক্ষণ নীরবে দাড়িয়ে  রইল । তারপর চোখ বন্ধ করে পায়ের নিচে থাকা চেয়ারটা পা দিয়ে ধাক্কা  দিয়ে ঝুলে গেলো  ফ্যানের সাথে । ধীরে ধীরে ছটফট করতে করতে রাফি বিদায় নিলো পৃথিবী থেকে

 

হ্যালো ব্রো রা, তোমরা যারা ডিপ্রেসড বা যারা বার বার সুইসাইড করার কথা চিন্তা করো, তাদেরকে বলছি, সুইসাইড কিন্তু মোটেও কোন সমাধান না, গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়, আরও আছে । তোমরা নিজের মনে কথা শেয়ার কতো পরিবারের সাথে, তোমার কাছের বন্ধুদের সাথে । কিন্তু যদি সুইসাইড করো, তুমি কিন্তু মরেও পস্তাবে । কেন? তা এই গল্পের বাকি অংশ পড়লেই বুঝতে পারবে । দেখা হবে আগামিকাল, গল্পের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে ।

 

অ্যালার্মের আওয়াজে ঘুম ভাঙল রাফির । রাফি ধীরে ধীরে চোখটা খুলল । ঠিক বুঝতে পারছিল না, কোথায় আছে । কবরে থাকার কথা না ওর?  ও না একটু আগে গলায় দড়ি দিলো? নিজের গলায় হাত বোলালো রাফি । না, কোন ক্ষত বোঝা যাচ্ছে না । রাফি ভয় পেলো । আত্মা হয়ে গেলো না তো? ফ্যানের দিকে তাকাল । আত্মা হয়ে গেলে ফ্যানে ওর লাশটা থাকার কথা । কোথায়? নেই  তো? কিছু বুঝতে পারলো  না রাফি । ধরেই নিলো দুঃস্বপ্ন ছিল । বিছানার পাশেই একটা টি-টেবিলের  ওপর মোবাইলটা ছিল । সেটা হাতে নিলো । সকাল ৮টা  বাজে । রাত হয়েছিলো কি? কখন ঘুমাল? কিছুই মনে  করতে পারছিল না রাফি । নেট অন করে অনলাইনে খবর দেখার জন্য একটা চ্যানেলে গেলো রাফি । দেখল, ব্রেকিং নিউজে লিখেছে, “সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে সকল যান চলাচল । রাফি তাই সিদ্ধান্ত নিলো এই একাকীত্ব থেকে বেড়িয়ে যেতে এবার বাড়িতেই চলে যাবে । বিছানা থেকে  উঠে একটা ডিম ভাজি করে পাউরুটি দিয়ে খেয়ে নিলো । এই ক দিন এসব ছাড়া  খাবার জুটছে না কপালে । বুয়া-ও আসছে না করোনার জন্য ।

বিকেলের দিকেই ব্যাগপত্র নিয়ে রওনা হল বাড়ির পথে । বেরোনোর সময় একটা মাস্ক কিনে নিলো । মাস্ক ছাড়া আবার বেরোনো নিষেধ । অথচ আসবার পথে বেশ কয়েকজনকেই মাস্ক ছাড়া দেখল রাফি । সোশ্যাল ডিস্টেন্স এরও বেহাল দশা । যেন করোনাকে ওরা ভয় না পেয়ে কাছে টেনে নিতে চায় । বাসের ভাড়া দিগুন । সোশ্যাল ডিন্টেন্স মেইন্টেইন করবার জন্য দুই সিটে ১ জন করে বসবার নিয়ম করা হয়েছে । যাক, এই নিয়ম ভালোই লাগলো রাফির । কতদিন পর বাইরে বেরোল । বেশ লাগছে চারপাশটা দেখে ওর । একটু আগের একাকীত্বটা যেন বিদায় নিয়েছে । রাফি জানালার পাশে বসে ছিল । সেখানে বসেই বাইরের দিকে তাকিয়ে পরিবেশটা উপভোগ করতে করতে যেতে লাগলো ।

সন্ধ্যার দিকে বাড়ি পৌঁছল রাফি । বাসায় আছে ওর মা, বাবা, ওর ছোট ভাই আর ওর দাদি । দাদা গত হয়েছেন বছর ৩ আগে । বাসার দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই ছোট ভাই হাতে ব্লিচিং  মিশ্রিত স্প্রেটা এনে সব কিছু স্প্রে করে ভাইকে ভেতরে ঢুকতে দিলো । রাফি বলল, “কিরে? কেমন আছিস?” ছোট ভাই বলল, “আগে গোসল করে নাও, তারপর কথা, নাহলে আমারও করোনা হবে ।” রাফি হালকা হাসল । কিছু বলল না । রাফির মা বলল, “কিরে বাবা? রাস্তায় কোন সমস্যা হয় নি তো, এতো দেরি হল যে?” রাফির মা বলল, “না মা । আসলে রাস্তায় জ্যাম ছিল একটু সেজন্য ।”

- “জ্যাম? করোনার জন্য তো অল্প গাড়ি চলছে, তাও জ্যাম?” অবাক হয়ে বলল রাফির মা ।

- “ধুর, বাদ দাও তোমার করোনা । লোকডাউনেও গাড়ি চলেছে কতো, আর এখন তো সীমিত আকারে খুলেও দিয়েছে ।” রাফির বাবা অন্য রুমে ছিল, ওই রুম থেকেই বলে উঠলেন, “এই রাফির মা, তুমিও না, ছেলে আসতেই শুরু করে দিলে । ওকে গোসল করে একটু ফ্রেশ হতে দাও, তারপর কথা বোলো ।” রাফি বলল, “যাই মা, গোসলটা সেরে নেই ।”

গোসল সেরে বাবা আর দাদির সাথে দেখে করে খাওয়াদাওয়া করলো রাফি । ওদের এলাকায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো নিষেধ । তাই বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা করবারও কোন উপায় নেই । রাত ১০টার দিকে একটু ছাদে গেলো রাফি । ওদের বিল্ডিংটা ১২তলা । ছাদ থেকে পুরো এলাকা দেখতে বেশ লাগে । ছাদের রেলিং-এর পাশে দাড়িয়ে মোবাইল চালাচ্ছিল রাফি । আকাশ আর কালচে লাল হয়ে আছে । তারার দেখা নেই । মোবাইলে কার সাথে যেন চ্যাট করছিলো রাফি, এমন সময় কে যেন ওর পাশে এসে দাঁড়ালো । রাফি তাকিয়ে দেখল, ওরই সমবয়সী হবে একটা ছেলে । রাফিকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়েই বলল, “হাই!” রাফিও হালকা হাসিমুখে বলল, “হ্যালো!” আর কিছু বলল না রাফি । আবার চ্যাটের দিকে মনোযোগ । ছেলেটা তখন বলে উঠলো, “ডিপ্রেসড নাকি রাফি?” রাফি কিছু টাইপ করছিলো, ছেলেটার কথা শুনে থেমে গেলো । ছেলেটা রাফিকে চিনল কি করে? আর রাফি যে ডিপ্রেসড এটাই বা জানল কি করে?” রাফি মোবাইলটা লোক করে পকেটে রেখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, “কে তুমি? আমাকে চিনলে কি করে?’ ছেলেটা মুচকি হেসে রাফির দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বলল, “আমি ভি এস ।”

রাফি একটু ভয় পেলো । হ্যান্ডশেক করতে সাহস পেলো না । ভি এস একটু হেসে  বলল, “তোমার গানের যে চ্যানেলটা আছে, ওর সাবস্ক্রাইবগুলোর একজন আমি ।” রাফিও একটু হাসল । তবু পুরোপুরি চেহারা থেকে ভয়টা গেলো না । এখনও ও যে ডিপ্রেসড এই কথাটা এই ভি এস নামের ছেলেটা কি করে জানলো  বুঝতে পারলো না । তবে হান্ডশেক করলো । ছেলেটাই তারপর বলল, “আসলে কয়েক মাস ধরে দেখছি তুমি গান আপলোড করছো না । তার ওপর এখানে কেমন চোখে মুখে গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছো । ও সরি, শুরু থেকেই তুমি করে বলছি আপনাকে । আপনি আমার চেয়ে বড় কি ছোট তা না জেনেও ।”

- “না  সমস্যা  নেই । ভুল তো মানুষই করে । কেউ ভুল করে  ভুল করে, কেউ ভুল করে ইচ্ছে  করে । কাউকে আবার ভুল করে ভুল করার মাশুলও দিতে হয় ।” না চাইতেও হেসে  কথাটা শুরু  করে শেষটায় আবার ডিপ্রেসড হয়ে পড়ল রাফি ।

- “আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি । আপনি?”

- “তাই! আমিও সেম ক্লাসে ।” হাসিমুখে বলল রাফি ।

- “ও, তাহলে আমি ভুল করিনি । তোমাকে তুমি করে বলাটাই ঠিক আছে । যদিও অচেনা হিসেবে আপনি করে বলাটাই ভদ্রতা, যাকগে । কি যেন বলছিলে তুমি? কাউকে ভুল করে ভুল্ করার মাশুল দিতে  হয়, না কি যেন একটা?” প্রশ্ন করলো ভি এস ।

রাফি ছেলেটার দিকে একবার তাকাল । এই মাত্র ২মিনিটের পরিচয়ে ছেলেটাকে এসব বলা কি ঠিক হবে? দেড় বছরের পরিচিত বন্ধুরা যখন বুঝল না, তখন এ আর কি বুঝবে? রাফি কিছু বলল না ।

- “আপনি  যদি চান তো শেয়ার করতে পারেন?” বলল ভি এস ।

রাফি কিছুক্ষন কি একটা ভেবে শেষটায় বলে দেখতে চাইলো, কিছু সমাধান যদি পাওয়া যায়, কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ভি এস নামের ছেলেটা হাসিমুখে বলল, “মনে সংকোচ থাকলে বলার দরকার নেই । তবে একটা  সাজেশন দিতে  পারি । সামনাসামনি একজনকে বলতে সংকোচ বোধ হলে তোমার ফেসবুক আইডি আর ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও করে তোমার মনের কষ্ট শেয়ার করতে পারো । এতে তোমার মনের কষ্ট শেয়ার করে যেমন শান্তি পাবে, তেমনি যারা তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছে তাদেরও মুখোশ খুলে যাবে । আর ভাগ্য ভালো হলে ভিডিও ভাইরালও হয়ে যেতে পারে । তখন পুরো দেশ  জানতে  পারবে ।” আইডিয়াটা রাফির বেশ লাগলো । মুখ থেকে ডিপ্রেশনটা চলে গেলো । একটা অদৃশ্য  হাসি ওর চেহারায় ফুটে উঠলো । ভি এসকে, “আচ্ছা, আমি তাহলে বাসায় যাই ।” বলে তাড়াতাড়ি  করে নিচে নেমে এলো রাফি । নিজের রুমে ঢুকে ভিডিও করে  আপলোড  করলো ফেসবুকে আর ইউটিউবে । ফেসবুকে ফ্রেন্ডস আর পরিচিতজনেরা  দেখবে, আর ইউটিউব-এ দেখবে  ফ্যানসরা ।

সকালে রাফি ঘুম থেকে উঠলো মায়ের ডাকে । রাফির মা মোবাইল হাতে নিয়ে রাফিকে ডাকতে ডাকতে বলল, “এই রাফি! দ্যাখ, টিভির এক নিউজ রিপোর্টার কল করেছে তোকে ।” রাফি তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো । যেন এক নিমিষেই ঘুম চলে গেছে । মায়ের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে সালাম দিতেই ফোনের ওপাশ থেকে সালামের জবাব দিয়ে নিউজ রিপোর্টার বললেন, “ওয়ালাইকুমুস সালাম, আমি যমুনা টিভির একজন নিউজ রিপোর্টার বলছি । আপনার ভিডিও তো ভাইরাল হয়ে গেছে । আপনার এই ভিডিওর ব্যাপারে যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে আমরা একটা প্রতিবেদন বানিয়ে খবরে প্রচার করতে চাই ।

রাফি খুশি  হল । ভিডিও কলে সাক্ষাতকার দিতে রাজি হল । ফেসবুকে যেয়ে  দেখল  ৩হাজারের  মতো শেয়ার পড়েছে । ওর যেসব  বন্ধুরা সেদিন ওর  সাথে প্রিন্সিপ্যালের রুমে যেতে রাজি হয় নি, তাঁরা  পোস্টে  নিজেদের ট্যাগ করেছে আর কমেন্ট করেছে যে তারাও এ  বিষয়ে  ক্ষুব্ধ  । শুধু তাই নয়, রিয়েক্ট পড়েছে প্রায় ১ লাখের মতো আর কমেন্ট  পড়েছে ৪৩ হাজারের মতো । কমেন্টে অনেকে লিখেছে তারাও এই কলেজ থেকে পড়ে বেড়িয়েছে, কিন্তু পরিবার বাদে কাউকে বলার সাহস পায় নি এসব কথা । ওর বাবাও ফেসবুকে ভিডিওটা  দেখেছে । এটা দেখে তিনি বললেন, “আমাদেরকেও তো জানাতে পারতি বাবা, তুই যে এতোটা হতাশ হয়ে ছিলি আমি ভাবতেও পারিনি ।” ধীরে ধীরে রাফির কাছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, নিউজপেপার থেকে কল আসতে লাগলো । ২দিন পর টিভিতে  দেখল, শিক্ষা  মন্ত্রণালয় থেকে এই  কলেজ বাতিল করা হয়েছে আর  এই  কলেজের স্টুডেন্টদের অন্যত্র কলেজ  থেকে  পরীক্ষার দেবার ব্যাবস্থা  করে দেয়া হয়েছে । রাফি আজ খুব খুশি । পুরো দেশে নিজের ছেলের  এরকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে  কথা বলার সাহস আর সুনাম দেখে ওর পরিবারের সবাই খুশি । আজ সবাই পরিবারের সবাই খোঁজ নিচ্ছে । যে মামা চাচারা বছরে ২বার খোঁজ নেয় কি না সন্দেহ, তাদের মুখেও আজ খই ফুটছে । যাক, রাফি আজ অনেক খুশি । কি করতে তাহলে সেদিন সুইসাইড করতে গিয়েছিলো? কতো বড় ভুল একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলো? রাফির মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো । এমন সময় মনে হল আগের রাতের ভি এস নামের ছেলেটা কানে কানে বলছে, “কিন্তু তুমি কেন সুইসাইডটা করলে?” রাফি জানতে চাইলো, “কে? ভি এস তুমি?” রাফি খেয়াল করলো ওর চারপাশটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে  আসছে । এমন সময় মনে হল রাফি কিছু একটার ওপর শুয়ে আছে । বেশ শক্ত । রাফির পুরো দেহ সাদা কাপড়ে মোড়ানো । রাফি টের পাচ্ছে,  শুনতে  পারছে । “আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ – আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ” থেমে থেমে বললেন হুজুর । নামাজ শেষে যেমন সালাম ফেরায় তেমন । রাফি বুঝতে পারলো না, কি হয়েছে । সবটা ও শুনতে পারছে, দেখতে পাচ্ছে, চোখের পর্দা বন্ধ হলেও সবটা যেন কীভাবে দেখতে পারছে । একটু পর কিছু লোক এসে ওর মুখের ওপর থেকে সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলো । রাফি দেখল ওর সব বন্ধু, এলাকার কিছু লোকজন । রাফি টের পেলো ওর  বাবা কাঁদছে । মায়ের কান্নার আওয়াজ-ও শুনতে পাচ্ছে । ছোট ভাইটাও না বুঝে মাকে বলছে, “ওমা, কি হয়েছে ভাইয়ার? ভাইয়া কি মরে গেছে? ওমা? মা?” কান্নায় ভেঙ্গে পড়া মা কিছু বলতে পারে না । রাফি কিছুই বুঝতে পারছে না । কিন্তু ওর খুব কষ্ট হচ্ছে । এমন সময় কানের কাছে ভি এস বলে উঠলো, কি রাফি, কেমন লাগছে?” রাফি  এই ভি এস এর সাথে কথা বলতে পারছে । রাফি বলল, “কে তুমি? কি চাও তুমি? তুমি আমার কি করেছো?”

- “আমি! কেন? সেদিন ফ্যানের সাথে ঝুলে যেতে কি আমি বলেছিলাম?” বলল ভি এস ।

- “আমি? ফ্যানের সাথে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো রাফি ।

- “হ্যাঁ । তুই  সেদিনই মরে গিয়েছিলো । আমি ভি এস, যার পূর্ণরূপ ভুল সিদ্ধান্ত । তুই আমাকে বেছে নিয়েছিলি । তাই তো আমি তোকে শুধু দেখালাম, আজ যদি তুই আমাকে না বেছে নিতি, তাহলে কতো   ভালো হতো, তোর  পরিবারও যেমন আনন্দে থাকতো, কিছু খারাপ লোকেরও মুখোশ ফাঁস হতো ।”

রাফি হতবাক । ও নিজেও বিশাস করতে পারছে না ও সুইসাইড করেছে । ভি এস আবারও  বলল,   “আজ তোর  কলেজে সংবাদটা যাবার পর কলেজের  প্রিন্সিপ্যাল তোর মাকে ফোন দিয়েছিলেন । জানিস কি বলেছেন?” “কি?”  “ও প্রিন্সিপ্যাল বলেছেন, শোনেন ভাবি, ছেলেটার ওপর  কেউ মেন্টার প্রেশার দিত । আমি কলেজে প্রায়ই দেখেছি, ও মেয়েদের সাথে বেশ মেলামেশা করতো । হয়তো  এদেরই কারও জন্য ও ডিপ্রেশনে ছিল । আমরা ওকে কতো আদর করতাম, আমাদের ভালোবাসার পাত্র ছিল ছেলেটা । এখন যা হওয়ার হয়েছে, ভেঙ্গে পড়বেন না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।”  রাফির মনে মনে রাগ জমতে লাগলো । ভি এস বলল, “কি রাগ  জমছে, লাভ নেই । এখন সব   দোষ তোর । এদিকে তদন্ত করতে  করতে মানুষ মরুক, ওদিকে তুই তিলে তিলে মরে যা ।” রাফি কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না । চারপাশে হইচই এর আওয়াজ । কিছুক্ষণ বাদে কে যেন রাফির বাবাকে  বলল, “ভাই, পুলিশ এসেছে, আপনার ছেলের মৃত্যুর তদন্তে আপনার জিজ্ঞাসাবাদ করতে । পুলিশ এসে বলল, “মিডিয়া পড়ে আসো তোমরা ।” রাফি  বুঝল, মিডিয়া থেকেও লোকজন এসেছে  । রাফি ইচ্ছে করছে  উঠে যেয়ে মিডিয়ার লোকেদের সব বলে দিতে, কিন্তু রাফি পারলো না । ওর পক্ষে আর সম্ভব নয় । রাফি প্রচুর আফসোস করতে লাগলো । এ যেন ও মরেও আরেক মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছে । আর সবটাই হয়েছে ওর একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে, সুইসাইড ।

 

হ্যালো ব্রো-রা, পরিশেষে শুধু এটুকুই বলবো, কাউকে যদি কখনো  ডিপ্রেসড দেখতে পাও, তাকে  সময় দিয় । তার সাথে কথা বলো । তাকে হাসিখুশি   রাখার চেষ্টা করো । অন্তত সে  যেন ভুল সিদ্ধান্ত না  নেয় ।  আর  তোমরা, যারা এখনও মনের  কষ্ট পুষে রেখে  নিজেকে  কষ্ট দিচ্ছ,  সুইসাইড করার কথা ভাবছ, তোমরা তোমাদের মনের কথা পরিবারকে বলো । তোমার কাছে বন্ধুকে বলো । না হলে পুরো দুনিয়াকে জানিয়ে দাও । তবে এই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ো না । লাইফে আপস অ্যান্ড ডাউনস আছেই । এতে হেরে গেলে তুমিও হেরে যাবে । খারাপ  ভালো মিলিয়েই মানুষের জীবন । এখন তুমি ডিপ্রেসড আছো তার মানে এই না সারাজিবন তুমি ডিপ্রেসড থাকবে । ভবিষ্যতের ভালোর জন্য ধৈর্য ধারণ করো । আর সুশান্ত সিং রাজপুতের ব্যাপারে আমি শুধু এটুকুই বলবো, বলিউড একটা ট্যালেন্টেড তারকা হারাল । আরেকটা কথা, এখানে কলেজের কথা বলা হয়েছে মানে এই নয় আমাদের দেশে এগুলো চলে । হ্যাঁ, ক্ষেত্র বিশেষ কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা নেপোটিজম করেন, তাই বলে এই না পুরো কলেজ করবে । এটা শুধু একটা কাল্পনিক গল্প, কিন্ত এর মাঝেও বাস্তবের মিল খুঁজে নেয়াটাই সার্থকতা ।

 

আমার গল্প ফুরোলো, নটে গাছটি মুড়ল ।