একটি অসমাপ্ত গল্প
গল্পের নাম : "একটি অসমাপ্ত
গল্প"
--------------
বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রেহান।।।
ছোটবেলা থেকেই সে সবার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়।।। কিন্তু সে তার সহপাঠী ও এলাকার
বন্ধুদের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না।।। সে ছিল তার অন্যসব বন্ধুদের থেকে অন্যরকম।।।
এজন্যই বোধ হয় সে তাদের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না।।।। তার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের
থেকে আলাদা।।। কিন্তু সে তার বন্ধুদের বিপদে আপদে সহায়তা করত।।। স্কুল লাইফে তার
কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল না.... তার কিছু সহপাঠী ছিল স্বার্থপর প্রকৃতির অর্থাৎ তাদের
প্রয়োজন অনুযায়ী রেহানকে ব্যাবহার করত,,,,
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই আর পাত্তা দিত না.... তার মনের মধ্যে
চিরকাল ধরেই ঘুরপাক খায় "কখনো কি কেউ আমাকে বুঝবে না!!" রেহান এবার
এইচএসসি পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে Applied Physics
বিভাগে ভর্তি হয়েছে....
সালমা : নামিরা,এ হলো রেহান, আমার ফ্রেন্ড [নামিরা সালমার SSC BATCH
এর বান্ধবি]
সালমা : রেহান, এ হলো নামিরা আমার স্কুল
লাইফের ফ্রেন্ড [রেহান ও নামিরা কিছুক্ষণ একজন আরেকজনের
দিকে তাকালো,তারপর সামনাসামনি বসল] [তারপর সালমা তার অন্যান্য বন্ধুদের সাথে রেহানের পরিচয় করিয়ে দিল]
রেহান : সবার সাথে পরিচয় করে ভাল
লাগল
[তারপর তারা সকলে গল্পে মেতে উঠলো] [রেহান তার গিটার বাজানো শুরু করল,,,,,নামিরাও তার দিকে তাকিয়ে ছিল....বোধহয় তাদের মধ্যে অনূভুতির সৃষ্টি হয়েছিল] [আড্ডা শেষ হওয়ার পর সকলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল] ঠিক তখন.....
রেহান : নামিরা!
নামিরা : হুম... বলো
রেহান : আমাদের তো ঠিকভাবে পরিচয়
হলো না....আমরা কি একজন আরেকজনের সম্পর্কে জানতে পারি না?
নামিরা : অবশ্যই.... আমি নামিরা
চৌধুরী.....চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছি...
রেহান : শুধু এতটুকুই!! আর কিছু জানা
যায় না?
নামিরা : আর কি কি জানতে চাও?
রেহান : এই মনে করো তোমার পছন্দ,অপছন্দ ইত্যাদি....
নামিরা : সে না হয় পরে জানা
যাবে.... এখন একটু তাড়া আছে.... আমি আন্তরিকভাবে দুঃক্ষিত...!
রেহান : আরে এতে দুঃক্ষিত হওয়ার কি
আছে? তোমার
অসুবিধা থাকতেই পারে!
নামিরা : ধন্যবাদ....তুমি চাইলে
আমার সাথে mobile এ contact করতে পারো....
রেহান : আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই
[অতঃপর নামিরা রেহানকে
মোবাইল নাম্বার দিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায়] [সালমা এ সব
কিছু লক্ষ্য করছিল....সে বুঝে ফেলেছিল যে নামিরাকে রেহানের ভালো লেগেছে,,,,
সে মনে মনে খুশি হল এবং মনে মনে ভাবলো "যাক! ছেলেটা
ছোটবেলায় অনেক কষ্ট পেয়েছে, ওকে আর কষ্ট পেতে হবে না]
[রেহানও সেদিন তার হোস্টেলে ফিরে গেল] [পরদিন
সকালে দেখল রেহানকে নামিরা ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে,,,, তারা এভাবে একজন আরেকজনের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করল....অনেক ভাল ফ্রেন্ডও
হয়ে গিয়েছিল] ------------- [এই কয়েকদিনের মধ্যে রেহান
নামিরাকে ভালোবেসে ফেলে,,,,,কিন্তু নামিরাকে তা বুঝতে দেয়
নি.....তার মধ্যে ভয় ছিল যদি নামিরা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে] {এভাবে কেটে গেল সাড়ে ৩ বছর} {তাদের মাস্টার্স
ডিগ্রি প্রায় শেষের দিকে } এমন সময় একদিন-------
রেহান : নামিরা, আমি তোমাকে জরুরি কিছু
বলতে চাই!
নামিরা : হ্যা... অবশ্যই বলতে পারো
রেহান : কিন্তু আমি সাহস পাচ্ছি
না! চলো না, আজকে
বিকালে সেই রেস্টুরেন্টটাতে যাই, যেখানে তোমার সাথে আমার
প্রথম দেখা হয়েছিল...
নামিরা : আচ্ছা!
রেহান : ধন্যবাদ... আমি অপেক্ষা
করবো
[এই বলে নামিরা চলে গেল] তখন
বিকাল, ৫ঃ৩০ ----- [নামিরা
রেস্টুরেন্ট এ এসে পৌছালো এবং নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না] [সে দেখতে পেল রেহান ওই রেস্টুরেন্ট এর একটি রুম এ তার আর নামিরার ছবি
দিয়ে দেয়ালে সাজিয়ে রেখেছে এবং অনেকগুলো মোমবাতি দিয়ে সমগ্র রুম সুসজ্জিত ছিল]
[অতঃপর সে দেখতে পেল রেহান গিটার নিয়ে নামিরার পাশে এসে দাঁড়াল] তারপর
-----
নামিরা : এসবের মানে কি?
রেহান : কেন? তোমার পছন্দ হয় নি?
নামিরা : না! পছন্দ হবে না কেন? চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে!
কিন্তু আজকে হঠাৎ......
রেহান : তুমি তো জানো যে আমি কতদিন
ধরে একটা কথা বলব বলে তোমাকে অপেক্ষা করাচ্ছি.... আজকে সেই অপেক্ষার পালা শেষ
নামিরা : কিন্তু আমি তো কিছু
বুঝতেছি না.... তোমার জরুরি কথার সাথে এসবের সম্পর্ক কি?
রেহান : আসলে,,,,বহুদিন ধরে তোমাকে আমার
অনেক ভাললাগে.... আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি..... শুধুমাত্র এ কথাটি বলার জন্য
আমি তোমাকে অপেক্ষা করাচ্ছিলাম.... আমি সাহস পাচ্ছিলাম না।।।।কিন্তু আজকে আর আমার
অনুভূতি চেপে রাখতে পারলাম না.......
[রেহানের এ কথা শুনে নামিরা
হতবাক হয়ে গেল....সে অনেক সময় ধরে রেহানের দিকে তাকিয়ে থাকল......] কিছুক্ষণ পর
-----
নামিরা : তুমি এ
কথা আমাকে আগে বলো নি কেন?
রেহান :
ইয়ে! মানে! আমি মোটেও সাহস পাই নি!
[রেহান খুব ঘাবড়ে গেল]
নামিরা : তুমি
যে কথা বলছ তা তো অসম্ভব!
রেহান : কিন্তু
কেন? (অবাক হয়ে,)
নামিরা : আমার
বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।।।। আগামী মাসে আমার বিয়ে.... এমনকি গতকাল ছেলেপক্ষ আমাকে
দেখতে এসে পছন্দ করেছে....এখন আর আমার কিছু করার নাই
রেহান : কিন্তু
এখন আমার কি হবে!! আমি তো তোমাকে অনেক
বেশি ভালোবেসে ফেলেছি.... তোমায় ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না.... ছোট বেলায় কখনো কেউ
আমাকে বুঝে নি... চিরকাল কষ্ট পেয়ে বড় হয়েছি.... সবাই আমাকে অবহেলা করত..... আমি
আমার শৈশবের আনন্দ হারিয়েছি.... চিরকাল একা বেঁচে রয়েছি....এখন আমি তোমাকে হারিয়ে
বাঁঁচতে পারব না।।।।। (কষ্টের সাথে)
নামিরা : তোমার
এ কথাগুলো কয়দিন আগে বললে কি হত!!! তুমি জানো তোমার জন্য আমার মনে অনেক আগে থেকেই
অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল.... কখনো বুঝতে পারলে না!!! তোমাকে প্রথমবার দেখেই আমার
ভালো লেগে যায়....এত বছর যাবৎ আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম....কিন্তু এখন তো আমার হাতে কিছু নেই....আমার পরিবার আমাকে যার সাথে বিয়ে দিবে তাকেই মানতে হবে....তুমি যদি ৭ দিন আগে বলতা তাহলেও হত
[রেহান এসব কথা শুনে আর কান্না চাপিয়ে রাখতে
পারল না,,,,,, সে নিজেকে
অপরাধী মনে করতে লাগলো।।।। সে মনে করল নামিরার ভালোবাসা বুঝতে না পারা তার অপরাধ]
কিছুক্ষণ পর
(কান্না থামিয়ে) -------------
রেহান :
যাক! কেউ তো আমাকে বুঝতে পারল....ঠিক আছে....
আমি শুধু তোমার কাছে একটা জিনিস চাই!!! দিতে পারবে?
নামিরা : কি?
রেহান : ৭ দিন।।। শুধু ৭ দিন তোমার সাথে সময় কাটাতে
চাই।।।। দিতে পারবে?
নামিরা : ঠিক
আছে.... কথা দিলাম
[তারা দুজনেই সেদিন চলে গেল......তাদের এ
ঘটনা সালমার কানে গেল.....সে মনে মনে অনেক দুঃখ প্রকাশ করতে লাগল.... কারণ সে
রেহানের অতীত সম্পর্কে জানে..... রেহান যে কখনো কারো সঙ্গ পায় নি তা সালমা জানে]
একদিন সন্ধ্যায়
----------
সালমা : শুধু
শুধু ৭ দিন সময় কাটিয়ে কি হবে! ওর বিয়ে
হয়ে গেলে তুই অনেক কষ্ট পাবি!!! তখন
কিভাবে থাকবি!
রেহান : এই ৭ দিন
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার.... এই ৭ দিন এর স্মৃতি নিয়ে আমি চিরকাল থাকতে চাই
[সালমা আর কিছু বলল না কারণ সে রেহানের মনের
অবস্থা বুঝে]
[এভাবে অতিবাহিত হতে লাগল রেহান আর নামিরার ৭
দিন]
[নামিরা ও রেহান ক্রমশই একে অপরের প্রতি
দুর্বল হতে লাগল.....কিন্তু তাদের তো কিছু করার নেই.....নামিরা তার মনকে শক্ত করতে
লাগল ]
[ধীরে ধীরে তার বিয়ের দিন এগিয়ে আসল,,,,রেহানও তার মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে
নেতিবাচক হতে লাগল....রেহান ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ল..... সে মাদক ছাড়া থাকতে
পারত না......এভাবে ধীরে ধীরে তার এই মায়ার দুনিয়া ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসছিল]
এমন সময় একদিন
-------
সালমা : রেহান
তুই নামিরার জন্য তোর জীবন শেষ করে দিচ্ছিস!!! নামিরা কি একবারও তোর কথা
ভাবছে!! ও যদি তোর কথা ভাবত তাহলে তোর এ
পরিণতি হতো না....
রেহান : এখানে
নামিরার কোনো দোষ নেই.... সবই আমার নিয়তিতে লেখা ছিল....ছোটবেলা থেকেই তা
ঘটেছে......
[এভাবে রেহান ক্রমশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিল]
একদিন --------
(রেহান মাদকের নেশায় তার জ্ঞান হারালো....
সালমা ও রেহানের ভার্সিটির কিছু বন্ধু তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল)
(রেহানকে ICU তে ভর্তি করা হল)
ডাক্তার : উনার
পরিস্থিতি তো অনেক খারাপ.....মাদকের প্রভাবে তার সমস্ত শরীরের অঙ্গ বিকল হয়ে
গিয়েছে.... তাকে বাঁচানো খুবই কঠিন।।।।
[এমন সময় রেহানের জ্ঞান ফিরল.... জ্ঞান ফেরা
মাত্রই সে নামিরাকে দেখতে চাইলো.....এটিই ছিল তার শেষ ইচ্ছা ]
[সালমা সর্বোচ্চ চেষ্টা করল নামিরাকে রেহানের
সামনে হাজির করার জন্য....কিন্তু পারল না.... নামিরা তার স্বামীর চাকরির সূত্রে
অন্য দেশে বদলি হয়ে গিয়েছিল....যোগাযোগ করার অন্য কোনো ব্যবস্থাও ছিল না.....]
[এভাবে ধীরে ধীরে রেহানের জীবনাবসান ঘটতে
লাগল]
[ডাক্তার সর্বোচ্চ দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা
করল....কিন্তু পারল না।।।।কিছুক্ষণের মধ্যে রেহানের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল]
তার জীবনের গল্প
অসমাপ্ত রয়ে গেল....সে ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা সবই অসমাপ্ত থেকে গেল
---------------------
(সমাপ্ত)
[অবহেলা ও পরাধীনতার আশ্রয়ে মানুষের জীবনের
গল্প অসমাপ্ত থেকে যায়]