0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

প্রতিশোধ


গল্পের নাম : প্রতিশোধ 


ছেলেটির নাম শুভ। মামার বাসা থেকে মানুষ হয়েছে। কখোনও মা - বাবার আদর যত্ন পাইনি।
শুভ এবার ঢাকা ভার্সিটি থেকে মার্কেটিং এ ভালো রেজাল্ট করে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। বিবাহের বয়স হওয়াতে তার মামা - মামিরা তার জন্যে মেয়ে দেখতে গেলেন। প্রথম দেখাতেই শুভ মেয়েটিকে পছন্দ করে ফেলে। মেয়েটির নাম নিলিমা। উভয়পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে বিয়ে প্রায় ফাইনাল। কিন্তু শুভর মামা পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন যা পাত্রীপক্ষের নিকট কষ্টসাধ্য।
শুভ : মামি, আমি এই বিয়ে করব না।
মামি : কেন, বাবা? তোর কি মেয়ে পছন্দ হয়নি?
শুভ : না, মামি। তেমন কিছু না।
মামি : তাহলে?
শুভ : আমি এই যুগের ছেলে। যৌতুকের বিনিময়ে আমি বিয়ে করবো না।
মামি : ওরে হারামজাদা। জন্মের আগে বাপকে হারাইছিস আর আট বছর পর মাকে হারাইছিস। সেখান থেকে এই পর্যন্ত আমরা তোকে খাওয়াইছি, পড়িয়েছি। কত টাকা খরচ করিয়েছিস তুই আমাদের! এই টাকাগুলোকি তোর বাপ দিবে? আমরা তো মাত্র পাঁচ.... (কথা শেষ হয়নি)
শুভ : ছি, মামী। আজ এত বছর পর তোমার আসল রুপ দেখলাম। আমি মামাকে সব বলে দিব।

Author
[বাজার থেকে মামা আসলেন]
মামা : ওগো , ওরা বিয়েতে রাজি। সব টাকা দিবে।
মামি : এ তো মহা খুশির খবর।
শুভ : মামা একটা কথা ছিল!
মামা : বল, শুভ।
শুভ : আমি বয়ে করব না।
মামি : তোমার ভাগনে লেখাপড়া শিখে মহান হয়ে গেছে!
শুভ : আমি যৌতুক নিয়ে...
মামা : থাম। বুঝেছি। বিয়ে তোকে করতেই হবে।
শুভ : মামা!
 
মামা : এই যাবৎ তোর পিছনে আঠারো লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কালকে সকাল পর্যন্ত সময় দিলাম। হয় বিয়ে করবি নাহলে সব টাকা পরিশোধ করে বাড়ি থেকে চলে যাবি?
শুভ : _____
মামি : কথাগুলো যেন মনে থাকে!
পরদিন সকালে
রাইসা (শুভর মামাত বোন) : আম্মু, ভাইয়া মনে হয় আব্বুর বকা শুনে বাড়ি থেকে চলে গেছে।
মামি : কি? কই দেখি তো।
[মামি ঘরে যেয়ে দেখল শুভ নেই আর ওর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলাও নেই।]
শুভর মামা বিষয়টা জেনে তাৎক্ষনাত শুভর সব বন্ধুদের কে ফোন করল। কিন্তু কেও কিছু জানে না।
শুভর মামা নিলিমার বাবাকে ফোন করল
শুভর মামা : ভাই, একটা কথা বলি
নিলিমার বাবা : জ্বী, বলেন।
শুভর মামা : আসলে, আমার ভাগনে বিয়েটা করতে চাচ্ছে না। আপনারা এক সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। কিন্তু আমার ভাগনে টাকা ছাড়া বিয়ে করবে না।
নিলিমার বাবা : ছী। ভাই, আমি আপনাদেরকে উচ্চ বংশের ভেবেছিলাম। এখন দেখি আমার ধারনাই ভুল। রাখলাম ফোনটা।।।
__________
অন্যদিকে শুভ তার ভার্সিটির এক স্যারের সহায়তায় এক বড় কম্পানির মার্কেটিং অফিসার পদে চাকরি পেল। প্রথমে চাকরিটা ঢাকায় থাকলেও এক মাস পরে পোস্টিং হয়ে খুলনায় চলে আসে।
 
শুভর নিখুত কাজে সবাই ওকে পছন্দ করে।
আজ অফিসে নতুন ম্যানেজার আসবে। আফিসে সবাই সুন্দর পরিপাটি হয়ে এসেছে। শুভও এর ব্যতিক্রম নয়। নতুন ম্যাডাম আসলেন। সবার থেকে ফুল নিলেন কিন্তু শুভর থেকে নিলেন না। ঘন্টা খানেক পরে শুভকে তার কেবিনে ডাকলেন.....
শুভ : May I come in, madam?
ম্যাডাম : মি. শুভ। আপনি এখানকার মার্কেটিং ম্যানেজার?
শুভ : Yes, Madam.
ম্যাডাম : আমার সম্পর্কে তো জানেন যে আমি এখানকার নতুন ম্যানেজার।
শুভ : জ্বী ম্যাডাম। আপনার নাম নিলিমা ফেরদৌসি।
ম্যাডাম : অফিসের সবাইকে বেশ ভালোই পটিয়ে ফেলেছেন!
শুভ : _______
ম্যাডাম : আসার সময় আপনার বেশ গুনগান শুনছিলাম। তাই আপনাকে ভাল করে চিনে রাখলাম।
শুভ কিছুটা অবাক ভাবে তাকিয়ে থাকল।
শুভ খুব আস্বস্তী বোধ করছিল। কারণ এর সাথেই তো শুভর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
শুভ খুব দায়িত্বের সাথে তার অফিসের সকল কাজ সম্পূর্ণ করে। হঠাৎ একদিন তার অধিনস্থ এক কর্মচারি ঘুস নিতে যেয়ে ধরা পড়ে গেল। সে নিজে বাচার জন্যে শুভর কথা বলে।অফিসের সবাই শুভর পক্ষে থাকলেও ম্যাডাম ঐ কর্মচারির কথাটাকেই সত্যি হিসেবে ধরে নেন।
ম্যাডাম : মি. শুভ, আপনি জানেন আপনার কত বড় শাস্তি হতে পারে?
শুভ : ম্যাডাম, বিশ্বাস করুন! আমি এই কাজটা করি নি।
ম্যাডাম : চুপ করেন। যে ছেলে পাঁচ লক্ষ টাকার জন্যে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারে না। সে দশ লক্ষ টাকার লোভ কিভাবে সামলাবে?
শুভ : ম্যাডাম, আমি আপনার কথা কিছুই বুঝলাম না।
ম্যাডাম : থাক আর নাটক করতে হবে না। কালকে এসে সাসপেনশন লেটারটা নিয়ে যাবেন। Now get out from my office.
 
পরদিন সকালে শুভ অফিসে গেল।
ম্যাডাম : এই যে, আপনার সাসপেনশন লেটার। আপনাকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আর যদি তা আপনি না দেন তাহলে আপনার নামে পুলিশে কেস করা হবে।
শুভ : ম্যাডাম, বিশ্বাস করেন। আমি এই জঘন্য কাজটা করিনি। আর আমার পক্ষে এত টাকা দেয়া এখন অসম্ভব।
ম্যাডাম : আপনার শাস্তি আমি কমাতে পারি। কিন্তু এক শর্তে।
শুভ : ধন্যবাদ, ম্যাডাম। আমি যেকোন শর্তে রাজি।
ম্যাডাম : শর্তটা হল ; আমাকে বিয়ে করতে হবে।
শুভ : এটা আপনি কি বলছেন?
ম্যাডাম : বিকালে আপনার মতামত জানাবেন।
শুভ তো প্রথম থেকেই নিলিমার প্রতি দুর্বল ছিল। শুধুমাত্র এটা মিলাতে পারছেনা যে নিলিমা অফিসে কেন ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তবুও শুভ রাজি হয়ে গেল।
নিলিমার পরিবার বিয়েটা মেনে না নেওয়ায় তারা নিজেরা কাজি অফিসে যেয়ে বিয়েটা করে ফেলল। আজ তাদের বিয়ের প্রথম রাত,
রাত সাড়ে বারটা বাজে। শুভ ঘরে ঢুকেই আগে দরজা বন্ধ করলো। নিলিমা তখন খাটেই বসে ছিল। শুভ পাশে যেয়ে বসল।
শুভ : এই রাতে স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা আর দুজনে একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে।
নিলিমা কিছু না বলে খাট থেকে নেমে শুভর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। কিন্তু পা টা একটু শক্ত করে ধরেছিল যার ফলে শুভ একটু ব্যাথা পেল।
শুভ : চল, ওজু করে আসি।
নিলিমা : ঐ, থাম। যথেস্ট হয়েছে। আমি নামাজ-টামাজ পড়তে পারব না। তোর এত ইচ্ছে তুই যেয়ে পড়।
শুভ : তুমি, এভাবে কথা বলছো কেন?
নিলিমা : তা কিভাবে কথা বলব? আমার ঘুম আসতেছে। তুই যেয়ে নিচে শুয়ে পর।
শুভ : কেন? আমি তো তোমার সাথে ঘুমাব।
নিলিমা : এত আমার সাথে শুয়ার ইচ্ছে তাহলে সামান্য কিছু টাকার জন্যে বিয়েটা ভেঙ্গেছিলি কেন?
শুভ : আমি তো তোমার.... (কথা শেষ হয়নি)
নিলিমা : আর একটা কথাও বলবি না। যা নিচে যেয়ে শুয়ে পর।
শুভ : তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করলে কেন?
নিলিমা : প্রতিশোধ। একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া যে কতটা কষ্টের সেটা তুই টের পাবি।
শুভ : _ _ _ _ _
শুভ নিচে যেয়ে শুয়ে পরে আর চিন্তা করতে থাকল যে, তার দোষটা কি?
এই ভাবে কাটতে থাকে তাদের দিন। নিলিমা কথায় কথায় লোকজনের সামনে শুভকে অপমান করে।
 
শুভ : নিলিমা , তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে!
নিলিমা : আমার সময় নেই।
শুভ : সময় থাকুক বা না থাকুক তোমাকে শুনতেই হবে।
নিলিমা : আচ্ছা, বলো।
শুভ : আমি ডিভোর্স চাই।
নিলিমা : দাও। কে নিষেধ করেছে?
শুভ : ধন্যবাদ। আমি ভাবিনি যে, তুমি এত সহজে রাজি হয়ে যাবে।
নিলিমা : শুধু একটা কথা মনে করিয়ে দিই।
শুভ : কি কথা?
নিলিমা : বিয়েতে বিশ লক্ষ টাকা দেনমোহর বাধা হয়েছিল মনে আছে তো?
শুভ : কিন্তু আমার পক্ষে তো এত টাকা দেয়া অসম্ভব।
নিলিমা : আমি কি জানি। দেনমোহর বাধার সময়ে মনে ছিল না?
শুভ : তখন তো বুঝিনি যে, তুমি এমন করবে!
নিলিমা : তো এখন বুঝে নেও।
________
এভাবে আরও এক মাস চলে যায়। একদিন নিলিমা অফিস থেকে বাসায় ফিরছিল। পথে কয়েকটা মাস্তান টাইপের ছেলে নিলিমাকে টিজ করতেছিল। পিছন থেকে শুভ সেটা দেখতে পায়। আর রেগে যেয়ে একটাকে চড় মারে। তখন পুরো গ্যাঙ শুভর উপর। এদিকে নিলিমা আগেই পালিয়েছে। রাত ১১ টার দিকে শুভ আহত অবস্থায় বাসায় আসে। নিলিমা আদর-যত্ন তো দুরের কথা বরং ফার্স্ট এইড বক্সটা শুভর মাথায় চেলে মারে।
 
পরদিন প্রচন্ড ব্যাথায় শুভর জ্বর আসে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হচ্ছে দেখে নিলিমা শুভর গায়ে পানি মারে। প্রচন্ড জ্বরে শুভ কষ্ট করে উঠে ওয়াশরুমে গেল। আর এদিকে নিলিমা ওয়াশরুমের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে অফিসে চলে গেল।।
দুপুর ২ টায় নিলিমা বাসায় ফিরে আগে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে দেয় এবং কিছু না বলে চলে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করল যে, শুভ এখনও বের হয়নি। তখন নিলিমা ওয়াশরুমে যেয়ে দেখে প্রচন্ড জ্বরে শুভ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
নিলিমা চিন্তিত হয়ে পরে এবং তখনই শুভকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
নিলিমা : ডাক্তার, শুভ কেমন আছে?
ডাক্তার : শুভর জ্ঞান ফিরতে কমপক্ষে ৭২ ঘন্টা লাগবে। আর আপনি দ্রুত এই ঔষধ গুলো নিয়ে আসুন।
নিলিমা তখন শুভর ফোন থেকে কয়েকজন ফ্রেন্ডকে ফোন করে জানায়।
নিলিমা ঔষধ আনতে নিচে যায়। এমন সময় কেও একজন নিলিমাকে ডেকে বললেন,"আপনি কি নিলিমা?"
নিলিমা : জি। আপনি?
রাসেল : আমি রাসেল। শুভর বেস্ট ফ্রেন্ড।
নিলিমা : আচ্ছা। আসুন উপরে।
রাসেল : আপনি শুভর কি হন?
নিলিমা : আমি ওর স্ত্রী।
রাসেল : কি? শুভ আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে। আর বিগত এক মাস আমার সাথে যোগাযোগও করেনি!
নিলিমা : _ _ _ _ _ _
রাসেল : তুমি সেই মেয়ে না যার সাথে শুভ বিয়ে না করে পালিয়েছিল?
নিলিমা : আমিই সেই মেয়ে। কিন্তু শুভ পালাবে কেন? আপনি এসব কি বলছেন?
রাসেল : সে কি? তুমি জান না? রাসেল তো যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করবে না তাই বাসা থেকে পালিয়েছিল। আর ওর মামা আপনাদের বাসায় ফোন করে উল্টা পাল্টা কথা বলেছিল।
নিলিমা : আপনি সত্যি কথা বলছেন তো? (কেঁদে)
রাসেল : আশ্চার্য! আমি মিথ্যা কথা কেন বলব? শুভর ভাগ্যটাই খারাপ। বাবাকে কখোনও দেখিনি আর ৮ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছে। মামা- মামিরাও ভাল না।
নিলিমা : আমি শুভর কাছে যাব।
রাসেল : ডাক্তার কে বলুন। যেতে দিবে না মনে হয়।
_ _ _
এমন সময় কেবিন থেকে একজন নার্স ডাক্তার কে ডাক দেয়। ডাক্তার এবং আরও কয়েকজন নার্স দৌড়ে কেবিনে যায়।
কিছুক্ষণ ডাক্তার বাইরে এসে নিলিমাকে বলল, " I am sorry. He is no more"
নিলিমার মাথা ঘুরতে থাকে। সে দৌড়ে শুভর পাশে যেয়ে বসে পড়ল আর শুভর বুকে মাথা রেখে বিভিন্ন কথা বলতে লাগল
- শুভ, । উঠে বস, প্লিজ। আমাদের সংসার অনেক সুখের হবে। শুভ। শুভ। আমাকে ক্ষমা করে দাও, শুভ। আমি তোমার সব কথা শুনব। কখোনও প্রতিশোধের কথা চিন্তাও করব না। শুভ, একবার চোখ মেলে তাকাও। শুভ, একটিবার আমার হাতটা ধরো। শুভ।।।।

[সমাপ্ত]

ভালবাসার সাথে প্রতিশোধ জড়িত থাকলে তার পরিনাম দু:খেরই হয়।