0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

আমরা শাহীনে ছিলাম-৫ (শেষ অংশ)


আমরা শাহীনে ছিলাম-৫ (শেষ অংশ)


একদিন আমি সাজিদ আর প্রতীক আমাদের বেইজে একটা স্যার প্রাইভেট পড়ান, উনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম । হঠাৎ দেখি.........
বলে আবার হাসা শুরু করে দিলো ফুয়াদ ।
আজিজুল স্যারঃ নাহ, গল্প শোনার মজাটাই নষ্ট করছ কেন?
ফুয়াদঃ জী স্যার, বলছি । হঠাৎ দেখি আরিক খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরে ভুরি দোলাতে দোলাতে বাসার পেছনে যাচ্ছে । পরে আমরা ওকে দেখে হাসতে  হাসতে ওর কাছে গেলাম, তখন শুনি ও নাকি আর কুড়ানোর জন্য যাচ্ছে ।
বলে আমার ফুয়াদ হাসা শুরু করে দিলো । অন্যান্যরাও হাসতে লাগলো ।
আজিজুল স্যারঃ (হালকা হাসতে হাসতে) যাও, তুমি তো কেউ একজনকে অপমান করে ছাড়লে । যাই হোক, এরপর কে আসবে ।
হঠাৎ তৃণ আর সাবিত প্রত্যয়ের হাত জোর করে উচু করে দিলো ।
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ প্রত্যয়, তুমি আসো ।
প্রত্যয় এলো ।               
আজিজুল স্যারঃ বলো কি বলবে ।
প্রত্যয় দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি বলে ও । কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর আজিজুল স্যার বললেন,
আজিজুল স্যারঃ কি ব্যাপার? কিছু তো বলো । এসেছ যখন কিছু তো বলতেই হবে ।
প্রত্যয়ঃ ইয়ে মানে, বলছি ।
এরপর একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো প্রত্যয় ।
প্রত্যয়ঃ সেদিন ছিল শুক্রবার । রাতে আমি ঐ দিনই প্রথম লুঙ্গি পড়ে  ঘুমায়ছিলাম । ভুত এফ এম শুনতে আমার খুব ভালো লাগে । সেদিনও আমি ভুত এফ এম শুনতে শুনতে ঘুমায় গেছিলাম । সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার লুঙ্গি নাই ।
সবাই হেসে অস্থির । একটু আগে একজন আরেকজনের অপমান করে গেলো, এখন একজন নিজের অপমান করলো ।
আজিজুল স্যারঃ বাহ! নিজেকে দ্বারা অপমানিত । ঠিক আছে, যাও ।
প্রত্যয় চলে গেলো নিজের বেঞ্চে ।
আজিজুল স্যারঃ আচ্ছা, ছেলেদের তো অনেক কাহিনী শুনলাম, এবার মেয়েদের থেকে কারো কাহিনী একটু শুনি । ফারিহা আসো ।
ফারিহা বিনতে আলীঃ স্যার আমি!
আজিজুল স্যারঃ জী স্যার । আসেন ।
ফারিহা বিনতে আলী চলে এলো সামনে ।
ফারিহা বিনতে আলীঃ গতবছরের কথা । আমি সেবার সুন্দরবন ঘুরতে গিয়েছিলাম । তো আমার আম্মু আব্বু ঘুরতে ঘুরতে অনেক দূর চলে গিয়েছিলেন । আম্র আমি তখন ছবি তোলায় ব্যাস্ত । হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আশে পাশে আব্বু আম্মু নেই । তো ফোনে কল করলাম, কিন্তু নেটওয়ার্ক নেই । এখন আমি কি করবো টেনশনে পড়ে গেলাম । হাটতে হাটতে আমি একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম । তখন খুব কান্না পাচ্ছিলো । ভাবছিলাম আমার আব্বু আম্মুও আমার জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছেন । একটু পরে আমি দেখি আমার আব্বু আম্মু এদিকে আসছেন, কিন্তু উনাদের মনে কোনরকম কোন কষ্ট নাই । আমি যেয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরি । আব্বু তখন জিজ্ঞেস করি আমি কাদছি কেন । আমি আব্বুকে সব বললে আব্বু বলে, আমি এখন আর হারিয়ে যাবার মতো বয়স নেই । তাই চিন্তা করেন নি । ওইদিন আমার এমন লেগেছিল । তবে সত্যি বলতে আব্বু আম্মু ঠিকই জানতো আমি এদিকেই থাকব ।
এরপর ফারিহা সিটে চলে এলো ।
আজিজুল স্যারঃ শেষ?
ফারিহা বিনতে আলীঃ জী স্যার
আজিজুল স্যারঃ কাহিনীটা ইমোশনাল নাকি হাসির ঠিক বুঝলাম না, তবে ইন্টারেস্টিং ছিল । এবার কে আসবে?
হঠাৎ মেয়েদের মধ্য থেকে লামিয়া বলে উঠলো,
লামিয়াঃ স্যার।
আজিজুল স্যারঃ কে?
লামিয়াঃ (দাঁড়িয়ে) স্যার আমি ।
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ বলো ।
লামিয়াঃ স্যার আমি বলব গল্প
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ আসো সামনে ।
লামিয়া সামনে এলো ।
আজিজুল স্যারঃ শুরু করো ।
লামিয়া । ঘটনাটা এই বছরেরই  । কয়েক মাস আগের কথা । ঐ দিনটা আমার জন্য খুব কষ্টের ছিল । ওইদিন সকালে আমার আর আমার বান্ধবি নাবিলার লিপস্টিক হারিয়ে গিয়েছিলো । আবার ওইদিনই আমার বন্ধু তুষার নুর জাহানের লিপস্টিক নিয়ে কি একটা রঙ করার কাজ করেছিলো । আমি স্টার জলসার আর স্টার প্লাসের সিরিয়াল দেখি । ঐ দিন কারেন্ট না থাকায় আমি একটা সিরিয়ালও  দেখতে পারিনি । আবার কারেন্ট না থাকায় রাতে গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো । রাতে কারেন্ট গেলে আমরা সবাই বাইরে বেরোই । ওইদিনও বেড়িয়েছিলাম । কিন্তু আমি হঠাৎ রাস্তায় পড়ে যেয়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম । আবার ওইদিনই আমার আব্বু আমাকে এর ডাইরিতে সাত্তার স্যার এর ব্যাড কমেন্ট লেখার সাইন করতে গিয়ে অনেক বকা দিয়েছিলো । বলতে গেলে ঐদিনটা আমার জন্য খুবই কষ্টের ছিল ।
সবাই ওর গল্প শুনে হেসে অস্থির ।
আজিজুল স্যারঃ (ইয়ার্কি করে) ঠিক আছে, যাও । তোমার সিটে যাও । আমি দেখি তোমার জন্য টিস্যু পেপার এর ব্যাবস্থা করতে পারি কি না ।
সবাই এবারেও হেসে দিলো ।
আজিজুল স্যারঃ আবার আসছি গল্পে, তবে তার আগে আমি একটু তোমাদের একটু কথা বলি । তোমরা পুরো ক্লাস পড়াশুনা করেছো । সারাদিন রেস্টলেস পড়াশুনা করলে ব্রেইন এর ওপর একটু চাপ পড়বে । তাই তোমাদের একটু মনোরঞ্জন করার জন্য আমি এই কাজটা করলাম । আমি বুঝেছি, কেউ কেউ সত্যি বলছে, কেউ কেউ মিথ্যে বলছে । কিন্তু যাই-ই বলছে, আমাদের আনন্দ দিচ্ছে । তো চালিয়ে যাও । মন থেকে যাই পারো, তাই-ই বলো । যেন এই ক্লাসের বোরিংনেস টা চলে যায় । এবার কে আসবে ।
আদ্রিতাঃ স্যার আমি ।
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ আসো ।
আদ্রিতা সামনে এলো ।
আদ্রিতাঃ দিনটা ছিল বুধবার । আকাশ খুব মেঘলা ছিল । কিন্তু বৃষ্টি যে আসবে ভাবতেই পারিনি । প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম । হঠাৎ দেখি একটা ফকির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিক্ষে করছে । আমার উনাকে দেখে খুব কষ্ট লাগলো । যদিও ঐ ফকিরটার হাতে টাকা নেয়ার জন্য কোন থালা কিংবা অন্য কিছু ছিল না । আমার কাছে দুটো ছাতা ছিল । প্রথমে ভাবলাম দেবো । পরে আবার ভাবলাম দিয়ে আর কি হবে । যা ভেজার তা তো ভিজেই গেছে । তারপর প্রাইভেটে চলে গেলাম । ঐ দিন প্রাইভেটে নতুন একজন স্যার আসার কথা ছিল । তো বৃষ্টির মধ্যে আটকে পড়ায় আসতে পারেন নি । যাই হোক । প্রাইভেট শেষে ঐ ভিক্ষুককে আর ওখানে দেখলাম না । পরদিন প্রাইভেটে যেতেই আমি পুরো অবাক । যেই নতুন স্যারটা এসেছেন উনি গতকালকের ঐ ভিক্ষুক । গতদিন প্রাইভেট পড়াতে আসার সময় হঠাৎ বৃষ্টি চলে আসায় উনি ভিজে গিয়েছিলেন । রাস্তা পার হবার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন । আর স্টাইলিশ মারকা ছেঁড়া প্যান্ট আর গেঞ্জি দেখে মনে হচ্ছিলো একটা ভিখারি । তো আমি ঐদিন খুব হেসেছিলাম বাসায় এসে । পরে একদিন উনাকে ঐ ড্রেস পরে প্রাইভেট পড়াতে আসতেও দেখেছিলাম । শেষ ।
আজিজুল স্যারঃ ঠিক আছে । যাও । এরপর কে আসবে?
রাতুলঃ স্যার, আমি ।
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ আসো ।
রাতুল সামনে এসে দাঁড়ালো ।
রাতুলঃ গতবছরের কথা । ঐ একটা কারণে আমি রাতে বাসায় একা ছিলাম । তো আমার একটা বাজে স্বভাব, কেউ যদি বাসায় না থাকে, আমি টিভি দেখতে দেখতে সময়ের আর কোন হিসাব রাখিনা  । কতক্ষন দেখলাম না দেখলাম তার হিসাবও রাখি না । তো সেদিন আমি এইচবিও তো “ইট-২০১৮” মুভিটা দেখছিলাম । মুভিটা একটা হরর মুভি । তো ওটা যখন শেষ হয়ে যায়, ঠিক তখনই লোড শেডিং হয় । তো আমি টর্চ লাইটটা নিয়ে আমার রুমে যেয়ে একটা মোমবাতি জালালাম । লোড শেডিং খুব কম হয় বলে চার্জার লাইটে চার্জ দেয়া হয় না বলে চার্জ ছিলও না । হঠাৎ খেয়াল করি কেউ আমার রুমে হাটছে । আমি মনে সাহস জোগাড় করে বাইরের রুমে আসতেই কিসের সাথে পা আটকে আমি পরে যাই । সেদিন আমি এতো ভয় পাইসিলাম । পরে আমি দেখি আমি খাটের ওপর আর আমার পাশে আমার আম্মু । ওর পর থেকে আমি আর একা থাকার সাহস পাই নি ।
আজিজুল স্যারঃ ঠিক আছে । ফানের মাঝে হরর গল্পও শুনলাম । এবার দেখি, কে আসবে ।
রাতুল ততক্ষনে সিটে চলে গেলো । সানজিদা আশা হাত তুললো । আজিজুল স্যার এর অনুমতি নিয়ে সামনে চলে গেলো ।
সানজিদা আশাঃ একদিন রাতে আমি খাওয়াদাওয়া করে বাইরে থেকে হেটে ঘোরে আসলাম হঠাৎ দেখি আমার টেবিলের চারপাশে অনেকগুলো টিকটিকি । আমি তখন ভয়ে বাইরে চলে আসি । বলে রাখা ভালো, আমি ঘরে ঢোকার সময় লাইট জালাই নি । তো আমার চিৎকার শুনে আমার আব্বু আম্মু চলে আসে । পরে আমার রুমে এসে দেখেন, আমার টেবিলের আশেপাশে অনেক কাগজের টুকরো এমনভাবে পরে আছে, অন্ধকারে দেখে মনে হচ্ছে টিকটিকি । সেদিনের পর থেকে আমি আর আমার রুমে লাইট না জালিয়ে যাই নি ।
আজিজুল স্যারঃ ধন্যবাদ গল্পের জন্য । হাতে সময় খুবই কম । একটু পড়েই ছুটি হবে । এবার কে গল্প বলতে আসবে চলে এসো ।
মেয়েদের মধ্য থেকে বৈশাখী চলে এলো গল্প বলতে ।
বৈশাখীঃ এটা সম্পূর্ণ সত্যি একটা ঘটনা । আর এটা ঘটসে গত সপ্তাহে । আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে একটা ক্যাফেতে খাওয়া দাওয়া করতে গিয়েছিলাম । আমার ফ্রেন্ড হল ঐ বদমাইশ সামিয়া । তো যাই হোক, ক্যাফে তে যেয়ে ও ৬টা খাবার অর্ডার করলো । ওর ওপর আমার এতো রাগ ধরতে শুরু করলো, কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না । পাবলিক প্লেস । কিছু বলাও যায় না । আমি আবার ভাবলাম খাচ্ছে খাক । আমার কি । টাকা তো ওর খরচ হবে । আমার তো আর হবে না । আর একটা বার্গার অর্ডার করলাম । খাওয়া দাওয়া শেষে বিল আসলো ৩৫০ টাকা । আমি আমার বার্গারের টাকা দিলাম । এখন সামিয়া টাকা বের করতে যেয়ে আমাকে বলল ও নাকি টাকা আনতে ভুলে গেসে । আমার এতো রাগ ধরলো! পরে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিল দিলো । এখনও আমাকে টাকাটা দেয় নি ।
আজিজুল স্যারঃ ঠিক আছে । যান ।
বৈশাখী চলে  গেলো নিজের সিটে । যাবার সময় সামিয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে ভেংচি কাটল । সামিয়াও বৈশাখীর দিকে তাকিয়ে জিভ বের করে ভেংচি কাটল ।
আজিজুল স্যারঃ এতক্ষন তোমাদের সবার গল্প শুনছিলাম আর কোন Moral খোজার চেষ্টা করছিলাম  । একেকটা গল্পের শেষে আমি মোবাইলে সব Moral নোট করছিলাম । তো এবার সবাইকে শোনাই । ১ম যে গল্পটা বলল, বাসে একজন জ্যোতিষী না কি এলেন সবার মনের কথা বলতে পারেন । ঐ গল্পের Moral কখন গোপনে কিছু করলে তা ফাঁস হবেই । এরপর যেই গল্পটা বললেন আমাদের লম্বু । ঐ গল্পের Moral কখনো বন্ধুর সামনে এমনভাবে চলা উচিত না, যাতে সে তাকে নিয়ে উপহাস করে । কারণ ঐ ঘটনা সবার সাথে ওর বন্ধু শেয়ার করবেই । পরেরটার Moral একটু ছোট আর হাসির। ঘুমের সময় লুঙ্গি সামলে রাখবেন ।
সবাই প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো ।
আজিজুল স্যারঃ এরপর যে গল্প, হারিয়ে যেয়ে খুশি থাকবেন, কান্নাকাটি করবেন না । এটা অতটা ভালো হয় নি । যাই হোক  পরেরটার তেমন কোন Moral খুজে পেলাম না । শুধু এটুকুই Moral, গল্প বলার আগে চিন্তা ভাবনা করে নেবেন ।
সব লামিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসা শুরু করে দিলো ।
আজিজুল স্যারঃ এরপর গল্পটা ছিল বৃষ্টিতে কোচিঙের স্যারকে দেখে ফকির মনে করা । এটার Moral যা দেখতে পাও, তার সব সত্যি না । এরপরের গল্পের Moral একা থাকার সময় অন্তত ভুতের কিছু দেখা উচিত না । এরপরের গল্প ছিল টিকটিকি । তো এটার Moral-ও একই । যা দেখতে পাও তার সব সত্যি না । এবং লাস্টে যে গল্প শুনলাম, ওটার Moral তোমাদের সবার জন্য খুব উপকারি । বন্ধুদের সাথে কোথাও গেলে, বিশেষ করে যেখানে টাকা খরচ হয়, অন্তত চেক করে নিবে, তোমার বন্ধু টাকা আদৌ এনেছে কি না ।
সবাই হাসতে হাসতে অস্থির । একটু পড়েই ঘণ্টা পরে গেলো ।
আজিজুল স্যারঃ ঠিক আছে, সবাই বাসায় যান, আজ অনেক মজা করলাম । কিন্তু হ্যাঁ, কাল কিন্তু হ্যা, কাল কিন্তু HW আনতেই হবে ।
বলেই আজিজুল স্যার চলে গেলেন । বেইজের সবাই যে যার বাসার দিকে গেলো । টাউনের সবাই বাস স্টপেজে চলে গেলো বাসের কাছে । তৃণ ৪ নাম্বার বাসের দিকে যাচ্ছিলো, হঠাৎ সাবিতের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেলো । সাবিত তৃণর কাছে গেলো ।
তৃণঃ কি রে? ডাকলি কেন?
সাবিতঃ দোস্ত, চল । আজকে ৪ নাম্বার বাসে না যেয়ে ৩ নাম্বার বাসে যাই । 
তৃণঃ ক্যান? কি হইসে?
সাবিতঃ জানিনা, কিন্তু কেমন যেন লাগছে ।
তৃণঃ ধুর । কিছুই হবে না । আর তাছাড়া আমরা তো প্রতিদিন ৪ নাম্বার বাসটাতেই যাই ।
সাবিতঃ তবু । কেমন যেন লাগছে । বা চোখটা তখন থেকে কাঁপছে ।
তৃণ হাসতে লাগলো ।
সাবিতঃ তুই হাসতেসিস?
তৃণঃ হাসবো না তো কি করবো? তুই যে এখনও ঐ সব কুসংস্কার নিয়েই পরে আছিস এ কথা শুনলে নাফিজও হেসে দেবে ।
সাবিতঃ তারপরেও । কেমন যেন লাগছে ।
তৃণঃ ধুর । বাদ দে তো । চল বাসে উঠি ।
তৃণ আর সাবিত বাসে উঠে গেলো । ঐ বাসে ওদের সাথে নাফিস, রাতুল, সোয়েব, আলভি আর প্রত্যয় যায় । অন্যান্য ক্লাসের ছেলেরা তো আছেই । সাথে আশিকুল স্যার ও ফিসিক্সের সাইফুল স্যার ও যান । ওরাও উঠে পড়লো বাসে । ৪ নাম্বার বাসটাই সবার আগে ছাড়ল । একটু পর একে একে সব বাস ছাড়তে শুরু করলো । ৪ নাম্বার বাসে সবাই বসে কথা বার্তা বলছে । হঠাৎ  হেল্পার আঙ্কেল ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলল,
হেল্পার আঙ্কেলঃ ভাই, তেল ভরতে ভুইলা গেসিলাম গা ।
ড্রাইভার আঙ্কেলঃ (হালকা রেগে) তোমারে দিয়া কোন কাজই হইব না । এহন যদি রাস্তায় গাড়ি থাইমা যায়, তহন কি করমু?
হেল্পার আঙ্কেলঃ তেলের বোতল নাই?
ড্রাইভার আঙ্কেলঃ না । বাসে কোনদিন তেল রাখতে দেখসস । সবসময় তো ইস্কুলের ইষ্টোর রুমেই থাকে
আর কিছু বললেন না হেল্পার আঙ্কেল । ড্রাইভার আঙ্কেল বাস চালাতে লাগলেন । এতক্ষন সব কিছু ঠিক ঠাকই চলছিল । কাহিনীটা ঘটলো আরবপুর থেকে পালবাড়ির দিকে বাস ঘোরানোর পর ।
ড্রাইভার আঙ্কেলঃ আয় হায়! বেরেক কাজ করতেসে না!
হেল্পার আঙ্কেলঃ কি কন!
বাসে বসে থাকা ফিসিক্সের সাইফুল স্যার এর কানে গেলো কথাটা ।
সাইফুল স্যারঃ কি হইসে ভাই? ব্রেকফেল করেছে নাকি বাস?
ড্রাইভার আঙ্কেলঃ জী স্যার ।
আশিকুল স্যারঃ হায় হায়! লা ইলা ইল্লাল্লাহ! ভাই সাবধানে । স্পীড বাড়ানোর দরকার নাই । আপনি এক কাজ করে । পালবাড়ির ভেতর না ঢুকে যশোর ঝিনাইদহ হাইওয়ের দিকে যান । ওদিকে রাস্তা ফাঁকা পাওয়া যাবে । আর হেল্পার ভাই, আপনি একটু দরজায় দাঁড়িয়ে সামনের গাড়িগুলোকে সাইড দিতে বলুন । আশিকুল স্যার এর কথা মতো ড্রাইভার আঙ্কেল বাসটা যশোর-ঝিনাইদহ হাইওয়ের দিকে চালানো শুরু করলোহেল্পার আঙ্কেল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে এবং রাস্তায় কাউকে দেখলে সতর্ক করে দিচ্ছে । দুপুর বেলা । তাই তেমন একটা ভীর না হলেও বাস ট্রাক চলছে অনেক । এদিকে সাইফুল স্যার ফোনে স্কুলের সবার সাথে যোগাযোগ করা শুরু করলেন । বাসের সবাই হেল্পার আঙ্কেলের সতর্কতা শুনে বুঝে গেলো কি হয়েছে ।
সাবিতঃ আমি বলসিলাম তোরে । কিছু একটা হবে ।
তৃণ কিছু বলল না
রাতুলঃ ভাই এখন কি হবে?
সোয়েবঃ ভাই, ভু ত্রুটি মাফ করে দিস ।
বাসে থাকা কয়েকজন ছোট ছেলে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে । বড়রা ওদের শান্ত করার চেষ্টা করছে । এদিকে বার প্রায় হাইওয়ে রোডের কাছে চলে এসেছে । অন্যান্য বাসগুলো এই বাসের আগেই চলে যায় । ফলে বাসকে ওভারটেক করার প্রয়োজন না হলেও ট্রাকগুলোকে ঠিকই ওভারটেক করতে হচ্ছে । কারণ ট্রাকের গতি বাসের গতির  থেকে অনেক কম । আশিকুল স্যারঃ এবার কি হবে স্যার?
সাইফুল স্যারঃ জানিনা । আমার তো বয়স হয়েছে । আমি মরলে সমস্যা নাই । কিন্তু বাসের ছাত্রগুলোর যে কি হবে আমি শুধু তাই-ই ভাবছি ।
আশিকুল স্যারঃ স্যার আপনি বসেন, আমি ড্রাইভারের পাশে যেয়ে উনাকে একটু সাহায্যও করি ।
সাইফুল স্যারঃ আচ্ছা ।
আশিকুল স্যার বাসের ইঞ্জিনের ওপর বসলেন ।
আশিকুল স্যারঃ ড্রাইভার, মাথা ঠান্ডা রাখো । গাড়ি চালাতে থাকো ।
গাড়ি চালাতে লাগলেন ড্রাইভার । একটু পর আরেকটা ট্রাক চলে আসে বাসের সামনে । বাস যখন ট্রাকের প্রায় অর্ধেক অতিক্রম করেছে, ঠিক সেই সময় সামনে থেকে একটা দ্রুতগামী গাড়ি আসতে লাগলো । ড্রাইভার এবার ভয় পেয়ে গেলো । গাড়ির ব্রেক ধরাও সম্ভব না, এদিকে ট্রাক পার হবার আগেই যদি সামনের গাড়িটা এসে ধাক্কা খায়, তাহলে একটা মারাত্মক মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটবে । ঠিক সেই সময় ড্রাইভার একটা পাকা রাস্তা দেখতে পেয়ে সেদিকে গাড়িটা ঘুরিয়ে দিলেন ।  সামনে থেকে আসা বাসটা যাবার সময় স্কুল বাসের পেছনে হালকা আঘাত লাগায় । তবে সেটায় তেমন কিছু হয় না । হাইওয়ে রোড থেকে যাওয়া অন্য রাস্তাটি পাকা এবং বাজারের মধ্য দিয়ে ।
আশিকুল স্যারঃ যাক, জায়গাটা আমার চেনা । গতবছর এখানে এসেছিলাম । চালাতে থাকো ।
বাস চলছে । আশিকুল স্যার এর ফোনে একটা কল আসে ।
আশিকুল স্যারঃ হ্যালো?
ফোনের ওপাশ থেকে শোনা গেলো হাসান স্যার এর গলা ।
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ স্যার কোথায় আপনারা?
আশিকুল স্যারঃ স্যার আমরা খয়েরতলা বাজারের ভেতরের রাস্তায় ঢুকেছি ।
হঠৎ বাসের স্পীড ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলো । ড্রাইভার আঙ্কেল খেয়াল করলেন তেল প্রায় শেষ । সামনে রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে । একটা গেছে আবার মহাসড়কের দিকে, আরেকটা গেছে অন্য দিকে যার আগে পরে ভৈরব নদ । ঐ নদের ওপর একটা ব্রিজ । ড্রাইভার ভৈরব নদের দিকে গাড়ি ঘুরাতেই আশিকুল স্যার ফোন রেখে বলে উঠলেন,
আশিকুল স্যারঃ ড্রাইভার ডান পাশ দিয়ে না!!!
ড্রাইভারঃ স্যার আরেকটু আগে কইবেন না ।
আশিকুল স্যারঃ আর কিছু করার নাই । সামনে একটা ভাঙ্গা ব্রিজ রয়েছে । এখন আল্লাহই আমাদের বাঁচাতে পারেন 
এদিকে সবাই খুব ভয় পাচ্ছে । কি হবে না হবে আল্লাহই জানেন । অথচ নাফিজ বসে বসে বিড়বিড় করে কিসব বলছে প্রত্যয় ভালো করে খেয়াল করলো ও বিড়বিড় করে বলছে, “রহস্য, সবই রহস্য । আজ রহস্যের চাপায় পরে সব শেষ হয়ে যাবে । কিচ্ছু বাকি থাকবে না । কিচ্ছু না সবই রহস্য ।”
ডানদিকে ঘোরার পড়েই একটি দূর ভাঙ্গা ব্রিজটা নজরে এলো ড্রাইভারের । বাসের স্পীড অনেক কমে গেছে সেই সময় । বাস এগোতে লাগলো, সামনে ভাঙ্গা ব্রিজে পরলে সবাই আরও সাংঘাতিক কিছু ঘটতে পারে । বাসে ছোটরা আছে যারা সাতার জানে না । বাস যেয়ে পড়বে ভৈরব নদে । হেল্পার আঙ্কেল, সাইফুল স্যার, আশিকুল স্যার, এবং বাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা চোখ বন্ধ করে আছে আর প্রার্থনা করছে । ড্রাইভার আঙ্কেলও যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন । অবশেষে ব্রিজের ওপর চাকা উঠতেই আমার নেমে যেয়ে থেমে গেলো বাস তেল শেষ । সবাই খুব খুশি । এরপর ওরা বাস থেকে নামলো ।
প্রত্যয়ঃ কিরে, তুই বিড়বিড় করে কি সব বলছিলি?
নাফিজঃ বাসের ব্রেকফেল হল কি করে সেটা ভাবছিলাম ।
প্রত্যয়ঃ ধুর । এটা তুই ভাইবে কি করবি?
নাফিজঃ জানি না
একটু পর হাসান স্যার আরেকটা বাসের সাথে এলেন ।
হাসান স্যারঃ আপনারা ঠিক আছেন তো?
আশিকুল স্যারঃ জী স্যার । ঠিক আছি । চলুন আগে ওদের বাসায় পৌঁছে দেই । ওদের বাবা মা আবার টেনশন করবে ।
হাসান স্যারঃ জী চলুন ।
এরপর অন্য বাসটায় করে বাসার দিকে রওনা হল ওরা । বাসের মধ্যে তৃণর সাথে সাবিত কথা বলছিল ।
সাবিতঃ দোস্ত, তোর কি মনে হয়? কিভাবে ব্রেকফেল হইলো?
তৃণঃ তুই যার কথা ভাবছিস, আমিও তার কথাই ভাবছি ।
সাবিতঃ ঋজু ভাইয়া?
তৃণঃ হুম ।
সাবিতঃ কিন্তু উনার সমস্যা কি? কেন করছে আমাদের সাথে এরকম?
তৃণঃ হয়তো উনি কোন কিছুর প্রতিশোধ নিচ্ছেন ।
সাবিতঃ কিন্তু কিসের প্রতিশোধ? আমরা উনার সাথে কি এমন করেছি যে উনি আমাদের প্রতিশোধ নিচ্ছেন?
তৃণঃ জানিনা । কিন্তু একদিন সবটা ঠিকই জানা যাবে ।
১২ মার্চ ২০১৮, সোমবারসকাল হয়ে গেছে । এখনও ঘুম ভাঙেনি সাকিবের । কাঁথা দিয়ে মুখটা ঢেকে ঘুমিয়েই আছে । জোরে জোরে নাক ডাকছে । ওর নাক ডাকার আওয়াজ শুনে ওর আম্মু চলে এলো ওর রুমে ।
সাকিবের আম্মুঃ কিরে? তুই রেডি হস নি?
সাকিবঃ (ঘুমের ভেতর) হ্যাঁ রোশনি । তুমি এসেছো?
সাকিবের আম্মুঃ (হালকা রেগে) উফ!! একে নিয়ে যে কি করি । আমি রোশনি না, আমি তোর মা । আর আমি রোশনি বলিনি, আমি বলেছি তুই এখনও রেডি হসনি?
সাকিবঃ আমি জানি তো তুমি রোশনি ।
সাকিবের আম্মুঃ (ধমকের স্বরে) সাআআআকিইইইইইব!!!!!!!!!!!
সাকিব এক লাফে বিছানা থেকে উঠে বসলো ।
সাকিবঃ কি হয়েছে? কি হয়েছে?..................ও তুমি? তা এতো জোরে চিৎকার করছো কেন বলতো ।
সাকিবের আম্মুঃ কেন করবো না?
সাকিব আবার শুয়ে চোখ বন্ধ করলো ।
সাকিবের আম্মুঃ কিরে? ঘুম থেকে উঠবি না?
সাকিবঃ না আম্মু একটু পরে  উঠতেসি ।
সাকিবের আম্মুঃ স্কুলে যাবি না?
সাকিবঃ ধুর । যাব না ।
সাকিবের আম্মুঃ প্রাইভেটে যাবি না হাসান স্যার এর?
সাকিবঃ (বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে) হায় হায়! কয়টা বাজে?
সাকিবের আম্মুঃ সকাল ৭টা ।
সাকিব তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাস্তা না করেই চলে গেলো স্কুলে । হাসান স্যার কোচিং এ পড়াচ্ছেন । গেটের কাছে এসে কিছুক্ষণ উঁকি ঝুকি দিলো । প্রাইভেটে থাকা সবাইও ভয় পেয়ে গিয়েছিলো হাসান স্যার যে কি পরিমান রেগে যাবেন । হাসান স্যার তখন বোর্ডে কিছু লিখছিলেন । লিখতে লিখতেই একসময় বলে উঠলেন,
হাসান স্যারঃ কে এসেছে?
সাকিব দরজার কাছে দাঁড়িয়েই বলল,
সাকিবঃ (নিচু স্বরে) স্যার, আমি ।
হাসান স্যার আর কিছুক্ষণ লিখে মার্কারটা পকেটে রেখে সাকিবের সামনে গেলেন ।
হাসান স্যারঃ তুমি কি শুধরাবে না? আগের দিনও তুমি লেট করেছো, আজও লেট করেছো । কি ব্যাপার কি বলতো?
সাকিবঃ মানে স্যার, ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো আরকি ।
হাসান স্যারঃ ঢোক ।
সাকিব ভেতরে ঢুকল । থার্ড বেঞ্চে ৩ জন বসেছিল  সাকিব সেখানে না বসে লাস্ট বেঞ্চে যেখানে ৩ জন বসেছিল সেখানে যেয়ে বসলো । সব বেঞ্চে ৪ জন করে বসা হয় ।
হাসান স্যারঃ ঐ যে দ্যাখো । সামনে একটা বেঞ্চে বসা ব্যাড দিয়ে উনি চলে গেলো পেছনের বেঞ্চে । এই হল তোমাদের আক্কেল । ভালো কথা । তামজিদ এসেছো?
ফাস্ট বেঞ্চে বসে ছিল তুষার ।
হাসান স্যারঃ কি খবর?
তুষারঃ এই তো স্যার ।
হাসান স্যারঃ কেমন লাগলো ওখানে?
তুষারঃ স্যার মোটামুটি স্যার ।
হাসান স্যারঃ তারপর, ডিবেট আর ইংলিশ এ তো রানার্স আপ হলে ।
তুষারঃ কেন স্যার? ম্যাথ এ যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি জানেন না?
হাসান স্যারঃ কই না তো?
তুষারঃ তাহলে মনে হয় আপনি আগে শুনেছেন । ম্যাথ এর রেজাল্ট একটু পরে দিয়েছিলো তো, এই জন্য মনে হয় আপনি জানেন নি ।
হাসান স্যারঃ ও আচ্ছা । এবার শোনো । কম্পিটিশন তো অনেক করলে, এবার একটু পড়াশুনায় মন দাও । কম্পিটিশন অনেক ভালো জিনিস, কিন্তু পড়াশুনাটা আগে । এই যে এতদিন ছিলে না, জৈব যৌগ আমি অনেক দূর চলে গেছি, সেগুলো তো তুমি সব মিস করলে । যাই হোক, এখন আমি এসব কম্পিটিশনে যাওয়ার জন্য একেবারেই মানা করছি না, শুধু এটুকুই দেখো, তোমার পড়াশুনার যেন কোন ক্ষতি না হয় ।
তুষারঃ ঠিক আছে স্যার ।
হাসান স্যারঃ বসো ।
তুষার বসলো ।
হাসান স্যারঃ গতকাল তোমাদের শহরের একটা বাসের ব্রেকফেল হয়েছিলো । তোমরা হয় ইতোমধ্যে ফেসবুকে সবার কাছে জেনেছো । আরেকটু হলে বাস ভৈরব নদে পড়তে গিয়ে ছিল । আল্লাহর রহমতে বেচে গেছে সবাই ।
হাসান স্যার আরও অনেক কথা বললেন । তারপর কোচিং করালেন । ৭টা ৪৫ থেকে ধীরে ধীরে শররের ছাত্রছাত্রিরা আসতে লাগলো । প্রতিদিন প্রাইভেট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওরা বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকে । ৭টা ৫৫এর দিকে প্রাইভেট শেষ হলে অ্যাসেম্বলির ডাক আসে । হাসান স্যার চলে যান, শহরের সবাই ভেতরে চলে আসে, আর আবার চলে যায় অ্যাসেম্বলিতে ।
শাইনস কভার আপ, হ্যান্ডস ডাউন, কুরআন পাঠ, শপথ গ্রহণ আর জাতীয় সংগীত পাঠের মাদ্ধ্যমে শেষ হল অ্যাসেম্বলি । এরপর যে যার যার ক্লাসে । ক্লাসে এসে সবাই বসলো ।
লাল লাবিবঃ এই শেখ সোহান, কি অবস্থা?
শেখ সোহানঃ এইতো ভালো । তোদের কি অবস্থা? কেমন কাটল সময় ঢাকায়?
লাল লাবিবঃ অনেক ভালো । শনিবার আমাদের প্রিন্সিপ্যাল স্যার ট্রিট দিয়েছেন ।
শেখ সোহানঃ ট্রিট?
লাল লাবিবঃ হ্যাঁ ।
শেখ সোহানঃ কি ট্রিট?
লাল লাবিবঃ একটা পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিলেন । ওখানে অনেক কিছু খাওয়ার জন্য দিয়েছিলেন ।
শেখ সোহানঃ তাইলে তো তোরা সেই মজা করসিস ।
লাল লাবিবঃ আচ্ছা তুই সোনিয়াকে চিনিস?
শেখ সোহানঃ কোন সোনিয়া?
লাল লাবিবঃ এই স্কুলে নাকি ক্লাস ২ পর্যন্ত ছিল ।
শেখ সোহানঃ কি জানি । আমি তো আসছিই ক্লাস ৯-এ । ক্যামনে বলব ।
লাল লাবিবঃ ও আচ্ছা । আমি দেখেছিলাম আমাদের স্কুলে । কুর্মিটোলায় আসছিলো ক্লাস সিক্সে । এক বছর দেখেছি ওকে ।
শেখ সোহানঃ আচ্ছা, ইদানিং দেখি সবাই একটা মেয়ের কথা বলতেসে । তুই কি ঐ মেয়ের কথা বলতেসিস?
লাল লাবিবঃ সবাই কার কথা বলতেসে আমি সেটা জানি না । তবে সেই মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর ।
শেখ সোহানঃ আর স্বভাব পাগলের মতো?
লাল লাবিবঃ হ্যাঁ ।
শেখ সোহানঃ হুম । সবাই ইদানিং ওর কথাই বলতেসে ।
এদিকে মেয়েদের বেঞ্চের ২য় সারিতে বসে বসে কিছু লিখছিল সৃষ্টি । সেই সময় এলো তিথি ।
তিথিঃ কিরে, কি করিস?
সৃষ্টিঃ এইতো । লিখতেসি ।
তিথিঃ আরে! লিখতেসিস আমিও তো দেখতে পারতেসি । তা কি লিখতেসিস?
সৃষ্টিঃ HW
তিথিঃ ও ।
সৃষ্টিঃ তো, কুর্মিটোলায় যেয়ে কার কার সাথে দেখা হইলো?
তিথিঃ অনেকের সাথেই হইসে । সানজিদা, শফিকুল, রিক । তবে স্পেশালি দেখা হইসে সোনিয়ার সাথে
সৃষ্টি লেখা বাদ দিয়ে বলল,
সৃষ্টিঃ কি! সোনিয়া কুর্মিটোলা শাহিনে?
তিথিঃ হ্যাঁ । এখনও পাগলই আছে । যদিও আগের মতো অতটা না । কিন্তু ইয়ার্কি করলে রেগে যাওয়ার স্বভাবটা এখনও আছে । এখন আবার ইয়ার্কি করলে মারামারি শুরু করে দেয় ও ।
সৃষ্টিঃ ওখানেও কি ওর পরিবার সম্পর্কে সবাই কিছু জানে?
তিথিঃ না । ওখানে ওর পরিচিত কেউই নাই । ওর পরিবার সম্পর্কে কাকে কি বলবে ।
সৃষ্টিঃ আচ্ছা, আসলেই অদ্ভুত ব্যাপার । ওর পরিবার সম্পর্কে কেউই কি কিছু জানে না?
তিথিঃ হতে পারে ওর পরিবারে কেউ নেই ।
সৃষ্টিঃ  হতেই পারে । ও, আরেকটা হাসির কথা শোন ।
তিথিঃ কি? ও নাকি আবার প্রেম ও করে বেড়ায় ।
সৃষ্টিঃ সত্যি? কে ওকে পছন্দ করে রে?
তিথিঃ তা জানি না । কিন্তু যে করে, সেও মনে হয় আরেকটা পাগল ।
এপাশে সেকেন্ড বেঞ্চে বসে নাফিজ সব কথা শুনছিলো । হঠাৎ বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
নাফিজঃ শুধুই পাগল? নাকি প্রতিশোধের জন্য উত্তাল?
নাফিজকে বিড়বিড় করতে শুনে আরিক বলল,
আরিকঃ কিরে? কি সব বিড়বিড় করে বলতেসিস?
নাফিজঃ তোর শোনা লাগবে না ।
আরিকঃ ভাই তুই আবার আগের মতো হয়ে যা । দিনদিন এমন হচ্ছিস কেন?
নাফিজঃ আমার ব্যাপারে তুই নাক গলাইস না ।
আরিকঃ যা ইচ্ছা তাইই কর । এবারের পরীক্ষা তোর খুব খারাপ হবে বইলে দিলাম ।
নাফিজ্জঃ পরীক্ষা পর্যন্ত বেচে তো থাকি ।
বিড়বিড় করে আবার কথাটি বলে উঠলো নাফিজ । আরিক ওর থেকে অনেক আগেই মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে । তাই শেষ কথাটা শুনতে পারলো না ।
পেছনের বেঞ্চেই আরিফ আর রাতুল কথা বলছে ।
রাতুলঃ দোস্ত, খুব বিপদে পরসি?
আরিফঃ কি হইসে?
রাতুলঃ জানিনা কে জানি আমাকে একটা চিঠি লিখেছে ।
আরিফঃ এতে বিপদের কি হল?
রাতুলঃ আরে, এটা যেমন তেমন চিঠি । এটা প্রেম পত্র ।
আরিফঃ (অবাক হয়ে হেসে হেসে) কি? তোরে পাঠাইসে? লাভ লেটার?
রাতুলঃ ইয়ার্কি মারিস না তো । সমস্যা তো সেটাও না ।
আরিফঃ তাহলে সমস্যা কি?
রাতুলঃ আসল সমস্যা হল, লাভ লেটারের সাথে সাথে আমার ব্যাগে কেউ এক প্যাকেট সিগারেটও ঢুকিয়ে দিয়েছে ।
আরিফঃ ও । ভালো তো ।
রাতুলঃ ভালো!
আরিফঃ হ্যাঁ । রাস্তায় যেয়ে একটা ইজিবাইকওয়ালারে দিয়া ১০ টাকা নিয়া আয় । ঐ টাকা দিয়া দুইটা সিঙ্গারা খা ।
রাতুলঃ ধ্যাত । কেউ যদি জানতে পারে, তাইলে আমারে সুজিত স্যার আর আস্ত রাখবেন  না ।
আরিফঃ যা বাবা, দেখবে কেউ, আর করবে সুজিত স্যার?
রাতুলঃ আরে!! তুই না একটা বাচাল ।
আরিফঃ না, এটার জবাবটা অন্তত দে ।
রাতুলঃ যে কেউ দেখলে সুজিত স্যার কে জানিয়ে দেবে ।
আরিফঃ এই আমি না সব শুনেছি । যাই । একটু সুজিত স্যার এর রুমের সামনে ঘুরে আসি ।
রাতুলঃ ইয়ার্কি করিস না তো ।
আরিফঃ কিন্তু এটা এলো কিভাবে?
রাতুলঃ জানিনা । তবে মনে হয় এটা ঐ ঋজু ভাইয়ের কাজ ।
আরিফঃ ঋজু ঋজু ঋজু । উনার নামটা শুনতে শুনতে কানটা পচে গেলো । আচ্ছা, সবাই যে উনার কথা বলছে, কিন্তু সবার কি মাথায় আসছে না একটা কথা? উনি আগে না হয় স্কুলে আসতো, তাই চিঠি দিয়ে যেতো । আর এখন তো উনাকে কেউ স্কুলেই আসতে দেখে না । তাহলে তোর কাছে, সামির কাছে লাভ লেটার, ওয়াসির পানির পটের পানির মধ্যে ঘুমের ওষুধ, এসব কি করে এলো? উনি কি যাদু টোনা করছেন নাকি?
বলেই হেসে দিলো আরিফ ।
রাতুলঃ প্রশ্নটা তো ভালো । কিন্তু কাজটা যে ঋজু ভাই-ই করছেন এটাও তো সত্য । তাছাড়া আমার মতো ছেলেকে কেই বা লাভ লেটার পাঠাবে? আর কেই বা ওয়াসির পানির পটের পানিতে ঘুমের ওষুধ মেশাবে?
আরিফঃ সেটাই তো আসল কথা ।
রাতুলঃ আচ্ছা, তুই সোনিয়া কে দেখসিস?
আরিফঃ না । ও ক্লাস টু তে থাকতে চলে গেসে আর আমি টু তে থাকতে এসেছি ।
রাতুলঃ আমি দেখেছিলাম । খুব সুন্দর । শুনেছি এখনও নাকি অনেক সুন্দরি আছে । কিন্তু চেহারাটা আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে ।
আরিফঃ (ইয়ার্কি করে) পছন্দ করতিস নাকি?
রাতুলঃ ধুর । ক্লাস টু তে পরতাম । যুক্তি দিয়ে ইয়ার্কি কর ।
আরিফঃ আচ্ছা, এই সোনিয়ার  কথা সবার মুখে মুখে শুনছি । কিন্তু ব্যাপারটা কি?
রাতুলঃ জানিনা । এদিকে আবার ঋজু ভাইয়ের নির্যাতন ।
আরিফঃ আচ্ছা, এই ঋজু ভাই, আর ঐ সোনিয়ার মধ্যে কোন সন্দেহের জাল খুজে পাচ্ছিস?
রাতুল আর আরিফ দুজনেই চুপ হয়ে গেলো । কেউ কোন কথা বলতে পারলো না । আসলেই ব্যাপারটা খুব চিন্তার । রাতুল কিছু একটা বলতে যাবে, সেই সময় ক্লাসে এলেন হাসান স্যার । স্যার এর চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো কিছু একটা ঘটেছে । কারণ স্যার এর চেহারায় বিষণ্ণতার ছাপ বোঝা যাচ্ছে । সবাই প্রতিদিন যা করে, আজ তাই করলো । দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যার ও সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন । হাসান স্যার ক্লাসে ঢুকেই বললেন,
হাসান স্যারঃ গতকাল ঐ ব্রেকফেল করা বাসে ছিলে, ওরা এই ক্লাস শেষে একটু আমার সাথে যাবা ।
এরপর আর কিছু বললেন না । নাম ডাকার খাতা খুলে নাম ডাকা শুরু করলেন ।
হাসান স্যারঃ রোল ১
তুষার জবাব দিলো “ইয়েস স্যার” বলে ।
হাসান স্যারঃ রোল ৩......ও আচ্ছা, রোল ৩ তো নেই । আচ্ছা, তোমরা সবাই তো রোল ৩ কে চিনতে, না?
সবাই মাথা নাড়াল । ৩ কে সবাই খুব ভালো করেই চেনে । মাঝখান থেকে অনেকে জবাবও দিলো “রিক” নামটি বলে । অনেকেই জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে । কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসান স্যার বললেন,
হাসান স্যারঃ ও......আজ সকালে......
হাসান স্যার আবার থেমে গেলেন । সবাই চুপ হয়ে গেলো । খারাপ কিছু একটা ঘটেছে বোঝাই যাচ্ছে ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসান স্যার বললেন,
হাসান স্যারঃ ও আজকে খুন হয়েছে ।
সবাই অবাক হয়ে গেলো । এরকম কথা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না । সবাই খুব কষ্ট পেলো । হাসান স্যার আর কিছু না বলে আবার নাম ডাকা শুরু করলেন । সবার কেমন যেন লাগছিল । চোখে দেখা কারো মৃত্যুর খবর শুনলে সবারই কেমন যেন লাগে । এতদিন চোখের সামনে ঘুরতে দেখা সেই বন্ধু এখন কবরে মাটির নিচে পোকামাকড়ের সাথে শুয়ে থাকবে । হয়তো ওর আজাব হবে, নয়তো শান্তি পাবে । কিন্তু সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে সেই সময়ের কথাটা ভেবে, যখন সে খুন হয়েছিলো । কষ্ট যে কতটা হয়েছিলো? কতটা যে তীব্র? কতটা যে যন্ত্রনাদায়ক? এসব চিন্তা ভাবনা সবার ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে । হাসান স্যার নাম ডাকা শেষে পড়ানো শুরু করে দিলেন । তামান্নার খুব খারাপ লাগছিলো । আন্ত শাহিন প্রতিযোগিতায়ও দেখা হয়েছিলো ছেলেটার সাথে । ওর গলাটা শুকিয়ে যেতে লাগলো । তাই ব্যাগ থেকে পানির পটটা খুলল । তামান্না ব্যাগ থেকে পানির পটটা খুলতেই একটা গন্ধ বেরোলো । খুব সুন্দর একটা গন্ধ । চারিদিকে ছড়িয়ে গেলো সেই গন্ধ । হাসান স্যার সেই গন্ধ টের পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল, তামান্নার হাতে একটা পানির পট এবং তামান্নাকে সেটার মুখের কাছে নাক দিয়ে গন্ধ নিতে দেখে হাসান স্যার বুঝলেন এটা আমান্নার বোতল থেকেই আসছে । হাসান স্যার কিছু না বলে তামান্নার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে মুখটা আটকে সামনে রাখলেন ।
হাসান স্যারঃ এটা তো একটা ক্ষতিকর এসিড । এটা তোমার শরিরে লাগলে তো স্কিন পুড়ে যেতো তোমার, কোথায় পেয়েছ এটা?
তামান্নাঃ (হালকা ভয়ে ভয়ে) স্যার, আমি নিজেও জানি না ।
হাসান স্যারঃ কি মনে হয়? কে এটা করতে পারে?
পেছন ছেলেদের পেছনের বেঞ্চ থেকে কয়েকজন ঋজু ভাইয়ের নাম বলে উঠলো ।
হাসান স্যারঃ নাহ । প্রথমে লাভ লেটার, এরপর এইসব কাজ কিছু তো একটা কাহিনি আছেই ।
তামান্নাঃ কিন্তু স্যার, এখন কি হবে?
হাসান স্যারঃ আমাদের যে করেই হোক ঐ ঋজুকে খুজতে হবে ।
তামান্নাঃ কিন্তু স্যার কিভাবে?
হাসান স্যারঃ সেটাই তো । প্রতীক কোথায়?
প্রতীক দাঁড়ালো । 
হাসান স্যারঃ তুমি ঐ ঋজুর ছবি আঁকতে পারবে না?
প্রতীকঃ চেষ্টা করে দেখতে পারি স্যার ।
হাসান স্যারঃ ঠিক আছে । তুমি তখন যেভাবে একেছিলে সেভাবে কাজটা করার চেষ্টা করো । আর আমিও দেখছি । রাখিব স্যারকে বলে সিসি টিভি ফুটেজ থেকে কিছু সংগ্রহ করতে পারি কি না । পটটা এখানেই থাক, যাবার সময় আমাকে একটু মনে করায় দিও । আমি ল্যাবে নিয়ে যাব
বলেই হাসান স্যার পড়ানো শুরু করলেন । একটু পরে হাসান স্যার এর ক্লাস শেষ হল । হাসান স্যার যাবার সময় এসিড থাকা বোতলটা নিয়ে গেলেন, আর যাবার সময় সবাইকে সতর্ক করে গেলেন সাবধান থাকার জন্য । পরবর্তী ক্লাস আশরাফুল স্যার এর 
আশরাফুল স্যারঃ কি ব্যাপার?
কেমন আছো সবাই?
খুব একটা কারো মুখ থেকে কথা শোনা গেলো না । মধ্য থেকে ৪-৫ জন ভালো বললেও শুনেই বোঝা যাচ্ছিলো জোর করে নিজেকে বলাচ্ছে । আশরাফুল স্যার কিছু না বলে ক্লাস শুরু করলেন । এদিকে হাসান স্যার ল্যাবে পানির পটটা নিয়ে গেলেন । একটা কাচের দরজাওয়ালা আলমারিতে বোতলটা  রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে আসতেই দেখা রাখিব স্যার এর সাথে ।
হাসান স্যারঃ এই যে, রাখিব স্যার, আপনাকেই খুজছি ।
রাখিব স্যারঃ কি ব্যাপারে?
হাসান স্যারঃ আজকে ক্লাসে একটা মেয়ের ব্যাগে এসিড পাওয়া গেছে ।
রাখিব স্যারঃ ও দেখেন গা । আজকালকার ছেলেপেলে তো । প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে এসিড আনছিল মারার জন্য ।
হাসান স্যারঃ (বিরক্ত হয়ে) আপনি সব কোথায় এতো ইয়ার্কি করেন কেন বলেন তো? আজকে যদি কিছু হয়ে যেতো?
রাখিবঃ এখন কি করতে বলেন?
হাসান স্যারঃ কি করবেন মানে?
রাখিব স্যারঃ প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বলার কথা বলছেন?
হাসান স্যারঃ তা নয়তো কি?
রাখিব স্যারঃ সামান্য ব্যাপারে............                                                       
হাসান স্যারঃ (রাখিব স্যার এর কথা শেষ না করতে দিয়েই) কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আজ কত বড় একটা ক্ষতি হতে যাচ্ছিলো জানেন? গতকালও একটা ক্ষতি হতে যাচ্ছিলো । আল্লাহর রহমতে একবার বেচে গেছে । কিন্তু পরের বার যে বাঁচবে তার কোন গ্যারান্টি আছে?
রাখিব স্যারঃ দেখুন স্যার, আমি সব প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বলেছি । কুর্মিটোলা শাহিনে  গোয়েন্দা পাঠানো হয়েছে । প্রিন্সিপ্যাল স্যার সব কথা শুনে আমাদের এখানেও গোয়েন্দা পাঠাতে চাচ্ছেন ।
হাসান স্যারঃ তাতে কি লাভ হবে?
রাখিব স্যারঃ কি লাভ হল কি লাভ হল না সেটা ওরা আসলেই বোঝা যাবে ।
ঠিক সেই সময় হাসান স্যার এর কাছে সেই ছেলেরা যারা আগেরদিন ৪ নাম্বার বাসে গিয়েছিলো ।
হাসান স্যারঃ কি ব্যাপার?
সাবিতঃ স্যার আপনি বলসিলেন ক্লাস শেষে আপনার সাথে যেতে গতকালকের বাসের ব্রেলফেলের ব্যাপারে ।
হাসান স্যারঃ ওহহো! চল সবাই । ২৬ নাম্বার রুমে ।
এরপর সবাই হাসান স্যার এর সাথে ২৬ নাম্বার রুমে গেলো । এদিকে ক্লাসে আশরাফুল স্যার সবাই পড়তে বলে ক্লাস চুপ করাচ্ছেন ।
আশরাফুল স্যারঃ চুপচাপ পড় । পড়া না পারলে খবর আছে । আর যে কথা বলবে, তাকে আগে ধরবো । কোন লাইন বুঝতে সমস্যা হলে আমাকে বলবে ।
অনেকক্ষণ ধরে সবাই পরতেই লাগলো ।
আশরাফুল স্যারঃ মনে হয় আর কোন প্রশ্ন নাই । তাহলে এবার একটু ধরি?
হঠাৎ তিথি উঠে দাঁড়ালো । একটা প্রশ্ন করলো, স্যার ও সুন্দর করে প্রশ্নের জবাব দিলেন । এরপর প্রশ্ন আসতেই লাগলো, তো আসতেই লাগলো । থামার নাম  নেই । ক্লাস শেষ হতে যখন ৫ মিনিট বাকি, তখন আর কেউ দাঁড়ালো না ।
আশরাফুল স্যারঃ বাহ! পড়া যেন না দিতে হয় তার জন্য তো দেখি ভালোই বুদ্ধি বাইর করসো 
সবাই হেসে দিলো । আশরাফুল স্যার কিছু না বলে পরের দিনের পড়াটা বোর্ডে লিখলেন । এরপর ঘণ্টা পরতেই চলে গেলেন নিজের রুমে । পরবর্তী ক্লাস জাফর স্যার এর । স্যার ক্লাসে এলে সবাই প্রতিদিন যা করে, দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম দেয়া এবং স্যার সালামের জবাব দেয়ার পর স্যার এর অনুমতি নিয়ে বসে পড়া । স্যার বোর্ডে লিখলেন “Ashique goes to school.” এরপর প্রতীককে দাড় করালেন ।
জাফর স্যারঃ বলতো, এখানে আশিক কোন পার্টস ওফ স্পীচ?
প্রতীকঃ Noun?
জাফর স্যারঃ সেটা তো আমি তোমাকে জিজ্ঞাস করলাম ।
প্রতীকঃ Noun ই তো মনে হচ্ছে ।
জাফর স্যারঃ মনে হচ্ছে বললে তো হবে না । Sure হয়ে বলো ।
প্রতীকঃ জী স্যার noun.
জাফর স্যারঃ তুমি কি জিয়নকে চেন?
প্রতীকঃ জী স্যার ।              
জাফর স্যারঃ এবারের যে আন্ত শাহিন প্রতিযগিতা যে কষ্ট করেছে সেই কথা কি জানো?
প্রতীকঃ জী স্যার ।
জাফর স্যারঃ কিভাবে চেন ওকে তুমি?
প্রতীকঃ ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে একসাথে নাটক করেছিলাম ।
জাফর স্যারঃ তোমার কি মনে হয়? ওর ব্রেন কেমন?
প্রতীকঃ স্যার সাপ ।
জাফর স্যারঃ (চমকে লাফিয়ে উঠে) অ মা! Where? সাপ where?
প্রতীকঃ স্যার আমি বলসি শার্প ।
জাফর স্যারঃ ও আচ্ছা, তাই বলো ।
ঠিক সেই সময় গতকাল ৪ নাম্বার বাসে থাকা সব ছাত্ররা এলো ।
নাফিজঃ আসবো স্যার?
জাফর স্যার কিছু না বলে প্রতীককে ইশারা করে বসতে বলে ওদের কাছে গেলেন ।
জাফর স্যারঃ তোমরা কি এই ক্লাসের লোক?
নাফিজঃ জী স্যার ।
জাফরঃ শেষ?
নাফিজঃ কি স্যার?
জাফর স্যারঃ ঘোরাফেরা?
নাফিজঃ স্যার আমরা ঘোরাফেরা করতে যাইনি ।
জাফর স্যারঃ তাহলে?
নাফিজঃ গতকালকের বাস অ্যাকসিডেন্ট এর কিছু ঘটনা স্যার দের জানিয়ে রহস্যের কিনারা করতে গিয়েছিলাম ।
জাফর স্যারঃ রহস্যের কিনারা মানে?
নাফিজ কিছু বলার আগেই রাতুল ওকে কথা বলতে না দিয়েই বলল,
রাতুলঃ স্যার গতকাল ৪ নাম্বের বাস ব্রেকফেল করেছিলো । সেই জন্য  আমাদেরকে হাসান স্যার ২৬  নাম্বার রুমে নিয়ে গিইয়েছিল । গতকাল কি কি ঘটেছিলো তা অন্যান্য স্যারদের জানানোর জন্য ।
জাফর স্যারঃ আচ্ছা যাও ভেতরে যাও ।
সবাই ভেতরে গেলো ।
জাফর স্যারঃ গতকাল একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে শুনেছি । শাহিনের ইতিহাসে কখনই এরকমটা ঘটে নি । তো আজকে হাসান স্যার বলছিলেন, এই কয়েকদিন অনেক কিছু ঘটেছে । আর সেটা তোমাদের ব্যাচের সাথেই ঘটেছে । কিন্তু কেন ঘটেছে? কেন ঘটছে এসব কিছুই আমাদের অজানা । বাকিটা আল্লাহই জানেন তোমাদের কি হবে । যাই হোক, এখন তোমাদের ইংলিশ গ্রামার বইটা বের করো ।
সবাই গ্রামার বই বের করে পড়তে লাগলো । জাফর স্যারও বাকি ক্লাস পড়িয়ে চলে গেলেন । এরপর টিফিন পিরিয়ড । সেদিনও শেখ সোহান আর আরিক পাশাপাশি বসে খাচ্ছিল । হঠাৎ পুস্প এলো ওর কাছে ।
পুস্পঃ এ আরিক? কি টিফিন আনসিস?
আরিক পরোটা ডিম ভাজি খাচ্ছিল । তখন ও পরোটা চিবাচ্ছিল । পুস্পকে দেখে চেবানো থামিয়ে দিলো । আর শেখ সোহান পুষ্পকে দেখেনি এমন একটা  ভান করে ধীরে ধীরে টিফিন বক্সটা হাত দিয়ে কোনোরকমে ঢেকে খেতে লাগলো ।
পুস্পঃ অ!! ডিম পরোটা!! আহা। না দিয়াই খাবি? দে
আরিক টিফিন বক্সটা ওর হাতে দিলো । পুস্প একটু খেলো । এরপর শেখ সোহানকে বলল,
পুষ্পঃ কিরে? ঢাইকা খাইতেসোস কেন?
শেখ সোহানঃ না মানে ইয়ে......
পুষ্পঃ কিয়ে?
শেখ সোহানঃ না মানে খাওয়াই লাগব?
পুষ্প তখন শেখ সোহানের হাত সরিয়ে দেখল শেখ সোহান বিরিয়ানি এনেছে ।
পুষ্পঃ (চোখ দুটো বড় বড় করে টিফিন বক্সের দিকে তাকিয়ে) তুই বিরিয়ানি খাচ্ছিস? আর আমারে না খাওয়াইয়া?
শেখ সোহানঃ মানে অল্প খাইস ।
পুষ্প ওর হাত থেকে টিফিন বক্সটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো । খাওয়া শেষে বক্সটা ওর হাতে দিয়ে পুষ্প আবার সামনের একজনের কাছে গেলো । শেখ সোহান পাশে তাকাতেই দেখল, আরিক হ্যাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
পুষ্পঃ কি ভাই? এমনে তাকায় আসোস ক্যান?
আরিকঃ সেদিন জানি কে বলতেসিল টিফিন শেয়ার করে খেতে হয়, না চাইলেও দিতে হয় এই টাইপের কথা?
শেখ সোহানঃ (হালকা কেশে) ভাই বাদ দে । অতীত মনে রাখতে হয় না ।
আরিক আর কিছুই বলল না । নিজের মতো খেতে লাগলো । এদিকে চিকন আশা এসে বসলো কানিজের পাশে ।
চিকন আশাঃ এই কানিজ, কি করিস?
কানিজঃ কি আর করবো । বাড়ির কাজ করি ।
চিকন আশাঃ কিসের বাড়ির কাজ?
কানিজঃ আজিজুল স্যার এর ।
চিকন আশাঃ ও আচ্ছা ।
টিফিন পিরিয়ড শেষে শুরু হল পরবর্তী ক্লাস । আল আমিন স্যার এর ইসলাম শিক্ষা ক্লাস । কিন্তু একই সাথে এলেন সাইফুল স্যার । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যারও সবার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন ।
আল আমিন স্যারঃ কি ব্যাপার স্যার? এখন তো আমার ক্লাস ।
সাইফুল স্যারঃ কি বলেন? এখন তো আমার ক্লাস । (ফারিহা বিনতে আলীকে ইশারা করে) খুকি, এখন আমার ক্লাস না?
ফারিহাঃ ঠিক জানিনা স্যার । আজকে আশরাফুল স্যার আর জাফর স্যার ও হঠাৎ করে এসেছেন । উনারা কেন এসেছেন ঠিক বুঝলাম না । আমরা মনে করেছিলাম রুটিন চেঞ্জ । তা এখন দেখি আপনিও ।
সাইফুল স্যার উনার হাতে থাকার বইয়ের ভেতর রুটিন বের করলেন । তারপর বললেন,
সাইফুল স্যারঃ আইজকে কি বার?
ফারিহা বিনতে আলীঃ সোমবার স্যার ।
সাইফুল স্যারঃ এই দ্যাখো । আমারে আর আশরাফুল স্যাররে জাফর স্যারই বলল আইজকে রবিবার । এইজন্যই মনে হয় এই হইসে ।
ফারিহা  বিনতে আলীঃ তাহলে স্যার ঐ দুই ক্লাস তো রুবাইয়াত মেডাম আর সাত্তার স্যার এর ছিল । তাহলে উনারা এলেন না কে.........
হঠাৎ কেন যেন “ন” টাইপ হচ্ছে না । খানিক বাদে খেয়াল করলো ল্যাপটপ হ্যাং করেছে  । একপাশে ল্যাপটপটা রেখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে লক্ষ্য করলো তুষারের প্রায় ৫-৬টা মিসকল উঠে আছে । কল ব্যাক করলাম । হ্যালো বলতেই ফোনের ওপার থেকে তুষার কথা বলে উঠলো । “কিরে! ফোন দিলে ফোন ধরিস না কেন?” আমি বললাম, “আমার ফোনের স্পিকার টা নষ্ট । তাই সাউন্ড শোনা যায় না ।” “কলেজ কেমন গেলো?” “দ্বিতীয় দিনের কলেজও প্রথম দিনের মতোই গেলো ।” “করতেসিস কি?” ল্যাপটপটার মাউসপ্যাড তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বললাম, “গল্প লেখি ।” তুষার হালকা রাগি গলায় বলল, “আমরা শাহিনে ছিলাম?” “তো আমরা কি নটর ড্যামে ছিলাম?” তুষার আমার বিরক্ত হয়ে  বলল, “ধ্যাত! আমি বললাম, তুই কি আমরা শাহিনে ছিলাম গল্পটা লিখতেসিস?” আমি হালকা হেসে বললাম, “ও আচ্ছা । হ্যাঁ ওটাই ।” “ঐ স্টোরি তুই শেষ করবি না?” “কেন? আমার তো ইচ্ছা আছে এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপন্যাস বানানো?”  “তোর প্রত্যেক এপিসোডের লাইক সংখ্যা দেখসিস?” আমি একটু চুপ করে বললাম, “হ্যাঁ দেখসি । পেইজে লাইক দেয়া ১৮৪ জন, তার মধ্যে লাইক দেয় ৫-৬ জনের মতো ।” “তাহলে একটু ভাব, এতো কম লাইক দিয়ে তুই কি করবি? তাই এটা এখন বাদ দে । আর তোর পড়াশুনা নিয়ে এখন ভাব । এইচএসসির পরে তুই অনেক সময় পাবি অনেক বড় একটা উপন্যাস লেখার ।” আমি ভাবনায় ডুবে গেলাম । যেদিন প্রথম পেইজ খোলার সিদ্ধান্ত নিইয়েছিলাম, সেইদিন কতজন আমাকে বলেছিল, গল্প লিখবে, লাইক কমেন্ট করবে । পেইজে শাহিনেরই প্রায় ৪০-৪৫টা ফ্রেন্ড আছে । ওদের সবাই সবসময় নাই দিলেও প্রায়ই দেয় । তবে ২-৩জন আছে, যারা সবসময়ই দেয় । কিন্তু এতো কম লাইক কমেন্ট পাওয়া আর গল্প লেখার উৎসাহ কমা একই কথা । তুষার হঠাৎ বলল, “কিরে, চুপ করে আছিস কেন?” আমি ভাবনা ভেঙে বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে । বুঝেছি । কিন্তু গল্পটা তো শেষ করা লাগবে । তা না হলে কেমন একটা হয়ে যাবে না ।” “ঠিক আছে । আমি আমার কথা বললাম । বাকিটা তুই বোঝ । যাই হোক, আনটিকে আমার সালাম দিস ।” সালামটা দিয়ে ফোনটা রাখলাম । একটু ভাবলাম কষ্ট লাগলো । একটু নয়, অনেক । ল্যাপটপটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, একটু আগে যে হ্যাং হয়ে ছিল ঠিক হয়ে গেছে । ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে বাকি গল্প লেখা শুরু করলাম । সিদ্ধান্ত নিলাম, খুব শীঘ্রই গল্পটা শেষ করবো । কিন্তু, শেষ আমি করবো । কারণ সবাই তো এখনও জানেই না । এই সোনিয়া, ঋজু ভাই উনাদের রহস্য । উনারা আসলে বাস্তব জীবনে অন্যরকমভাবে আমাদের  সাথেই ছিলেন, এই কথা কিন্তু কেউই জানেনা । কিভাবে ছিলেন? জানতে হলে আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা করতে হবে । অবশেষে “ন” না লিখতে পারলাম ।
সাইফুল স্যারঃ সাত্তার স্যার, রুবাইয়াৎ মেডাম উনারা কি একটা মিটিং-এ আছেন । রুবাইয়াত মেডাম যে আন্ত শাহিন প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলেন, ওটার ব্যাপারে ।
যাই হোক, সেই ক্লাস টা আলামিন স্যার নিলেন । এরপর একে একে অন্যান্য ক্লাসও শেষ হয়ে গেলো । পরদিন থেকে ক্লাসে গোয়েন্দা আসা শুরু হল । শহরের বাস থেকে শুরু করে স্কুলে আসা এবং স্কুলে এসে পুরোটা সময় স্কুল ঘুরে বেড়িয়ে রহস্য খুজে বের করাই ছিল উনাদের কাজ । প্রতীক পরদিন ঋজু ভাইয়ের অনেকগুলো ছবি একেছিল ঠিকই, কিন্তু একটাও পারফেক্ট হয় নি ।এদিকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর ঢাকা থেকে আসার সময় আরও দু মাস বেড়ে গেলো। ফলে সিসিটিভি ফুটেজটাও দেখা সম্ভব হল না । আর প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমের চাবি স্যার এর রুমেই ছিল ।  রুমের প্রাইভেসির জন্য চাবিটা কাউকে দিয়ে পাঠাতে পারেননি । এভাবে কেটে গেলো প্রায় সাড়ে ৩ মাস । মাঝখানে ওরা পিকনিকও করলো একটা বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্কে । আবার একটা মডেল টেস্টও হয়েছিলো । মাঝে কেটে গেলো রমজান মাসও । রমজানের পর সবার প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা । পরীক্ষার দুদিন আগে সবাইকে ক্লাসে আনা হয়েছে  অ্যাডমিট কার্ড দেবার জন্য । বেশি ক্লাস হবে না, মাত্র দুটো ক্লাস হবেসেদিন ছিল ২৩ জুন, শনিবার । প্রথম ক্লাস বাংলা প্রথম হলেও অ্যাডমিট কার্ড দেবার জন্য ক্লাসে এসেছেন হাসান স্যার । অ্যাডমিট কার্ড দেয়া শেষে যে তিনজন গোয়েন্দা এতদিন ধরে কাজ করছিলেন, উনারা এলেন হাসান স্যার এর কাছে । উনাদের নাম খান, শরিফ এবং বকর । উনাদের লিডার খান আঙ্কেল ।
খান আঙ্কেলঃ স্যার কি বিজি?
হাসান স্যারঃ না না । বলেন ।             
খান আঙ্কেলঃ দেখুন, অনেকদিন ধরেই তো আছি এই কলেজে, সন্দেহজনক কিছু তো পেলাম  না । তো আমাদের আরও অনেক কাজ আছে, সেগুলোও তো করা লাগবে ।
হাসান স্যারঃ জী বুঝেছি । তিন তিনটা মাস আপনারা এতো কষ্ট করলেন, এটার জন্য আমরা আপনাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ ।
খান আঙ্কেলঃ দেখুন, কষ্ট কিছুই না । এই যে ছেলেমেয়েগুলো, ওদের সত্যিই কিছু একটা সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটতে পারতো । আমি জানিনা এই ঋজু কে, কিন্তু মনে হয় ও আর কোন ঝামেলা করবে না । আপনি একটা কাজ করুন, কাউকে কলেজের বাইরে কাউকে জানানোর দরকার নেই ।
হাসান স্যারঃ তা আর জানানোর দরকার পড়বে না । আপনাদের দেখতে যেভাবে এতদিন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আসতো, হঠাৎ না আসতে দেখে এমনিই বুঝে যাবে, আর বাইরে বলে বেরাবে ।
খান আঙ্কেল আর কিছু বললেন না । এদিকে ক্লাস রুমে বসে বই পড়ছে নাফিজ । গল্পের বই । ওকে বই পড়তে দেখে আরিক বলল,
আরিকঃ তুই এখন গল্পের বই  পড়তেসিস?
নাফিজঃ তো? গতকাল ২টা পড়সি, আজকে একটা পড়তেসি ।
আরিকঃ ভাই, পরশু আমাদের প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা । বুঝতে পারতেসিস? কি রকম প্যারা?
নাফিজঃ প্যারা কো ডারনা নেহি, ডারানা হেয় ।
আরিকঃ তোর এবার পরীক্ষা খুব খারাপ হবে । বইলে দিলাম ।
নাফিজঃ হইলে হইসে । তোদের কি রে? তোরা তো সব মরবি রহস্যের মায়াজালে ।
আরিকঃ ভাই? তুই ইদনিং কি সব রহস্য রহস্য করিস রে?
নাফিজঃ মায়াজাল আর রহস্য, রহস্য আর মায়াজাল একে অপরের পরিপূরক ।
আরিকঃ পরীক্ষার খাতায় লিখে আসিস, তো খাতায়ও মায়াজাল আর রহস্যের কারণে ফেইল দেখা যাবে ।
নাফিজ আরও অনেক বকবক করলেও আরিক তাতে সায় দিলো না । সেদিন হাসান স্যার ক্লাস শেষে ক্লাস  ছিল তানিয়া মেডামের । তানিয়া মেডামের ক্লাস শেষে সবাই যে যার যার বাসায় চলে গেলো । এরপর শুরু হল পরীক্ষা । পরীক্ষার মাঝে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ইন্টার ফাস্ট ইয়াররা ক্লাস শুরু করলো । এই বছরই যারা এসএসসি ব্যাচ ২০১৮ এর শাহিনের অনেকেই ছিল ঐ কলেজে । পরিচিত অনেক ভাইয়ারাও ছিল । নতুন নতুন অনেক ভাইয়াও আসেন । সবার সাথেই অনেকের পরিচয় হয় । প্রতীকের আবার পরিচিত একটা ভাইয়া ছিল, নাম রাফসান জ্যানি । উনি ছাড়াও আরও অনেকের সাথে পরিচয় হলেও জ্যানি ভাইকে আগে থেকেই চিনত প্রতীক । কিন্তু এই ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের মধ্যে যে আরও একজন এসেছে, তার কথা কেউই জানেনা ।
সে হল সেই ঋজু ভাই । কিন্তু উনার আগের চেহারার সাথে এই চেহারা মেলাতে খুব কষ্ট হবে যে কারোরই । মুখে হালকা দাড়ি, চোখে নীল লেন্স, মাথার বড় চুল, চোখে চশমা আর ওজন অনেক কমিয়ে এক নতুন রুপে ভর্তি হলেন কলেজে ।
১০ জুলাই ২০১৮ । সেদিন প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের । ক্লাসে আসছিলো সবাই । গেইটে প্রতীকের সাথে দেখা হয় লাল লাবিবের । ওর সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকল প্রতীক ।
লাল লাবিবঃ আল্লাহ! আজকে যে কি হবে ।
প্রতীকঃ হবে না, হয়ে গেছে । এখন শুধু দেখা বাকি ।
লাল লাবিবঃ হুম আসলেই । আমার প্র্যাকটিকাল খাতা আনসো?
প্রতীকঃ কি খাতা?
লাল লাবিবঃ প্র্যাক্টিক্যাল খাতা ।      
প্রতীকঃ তোমার প্র্যাক্টিক্যাল খাতা আমার কাছে আসবে কিভাবে?
লাল লাবিবঃ (হালকা রেগে) এইতো সেদিন নিলা না?
প্রতীকঃ কবে?
লাল লাবিবঃ তোর কিছু কিছুই মনে থাকে না?
প্রতীক হাসা শুরু করলো ।
লাল লাবিবঃ হাসতেসো ক্যান?
প্রতীকঃ তোমার গুল্লুগাল্লু মুখ থেকে তুই কথাটা শুনতে হাসি লাগে ।
একটু সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জ্যানি ভাই ।
প্রতীকঃ দ্যাখো, জ্যানি ভাউ ।
লাল লাবিবঃ হ্যাঁ তো?
প্রতীক জ্যানি ভাইকে অতিক্রম  করার সময় শুধু হাত মেলালো । কিন্তু কিছু বলল না । জ্যানি ভাইও অন্যান্যদের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত থাকায় আর কিছু বললেন না । শুধু হাত মেলালেন ।
প্রতীকঃ কিছুই বললেন না?
লাল লাবিবঃ কি বলবেন?
প্রতীকঃ উনি আমাকে ফেসবুকেও উনার ফলোয়ার বানায় রাখসে । উনার সাথে ভালো মতো কথা বলার কোন সুযোগ পাইলে উনার খবর আছে ।
এরপর প্রতীক আর লাল লাবিব ক্লাসে চলে গেলো । ক্লাসে সবাই এসেছে । বসে আছে খাতা দেখার জন্য । শুরুতেই কয়েকটা খাতা দেখার পর হাসান স্যার এলেন কেমিস্ট্রি খাতা নিয়ে । কেমিস্ট্রি খাতা জসিম স্যার এর দেখার কথা থাকলেও হাসান স্যার দেখেছেন । হাসান স্যার একে একে সবার খাতার নাম ডাকতে লাগলেন । বেশিরভাগই ফেইল । এর মধ্যে নাফিজ, প্রতীকও একজন ।
আরিকঃ কইসিলাম না তোরে, তুই ফেইল করবি?
নাফিজঃ পাশ করে কি হবে? যখন মরতেই হবে?
আরিকঃ (অবাক হয়ে) মানে?
নাফিজ কিছুই বলে না । শুধু হাসে । দুই বেঞ্চ পেছনেই খাতায় কিছু লিখছে প্রতীক । আরিফ ওকে শান্তনা দেয়ার জন্য অনেক কথা বলছে ।
আরিফঃ আমার কিছু বলার নাই । কি বলব । তুই আবার রাগ করবি ।
প্রতীকঃ আমি রাগ করি না ।
আরিফঃ কি করিস তুই?
প্রতীকঃ লিখি ।
আরিফঃ কি লিখিস?
প্রতীকঃ গান ।
আরিফঃ কি গান?
প্রতীকঃ কেমিস্ট্রি অপরাধী ।
আরিফঃ কেমিস্ট্রি অপরাধী!
প্রতীকঃ হুম ।
একটু পর লেখা শেষ হলে প্রতীক ওয়াশরুমে যায় । সেই সময় আরিফ প্রতীকের খাতাটা নিয়ে দেখে, তাতে লেখা একটি গান ।
হো
একটা সময় কেমিস্ট্রি তে 96 পাইতাম
আমি খাতা নিয়া মনের সুখে লাফাইয়া যাইতাম
বাপ আর মায়ের মনের কষ্ট গুলা ঘুচাইতাম
আর ইচ্ছা মতো ফেইসবুকে তে পোস্ট ও দিতাম
ওরে সময় গুলা এখন রে হায় গেলো কোথায় রে
এখন ফেইল কইরা চোখ দিয়া শুধুই জল পড়ে
ওরে কষ্ট গুলা রাখার তো  আর কোনো জায়গা নাই
বাপ মা ঝাটা ধরে আমরা কেবল পালাইয়া বেড়াই
কেমিস্ট্রি কেমিস্ট্রি তুই অপরাধী রে
তোর বিক্রিয়া গুলা দেইখা আমার মাথা যে ঘোরে
তোর একটু ভুলেই হাসান স্যার আর নাম্বার দেয় না রে
এখন সবার কাছে আমার মুখটা দেখাই কী করে।
এখন খাতার নিচে জিরো ছাড়া কিছুই জোটে না
এখন বাপ মা মোদের আবদার গুলা কানেই তোলে না
এখন হাসান স্যারও আমাদের কে মার্সি করে না
এখন রাস্তার লোকও আমার সাথে কথা বলে না
ওরে এমন কইরা সামনের দিকে যাব কেমনে
আমি কষ্ট গুলা ফালায় দিসি বাড়ির ওই ড্রেনে
পরের বারে ভালো করবো এবার পাশ করান না স্যার
আপনার কাছে এ ছাড়া তো আর নেই কিছু চাওয়ার
কেমিস্ট্রি কেমিস্ট্রি তুই অপরাধী রে
তোর বিক্রিয়া গুলা দেইখা আমার মাথা যে ঘোরে
তোর একটু ভুলেই হাসান স্যার আর নাম্বার দেয় না রে
এখন সবার কাছে আমার মুখটা দেখাই কী করে।
আমি কষ্ট গুলা রাখসি লিখা কাগজের পাতায়
আমি চাইনা যেটা হঠাৎ কইরা তাই  হইয়া যায়
ওরে হাইড্রোক্লোরিক এসিড আমার মনটা ছিড়া খায়
তবু খাতার ভেতর বিক্রিয়া গুলা গুলাইয়া যে যায়
ওরে ভাবসি আমি করবো এমন কিসু একটা রে
যেন খুশির চোটে স্যার আমারে জড়াইয়া ধরে
ওরে পড়ের বারে ইস্কুল ছাইড়া যাইতে হবে হায়
স্যার আপনার কাছে এই পোলাডা একটু দোয়া চায়
কেমিস্ট্রি কেমিস্ট্রি তুই অপরাধী রে
তোর বিক্রিয়া গুলা দেইখা আমার মাথা যে ঘোরে
তোর একটু ভুলেই হাসান স্যার আর নাম্বার দেয় না রে
এখন সবার কাছে আমার মুখটা দেখাই কী করে।
যা হোক, শুধু যে কেমিস্ট্রিতেই খারাপ রেজাল্ট, তা কিন্তু নয় । অন্যান্য সাবজেক্টেও অনেকেরই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে । কয়েকদিন এই খারাপ রেজাল্টের শোক কিছুদিন থাকার পর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো । সবাই আবার ভালো রেজাল্টের আশায় ভালো করে পড়াশুনা শুরু করলো । ঋজু ভাইয়ের ঝামেলা প্রায় নেই বললেই চলে । যদিও ঋজু ভাইয়া যে ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে এটা কেউই জানেনা ।
১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার । টিফিন পিরিয়ডে অহনার সাথে কথা বলছিল তুষার ।
তুষারঃ অহনা, কাল ড্রইং প্রতিযোগিতা আছে কিন্তু ।
অহনাঃ কবে?
তুষারঃ ১৩ আগস্ট ।
অহনাঃ তুই যাবি না?
তুষারঃ হ্যাঁ । আমি যাবো, প্রতীক যাবে ।
অহনাঃ ১৩ আগস্ট তো কাল । কাল বললেই হতো, ঢং করে ১৩ আগস্ট না বলে ।
তুষারঃ প্রথমে তো বললামই কাল । তাই বললাম আরকি ।
অহনাঃ ধুর! তোর সাথে কথাই বলব না ।
পেছনের বেঞ্চে বসে কথা বলছিল সাবিত আর তৃণ ।
সাবিতঃ আচ্ছা, তুই তো তোর সেই দোষীকে আজও খুজে পেলিনা ।
তৃণঃ সে পালাইসে । আল্লাহই জানেন কই গেছে ।
সাবিতঃ আচ্ছা, হঠাৎ যদি উনাকে তুই চোখের সামনে দেখিস, তো কি করবি?
তৃণঃ কি করবো জানিনা । তবে উনার অবস্থা খারাপ করে দেবো ।
সাবিতঃ কেমনে?
তৃণঃ তাও জানিনা ।
সাবিতঃ তুই তো কিছুই জানিস না
বলেই সাবিত উঠে চলে গেলো ।
তৃণঃ যাচ্ছিস কই??
সাবিত যেতে যেতে বলল,
সাবিতঃ ওয়াশরুমে ।
বলেই সাবিত ওয়াশরুমে চলে গেলো । তৃণও বেঞ্চ থেকে উঠে ৩য় বেঞ্চে রাতুলের কাছে গেলো ।
তৃণঃ দোস্ত, আজিজুল স্যার এর HW করসিস?
রাতুলঃ হ্যাঁ ।
তৃণঃ খাতা কি আছে? নাকি অন্য কারো কাছে?
রাতুল কিছুক্ষণ তৃণর দিকে তাকিয়ে রইল ।
তৃণঃ বুঝসি, তোর খাতা অন্য কারো কাছে ।
রাতুলঃ আরে! খাতা তো তোর কাছেই । সকালেই তো নিলি ।
তৃণঃ (হালকা হেসে) ও আচ্ছা, ঠিক আছে ।
বলেই তৃণ যেই ওর বেঞ্চের দিকে পা বাড়াতে যাবে, অমনি থমকে দাঁড়ালো হাসির শব্দে । বাইরে থেকে অনেকে হাসছে । যতদুর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, সাবিত ভিজে গেছে এরকম কিছুই বুঝতে পারলো তৃণ বাইরে গেলো সাবিতের কাছে । সাথে আরও অনেকেই ছিল
তৃণঃ কিরে? কি হইসে তোর?
সাবিতঃ আর বলিস না । ওয়াশরুমে কে জানি পাশের টয়লেট থেকে পানি ছিটায় মারসে ।
তৃণঃ আচ্ছা তোর সাথেই কেন এমন হয়?
হাসিবঃ আরে বাদ দে । নাইনের কোন পোলাপাইন মনে হয় মারসে ।
শেখঃ আসলেই । ওরা যা বদমাইশ ।
সাবিতঃ আরে না । ফাস্ট ইয়ারের কোন ভাই মারসে ।
তুর্যঃ ফাস্ট ইয়ারের ভাই?
সাবিতঃ ওয়াশ রুমে আমার সাথে আরেকজন ঢুকসিল । উনার কাঁধে ফাস্ট ইয়ারের ব্যাচ দেখসি । বাইর হওয়ার পর উনারে আর দেখি নাই ।
হাসিবঃ ফাস্ট ইয়ারের কে এইরকম করতে পারে?
সাবিতঃ আল্লাহই জানে ।
তৃণঃ আচ্ছা, যা ভিতরে যা। ফ্যানের নিচে বস ।
এরপর সাবিত ভেতরে যেয়ে ফ্যানের নিচে বসে পড়লো । এদিকে হাসিব শেখ সোহানের সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ।
হাসিবঃ দোস্ত, একটা কথা, আমি কাউরেই বলি নাই, কিন্তু গতকালকে অনেক ভাবলাম, ব্যাপারটা অন্য কিছু হতে পারে ।
শেখ সোহানঃ কি ব্যাপারে?
হাসিবঃ তুই যে আমাকে একবার লাথি মেরেছিলি ঐ ব্যাপারে ।
শেখ সোহানঃ তুই ঐ কথা এখনও মনে রাখসিস?
হাসিবঃ আরে, মনে করিস না আমি তোর ওপর রাগ করসিকিন্তু আসলে তা না । আসলে যে কথাটা বলছিলাম, তোর মনে হয় খেয়াল আছে, আমি তোর সাথে মজা করার জন্য সামনের জন্য ঝুকেছিলাম কথাটা সবাইকে বলেছিলাম?
শেখ সোহানঃ হ্যাঁ তো?
হাসিবঃ কথাটা মিথ্যে ছিল ।
শেখ সোহানঃ মানে?
হাসিবঃ আমি ঝুকেছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমি ইচ্ছে করে ঝুকিনি । আমার কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছিল, তাই ঝুকে গেছিলাম ।
শেখ সোহানঃ এ তো ওয়াসি আর বাপ্পির সাথে হইসে, ওরাও তো ক্লাসে অজ্ঞান হয়ে গেছিলো ।
হাসিবঃ হ্যাঁ । সে তো আমিও দেখসি । কিন্তু গতকাল আমি ওদের অজ্ঞান হওয়ার কারণটা গতকাল জানলাম । তারপরেই আমি ব্যাপারটা ভেবে দেখলাম ।
শেখ সোহানঃ চল হাসান স্যারকে বলে আসি ।
হাসিবঃ না । বাদ দে । এরপর আবার হাসান স্যার এর কাছে যাওয়া, স্যার বারবার ডাকবেন এসব ঝামেলায় যেতে চাইনা ।
শেখ সোহান আর কিছু বলল না । হাসিবও ভেতরে চলে গেলো । সেদিনের বাকি ক্লাসগুলো শেষ হয়ে গেলো ।
পরদিন, ১৩ আগস্ট প্রতীক আর তুষার এলো ড্রইং প্রতিযোগিতার জন্য ।
প্রতীকঃ কি ব্যাপার? অহনা আসবে না?
তুষারঃ ও তো আলাদা ক্লাসরুমে ।
প্রতীকঃ ও ।
তুষারঃ আচ্ছা, তুই ক্লাসরুমে যা, আমি একটু ওয়াশরুম থেকে তুলি রঙ করার জন্য পানি নিয়ে আসি ।
প্রতীকঃ ওকে ।                               
প্রতীক ভেতরে যেয়ে বসলো । পেছন থেকে রাফসান জ্যানি ভাই ওকে গুতা দিয়ে বলল,
জ্যানি ভাইঃ কি ব্যাপার? কেমন আছো?
প্রতীক প্রথমে বুঝতে পারে নি । পেছনে তাকিয়ে দেখল, রাফসান জ্যানি ভাই । তখন উনার পাশে কেউ ছিল না ।
প্রতীকঃ (হালকা রাগান্বিত অবস্থায়) আপনি? আমি আপনার ওপর কত রাগ করসি জানেন?
বলেই প্রতীক সামনের দিকে মুখ ফেরাল ।
জ্যানি ভাইঃ কেন? কি হইসে?
প্রতীকঃ আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেন নাই ।
জ্যানি ভাইঃ আরে? আমি তো ফেসবুকেই ঢুকি না অনেক দিন ধরে ।
ঠিক সেই সময় কোত্থেকে ঋজু ভাই এসে বসলো জ্যানি ভাইয়ের পাশে । ঋজু ভাই তখনও প্রতীককে খেয়াল করে নি ।
ঋজু ভাইঃ কিরে? কারে মিথ্যা কথা কস? কাইলকাই তো তুই ফেসবুকে ঢুকছিলি ।
প্রতীকঃ আবার রাগি চেহারা নিয়ে পেছনের দিকে ফিরল । কিন্তু ঋজু ভাইকে দেখেই ওর রাগি চেহারাটা পাল্টে গেলো । ঋজু ভাইও একটু ঘাবড়ে গেলেন ।
প্রতীকঃ আপনাকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে?
জ্যানি ভাইঃ চিনতেই পারো । সারাদিন তোমাদের ক্লাসরুমের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় ।
প্রতীকঃ ও । হতে পারে ।
ঋজু ভাইঃ (দাঁড়িয়ে) আচ্ছা দোস্ত, আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি ।
বলেই ঋজু ভাই বেড়িয়ে গেলেন ।
প্রতীকঃ উনাকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগলো । কে উনি?
জ্যানি ভাইঃ ঋজু ।
প্রতীকঃ নামটা যেন কোথায় শুনেছি? ইশ! মনেই করতে পারছি না ।
জ্যানিঃ এসএসসি পরীক্ষা এই কলেজেই দিয়েছে । তাও টেস্ট পরীক্ষার কয়েকদিন আগে এই কলেজে ভর্তি হয়েছিলো ।
প্রতীকঃ ও । আমার কেন যেন উনার নাম আর চেহারা চেনা চেনা লাগছে । আমার কিছুই ঠিক মতো মনে থাকে না । ধ্যাত!
জ্যানি ভাইঃ এ আবার একটা মেয়ের সাথে ফেসবুকে প্রেম করে বেড়ায় । অথচ আজ পর্যন্ত ও মেয়েটাকে দ্যাখেই নি ।
প্রতীকঃ কি নাম মেয়েটার?
জ্যানি ভাইঃ সোনিয়া ।
প্রতীকঃ কি? আচ্ছা, সোনিয়া তো, আচ্ছা, কোন ক্লাসে পড়ে?
জ্যানি ভাইঃ তা জানিনা । আমাকে কিছুই বলে নি ঐ ব্যাপারে ।
প্রতীকঃ ও আচ্ছা ।
এরপর ওরা আকাআকি শুরু করলো । এর মাঝে তুষারও চলে এলো । কিন্তু ঋজু ভাই আর এলো না ।  জ্যানি ভাইও বেশিক্ষন ছিলেন না । কোনোরকম একটা ছবি একে চলে গেলেন । আসলে উনারা এসেছিলেন ক্লাস ফাঁকি দিতে । সেদিনও বাকি ক্লাসগুলো শেষ হয়ে যায় । সেপ্টেম্বরে সবাই দারুন একটা ফিল্ড ট্রিপ ইনজয় করে । রাস্তায় আবার ছেলেদের গাড়ির চাকা রাস্তা ভেঙে ঢুকে পরেছিল, কিন্তু তেমন বড় কোন সমস্যা হয় নি ।
এরপর একদিন আলাদা হয়ে যেয় নেপচুন আর ভেনাস শাখা । আবার একটা অদ্ভুত নিয়মে । প্রথম ৪ পিরিওড নেপচুন আর ভেনাস শাখার সবাই একসাথে ক্লাস করবে । এরপর টিফিন । ভালো কথা, মাঝখানে আবার টিফিন পিরিওড ৪র্থ পিরিয়ডের পরে করেছিলো । আগে ৩য় পিরিয়ডের পরে হতো । এভাবে চলতে থাকে ওদের দিনকাল । অনেকেই মন খারাপ করে এই ব্যাপারে । কিন্তু কি আর করার । নিয়ম যখন করেছে, মানতে তো হবেই । এদিকে প্রতীক আবার শুরু করলো আরেক ধান্দা সব পরিচিত স্যার ম্যাডামদের এই ব্যাচ সম্পর্কে কিছু বক্তব্য কামেরায় ধারন করতে লাগলো । একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানাবে । সাথে সব বন্ধুদেরও ইন্টারভিউ আর ছবিও সংগ্রহ করতে লাগলো ।
২৬ সেপ্টেম্বর বুধবার । ঐদিন সব শাহিনদের ছিল লাস্ট ক্লাস । ক্লাস হবে, কিন্তু সেগুলো কোচিং ক্লাস । সকালে হাসান স্যার এর প্রাইভেট শেষে সবাই অ্যাসেম্বলিতে গেলো । অ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাসে ফিরে এলো । প্রথম ক্লাসও হাসান স্যার এরই । স্যার ক্লাসে নাম ডাকার খাতাটা আনলেন ।
হাসান স্যারঃ রোল ১৪২
-ইয়েস স্যার ।
হাসান স্যারঃ ১৪৪
-ইয়েস স্যার ।
হাসান স্যারঃ ১৪৬
-উপস্থিত স্যার ।
এরপর সেই নাম প্রেজেন্টের খাতাটা শেষবারের মতো বন্ধ হয়ে গেলো । এই পরীক্ষা পর্যন্ত হয়তো খোলা হতেও পারে, কিন্তু তারপর আর খোলা হবে না । এই খাতাটা হয়তো পুরিয়ে দেয়া হবে, নয়তো ঠোঙা বানিয়ে খাবার দাবার বিক্রি করা হবে । কিন্তু ঐ কাগজের পাতায় রয়ে যাবে সেই ১১২ জন শাহিনের ছাত্রছাত্রীর নাম ।
হাসান স্যারঃ তোমরা হয়তো আজকের দিনটা খুব ইনজয় করবে । কারণ আজকে তোমাদের স্কুল জীবনের শেষ ক্লাস । ক্লাস হবে, কিন্তু এরকম শিডিউল মতো আর ক্লাস হবে না ।
ঠিক সেইসময় ক্লাসে এলেন উজ্জ্বল স্যার ।
উজ্জ্বল স্যারঃ এই শোন, আইজকে স্কুলে  বিমান বাহিনীর প্রধান আসবেন, তুরা কেউ বাইর হইস না । আর বাইর হইলেও এই পাশ দিয়া চলাফেরা করিস, ইংলিশ ভার্সনের ওইদিকে যাইস না ।
সবাই তখন রিকুয়েস্ট করলো, আজকে সবাই একসাথে ক্লাস করবে । অবশেষে যেই কথা সেই কাজ । সবাই একসাথে লাস্ট ক্লাসটা করলো ।
হাসান স্যারঃ তো, আজকে তোমাদের সবার স্কুল জীবনের লাস্ট ক্লাস । আসলে তম্ম্রা যে এই ১০টা বছর একসাথে ছিলে, সেটা তোমাদের জন্য অনেক বড় একটা স্মৃতি । এই স্মৃতি আমাদেরও আছে, আর তোমাদেরও আর কিছুদিন পর হবে । তোমরা এরপর একেকজন একেক জায়গায় যাবে । অনেকেই আবার একসাথে থাকবে । কিন্তু যখন তোমরা চাকরি করবে, তখন তোমরা কেউই হয়তো একসাথে থাকবে না । আমার একটা গল্প বলি শোনো । একবার আমি আর তোমাদের আনটি কুমিল্লায় একটা রিকশায় করে যাচ্ছিলাম । আমি রিকশাওয়ালার চেহারা দেখিনি । উনি পুরো রাস্তা মাথা নিচু করে ছিলেন । আমি যখন ভাড়া দিতে যাবো, তখন উনি ভাড়া না নিয়েই চলে যেতে লাগলেন । আমি উনার পথ আটকে দাঁড়াতেই উনার চেহারা দেখে আমি অবাক । কারণ উনি ছিল আমার ছোটবেলার বন্ধু । আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম । জিজ্ঞেস করলাম ওর আজ এই অবস্থা কেন? ও শুধু বলল, তোমরা চেষ্টা করেছিলে, কিন্তু আমি করিনি । আমার ওইদিন খুব কষ্ট লেগেছিল । আমি চাই না, তোমাদেরও কোন বন্ধু অন্য কোন বন্ধুকে এই অবস্থাতে দেখুক । তোমরা চেষ্টা করে যাও, ভালো একটা রেজাল্ট করো, টপ পোস্টে যাও, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হও ।
এরপর হাসান স্যার বাকি ক্লাস নিলেন । ক্লাস শেষে হাসান স্যার চলে গেলেন । পরবর্তী ক্লাস বায়োলজি আশরাফুল স্যার এর । সবাই প্রতিদিনের মতোই স্যার যাবার পর বারান্দায় এসে দাঁড়ালো । সেদিন আকাশ মোটামুটি মেঘলা ছিল । রৌদ্রের যে তিব্রতা, সেটা ছিল না । আরিক তখন নাফিজের সাথে কথা বলছিল ।
আরিকঃ দোস্ত, তুই যে কি হইসিস জানি না । কিন্তু টেস্টে ভালো করতে হবে ।
নাফিজঃ বেশি জ্ঞান দিস না, আমারে রাগাইস না ।
আরিকঃ তুই কি রে বলতো? প্রি-টেস্ট পরীক্ষার পর এই দ্বিতীয়বার তুই কলেজে আসলি । কি সমস্যা হইসে তোর?
নাফিজঃ আমি ঠিক পথেই আছি। তোরা ঠিক থাক, তাতেই হবে ।
আরিকঃ আল্লাহই জানেন তো কি হইসে ।
এদিকে আদ্রিতা, নৌশিন, বৈশাখী আরও অনেক মেয়ে গল্প করছে ।
আদ্রিতাঃ দোস্ত, সামনে তো ক্লাস পার্টি, তো পার্টিতে কি কি করবি?
বৈশাখীঃ তুই একটা ফেসবুক গ্রুপ খুলসিস, নাম কি জানি? হ্যাঁ শাহিন এসএসসি ২০১৯ ফেয়ারওয়েল গ্রুপ ।
বৈশাখীঃ আরে, ওটা তো ফেয়ারওয়েলের জন্য । আর এটা ক্লাসপার্টির কথা বলতেসি আমি ।
আদ্রিতাঃ কি আর হবে? পার্টিতে যা হবার তাই হবে ।
তিথিঃ ভাই, তোরা আগে টেস্ট পরীক্ষা নিয়ে ভাব, পরীক্ষার পর কি করবি সেটা তখনই ভাবা যাবে ।
নৌশিনঃ স্যার আসতেসে রে, যাই আমার বেঞ্চে ।
একটু পর আশরাফুল স্যার ক্লাসে এলেন । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যারও সবার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন ।
আশরাফুল স্যারঃ কি ব্যাপার? কেমন আছো তোমরা?
সবাই একসাথে হ্যাঁ বলে উঠলো ।
আশরাফুল স্যারঃ আমি আছি মোটামুটি । তোমাদের শেষ ক্লাস আজকে । তাই তোমরা ভালো আছো বললেও তোমাদেরও খারাপ লাগছে ।
সবাই এক প্রকার স্যার এর সাথে সম্মতি জানালো ।
আশরাফুল স্যারঃ তো শেষ ক্লাসে কি করা যায়?
কেউ কেউ বলল গান, কেউ কেউ গল্প, কেউ কেউ কৌতুক । হঠাৎ ফারিহা বিনতে আলী দাঁড়িয়ে বলল,
ফারিহা বিইন্তে আলীঃ স্যার, আপনি একটু কি কি ইম্পরট্যান্ট সেগুলো দাগিয়ে দেবেন?
আশরাফুল স্যারঃ কি দাগাবো? সবই তো ইম্পরট্যান্ট ।         
ফারিহা বিনতে আলীঃ তারপরেও স্যার । কিছু ইম্পরট্যান্ট দাগিয়ে দেন ।
আশরাফুল স্যারঃ ঠিক আছে । সবাই বায়োলজি বইটা বের করো ।
সবাই বায়োলজি বই বের করলো ।
আশরাফুল স্যারঃ হুম । প্রথম অধ্যায় বের করো ।
সবাই প্রথম অধায় বের করলো ।
আশরাফুল স্যারঃ পাঠ১ ইম্পরট্যান্ট । পাঠ২ এটাও ইম্পরট্যান্ট । পাঠ৩ গতবছর আসে নি । তাই এটাও ইম্পরট্যান্ট । পাঠ৪ প্রত্যেকবারই আসে । এটাও ইম্পরট্যান্ট ।
সবাই অবাক হয়ে স্যার এর দিকে তাকাল । এ কেমন ইম্পরট্যান্ট দাগানোর পদ্ধতি?
স্যার দ্বিতীয় অধ্যায়ে গেলেন । প্রথম অধ্যায়ে৪ টাই পাঠ 
আশরাফুল স্যারঃ দ্বিতীয় অধ্যায়ে পাঠ১ পড়ে যেও । পাঠ২ টা অনেক ইম্পরট্যান্ট । পাঠ৩ প্রত্যেকবারই আসে পরীক্ষায়, তাই এটাও ইম্পরট্যান্ট পাঠ৪ বাদ দেয়াই যাবে না । পাঠ৫ বাদ গেলে পরীক্ষায়ই ফেইল করবা ।
সবাই তখন একটা বিরক্তিভাব নিয়ে, “স্যার” বলে উঠলো ।
আশরাফুল স্যারঃ কি হল?
তিথি উঠে দাঁড়ালো ।
তিথিঃ স্যার আপনি কি ইম্পরট্যান্ট দাগায় দিচ্ছেন? নাকি অন্য কিছু?
আশরাফুল স্যারঃ শোন, তুমি খাওয়ার সময় কতটুকু খাও?
তিথিঃ কখনো কম খাই, কখনো বেশি খাই ।
আশরাফুল স্যারঃ সেটা না । ধর তোমার প্লেটে কিছু ভাত আছে । তোমরা কি পুরোটাই খাও, নাকি কিছু ফেলে দাও?
তিথিঃ পুরোটাই খাই ।
তিথি বুঝতে পারছে না স্যার কি বলতে চাচ্ছেন ।
আশরাফুল স্যারঃ যদি কখনো কিছু না খাও, ফেলে দাও, নষ্ট করো, তখন সেটাকে কি বলে?
তিথিঃ অপচয় ।
আশরাফুল স্যারঃ সেইরকম । তোমাকে যদি ইম্পরট্যান্টগুলো দাগিয়ে দেই, তোমরা বাকি পড়া ভুলে যাবে, আর সেটা অপচয় হবে ।

সবাই হেসে দিলো আশরাফুল স্যারও হালকা হেসে একটু পরে বললেন, “নাও, গল্প বললাম, জোকস ও বললাম । এবার দাগায় দেই ।
সবাই হেসে হেসে বলল, “স্যার, গানটা কিন্তু বাকি আছে ।”
আশরাফুল স্যার দাঁত দিয়ে জিভ চেপে বললেন,
আশরাফুল স্যারঃ থাক, ইম্পরট্যান্ট গুলো দাগাও এখন ।
এরপর আশরাফুল স্যার ইম্পরট্যান্টগুলো দাগিয়ে দিলেন । তারপর স্যার চেয়েছিলেন অন্যান্যরাও কিছু না কিছু বলবে, কিন্তু তা আর হল না, কারণ আরও কিছু কথা বলতে বলতে এবং পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু কথা বলতে বলতে বাকি ক্লাস শেষ হয়ে গেলো । ক্লাস শেষে আশরাফুল স্যার চলে গেলেন লাস্ট বেঞ্চে বসে কথা বলছিল শাওন, রিদু, সোহান, সাকিব, ইকবাল ।
রিদুঃ ইশ! টয়লেটে ক্লাস পালায় যাওয়াটা মেলা মিস করবো ।
সোহানঃ আজকে যদি রিক থাকতো, তাইলে শেষবারের মতো ঐ তিনতলার বারান্দার দিকে তাকাতো ।
শাওনঃ বলিস না রে । খারাপ লাগে ।
সাকিবঃ আসলেই রে যেই বন্ধু সাথে খেলসি, মজা করসি, হাসছি, হ্যান্ড শেক করসি, সেই বন্ধু আর কাফনের কাপড় পরে কবরে শুয়ে আছে ।
কেউ আর কিছু বলতে পারলো না । সবার রিকের জন্য খারাপ লাগলো । একটু পরে ক্লাসে এলেন সাইফুল স্যার সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যারও সবার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন ।
সাইফুল স্যারঃ আইজকে তোমাদের ৪র্থ অধ্যায় থেকে একটা অঙ্ক করতে দেবো ।
সবাই মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে থাকল । সাইফুল স্যার সবার মুখের এই অবস্থা দেখে মনে করলেন কেউ হয়তো শুনতে পায়নি ।
সাইফুল স্যারঃ কি শুনতে পাননি? আমি আবারও বলছি, তোমাদের একটা পরীক্ষা নেবো । সবাই না করে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো । সাইফুল স্যার তিথির কাছে এলেন ।
সাইফুল স্যারঃ কি ব্যাপার খুকি?
তিথিঃন স্যার, ওরা বলতে চাচ্ছে আজকে লাস্ট ক্লাস তো, তাই কিছু পড়বে না ।
সাইফুল স্যারঃ আচ্ছা, ঠিক আছে । আজকে কিছু পড়ার দরকার নেই ।
সবাই আনন্দে ইয়ে বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো ।
সাইফুল স্যারঃ আজকে তোমাদের লেখাব ।
সবাই আবার অনুৎসাহের সাথে “স্যার” বলে উঠলো 
সাইফুল স্যার একটু বিরক্ত হলেন ।
সাইফুল স্যারঃ আরে! কি হইসে তোমাদের? সামনে তোমাদের টেস্ট পরীক্ষা, আর তোমরা যদি না পড় তাইলে তোমাদের কত ক্ষতি হবে জানো?
কেউ কিছু বলল না ।           
সাইফুল স্যারঃ আর তোমরা যে গান গল্প করতে চাচ্ছ, আইকে ক্যান? আইজকে একটা দুঃখের দিন । তোমরা তোমাদের বন্ধুদের সাথে শেষ দিন ক্লাস করতিসো, এইটা দুঃখের ব্যাপার না?
কেউ কিছু বললো না । কিন্তু কিছু করার নেই । স্যার মানবার পাত্র নন । অগত্যা সবাই শেষ ক্লাসেও অঙ্ক করলো । অঙ্ক শেষে স্যার সবাইকে একটু জ্ঞান দিলেন ।
সাইফুল স্যারঃ শোনো, শেষ ক্লাস ঠিক আছে, কিন্তু তোমাদের সাথে আবার দেখা হবেনে । সমস্যা নাই । পড়াশুনা করো । অঙ্ক অনেক প্র্যাকটিস করো আর অন্যান্য সাবজেক্টও । ইনশাল্লাহ তোমাদের সবার পরীক্ষা ভালো হবে ।
একটু পর সাইফুল স্যার এর ক্লাস শেষ হলে স্যার চলে যান ।
ক্লাসের ফাঁকে জিম, রিদু, সাকিব, সোহান, ইকবাল এরা চলে গেলো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ওয়াশরুমে ।
রিদুঃ এ ইকবাল, সেদিন কি হইসে শোন ।
ইকবালঃ শোনবো না ।
রিদুঃ আরে শোন তা ।
সোহানঃ বল রিদু, আমি শুনতেসি ।
রিদুঃ ভুইলে গেলাম । কি ইকবালের জন্যই ।
জিমঃ আচ্ছা বাদ দে । সোহান একটা গান গা ।
সোহানঃ এহ! আমার গলা ভালো না , তুই গা ।
ইকবালঃ জিম আবার ভাব নেচ্ছে ।
সাকিবঃ এই, দ্যাখ, আজকেও রুবাইয়াত মেডাম ।
ইকবালঃ সব কিছুই ঐ দিনটার মতোই, কিন্তু পার্থক্য রিক নাই ।
সবার আবার মন খারাপ হয়ে গেলো ।
রিদুঃ চল, সবাই মিলে রিকের Favourite “হাম তেরে বিনে আব” গানটা গাই ।
এরপর সবাই মৃদু গলায় গানটা গাইতে লাগলো । ওদিকে ক্লাসে সবার রিকুয়েস্টের পর জাফর স্যার কিছু পড়ালেন না । কি একটা জোকস বললেন । বোর্ডে লিখলেন, “পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কাননে............।” তারপর সবাগুলোর সাথে “আ”কার, শুধু “উ”কার, শুধু “এ”কার ইত্যাদি কার বসিয়ে মনে মনে শিক্ষার্থীদের বলতে বললেন । সবাই ঠিক বুঝতে পারলো না, এর মধ্যে কি জোকস ছিল ।
জাফর স্যারঃ ঠিক আছে, এবার তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আসো । দেখি কে কি পারো ।
সবাই আবার প্রতীককেই বলতো । কারণ প্রতীক আবার ক্লাসের ফাক পেলেই সবাইকে জোকস শোনাত । একটা জোকস প্রায়ই করতো । কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা । যদিও এটা তার নিজের বানানো না । টিভিতে দেখেছে । প্রতীক সামনে গেলো । প্রথমেই সাধারণ মানুষ কিভাবে আবৃত্তি করে সেটা করলো । এরপর একে একে কেশে কেশে, তোতলামোর মাধ্যমে, বয়স্ক লোকের মতো, ইত্যাদি রকম করে কবিতাটা আবৃত্তি করে সবাইকে হাসাল । হতে পারে জোকসটা আগেও অনেকবার শোনে, কিন্তু এই জোকসটা এমনই একটা জোকস, যে বারবার শুনলেও হাসি ধরে । এরপর প্রতীক হিজরাদের মতো করে বলল,
প্রতীকঃ এই! কেউ হাসবি না । আমার লজ্জা করে। এইখানে তোর দাদুর কবর দালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে, পওও, পওওও
সবাই হাসতে হাসতে হেড ডাউন করেও নিজের হাসি থামাতে পারলো না । জাফর স্যারও নিজের হাসি থামাতে পারলেন । প্রতীক নিজের বেঞ্চে এসে বসলো ।  তখন টিফিনের ঘণ্টা দিয়ে দিলো । জাফর স্যার বোর্ড মুছতে মুছতে বললেন,
জাফর স্যারঃ শেষটা রিয়েল মনে হচ্ছিলো ।
সবাই এবার আরও বেশি হাসি দিয়ে উঠলো ।
একটু পরেই জাফর স্যার এর ক্লাস শেষ হলে টিফিন পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলো । ক্যান্টিনের দিকে যাবার সময় রিভলির সাথে কথা বলছিল সাবিত ।
সাবিতঃ আজকে লাস্ট পিরিয়ডে সেই মজা হবেনে, শারীরিক শিক্ষা ক্লাস, ফুটবল খেলবনে ।
রিভলিঃ আমি তো ভাবতেসি কোচিং ক্লাসগুলোর ফাঁকেও খেলবো ।
সাবিতঃ কোচিং ক্লাসে আসবি?
রিভলিঃ দেখা যাক ।
সাবিতঃ আমি তো ভাবতেসিলাম আসবো না । এখন তোরা যদি ক্রিকেট খেলিস, তাইলে তো আসাই লাগে ।
রিভলিঃ হুমম । একদিন তো ক্লাস করাই লাগবে । দেখবনে, কেমন ক্লাস হয় । তারপর পরিস্থিতি বুঝে ক্রিকেট খেলবো ।
সাবিতঃ আচ্ছা ।
এদিকে আরির আর লাল লাবিব টিফিন খাছিল, আর পেছনের বেঞ্চেই বসে টিফিন খাচ্ছিলো রাতুল । হঠাৎ আরিফ পেছনের দিকে তাকিয়ে বলল,
রাতুলঃ দোস্ত HW করসিস?
আরিফঃ কি HW?
রাতুলঃ বাংলা ২য়?
পাশে লাল লাবিব বসে ছিল । বলল,
লাল লাবিবঃ আজকে তো বাংলা ক্লাসই নাই
আরিফঃ ও তাই? আজকে আবার লাস্ট ক্লাস তো, তাই কষ্টে ভুলে গেছি ।
লাল লাবিবঃ তোর আবার কষ্ট বলে কিছু আছে নাকি ।
আরিফঃ আছে রে আছে । সে কষ্ট দেখা যায় না । বুঝে নিতে হয় ।
রাতুলঃ কষ্ট আবার বোঝার কি আছে?
আরিফঃ কিছু মানুষ আছে না, কোন কিছু বোঝে না, তাদের জন্যই গানটা তৈরি বোঝেনা সে বোঝে না ।
পাশ দিয়ে তখন তৌফিক হেঁটে যাচ্ছিলো । আরিফের কথা শুনে হাত তালি দিয়ে বলল,
তৌফিকঃ ও নো! বস! কি দিলি! তুই তো কবি হয়ে গেলি!
আরিফকে সবাই মজা করে বস ডাকতো ।
আরিফঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, দে তালি দে ।
তৌফিক সত্যি সত্যি তালি দিলো । আবার লাল লাবিবের মাথায় ইয়ার্কি করে একটা থাবা দিয়ে বলল,
তৌফিকঃ এই লাল, তালি দিচ্ছ না কেন?
লাল লাবিবঃ তুই দে ।
তৌফিকঃ লাবিব আজকে  ফজরের নামাজে দোয়া করসিলা?
লাল লাবিব ছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ।
লাল লাবিবঃ সে তো প্রতিদিনই করি । আর করেই কি হবে? তুই পড়াশুনা না করলে এমনিতেই তুই খারাপ করবি ।
মেয়েদের এপাশে বসে কথা বলছিল লামিয়া আর নাবিলা ।
নাবিলাঃ কিরে? তোর মন খারাপ ক্যান?
লামিয়াঃ আজকে তো লাস্ট ক্লাস তাই! ক্লাসটা খুব মিস করবো ।
নাবিলাঃ এহ! আমি মনে হয় জানি না তোর ক্যান মন খারাপ ।
লামিয়াঃ ক্যান?
নাবিলাঃ এই সপ্তাহে আরেকটা সিরিয়াল শেষ হয়ে যাবে সেই জন্য
লামিয়াঃ না রে দোস্ত । আজকে আমার স্কুল লাইফের সিরিয়াল শেষ হয়ে যাচ্ছে । এই সিরিয়াল শেষ হয়ে যাবার জন্য কষ্টে আছি ।
নাবিলাঃ আসলেই রে । কত স্মৃতি যে আছে এই কলেজের সাথে । অবশ্য সমস্যা নাই, অনেকেই থাকবে কলেজ লাইফে যেয়ে সব স্মৃতি ভুলে যাবে ।
লামিয়াঃ মনে রাখে কে বলতো? কিছু কিছু কথা মনে থাকে । সব কথা তো আর মনে থাকে না । ধর আবার সেই রি-ইউনিয়নের সবাই আসবে, মজা করবে, দেখা করবে, কিন্তু ঐ শেষ । পরদিন থেকে আবার ভুলে যাবে । কে কার বন্ধু, কে কার বেস্টফ্রেন্ড, কে কার কি ।
লামিয়া কান্নাকাটি শুরু করে দিলো । নাবিলা ওকে শান্তনা দিয়ে বলল,
নাবিলাঃ কাদিস না দোস্ত । সবার জীবন থেকেই স্কুল লাইফ একদিন না একদিন কেটে যায় ।
লামিয়াঃ (কাঁদতে কাঁদতে) আমি সে জন্য কাদছি না ।
নাবিলাঃ তাহলে?
লামিয়াঃ আরে কত সিরিয়াল দেখসি, কিন্তু একটার কথাও আমি মনে করি না । কিন্তু সিরিয়ালগুলা খুব মিস করি ।
নাবিলা কি বলবে কিছু বুঝতে পারলো না । ও যেন অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলো ।
টিফিন পিরিয়ড শেষ । ক্লাসে কেউ এলেন না । কারণ সে ক্লাসটা রাখিব স্যার এর । রাখিব স্যার আবার আজকে বেজকম্যান্ডার স্যার এসেছেন সেই দিকে ব্যাস্ত । প্রতীক এলো লাল লাবিবের কাছে ।
প্রতীকঃ এই লাবিব, যাবা লাইব্রেরীতে?
লাল লাবিবঃ কি ম্যাডামের ইন্টার্ভিউ নিতে?
প্রতীকঃ হুম ।
লাল লাবিবঃ ঠিক আছে চল ।
প্রতীকঃ তুষার যাবে কি?
লাল লাবিবঃ তুষার অনেক আগেই চলে গেছে ।
প্রতীকঃ ও আচ্ছা ।
প্রতীক আর লাল লাবিব যেতে লাগলো লাইব্রেরীর দিকে ।
লাল লাবিবঃ আজকে সারাদিন কি সব ভিডিও করলা নাকি?
প্রতীকঃ না, আজকে করা  হয় নি গতকাল করসি ।
লাল লাবিবঃ আমি কিন্তু ছবিগুলো দেখবো ।
প্রতীকঃ আচ্ছা ।
এদিকে তৃণ, হাসিব, সাবিত রিভলিসহ আরও অনেকে ক্রিকেট খেলে ক্লাসে এলো ৷ তৃণ এসে বসলো নিজের সিটৈ ৷ সেদিন ওর এক পাশে প্রতীক এবং অন্যপাশে সাকিব বসে ছিলো ৷ প্রতীক লাইব্রেরীতে ছিলো বলে ঐ জায়গায় শুধু প্রতীকের ব্যাগ ছিলো ৷ অন্য পাশে বসে থাকা সাকিব বলল,
সাকিব: কিরে? দেরি হলো ক্যান?
তৃণ: আর বলিস না, ওরা আর ১ ওভার, আর ১ ওভার করে করে দেরি করে ফেললো ৷ ভাগ্যিস স্যার আসে নি ৷ নাইলে খবর ছিলো ৷
সাকিব আর কিছ বলল না ৷ তৃণ নিজের ব্যাগে হাত রাখতেই কিছু একটার ছোঁয়া পেল ৷ ব্যাগ খুলতেই দেখলো একটা সিগারেটের প্যাকেট ৷ সাকিব তখন তৃণর দিকেই তাকিয়ে ছিলো ৷ সাকিব প্রথমে না বুঝে ইয়ার্কি করে বলল,
সাকিব: কি তৃণ? কি এসব?
তৃণ: ইয়ার্কি করিস না ৷ বুঝতে পারছিস না? কে করেছে?
সাকিব: (হঠাৎ চমকে গিয়ে) আবার সেই ঋজু ভাই?
ওদিকে লুৎফুন্নেসা ম্যাডামের ইন্টারভিউ নেয়া শেষে ক্যামেরা নিয়ে নিজের লাল লাবিবের পাশ বসলো প্রতীক ৷
লুৎফুন্নেসা ম্যাডাম: প্রতীক, আমাদের ঐ ডকুমেন্টারি ফিল্মটা দেখায়ে যেও কিন্তু ৷
প্রতীক: জী ম্যাডাম, হয়ে গেলে অবশ্যই দেখতে পারবেন ৷
তুষার তখন প্রতীককে বললো
তুষার: প্রতীক, লাবিব, তোরা একটু থাক এখানে ৷ আমি একটু আসছি ৷
লাল লাবিব ততক্ষণে প্রতীকের হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে ছবি দেখা শুরু করেছে ৷ কিছুক্ষণ দেখার পর হঠাৎ একটা ছবি দেখার সময় প্রতীক লাল লাবিবকে থামতে বললো
লাল লাবিব: কি হলো
প্রতীক: দাও তো ক্যামেরাটা একটু আমার হাতে ৷
লাল লাবিব প্রতীকের হাতে ক্যামেরাটা দিলো ৷ প্রতীক সেই ছবিটা জুম করলো ৷ ছবিটা তখন তোলা, যখন বাস থেকে শহরের ছেলেমেয়েরা নামছিলো ৷ জুম করে দেখলো, সেই ঋজু ভাইয়া তৃণর ব্যাগে কিছু একটা ঢুকাচ্ছে ৷ তৃণ সবার পেছনে ছিলো ৷ তাই কেউ দেখতে পায় নি ঋজু ভাইকে ৷ কিন্তু প্রতীক কিছুতেই ঋজু ভাইয়ার কথা মনে করতে পারছিলো না ৷
লাল লাবিব: কি হইসে?
প্রতীক: দ্যাখো, তৃণর ব্যাগে কেউ কিছু একটা ঢোকাচ্ছে ৷
লাল লাবিব: আসলেই তো! কিন্তু কে উনি
প্রতীক: আমি উনাকে কোথাও দেখেছি, আর উনাকে আমি চিনি ৷
লাল লাবিব: কে?
প্রতীক: ধুর আমি কিছুতেই মনে করতে পারতেসি না ৷
লাল লাবিব: ভালো করে মনে করে দ্যাখো ৷
প্রতীক: আমার যে কেন কিছু মনে থাকে না!!!
অনেক্ষণ ধরে প্রতীক মনে করার চেষ্টা করার চেষ্টা করলো, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না ৷ হঠাৎ সেই সময় ক্লাসে লাইব্রেরিতে রাফসান জ্যানি ভাই ঢুকলো এবং ম্যাডামকে সালাম দিলো ৷ প্রতীক আর লাল লাবিব তখন সেদিকে তাকালো এবং তখনই প্রতীক বলল
প্রতীক: মনে পড়েছে ৷ উনার নাম......
প্রতীক বলার আগেই জ্যানি ভাই বলে উঠলেন
জ্যানি ভাই: ঋজু ৷
লাল লাবিব চমকে গেল ৷
লাল লাবিব: ঋজু! মানে ঐ ভাইয়াটা যিনি আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে
জ্যানি ভাই: শোন প্রতীক, শেষ ক্লাস শেষ হবার ২০ মিনিট আগে তুমি, তৃণ আর তৃণর যে একটা ভালো বন্ধু আছে, এরা একটু এসো কলেজ বিল্ডিংয়ের তিন তলায় ঐ কোণার রুমটায় একটু এসো ৷
প্রতীক: কিন্তু ভাউ, কেন?
জ্যানি ভাই: আসলেই জানতে পারবা ৷
প্রতীক: জানেন ভাউ, আমার সেদিন খেয়াল ছিলো না, ঐ ভাইয়াটা আমাদের.....
জ্যানি ভাই: আমি সব জানি ৷
প্রতীক: তাহলে আমাকে বলেন নি কেন
জ্যানি ভাই: আমি আজই সবটা জেনেছি ৷ কিন্তু তোমাদের ক্লাসেও একজন আছে, যে আগে থেকেই সবটা জানে ৷
প্রতীক: কে?
ওদিকে ক্লাসরুমে,
সাকিব: এবার তাহলে ভিক্টিম তুই?
তৃণ: না আমি বুঝলাম না ঠিক কীভাবে কি হলো ৷ পুরোনো ঘটনা আবার পুরেনোভাবেই শুরু হলো ৷
সাকিব: এবার সিগারেটের প্যাকেটটা ব্যাগে ঢুকা, নাইলে কেউ দেখলে খবর আছে কিন্তু ৷
তৃণ: কিন্তু ক্যামনে সম্ভব? আমি তো ব্যাগের এই চেইন কখনো খুলিই না ৷
সাকিব: আজকে লাস্ট ক্লাস, আর সামনে এসএসসি ৷ তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামাইস না ৷
তৃণ: যদি তামান্নার মতো বোতলে এসিড আর আজকেও বাস অ্যাক্সিডেন্টের চেষ্টা করে?
সাকিব আর কিছু বলতে পারলো না ৷ তৃণ আর সাকিব যখন কথা বলছিলো, তখন নাফিজ সব কথা শুনতে পেয়ে বিড় বিড় করে বলে উঠলো,
নাফিজ: সব মরবে, সব ৷ কেউ বাঁচবে না ৷ সব মরবে ৷ সব মরবে ৷
নাফিজের কথা কানে গেল আরিকের ৷
আরিক: আচ্ছা! তুই কী পাগল হইছিস নাকি আমার কান পাগল হইসে?
নাফিজ: ক্যান?
আরিক: এই যে, বিড় বিড় করে কি সব বলিস, রহস্য, মায়াজাল, মৃত্যু ৷
নাফিজ: পাগল আমিও হইনি, তোর কানও হয় নি ৷ কিন্তু সবাই মরবে শিওর থাক ৷
আরিক: (বিড় বিড় করে) যাক শিওর হলাম অন্তত আমি পাগল হই নাই, নাফিজ is being পাগল ৷
নাফিজ: বিড় বিড় করে কী সব বলছিস?
আরিক: কিছুই না ৷
ওদিকে লাইব্রেরিতে,
জ্যানি ভাই: সে নামটাও তখনই শুনো ৷ এখন আমি ঋজুর কাছে যাই ৷ বেচারা খুবই depression এ আছে ৷
বলেই জ্যানি ভাই চলে গেলেন ৷ প্রতীক লাইব্রেরিতেই বসে রইলো লাবিবের সাথে ৷ খানিক বাদে ঘন্টা পড়লে ৫ম পিরিয়ড শেষ হয়ে যায় এবং শুরু হয়ে যায় ৬ষ্ঠ পিরি়য়ড ৷ এখন আজিজুল স্যারের ইংলিশ ক্লাস ৷ স্যার ক্লাসে আসলে সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালে, স্যারও সালামের জবাব দিয়ে সবাইকে বসতে বললেন ৷
আজিজুল স্যার: কেমন আছেন সবাই?
সবাই "ভালো" বলে স্যারের প্রশ্নের জবাব দিল ৷
আজিজুল স্যার: আজকে তোমাদের স্কুল জীবনের শেষ ক্লাস ৷ তো কোনো HW ছিলো কি?
কেউ কোনো কথা বলল না ৷
আজিজুল স্যার: যাই হোক, HW তো অবশ্যই ছিলো ৷ কে কে করেছেন একটু দাঁড়ান দেখি ৷
শুধুমাত্র রাতুল দাঁড়ালো ৷
আজিজুল স্যার: মাত্র একজন? ফারিহা মাহমুদা করেননি?
ফারিহা বিনতে আলি: স্যার ওই দিন আমরা লাইব্রেরিতে ছিলাম ৷ তাই জানতাম না ৷
আজিজুল স্যার: ও আচ্ছা ৷ যাই হোক, শেষ দিন কিছু বললাম না ৷ যে করেছো, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ৷ আজ আমরা গান, গল্প এসব হবে ৷ কে ভালো গল্প-গান পারো সামনে এসো ৷
অনেকে প্রতীকের কাছে আবার সেই কবিতা আবৃত্তির জোকস শোনার জন্য খুঁজলো কিন্তু পেল না ৷ যাই হোক, আসিফ অনেক ভালো গান গায়, তাই আসিফ গান গাওয়ার জন্য সামনে এলো সবার অনুরোধে ৷ এদিকে প্রতীক লাইব্রেরীতে লাল লাবিবের সাথে ক্লাস শেষ হবার ২০মিনিট আগের অপেক্ষা করছে ৷
প্রতীক: কি যে হবে আল্লাহই জানেন ৷ কি যে বলবেন ৷
লাল লাবিব: সাবধানে যেও ৷ আল্লাহ না করুক, যদি উনি খুন-টুন করেন ৷
প্রতীক: সেটার ভয় নেই ৷ কারণ জ্যানি ভাউ তো সাথেই যাবেন ৷
লাল লাবিব: তারপরেও ৷
একটু পর তুষারকে লাইব্রেরীতে ঢুকতে দেখলো প্রতীক ৷ তখন লাল লাবিবকে বলল,
প্রতীক: শোনো, তুষারকে কিছু বলার দরকার নেই ৷
লাল লাবিব: কেন?
প্রতীক: জানোই তো, তুষার শুধু প্রশ্ন করে, আবার আমাদের সাথে যেতে চাইলেও তো আরেক সমস্যা ৷
লাল লাবিব: আচ্ছা ৷
তুষার এসে লাল লাবিবের পাশে রাখা চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বলল,
তুষার: কী রে? তোরা ক্লাসে যাস নি?
লাল লাবিব: না ৷
তুষার: এখন তো আজিজুল স্যারের ক্লাস হচ্ছে ৷
লাল লাবিব: তুই কোথায় গিয়েছিলি?
তুষার: গিয়েছিলাম বৃষ্টি আপুর কাছে একটা গল্পের বই আনতে ৷ তা বৃষ্টি আপু একটা ম্যাথ করছিলো, সেটা solve করে দিয়ে এলাম ৷
লাল লাবিব: তাই এতক্ষণ?
তুষার: আরে, অনেক বড় অংক ৷ সময় তো লাগবেই ৷ ভালো কথা, রাফসান ভাই এসেছিলো নাকি?
লাল লাবিব: হ্যা ৷
তুষার: আমি যাবার সময় উনার সাথে দেখা ৷ তা জিজ্ঞাস করলেন প্রতীককে দেখসি কিনা, তখন আমি বললাম ও লাইব্রেরিতে ৷ তা কি বলল?
প্রতীক: একটা কম্পোজিশন কম্পিটিশনের ব্যাপারে ৷
তুষার: তা বাংলায় বললেই হয়, রচনা প্রতিযোগিতা ৷
প্রতীক আর লাল লাবিব কিছু বললো না ৷ ওরা অপেক্ষায় কখন ১টা ১০বাজবে সেই সময়ের ৷
১২টা ৫০-এ শেষ হয় আজিজুল স্যারের ক্লাস ৷ ক্লাসের সবাই চলে যায় মাঠে ফুটবল খেলতে ৷ যখন ১টা বাজে, তখন প্রতীক আর লাল লাবিব মাঠে আসে ৷ তৃণ তখন পায় বল নিয়ে একেকজনকে কাটিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছিলো ৷
প্রতীক: তৃণ, একটু এদিকে আয় ৷
তৃণ: পারবো না এখন ৷
প্রতীক: প্লিজ শোননা ৷
তৃণ: পরে কথা বলতেসি ৷
প্রতীক: প্লিজ ৷ এদিকে তাকা ৷
তৃণ প্রতীকের দিকে তাকাতেই তৃণর মনোযোগটা নষ্ট হয়ে গেলো আর তৃণর পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে গেল মাসুদ ৷ তৃণ তখন রাগ করে প্রতীকের কাছে এলো ৷
তৃণ: কি সমস্যা কি তোর? তোর জন্য খেলতে পারলাম না আমি ৷
প্রতীক: আর ওদিকে আসল খেলোয়ার আমাদের ডাকছে ৷
তৃণ: কে
প্রতীক: ঋজু ভাই ৷
তৃণঃ কীহ!
প্রতীকঃ হ্যাঁ ৷
তৃণঃ উনি এলো কি করে?
প্রতীকঃ উনি এই কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছেন ৷
তৃণঃ শুধু আমাকেই ডাকসে?
প্রতীকঃ না ৷ আমাকে, তোকে আর সাবিতকে ডাকসে ৷
সাবিত তখন মাঠে খেলছিল ৷
তৃণঃ একটু দাঁড়া, আমি সাবিতকে নিয়ে আসি ৷
তৃণ খেলার মধ্যে যেয়ে সাবিতকে সব বলে নিয়ে এলো ৷
সাবিতঃ কোথায় উনি?
প্রতীক আঙুল দিয়ে কলেজ বিল্ডিংয়ের কোণার ক্লাসরুমটার দিকে ইশরা করতেই দেখলো, বারান্দায় রাফসান ভাই দাঁড়িয়ে ৷ রাফসান ভাই ওদের দেখে ইশারা করে উপরে আসতে বললেন ৷
তৃণঃ ওটা তো রাফসান ভাই ৷
প্রতীকঃ হ্যা ৷ উনিই আমাকে খবরটা দিসে ৷
তৃণঃ চল, যেয়ে দেখি ৷ কি বলেন ঋজু ভাই ৷
প্রতীকঃ হ্যা চল ৷ লাবিব, থাকো ৷
লাল লাবিবঃ আচ্ছা ৷
তিনজন তিনতলায় গেল ৷
জ্যানি ভাইঃ ভেতরে চলো ৷
তৃণ, সাবিত ও প্রতীক ভেতরে গেল ৷ লাস্ট বেঞ্চে বসে জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছেন ঋজু ভাই ৷ সবাই ভেতরে ঢোকার পর জ্যানি ভাইও ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিলেন ৷ তারপর নিচু গলায় বললেন,
জ্যানি ভাইঃ ঋজু, ওরা এসেছে ৷ ঋজু ভাই কিছু না বলে চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইলেন ৷ তারপর এদিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন ৷ সাবিত, প্রতীক, তৃণ আর জ্যানি ভাই ঋজু ভাইয়ের কাছাকাছি বেঞ্চগুলোতে বসলেন ৷ ঋজু ভাইয়ের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ৷ দেখে বোঝাই যাচ্ছে, অনেক কান্নাকাটি করেছেন ৷
প্রতীকঃ ভাউ, কি হইসে উনার?
জ্যানি ভাইঃ সেটা ওর মুখ থেকেই শোনো ৷ ঋজু, শান্ত হয়ে বল সবটা ৷
তৃণঃ আপনাকে আমি গতকালও দেখেছি ৷ কিন্তু চিনতে পারিনি ৷ আপনার চেহারা অনেক পাল্টে গেছে ৷ আর আপনি মনে হয় আমার ব্যাগে আবার সিগারেটের প্যাকেট ঢুকিয়েছেন ৷
প্রতীকঃ হ্যাঁ, গতকাল ঢুকিয়েছেন ৷ আমি ক্যামেরায় দেখলাম ৷
সাবিতঃ আচ্ছা, আপনি আমাদের এই টেনের বছরটা কেন এরকম করলেন?
ঋজু ভাই কিছুই বলেননা ৷ শুধু চুপ করে থাকেন ৷
তৃণঃ কি হলো, চুপ করে আছেন কেন? বলুন, সত্যিটা কি ৷
ঋজু ভাই চোখের পানি মুছে বললেন, এই সব কিছুর পেছনে একটা নির্মম সত্য লুকিয়ে আছে ৷
তৃণঃ কী সেই সত্য?
ঋজুঃ সবটা শুরু থেকে বলছি ৷ শোনো ৷ ঋজু ভাই উঠে দাঁড়ালেন ৷ তারপর হাটতে হাটতে বলতে লাগলেন ৷
ঋজু ভাইঃ আমি জাহিদ আহমেদ ঋজু ৷ ছোটবেলা থেকেই আমি মায়ের সাথে থাকতাম ৷ তখন আমি আমার বাবাকে দেখিনি ৷ আমার মা-কে জিজ্ঞেস করলে মাও আমাকে কিছুই বলে না ৷ কেন বলে না আমি জানতাম না ৷ সবটা জানলাম, যখম আমি ক্লাস নাইনে উঠি ৷ আমার কাজিন আমাকে সবটা বলে  ৷ আমি জানতে পারি, আমার বাবা একজন গ্যাংস্টার ছিলেন ৷ আর উনি যখন খুশি, যাকে খুশি নিজের ইচ্ছামতো খুন করতেন ৷ উনার শুধু একটাই দুর্বলতা, আমার মা ৷ মায়ের সাথে উনার প্রতিদিনই কথা হতো ৷ কিন্তু আমার সুরক্ষার কথা ভেবে মা আমাকে দুরে এনেছিলেন ৷ আমার একটা বোনও হয় ৷ কিন্তু ও ছিলো বাবার স্বভাবের ৷ নিজের ইচ্ছামতো যা খুশি করে বেড়াতো ৷ তাই মা ওকে নিজের কাছে রাখেনি ৷ বাবার কাছে রেখেছিলেন ৷ আমি যে সবটা জেনেছি, সেটা আমি মা-কে বললাম না ৷ কারণ উনি খুব কষ্ট পাবেন ৷ আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসতাম ৷  আমি আগে শাহীনে ছিলাম না ৷ অন্য এটা স্কুলে ছিলাম ৷ সেই স্কুল থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় ফেইল হলে আমাকে কলেজ থেকে বাদ দিয়ে দেয়তবে আমি কিন্তু খারাপ ছাত্র ছিলাম না । গনিত স্যার এর কাছে কোচিং করতাম না বলে উনি আমাকে ইচ্ছা করে ফেইল করিয়েছেন । ঐ স্কুলের একটা স্যার এই কলেজের একটা স্যারকে চিনতেন । এই  স্যারটা আমাকে অনেক ভালবাসতেন । তাই উনি এই কলেজের ঐ স্যার এর সাথে কথা বলে এই কলেজে আমাকে ভর্তি করে দেন । এই কলেজেই আমি এসএসসি দেই । কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার পরই আমার মা হৃদরোগে মারা যায় । কারণ উনি খবর পায়, আমার বাবা মারা গেছেন, আর আমার বোন সুইসাইড করেছে ।
সাবিতঃ আপনার বাবা কিভাবে মারা গিয়েছিলেন?
ঋজু ভাইঃ আমার বাবাকে তোমরা সবাই চেনো ৷ এমনকি তোমাদের জন্য আমার বাবা মরেছে ৷
তৃণঃ কে আপনার বাবা?
ঋজু ভাইঃ এর জন্য আরেকটু পিছিয়ে যাই । পরীক্ষার আগে জানুয়ারি মাসে আমি একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম । সেই মেয়ের নাম সোনিয়া । মেয়েটা তোমাদের ক্লাসের হলেও মেয়েটা আমাকে বলেছিল ও ক্লাস নাইনে পড়ে আর এই কলেজেই আছে । অথচ মেয়েটা কিন্তু এই কলেজেও ছিল না । কিন্তু মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর । মেয়েটা আমার কাছ থেকে অনেক কিছু চাইতো । কিন্তু সরাসরি চাইতো না । আমাকে বলতো ওয়াশরুমে যেয়ে আয়নার সামনে রেখে আসতে । একবার লিপস্টিক রেখেছিলাম । কিন্তু লিপস্টিক রাখতে গিয়ে খেয়াল করি, কিন্তু পরে যখন দেখলাম, সত্যি কেউ নিয়ে গেছে, তখন ভাবলাম, সত্যি মনে হয় ও এই কলেজেই আছে । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার ধারনা ভুল ছিল । আসলে তোমাদের ক্লাসের নাবিলা নামের একটা মেয়ের লিপস্টিক হারিয়ে গিয়েছিলো । ওয়াশরুমে ও সেই লিপস্টিক দেখে মনে করেছিলো হয়তো এটাই ঐ লিপস্টিক । কারণ ওর লিপস্টিক আর এই লিপস্টিক এক ছিল না । কথাটা আমি গতকাল জেনেছি । যাই হোক, তোমরা মনে হয় কুনাল কে চেনো, তাই না?
প্রতীকঃ কুনাল যেন কে? নামটা চেনা চেনা লাগতেসে ।
তৃণঃ আরে, ফেক আইডি খুলে রিকের সাথে মজা করেছিলো না? ওই ছেলেটা ।
প্রতীকঃ ও হ্যাঁ । পরে তো ছেলেটা স্কুলেই সুইসাইড করেছিলো ।
ঋজু ভাইঃ তোমরা কি জানো? ঐ কুনাল আসলে কে?
সাবিতঃ না । আমরা জানি না ।
ঋজু ভাইঃ আচ্ছা, তোমরা কি সোনিয়ার সম্পর্কে কিছু জানো?
তৃণঃ ওর সম্পর্কেও তেমন কিছু আমরা জানতাম না । শুধু জানতাম ও একটু অদ্ভুত টাইপের মেয়ে, আর অল্পতেই রাগ করে ।
ঋজু ভাইঃ  তোমরা শুনলে অবাক হবে যে, ঐ কুনাল আসলে সোনিয়ার আপন ভাই ।
প্রতীক তৃণ আর সাবিত চমকে গেলো ।
ঋজু ভাইঃ তোমরা জেনে আরও চমকে যাবে, ঐ কুনাল যেই মেয়েটার নামে ফেইক আইডি খুলেছিল, ও ছিল আমার বোন ।
এবার সবাই আরও চমকে  “কি!” বলে চেচিয়ে উঠলো ।
সাবিতঃ তার মানে, ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন যিনি আমাদের আক্রমন করতে চেয়েছিলেন, আর আমরা উনাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলাম, উনিই আপনার বাবা?
ঋজু ভাইঃ হুম । একজন খুনি । এদিকে তোমাদের ক্লাসের একটা ছেলের সাথে সোনিয়ার যোগাযোগ ছিল । সে হল নাফিজ । নাফিজের কাছ থেকেই জানতে পারে সবটা । সোনিয়া ভাবে, তোমাদের ক্লাসের সবার জন্য ওর ভাই মারা গেছে । আর আমাকেও বলে, তোমরা আমার বাবাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছ । সোনিয়া প্রথম প্রথম আমাকে কিছুই বলে না । একদিন সোনিয়াকে লাভ লেটার দিতে গিয়ে ভুল করে আমি সাবিত ছেলেটার বইয়ে ঢুকিয়ে আসি লাভ লেটারটা । আমাকে অন্য রুমের কথা বলেছিল সোনিয়া । পরে আমি সেই চিঠি খুজি কিন্তু পাই না । পরবর্তীতে আমি জানতে পারি, সাবিত ছেলেটা এরকম লাভ লেটারটার জন্য ধরা খেয়েছে । আমি সেদিন বাসায় এসে ভেবেছিলাম পরদিন সব বলব স্যারকে । কিন্তু সেইদিনই ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা । আর সেটা হল, আমার বাবাকে আদালতের বিচার অনুযায়ী ফাঁসী দেয়া হয় । বাবার ফাসির কথা শুনে আমার বোন সুইসাইড করে, আর আমার মা সেই কথা শুনে হৃদরোগে মারা যান ।
ঋজু ভাই একটু থেকে শ্বাস নিলেন ।
সেদিন আমি খুব চিন্তায় ভেঙে পরি । সেদিন রাতেই আমি সোনিয়ার কাছে জানতে পারি তোমরা ক্লাস টেনরা আমার বাবাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছ । ঐ আমি এও জানতে পারি, রিক নামে ছেলেটার সাথে মজা করার কষ্টে কুনাল সুইসাইড করেছে এবং ছোটবেলায় তোমরা সোনিয়াকে খুব ডিস্টার্ব করতে । কথাগুলো ও এমনভাবে বলেছিল যে দোষগুলো তোমাদের দিকেই বেশি মনে হচ্ছিলো । তখন সোনিয়া আমাকে উদ্বুদ্ধ করে, প্রতিশোধ নেয়ার জন্য । আমার প্রথম শিকার হয় তোমাদের ঐ হাসিব নামের ছেলেটা ।
তৃণঃ হাসিব?
ঋজু ভাইঃ হ্যাঁ । ওর বোতলে আমি প্রথম ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলাম যার জন্য শেখ সোহান নামের ছেলেটা ওকে লাঠি মারে, তখন ও ঘুমে সামনের দিকে ঝুকে পরেছিল । আর সবাই মনে করেছিলো যে শেখ সোহানের লাথিতে ওর এই অবস্থা হয়েছে । এরপর তো আরও ছিলোই । কখনো ফেইক লাভ লেটার দেয়া, কখনো সিগারেটের প্যাকেট দেয়া, আবার কখনো ব্যাগের ভেতর সাপ ঢুকিয়ে দেয়া । একদিন আমি চিন্তা করি, ওদের মারলে কেমন হয় । সেদিন আমি বাস এক্সিডেন্ট ঘটানোর চেষ্টা করি । কিন্তু আল্লাহর রহমতে কিছুই হয় নি তোমাদের । কিন্তু সেই সময় আমার রাগ তখনও মেটেনি । মারার চেষ্টা করলাম একটা মেয়েকে । তখন একটা মেয়ের ব্যাগে একটা মেয়ের ব্যাগে আমি এসিড ঢুকিয়েছিলাম । কিন্তু সেদিনও মেয়েটা বেচে যায় । কিন্তু সেদিন রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখি । আমার মা আমাকে অনেক বকছে আর এসব কাজ করতে বারন করছে  । স্বপ্নটা যেন পুরো বাস্তবের মতো মনে হয়েছিলো । তারপরের দিন আমি অনেক হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি । ভাবলাম, দোষ ছিল আমার বাবার, দোষ ছিল কুনালের । তোমাদের তো কোন দোষ আসলেই ছিল না । তাহলে কেন আমি তোমাদের সাথে এমন করবো? আমি সেদিন ঢাকায় চলে যাই । যার জন্য গোয়েন্দারা আমাকে ধরতেও পারে নি । ধীরে ধীরে আমি সব ভুলে এই কলেজেই ভর্তি হই আর কিছু করবো না সিদ্ধান্ত নেই । গত পরশু কি করতে কি, হঠাৎ সোনিয়া আমাকে ফোন দেয় । ও সেই নাফিজের কাছ থেকে খবর পেয়েছে, অনেকদিন ক্লাসে কিছু হয় না । আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে আবার প্রতিশোধ নেবো বলে চিন্তা করি এবং গতকালই তৃণর ব্যাগে আরেকটা ফেইক লাভ লেটার ঢুকিয়েছিলাম । গতকাল রাতেই আবার একই স্বপ্ন দেখি আমি । দেখলাম, আমার মা খুব কষ্ট পাচ্ছে । আর বলছে, আমার জন্য নাকি এমনটা হয়েছে । আজ সকালে  আমি সোনিয়াকে ফোন দেই আর বলি, আমি আর কিছুই করতে পারব না । কিন্তু সোনিয়া আমাকে বলে, ও আমাকে কখনই ভালোবাসতো না । ও শুধু আমার ভালোবাসার অভিনয় করে আমাকে ব্যাবহার করেছে এসএসসি ব্যাচ ২০১৯ এর সব ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ, তোমাদের ডিস্টার্ব করার জন্য । কিন্তু, আমি এখন আমার মধ্যে নাই । আমি খুব খারাপ । সকাল থেকেই আমি পাপের যন্ত্রনায় ভুগছি । তাই সবটা শেয়ার করলাম তোমাদের সাথে ।
কথার এই মুহূর্তে এসে আবার কান্নাকাতি করতে লাগলেন ঋজু ভাই । এতক্ষন যা শুনল, তা সত্যি কি না বিশ্বাসই করতে পারছে না । কিছুক্ষণ পরিবেশ শান্ত ছিল । তারপর হঠাৎ তৃণ বলে উঠলো,
তৃণঃ আচ্ছা, আপনি আমাদের ব্যাগে সব কিভাবে ঢুকাতেন?
ঋজু ভাইঃ (চোখ মুছে) তোমরা যখন বাসে উঠতে, তখন আমি ভীরের ভেতর তোমাদের ব্যাগের ভেতর সব রাখতাম । তোমরা টেরও পেতে না ।
সাবিতঃ বদমাইশ নাফিজটাও সব জেনে আমাদের কিছুই জানায় নাই ।
ঋজু ভাইঃ ওর উপায় ছিল না । ওর বাসার পাশেই আমি থাকি । ওকে আমি হুমকি দিয়েছিলাম কাউকে কিছু না বলতে ।
ঋজু ভাই আর কিছু না বলে বাইরে চলে গেলেন । জ্যানি ভাই তখন পকেট থেকে ফোন বের করে রেকর্ড সেইভ করলেন । উনি এতক্ষন সব রেকর্ড করছিলেন ।
প্রতীকঃ ভাউ, আপনি সব রেকর্ড করছিলেন?
জ্যানি ভাইঃ আরে না, ঐ-ই আমাকে বলেছিল সব রেকর্ড করার জন্য । কিন্তু কেন বলেছিল সেটা জানি না ।
খানিক বাদে একটা আওয়াজ । তিন তলা থেকে ভারি কিছু পরে গেলে যেরকম আওয়াজ হয়, সেরকম । জ্যানি ভাই, প্রতীক, তৃণ, সাবিত  খেয়াল করলো, সব ক্লাস রুম থেকে সব টিচার্স, স্টুডেন্টরা বেরোচ্ছেন । বারান্দায় এসে দেখলেন, ঋজু ভাই তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করেছেন ।
জ্যানি ভাইঃ এবার বুঝলাম, ও সব প্রমান রাখতেই রেকর্ড করতে বলেছিলো ।
পরবর্তীতে সব কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানান হয় । রেকর্ডটা শুনে সবাই সব সত্যটা জানতে পারে । সেই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে টেস্ট পরীক্ষা হয় । তারপর কোচিং ক্লাস, তারপর মডেল টেস্ট । এর মাঝখানে আবার ক্লাস পার্টি এবং পিকনিকও হয় । তারপর দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা চলে আসে এবং শেষও হয় । এভাবে একদল ছাত্রছাত্রী স্কুল লাইফ পাড়ি দিয়ে যায় ।
লেখাটা শেষ করে ল্যাপটপটা বন্ধ করলাম । তারপর বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলাম । আকাশে একটা বড় চাঁদ দেখা যাচ্ছে । কিছুক্ষণ পর সেই চাঁদটা মেঘের আড়ালে চলে গেলো । ভাবলাম কি হল গল্পটা লিখে? কেউ হয়তো পড়বেও, তেমন একটা ফেমাসও হবে না । চেয়েছিলাম অনেক বড় করবো, সেটাও করা হল না । গল্পের সবটা সত্যি না হলেও কিছুটা সত্য । কিছু সত্য আবার বলা যায় না তাই বলাও হয় নি । এইযে কুনাল, ঋজু ভাই, সোনিয়া, সেই  গুন্ডা, উনারা গল্পে মজা তুলে ধরার মশলা মাত্র । তা না হলে সামান্য স্কুল জীবনের কাহিনী কে-ই বা শুনতে চায়?
সব বন্ধুরা আর একই জায়গায় নেই । বিভিন্ন যায়গায় চলে গেছে । তবে মার্ক জুকারবারগ স্যার এর ফেসবুকের জন্য যোগাযোগটা অন্তত আছে । সব কথা মনে থাকে না । আবার সব কথা চাইলেও ভোলা যায় না । কিন্তু একটা ছোট কথা সারাটা জীবনেই আমাদের মনে গেথে থাকবে । সেটা হল, “আমরা শাহীনে ছিলাম”
(সমাপ্ত)