আমরা শাহীনে ছিলাম-৩
আমরা শাহীনে ছিলাম-৩
এদিকে ডিবেটের
প্র্যাকটিস শেষ ।
লুতফুন্নেসা
মেডামঃ ঠিক আছে , তোমরা তাহলে ক্লাসে যাও । যে বিষয় টা দিলাম ওটা ভালো করে
প্র্যাকটিস করে এসো । আর পরশু আমরা ঢাকার জন্য রওনা হবো সবাই ব্যাগ ট্যাগ রেডি
রেখ ।
তুষারঃ মেডাম ,
আপনার সই লাগবে ।
লুতফুন্নেসা
মেডামঃ হ্যাঁ , আমাকে সাত্তার স্যার বলেছেন । তোমাদের ব্যাগ নাকে নিয়ে গেছেন তাই
আনার জন্য নাকি সই করা লাগবে । ক্লাস টেন রা
বাদে সবাই ক্লাসে চলে যাও ।
এরপর
লুতফুন্নেসা মেডাম সই করলেন এবং ওদের যেতে বললেন । ওরা সাত্তার স্যার এর কাছ থেকে
ব্যাগ নিয়ে ক্লাসরুমের দরজার সামনে এসে “স্যার আসবো” বলল ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
কিরে বাপ , বাথরুম সুন্দর করে সাফ করসিস তো তোরা
?
তিথিঃ
স্যার, মানে ?
উজ্জ্বল স্যারঃ
তোরাও কি ওয়াসরুম গেছিলি নাকি ?
তুষারঃ স্যার
আমরা ডিবেট করতে গেছিলাম ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
ও তোরা , আচ্ছা আয় আয় । ক্লাসও পিরায়(প্রায়)
শেষ ।
ওরা ভেতরে ঢুকল
।
উজ্জ্বল স্যারঃ
(সাবিতকে ইশারা করে) বাপ তুই বাইরি আয় ।
উজ্জ্বল স্যার
বাইরে গেলো হাতে সাবিতের বই আর কাগজ নিয়ে । সাবিতও তখন বাইরে গেলো । তৃণ এদিকে সবাইকে মাঠে যাওয়ার কথা বলতেই সব
মাঠের দিকে দৌড় । উজ্জ্বল স্যার সাবিতকে নিয়ে টিচার্স রুমের সামনে গেলেন ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
বয়স কত তোর ?
সাবিতঃ স্যার ১৬
।
উজ্জ্বল স্যারঃ
এই বয়সি পেরেম টেরেম কি আমরা জানতাম না । আর তোরা তো দেখতেসি অল্প বয়সি পাইকে
গেসিস ।
সাবিতঃ স্যার
আমি বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
(সাবিতের হাতে কাগজটা দিয়ে) পইরে দেখোতো এইডা কি ।
সাবিত তখন
চিঠিটা খুলল । কোন প্রেমপত্র । তাতে লেখা
“তোমার চোখটা
দেখে আমার হৃদয় কেপে ওঠে । তোমার চেহারাটা গভীর রাতে আমার স্বপ্নে ভাসে । প্রতিটা
মুহূর্তে আমি তোমার নিঃশ্বাস এর শব্দ পাই । সারাটা জীবন শুধু তোমাকেই চাই । অনেক ভালবাসি
তোমাকে । চিনে নাও কে আমি ।”
সাবিত কাগজ দেখে
খুব অবাক হয়ে গেল কেবল ভেবতে লাগলো এটা
কোত্থেকে এলো ।
তখন ওর হাত
থেকে কাগজটা কেড়ে নিয়ে বলল
উজ্জ্বল স্যারঃ
এমন ভান করছো যেন কিছুই জানো না ।
সাবিতঃ সত্যি
স্যার , এই কাগজ কোত্থেকে এসেছে আমি সত্যি জানি না ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
তাইলি এর ভেতর এই কাগজ এলো ক্যামনে ?
সাবিতঃ সেটা যে
আমি নিজেও বুঝতে পারছি না । তাহলে কি তৃণ আমার সাথে মজা করতে চেয়েছিল ?
উজ্জ্বল স্যারঃ
তৃণ, তৃণ আবার ক্কে ?
সাবিতঃ আমার
বন্ধু । ও হয়তো আমার সাথে মজা করেছে । যে আপনাকে বই দিয়েছে , ঐ ই তৃণ ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
ও , মজা করেছে আর বই আমার কাছেও দিয়েছে ?
সাবিতঃ হয়তো ওর খেয়াল ছিল না ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
দ্যাখো , নিজে দোষ করে বন্ধুর ঘাড়ে দোষ চাপাই দিও না ।
সাবিতঃ সত্যি
বলছি স্যার , এই কাগজ কোত্থেকে এলো আমি নিজেও জানিনা ।
উজ্জ্বল স্যার
সাবিতের গলা থেকে আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে বললেন
উজ্জ্বল স্যারঃ
কিন্তু আমি তোমাকে এই আইডি কার্ড কিভাবে ফেরত দেব সেটা আমি জানি ।
সাবিতঃ মানে ?
উজ্জ্বল স্যারঃ
কাল তোমার বাবাকে নিয়ে আমার কাছে আসবে । আমি উনাকে নিয়ে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর
কাছে নিয়ে যাব । বাকিটা উনি বুঝবেন ।
সাবিতঃ স্যার
সত্যি বলছি আমি কিচ্ছু জানিনা ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
আমারে তো জানি হবে বাপ । তুই যা , ক্লাসে যা , আর ভাব কাল তুই বাপ রে ক্যামনে
আনবিনি ।
উজ্জ্বল স্যার
আর কিছু না বলে চলে গেলেন । সাবিতও স্যার কে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো ।
সাবিতঃ কে করতে
পারে এই কাজ ? তৃণ নয় তো ?
এদিকে মাঠে
ছেলেদের কেউ কেউ ফুটবল খেলছে , কেউ কেউ এদিক ওদিক হাঁটছে । আরিক তখন সবার চোখ
এড়িয়ে চলে এলো ক্লাসরুমে ।
আরিকঃ আহ ! কেউ
নাই । এইবার শান্তিতে বাকি টিফিন টা খাওয়া যাবে ।
আরিক সেদিন
থার্ড বেঞ্চে বসে ছিল । যেয়ে ব্যাগ খুলে
টিফিন বক্সটা বের করলো । সেদিনের টিফিন ছিল বিরিয়ানি । বক্সের ঢাকনাটা
খুলতেই খাবার দেখে সে খুব খুশি ।
আরিকঃ ইশ ! আজকে
টিফিন পিরিয়ডে খাইতে পারিনি এখন শান্তিতে খাই ।
চামচটা আধ ঢাকা
বিরিয়ানির মধ্যে থেকে তুলে একটু বিরিয়ানি চামচে তুলে মুখের ভেতর যেই ঢোকাতে যাবে ,
অমনি সেই কলেজের ছেলেটা এসে হাজির , যে সাবিতের বইতে কাগজ রেখেছিলো । ছেলেটা এসে ফার্স্ট বেঞ্চে বইটা
খুজতে লাগলো । আরিক কিছুই বলল না । নিজের মতো খেতে লাগলো । ছেলেটা যখন বেঞ্চের
নিচে, আশে পাশে বইটা পেলো না। তখন একজনের ব্যাগ নিয়ে চেইন খুলতে শুরু করলো। এবার
আরিক ঘাবড়ে গেলো ।
আরিকঃ ও কি!
আপনি কিডা? ওদের ব্যাগ হাতাচ্ছেন কেন?
ছেলেটাঃ এ কুমড়ো
পটাশ, চুপচাপ বইসে থাক । বেশি কথা কইস না
।
আরিকঃ আরে
অদ্ভুদ তো , আমি কি স্যার কে ডাক দেবো?
ছেলেটাঃ এ !!
বাড়াবাড়ি করবিনা কইলাম । ব্যাগ সার্চ করতে করতে হঠাৎ ক্লাসে দিকে নুরুল ইসলাম
স্যার কে আসতে দেখে বেড়িয়ে গেলো ছেলেটা । নুরুল ইসলাম স্যার ক্লাসে এলো । স্যার
ক্লাসে আসতেই আরিক দাঁড়িয়ে স্যার কে সালাম জানালো ।
নুরুল ইসলাম
স্যারঃ কি ব্যাপার? এই ক্লাসরুমের আর সবাই কোথায় ?
আরিকঃ ওরা মাঠে
, শারীরিক শিক্ষা ক্লাস তো , খেলতে গেছে ।
নুরুল ইসলাম
স্যারঃ তো তুমি ক্লাসে একা কেন?
আরিকঃ ইয়ে ,
টিফিন খাচ্ছিলাম ।
নুরুল ইসলাম
স্যারঃ (ইয়ার্কি করে) ইয়ে টিফিন খাচ্ছিলে
?
আরিকঃ না মানে
স্যার ......... টিফিন খাচ্ছিলাম ।
নুরুল ইসলাম
স্যারঃ ঠিক আছে , খাও ।
নুরুল ইসলাম
স্যার যেতেই ছেলেটা এসে হাজির । রুমে ঢুকে রুমের দুটো দরজা আটকে দিলো ।
আরিকঃ কি
করতেসেন আপনে ?
ছেলেটাঃ (গম্ভীর
গলায়) একদম চুপ !
আরিক ভয় পেলো ।
আর কিছু বলার সাহস করলো না । ছেলেটাও সবার ব্যাগ খুলে বইটা খোঁজা শুরু করলো ।
এদিকে মাঠে সবাই
ফুটবল খেলছে । টাউনরা এক টিমে , বেইজ রা আরেক টিমে । ডিবক্সের ভেতর ফাউল হওয়ায়
পেনাল্টি করার চান্স পেলো টাউনরা । বেইজদের গোলপোস্ট থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বল
রাখা হল । পেনাল্টি করবে তৃণ । গোল কিপার আরেফিন অনিক । তৃণ পেনাল্টি করার জন্য
দৌড় দিলো । ঠিক এর মাঝে সাবিত এসে ল্যাং মেরে তৃণকে ফেলে দিলো । তৃণ মাঠের ওপর পড়ে
গেলো । উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের সাথে লাগা মাটি মুছে সাবিতের কাছে গেলো ।
তৃণঃ কিরে সাবিত
এর মধ্যে তুই এমন করলি ক্যান ?
সাবিত কিছু না
বলেই ঠাস করে তৃণর গালে থাপ্পড় মারল ।
তৃণ কিছুক্ষণ
চুপ করে সাবিতের দিকে তাকিয়ে রইল ।
সাবিতঃ
(রাগান্বিত অবস্থায় চিৎকার করতে করতে) এতো ফাইজলামি ক্যান করলি তুই ? বই নিসিস
ভালো কথা , এর মধ্যে তোর গার্লফ্রেন্ডের Love letter রাখসিস ক্যান ।
তৃণঃ এইসব উল্টা
পাল্টা কি বলতেসিস তুই?
সাবিতঃ উল্টা
পাল্টা আমি বলতেসি না উল্টা পাল্টা কাজ তুই করসিস ।
তৃণঃ (সাবিতের
কাঁধে হাত রেখে) দোস্ত ভালো ভাবে বল কি হইসে । কোন সমস্যা ?
সাবিত ওর কাধ
থেকে তৃণর হাত সরিয়ে দিলো ।
সাবিতঃ আমার
ঝামেলা তো তুই । তোর জন্য আজকে আমার অবস্থা খারাপ ।
তখন আরেফিন অনিক
ওদের মাঝখানে এলো ।
আরেফিন অনিকঃ
সাবিত , ঝামেলা করিস না তো । আমাদের খেলতে দে ।
সাবিতঃ অনিক ,
তোরে কিন্তু মাইরে পুইতে দেবনে ।
তৃণঃ আচ্ছা অনিক
, তোরা খেল আমি দেখতেসি ।
বলেই তৃণ
সাবিতের হাত ধরল ।
তৃণঃ (শহিদ
মিনারের পাশের পেয়ারা গাছের দিকে ইশারা করে )
ওইদিকে চল ।
সাবিতঃ ও , এখন
সবার কাছ থেকে নিজের দোষ ঢাকার জন্য এই করতেসিস ?
তৃণঃ সাবিত !
বার বার ফালতু কথা বলতেসিস ক্যান তুই ?
সাবিতঃ আমি তোর
কোনো কথা শুনতেসি না । কালকে অ্যাসেম্বলির পর আমি উজ্জ্বল স্যার এর কাছে যাব ,
তুইও আমার সাথে যাবি । যেয়ে কি বলবি আমি নিজেও জানি না ।
বলেই সাবিত চলে
এলো । তৃণ ওকে ডাকলেও ও শুনল না । তুষার তখন তৃণর কাছে এলো ।
তুষারঃ কি হইসে
রে ?
তৃণঃ আমি নিজেও বুঝতে পারতেসি না কি হইসে ।
এদিকে ছেলেটা
কারো ব্যাগে বইটা না পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো । আরিক আর কিছু বলল না । ছেলেটা
একবার কুৎসিত চেহারা নিয়ে আরিকের দিকে তাকাল । তারপর দরজা খুলে ছেলেটা দৌড় দিলো । সাবিত তখন ক্লাসের দিকেই আসছিলো । সাবিত তখন
ছেলেটার সাথে ধাক্কা খায় ।
সাবিতঃ (রেগে গিয়ে)
দেখে চলতে পারেন না ?
ছেলেটাঃ গলা
নামিয়ে কথা বল । আমি তোর বড় ।
সাবিত রেগে কিছু
বলতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল ।
সাবিতঃ সরি ।
ছেলেটাও আর
কথা বাড়াল না । চলে গেলো । সাবিত
ক্লাসরুমে ঢুকে ব্যাগের কাছে চলে গেলো । ক্লাস শেষ হবার আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি ।
সাবিত ব্যাগ নিয়ে যাবার সময় আরিক বলল
আরিকঃ কিরে ,
স্যার কি বলল তোরে ?
সাবিত কিছু না
বলেই চলে গেলো । এদিকে অন্যান্য সবাই ক্লাসে চলে এলো । ব্যাগ নিয়ে কয়েকজন বাসার
উদ্দেশ্যে আর কয়েকজন কল্যান স্যার এর
প্রাইভেট এ গেলো । তৃণ বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাবার সময় রাফি ওর সাথে ছিল ।
রাফিঃ আচ্ছা তুই
কি ওর বইয়ের ভেতর কিছু রাখসিলি ?
তৃণঃ আমি কি
রাখতে যাব?
রাফিঃ উজ্জ্বল
স্যার যখন তোর কাছ থেকে বইটা নিল তখন ওর ভেতর থেকে একটা কাগজ পড়ে গিয়েছিলো । সেই
কাগজ দেখেই স্যার এতো রেগে গিয়েছিলো ।
একটু দুরেই একটা
বাসের পাশে হাসিনের সাথে গল্প করছিলো । তৃণ আর রাফি ওর কাছে যাচ্ছিলো । তৃণকে আসতে
দেখেই হাসিন আর সাবিত একটু দূরে চলে গেলো ।
রাফিঃ মনে হয়
খুব বাজে কিছু একটা হয়েছে ।
তৃণঃ হুম ।
সেদিন ক্লাস শেষ
। ৪ মার্চ ২০১৮ রবিবার । সকালে রাখিব স্যার এর প্রাইভেট শেষ । সবাই অ্যাসেম্বলির
দিকে যাচ্ছিলো । তখন তুষার প্রতীককে ডাকল ।
প্রতীকঃ কি কিছু
বলবা ?
তুষারঃ শোন ।
কালকে তো আমরা ঢাকায় যাচ্ছি , তো অ্যাসেম্বলির লিড দিতে তো আমি এই কয়েকদিন পারবো
না । তুই লিড দিবি ?
প্রতীকঃ (চমকে
গিয়ে) লিড! মানে ঐ শাহিনস কভার আপ , হ্যান্ডস ডাউন এগুলা যে বল ?
তুষারঃ হ্যাঁ
এগুলা । পারবি ?
প্রতীকঃ হ্যাঁ ,
ঐ রকম লিডিং দেয়া আমার অনেক দিনের শখ ।
তুষারঃ চল তাইলে
।
প্রতীক তুষারের
সাথে গেলো । সেইদিন প্রতীক লিড দেয় নি কিন্তু তুষারের পাশে দাঁড়িয়ে কিভাবে লিড দিতে হয় সেটা শিখে নিল
।
আসসেম্বলি শেষ ।
সবাই ক্লাসে এসে হাজির । প্রথম ক্লাস হাসান স্যার এর ফিসিক্স । স্যার এখনও আসেন নি
। সাবিত তখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ওর বাবার জন্য । ব্যাগ ঐ লাস্ট
বেঞ্চেই রাফির পাশে । কিছুক্ষণ পর ওর বাবা এলো । সাবিতকে বাবার সাথে যেতে দেখে তৃণ
লাস্ট বেঞ্চে রাফির কাছে গেলো ।
তৃণঃ রাফি কি
হইসে রে ?
রাফিঃ আমারেও
কিছু বলে নাই ও ।
তৃণঃ কে জানতে
পারে ?
রাফিঃ হাসিন
জানতে পারে । কাল্ককে তো হাসিনের সাথে ছিল ।
তৃণঃ যাবি এখন
হাসিনের কাছে ?
রাফিঃ পাগল
হইসিস ? হাসান স্যার এর ক্লাস এখন । পড়ে আসলে স্যার মারবেনে ।
এদিকে সাবিত
বাবার সাথে উজ্জ্বল স্যার এর কাছে গেলো ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
আপনিই ওর বাবা ?
সাবিতের বাবাঃ
জী স্যার ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্র মানুষ , কিন্তু আপনার
ছেলে কেন এমন হয়েছে ? ছেলে কি কিছু বলেছে ?
সাবিতের বাবাঃ
স্যার ও আমাকে সব বলেছে । কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে ও এই কাজ করেছে ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
করেছে কি করেনি টা প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে গেলেই বোঝা যাবে ।
সাবিতের বাবা আর
কিছু বললেন না । উজল স্যার এর সাথে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে যেতে লাগলেন ।
সাবিতঃ আব্বু
আমি কিছু করিনি ।
সাবিতের বাবাঃ হ্যাঁ বাবা , আমি তোকে বিশ্বাস
করি । আমি প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর সাথে কথা বলে দেখছি ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যার এর রুমে যাবার সময় হঠাৎ উনাদের সামনে এলেন সুজিত স্যার ।
সুজিত স্যারঃ কি
ব্যাপার স্যার , এনারা কারা ?
উজ্জ্বল স্যারঃ
এই ছেলেটার বইয়ের মধ্যে একটা লাভ লেটার পাইসি । তাই এরে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর
কাছে নিয়ে যাচ্ছি ।
সুজিত স্যারঃ না
না , প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে নিয়ে যাইয়েন
না । উনি ব্যাস্ত । আপনি এদের নিয়ে আমার সাথে আমার রুমে চলুন ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
কিন্তু প্রিন্সিপ্যাল স্যার তো বলসিলেন উনার কাহে সবসময়ই আসা যাবে ।
সুজিত স্যারঃ
আহ! আপনি চুপ করেন তো । শুধু শুধু স্যারকে তাই বলে ডিস্টার্ব করা যায় নাকি ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
ঠিক আছে , চলেন ।
উজ্জ্বল স্যার
সাবিত ও সাবিতের বাবাকে নিয়ে সুজিত স্যার এর সাথে সুজিত স্যার এর রুমে গেলেন ।
সুজিত স্যার তার চেয়ার নিয়ে বসলেন আর সাবিতের বাবাকেও বসতে বললেন । সাবিত ওর বাবার
পিছেই দাঁড়িয়ে ছিল । ওর সাথে উজ্জ্বল স্যার ও ছিলেন ।
সুজিত স্যারঃ তা
আপনি আপনার ছেলেকে কেমন প্রশ্রয় দিচ্ছেন ?
সাবিতের বাবাঃ
মানে?
সুজিত স্যার আর সাবিতের বাবার কথা বার্তা
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কানে গেলো ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ (মনে মনে) কি ব্যাপার ! সুজিত স্যার কার সাআথে কথা বলছেন ?
যেয়ে দেখি তো ।
এদিকে ক্লাসে
হাসান স্যার তখনও আসেন নি । তৃণ আর রাফি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ।
তৃণঃ গতকাল
সাবিত বলেছিল ওর কাছে যাবার জন্য । যাব ?
রাফিঃ কখন
বলেছিল ?
তৃণঃ কালকে
ফুটবল খেলার সময় যখন আমার কাছে আসছিলো তখন
।
রাফিঃ যা । যেয়ে
দ্যাখ , কি করে ।
তৃণঃ কিন্তু
হাসান স্যার এর ক্লাস তো এখন । অনুপস্থিত দেখলে কাল আবার ধরবে ।
রাফিঃ আমি তোর
রোল কল করে দেবনে । আর হাসান স্যার এর
ক্লাসে না এসে পরের পিরিয়ডে আসিস ।
তৃণঃ আচ্ছা ।
আমি ত্তাহলে যাই ।
রাফিঃ আচ্ছা ।
আইসে আমারে বলিস কি হল ।
তৃণ চলে গেলো ।
এদিকে সুজিত
স্যার সাবিতের বাবার সাথে কথা বলছিলেন ।
সুজিত স্যারঃ
ছেলে মেয়ে প্রেম করে , কত বড় সাহস এদের । আমার মনে হয় এদের রেড টিসি দিয়ে দেই ।
তাহলে এরা বুঝবে , পড়াশুনা না করলে কি হয় ।
সাবিতের বাবাঃ
স্যার ও কিচ্ছু করেনি । আপনি প্লিজ এমন টা
করবেন না । তাছাড়া ছোট মানুষ , ভুল করতেই পারে ।
সুজিত স্যারঃ
এটা কি বললেন আপনি , এস এস সি দেবে ,আর বলেন ছোট ?
তখন
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এলেন ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ কি হচ্ছে কি এখানে ?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যার কে দেখে সুজিত স্যার দাঁড়ালেন ।
সুজিত স্যারঃ
স্যার আপনি ! আসুন স্যার ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ কারা এনারা ?
সুজিত স্যারঃ এই
ছেলেটা মেয়েদের সাথে প্রেম করে বেরায় , তাই এর বিচার করছিলাম ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
না স্যার , এই ছেলেটার বইয়ের ভেতর একটা প্রেমপত্র পাইসি , তাই বিচার করাতি নিয়ি
আসিলাম ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ (সাবিতকে) তোমার নাম কি ?
সাবিতঃ সাবিত
হাসান ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ সাবিত , তুমি তোমার বই আর প্রেম পত্র নিয়ে ক্লাসে যাও ।
সাবিত আর কিছু
না বলে বই আর চিঠিটা নিয়ে চলে গেলো ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ উজ্জ্বল স্যার আর সাবিতের বাবা , আপনারা আমার সাথে আমার রুমে আসুন ।
সাবিতের বাবা আর
উজ্জ্বল স্যার প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমে এলো প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর সাথে ।
এদিকে সাবিত কলেজ বিল্ডিং এর নিচ তোলা দিয়ে ক্লাসরুমে যাবার সময় ওর সামনে হাজির হয়
তৃণ । তৃণ সাবিতের কাঁধে দুই হাত রেখে বলল ।
তৃণঃ আচ্ছা তুই
বল না কি হইসে , তুই আমার ওপর রাগ করতেসিস ক্যান ?
সাবিত কিছু না
বলে চিঠিটা তৃণর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো । তৃণ চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়লো ।
তৃণঃ (মনে মনে)
এই চিঠিই কি তাহলে ওর বইতে ছিল , তাহলে ও আমার ওপর রাগ করছে কেন ? তবে কি ও মনে
করছে আমি এটা ওর বইয়ের ভেতর রাখসি ?
এদিকে
প্রিন্সিপ্যাল স্যার সাবিতের বাবার সাথে কথা বলছিলেন । ইতোমধ্যে সবটা ঘটনা উজ্জ্বল
স্যার আর সাবিতের বাবার কাছে শোনা শেষ ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ সবটাই তো শুনলাম । এখন আপনার কেন মনে হচ্ছে আপনার ছেলে এমন কাজ করেনি ?
সাবিতের বাবাঃ
দেখুন স্যার , আমার ছেলে যদি সত্যি কাউকে পছন্দ করতো , তাহলে ও আমাকে সব বলত । ও
আমার কাছ থেকে কিচ্ছু লুকায় না । সব কথা আমার সাথে শেয়ার করে ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ দেখুন , আমিও আপনার সাথে একমত । ছোট মানুষ ওরা , ভুল করতেই পারে । কিন্তু
আপনার ছেলে যদি ঐ প্রেমপত্র না লিখে থাকে বা আপনার ছেলের কাছে কেউ যদি ঐ প্রেমপত্র
না পাঠায় তাহলে এটা কার ?
সাবিতের বাবাঃ
সেটা এখন আমি কিভাবে বলব স্যার ? আমার ছেলেকে আমি বিশ্বাস করি । এই যুগে ব্যাপারটা
যদিও কেউ বিশ্বাস করবে না , তবু এটাই সত্যি । আমার ছেলে হতে পারে খুব চঞ্চল ।
কিন্তু ও কোন দোষ করলে আমার কাছে সব স্বীকার করে ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
স্যার ছেলেটা গতকাল আমাকে বলছিল ওর কোন একটা বন্ধু ওর সাথে মজা করেছে ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ কি নাম ওর বন্ধুর?
উজ্জ্বল স্যারঃ
কি যেন নামটা ............হ্যাঁ তৃণ ।
এদিকে তৃণ চলে
গেলো জুপিটার শাখায় । ক্লাসে তখন ফিরোজ ইকবাল স্যার । তৃণ ওদের ক্লাসের দরজার
সামনে যেয়ে স্যার কে সালাম দিলো ।
ফিরোজ ইকবাল
স্যারঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম । কি বাবা , কাছু বলবা ?
তৃণঃ স্যার
হাসিনকে একটু লাগবে ।
ফিরোজ ইকবাল
স্যারঃ হাসিন , তোমাকে ডাকছে ।
হাসিন তখন বাইরে
এলো । তৃণ স্যার কে সালাম দিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলো ।
হাসিনঃ কিরে ,
ডাকলি কেন ?
তৃণঃ সাবিতের কি
হইসে ?
হাসিনঃ ক্যান ,
সাবিত তোরে সত্যিই কিছু বলে নাই ?
তৃণঃ সত্যিই
কিছু বলে নাই মানে ?
হাসিনঃ না আমি
ভাবলাম সাবিত হয়তো গতকালকের জন্য তোর সাথে রাগ করেছে ।
তৃণঃ আচ্ছা পুরো
ঘটনাটা আমাকে তুই খুলে বলত ।
হাসিনঃ শোন । ওর
বইয়ের ভেতর Love letter পেয়ে স্যার স্যার ওকে ডেকেছে । কিন্তু ও নিজেও জানে
না এই চিঠিটা কোত্থেকে ওর কাছে এলো । কিন্তু বই তোর কাছে থাকায় ও মনে করছে তুই
হয়তো ওর সাথে মজা করেছিস । কিন্তু উজ্জ্বল স্যার তা মানেন নি । সেজন্য আজকে ওর
বাবাক্কে উজ্জ্বল স্যার ডাকসে ।
তৃণঃ কিন্তু আমি
তো ওর সাত্থে এরকম মজা করিনি ।
হাসিনঃ ও নিজেও
বলেছে হয়তো তুই এই কাজটা করিস নি । কিন্তু তোর বই নেয়া আবার সাবিতকে না বলে
স্যারকে বই দেয়া এসব ওর কাছে খটকা লেগেছে
। তবুও ও বলেছে যতদিন ও প্রমান পাচ্ছে তুই এই কাজ করিস নি ততদিন তোর সাথে কথা বলবে না ।
তৃণঃ আর তুই যে
বললি সত্যিই কিছু বলে নি এর মানে ?
হাসিনঃ আরে আমি
তো ভাবসিলাম ও হয়তো শুধু গতকালকের জন্যই রাগ করে থাকবে । আজ হয়তো সব স্বাভাবিক
হয়ে যাবে । আজ সকালে ও বলেছিল ওর বাবাকেও
ও তোর কথাটা বলে নি । তারপর আমার মনে হয়েছিল সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে ।
এদিকে
প্রিন্সিপ্যাল স্যার সাবিতের বাবার সাথে কথা বলছিলেন ।
সাবিতের বাবাঃ
তৃণ? না । ও তো তৃণর কথা আমাকে বলে নি । আর তাছাড়া তৃণ তো ওর ভালো বন্ধু । তৃণ যদি
সত্যি ওর সাথে মজা করত , তাহলে এখন এখানে এসে সবটা বলতো ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ তৃণ যখন বলে নি , তখন কাজটা তো
আপনার ছেলেই করেছে । দেবো টিসি ?
এদিকে তৃণ
হাসিনের সাথে কথা বলছিল ।
তৃণঃ ওকে যদি টি
সি দিয়ে দেয় ?
হাসিনঃ দিতে
পারে । অস্বাভাবিক কিছু না ।
তৃণঃ আমি প্রমান
করবই আমি নির্দোষ । আর যে আমার বন্ধুর সাত্থে এমনটা করেছে তাকেও খুজে বের করবো ।
হাসিনঃ কিন্তু
আসল অপরাধীকে না খুজে পেলে তো কিছুই করার
নেই ।
তৃণঃ আবার আসল
অপরাধীকে খুজতে তো অনেক সময় লাগবে । আমার কাছে এই Love letter ছাড়া তো আর কিছুই
নেই ।
হাসিনঃ হুম । কি
করবি এবার ?
তৃণঃ একটা উপায়
পেয়েছি ।
হাসিনঃ কি উপায়
?
তৃণঃ ততদিন আমি
দোষী থাকব । তুই যা । ক্লাসে যা ।
বলেই তৃণ
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমের দিকে দৌড় দিলো । হাসিন তৃণকে কিছু বলার আগেই তৃণ চলে গেলো । তৃণ
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমের দরজার সামনে এসে বলল “স্যার আসবো?”
সাবিতের বাবাঃ
এইতো তৃণ ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ তুমিই তাহলে তৃণ ?
তৃণঃ জী স্যার ।
উজ্জ্বল স্যারঃ
আমার এখন খেয়াল আসিলো । বইটা আমি তোমার কাছ থেকেই নিসিলাম না ?
তৃণঃ জী স্যার ,
আর আমিই সাবিতের সাত্থে মজা করে ওটা রেখেছিলাম ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ বাহ ! আসল দোষী এসে হাজির ।
সাবিতের বাবাঃ
তৃণ ! এটা কি ধরনের ইয়ার্কি বাবা ?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ আচ্ছা সাবিতের বাবা আর উজ্জ্বল স্যার , আপনারা এখন এখন আসতে পারেন ।
সাবিতের বাবা আর
উজ্জ্বল স্যার চলে গেলেন । যাবার সময় সাবিতের বাবা ঘৃণার চোখে তৃণর দিকে তাকালেন ।
তৃণ আর ভয়ে সাবিতের বাবার দিকে তাকালেন না ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ তৃণ ?
তৃণঃ (চমকে
গিয়ে) জী স্যার বলেন ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ তুমি দরজাটা লাগিয়ে আমার সামনে এসে বস ।
তৃণ দরজা আটকে
স্যার এর সামনে বসলো ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ অভিনয় টা খুব ভালো করেছো ।
তৃণ এতক্ষন মাথা
নিচু করে ছিল । স্যার এর এই কথা শুনে স্যার এর দিকে চমকে তাকাল ।
তৃণঃ মানে স্যার
?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যার একটা বই টেবিলের উপর রেখে তৃণর দিকে এগিয়ে দিলেন ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ বইটা ছুঁয়ে বলো তো তুমি কাজ টা
করেছো ।
তৃণ আর কিছু
বলতে পারল না । দু তিনবার হাত বাড়িয়েও আবার হাত সরিয়ে নিলো ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ পারলে না তো ? জানতাম । কারণ তুমি তোমার বন্ধুকে বাঁচাতে এসেছো ।
তৃণঃ কিন্তু
স্যার বিশ্বাস করুন , সাবিতও এ কাজটা করে নি ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ সেটা আমি ওর বাবার চেহারা দেখেই বুঝেছি ।
তৃণঃ তাহলে আপনি
ওকে টিসি দেবেন না তো ?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ টিসি দেয়ার কথা আমি ওর বাবাকে বলেছি ঠিকই কিন্তু আমি ওকে টিসি এমনিতেও
দিতাম না । কিন্তু দোষ তো কেউ একটা করেছেই ।
তৃণঃ আমি ওকে
খুজে বের করবো স্যার । কিন্তু আপনার কাছে একটা Request করবো স্যার । আপনি
প্লিজ কাউকে বলবেন না আমি নির্দোষ ।
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ
কেন ?
তৃণঃ আমি আসল
দোষীকে প্রমান সহ খুজে বের করে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে তবেই সবাইকে বলব , আমি
নির্দোষ ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ বাহ , খুব ভালো কথা । তাহলে এবার
ক্লাসে যাও , তোমার অনেক পড়া মিস হলো মনে হয় ।
তৃণঃ জী স্যার ,
টা একটু হয়েছে বটে ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ এসো তাহলে , ভালো থেকো ।
তৃণঃ আচ্ছা
স্যার । আমাদের ক্লাসের সবার জন্য দোয়া করবেন । আসসালামু আলাইকুম ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ দোয়া সবসময় করি । ওয়ালাইকুমুস সালাম ।
তৃণ চলে এলো ।
হাতে সেই চিঠিটা । কলেজ বিল্ডিং এর নিচ তলার বারান্দা দিয়ে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে ।
সিঁড়ি দিকে মোড় ঘুরতেই সামনে এসে দাঁড়ালেন সাবিতের বাবা ।
সাবিতের বাবাঃ
তোমাকে কিছু বলার নেই বাবা । আমার সাবিত তোমাকে নিজের ভাইয়ের মতো ভাবে , আর তুমি
এমন একটা ইয়ার্কি করলে কেন ? আর যখন করেছিলেই সেদিন কেন স্যার কে জানালে না ?
তাহলেই তো সব মিটে যেত ।
তৃণঃ আঙ্কেল ,
আপনাকে আমি এখন কিছুই বলতে পারবো না । কারণ আমার হাতে প্রমান নেই । তবে আমি প্রমান
জোগাড় করার চেষ্টা করবো । পারবো কি না জানি না । তবে আমাকে খুজতেই হবে ।
তখন প্রথম
পিরিয়ড শেষ হবার ঘণ্টা বাজল ।
সাবিতের বাবাঃ
যা খুশি করো । সাবিত তোমার ওপর অনেক রাগ করেছে । জানি না ও তোমার সাথে আর কথা বলবে
কি না ।
আঙ্কেল আর কিছু
বলল না । তৃণ সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠতেই দেখল হাসান স্যার টিচার্স রুমের দিকে
আসছে । তৃণ আবার নিচে নেমে গেলো । কারণ হাসান স্যার দেখলে আবার বকা ঝকা ক্করবে ।
হাসান স্যার একটু দূরে যেতেই তৃণ উপরে উঠে ক্লাসে গেলো । ক্লাসরুমে ঢুকে দেখল
সাবিত লাস্ট বেঞ্চে বসে বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন দেখছে । তৃণ আর ওর কাছে গেলো না । তখন তৃণর
কাঁধে কেউ হাত রাখল । পেছন ফিরে দেখল , রাফি ।
তৃণঃ কিরে , তুই
?
রাফিঃ হ্যাঁ ।
সাবিতের বাবার সাথে দেখা হয়েছিলো । উনি সব বলেছেন । কিন্তু তুই স্যার কে কথা টা
বললি কেন যে তুই এই কাজটা করেছিস ?
তৃণঃ সময় মতো সব
বুঝবি ।
রাফিঃ মানে ?
তৃণঃ বললাম তো ,
সময় হলে সব বুঝবি ।
ঠিক তখন তুষার
এসে তৃণকে নিয়ে বারান্দায় এলো ।
তৃণঃ কিরে ,
আমাকে বারান্দায় আনলি কেন ?
তুষারঃ ভাই আমি
একটা চিন্তা করতাসি ।
তুষার আবার
তৃণকে মজা করে ভাই এবং আপনি বলে ডাকতো ।
তৃণঃ কি প্ল্যান
?
তুষারঃ ভাবতেসি
একটা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করবো ।
তৃণঃ কিসের
ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ?
তুষারঃ এই যে ,
আমরা সাইন্সের ১১২ জন , আর আর্টস কমার্সের সবাইকে নিয়ে প্রায় ১৫০ জনের মতো , এই
প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রীর যদি একই দিনে
একই কমিউনিটি সেন্টার এ একসাথে বিয়ে হয় , তাহলে কেমন হবে ?
তৃণঃ আইডিয়া টা
তো Joss কিন্তু আমার তো কোন মেয়েরেই পছন্দ হয় না ।
তুষারঃ আরে ভাই
। এই চিন্তা করেন ক্যান ? আমি পছন্দ করায় দিমু ।
তৃণঃ কেমন মেয়ে
পছন্দ করাবেন আপনি ?
তুষারঃ (ইয়ার্কি
করে) এই ধরেন, কালো , না না ভালো ক্কিন্তু , এরা জগতের আলো । বোবা , না না , এটাও
ভালো কিন্তু । ঝগড়া করতে পারবে না । অন্ধ , না না , এটাও ভালো কিন্তু । লুকিয়ে
লুকিয়ে আপনার আলমারি থেকে টাকা সরাতে পারবে না । আবার ধরেন .....................
তৃণঃ (তুষারের
কথা শেষ না হতেই) ভাই থাক , আপনার আর আমার জীবন নষ্ট করা লাগবে না । আমি আপনার
জন্য এরকম মেয়ে খুজে দেবো , আমার লাগবে না ।
তৃণ ভেতরে চলে
গেলো । তুষারও হাসতে হাসতে ডিবেট প্র্যাকটিসে চলে গেলো । ফুটবল প্লেয়াররা ইতোমধ্যে
মাঠে প্র্যাকটিস করতে চলে গেছে । পরের ক্লাস তাহের স্যার এর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা
। স্যার ক্লাস নিচ্ছিলেন । তখন রাখিব স্যার একজন পিওন আঙ্কেলকে সাথে নিয়ে এলেন ।
পিওন আঙ্কেলের হাতে একটা কৌটা জাতে আছে ক্রিমির ঔষধ ।
রাখিব স্যারঃ
বাবুরা , বেবিরা তোমরা কেমন আছো ?
সবাই একসাথে,
আলহামদুলিল্লাহ আছি স্যার ।
রাখিব স্যারঃ তো
তোমাদের জন্য গরম গরম ক্রিমির ঔষধ এনেছি............( সবাই হাসল) তো তোমরা যারা ৬
মাসের মধ্যে এটা খাও নি তারা এটা খাবে , আর যারা এটা খেয়েছ , তাদের খাওয়ার দরকার
নেই । ভাই , আপনি সবাইকে দেন তো
এরপর পিওন
আঙ্কেল সবার কাছে যেয়ে একটা করে ঔষধ দিতে লাগলো ।
রাখিব স্যারঃ
সবাই কিন্তু এখনি খাবা ।
রাহাতঃ অ্যাঁ!
এখনি ?
রাখিব স্যারঃ
হ্যাঁ এখনি খাব ।
তাহের স্যারঃ
শেষ ৬ মাস যদি কেউ খেয়ে থাক তাহলে আবার যেন খাও না ।
রাখিব স্যারঃ
তোমরা এই ওষুধটা চুষে খাও । বেশি খারাপ লাগলে পানি দিয়ে চিবিয়ে খাও ।
প্রতীকঃ স্যার ,
বাসায় যেয়ে খেলে হবে ?
রাখিব স্যারঃ
কেন ? অর্ধেক কি তুমি খাবে আর অর্ধেক কি তোমার নানিকে খাওয়াবে ?
প্রতীকঃ
(ইয়ার্কি করে) স্যার ওপেনলি অপমান করলেন !
রাখিব স্যারঃ
ধুরু খাও তো ।
সেই সময় দরজার
কাছে তিথি আর তুষার এসে হাজির ।
তিথিঃ স্যার আসবো
?
তাহের স্যারঃ
হ্যাঁ আসো । কোথায় ছিলে ?
তুষারঃ রাখিব
স্যার কেই খুজতে খুজতে আসলাম । ডিবেট প্র্যাকটিস করছিলাম স্যার ।
ফারিহা বিনতে
আলীঃ স্যার এরা কিন্তু ক্রিমির ঔষধ খায় নাই ।
তিথিঃ রাখিব
স্যার কি আমাদের ছারসে ? লাইব্রেরিতেও যেয়ে ক্রিমির ঔষধ দিয়ে এসছে ।
রাখিব স্যারঃ
তোমরা কি ব্যাপারে কথা বলতে এসেছ ? রুটিন পাও নি নাকি ? সকাল থেকে ১০\১২ জন এসেছে
আমার কাছে ।
তুষারঃ স্যার
প্লিজ ! এতো তাড়াতাড়ি আমাদের মডেল টেস্ট টা নিয়েন না ।
রাখিব স্যারঃ
কেন বাবু ?
ফারিহা বিনতে
আলীঃ স্যার আমাদের Preparation ততটা ভালো না ।
তিথিঃ তারপরে
আমাদের আবার ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতার জন্য ঢাকা যেতে হবে ।
রাখিব স্যারঃ
তোমরা কি আমাকে এটা বলার জন্য এসেছ ?
তুষারঃ না স্যার
। কিন্তু আপনি প্লিজ মডেল টেস্ট টা এপ্রিল মাসে নেন ।
রাখিব স্যারঃ
শুধুমাত্র তোমাদের এই কয়েকজনের সমস্যার জন্য পিছিয়ে দেবো সময় ?
তুষারঃ স্যার
শুধু আমরাই পিছিয়ে দিতে চাচ্ছি না । সবাই চাচ্ছে ।
রাখিব স্যারঃ
(অন্য সবার দিকে তাকিয়ে) কি সবাই চাও পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে ?
সবাইঃ জী স্যার
।
রাখিব স্যারঃ
আচ্ছা , এই মাস থেকে পরীক্ষা হবে না । এপ্রিল মাসেই নেয়ার জন্য আমি প্রিন্সিপ্যাল
স্যার এর সাথে কথা বলব ।
সবাই আনন্দে
“ইয়ে” বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো ।
তাহের স্যারঃ
(ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল ঠেকিয়ে) চুপ ...... চুপ ...... পাশে ক্লাস হচ্ছে তো ......
ধীরে ধীরে সবাই
চুপ করে ।
রাখিব স্যারঃ ও
হ্যাঁ ভালো কথা । তোমাদের নেপচুন আর ভেনাস রা আপাতত একসাথে ক্লাস করো , কাল
তোমাদের নতুন রুটিন দেয়া হবে ওটা অনুসারে ক্লাস হবে ।
পিওন আঙ্কেল তখন
রাখিব স্যার এর কাছে এলো ।
পিওন আঙ্কেলঃ
স্যার , আমি তাইলে এইবার যাই?
রাখিব স্যারঃ
সবাইকে দিয়েছ তো ?
পিওন আঙ্কেলঃ জী
স্যার । খালি ৫\৬ জন নেয় নাই , ওরা নাকি ৬ মাসের মধ্যে খাইসে ।
রাখিব স্যারঃ
আচ্ছা , যাও তাহলে ।
পিওন আঙ্কেল চলে
গেলো ।
রাখিব স্যারঃ
হ্যাঁ তামজিদ বাবু আর মাহমুদা বেবি, তোমরা বাইরে চল, তোমাদের সাথে বাইরে যেয়ে কথা
বলি ।
তুষারঃ স্যার
আমরা কোন কথা বলব না । লুতফুন্নেসা মেডাম কথা বলবেন ।
রাখিব স্যারঃ
আচ্ছা লাইব্রেরীতে চল । (তাহের স্যারকে) স্যার আসি তাহলে, আপনার ক্লাসের একটু
ডিস্টার্ব করলাম ।
তাহের স্যারঃ না
স্যার সমস্যা নেই ।
রাখিব স্যার,
তুষার আর তিথি চলে গেলো । রাখিব স্যার ও ক্লাস নেয়া শুরু করলেন ।
এদিকে ফুটবল
প্র্যাকটিস হচ্ছে । মাসুদ , জিম আর রিদু ফুটবল নিয়ে কাটাকাটি করার প্র্যাকটিস করছে
।
শাহরিয়ার সোহান,
আরেফিন অনিক আর শাওন শহিদ মিনারের পাশের পেয়ারা গাছের নিচে বসে একটু রেস্ট নিচ্ছে
।
শাওনঃ শুনলাম
আমাদের থেকে কয়েকজনকে মার্চের শেষে Inter Shaheen Football match খেলার জন্য
নিয়ে যাবে?
শাহরিয়ার সোহানঃ
কোথায় ?
শাওনঃ শমশেরনগর
।
আরেফিন অনিকঃ
সেই হবে ।
শাওনঃ হুম ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
যারা যাবে তারা তো আরও প্র্যাকটিস করবে । খালি কষ্ট আর কষ্ট । যদিও আমার কষ্ট নাই
।
আরেফিন অনিকঃ
ক্যান ? তুই যাবি না ?
শাহরিয়ার সোহানঃ
না । আমাকে মনে হয় যাইতে দেবে না ।
আরেফিন অনিকঃ যা
! আমরা ফেসবুকে পোস্ট দিমু আর সোহান দেইখে কানবি ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
এহ ! আগে দ্যাখ তুই নিজেই যাইতে পারিস নাকি ।
আরেফিন সোহানঃ
না আমাকে যাইতে দেবে ।
শাওনঃ বাদ দে ।
অনেকক্ষণ ধরে রেস্ট নিচ্ছি । চল এবার প্র্যাকটিসে যাই ।
আরেফিন অনিকঃ
হ্যাঁ চল । চল সোহান যাই ।
ওরাও
প্র্যাকটিসে চলে গেলো ।
কিছুক্ষণ পর
দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হল । তৃতীয় ক্লাস তানিয়া মেডামের । বাইরে থেকে ঘুরে এসে রাহাত সবাইকে
বলল তানিয়া মেডাম সবাইকে কম্পিউটার ল্যাবে ডাকছেন । সবাই যাচ্ছিলো । সাবিত না যেয়ে
লাস্ট বেঞ্চের কোণায় বসে রইল । সাবিতের পাশে ছিল তৃণ । ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের
করতে করতে বলল
রাফিঃ কিরে
সাবিত , তুই যাবি না ?
সাবিতঃ না রে।
তুই যা ।
রাফিঃ আচ্ছা ।
রাফি খাতা কলম
নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়েই দেখল তৃণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ।
রাফিঃ চল যাই ।
তৃণঃ সাবিত যাবে
না ?
রাফিঃ না ।
তৃণঃ কেন?
রাফিঃ কি জানি ।
আমাকে বলে নি ।
তৃণঃ আচ্ছা তুই
যা আমি এখানে আছি ।
রাফিঃ আচ্ছা ।
রাফি চলে গেলো ।
তৃণ ক্লাসরুমে ঢুকে দেখল সাবিত লাস্ট বেঞ্চে হেড ডাউন করে বসে আছে । তৃণও যেয়ে বসে
পড়লো লাস্ট বেঞ্চে । লাস্ট সিট বেঞ্চটা একদম দেয়ালের সাথে লাগানো । আবার বাম
দিকটাও দেয়ালের সাথে লাগানো । সাবিত একদন বামে দেয়াল ঘেঁষে শুয়ে ছিল । তৃণ যেয়ে
ডান দিকে বসতেই সাবিত মাথা তুলে বসলো । কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তৃণ মুখ খুলল ।
তৃণঃ ল্যাবে
গেলিনা কেন ?
সাবিত কিছু বলল
না ।
তৃণঃ সামান্য
ব্যাপারে কেন রাগ করছিস আমার ওপর?
সাবিতের মুখ
থেকে তাও কোন কথা নেই ।
তৃণঃ তুই কি
ভাবিস? তোর সাথে না থাকলে আমার খারাপ লাগে না ?
সাবিত এবার মুখ
খুলল ।
সাবিতঃ সামনে
তাকিয়ে দ্যাখ , তোর কত গুলা বন্ধুর এখানে ছিল । আপাতত নেই , কিন্তু চলে আসবে
। একটা বন্ধু একেবারেই চলে গেলে কিছু যায়
আসে না ।
তৃণঃ জবা ফুলের
৫ টা না ৬ টা পাপড়ি আছে । একটা ছিঁড়ে গেলে ফুলটা দেখতে আর ভালো লাগে না ।
সাবিতঃ গোলাপ
ফুলের অনেকগুলো পাপড়ি । একটা ছিঁড়ে গেলে টের পাওয়া যায় না ।
তৃণঃ কিন্তু
ফুলটা তো কষ্ট পায় ।
সাবিতঃ ফুলটা যে
ছিঁড়ে ফেলেছে সে তো আর কষ্ট পায় না ।
তৃণঃ কে ফুল
ছিঁড়েছে সেটাও তো কেউ বলতে পারে না ।
সাবিত আর কিছু বলে না । আবার হেড ডাউন করে বসে থাকে । তৃণও বাইরের দিকে এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । লাইব্রেরীতে তখন লুতফুন্নেসা মেডামের সাথে কথা বলছিলেন
রাখিব স্যার ।
রাখিব স্যারঃ কাল তাহলে সকাল ৬টার সময় যাবার ব্যাবস্থা করা যায় ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ স্যার এই একই কথাই তো আপনাকে আমি ২য় পিরিয়ড থেকে বলছি । ৬
টার সময় বাস হলে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতে পারবো ।
রাখিব স্যারঃ হুম । এখন কোন বাসের সাথে কথা বলেছিলেন যেন ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ আমি বলিনি । কল্যান স্যারকে গতকাল বলেছিলাম কোন একটা বাসের
কাউনটারের সাথে কথা বলতে । স্যার দুটো বাস কাউনটারের সাথে কথা বলেছেন । ওরা বলেছে
পারসনাল বাস ভাড়া নিলে সকাল ১০ টার আগে কেউ আসতে রাজি হবে না ।
রাখিব স্যারঃ মাত্র দুটো বাস কাউনটারে যোগাযোগ করলেই হবে নাকি । যশোর থেকে
ঢাকার কম বাস আছে নাকি ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ এখন দেখি । আজকেই তো একটা ব্যাবস্থা করা লাগবে । পরশু থেকে
প্রতিযোগিতা শুরু । কাল না পৌছাতে পারলে তো অবস্থাই খারাপ হয়ে যাবে ।
রাখিব স্যারঃ কাল ওরা রওনা হলে যদি
অনেক রাত হয়, তাহলে তো পরদিন প্রতিযোগিতায় যাবার সময় সব একদম ঘুমিয়ে যাবে ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ ওদের যেয়েও তো একটু রেস্ট নেয়া লাগবে । নাহলে রাতে ভালো
ঘুম না হলে এমন তো হবেই ।
রাখিব স্যারঃ আচ্ছা যাবে কয়জন ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ ৩৫ জনের মতো ।
রাখিব স্যারঃ আচ্ছা আমি দেখছি কি ব্যাবস্থা করা যায় ।
এদিকে ২য় পিরিয়ড শেষ । সাবিত হেড ডাউন করে শুয়ে থাকতে থাকতে বুঝতেও পারে নি
কখন ঘুমিয়ে পড়েছে । ঘুম ভাঙল সব ছাত্র
ছাত্রীর চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে । দেখল ওর সব ছাত্রছাত্রিরা কম্পিউটার ল্যাব থেকে
চলে এসেছে । সাবিতের পাশে বসে টিফিন খাচ্ছে রাফি আর ওয়াসি । অন্যান্যরা কেউ টিফিন
খাচ্ছে , কেউ আবার আজিজুল স্যার এর বাড়ির কাজ করছে । সাবিতক্কে জাগতে দেখে রাফি ইয়ার্কি করে বলল
,
রাফিঃ গুড মর্নিং । ব্রেক ফাস্ট করবি ?
সাবিত কিছু বলল না । তৃণকে খুঁজছে । রাফিকেও জিজ্ঞাস করতে কেমন অসস্থি
বোধ করছিলো । এদিকে রাতুল ব্যাগের মধ্যে
ইংলিশ বাড়ির কাজের খাতা খুঁজছে । না পেয়ে পাশে বসে থাকা সামিকে বলল,
রাতুলঃ আচ্ছা
আমার ইংলিশ বাড়ির কাজের খাতাটা পাচ্ছি না, দ্যাখ তো তোর কাছে এক্সট্রা কোন খাতা
আছে কি না ।
সামি ব্যাগ খুজল
।
সামিঃ না রে নাই
। শেষ কার কাছে দিসিলি?
রাতুলঃ আমি
কাউকে দিসিলাম বলে তো মনে হয়না ।
সামিঃ যা । আর কারো কাছে পাবি না মনে হয়।
রাতুলঃ তুই এতো Confident নিয়ে কিভাবে বলতেসিস ?
সামিঃ না, আমি যা বলি তাই ই সত্যি হয়, হেহেহে ।
রাতুলঃ ধুর । HW না করলে আবার খবর আছে । একিটা ৩-৪ বার করা লাগবে ।
সামিঃ করবি, সমস্যা কি ।
রাতুলঃ ঝামেলা একটা ।
সামিঃ ল্যাবে তো তৃণ আর সাবিত যায় নি । দ্যাখ ওদের কারো কাছে আছে নাকি ।
রাতুলঃ হুম । ওরা নিয়ে HW করতে পারে । যাই দেখে আসি ।
রাতুল গেলো সাবিতের কাছে ।
সাবিত আমার ইংরেজি খাতা নিসিস কি?
সাবিতঃ না রে । আমি নেই নি । আমার বাড়ির কাজ করাও হয় নি ।
রাতুলঃ তৃণকে দেখসিস?
সাবিত কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল । তারপর বলল,
সাবিতঃ না । আমি সবার খোঁজ খবর নিয়ে বেড়াই না কে কোথায় গেছে কে না গেছে ।
রাতুল ওখান থেকে চলে এলো । দরজা দিয়ে বেরোতেই তৃণর সাথে ধাক্কা খায় রাতুল ।
তৃণঃ উহ ! কি জোরে ধাক্কাটা দিলি?
ফেভিকুল আঠা খাস নাকি?
রাতুলঃ ইয়ার্কি বাদ দিয়ে বল আমার ইংরেজি HW খাতাটা নিসিস নাকি?
তৃণঃ হ্যাঁয় নিসি । ক্যান লাগবে?
রাতুলঃ আপাতত না । তুই যদি করতে চাস তো করতে পারিস খাতা দেখে ।
তৃণঃ আচ্ছা । কালকে খাতাটা ফেরত পাবি
।
রাতুলঃ আরে আরে ! কালকে মানে ? আমার খাতাটা তো আজকেই লাগবে ।
তৃণঃ আচ্ছা যা । আজিজুল স্যার এর ক্লাসে পেয়ে যাবি ।
রাতুল আর কিছু না বলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চলে গেলো নিজের সিটে । তৃণ ক্লাসরুম
থেকে যাবার সময় অহনা ওকে ডাকল ।
অহনাঃ এই তৃণ একটু শোনো না ।
তৃণঃ হুম বল ।
অহনাঃ তুমি ড্রইং প্রতিযোগিতায় নাম দিবা?
তৃণঃ ড্রইং আর আমি?
অহনাঃ কেন? তুমি ভালো আঁকতে পারোনা?
তৃণঃ তুমি কবে আমার ভালো ড্রইং দেখলা?
অহনাঃ ঐযে ক্লাস সেভেনে তুমি তোমার একটা ছবি আকছিলা?
তৃণঃ ওহ! ওটা তো প্রতীক একেছিল ।
অহনাঃ প্রতীক? তুমি যে বলসিলা তুই আকসো না কি করসো?
তৃণঃ প্রতীকতো ওটা পেন্সিল স্কেচ আঁকসিলো আর আমি ওটা রঙ করসিলাম শুধু ।
অহনাঃ ও আচ্ছা । প্রতীককে দেখস?
তৃণঃ না । ওকে দেখিনি । মনে হয় টিফিন আনতে গেসে ।
অহনাঃ কালকে তো অনেকে কয়েকদিনের জন্য ঢাকা যাচ্ছে ।
তৃণঃ আচ্ছা প্রতীক না ম্যাথ এর সিলেকশনে পরীক্ষা দিসিলো? ওকি টেকেনি?
অহনাঃ ওর কি হইসে শোনো । ও ভাবসিল ম্যাথ এ যদি টেকে তাহলে ওখানে যেয়ে ম্যাথ আর
ডিবেট একসাথে করতে দেবে না । তাই ও ম্যাথ করে আর ডিবেট করে নি । কিন্তু ও সিলেকশন
পরীক্ষা দুটোতেই দিতে পারতো । এই বোকামি করার জন্য পস্তাচ্ছে । ও যদি ডিবেটেও
পরীক্ষা দিতো, তাহলে ডিবেটের একজন হয়ে যেতে পারতো ।
তৃণঃ ও আচ্ছা ।
অহনাঃ আচ্ছা, সাবিত কি তোমার সাথে রাগ করসে?
তৃণর মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো । কিছু বলতে পারল না ।
অহনাঃ আচ্ছা ঠিক আছে । বন্ধুত্বের মাঝে একটু আধটু ঝগড়া হয়েই থাকে । আবার ঠিক
হয়ে যাবে ।
তৃণঃ আচ্ছা, আমি তাহলে যাই, আজিজুল স্যার এর HW করা লাগবে ।
অহনাঃ (কপালে হাত ঠেকিয়ে) হায় আল্লাহ! আমিতো করিই নি! আচ্ছা যাও তাহলে আমিও HW করি ।
তৃণ চলে গেলো । অহনাও ব্যাগ থেকে বই খাতা বের করে HW করতে
শুরু করলো ।
লাইব্রেরীর সবাই
টিফিন খাওয়ায় ব্যাস্ত । টিফিন খেতে খেতে কথা বলছে তিথি আর আরিনা ।
তিথিঃ কালকে
তোকে একা যেতে দেবে?
আরিনাঃ হুম ।
দেবে না কেন । তবে আব্বু মেডামকে খালি বলছে মেয়েটাকে দেখে রাইখেন...... । মেয়েটাকে
দেখে রাইখেন ।
তিথিঃ যাবার
আগের দিনই এতো কিছু বলছেন স্যার?
আরিনাঃ হুম ।
কাল সকালে বাসে দেখিস আব্বু আরও কি কি বলে ।
তিথিঃ কি কি
নিয়ে যাবি?
আরিনাঃ কি আর
নেবো । যা যা নেবার দরকার তাই ই নেবো ।
তিথিঃ মোবাইল
নিতে দেবে?
আরিনাঃ হ্যাঁ
কেন দেবে না ।
তিথিঃ
স্মার্টফোন নিতে দেবে নাকি ঐ নোকিয়া ১২০০ নেয়া লাগবে?
আরিনাঃ মনে তো
হয় দেবে ।
তখন লুতফুন্নেসা
মেডাম সবাইকে বলল
লুতফুন্ননেসা
মেডামঃ কি ব্যাপার? আর কতক্ষন লাগবে খাওয়া দাওয়া করতে?
তিথিঃ এইতো
মেডাম প্রায় শেষ ।
এদিকে টিফিন
পিরিয়ড শেষ হবার ঘণ্টা পড়ে গেলো । সবাই ঘোরাঘুরি শেষে ফিরে এলো ক্লাসে । সাবিত
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে । রাফি সবিতকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কাছে এলো ।
রাফিঃ কিরে,
মাথায় হাত দিয়ে বসে আসিস ক্যান?
সাবিতঃ HW করিনাই
রে । স্যার যে কি পানিশমেন্ট দেবে আল্লাহই জানেন ।
রাফিঃ করিস নাই
ক্যান? এইডা তো তোর দোষ ।
সাবিতঃ সেটা
ঠিক, কিন্তু সবটা তো জানিসই কি হইসিল আমার সাথে । আমি খুব চিন্তায় ছিলাম আজকে
উজ্জ্বল স্যার প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে নিয়ে গেলে প্রিন্সিপ্যাল স্যার কি
বলবেন । শুরুতে তো ভেবেছিলাম তৃণ হয়তো এই কাজ করে নি । এবার তো একদন ও নিজের মুখেই
সবটা স্বীকার করে নিলো ।
রাফিঃ আচ্ছা, যা
হবার হয়ে গেছে বাদ দে । আর প্রস্তুতি নে স্যার আসছেন । সেই সময় তৃণ এসে রাফিকে
ক্লাসরুমের দরজার কাছে নিয়ে গেলো ।
রাফিঃ কিরে,
কিছু বলবি?
তৃণঃ (রাফির
হাতে একটা খাতা ধরিয়ে দিয়ে) এটা নিয়ে বেঞ্চে যা আর যা বলছি সব শোন ।
রাফি সবটা শুনল ।
রাফিঃ তুই আসলেই
সাবিতের খুব ভালো বন্ধু ।
তৃণঃ এখন খাতাটা
নিয়ে যা, স্যার প্রায় চলে আসছেন ।
সাবিত যেয়ে
বেঞ্চে চলে গেলো । তৃণও যেয়ে বেঞ্চে বসে পড়লো। একটু পড়ে আজিজুল স্যার এসে হাজির ।
সবাই দাঁড়িয়ে
স্যারকে সালাম জানালো । স্যারও সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন ।
আজিজুল স্যারঃ
আপনারা সবাই ভালো আছেন তো?
সবাইঃ জী স্যার
।
আজিজুল স্যারঃ HW করেছেন,
নাকি করানো লাগবে?
বেশিরভাগ
ছাত্রছাত্রী বলল জী স্যার । মাঝখান থেকে ৪-৫ জন কিছুই বলল না ।
আজিজুল স্যারঃ
ঠিক আছে । এবার যারা HW করেননি, তাদের চেহারাটা দেখবার আগে শাস্তিটা দিয়ে নেই ।
শাস্তিটা হল...............পরের ক্লাসে তোমরা A Rainy Season Composition টা ৫ বার করে লিখে আনবে, সাথে আজকে নতুন যেটা করতে দেবো সেটাও ৫ বার করে
লিখে আনবে আর গতকাল যেতা ছিল, সেটা ১০ বার করে লিখে আনবে ।
তৃণঃ (বাপরে
বাপ) এ কি শাস্তি দিলো স্যার!
আজিজুল স্যারঃ
এবার সেই মহান ব্যাক্তিগুলো একটু দাঁড়ান তো দেখি যারা HW করেন
নি ।
৬ জন দাঁড়ালো ।
এদের মধ্যে সাবিত আর তৃণও ছিল ।
রাফিঃ কিরে, তুই দাঁড়াচ্ছিস কেন ?
সাবিতঃ আমি HW করিনি ।
রাফিঃ (খাতা খুলে সাবিতের সামনে ধরে) এই যে তোর HW । তোর খাতা দেখেই
তো আমি করলাম ।
সাবিত কিছুক্ষণ অবাক হয়ে খাতার দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর বসে খাতাটা হাতে নিয়ে
রাফিকে বলল,
সাবিতঃ এটা তো আমার হাতের লেখা না, আর আমি তো HW করিই নি । তাহলে কে করে
দিলো?
তৃণ এক মুহূর্তের
জন্য পিছু ফিরে তাকাল । রাফিকে যা বলেছে সেটা করেছে কিনা দেখবার জন্য যখন দেখল
সাবিত বসে আছে, তখন আবার সামনের দিকে তাকাল ।
রাফিঃ কে করেছে
আমি কিভাবে বলব? আমি তোর খাতা দেখে করেছি এটুকুই জানি ।
সাবিতঃ আর আমি
যে কারো করাটা নিজের করা হিসেবে স্যারকে দেখাব না এটাও আশা করি তুই জানিস । বলেই
সাবিত আবার দাঁড়িয়ে গেলো । আজিজুল স্যার সাবিতকে দাঁড়াতে দেখে সাবিতের দিকে ভ্রু
কুঁচকে বলল,
আজিজুল স্যারঃ
কি ব্যাপার? আপনি দেরি করে দাঁড়ালেন কেন?
সবার মতো তৃণও
তখন সাবিতের দিকে তাকাল । এরপর তৃণ রাফির
দিকে ইশারা করে মাথা নাড়াল । সাবিত শুধু হাত নারিয়ে ইশারা করে বোঝাল, “পড়ে
বলছি।”
সাবিতঃ স্যার
আমি ভেবেছিলাম আমি করেছি, পড়ে দেখলাম করিনি ।
আজিজুল স্যার আর
কিছু বললেন না । ডাইরি বের করে সবার রোল লেখা শুরু করলেন ।
এদিকে ফুটবল
মাঠে খেলার ফাঁকে একটুখানি আড্ডা দেয়ায় ব্যাস্ত শাহরিয়ার সোহান, আরেফিন অনিক,
রিদু, জিম, শাওন, মাসুদ ।
মাসুদঃ কালকে তো
সব ঢাকা যাইতেসে ।
রিদুঃ চল মাসুদ,
ব্যাগ গুছায় আমরাও চইলে যাই ।
মাসুদঃ হ, পড়ে
তোর খেলা তো তোর আব্বায় খেইলা দিয়া যাইবো ।
আরেফিন অনিকঃ
বাদ দে । আর কয়দিন যে এইরকম কষ্ট করতে হবে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
আজকে তো ৪ তারিখ । এরপর কালকে আর পরশু খালি প্র্যাকটিস করতে হবে । তারপরের দিন
থেকে তো ম্যাচ ই শুরু হবে ।
জিমঃ ফাউ কথা
বাদ দে তো । এখন একটু মজা করি চল ।
শাওনঃ এই আসলেই,
কেউ গান ধর ।
মাসুদঃ এই শোন,
আমি তোদের সামনে মাঝে মাঝেই গান গাইসি, জিমরে প্রায়ই টয়লেটে গান গাইতে দেখা যায়,
রিদু তো পড়ার ফাঁকে গান গায়ই, শাওনের কথা না হয় বাদই দিলাম, ও তো ২৪ ঘণ্টার ২৩
ঘণ্টা ৫৯ মিনিটই গান শোনে, কিন্তু সোহানের মুখে কখনও গান শুনি নাই, আচ্ছা চল,
সোহানের মুখে একটা গান শুনি ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
আমি? আমি তো প্রায়ই গান গাই । তোরা না শুনলে আমার কি?
মাসুদঃ আমি সবার
নাম কিন্তু নিসি, একজনের নাম কিন্তু নেই নাই । বলতো কে?
জিমঃ অনিকের নাম
নিস নাই ।
মাসুদঃ কেউ বলতে
পারবি কেন?
রিদুঃ আমরা ওর
মুখে কখন গান গাইতে শুনি নাই ।
জিমঃ এইতো, অনিক
শুরু কর ।
আরেফিন অনিকঃ
ভাই শেষ পর্যন্ত তোরা আমার মতো ফালতু গায়ককে বাইছা নিলি?
শাহরিয়ার সোহানঃ
আরে গা গা । এইখানে সবাই ফালতু গায়কই । কেউই ভালো গাইতে পারি না ।
আরেফিন অনিকঃ
ভাই তোরা সিরিয়াসলি বলতেসিস তো?
এদিকে আজিজুল
স্যার এর ক্লাস শেষ । রাখিব স্যার এর ক্লাস ছিল কিন্তু ব্যাস্ততার কারণে সেদিনও
স্যার আসতে পারেন নি । অনেকেই সেই সময় ক্লাস থেকে বাইরে চলে গেলো । বারান্দায়
তাজের সাথে কথা বলছিল শেখ সোহান ।
শেখ সোহানঃ তুই
সামিউল স্যার এর কাছে পরিস না?
তাজঃ হ পড়ি । তো
কি হইসে?
শেখ সোহানঃ
তোদের ব্যাচে আর জায়গা আছে?
তাজঃ ৮ জন পড়ি ১
বাসায় । আর তো এমনিতেই নেওয়ার জায়গা নাই ।
শেখ সোহানঃ অন্য
কোন ব্যাচে ফাঁকা আছে কি?
তাজঃ তা তো কইতে
পারি না ।
শেখ সোহানঃ
স্যাররে একটু জিজ্ঞাস করিস । প্রতীকরে কইসিলাম, তা ও আর কিছু কয় নাই ।
ঐ সময় প্রতীক
এসে হাজির ।
প্রতীকঃ কিরে? আমার
নামে কি বলতেসিস রে?
শেখ সোহানঃ
কিছুই না ভাই ।
প্রতীকঃ Something fishy! বল কি বলতেসিলি?
শেখ সোহানঃ আরে
ভাই কিছুই না । এখান থেকে যা নাইলে ডিনেমব্রস এর মতো করে একটা লাত্থি খাবি
কিন্তু ।
প্রতীকঃ ডিম
অ্যান্ড রোজ? মানে ডিম আর গোলাপ? এ আবার কেমন কথা?
শেখ সোহানঃ আরে
ভাই ওটা ডিম অ্যান্ড রোজ না ওটা ডিনেমব্রস । একজন বক্সিং প্লেয়ার ।
প্রতীকঃ বক্সিং
প্লেয়াররা আবার লাত্থিও মারে? নাকি পা দিয়ে নতুন বক্সিং এর উদ্ভব হইসে?
শেখ সোহানঃ
এ তুই ভাগ তো ।
প্রতীকঃ গেলাম
তাইলে । তোর এর ডিম আর গোলাপের গল্পটা পড়ে শুনবোনে ।
প্রতীক চলে গেলো
।
শেখ সোহানঃ তাজ
তুই দেখিস ডাবলু ডাবলু রেস্লিং?
তাজঃ না ভাই ।
আমার ওইসব রেস্লিং দেখার টাইম নাই । তুই তো ওইসব দেখিস আর সারাদিন কি সব লাত্থি
মাইরা বেরাস ।
শেখ সোহানঃ
জানিস, আমি পা মাথা পর্যন্ত তুলতে পারি ।
তাজঃ তুই তো কত
কিছুই পারিস । কয়েকদিন পর বলবি তুই পা
আইফেল টাওয়ারের ওপর পর্যন্ত তুলতে পারিস ।
শেখ সোহানঃ
সত্যি পারি, দেখবি, এই হাসিব একটু দাড়া তো ।
পাশে দাঁড়িয়ে
থাকা হাসিবকে একথা বলল শেখ সোহান ।
হাসিবঃ না ভাই,
তোর ঐ ফালতু লাত্থি আমার ওপর প্রয়োগ করিস না ।
শেখ সোহানঃ আরে
দাড়া না একটু । তোর গায়ে লাগাবো না ।
হাসিবঃ আচ্ছা
আমি তাইলে একটু দূরে দাঁড়াই ।
হাসিব একটু দূরে
দাঁড়ালো । শেখ সোহান যেই ডান ডান দিকে ঘুরে ডান পা তুলে পা ডান থেকে বামে নিতে
যাবে, সেই সময় হাসিব কেন যেন সামনের দিকে হেলে পড়লো । আর শেখ সোহানের পা প্রচুর
জোরে লাগলো হাসিবের, মুখে । হাসিবের মুখ দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করলো । ওর নিথর দেহ
মাটির ওপর পড়ে গেলো । তাজ আর শেখ সোহান সাথে সাথে হাসিবের কাছে যেয়ে বসে বার বার
হাসিবের নাম ধরে ওকে ডাকা শুরু করলো কিন্তু হাসিব কোন সাড়া দিলো না । একটু পর
ওখানে চলে এলো ক্লাসের আরও অনেকে । পাশের ক্লাসে তখন ছিলেন আশিকুল স্যার । আশিকুল
স্যার তাড়াতাড়ি প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে কল করে আম্বুল্যান্স ডাকলেন । ঐ জায়গায়
প্রচুর ভীর জমে গেলো । তাড়াতাড়ি আম্বুল্যান্স এসে তুলে নিয়ে গেলো হাসিবকে । সাথে
গেলো তাজ আর শেখ সোহান । আশরাফুল স্যারও ঐ
জায়গায় উপস্থিত ছিলেন । তিনি তৌফিক এর কাছে যেয়ে সবটা জানতে চাইলেন ।
তৌফিকঃ স্যার
আমি দরজার কাছে ছিলাম । আমি শুধু দেখসি শেখ সোহান ওকে লাত্থি দিসে । আর কেন দিসে
তা কিছু জানি না।
আশরাফুল স্যারঃ
ঐ সময় পাশে কেউ ছিল কি?
তৌফিকঃ আমি শুধু
তাজকে দেখসিলাম ।
আশরাফুল স্যারঃ
কোথায় সেই তাজ আর শেখ সোহান?
তৌফিকঃ ওরা
দুজনেই গেছে হাসিবের সাথে ।
আশরাফুল স্যারঃ
ওরা আসলে আমার সাথে দেখা করতে বলবে ।
তৌফিকঃ ঠিক আছে
স্যার ।
এদিকে মাঠে বসে
গল্প করছিলো মাসুদ, শাওন, শাহরিয়ার সোহান, জিম, রিদু, আরেফিন অনিক । আরেফিন অনিক
গান গাওয়া শেষ করলো ।
জিমঃ বাহ ভাই,
অস্থির ছিল ।
রিদুঃ এই
অ্যাম্বুলেন্স আসছিলো ক্যান রে?
মাসুদঃ আমিও তো
অনেকক্ষণ ধইরে তাই দেখতেসিলাম । আমাদের ক্লাসরুমের সামনে প্রচুর ভীর ছিল ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
কাকে দেখলাম মোটা করে একজনকে অ্যাম্বুলেন্স এ করে নিয়ে গেলো । সাথে আবার তাজ আর কে
একটা গেলো ।
মাসুদঃ তাজরেও
দেখসিস?
শাহরিয়ার সোহানঃ
হুম ।
মাসুদঃ মনে
হচ্ছে কিছু একটা হইসে ।
যুবায়েরঃ
গতকালকেও স্কুলে কাহিনী হইসিল আবার আজকে হইল ।
জিমঃ ক্যান?
গতকাল আবার কি হইসিল?
যুবায়েরঃ
সাবিতের ব্যাগের মধ্যে নাকি উজ্জ্বল স্যার Love letter পাইসে । ও বলসে তৃণ নাকি ইয়ার্কি
করসে । আজকে সকালে তৃণ যেয়ে আবার সব স্বীকারও ক্করসে ।
রিদুঃ (ইয়ার্কি
করে) তোর জন্য তো এইসব স্বাভাবিক ।
যুবায়েরঃ মানে?
রিদুঃ (ইয়ার্কি
করে) তোর ব্যাগ খুললে যে কয়টা Love letter পাওয়া যাবেনে আল্লাহই জানেন ।
যুবায়েরঃ
হুর!!!!!!!!!!! আমি তোর মতো স্যাসরা নাকি ।
এদিকে হাসিবকে
নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে । হাসপাতাল স্কুলের সামনেই । হাসপাতালের বেড এ
অক্সিজেন মাস্ক মুখে দিয়ে শুয়ে আছে হাসিব । জ্ঞান ফেরেনি । ডাক্তার প্রথমে হাসিবের
হ্রিদস্পন্দন দেখলেন । এরপর গালের যেখানে লাত্থি লেগেছে সে যায়গায়ও দেখলেন ।
হাসিবের পাশে ছিল আশিকুল স্যার, তাজ আর শেখ
সোহান ।
আশিকুল স্যারঃ
ডাক্তার কি অবস্থা ওর?
ডাক্তারঃ খুব
একটা ভালো না । ওর হ্রিদস্পন্দন খুবই ধীরে হচ্ছে ।
আশিকুল স্যারঃ
জ্ঞান কখন ফিরবে ডাক্তার?
ডাক্তারঃ জ্ঞান
যে কখন ফিরবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না । তবে আজ মনে হয় জ্ঞান ফিরবে না । যা বাজে
অবস্থা দেখছি । আবার............
বলেই ডাক্তার
থেমে গেলেন । যেন এমন একটা কথা, যা বলা
খুব কষ্টকর ।
আশিকুল স্যারঃ আবার
কি ডাক্তার?
ডাক্তার কিছু
বলেন না ।
আশিকুল স্যারঃ
ডাক্তার চুপ করে থাকবেন না । আবার কি হতে পারে বলুন ডাক্তার ।
ডাক্তার একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ।
ডাক্তারঃ চিন্তা
করবেন না আল্লাহের কাছে দোয়া করুন যেন অমনটা না হয় আর ওর জ্ঞান ফিরে আসে ।
শেখ সোহানঃ
তাহলে সেই আবারের মানে কি ওর জ্ঞান কখনই নাও ফিরতে পারে ।
ডাক্তার চমকে
গেলেন । কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না ।
ডাক্তারঃ দেখ
এটা অস্বাভাবিক কিছু না । তারপরেও দোয়া করতে থাক তোমাদের বন্ধুর জন্য । আর আপনারা
চাইলে এখন যেতে পারেন ।
আশিকুল স্যারঃ
তোমরা তাহলে এখন চলে যাও । ওর Parentsরা আসছেন, আমি উনাদের সাথে কথা বলে
তারপর আসছি ।
তাজ আর শেখ
সোহান আর কথা না বলে চলে এলো ।
শেখ সোহানঃ ধুর,
কি করতে কি হয়ে গেলো আমি নিজেও বুঝত্তে পারলাম না ।
তাজঃ আমি তোরে
আগেই মানা করসিলাম । তুই না শুনে দেখাইলিই-ই । এখন বোঝ । তোর তো টিসি হয়ে গেলো প্রায় ।
শেখ সোহানঃ
কিন্তু আমি তো ইচ্ছা করে কিছু করিনি । তুইও তো দেখসিলি ও কত পিছে সিলো । ঐ সময় যদি
এভাবে সামনের দিকে চলে আসে, তাহলে ঐ সময় আমার করার কি থাকে? আমার থামানোর মতো
অবস্থাও তো ছিল না ।
তাজঃ বাদ দে ভাই
। যা হওয়ার হইসে, এখন ক্লাসে চল ।
ক্লাসে তখন
আশরাফুল স্যার ছিলেন । ক্লাস এটা সেই রাখিব স্যার এর গ্যাপ ক্লাসই, আশরাফুল স্যার
থেকে গেলেন । শেষ হতে মিনিট পাঁচেক বাকি ।
আশরাফুল স্যারঃ
তোমরা একটু ক্লাস ফাঁকা পেলেই শুরু করে দাও কোলাহল । বেশি ইয়ার্কি করো তোমরা ।
আজকে দেখলা তো তোমাদের এই বন্ধুর কি অবস্থা হল । ইয়ার্কি ভালো, কিন্তু অতিরিক্তি
ইয়ার্কি ভালো না । এমন ইয়ার্কি ভালো না যাতে অন্য কারো প্রাণনাশের সম্ভাবনা থাকে । তোমাদের আশিকুল
স্যার এর কাছে ফোন দিয়েছিলাম । উনি বললেন ছেলেটার আজকে জ্ঞান ফিরবার সম্ভাবনা খুবই
কম । এমনকি বলতে খারাপ লাগলে এটাই সত্য যে ওর আর কখনো জ্ঞান নাও ফিরতে পারে ।
সবাই এই কথা
শুনে খুব ভয় পেয়ে গেলো । ঐ সময় ক্লাসরুমের দরজার সামনে এসে হাজির তাজ আর শেখ সোহান
।
তাজঃ স্যার
আসবো?
আশরাফুল স্যারঃ
কারা আপনারা?
তাজঃ স্যার আমরা
হাসিবের সাথে গেসিলাম ।
আশরাফুল স্যারঃ
ওর নাম হাসিব?
তাজঃ জী স্যার ।
আশরাফুল স্যারঃ
আপনারা কি তাজ আর শেখ?
তাজঃ জী স্যার ।
আশরাফুল স্যারঃ
আপনারা আমার সাথে চলেন ।
আশরাফুল স্যার
দরজার কাছে এসে ক্লাসরুমের সবার দিকে আবার তাকালেন ।
আশরাফুল স্যারঃ
আপনারা কেউ আর বাইরে বেরোনোর দরকার নেই, ক্লাস শেষ হওয়ার মাত্র ১-২ মিনিট আছে,
আপনারা ক্লাসেই থাকেন ।
বলেই আশরাফুল
স্যার তাজ আর শেখ সোহানকে নিয়ে চলে গেলেন টিচার্স রুমের সামনে ।
আশরাফুল স্যারঃ
লাত্থি মারসে কে?
শেখ সোহানঃ
ইয়ে...মানে স্যার আমি ।
আশরাফুল স্যারঃ
আপনি যে কাজটা করসেন, এই কাজটা যদি এখন একটা মার্ডার এ পরিণত হয় কি করবেন আপনি?
হাসিবের এখনও জ্ঞান ফেরেনি । আদৌ ফিরবে কি না ডাক্তাররা কিছুই বলতে পারতেসে না ।
তাজঃ কিন্তু
স্যার আমি কি করসি?
আশরাফুল স্যারঃ
আপনি ওর পাশে ছিলেন । আপনার তো ওকে বাধা দেয়া উচিত ছিল ।
তাজঃ স্যার আমি
ওকে না করসিলাম ।
আশরাফুল স্যারঃ
কিভাবে না করলেন যে ও এই কাজটা করে বসলো?
তাজঃ
কিন্তু............
আশরাফুল স্যারঃ
আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা । আপনারা আপনাদের বাবাকে কালকে আনবেন । আমি আনতে
বলিনি, প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলেছেন ।
তাজঃ কিন্তু
স্যার.........
আশরাফুল স্যারঃ
(হালকা রেগে) এই! মুখে মুখে কথা বলবি না । বেশি আদর করে করে মাথায় উঠে গেসিস তোরা
না ! ডাকা লাগবে না । নাম্বার খুজে আমি তোদের বাবাকে ডেকে আনবো । খালি আলতু ফালতু
ইয়ার্কি করিস না !
আশরাফুল স্যার
এই বলেই চলে গেলেন । তাজ আর শেখ সোহান আর কিছু না বলে ক্লাসে ফিরে এলো ।
ক্লাসে এসে দেখল
হাসান স্যার আর রুবাইয়াত মেডাম । কথা বলছেন । ক্লাস ছিল রুবাইয়াত মেডামেরই । হাসান
স্যার হাসিবের খবর নিতে এসেছেন । তাজ আর শেখ সোহান দরজার সামনে এলো ।
তাজঃ আসবো
মেডাম?
হাসান স্যারঃ
হ্যাঁ আসো আসো । তোমাদেরই অপেক্ষা করছিলাম ।
তাজ আর শেখ
সোহান ভেতরে এলো ।
হাসান স্যারঃ
আচ্ছা সত্যি করে বলতো তখন আসলে কি হয়েছিলো?
তাজ আর শেখ
সোহান কিছুই বলল না ।
হাসান স্যারঃ ভয়
নেই । তোমরা সত্যিটা বল ।
তাজ এবার বলা
শুরু করলো এবং পুরো ঘটনাটা সবার সামনে হাসান স্যার এর কাছে খুলে বলল ।
হাসান স্যারঃ
অদ্ভুত? তাহলে তুমি কিছুই করোনি ?
তাজঃ না স্যার ।
হাসান স্যারঃ
তাহলে তোমার নাম প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বললেন কেন আশরাফুল স্যার?
তাজঃ আমি সোহান
কে কেন না করিনি এই দোষে ।
হাসান স্যারঃ
আচ্ছা, কাল এসো প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে তখন স্যারকে সব খুলে বোলো । আজ স্যার
খুবই ব্যাস্ত বলে কিছু করতে পারছেন না ।
তাজঃ কিন্তু
স্যার আমি তো কিছুই করিনি । আমার আব্বুর কাছে যদি ফোন দেয় আব্বু তো শুধু শুধু ভুল
বুঝবে ।
হাসান স্যারঃ
আচ্ছা তুমি সিটে যাও, আমি এ ব্যাপারে আশরাফুল স্যার এর সাথে কথা বলব ।
তাজ সিটে চলে
গেলো ।
শেখ সোহান কিছু
বলতে পারলো না । দোষ তো ওর আছেই । হাসান স্যার কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন ।
কিছুক্ষণ ক্লাসরুমে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করবার পর হাসান স্যার কথা বললেন ।
হাসান স্যারঃ
তোমাকে যে আমি কি বলব টার ভাষা খুজে পাচ্ছি না ।
শেখ সোহান হাত
দিয়ে নাকের ঘাম মুছল । কিছু বলল না ।
হাসান স্যারঃ
কেন করলা এটা শেখ সোহান? তোমাকে আমি এতো ভদ্র বলি এতো ভালবাসি তাও তুমি এরকম করলে?
শেখ সোহান কিছু
বলতে পারে না । শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে ।
হাসান স্যারঃ
তুমি কি জানো এর জন্য তোমাকে রেড টিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে?
আবার কিছুক্ষণ
পিন পতন নিরবতা ।
হাসান স্যারঃ
সিটে যেয়ে বসে পড় । তোমাকে বলার কিছু নেই আমার ।
শেখ সোহান সিটে
যেয়ে বসে পড়লো । কেউ শেখ সোহানের সাথে কোন কথা বলল না ।
হাসান স্যারঃ
হ্যাঁ মেডাম যেটা বলছিলাম । আপনি কাল ওদের সাথে কুর্মিটোলায় যেতে কোন সমস্যা নেই
তো?
রুবাইয়াত মেডামঃ
না স্যার, কোন সমস্যা নেই ।
হাসান স্যারঃ
আমি আমাকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার যেতে বলেছিলেন । কিন্তু আমার ছাত্রছাত্রিদের কথা
ভেবে গেলাম না । ওদের সিলেবাস তো শেষ করানো লাগবে । এদের কথা কি যে বলব । এদের
জন্য যান প্রাণ দিয়ে কষ্ট করি, অথচ এদের কোন চেষ্টাই নেই ।
রুবাইয়াত মেডামঃ
আমি আর কি বলব স্যার । বিজিএস পড়ার কোন শখই এদের নেই । আমিও তো কম কষ্ট করি না ।
সামনে তো মডেল টেস্ট হবার কথা ছিল, সেটা আবার এপ্রিলে নিয়ে গেছেন রাখিব স্যার ।
এখন দেখা যাক কি হয় এদের মডেল টেস্ট এর রেজাল্ট ।
হাসান স্যারঃ
আচ্ছা মেডাম, আমি তাহলে আসি । ছেলেটাকে একটু হাসপাতালে যেয়ে দেখে আসি । আপনার
ক্লাসের ডিস্টার্ব করলাম ।
রুবাইয়াত মেডামঃ
না স্যার সমস্যা নেই । আমিও দেখি ক্লাস শেষে সময় করে ছেলেটাকে একটু দেখতে যাব ।
হাসান স্যার
এরপর সব ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকালেন ।
হাসান স্যারঃ
সবাই যাবার সময় একটা কথা বলে যাই । ইয়ার্কি করা ভালো । আর তোমাদের এই বয়সটা
ইয়ার্কি করারই বয়স । কিন্তু এমন ইয়ার্কি ভালো না যাতে আরেকজনের মৃত্যু ঝুকি থাকে ।
বলেই হাসান
স্যার চলে গেলেন । রুবাইয়াত মেডাম ক্লাস নেয়া শুরু করলেন ।
এদিকে ফুটবল
প্র্যাকটিস শেষে সবাই ওয়াশরুমে এসে জার্সি-হাফ প্যান্ট চেঞ্জ করছে আর ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছে । শাওন তখন বেসিং এর সামনে
দাঁড়িয়ে মুখ ধুচ্ছিল । আরেফিন অনিক তখন ওয়াশরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরোল ।
আরেফিন অনিকঃ
কিরে? এতো তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করা শেষ ?
শাওনঃ হ । চল ।
আরেফিন অনিক
বেসিং এর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো । এরপর বলল,
আরেফিন অনিকঃ
দাড়া ওরা চেঞ্জ করে বের হোক । তারপর
একসাথে যাই ।
ওদিকে হাসপাতালে
আশিকুল স্যার ফোনে বাসায় কথা বলছিলেন ।
আশিকুল স্যারঃ
না না । আচ্ছা তুমি ফ্রিজে দ্যাখো মুরগীর মাংসের প্যাকেটটা আছে, ওটা রান্না করো না
হয় । গরুর মাংস আমার ভাই খান না ।
তখন হাসান
স্যার ওখানে এলেন ।
আশিকুল স্যারঃ
আচ্ছা আমি পড়ে ফোন করছি । তুমি ওদিকটা সামলে নিয়ো আমি স্কুল শেষ করে আসছি । আচ্ছা
।
হাসান স্যারঃ কি
ব্যাপার স্যার? কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?
আশিকুল স্যারঃ
না স্যার তেমন কিছু না । আমার বড় ভাই ৪ বছর পর আমার বাসায় আসছেন তো তাই ।
হাসান স্যারঃ
ছেলেটার কি অবস্থা?
আশিকুল স্যারঃ
খুব একটা ভালো না স্যার । ওর নাড়ির স্পন্দন খুবই কম । মাথায় আঘাত লেগেছে তো ।
ডাক্তার বলেছেন তাও মাথার পেছনের দিকে লাগেনি, নাহলে কোমায় যেতেও পারতো ছেলেটা ।
হাসান স্যারঃ ওর
মা বাবা এখনও আসেন নি?
আশিকুল স্যারঃ
উনারা তো বলেছেন আসছেন ।
হাসান স্যারঃ
আপনি তো অনেকক্ষণ ধরেই এখানে আছেন, সমস্যা হলে চলে যেতে পারেন । আমি এখানে আছি ।
আশিকুল স্যারঃ
সমস্যা নেই স্যার । তাছাড়া খুব বেশিক্ষন হয়ও নি এখানে এসেছি ।
হাসান স্যারঃ
আপনারও দেখছি সমস্যা । আজ মেহমান আসছে । কাল তো আপনার যাওয়া লাগবে ।
আশিকুল স্যারঃ
সমস্যা নেই । আমার ভাই আজকেই আবার চলে যাবেন ।
হাসান স্যারঃ ও
আচ্ছা ।
ঐ সময় হাসপাতালে
এলেন হাসিবের মা বাবা । হাসিবের মায়ের
চোখে পানি ।
হাসিবের বাবাঃ
স্যার আমার ছেলেটা কোথায়?
আশিকুল স্যারঃ
এই যে, এই রুমে আছে । কিন্তু এখন ভেতরে যাবেন না । ডাক্তার বারণ করেছেন । হাসিবের
মাঃ আমার ছেলেটা ভালো হয়ে যাবে তো স্যার?
হাসান স্যারঃ
বিচলিত হবেন না । ধৈর্য ধরুন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করুন । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
হাসিবের বাবাঃ
(হালকা রেগে) আর সেই সোহান নামের ছেলেটা কোথায় যার জন্য আমার ছেলের আজ এই অবস্থা?
হাসান স্যারঃ সে
আছে, ক্লাসে, কিন্তু, আপনাকে কে বলেছে ও এই কাজ করেছে?
হাসিবের বাবাঃ
আমাকে আশরাফুল স্যার ফোন করে সব বলেছেন । ঐ ছেলেটাকে আমি ছাড়বো না ।
হাসান স্যারঃ
দেখুন এতো রাগবেন না । স্কুল এই ঘটনার
একটা মীমাংসা করবে । আপনি দয়া করে কোন ঝামেলা করবেন না ।
হাসিবের বাবাঃ
আমি তো ঐ ছেলেটাকে ছাড়বো না । দরকার হলে পুলিশ ডাকবো ।
আশিকুল স্যারঃ
শান্ত হন আপনি । আপনার ছেলের এই
অবস্থা বলে আপনি এসব কথা বলছেন । চিন্তা
করবেন না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
হাসিবের বাবা আর কিছু বললেন না ।
এদিকে রুবাইয়াত
মেডামের ক্লাস শেষ । মেডাম রুম থেকে চলে যাবার পড়েই ক্লাসরুমে চলে আসে ফুটবল
প্লেয়াররা । কাল যারা ঢাকা যাবে ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতার জন্য তারাও চলে এসেছে ।
লাল লাবিব এসে খাতা আর কলম নিয়ে বসে পড়লো বেঞ্চের ওপর । পাশে ছিল আরিফ ।
আরিফঃ কিরে লাল,
কাল যাচ্ছিস?
লাল লাবিবঃ
হ্যাঁ । সকাল ৬ টায় বাস ।
আরিফঃ আজকে কেমন
কাটল লাইব্রেরীতে?
লাল লাবিবঃ ভালো
। আচ্ছা একটু আগে অ্যাম্বুলেন্স এসেছিলো কেন?
আরিফঃ ঐ শেখ
সোহান যে মাথার ওপর পা তুলে সবাইকে দেখায় সেটা সেখাতে গিয়ে হাসিবের মাথায় লেগেছে
খুব জোরে । হাসিবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এসেছিলো ।
লাল লাবিবঃ কি
অবস্থা ওর এখন?
আরিফঃ কি জানি ।
আশরাফুল স্যার তো বলল খুব একটা ভালো না ।
লাল লাবিবঃ ও ।
আরিফঃ কি ক্লাস
রে এখন?
লাল লাবিবঃ কি
জানি । খেয়াল নেই ।
পেছনের বেঞ্চে
বসে ছিল রাতুল ।
আরিফঃ এ রাতুল,
এখন কি ক্লাস রে?
রাতুলঃ সি এস ।
আরিফঃ সি এস
মানে? কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা?
রাতুলঃ হ্যাঁ ।
লাল লাবিবঃ
স্যার আজকে আসবে না । গ্যাপ ক্লাস ।
রাতুলঃ কেন?
লাল লাবিবঃ
স্যার কালকে ঢাকা যাবেন তো তাই কাল যেসব স্যাররা ঢাকা যাবেন উনারা আজকে ব্যাস্ত ।
এজন্য স্যার আজকে আসবেন না ।
এদিকে হঠাৎ
সাকিব ক্লাসরুমে এলো । তুষার সাকিবকে দেখে ওর কাছে এলো ।
তুষারঃ কিরে
সাকিব? তোর কি অবস্থা? তোর তো দেখাই পাওয়া যায় না
।
সাকিবঃ আর বলিস
না । কাজে গেসিলাম ।
তুষারঃ গার্ল
ফ্রেন্ড খুজতে?
সাকিবঃ আমি কি
তোর মতো?
তুষারঃ তুই তো
সেই পড়তেসিস । এইবার তো তুই ফার্স্ট হইয়া যাবিরে ।
সাকিবঃ দ্যাখ
তুষার, এই ধরনের কথাবার্তা কিন্তু আমার ভালো লাগে না ।
তুষারঃ তা কি
কাজে ব্যাস্ত ছিলি বলা যাবে না?
সাকিবঃ আরে
রাখিব স্যার আমাকে ডাকসে কালকে যারা যাবে ওদের একটা লিস্ট করার জন্য ।
তুষারঃ স্যার
তোকে ডাকসে ক্যান? তুই যাচ্ছিস?
সাকিবঃ না ।
তুষারঃ তাইলে?
সাকিবঃ স্যার
বলল যারা যাচ্ছে ওরা তো প্র্যাকটিস করায় ব্যাস্ত, তাই আমাকে ডাকলেন ।
তুষারঃ ও আচ্ছা
।
সাকিবঃ ঢাকায়
গেলে রিকের সাথে দেখা হবে তোদের ।
তুষারঃ হুম ।
সাকিবঃ ঐ
শয়তানটা হঠাৎ করেই চলে গেলো । আগে থেকে আমাদের বলেও নাই ।
তুষারঃ হ্যাঁ রে
।
এদিকে শেখ সোহান
ক্লাসরুমের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে । আকাশ হালকা মেঘলা । মৃদু বাতাস হচ্ছে ।
শেখ সোহানের বোন সেতু । দুজনে একই ক্লাসে
পড়ে । সেতু শেখ সোহানের কাছে এলো ।
সেতুঃ তুই কেন
এমন করলি?
শেখ সোহানঃ তুই
আবার আসছিস কেন? যা ক্লাসে যা । আমাকে একা থাকতে দে ।
সেতুঃ বাসায়
যেয়ে কি বলবি তুই?
শেখ সোহানঃ আমি
বাসায় যেয়ে কি বলব জানি না । কিন্তু তুই কুটনামি করে আবার এক্সট্রা কিছু বলিস না ।
সেতুঃ দ্যাখ
সোহান, এখন ঝগড়া করার সময় না । অন্যান্য সময় ঝগড়া করি সেটা আলাদা কথা । কিন্তু এখন
ঝগড়া করার...............
শেখ সোহানঃ (সেতুর কথা শেষ না হতেই) তুই যাবি?
সেতুঃ সোহান তুই
কিন্তু............
শেখ সোহানঃ
(আবার সেতুকে থামিয়ে দিয়ে) এবার কিন্তু তুই মাইর খাবি ।
সেতু আর কিছু
বলল না । কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো । শেখ সোহান আবার অন্যমনস্ক হয়ে
মাঠের দিকে তাকিয়ে রইল । ঠিক তখন কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল । শেখ সোহান ভাবল সেতু
হয়তো? রেগে যেয়ে উলটো ঘুরতে ঘুরতে “তোকে না যেতে বো......” বলতে গিয়েই থেমে গেলো ।
কারণ এটা সেতু না, এটা তৌফিক ।
তৌফিকঃ আরে ভাই,
রাগিস কেন?
সোহান কিছু না
বলে মাঠের দিকে ঘুরে মাঠের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে
তাকিয়ে রইল । তৌফিক ওর দুহাত রেলিং এর ওপর রেখে মাঠের দিকে তাকিয়ে রইল ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর তৌফিক মুখ খুলল ।
তৌফিকঃ আমি
কিন্তু আসল সত্যটা জানি ।
শেখ সোহানঃ কি
সত্য?
তৌফিকঃ তুই যে
হাসিবকে মারসিস এটার আসল সত্য ।
শেখ সোহানঃ
মানে? হাসিবকে আমিই তো মারসি । এর আবার আসল নকল কি?
তৌফিকঃ আসল নকল
না, এখন যা হচ্ছে পুরোটাই নকল ।
শেখ সোহান চমকে
গেলো । তৌফিকের দিকে তাকাল । তৌফিকও শেখ সোহানের দিকে তাকাল ।
শেখ সোহানঃ তুই
কি আমার সাথে নাটক করতেসিস? নাকি ইয়ার্কি করে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছিস?
তৌফিকঃ না । আসল
সত্যটা আমি নিজের চোখে দেখেছি ।
শেখ সোহানঃ কি
সত্য?
তৌফিকঃ
(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) তুই যে ইচ্ছা করে লাত্থি মারিস নি এটা যেমন সত্য, হাসিব ইচ্ছা
করে সামনের দিকে ঝুকেছে এটাও তেমন সত্য ।
শেখ সোহান কিছু
বুঝতে পারে না । কেবল তৌফিকের দিকে তাকিয়ে থাকে
।
তৌফিকঃ আমার
কিছু করার নেই । সত্যিটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না তাই বলিনি ।
শেখ সোহানঃ কিন্তু
ও কেন ইচ্ছা করে এমন করলো যখন ও জানতোই ওর ব্যাথা লাগতে পারে ।
তৌফিকঃ সেটা তো
আমি বলতে পারি না । বাকিটা কালকেই
প্রিন্সিপ্যাল স্যার কি বলে তা শুনে করিস । আমার শুধু এটুকুই তোকে বলার ছিল তাই
বললাম । বাকিটা তুই বুঝে নে ।
বলেই তৌফিক চলে
গেলো । শেখ সোহান কেবল ভাবতে থাকে । কি করবে ও ।
ক্লাস শেষ হতে
আর বেশি সময় নেই । ৫ মিনিট মতো বাকি । লাস্ট বেঞ্চে বসে কথা বলছে ফারিহা ঐশী আর
আসিফ ।
আসিফঃ আজকে যে
কি হল । মনটা কেমন যেন লাগছে । বেচারা হাসিবের যে কি অবস্থা ।
ফারিহা ঐশীঃ থাক
বাদ দে । যা হওয়ার ওদের মধ্যে হয়েছে আমাদের কি । এবার বল কি অবস্থা ।
আসিফঃ আসি রে
খুব প্যারায় । মডেল টেস্ট সামনের মাসে । ক্যামনে যে কি পড়মু খুইজা পাইতেসি না ।
ফারিহা ঐশীঃ এক
কাজ কর । ছাদ থেইকা পড় ।
আসিফঃ তোর ইচ্ছা থাকলে পড় । আমার এতো ইচ্ছা নাই ।
ফারিহা ঐশীঃ
তাইলে বলিস কেন? গতক্কাল আনটি বাসায় আসছিলো । আনটিকে কত বলি মারিয়াকে নিয়ে আসতে আনটি কোনোদিনও আনে
না । তুইও তো আনতে পারিস ।
আসিফঃ আমার সময়
কই । আর মারিয়াও আমি বাসায় থাকলে কোথাও যেতে চায় না । খালি আমারে জালায় ।
ফারিহা ঐশীঃ থাক
। আর মিথ্যা কথা বলিস না । তোরে জালায় মারিয়া এই কথা আমি কোনোদিনও বিশ্বাস করবো না
।
সামনে দাঁড়িয়ে
তখন কৌতুক বলছিল প্রতীক । প্রতিদিন কোন ক্লাসে স্যার না আসলে সবাই চুপ করানোর জন্য
এসব করে প্রতীক ।
ফারিহা ঐশীঃ কি
করতেসে রে প্রতীক?
আসিফঃ আরে কৌতুক
বলতেসে ।
ফারিহা ঐশীঃ
ছেলেটার কি আর কোন কাজ কাম নাই, আউ ফাউ কৌতুক বইলা বেরায় ।
আসিফঃ (ইয়ার্কি
করে) তোদের মাইয়াদের মতো তো আর গিবত কইরা বেরায় না ।
ফারিহা ঐশীঃ
(হালকা রেগে) কি বললি!!!
আসিফঃ আরে না
কিছু না ।
ফারিহা ঐশীঃ না,
তুই কিছু একটা তো বলসিস । বল কি বললি ।
আসিফঃ আরে কিছু
না । জাস্ট ফান করসি ।
ফারিহা ঐশীঃ
কুত্তা...বিলাই...শিয়াল......পটল...ঝিঙা....কুমড়ো পটাশ......
আসিফঃ মাফ চাই!!
আর বলা লাগবো না ।
ঠিক তখন ঘণ্টা
বেজে গেলো ।
আসিফঃ চল যাই ।
ফারিহা ঐশীঃ
কোথায়?
আসিফঃ কি বাসায়
যাবি না?
ফারিহা ঐশীঃ
ঘণ্টা পরসে?
সবাই বেঞ্চ থেকে
ইতোমধ্যে উঠে পরেছে ।
আসিফঃ সামনে
তাকায় দেখতে পারতেসিস না?
ফারিহা ঐশীঃ ও
আচ্ছা । যা তাইলে ।
আসিফঃ
আচ্ছা যা । টাটা ।
এদিকে বাইরে
আরিফ আর লাল লাবিবের সাথে স্কুল গেট দিয়ে বেরচ্ছিল প্রতীক । হঠাত্ত দেখা হয়ে যায়
জিয়ন এর সাথে ।
প্রতীকঃ কিরে
জিউ? কি অবস্থা?
জিয়নঃ এইতো দাদা
। তোমার কি অবস্থা?
প্রতীকঃ আসি রে
কোনোরকম । কালকে তো যাচ্ছিস ঢাকায় ।
জিয়ন হ্যাঁ
দাদা। দোয়া কইর যেন জিততে পারি ।
প্রতীকঃ সবসময়
করি রে সবার জন্য ।
জিয়নঃ আচ্ছা
দাদা তোমাদের ক্লাসের সামনে আজকে খুব ভীর দেখলাম, আবার দেখলাম অ্যাম্বুলেন্স
এসেছিলো । কি হয়েছে?
প্রতীকঃ আর বলিস
না । আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে পা মাথার ওপর তুলতে পারে এই কারসাজি দেখাতে গিয়ে
আরেকটা ছেলেকে লাত্থি মেরেছে । ঐ ছেলেটা এখন হাসপাতালে ভর্তি । অবস্থা নাকি খুব
একটা ভালো না ।
জিয়নঃ ও আচ্ছা ।
প্রতীকঃ আচ্ছা
যা তাহলে ।
জিয়নঃ আচ্ছা
দাদা । মেসেঞ্জারে ম্যাসেজ করবনে ।
প্রতীকঃ আচ্ছা ।
এদিকে হাসপাতালে
তখন হাসিবকে যে রুমে রাখা হয়েছিলো তার বাইরে বসে আছেন হাসিবের বাবা আর মা ।
হাসিবের মা এখনও কাদছেন । হাসিবের বাবা হাসিবের মাকে সামলাচ্ছেন । তখন প্রিন্সিপ্যাল
স্যার এলেন সেখানে । হাসান স্যার আর
আশিকুল স্যার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ হাসান স্যার, কি অবস্থা বাচ্চার?
হাসান স্যারঃ
স্যার এখনও ওর জ্ঞান ফেরেনি ।
তখন ডাক্তার
এলেন ।
ডাক্তারঃ আরে
স্যার আপনি? আসুন বসুন ।
প্রিন্সিপাল্ল
স্যারঃ না ঠিক আছে । আগে বলুন ছেলেটার কি অবস্থা?
ডাক্তারঃ স্যার
ছেলেটার অবস্থা তো খুব একটা ভালো না ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ জ্ঞান ফেরে নি এখনও?
ডাক্তারঃ না
স্যার । কিন্তু আরেকটা সমস্যা আছে ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ কি সমস্যা?
ডাক্তারঃ স্যার
হাসপাতালটা বিমান বাহিনী দ্বারা পরিচালিত । কিন্তু উনি তো বিমান বাহিনীতে চাকরি
করেন না । উনাকে ছেলেটাকে নিয়ে বাইরের কোন হাসপাতালে ভর্তি করানো লাগবে । শাহিনের
স্টুডেন্ট বলে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসাটা দিলাম ।
হাসিবের বাবাঃ
আমরা তাহলে ওকে কুইন্সে নিয়ে যাই ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ ঠিক আছে্, আপনারা আমার গাড়িতে করে চলুন । আমি গাড়ি আনার ব্যাবস্থা করছি আর
ডাক্তার, আপনারা ছেলেটাকে বাহিরে আনার ব্যাবস্থা করুন ।
হাসাম স্যারঃ
স্যার আমরা তাহলে এখন আসি । আমার শহরে কাজ আছে একটু । আশিকুল স্যার ও আবার বাস মিস
করবেন ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ ঠিক আছে । আপনারা চলে যান ।
হাসিবের বাবাঃ
আপনারা অনেকক্ষণ ধরে কষ্ট করলেন স্যার । আপনাদের অনেক ধন্যবাদ ।
আশিকুল স্যারঃ
না না, ঠিক আছে । ছেলের খেয়াল রাইখেন ।
হাসান স্যারঃ আর
জ্ঞান ফিরলে আমাদের জানাইয়েন । আসি তাহলে । হাসান স্যার আর আশিকুল স্যার চলে গেলেন
। হাসিবকেও প্রিন্সিপ্যাল স্যার কুইন্স হাসপাতালে দিয়ে এলেন ।
৫ মার্চ ২০১৮ ।
ভোর ৫টা বেজে ৪৫ মিনিট । সবাই বাসের উঠে গেছে । আশিকুল স্যার আর রাখিব স্যার
অন্যান্য কাজে ব্যাস্ত । অনেকের সাথে তাদের মা কিংবা বাবা এসেছেন । একটু পর ব্যাগ
কাঁধে তুষার এলো । আশিকুল স্যার তুষারকে দেখে ওর কাছে গেলেন ।
আশিকুলঃ তামজিদ
এসেছ?
তামজিদঃ জী
স্যার।
আশিকুল স্যারঃ
(তুষারের হাতে একটা কাগজ দিয়ে) আচ্ছা এই কাগজটা
নিয়ে ভেতরে যেয়ে দ্যাখো না সবাই এসেছে কিনা ।
তখন মোস্তাফিজ
স্যার এলেন আশিকুল স্যার এর কাছে ।
মোস্তাফিজ
স্যারঃ ও আশিকুল স্যার, আমাকে জানালার পাশে দিয়েন তো ।
আশিকুল স্যারঃ
কেন স্যার? হঠাৎ জানালার পাশে বসবেন?
মোস্তাফিজ
স্যারঃ আর বইলেন না । বাসে উঠলেই আমার বমি হয় ।
আশিকুল স্যারঃ স্যার,
আপনি কি বললেন এটা? আর সব বাচ্চারাও তো কেউ কেউ বমি করার ওস্তাদ ।
সাইফুল স্যারঃ
স্যার খাবার দাবার কি রেডি আছে?
মোস্তাফিজ
স্যারঃ আপনি ভাবছেন খাবার খাওয়ার কথা, আর আমি ভাবছি খাবার বমি হয়ে বেড়িয়ে যাবার
কথা ।
সাইফুল স্যারঃ
কি যে বলেন না স্যার । খাবেন, বমি করবেন, এ ছাড়া আর কি কাজ । জীবন তো একটাই ।
সবাই হেসে দিলো
স্যার এর কথা শুনে । বাসে তখন সেলফি তোলায় ব্যাস্ত জিয়ন, সাবাবা আরও অনেকে । কেউ
আবার গান ধরেছে । লাল লাবিব আবার বিড়বিড় করে কি যেন বলছে বোঝা যাচ্ছে না । তুষার
বাসে উঠে লাবিবকে দেখল । লাল লাবিব জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে
বুঝতেই পারে নি তুষার বাসে উঠেছে । তুষার ওর কাছে যেয়ে বলল,
তুষারঃ কিরে,
মনে মনে জার্নির জন্য দোয়া করছিস নাকি?
লাল লাবিবঃ আরে
না । দোয়া আগেই পড়েছি । এখন একটু কয়েকটা ইনফরমেশন মুখস্ত করছিলাম ।
তুষারঃ পুষ্প
আসে নি?
পেছন থেকে
তুষারের মাথায় টোকা দিলো পুষ্প ।
পুষ্পঃ ঐ
ফইন্নি, আমি এখানে ।
তুষারঃ ফোন
আনসিস?
পুষ্পঃ হ ।
তুষারঃ কিরে
লাবিব, তুই আনসিস?
লাল লাবিবঃ
হ্যাঁ ।
তুষার ও পুষ্প
একসাথেঃ (চমকে উঠে) কি!
লাল লাবিবঃ এতে
এতো চমকানোর কি হল?
তুষারঃ তোর হাতে
ফোন ......... মানে একটু চমকানোর মতই ব্যাপার আমাদের জন্য ।
পুষ্পঃ তো কি
ফোন আনসিস ।
লাল লাবিবঃ
নোকিয়া ১২০০ এর চেয়ে একটু উন্নত ।
পুষ্পঃ যাক ।
তাও তো নিসিস । তুই তো আবার ফোন নেয়া পছন্দ করিস না ।
লাল লাবিবঃ আমি
বলসিলাম আব্বুকে । তা আব্বু জোর করে দিয়ে দিলো ।
ওদের একটু সামনে
তামান্নার সাথে বসে গল্প করছিলো আরিনা । সেই সময় এলো আরিনার বাবা । আরিনার বাবা
শাহিন স্কুলেরই শিক্ষক ।
আরিনার বাবাঃ
টিফিন বক্সটা নিসো তো?
আরিনাঃ হ্যাঁ
আব্বু নিসি ।
আরিনার বাবাঃ আর
তোমার স্ক্রিপ্টগুলো?
আরিনাঃ হ্যাঁ
আব্বু । সব নিসি ।
আরিনার বাবাঃ
আচ্ছা । সাবধানে যেয়।
আরিনার বাবা চলে
গেলো ।
আরিনাঃ আমার
আব্বুকে দেখলি তো । গতকাল আব্বুই ব্যাগ গুছায় দিয়ে আমাকেই আবার এসব কথা বলছে ।
তামান্নাঃ
চিন্তা তো করবেনই । তুই যে উনার মেয়ে ।
একটু পর আবার
আরিনার বাবা এলো ।
আরিনার বাবাঃ
মোবাইল নিয়েছ?
আরিনাঃ হ্যাঁ
আব্বু নিসি নিসি ।
আরিনার বাবাঃ
পানির বোতল নিয়েছ?
আরিনাঃ হ্যাঁ
আব্বু নিসি ।
আরিনার বাবাঃ
পানি খেয়ে নিয়ো কিন্তু । তুমি তো আবার পানি খাও না ।
আরিনাঃ আচ্ছা ।
আরিনার বাবাঃ
মোবাইলে চার্জ আছে তো?
আরিনাঃ (নিজের
কপালে হাত ঠেকিয়ে) হ্যাঁ রে বাবা আছে ।
আরিনার বাবাঃ কি
ব্যাপার! কপালে হাত দিলে কেনো? জ্বর জ্বর লাগছে নাকি?
আরিনা কিছু বলতে
পারে না । এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে যেন কেউ ওকে বলেছে ওর মাথায় টাক পড়ে গেছে ।
আরিনাঃ না আব্বু । আমি ঠিক আছি । তুমি যাও তো ।
আরিনার বাবাঃ আচ্ছা
ঠিক আছে ।
আরিনার বাবা
আবার চলে গেলেন ।
আরিনাঃ দেখলি ।
আবার এসেছে ।
তামান্নাঃ আহা!
তোর আব্বা তোরে কত ভালবাসে । তুই কি বুঝিস ভালবাসার ।
একটু পড়ে আবার
এলো আরিনার বাবা ।
আরিনার বাবাঃ
মাথা ব্যাথার ওষুধ নিয়েছো?
আরিনাঃ হ্যাঁ
হ্যাঁ হ্যাঁ । সব নিসি । ক্কিচ্ছু বাদ রাখিনি । সবই নিসি । খুশি?
আরিনার বাবাঃ আচ্ছা । সাবধানে যাস ।
আরিনার বাবা চলে
গেলেন । তামান্না হাসতে লাগলো ।
সবাই বাসে উঠে
গেলো । আশিকুল স্যার তখন তুষারকে ডাকলেন ।
আশিকুল স্যারঃ
সবাই এসেছে?
তুষারঃ জী স্যার
। সবাই এসেছে ।
আশিকুল স্যারঃ
তাহলে আমরা এবার রওনা হতে পারি?
তুষারঃ জী স্যার
।
আশিকুল স্যারঃ
(বাসে থাকা সকলের উদ্দেশ্যে) তো সকল ছাত্রছাত্রী্, শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবক ও
অভিভাবিকারা, আমরা যাত্রা শুরু করছি ।
সব ছাত্র
ছাত্রিরা “ইয়ে” বলে চিৎকার করে উঠলো । বাস চলতে শুরু করলো ঢাকার উদ্দেশ্যে ।
সকাল ৬ টা
৪৫ । অপেক্ষাগারে বসে আছে হাসান স্যার এর
স্টুডেন্টরা আর গল্প করছে ।
মাসুদঃ কিরে,
স্যার আসতেসে না কেন?
পিয়ালঃ ভাই
মাত্র ৬ টা ৪৫ বাজে । স্যার তো প্রায়ই ৭টারও
পরে আসে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
ঐ মাসুদ, তুই কাল নুরুজ্জামান স্যার এর প্রাইভেট এ আসিস নি ক্যান?
মাসুদঃ ক্যান,
স্যার কিছু কইসে?
শাহরিয়ার সোহানঃ
না, তুই তো অনেক দিন ধরে আসিস না তাই ।
ঐ সময় শাওন এলো
সাইকেল নিয়ে ।
মাসুদঃ ঐতো,
শাওন আইসে ।
সাকিবঃ কিরে
শাওন শেইভ করসিস নাকি?
শাওনঃ না রে,
মেশিন মারসি ।
সাকিবঃ অস্থির
লাগতেসে তোরে ।
আরিকঃ ঐ হাসান
স্যার কোন HW দিসিল?
রাহাত? আরে না । দেয় নাই ।
ঐ সময় রায়হান
অনিক এলো খোঁড়াতে খোঁড়াতে ।
সাকিবঃ কিরে
রায়হান, পায়ে কি হইসে?
রায়হান অনিকঃ আর
বলিস না । ফুটবল খেলতে গিয়ে মচকায় গেসে ।
আরিফঃ এ মুটা?
আজকে কি টিফিন আনসিস?
আরিকঃ ভাই আমি
খুব অসহায় । আমার পেট টা তো একটু দেখেন । কম খাবার খাইতে পারি না ।
আরিফঃ আরে মাঝে
মাঝে খাইতে হয় ।
আসিফঃ ঐ মাসুদ,
তোরা আজকে প্র্যাকটিসে যাবি না?
মাসুদঃ ভাই কবে
যাই না ক তো আমারে ।
রাহাতঃ ভাই তোর
মাথা ঠিক আসে?
আরিফঃ ক্যান?
শাহরিয়ার সোহানঃ
ইয়ার্কি করিস না তো ।
সাকিবঃ আরে ভাই
আমি তো আরবি হরফ প্র্যাকটিস করছিলাম ।
আসিফঃ আজকে
আমারে নিয়া যাইস । ক্লাস ফাঁকি দিমু ।
রাহাতঃ তুই
আরিকের টিফিন একাই খাবি, আমরা কি করমু?
মাসুদঃ তুই দিবি
ক্লাস ফাঁকি?
আরিকঃ কেউ আমার
মতো অসহায়রে বাঁচা!!
এক প্রকার
কোলাহল সৃষ্টি হয়ে গেলো । প্রতীক সে সময় অপেক্ষাগারের বাইরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে
ছিল । যখন দূর থেকে দেখল হাসান স্যার বাইক চালিয়ে আসছে, শুধু বলল, “স্যার এসেছে ।”
আর সবাই জায়গা থেকে দৌড় । কার পায়ে ব্যাথা, কার কি সমস্যা কোন ধারনা নেই । উঠে
দিলো দৌড় । কোণা ধরতে হবে । তা না হলে হাসান স্যার হাতের কাছে পেলে মারবে । এক
দৌড়ে সব চোখের আড়ালে । শুধু প্রতীকই হাটতে হাটতে এগোতে লাগলো । ক্লাসে সবাই এলো ।
হাসান স্যার পরালো । পড়ানো শেষে প্রতীক দৌড় দিলো অ্যাসেম্বলিতে লিড দেবার জন্য ।
অ্যাসেম্বলি শুরু হল । প্রথমে কুরআন তিলাওয়াত, তারপর শপথ গ্রহন, তারপর জাতীয় সংগীত
। এরপর যখনি প্রতীক সবাইকে চলে যেতে বলবে, অমনি এলেন প্রিন্সিপ্যাল স্যার ।
প্রতীকের কাছ থেকে মাউথপিসটা নিয়ে সবাইকে বলল,
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ কেমন আছেন আপনারা?
সবাইঃ ভালো ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ আপনারা সবাই মনে হয় জানেন গতকাল তোমাদের স্কুলের একটা ভাইয়া আরেকটা ভাইয়ার
লাথিতে আহত হয়েছে । আমি সকালে ওর বাবাকে ফোন করেছিলাম, কিন্তু ওর বাবা বলেছেন এখনও
নাকি ওর জ্ঞান ফেরেনি । অবস্থা নাকি ভালো না । তোমরা সবাই ঐ ভাইয়ার জন্য দোয়া কোরো আর আজকে যে ভাইয়া ঐ ভাইয়াকে আহত করেছে
আজকে ওকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে এবং
রেড টিসি দেয়া হবে । আমরা আরও চেষ্টা করবো ওকে কিশোর সংশোধনাগাড়ে পাঠানোর
জন্য । তো তোমাদের কাছে শুধু এটুকুই বলার, তোমরা ইয়ার্কি করবে । বয়সটাই ইয়ার্কি
ফাজলামি করার । কিন্তু এমন কোন ইয়ার্কি কোরো না যাতে অন্য কারো জীবনের ঝুকি
থাকে । সবাই ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যার চলে গেলেন । প্রতীক লিড দিলো,
“শাহিনস, উভয়দিক এক সারিতে জলদি চল” সবাই চলতে শুরু করলো । অ্যাসেম্বলির নিয়ম
অনুযায়ি শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্যার যে লিড দেয় তার পেছনে দাঁড়িয়ে
থাকে ।
নুরুল ইসলাম
স্যারঃ ইয়ে.........প্রতীক.........তুমি শাহিনস কভার আপ না বলে শাইনস কভার আপ
বলবে ।
প্রতীকঃ আচ্ছা
স্যার ।
নুরুল ইসলাম
স্যারঃ শাহিনস বলতে একটু বেশি সময় লাগে তো, তাই শুনতে একটু অদ্ভুত লাগে । তাহলে
পরের বার থেকে ব্যাপারটা একটু খেয়াল রেখ ।
নুরুল ইসলাম
স্যার চলে গেলেন । প্রতীকও একজন কর্মচারীর
হাতে মাউথপিসটা দিয়ে ক্লাসে চলে যায় । ক্লাসে এলেন হাসান স্যার । হাতে ফিসিক্স বই
আর একটা কাগজ । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম দিলো, স্যারও সালামের জবাব দিয়ে বসতে
বললেন ।
হাসান স্যারঃ
তামজিদ তো আজকে ঢাকায় গেসে, ছেলেদের
সেকেন্ড ক্যাপ্টেন যেন কে?
রাহাত দাঁড়ালো ।
হাসান স্যারঃ
আচ্ছা, ইশতিয়াক তুমি উঠে এসো ।
আরিকের আরেক নাম
ছিল ইশতিয়াক আর রাহাতের আরেক নাম ছিল রেদোয়ান । হাসান স্যার এই আরিক আর রাহাতকে
প্রায়ই গুলিয়ে ফেলতো ।
রাহাতঃ স্যার
আমি ইশতিয়াক না আমি রাহাত যাকে আপনি রেদোয়ান বলতেন ।
হাসান স্যারঃ ও
আচ্ছা রেদোয়ান, এই কাগজটা নিয়ে যাও আর আমার ক্লাস শেষ হলে বোর্ডে লিখে দিও । এটা
তোমাদের নতুন রুটিন । আজ থেকে তোমরা নতুন রুটিনে ক্লাস করবা ।
রাহাত এসে
কাগজটা নিয়ে গেলো ।
ওদিকে
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে হাজির তাজ ও শেখ সোহান এবং ওদের বাবা । প্রিন্সিপ্যাল
স্যার পুরো ঘটনাটা খুলে বললেন উনাদের ।
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ সবটাই তো শুনলেন । এখন বলুন কি
করবেন ।
তাজের বাবাঃ
স্যার এখানে আমি তো আমার ছেলের কোন দোষই খুজে পাচ্ছিনা ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ না না আপনার ছেলে কিছু করে নি । আপনি যেতে পারেন ।
তাজের বাবাঃ
খালি খালি আমার কাজের সময় নষ্ট করলেন । আয় তাজ ।
তাজ আর তাজের
বাবা চলে গেলেন ।
শেখ সোহানের
বাবাঃ আমি এখন কি করবো স্যার, সারাদিন বাসায় ও টিভিতে ডাবলু ডাবলু রেস্লিং দেখে আর
বাসায় ঐ সব নিজে নিজে প্র্যাকটিস করে । ও বলছিল গতকালও নাকি তাইই করেছিলো । এখন
আমার এই ছেলের প্রতি কোন আগ্রহ নেই । আপনি যা শাস্তি দেবার ওকে দিন । ইচ্ছা হলে
কিশোর সংশোধনাগাড়ে পাঠিয়ে দিন ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ দেখুন, আসলেই আপনার ছেলে একটা দোষ করেছে । ইচ্ছা করে করেছে নাকি
অনিচ্ছাকৃতভাবে করেছে আমি জানিনা । তবে এই কাজের জন্য শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে ।
তবুও আমি ওকে একটা সুযোগ দিচ্ছি । সেটা কিন্তু শাস্তি মওকুফ করার সুযোগ না, সময়
দেবার সুযোগ । সকালে বসে বসে আমি সিসি টিভি ফুটেজ দেখছিলাম । আমি দেখতে পেলাম শেখ
সোহান লাথিটা মারবার সময় হাসিব নামক ছেলেটা যে হাসপাতালে ভর্তি ও কেমন যেন
অস্বাভাবিকভাবে ঝুকেছিল । তাই আমি চাই ওর জ্ঞান
ফিরলে ওর ইচ্ছা মোতাবেক কাজ করবো ।
শেখ সোহানঃ (মনে
মনে) তাহলে কি তৌফিক যা বলেছে তাইই ঠিক? হাসিব কি তাহলে ইচ্ছা করে সামনের দিকে
ঝুকেছে? কিন্তু কেন?
শেখ সোহানের
বাবাঃ তাহলে আমার ছেলে কি নির্দোষ?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ না । আপনার ছেলে যে নির্দোষ তা ঠিক নয় । তবে আপনার ছেলের দোষের পরিমানটা কত
সেটা এখনও বলতে পারছি না ।
শেখ সোহানের
বাবাঃ স্যার আপনি আসলে কি বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে
পারছি না ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ বোঝার দরকারও নেই । শুধু এটুকুই জেনে রাখুন, হাসিব ছেলেটার জ্ঞান ফিরবার পর
ও ওর বন্ধুকে কি শাস্তি দিতে চায় কিংবা আদৌ শাস্তি দিতে চায় কি না সে ব্যাপারটা
জেনে তারপরেই আমি ব্যাবস্থা নেবো । আপনারা এবার আসতে পারেন ।
শেখ সোহানের
বাবা আর কিছু বললেন না । ছেলেকে নিয়ে
বেড়িয়ে এলেন । বাইরে আসবার পর কিছুক্ষণ মাত্থা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন । শেখ সোহান
কেবল “আব্বু” বলে ডাকতেই কষে এক চড় লাগালেন শেখ সোহানের গালে । এরপর আর কিছু
না বলে চলে গেলেন । শেখ সোহান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে
ক্লাসে এলো । দরজার সামনে এসে বলল,
শেখ সোহানঃ আসবু
স্যার?
হাসান স্যার
ঢোকার অনুমতি দিলেন । নতুন করে কিছু বললেন না । শেখ সোহান মাথা নিচু করে নিজের
যায়গায় যেয়ে বসে পড়লো । কেউ ওর সাথে আর কোন কথাই বলল না ।
হাসান স্যার
পড়ানো শুরু করলেন । একটু পড় ক্লাস শেষ হয়ে যায় । পরের ক্লাস বাংলাদেশ ও বিশ্ব
পরিচয় । রুবাইয়াত মেডামের ক্লাস । কিন্তু মেডাম ঢাকায় যাওয়ায় ঐ ক্লাসটায় কেউ এলো
না । ফুটবল খেলোয়াড়রা প্রতিদিনের মতো প্র্যাকটিসে চলে গেলো । ২য়
বেঞ্চে বসে থাকা রাতুল পানি খাওয়ার জন্য ব্যাগের ভেতর হাত দিতেই দেখল পানিত বোতল
ফাঁকা । পাশে তৃণ ছিল । ওকে বলল,
রাতুলঃ দোস্ত,
পানি আনতে যাবি?
তৃণঃ চল যাই ।
আজকে আমিও পানি আনতে ভুলে গেসি । তার আগে
একটা কাজ কর । আচ্ছা রাতুল, এই কাগজটা তোর
ব্যাগে রাখতে পারবি?
রাতুলঃ কিসের
কাগজ এটা?
তৃণঃ পরে বলছি ।
রাতুল ব্যাগ
থেকে একটা খাতা বের করলো ।
রাতুলঃ এই খাতায়
রাখ । এর মধ্যে ৪০০ টাকা আছে । সহজে আমি হারাব না । কিন্তু এটা কিসের কাগজ?
তৃণঃ বলছি ।
কাগজটা ব্যাগে
রেখে বোতল হাতে বেড়িয়ে গেলো পানি আনার জন্য ।
রাতুলঃ হ্যাঁ
এবার বল ওটা কিসের কাগজ ।
তৃণঃ আর বলিস না
। আমার আর সাবিতের ঘটনাটা তো জানিসই । তো ঐ ঘটনার আসল দোষীকে ধরবার জন্য আমার কাছে
রেখেছিলাম । গতকাল আমার ভাই এই কাগজ দেখে ফেলসে । এটা তো লাভ লেটার এর কাগজ
তৃণ যখন লাভ
লেটার কথাটা বলছিল, তখনই ওর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো সেদিনের সেই ছেলেটা যে সাবিতের বইয়ের
মধ্যে লাভ লেটারটা রেখেছিলো । তৃণর মুখে কথাটা
শুনতেই ব্যাপারটা কি টা বোঝার জন্য তৃণ আর রাতুলের পেছন পেছন হাটতে লাগলো ।
তৃণঃ এখন আমার
ভাই আমার আম্মুকে সব বলে দেবে বলে এটা নিয়ে গিয়েছিলো । তারপর চকলেট খাওয়ায় দিয়ে
চুপ করায় রাখসি ।
রাতুলঃ ও আচ্ছা
। আচ্ছা তুই কি সত্যিই ওইদিন সাবিতের ব্যাগে এই লাভলেটারটা রাখসিলি?
তৃণঃ আমি রাখিনি
।
রাতুলঃ তাহলে
প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে মিথ্যে কেন বললি?
তৃণঃ কারণ আমি
আসল অপরাধীকে খুজে বের করে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে চাই ।
সব শোনার পর
নিশ্চিত হয়ে গেলো এটা ঐ ছেলেটারই সেই লাভ লেটার । এরপর ছেলেটা একটা ফন্দি আঁটল ।
তৃণ আর রাতুলকে ডেকে বলল,
ছেলেটাঃ এইযে
ছোট ভাই, তোমরা ক্লাস ১০ এ না?
তৃণঃ জী । আপনি
কে?
ছেলেটাঃ
আমি ঋজু । তোমাদের তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি ক্লাস পাণ্ডে স্যার নেন না?
রাতুলঃ না তো ,
তানিয়া মেডাম নেন ।
ঋজুঃ তোমাদের
তানিয়া মেডাম ল্যাবে একটু ডাকছেন । তোমাদের সবাইকে । খুব জরুরী দরকার ।
তৃণঃ আচ্ছা ঠিক
আছে, আমরা পানি এনে ক্লাসে যেয়ে সবাইকে বলছি ।
ঋজুঃ না না ।
খুব তাড়াতাড়ি যেতে বলেছেন । এখনি ক্লাসে যেয়ে সবাইকে বলো ।
তৃণ আর রাতুল
ক্লাসে গেলো । ঋজুও ওদের পিছু পিছু চলে গেলো । তৃণ আর রাতুল বাম পাশের দরজা দিয়ে
ঢুকে সবাইকে বলল । এদিকে ঋজু তখন ডান পাশের দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো রাতুল
আর তৃণর ব্যাগ কোনটা । এরপর সবাই বেড়িয়ে যায় । যাবার সময় আরিক একবার খেয়াল করে
ঋজুকে ।
আরিকঃ (মনে মনে)
আরে, এটা সেদিনের সেই ছেলেটা না? যে আমাদের সবার ব্যাগ তন্ন তন্ন করে কিছু খুজছিল?
আরিক কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থেকে চলে গেলো । বেশি মাথা ঘামালো না । সবাই চলে যাবার পর ক্লাসরুমে ঢুকল
ঋজু । প্রথন তৃণর ব্যাগ খুজল কিন্তু কিছুই পেলো না । এরপর রাতুলের ব্যাগ খুজে পেয়ে
গেলো সেই কাগজ । খাতা সহই নিয়ে গেলো ঋজু ।
এদিকে সবাই
ল্যাবে গিয়ে দ্যাখে ল্যাব তালা দেয়া । এরপর টিচার্স রুমে যেয়ে দেখে মেডাম ল্যাপটপে
কাজ করছেন । তৃণ ভেতরে গেলো ।
তৃণঃ মেডাম আপনি
নাকি আমাদের ডেকেছেন?
তানিয়া মেডামঃ
কই না তো ।
তৃণঃ আমাদেরকে
ঋজু নামের একটা ভাইয়া বললেন আপনি নাকি আমাদের ডেকেছেন?
তানিয়া মেডামঃ
না না, আমি তো ডাকি নি । ছেলেটা মনে হয়
মিথ্যে বলেছে ।
তৃণঃ (মনে মনে)
মিথ্যে বলেছে? কিন্তু মিথ্যে বলে উনার কি লাভ?
তৃণ মেদামকে
সালাম দিয়ে বাইরে এসে সবাইকে বলল । এদিকে
তৃণর কথা শুনে সবাই রেগে গেলো ।
তুর্যঃ তুই এই
ফাইজলামিটা না করলেই পারতি । শুধু শুধু বদমাইশ ।
জিহানঃ আমার তো
মনে হচ্ছে তুই সত্যি সত্যি সাবিতের খাতায় ঐ লাভ লেটারটা ঢুকিয়েছিস ।
তালহা খন্দকারঃ
আরে ও তো স্বীকারও করসে জানিস না?
জিহানঃ জানি তো,
কিন্তু তখন বিশ্বাস হয় নি এখন বিশ্বাস হচ্ছে । চল ক্লাসে চল ।
এরপর সবাই
ক্লাসে চলে গেলো । তৃণ রাতুলের কাছে এসে বলল
তৃণঃ আমাকে
বোতলটা দিয়ে ক্লাসে যা ।
রাতুলঃ কেন?
তৃণঃ প্লিজ যা ।
রাতুল আর কিছু
না বলে তৃণর হাতে ওর বোতলটা দিয়ে ক্লাসে চলে এলো । ক্লাসে এসে খেয়াল করলো ওর
ব্যাগের চেইন খোলা । অথচ যাবার সময় বন্ধ ছিল । তারপর ব্যাগ ভালো করে চেক করা শুরু
করলো কিছু মিসিং আছে কি না । দেখল ওর সেই খাতাটাই নেই ।
রাতুলঃ ওহ শিট!
আমার খাতা হারিয়ে গেছে যার মধ্যে ৪০০ টাকা ছিল আর তৃণর কাগজটা ছিল!
এদিকে তৃণ পানি
আনতে টিউবওয়েলের কাছে এলো । টিউবওয়েলের কাছে এসে যখন তৃণ পানি নিচ্ছিল, তখন ফারিহা
মুস্তারি আর শিমলাও এলো পানি নিতে । নিজের
পানি নেয়া শেষ হলে বন্ধুত্বের খাতিরে বলল,
তৃণঃ দাও আমি
বোতল ভরে দিচ্ছি ।
শিমলাঃ না
ভাইয়া, আমার দরকার নেই । এই ফারিহা, তুই দিলে দিতে পারিস ।
ফারিহা
মুস্তারিঃ না রে । পড়ে দেখা গেলো পানির সাথে লাভ লেটার পেয়ে গেলাম ।
এরপর দুজনেই
হাসতে শুরু করলো । তৃণ কিছু না বলে অপমানিত বোধ করে চলে গেলো ।
ওদিকে হাসপাতালে
হাসিবের পাশে হাসিবের ডান হাত ধরে বসে
আছেন ওর মা । হাতে স্যালাইন লাগানো । মুখে অক্সিজেন মাস্ক । একটু পড় হাসিবের বাবা এলেন ।
হাসিবের বাবাঃ
এখনও জ্ঞান ফেরেনি?
হাসিবের মাঃ না
।
হাসিবের বাবাঃ ডাক্তার
কি বলেছেন?
হাসিবের মাঃ
বলেছেন আজকে জ্ঞান আসতে পারে ।
হাসিবের বাবাঃ
কিভাবে যে কি হয়ে গেলো । আল্লাহ আল্লাহ করে সব আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলে হয় ।
হঠাৎ হাসিবের মা অনুভব করলেন হাসিবের হাত নড়ছে ।
তখনই হাসিবের দিকে তাকাতেই দেখলেন পিট পিট
করে তাকিয়ে আছে হাসিব । হাসিবের বাবাও খেয়াল করে তাড়াতাড়ি যেয়ে ডাক্তারকে
ডেকে আনলেন । ডাক্তার এসে ওর হার্ট বিট ও পারলস রেট চেক করলেন ।
ডাক্তারঃ যাক ।
ছেলেটা এখন বিপদ মুক্ত ।
হাসিবের মাঃ
আলহামদুলিল্লাহ ।
এদিকে তৃণ
ক্লাসে এসে দেখে রাতুল দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছে । কাছে যেয়ে
জিজ্ঞাস করলো,
তৃণঃ কিরে কি
হয়েছে,
রাতুলঃ খুব
খারাপ একটা কাণ্ড ঘটেছে ।
তৃণঃ কি কাণ্ড?
রাতুলঃ আসার পড়
দেখি ব্যাগের চেইন খোলা । তারপর ব্যাগ খুলে দেখি খাতাটা নেই ।
তৃণঃ কি!
রাতুলঃ হ্যাঁ ।
আমি তোর ব্যাগেও খুজে দেখেছি । আশেপাশের
কয়েকজনের ব্যাগেও খুজে দেখেছি কিন্তু পাই নি ।
তৃণঃ ইশ! এখন
আমি কি করবো! সবচেয়ে বড় প্রমাণটা আমার হাতছাড়া হয়ে গেলো ।
রাতুলঃ আর আমার
৪০০ টাকাও ।
তৃণঃ এখন আমি কি
করি?
রাতুলঃ আচ্ছা,
একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না । ঐ খাতায় কি আছে কেউ তো জানে না । তাহলে কে নিতে
পারে? আর যদি নেয়ও তাতে তার লাভ টা কি?
তৃণঃ ঠিকই তো ।
ঐ লাভ লেটার দিয়েও তো কারো কোন লাভ নেই ।
রাতুলঃ তাহলে
আমার ৪০০ তাকাই চুরি করেছে । সাথে লাভ লেটারটাও নিয়েছে ।
তৃণঃ কিন্তু কে
নিতে পারে?
এদিকে হাসিবের
বাবা ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলেন ।
হাসিবের বাবাঃ
তাহলে আর কোন সমস্যা তো নেই ডাক্তার?
ডাক্তারঃ দেখুন
সমস্যা যে নেই সেটা তো না, তবে বড় কোন কিছু হবার
আশঙ্কা নেই । কাল দুপুরের দিকে আপনি ওকে নিয়ে যেতে পারবেন । তবে হ্যাঁ, ওকে
খুব পুষ্টিকর খাবার দেবেন, আর বেশি ব্রেইনের ওপর চাপ দেবেন না ।
হাসিবের বাবাঃ
ওকে ডাক্তার ।
ডাক্তার চলে
গেলেন । এরপর হাসিবের বাবা হাসান স্যার এর কাছে ফোন দিলেন । হাসান স্যার তখন ক্লাস
নাইনের ফিসিক্স ক্লাস নিচ্ছিলেন ।
হাসান স্যারঃ
হ্যালো, কে বলছেন?
হাসিবের বাবাঃ
স্যার আমি হাসিবের বাবা বলছি ।
হাসান স্যারঃ ও
আচ্ছা, হ্যাঁ বলুন কি বলবেন ।
হাসিবের বাবাঃ
স্যার হাসিবের জ্ঞান ফিরেছে ।
হাসান স্যারঃ ও
তাই নাকি! এ তো বড় খুশির খবর । তো এখন কেমন আছে
হাসিবের বাবাঃ
জী এখন আর বড় ধরনের কোন বিপদ নেই ।
হাসান স্যারঃ
আচ্ছা, খেয়াল রাইখেন ছেলের ।
হাসিবের বাবাঃ
আর স্যার যদি কিছু মনে না করেন, একটু কষ্ট করে যদি প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে খবরটা
দিতেন । আসলে আমার কাছে উনার নাম্বার নেই তো ।
হাসান স্যারঃ
আমি তো ক্লাসে, তবু আমি অন্য একজন স্যারকে বলছি ।
হাসিবের বাবাঃ
অশেষ ধন্যবাদ স্যার ।
এরপর হাসান
স্যার আশরাফুল স্যারকে ফোন দিয়ে হাসিবের
জ্ঞান ফেরার কথাটা বললেন
।
আশরাফুল স্যারঃ
বাহ এ তো ভালো খবর । তো এখন কেমন আছে?
হাসান স্যারঃ
বললেন, বড় ধরনের কোন বিপদ হবার সম্ভাবনা নেই ।
আশরাফুল স্যারঃ
ওহহো! তাহলে ছোট ধরনের বিপদ হবার সম্ভাবনা
আছে নাকি?
হাসান স্যারঃ কি
সব যে বলেন না স্যার । বড় ধরনের বিপদ কেটেছে সেটাই অনেক ।
আশরাফুল স্যারঃ
না না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর ।
হাসান স্যারঃ
আপনার না বায়োলজির টিচার না হয়ে বাংলার টিচার হওয়া দরকার ছিল । যা হোক, আপনি একটু
কষ্ট করে খবরটা প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বলতে পারবেন?
আশরাফুল স্যারঃ
আচ্ছা, আমি এখনই যাচ্ছি ।
হাসান স্যারঃ
আচ্ছা, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
এরপর আশরাফুল
স্যার প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমে গেলেন ।
আশরাফুল স্যারঃ
স্যার একটা ভালো খবর আছে ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ কি খবর?
আশরাফুল স্যারঃ
হাসিব ছেলেটার জ্ঞান ফিরেছে ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ That’s
great. আমি তাহলে একটা কাজ করি । ওকে একটু দেখে আসি ।
আশরাফুল স্যারঃ
এখনই?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ হ্যাঁ । কাল আমি ঢাকায় যাব কিছু দরকারি কাজে । আপনি যেতে পারেন ।
আশরাফুল স্যার
চলে গেলেন । প্রিন্সিপ্যাল স্যারও উনার কিছু কাজ
করে চলে গেলেন হাসিবের কাছে ।
এদিকে ঘণ্টা
বেজে গেছে । দ্বিতীয় পিরিয়ড শেষ । তৃণ রাতুলের সাথে কথা বলছিল ।
রাতুলঃ বাদ দে ।
এখন সাত্তার স্যার এর ক্লাস । এই ক্লাসের পর টিফিন পিরিয়ড, তারপর দেখা যাবে ।
রাতুল আর তৃণ বসে পড়লো । সাত্তার স্যার এলো । সবাই নিয়ম অনুযায়ি স্যারকে সালাম
দিলো আর দাঁড়ালো, স্যার ও সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন ।
সাত্তার স্যারঃ
বাড়ির কাজ করেছো?
চতুর্থ বেঞ্চ
থেকে রাহাত বলে উঠলো,
রাহাতঃ স্যার,
আজকে তো..................
সাত্তার স্যারঃ
(রাহাতের কথা শেষ না হতেই) আজকে তো আমার
ক্লাস ছিল না, তাই তোমরা জানতে না তাই তো?
রাহাতঃ (মুচকি
হেসে) ইয়ে......জী স্যার ।
সাত্তার স্যারঃ
সবার থাকে ২ হাত । আর তোমাদের ৩ হাত । বাম
হাত, ডান হাত আর অজুহাত । তোমাদের এই অজুহাতটাই খুব বড় । এজন্য তোমরা খালি অজুহাত
দাও । যাই হোক । ২৩ নাম্বার পেইজ টা বের করো ।
ওদিকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার হাসপাতালে গেলেন । হাতে একটা প্যাকেট । হাসিবের বাবা কেবিনের
বাইরে চেয়ারের ওপর বসে ছিলেন ।
প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে আসতে দেখে হাসিবের
বাবা দাঁড়িয়ে গেলেন ।
হাসিবের বাবাঃ
একি স্যার, আপনি?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ আপনার ছেলেকে দেখতে এলাম । (প্যাকেটটা হাসিবের বাবার হাতে দিয়ে) এটা
নিন ।
হাসিবের বাবাঃ
(প্যাকেটটা হাতে নিয়ে) কি এটা?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ বেশি কিছু না । একটু ফলমূল ।
হাসিবের বাবাঃ
এগুলোর আবার কি দরকার ছিল স্যার?
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ না না । খালি হাতে তো আর আসা যায় না । তারপরেও ব্যাস্ততার মাঝে দেখতে এলাম
। কেমন আছে ও?
হাসিবের বাবাঃ
হ্যাঁ ভালোই আছে । ঘুমাচ্ছে ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ আমি কি ভেতরে যেতে পারি?
হাসিবের বাবাঃ
হ্যাঁ অবশ্যই । চলুন ।
হাসিবের বাবা
প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে নিয়ে কেবিনের ভেতরে ঢুকলেন । কাঁথা গায়ে সটাং হয়ে শুয়ে আছে
হাসিব । হাসিবের বাবা ওকে ডাকতে গেলে প্রিন্সিপ্যাল স্যার বারণ করলেন । এরপর হঠাৎ
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর একটা ফোন এলো । প্রিন্সিপ্যাল স্যার ফোনে কথা বলে হাসিবের
বাবার কাছে এলেন ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ আচ্ছা্ আমাকে এখন যেতে হবে ।
হাসিবের বাবাঃ
কষ্ট করে এলেন, এর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই । আমার স্কুলের অন্য কোন ছাত্র হলেও আমি তাকে দেখতে
যেতাম । যা হোক ভালো থাকবেন । ছেলের যত্নু রাখবেন ।
হাসিবের বাবাঃ
আচ্ছা স্যার ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যার চলে এলেন ।
এদিকে সাত্তার
স্যার এর ক্লাস শেষ । টিফিন পিরিয়ড । আরিক টিফিন খাচ্ছিল । নুডুলস ।
আরিকঃ (খেতে
খেতে) যাক বাবা । আজকে পুষ্প নাই । তুষারও নাই । নাইলে টিফিন আর খাওয়া হইত না ।
একটু সামনেই কথা
বলছিল তৃণ আর রাতুল ।
রাতুলঃ এখন বল
কিভাবে কি করবি ।
তৃণঃ আমি তো
বুঝতে পারছি না । কি করবো ।
রাতুলঃ কে নিতে
পারে? আর তাছাড়া কেউ তো জানত না আমার ব্যাগেই ঐ কাগজ আর টাকা আছে ।
তৃণঃ তখন ফারিহা
বিনতে আলী এলো রাতুলের কাছে ।
ফারিহা বিনতে
আলীঃ রাতুল, ইংরেজি বাড়ির কাজ করেছো?
রাতুলঃ করেছি ।
কিন্তু খাতাটা হারিয়ে গেছে ।
ফারিহা বিনতে
আলীঃ খাতা হারিয়ে গেছে?
রাতুলঃ হ্যাঁ ।
ওর মধ্যে ৪০০ টাকাও ছিল ।
ফারিহা বিনতে
আলীঃ ইশ । এক কাজ করতে পারো ।
রাতুলঃ কি কাজ?
ফারিহা বিনতে
আলীঃ তোমরা অফিস রুমে যেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পারো ।
রাতুল আর তৃণ
এবার দুজন দুজনের দিকে তাকাল ।
রাতুল সতিই তো!
সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই তো ল্যাটা চুকে যায় ।
তৃণঃ ঠিক । এই
বুদ্ধিটা আমার আগে যে কেন আসে নি । তাহলে আমার কোন ঝামেলা করতে হতো না ।
রাতুলঃ তাহলে চল
অফিস রুমে যেয়ে কোন আঙ্কেলকে বলি ।
তৃণঃ হ্যাঁ চল ।
আজ ঐ লাভ লেটার বহনকারির একদিন, কি আমার একদিন ।
এদিকে
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এসে উনার ল্যাপটপ বাগে নিয়ে বের হলেন । তারপর উনার রুমের
দারোয়ানকে বললেন,
প্রিন্সিপ্যাল
স্যারঃ শোনো, আমি ১ মাসের জন্য ঢাকা যাচ্ছি । আমি তাড়াহুড়োর মধ্যে আছি তাই কাউকে
কিছু বলতে পারলাম না । তুমি রাখিবুল স্যারকে বোলো এদিকটা সামলে নিতে । আর আমার রুমে
অন্য কাউকে ঢুকতে দিয়ো না । কারণ অনেক
গোপনীয় কাগহ পত্র আছে এখানে ।
দারোয়ান আঙ্কেলঃ
আইচ্ছা স্যার ।
প্রিন্সিপ্যাল
স্যার চলে গেলেন ।
তৃণ আর রাতুল
অফিস রুমে এলো । একজন কর্মচারী দেখে বলল,
তৃণঃ আঙ্কেল,
আমাদের ৪০০ টাকা কেউ চুরি করেছে, আপনি আমাদের ক্লাসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে
পারেন?
কর্মচারী
আঙ্কেলঃ সিসিটিভি ফুটেজের যে মেইন কম্পিউটার ওটা তো প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমে ।
প্রিন্সিপ্যাল স্যার ই সিসিটিভি কন্ট্রোল করেন ।
রাতুলঃ তাহলে
কি করবো আমরা?
কর্মচারী
আঙ্কেলঃ যাও, প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বলে দ্যাখো । আমার মনে হয় না উনি মানা করবেন ।
তৃণঃ আচ্ছা
থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কেল ।
তৃণ আর রাতুল
অফিস রুম থেকে বেড়িয়ে প্রিন্সিপ্যাল স্যার
এর রুমের সামনে আসতেই দেখল রুমের দারোয়ান
রুম তালা দিচ্ছে ।
তৃণঃ আঙ্কেল,
প্রিন্সিপ্যাল স্যার কি আছেন?
দারোয়ান আঙ্কেলঃ
না। উনি তো ১ মাসের জন্য ঢাকা চলে গেছেন ।
তৃণ আর রাতুল এই
কথা শুনে হতাশ হয়ে পড়লো । যেন ওদের মাথার ওপর বাজ পড়লো । তালা লাগানো শেষে দারোয়ান
আঙ্কেল তৃণকে বললেন,
দারোয়ান আঙ্কেলঃ
কেনো? কিছু দরকার?
তৃণঃ আচ্ছা,
আমরা কি সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পারি?
দারোয়ান আঙ্কেলঃ
না। উনি যাবার সময় উনার রুমে কাউকে যেতে বারণ করে গেছেন ।
বলেই দারোয়ান
আঙ্কেল চলে গেলেন । তৃণ আর রাতুল ওখানেই পরাজিত বীরের মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল । কিছুক্ষণ পড় মাথা তুলে তৃণ বলল,
তৃণঃ আমি আসল
দোষীকে খুজে বের করবই ।
এদিকে লামিয়ার
সাথে দেখা করতে এলো নাবিলা । দুজনেরই মন খারাপ ।
নাবিলাঃ এই
লামিয়া জানিস, একটা খারাপ খবর আছে ।
লামিয়াঃ তোর আর
কি খারাপ খবর থাকবে । কষ্ট তো যত আমার ।
নাবিলা কি কষ্ট?
লামিয়াঃ (কান্না
কান্না স্বরে) স্টার জলসার একটা সিরিয়াল শেষ হয়ে যাচ্ছে ।
নাবিলাঃ ও ।
লামিয়াঃ তুই তো
ও বলেই ছেড়ে দিলি । আমার যে কত কষ্ট সেটা তুই কিভাবে বুঝবি । সেই আমি যখন ক্লাস
টুতে পড়ি, তখন এই সিরিয়ালটা শুরু হয়েছিলো । কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই সিরিয়ালটার
সাথে ।
নাবিলাঃ হ্যাঁ
রে । আমিও তো মা নাটক দেখতাম । কত বছর ধরে ছিলো । ঐ সিরিয়াল শেষ হওয়ায় আমি ৩ দিন
ভাত খাই নি ।
লামিয়াঃ আহারে ।
আচ্ছা লিপস্টিকের ব্যাপারে কি যেন বলছিলি?
নাবিলাঃ ও
হ্যাঁ, শোন । আমি বলেছিলাম না, আমার একটা লিপস্টিক হারিয়ে গিয়েছিলো?
লামিয়াঃ হ্যাঁ,
পড়ে তো আবার খুজেও পেয়েছিলি ।
নাবিলাঃ আমি যে
লিপস্টিকটা খুজে পেয়েছিলাম, ওটা আমার নয় ।
লামিয়াঃ মানে?
নাবিলাঃ হ্যাঁ ।
আমি যেদিন লিপস্টিক টা হারাই, ওইদিন আমার লিপস্টিক অর্ধেক ব্যাবহার করা ছিল । পড়ে
আমি ঠিক ঐ লিপস্টিকটার মতোই আরেকটা লিপস্টিক খুজে পাই । আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো
আমারই । আমি টয়লেটে এই লিপস্টিকটা পেয়েছিলাম । বাসায় যেয়ে আর খেয়াল ছিল না, ব্যাগ
থেকে বেরও করা হয় নি । গতকাল ব্যাগে হঠাৎ যখন এটা চোখে পড়ে, তখন দেখি, এটা পুরো
ভরা ।
লামিয়াঃ তাহলে
কার হতে পারে এটা?
নাবিলাঃ কি জানি
।
লামিয়াঃ এখন কি
করবি এটা নিয়ে?
নাবিলাঃ কি আর
করবো, যেখানে পেয়েছি, সেখানে আবার রেখে দিয়ে আসবো ।
লামিয়াঃ ধুর ধুর
। তোর কাছেই রেখে দে ।
নাবিলাঃ তোর কি
মাথা খারাপ? অন্য কারো জিনিস এভাবে নিতে নেই
। জানিস না?
লামিয়াঃ তাহলে
কি করবি এটা নিয়ে?
নাবিলাঃ ঐ যে,
আবার টয়লেটে রেখে দিয়ে আসবো । এরপর যা হয়, হবে ।
এদিকে
প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুম থেকে ক্লাসে ফিরল রাতুল আর তৃণ । রাতুল ক্লাসরুমে এসেই
বেঞ্চের কাছে এলো । তৃণ তখন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সাকিবের সাথে গল্প করছে । রাতুল
হঠাৎ দেখল, ওর বেঞ্চের ওপর সেই খাতা, যে খাতাটা হারিয়ে গিয়েছিলো । খাতাটা আনন্দের
সাথে খুলে ৪০০ টাকা পেলেও সেই কাগজটা আর পেলো না । রাতুল তখন তৃণকে ডাকল । তৃণর
সাথে সাথে সাকিবও এলো ।
তৃণঃ কি হুয়েছে?
রাতুলঃ দ্যাখ,
আমার খাতা পেয়েছি । এর ভেতর টাকা ঠিকই আছে, কিন্তু লাভ লেটারটা নেই ।
তৃণঃ আমার
ভাগ্যটাই খারাপ রে ।
সাকিবঃ কি হইসে?
তৃণঃ না, কিছু
না ।
তৃণ সাকিবের
কাছে সবটা গোপন রাখল । কারণ ও চায় নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে তারপর সবার সামনে
সত্যিটা বলতে । কাগজটা লুকাতে রাতুলকেই শুধু বলেছে ও । আর কাউকে বলতে চায় না ।
তৃণ বারান্দায়
চলে এলো । রাতুলও তৃণর সাথে বারান্দায় চলে এলো ।
রাতুলঃ কি
ভাবছিস তুই?
তৃণঃ ভাবছি কে
করতে পারে কাজটা । এতে কার কি লাভ?
রাতুলঃ হতে পায়
যে চিঠিটা রেখেছে তার অনেক লাভ ।
তৃণঃ মানলাম
চিঠিটা রেখে গেছে, কোন মেয়ে হয়তো সাবিতকে পছন্দ করে এই চিঠিটা দিয়েছে । এতে তার
লাভ আছেই । কিন্তু কেউ আবার ঐ চিঠিটা পেয়ে কি লাভ করতে পারে বলতো আমায়?
রাতুলঃ সেটাও
ঠিক । কিন্তু এখন করবিটা কি?
পাশ দিয়ে তখন
হেঁটে যাচ্ছিলো ফারিহা মুস্তারি আর শিমলা ।
ফারিহা
মুস্তারিঃ আচ্ছা মিথ্যে বলে মানুষের কি লাভ বলতো? এই যে আমাদের মিথ্যে বলে আইসিটি
ক্লাসে নিয়ে গেলো, এতে কি লাভ হল বলতো?
শিমলাঃ আরে যে
নিজের বন্ধুর ক্ষতি করে, সে তো সবার সাথে অনায়াসে মজা করতে পারে । এটাও বুঝলি না
তুই ।
বলেই হাসতে
হাসতে চলে গেলো ওরা । তৃণ আর রাতুল সবটা শুনল । তৃণ হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো ।
তৃণঃ আসলেই তো?
মিথ্যে বলে কি লাভ?
রাতুলঃ কিরে?
কিসের কথা বলছিস?
তৃণঃ ঐযে
ভাইয়াটার কথা মনে আছে? ঋজু নাম ।
রাতুলঃ হ্যাঁ,
আইসিটি ল্যাবের যাবার কথা বলল যে ভাইয়াটা ।
তৃণঃ হ্যাঁ । ঐ
ভাইয়াটা আমাদের মিথ্যে বলে কি লাভ করলেন?
রাতুলঃ সত্যিই
তো! এটা তো ভেবে দেখিনি!
তৃণঃ চল । উনাকে
খুজে দেখি । হতে পারে উনিই এর সাথে জরিত ।
রাতুলঃ কিন্তু
খুজবি কিভাবে? উনার ক্লাস, রোল কিছুই তো জানি না ।
তৃণঃ চল তো ।
ফার্স্ট ইয়ারে যেয়ে দেখি । পাই নাকি ঋজু
নামের কাউকে ।
রাতুলঃ কিন্তু
টিফিন পিরিয়ড এর তো আর মাত্র ১০ মিনিট আছে ।
তৃণঃ আরে চল তো
। পরের ক্লাসটা মিস দেবনে ।
রাতুলঃ এরপর কি
ক্লাস?
তৃণঃ ধর্ম ।
রাতুলঃ কি! না ।
আমি দিতে পারবো না মিস । সেবার মনে নেই, রিক যখন ছিল, ওরা ধরা খেয়েছিল, স্যার ওদের
ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলো ।
তৃণঃ ধুর, চলতো
। স্যার মনে করবেনে আমরা ফুটবল খেলতে গেসি ।
রাতুলঃ আরে বাদ
দে না । প্লিজ ।
তৃণঃ চল তো ।
রাতুলঃ তুই যা ।
আমি ক্লাসে গেলাম ।
কথাটি বলে যেই
রাতুল চলে আসতে গেলো, অমনি তৃণ বলল, “আচ্ছা চল । আমরা ১০ মিনিট পরেই ফিরে আসবো ।
রাতুলও রাজি হয়ে
গেলো । এরপর ওরা চলে গেলো তিন তলায় । কলেজের স্টুডেন্টরা সব বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে । কেউ কেউ ক্লাসে আছে । অনেকে
আবার টয়লেটে । তৃণ আর রাতুল টয়লেট, ক্লাসরুম, বারান্দা খুজল কিন্তু খুজে পেলো না
ঋজু নামক ছেলেটাকে । খানিক বাদে তৃণ দেখতে পেলো একজন ছাত্র টয়লেটের বা পাশের
ক্লাসরুমগুলোর মাঝের ক্লাসরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
তৃণঃ চল উনাকে
জিজ্ঞাস করি ।
রাতুলঃ চল । আর
কিন্তু ৫ মিনিট আছে ।
তৃণ আরে চলতো ।
তৃণ রাতুলকে নিয়ে গেলো ঐ ভাইয়াটার কাছে । নেমপ্লেটে নামটা দেখল, অর্ক ।
তৃণঃ অর্ক
ভাইয়া, আমার একটা সাহায্য লাগবে ।
অর্ক ভাইয়া অবাক
হয়ে তৃণর দিকে তাকাল ।
অর্কঃ তুমি আমার
নাম জানলে কি করে?
তৃণঃ বুকের ডান
পাশে নেমপ্লেটটা দেখে ।
অর্কঃ বাহ । কি
সুন্দর বুদ্ধি ।
তৃণঃ আচ্ছা অর্ক
ভাইয়া? আপনি কি ঋজু নামের কাউকে চেনেন?
অর্ক ভাইয়াঃ
ঋজু!
তৃণঃ হ্যাঁ, ঋজু
।
অর্কঃ না, আমি
তো ফার্স্ট ইয়ারের সবাইকে চিনি, কিন্তু এই ঋজু নামের কাউকে তো চিনি না ।
তৃণঃ সত্যি
বলছেন তো?
অর্কঃ সত্যি
বলতে গেলে, নতুন যদি কেউ আসে তাহলে হতে পারে । তবে পুরনো যারা আছে, তাদের সবাইকে
আমি চিনি । আর হ্যাঁ, আর্টস কমার্সের ব্যাপারটাও আমি বলতে পারবো না ।
তৃণঃ ও আচ্ছা ।
রাতুলঃ যাবি
আর্টস কমার্সের শাখায়?
তৃণঃ যেয়ে লাভ
নেই ।
রাতুলঃ কেন?
তৃণঃ কারণ ঋজু
ভাইয়ার কাঁধে আমি যে ব্যাচটা দেখেছি, সেই ব্যাচটা লাল । আর লাল ব্যাচের ধারকরা
সাইন্সের ।
অর্কঃ কেন? তোমরা ওকে দিয়ে কি করবা?
তৃণঃ না এমনি ।
একটু কাজ ছিল ।
তখনই টিফিন
পিরিয়ড শেষ হবার ঘণ্টা বেজে গেলো ।
রাতুলঃ এই তৃণ,
ঘণ্টা বেজে গেছে । চল, ক্লাসে চল ।
তৃণঃ চল যাই ।
সিঁড়ি বেয়ে তিন
তোলা থেকে নেমে দোতলায় নিজেদের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছিলো তৃণ । স্যার আসার সময়
হলেও অনেকেই বাইরে দাঁড়িয়ে এখনও গল্প করছে
। হাতে অনুপস্থিতদের নামের লিস্ট নিয়ে অফিস রুমে যাবার জন্য এদিকেই রাগে গজ
গজ করতে করতে এদিকেই আসছিলো প্রতীক । শাহিনে নিয়ম হল নাম ডাকার পর একটা নীল কাগজে
যারা অনুপস্থিত তাদের নাম লিখে অফিস রুমে দিয়ে
আসা হয়, আর সেই রোলগুলোর নাম্বারে ম্যাসেজ পাঠানো হয় । প্রতীককে দেখে তৃণ
বলল,
তৃণঃ কিরে, এতো
রেগে যাচ্ছিস কই?
প্রতীকঃ আরে
ধুর! সাকিবকে সেই কখন বলসিলাম এই লিস্টটা অফিস রুমে দিয়ে আসার জন্য । বদমাইশটা
ভুলে গেসে, এখন কষ্ট করে আমারই যাওয়া লাগতেসে । তৃণর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো ।
হাসিমুখে প্রতীকের হাত থেকে কাগজটা নিয়েই অফিস রুমের দিকে দিলো একটা দৌড় । প্রতীক
কিছু বলতে গেলে তৃণ দৌড়াতে দৌড়াতে বলে, “আমি পৌঁছে দেবো ।”
অফিসরুমে এসে দরজার সামনে দাঁড়ালো । যিনি ঐ কম্পিউটারে
সব ম্যাসেজ পাঠানোর ও আরও বিভিন্ন কাজ করেন, উনার নাম মাসুদ । আরেকটা আপুও কাজ
করেন, তবে সেদিন মাসুদ ভাইই কাজ করছিলেন । তৃণ যেয়েই একটা অদ্ভুত হাসি দিলো । মাসুদ ভাই কাজ করতে
করতেই কথা বলতে লাগলেন ।
মাসুদ ভাইঃ কি
চাই?
তৃণঃ শিটটা দেবো
।
মাসুদ ভাইঃ
কিসের শিট?
তৃণঃ
অনুপস্থিতির ।
বাম হাত দিয়ে
কাজ করতে করতে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন মাসুদ ভাই ।
মাসুদ ভাইঃ দাও
।
তৃণ শিটটা দিলো । দিয়ে দাঁড়িয়েই রইল ।
মাসুদ ভাইঃ কি
আর কিছু লাগবে?
তৃণঃ ভাই আপনারে
আজকে জোস লাগতেসে ।
মাসুদ ভাইঃ
(মৃদু হেসে) থ্যাঙ্ক ইউ ।
তৃণঃ ভাই আজকে
যে বডি স্প্রেটা দিসেন, অস্থির ।
মাসুদ ভাইঃ আজকে
আমি কোন বডি স্প্রেই দেইনি ।
তৃণঃ ভাই আপনার
শার্টটাও অস্থির চকচক করতেসে ।
মাসুদ ভাই এবার
রেগে গিয়ে কাজ ছেড়ে উঠে তৃণর কাছে এগিয়ে এসে বললেন ।
মাসুদ ভাইঃ এই
তোমার সমস্যাটা কি বলোতো?
তৃণ হালকা ভয়
পেয়ে কেঁপে ওঠে ।
মাসুদ ভাইঃ কি
দরকার ভালো মতো বলো নাইলে ক্লাসে যাও ।
তৃণঃ আরে ভাই
রাইগেন না । রাগলে শরীর খারাপ হয় ।
মাসুদ ভাই
চেয়ারে বসলেন ।
মাসুদ ভাইঃ
হ্যাঁ বলো কি লাগবে তোমার ।
তৃণঃ একজন একটা
নাম বলবো, ঐ নামের কোন ছেলে এই স্কুলে পড়ে কি না ।
মাসুদ ভাই একটু
অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তৃণর দিকে তাকাল । তৃণও মাসুদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ৩২ টা দাঁত
বের করে একটা হাসি দিলো । এরপর মাসুদ ভাই কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে স্টুডেন্ট
লিস্টের পেইজে গেলেন ।
মাসুদঃ নাম কি?
তৃণঃ আমার নাম
তৃণ ।
মাসুদ ভাইঃ
তোমার নাম না । যারে খুজতেসো তার নাম ।
তৃণঃ ও আচ্ছা ।
ওর নাম ঋজু ।
মাসুদ ভাই ঋজু
লিখে সার্চ দিলেন । পেইজ লোড হচ্ছিলো ।
তৃণঃ কিছু
পেলেন?
মাসুদ ভাইঃ
দেখছি তো । অপেক্ষা করো ।
কিছুক্ষণ লোডিং
হবার পড় একটা লিস্ট এলো ।
মাসুদ ভাইঃ
হ্যাঁ একজনকে পেয়েছি ঋজু নামের । কিন্তু এই ছেলে তো এই বছরই এস এস সি দিয়ে চলে
গেছে ।
তৃণঃ কি! কিন্তু
আমি তো উনাকে ফার্স্ট ইয়ারের ড্রেস পড়ে স্কুলে দেখসি ।
মাসুদঃ এই তোমার
মনে হয় মাথা খারাপ । এস এস সি দিয়ে মানুষ ঘুরতে যায় । ও এই স্কুলে এসে কি করবে
শুনি?
তৃণঃ আচ্ছা,
উনার কি কোন ছবি আছে?
মাসুদ ভাই
কম্পিউটারে কি কি করে ছবি বের করলো । এটা সত্যিই সেই ঋজু ভাই যাকে তৃণ দেখেছিল ।
তৃণঃ হ্যাঁ,
ইনিই তো ।
মাসুদ ভাইঃ তো এ
এখন কি করবে স্কুলে?
তৃণঃ সেটা আমি
কিভাবে বলব? আচ্ছা ফোন নাম্বার দিতে
পারবেন আমাকে?
মাসুদ ভাইঃ ফোন
নাম্বার দিয়ে তুমি কি করবা?
তৃণঃ প্লিজ
মাসুদ ভাই । আমার খুব লাগবে ।
মাসুদ ভাইঃ
(একটু অবাক হয়ে) তুমি জানো না? একটা ছেলে কি লাভ লেটার দিয়ে আরেক্তটা ছেলেকে
ফাসিয়েছে? তুমি এখন একে ফাঁসাতে চাচ্ছ?
তৃণর বুকে কথাটা
তীরের মতো বিধলো । আর কিছু না বলেই ওখান থেকে মন খারাপ করে চলে এলো । মাসুদ ভাইও
আর কিছু না বলে নিজের কাজ করতে লাগলো।
এদিকে ধর্ম
ক্লাস হচ্ছে । ক্লাসে আল আমিন স্যার । তাহের স্যার এর বদলে আলামিন স্যার কে নেয়া হয়েছে ইসলাম শিক্ষা
ক্লাসের জন্য । আলামিন স্যার ক্লাস নিচ্ছেন । নউশিন রিডিং পড়ছে । আলামিন স্যার এর
নিয়ন, একজন রিডিং পড়বে, হঠাৎ কোন একটা সময় তাকে বসতে বলে অন্য কাউকে দাঁড়াতে বলে সেই জায়গা থেকে শুরু
করতে বলে । যদি শুরু করতে না পারে, তাহলে
তাকে দাঁড়িয়ে রাখতে বলেন । শেখ সোহান মন মরা
হয়ে বসে আছে । সামনে বইয়ের পাতা
বাতাসে উলটে যাচ্ছে, অথচ পরায় মন নেই ওর । আলামিন স্যার এর নজর পড়লো ওর দিকে । নউশিনকে বসতে বলে শেখ সোহানকে
ইশারা করে বললেন,
আলামিন স্যারঃ
এই ছেলে, তুমি দাঁড়াও ।
শেখ সোহান বুঝতে
পারে নি । আলামিন স্যার ধীরে ধীরে
শেখ সোহানের দিকে এগিয়ে আসলেন । সোহানের পাশের জন সোহানকে কিছু
বলতে গেলে আলামিন স্যার ইশারা করে বাধা দেন ।
আলামিন স্যার ওর কাছে এসে ধাম করে সোহানের পিঠে একটা থাবা বসিয়ে দিলেন ।
শেখ সোহান হঠাৎ চমকে মাথা নিচু কর উঠে
দাঁড়ালো ।
আলামিন স্যারঃ
কি ব্যাপারঃ পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না?
শেখ সোহান কিছু
বলে না । আলামিন স্যার বইটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে একটা লাইন দেখিয়ে দিয়ে বললেন, “এই
লাইন থেকে পড়া শুরু করো ।” বলেই আলামিন স্যার নিজের জায়গায় চলে গেলেন । শেখ সোহান মিন
মিন কওরে পড়া শুরু করলো । আলামিন স্যার ওকে জোরে একটা ধমক দিলেন ।
আলামিন স্যারঃ
অসভ্য । সকালে কি খেয়েদেয়ে আসো নি?
শেখ সোহান কিছু
বলল না ।
আলামিনঃ পুরো
ক্লাস দাঁড়িয়ে থাকো । আর ওর পাশের জন পড় ।
এরপর শেখ
সোহানের পাশের জন পড়া শুরু করলো ।
এদিকে তৃণর মনটা
একটু ভালো করার জন্য চলে গেলো মাঠে । মাঠে তখন ফুটবল খেলার প্র্যাকটিস হচ্ছে ।
তৃণকে দেখে শাহরিয়ার সোহান এগিয়ে এলো ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
কিরে, ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছিস?
তৃণঃ না । মন
ভালো করার জন্য একটু ঘুরতেসি ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
আচ্ছা তুই কি সত্যি, সাবিতের সাথে এই ইয়ার্কি করসিস?
তৃণঃ (কিছুক্ষণ
চুপ থেকে) তোর কি মনে হয়?
শাহরিয়ার সোহানঃ
আমি তো বিশ্বাস করি না ।
তৃণঃ তাহলে তাই
।
শাহরিয়ার সোহানঃ
যদি বলি বিশ্বাস করি?
তৃণঃ তাহলেও তাই
।
শাহরিয়ার সোহানঃ
(হালকা বিরক্ত হয়ে) বল না সমস্যা কি ।
তৃণঃ না জানলেও
চলবে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ ঢং করিস না ।
তৃণঃ শুনতে চাস
তো, হ্যাঁ আমিই করেছি ।
এক প্রকার রাগ
করেই শাহরিয়ার সোহানকে এই কথাটা বলল তৃণ ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
তুই মন থেকে কথাটা বলতেসিস না ।
তৃণ কিছু বলল না
।
শাহরিয়ার সোহানঃ
আর আমিও বুঝতেসি না । মানলাম এই ধরনের ইয়ার্কি করলিই । কিন্তু তাতে এমন কি যায়
আসে? বড় ধরনের কিছু তো আর হয় নাই । মানে কেন যে এমন করেন স্যাররা বুঝি না ।
তৃণঃ দোয়া করিস
।
শাহরিয়ার সোহানঃ
কিসের জন্য?
তৃণঃ আমি যা
করছি তাতে যেন সফলতা পাই ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
(হালকা হেসে) তুই কি করছিস আমি জানি না । কিন্তু দোয়া করি ।
আমাদের সব বন্ধুরা যেন ভালো থাকে ।
তৃণঃ জানিস,
আমাদের এই এস এস সি ব্যাচ ২০১৯ আর সবার চেয়ে ভিন্ন । সবার মাঝে বন্ধুত্ব খুব ভালো,
সবার আচরণও খুব ভালো । খানিক ভালো লাগা, খারাপ লাগা এসব স্বাভাবিক । কিন্তু তাছাড়া
সব কিছু ঠিক আছে । এমনি দেখ, অন্যান্যদের মাঝে খারাপ কিছু না কিছু থাকবেই ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
কথাটা ভুল । পৃথিবীতে কারো মাঝেই খারাপ কিছুই নেই । একজনের যে ভালো লাগা, খারাপ
লাগা অন্য কারো সাথে নাও মিলতে পারে । সেক্ষেত্রে
একজনকে আরেকজনের খারাপ লাগা অস্বাভাবিক না । কিন্তু আসলে সবাই ভালো ।
তৃণ কিছু বলল না
।
খেলার মাঝখান
থেকে শাহরিয়ার সোহানকে ডাকল মাসুদ ।
শাহরিয়ার সোহানঃ
আচ্ছা, আমি যাই তাহলে ।
বলেই শাহরিয়ার
সোহান চলে গেলো ।
ধর্ম ক্লাস শেষ
। ক্লাস থেকে আলামিন স্যার চলে যাবার পড় ক্লাসে ফিরে এলো তৃণ । মেয়েদের এপাশে মাথা
নিচু করে শুয়ে আছে বৈশাখী । ওকে শুয়ে থাকতে দেখে সামিয়া এলো ওর কাছে ।
সামিয়া রহমানঃ
কিরে, তোর মন খারাপ ক্যান?
বৈশাখীঃ এমনিই
রে ।
সামিয়া রহমানঃ
আরে বল না কি হইসে?
বৈশাখীঃ
সর্বনাশের মাথায় বাশ পড়সে ।
সামিয়াঃ (অবাক
হয়ে) মানে??
বৈশাখীঃ ধুর ।
ঢাকায় যারা ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতায় গেছে, তারা কততো মজা করছে, আর আমরা বসে বসে
বোরিং ক্লাস করছি ।
সামিয়াঃ আহারে ।
চল এক এই কষ্টে এক মিনিটের নীরবতা পালন করি ।
বৈশাখীঃ ফাজিল!
আমি কষ্টে মরি, আর তুই ফাইজলামি করতেসিস???
সামিয়াঃ না না ।
আমি তো গান গাচ্ছি । আমি তোমার মনের ভেতর, একবার ঘুরে আসতে চাই.........
বৈশাখীঃ ঠিক ।
কারও একটা মনের ভেতর ঘুরে আসতে হবে ।
সামিয়াঃ (একটু
অবাক হয়ে) মনের ভেতর ঘুরে আসবি মানে?
বৈশাখীঃ শোন ।
গতকাল রাতে তামান্নার সাথে মেসেব্জারে কথা বলছিলাম । তামান্না বলল, ওখানে নাকি
একটা আপু আসে, নাম সনিয়া । আপুটা দেখতে অস্থির সুন্দর । কিন্তু আপুটা দেখতে যেমন
সুন্দর, আচরণও তেমন খারাপ । এক নাম্বারের বদমাইশের হাড্ডি ।
সামিয়াঃ তোর
মতো?
বৈশাখীঃ ইস!!
কিযে বলিস না । আমার মতো ইনোসেন্ট আর কেউ আসে নাকি?
সামিয়াঃ (ভেংচি
কেটে) আহা! কি ইনোসেন্ট রে বাবা ।
বৈশাখীঃ (বুক
ফুলিয়ে) এই বৈশাখী কখনো মিথ্যা কথা বলে না ।
সামিয়াঃ (উপরের
দিকে তাকিয়ে) আল্লাহ আমারে বাচাও!
বৈশাখীঃ থামত ।
তারপর শোন । ঐ আপুটাকে দেখে আমাদের শাহিনের একটা ভাইয়া নাকি পাগল হয়ে গেছে । কতটা
পাগল হয়েছে সেটা দেখার জন্য ঐ আপুটা নাকি একবার ঐ ভাইয়াটাকে বলসিলো, আর ঐ ভাইয়াটা
নাকি বলসিলো, আপুতার জন্য ভাইয়াটা সব করতে পারে ।
তারপর থেকে আপুটা খালি ভাইয়াটাকে উল্টাপাল্টা কাজ করতে বলে আর ঐ ভাইয়াটাও
নাকি সব করে ।
সামিয়াঃ কোন
ক্লাসে পড়ে ভাইয়াটা?
বৈশাখীঃ সেটা
জানি না । তবে আরেকটা মজার ব্যাপার শোন । ঐ আপুটা ঐ ভাইয়াটাকে বলেছে আপুটা
নাকি যশোর শাহিনে পড়ে । অথচ আপুটা
কুর্মিটোলায় পড়ে ।
সামিয়াঃ বুঝলাম
। তুই জানি কি বলতেসিলি কার মনের ভেতর ঢুকবি ।
বৈশাখীঃ আমিও
ভাবতেসি, ঐ আপুটার ছবি দিয়ে কোন একটা ছেলের সাথে এরকম ফাইজলামি করবো ।
সামিয়াঃ এইতো!
আপুতার সাথে তোর মিল পাইসি! তুইও বদমাইশের হাড্ডি ।
বলতে বলতে
সামিয়া দিলো এক দৌড় । বৈশাখীও ওকে মারার জন্য বেঞ্চ থেকে উঠে দিলো এক দৌড় ।
কিছুদুর গিয়ে
দুজনেই হাফিয়ে গেলো । এরপর সামিয়া হঠাৎ দাঁড়িয়ে যেয়ে বলল,
সামিয়া রহমানঃ
আচ্ছা, তুই কি সত্যি বললি না মিথ্যা?
বৈশাখীঃ কোন
ব্যাপারে?
সামিয়া রহমানঃ ঐ
আপুটার কথা?
বৈশাখীঃ সত্যিই
তো বলসি, কেন?
সামিয়া রহমানঃ
ওরা তো গেলই আজকে, এখনও রাস্তায়, তাহলে কি দিয়ে কি?
বৈশাখীঃ পান্তা
ভাতে ঘি ।
সামিয়া রহমানঃ
মানে?
বৈশাখীঃ আরে
বাবা, তামান্নার একটা বন্ধু আসে কুর্মিটোলায় । ।ওর কাছ থেকে শুনসে । তারপর আমাকে
বলসে ।
সামিয়াঃ এই এই!
চল । স্যার আসচে ।
জসিম স্যারকে
আসতে দেখে ক্লাসরুমে ঢুকে গেলো বৈশাখী আর সামিয়া রহমান । জসিম স্যার ক্লাসে এলেন ।
সেদিন শেখ সোহান
আর আরিফ পাশাপাশি বসেছিল । আরিফ ছিল ডান পাশে । বাম পাশে তৃণ ছিল । আপাতত সে
জায়গাটা ফাঁকা । কারণ তৃণ এখনও বাইরে ।
আরিফঃ একটা খবর
শুনে আসলাম ।
শেখ সোহানঃ কি
খবর?
আরিফঃ হাসিবের
জ্ঞান ফিরসে ।
শেখ সোহানঃ
সত্যি?
আরিফঃ হুম ।
শেখ সোহানঃ
আলহামদুলিল্লাহ । তুই কোত্থেকে শুনলি?
আরিফঃ আশরাফুল
স্যার হাসান স্যার এর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো, তখন শুনসি ।
শেখ সোহানঃ
(একটু মন খারাপ করে) এবার আমার শাস্তি
হবার পালা ।
আরিফঃ তাও হবে
না ।
শেখ সোহানঃ
ক্যান?
আরিফঃ কারণ
প্রিন্সিপ্যাল স্যার ১ মাসের জন্য ঢাকায় গেছেন ।
শেখ সোহানঃ
মাত্র একমাস । দেখতে দেখতেই কেটে যাবে ।
আরিফঃ তুই এবার
ওসব রেস্লিং মেস্লিং বাদ দে ।
শেখ সোহান কিছু
বলল না ।
এদিকে তৃণ
খেয়ালই করে যে একটা ক্লাস শুরু হয়ে অন্য ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। তাই আর ক্লাসে না
গিয়ে ওদের ক্লাসরুমের দুই ক্লাস পাশে একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে যেয়ে বসে পড়লো । ওর
পুরনো সব কথা বার বার মনে পড়তে লাগলো । নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানিও পড়লো ।
ওদিকে ক্লাসরুমে
একটা বই আনতে ভুলে গেছেন জসিম স্যার । এরপর জসিম স্যার সাকিবকে ডাকলেন ।
সাকিবঃ জী স্যার
বলেন ।
জসিম স্যারঃ এই
যাও তো আমার টেবিল থেকে একটা বই আনো তো ।
সাকিবঃ স্যার কি
বই?
জসিম স্যারঃ
কেমিস্ট্রি সল্ভার ।
সাকিবঃ এ কি নাম
স্যার?
জসিম স্যারঃ আহ!
যাও তো । তাড়াতাড়ি আনো ।
সাকিব ক্লাসরুমে
থেকে বেরলো । টিচার্স রুমে যেতে হলে ওকে তৃণ যে ফাঁকা রুমে বসে আছ, ঐ রুমটা
অতিক্রম করে যেতে হবে । সাকিব ঐ রুমের সামনে আসতেই তৃণকে দেখে থমকে দাঁড়ালো । আরও
অবাক হল তৃণকে কাঁদতে দেখে । নিঃশব্দে তৃণর কাছে যেয়ে তৃণর কাঁধে হাত রাখল সাকিব ।
তৃণ হঠাৎ হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে “কে?” বলে পিছনে তাকাল । সাকিবকে দেখে আবার উল্টা
ঘুরে চোখ দুটো মুছে আবার সাকিবের দিকে ফিরে তাকিয়ে হালকা হাসিমুখে বলল, “ও তুই? কি
কি করিস?”
সাকিবঃ তুই
কাদছিলি কেন?
তৃণঃ কাদছিলাম?
আমি? (হালকা হেসে) আমি কাদব কেন?
সাকিবঃ ঢং করিস
না । বল কাদছিলি কেন?
তৃণঃ (মনটা
খারাপ করে) আমি মনে হয় হেরে গেলাম রে ।
সাকিবঃ সাবিতের
ব্যাপারটার কারণে?
তৃণঃ হুম ।
সাকিবঃ ও কিছু ।
এসব বড় বড় স্কুলে কিছু ছোট ছোট ব্যাপার ঘটেই থাকে । আর বুঝলি, আমাদের স্কুলের
কয়েকটা স্যার যেন কেমন । সামান্য ইয়ার্কি নিয়ে কেউ এতো কিছু করে?
তৃণঃ তুই কি
বিশ্বাস করিস আমি ওর সাথে ইয়ার্কিটা করসি?
সাকিবঃ
অবশ্যই.................................না । কারণ যদি সত্যিই তুই ইয়ার্কি করতি,
তাহলে স্যারকে অন্তত বইটা দিতি না । আর স্যারকে বইটা দিলেও কাগজটা সরিয়ে রাখতি ।
তৃণঃ হুম । আমি
সেই আসল মানুষটাকে খুজে বেরাচ্ছি, যে এই কাজটা করেছে । কিন্তু আমি কিছুতেই কিছু
করতে পারছি না । ঐ লাভ লেটারটাও আমার হাতছাড়া হয়েগেছে । এখন আসল অপরাধীকে খোঁজা
খুবই দুষ্কর ।
সাকিবঃ ওমর
সানিকে আনবো?
তৃণঃ কাকে?
সাকিবঃ তুই ওমর
সানিকে চিনিস না?
তৃণঃ কে সে?
সাকিবঃ আরে বাবা
অসম্ভবকে সম্ভব করাই যার কাজ ।
তৃণঃ ধুর
ইয়ার্কি করিস না তো এখন ।
ওদিকে ক্লাসে
সাকিব এখনও ফিরে না আসায় জসিম স্যার চিন্তায় পড়ে গেলেন ।
জসিম স্যারঃ কি
ব্যাপার! সাকিব আসতেসে না কেন?
ফারিহা বিনতে
আলীঃ স্যার, ও মনে হয় বই খুজেই পাচ্ছে না ।
জসিম স্যারঃ
দ্যাখো, আবার আমার পুরো টেবিলটাই না তুলে নিয়ে আসে ।
জসিম স্যারঃ এই
তোমরা থামো তো, আমি দেখি কোথায় গেলো ।
এদিকে সাকিব
তৃণর সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তৃণর কাশি শুরু হয় ।
সাকিবঃ কিরে! কি
হল? আরে? আচ্ছা আমি পানি আনছি ।
কথাটা বলার পর
সাকিব যখন রুম থেকে প্রায় বেরিয়েছে, তখন ও জসিম স্যারকে দেখে এদিকে আসতে । তৃণর
কাশি ততক্ষনে থেমেছে । সাকিব আবার রুমের ভেতরে ঢুকে যায় ।
সাকিবঃ ওহ শিট!
তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমি ভুলেই গেসিলাম আমাকে একটা বই আনতে হবে জসিম স্যার এর ।
জসিম স্যার এখন এদিকেই আসছেন ।
তৃণঃ কি করবি এখন?
সাকিবঃ এদিকে
আয়, দরজার আড়ালে লুকাতে হবে । স্যার আমাদের এই রুমে দেখলে আজকে খবর আসে । তোরে
ধরবে ক্লাস ফাঁকি দেয়ার কেসে, আর আমারে ধরবে, ক্লাস ফাঁকি দেয়ায় সাহায্য করার কেসে
।
তৃণ আর সাকিব
যখনই দরজার আড়ালে গেলো, তখনিই জসিম স্যার এই দরজার সামনে এলো । তৃণ আর সাকিব দরজার আড়ালে যাওয়ায় দরজাটা নড়ে ওঠে ।
সেটা জসিম স্যার এর নজরে পড়ে ।
জসিম স্যারঃ
(দরজার দিকে তাকিয়ে) কি ব্যাপার? দরজাটা এভাবে নড়ল কেন?
জসিম স্যার ধীরে
ধীরে দরজার কাছে এগোতে লাগলেন । তৃণ আর সাকিবের বুক ধড়ফড় করচ্ছে । ওরা বুঝতে পারছে
স্যার এদিকেই আসছেন । আজ ওদের স্যার এর হাত থেকে নিস্তার নেই । জসিম স্যার যেই
দরজাটা ধরতে যাবেন, অমনি উনাকে পেছন থেকে ডাকলেন সুজিত স্যার ।
সুজিত স্যারঃ
জসিম স্যার, একটু শোনেন তো ।
জসিম আর দরজা
নড়ার ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে সুজিত স্যার এর কাছে গেলেন ।
জসিম স্যারঃ জী
স্যার বলেন ।
সুজিত স্যারঃ
রাখিব স্যার আপনাকে খুব জরুরী একটা কাজে ডাকছেন । একটু কষ্ট করে রাখিব স্যার এর
রুমে যেতে হবে আপনাকে ।
জসিম স্যারঃ খুব
জরুরী?
সুজিত স্যারঃ
সেটা জানি না, কিন্তু স্যার বলেছেন আপনাকে যেখানেই পাই সেখান থেকেই যেন নিয়ে আসি ।
জসিম স্যারঃ
আচ্ছা, চলেন দেখি কি বলেন স্যার ।
জসিম স্যার চলে
গেলেন ।
তৃণ আর সাকিব
দরজার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো ।
সাকিবঃ তুই এক
কাজ কর । তুই ক্লাসে যা, আমি টিচার্স রুম থেকে বইটা নিয়ে আসি । টিচার্স রুম
দোতলায়, আর রাখিব স্যার এর রুম নিচতলায় । স্যার আমাকে দেখতে পারবেন না ।
বলেই সাকিব চলে
গেলো । তৃণ চলে এলো ক্লাসে । দেখল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতীক ।
প্রতীকঃ কিরে?
তুই সেই কাগজ জমা করসিলি তো?
তৃণঃ (হালকা
হাসিমুখে) হ্যাঁ দিসি ।
প্রতীকঃ আচ্ছা
একটা কথা জিজ্ঞাস করবো তোকে?
তৃণ ভাবল হয়তো
সেই সাবিতের বইতে কাগজ রাখার প্রসঙ্গ । তাই আর কিছু বলল না ।
প্রতীকঃ আচ্ছা,
তোর সম্মতি না থাকলে নাই । এমনি জিজ্ঞাস করতাম আরকি ।
তৃণঃ(হাসিমুখে)
না ঠিক আছে । জিজ্ঞাস কর । ঐ প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি ।
প্রতীকঃ (অবাক
হয়ে হাসিমুখে) এ বাবা, তুই কিভাবে বুঝলি আমি কি জিজ্ঞাস করবো?
তৃণঃ সে সব
বোঝাই যায় । বল কি বলবি ।
প্রতীকঃ বুঝেই
যখন গেছিস, তখন তুইই বল উত্তরটা কি ।
তৃণঃ উত্তরটা
তোর যা মনে হয় সেটাই ।
প্রতীকঃ আমার তো
মনে হয় ১০-১২ তা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে ।
তৃণ এবার অবাক
হয়ে গেলো ।
তৃণঃ ১০-১২ টা
মানে?
প্রতীকঃ হুম ।
১০-১২ টা গার্ল ফ্রেন্ড ।
তৃণ এবার হেসেই
দিলো । তারপর বলল,
তৃণঃ আমি বুঝিনি
তোর প্রশ্ন এটা ছিল । তোর প্রশ্ন অন্যটা ছিল । আমি যেটা ভেবেছিলাম সেটা না ।
প্রতীকঃ না না ।
তুই বলসিস আমি যা মনে করবো সেটাই । আমার মনে হয়েছে ১০-১২ টা, তোর গার্ল ফ্রেন্ড ও
১০-১২ টা ।
তৃণঃ ওরে
প্রতীক, এই দুনিয়ায় মনে হয় আমার জন্য কোন গার্ল ফ্রেন্ড নাই । আমার চেহারা দেখে
কেউ পছন্দ করবে না ।
প্রতীক কেদে
দিলো ।
তৃণঃ এ কি! তুই কাদছিস কেন?
প্রতীকঃ তুই
বললি তোর চেহারা দেখে কেউ তোর গার্ল ফ্রেন্ড হবে না । আমার চেহারা তো আরও ভালো না
। মানে আমার তো আরও হবে না । অ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ...............
তৃণঃ
আচ্ছা......আচ্ছা......যা । আমার ১০-১২ টাই
হবে ।
প্রতীকঃ একেই
বলে, ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইলের মাধ্যমে কারো মুখ থেকে সত্যিটা বের করা ।
বলেই প্রতীক
হাসতে হাসতে চলে গেলো । তৃণ কেবল দাঁড়িয়েই রইল মুখে একটু হাসি নিয়ে ।
ওদিকে সাকিব তখন
টিচার্স রুম থেকে বইটা এনে দেখল তৃণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ।
সাকিবঃ এখনও
ভেতরে যাস নি?
তৃণঃ না ।
প্রতীকের সাথে গল্প করছিলাম ।
তৃণঃ চল ভেতরে ।
তৃণ আর সাকিব
ভেতরে চলে গেলো ।
এরপর স্যার আসার
কোন নাম নেই । ক্লাস শেষ হবার কিছুক্ষন আগে স্যার এসে হাজির । ডেস্কের ওপর বইটা
দেখতে পেয়ে বুঝল সাকিব এসেছে ।
জসিম স্যারঃ
সাকিব কোথায়?
সাকিবঃ (উঠে
দাঁড়িয়ে) এইযে স্যার, আমি এখানে ।
জসিম স্যারঃ কই
গিসিলে তুমি?
সাকিবঃ ও আচ্ছা,
ঐ হাসান স্যার আমাকে একটু ডাকসিলেন কিছু কথা বললেন, এজন্য একটু দেরি হয়ে গেলো ।
কিন্তু আমি এসে দেখি আপনি নেই ।
জসিম স্যারঃ
আচ্ছা বস ।
সাকিব বসলো ।
জসিম স্যারঃ
সময়ও তো আর বেশি নাই । এরপর কার ক্লাস?
ফারিহা বিনতে
আলীঃ স্যার আজিজুল স্যার এর ক্লাস ।
জসিম স্যারঃ
আচ্ছা, তাহলে শোনো । তোমরা কেমিন্ত্রি বইয়ের ৩২ থেকে ৩৬ পেইজ মুখুস্থ করবা ।
সবাই একসাথেঃ স্যার...পারবো না......খুব
বড়......বুঝায় দিতে হবে......স্যার......
জসিম স্যারঃ
আচ্ছ......থামো ।
কথাটি বলেই
স্যার এর চোখ পড়লো মির সামিয়া রহমানের
দিকে । মেয়েটা বেঞ্চের ওপর ঘুমিয়ে ছিল ।
জসিম স্যারঃ এই
ও ঘুমাচ্ছে কেন?
ওর পাশেই ছিল
তাসনিম সুমাইয়া ।
তাসনিম সুমাইয়াঃ
স্যার ও খুব অসুস্থ ।
জসিম স্যারঃ
আচ্ছা ঠিক আছে । সবাই শোনো, সুরা ফাতিহা কার কার মুখস্থ?
ক্লাসরুমে যারা
ভিন্ন ধর্মের ছিল, তারা বাদে বাকি সবাই হাত তুলল ।
জসিম স্যারঃ
আচ্ছা, এবার বলো, সুরা ফাতিহার বাংলা অনুবাদ কে কে পারো?
মাত্র দুজন হাত
তুলল ।
এরপর জসিম স্যার
একটু হেসে বলল,
জসিম স্যারঃ
সুরা ফাতিহা যখন না বুঝে বুঝে মুখস্থ করতে
পারসো, তখন এই ৩২ থেকে ৩৫ পেইজও মুখস্থ করতে পারবা ।
বলেই জসিম স্যার
চলে গেলেন । সবাই হাসাহাসি করতে লাগলো ।
একটু পর ফুটবল
প্লেয়াররা সব ক্লাসে চলে এলো । সেদিনের মতো ওদের প্র্যাকটিস শেষ । তারপর ক্লাসে
এলেন আজিজুল স্যার । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যারও সবার সালামের জবাব
দিয়ে বসতে বললেন ।
আজিজুল স্যারঃ
কি ব্যাপার, সবাই ভালো আছেন তো?
সবাই একসাথেঃ জী
স্যার ।
আজিজুল স্যার
তখন দেখলেন মির সামিয়া রহমানকে বেঞ্চের ওপর শুয়ে থাকতে । তারপর স্যার নিঃশব্দে ওর
কাছে গেলেন । স্যারকে আসতে দেখে তাসনিম সুমাইয়া ওকে ডেকে তুলল । মির সামিয়া
রহমান দাঁড়িয়ে গেল ।
আজিজুল স্যারঃ
কি ব্যাপার, আপনি ক্লাসরুমে ঘুমাচ্ছেন কেন?
মির সামিয়া
রহমানঃ স্যার আমার খুব খারাপ লাগছে ।
আজুজুল স্যারঃ
ডাইরি এনেছেন?
মির সামিয়া
রহমানঃ জী স্যার ।
আজিজুল স্যারঃ
বাসা কি শহরে?
মির সামিয়া
রহমানঃ জী স্যার ।
আজিজুল স্যারঃ
১২ টা ২০ এ বাস আছে, আমি ডায়রি লিখে দিচ্ছি, আপনি বাসায় যেয়ে রেস্ট করেন ।
মির সামিয়া
রহমান ব্যাগ থেকে ডায়রি বের করতেই ব্যাগ থেকে বেরোল দুটো সিগারেটের প্যাকেট, আর
একটি গ্যাস লাইট । ওসব দেখে সবাই অবাক ।
আজজুল স্যারঃ কি
এগুলো?
মির সামিয়া
রহমানঃ স্যার আমিও জানিনা ।
আজিজুল স্যারঃ
তোমার ব্যাগে এই সিগারেটের প্যাকেট এলো কিভাবে?
মির সামিয়া
রহমানঃ সত্যি স্যার, আমি জানিনা ।
আজিজুল স্যারঃ
সিগারেটের প্যাকেট, গ্যাস লাইট সবই তো দেখছি, তবে কি তুমি ধুমপান করো?
মির সামিয়া
রহমানঃ (কেদে কেদে) বিশ্বাস করেন স্যার, কেউ আমাকে ফাঁসাচ্ছে । আমি সত্যি এসব
কিনিনি ।
আজিজুল স্যারঃ
প্রিন্সিপ্যাল স্যার নেই বলে তোমার টিসির ব্যাবস্থা করলাম না । কিন্তু শাশ্তি
তোমাকে পেতেই হবে । তোমার বাসার ফোন নাম্বার দাও ।
মির সামিয়া
রহমানঃ স্যার প্লিজ! বাসায় ফোন দেবেন না । বাবা শুনলে খুব বকবে ।
আজিজুল স্যারঃ
তুমিই তো বললে, এগুলো তোমার না । তাহলে কেন বকবে?
মির সামিয়া
রহমানঃ স্যার কেউ আমাকে ফাঁসিয়েছে । কিন্তু বাবাতো প্রমান ছাড়া সেসব বুঝবেন না ।
ভাববেন আমি সত্যি সত্যি এই কাজ করেছি ।
আজিজুল স্যারঃ
ঠিক আছে তুমি কান্না থামাও, আমি দেখছি কি করা যায় । মির সামিয়া রহমান বেঞ্চে বসে
কান্নাকাটি করতে লাগলো । আজিজুল স্যার সামনে যেয়ে হাসান স্যারকে ফোন দিলেন ।
সাকিবঃ আমাদের
ব্যাচের সাথে এসব কি হচ্ছে?
প্রতীকঃ আসলেই ।
ও তো সিগারেট খাবার মতো মেয়ে নয় ।
সাকিবঃ প্রথমে
তৃণ, এরপর এই মেয়ে ।
প্রতীকঃ আমাদের
ব্যাচের সাথে কার এমন শত্রুতা যে এই ধরনের কাজ করছে?
সাকিব আর কিছু
বলল না । আজিজুল স্যার হাসান স্যারকে ফোন দিলেন । হাসান স্যার তখন টিচার্স রুমে
চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ইউটিউবে ফিসিক্সের কিছু ভিডিও দেখছিলেন । ফোন ধরার পর
ফোনের ওপার থেকে হাসান স্যার বললেন,
হাসান স্যারঃ
হ্যাঁ আজিজুল স্যার, বলেন ।
আজিজুল স্যারঃ
স্যার ক্লাসে একটা ইসানি গায়ের মামুলি কাণ্ড ঘটে গেছে ।
হাসান স্যারঃ
(একটু নড়েচড়ে বসে) আজ আবার কে কাকে লাথি
মারল?
আজিজুল স্যারঃ
স্যার কেউ কাউকে লাথি মারে নি । একটা মেয়ের ব্যাগে সিগারেটের প্যাকেট পাওয়া গেছে ।
হাসান স্যারঃ
(চমকে দাঁড়িয়ে একটা অবাক হয়ে চিৎকার করে) কি!
মির সামিয়া
রহমান তখনও কাদছে । বেঞ্চের ওপর হেড ডাউন করে দিব্যি কেদে যাচ্ছে ।
আজিজুল স্যারঃ
আপনি একটু কষ্ট করে আসুন তো ক্লাসে ।
হাসান স্যারঃ
(বিচলিত হয়ে) না না স্যার, আপনি মনে হয় ভুল দেখেছেন । ওটা হয়তো অন্য কিছুর প্যাকেট
।