আমরা শাহীনে ছিলাম- ২
আমরা শাহীনে ছিলাম(২য় অংশ)
হঠাৎ রিক প্রতীককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো ৷ প্রতীক: কী রে, কাদছিস কেন?
রিক: কেন এমন করলি?
প্রতীক: কেমন করলাম?
রিক: এই যে, বৈশাখীকে বলেছিস আমি না কি বাশ খেয়েছি ৷
প্রতীক: হ্যাঁ ৷ তো এতো রেগে আবার কাঁদার দরকার কী?
রিক: ওরে আমি চলে যাচ্ছি ৷
প্রতীক: চলে যাচ্ছিস? কোথায়?
রিক: আমাদের পোস্টিং হয়ে গেছে রে ৷ চট্টগ্রাম ৷
প্রতীক: কী! আগে বলিস নি কেন?
রিক:(হাত দিয়ে দু চোখ মুছে) কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো রে ৷ তাই বলতে কষ্ট হচ্ছিলো ৷
প্রতীক: ইস! থাক কষ্ট পেয়ে কি লাভ ৷ যেতে তো হবেই ৷
রিক: হ্যাঁ রে ৷
বলেই রিক প্রতীককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো ৷
প্রতীক: (ফিসফিস করে) এমন ভাবে কাঁদছে, যেন চিরদিনের মতো দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে ৷
রিক: কিছু বললি?
প্রতীক: না রে ৷ কিছুই বলিনি ৷
রিক: ভালো থাকিস রে ৷ বলেই রিক চলে গেল ৷
প্রতীক: ওহহো, আজকে তো ফাইনাল রিহার্সেল ৷ আমাকে তো যেতে হবে ৷ কাল তো ২১শে ফেব্রুয়ারি ৷
প্রতীকও চলে গেল রিহার্সেল করতে ৷
এদিকে রিক লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলো ৷ হঠাৎ পেছনে থেকে কেউ রিকের নাম ধরে ডাকলো ৷ রিক তাকিয়ে দেখলো শাহরিয়ার সোহান রিককে ডাকছে আর দৌড়াতে দৌড়াতে রিকের দিকে আসছে ৷ রিক দাঁড়িয়ে গেল ৷ শাহরিয়ার সোহান রিকের কাছে এলো ৷ তারপর হাঁফাতে লাগলো ৷
রিক: কিরে? কি হয়েছে হাফাচ্ছিস কেন?
শাহরিয়ার সোহান: রিক, তোকে কুনাল নামে একটা ছেলে ডাকছে ৷
রিক: কুনাল? কে সে?
শাহরিয়ার সোহান: আমিও চিনিনা ৷ কেবল বললো ক্লাস এইটে পড়ে আর তোর সাথে খুবই জরুরী দরকার আছে ৷
রিক: কি কারণে ডাকছে?
শাহরিয়ার সোহান: আরে বাবা, সে তো আমিও জানি না ৷ তবে ছেলেটাকে দেখে মনে হলো খুব ভয় পেয়েছে ৷
রিক: আচ্ছা চল ৷ গিয়ে দেখি কি বলে ৷ শাহরিয়ার সোহান: চল ৷
রিক আর শাহরিয়ার সোহান গেল ৷ রিক দেখলো, ছেলেটা বারবার ওর হাতের আঙুল টিপছে আর ক্লাসরুমের সামনে বারান্দায় হাটছে ৷ রিককে দেখা মাত্রই চমকে উঠলো ছেলেটা ৷
রিক: তুমি কুনাল?
কুনাল:( ভয়ে ভয়ে) জ…জী ভাইয়া ৷
রিক: কেন, কী হয়েছে?
কুনাল: আসলে ভাইয়া, একটা কথা বলার ছিলো ৷
রিক: হ্যা বলো ৷
কুনাল: ভাইয়া, আপনি এতদিন যেই মেয়েটার সাথে কথা বলতেন ওটা আমার ফেইক আইডি ৷
রিক এবার পুরো চমকে উঠলো
রিক: তাহলে প্রোফাইল পিকচারটা কার ছিলো?
কুনাল: ওটা আমার কাজিনের ছোটবেলার ছবি ছিলো যিনি বর্তমানে একজন গৃহিনী ৷
শাহরিয়ার সোহান: (রিককে) তাহলে রুবাইয়াত ম্যাম তোকে ধরলো কেন?
কুনাল: বলছি ৷ আসলে আমি যে নামে ফেইক আইডিটা খুলে ছিলাম ওইনামে আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে ৷ আমি আমার এক বন্ধুর সাথে এসব কথা বলেছিলাম যে আমি ওর নামে ফেইক আইডি খুলে আপনার সাথে মজা করি ৷ কিন্তু আমার বন্ধু ভুল বোঝে আর মনে করে আপনি ওই মেয়েকে ভালোবাসেন ৷ তখন ও মেয়েটাকে সব বলে দেয় ৷ প্রথম প্রথম মেয়েটা মনে করে এসব মিথ্যে ৷ কিন্তু পড়ে যখন আপনাকে তিনতলার ওইবারান্দায় দেখে, তখন মনে করে হয়তো এসব সত্যি ৷ পড়ে মেয়েটা ওর বান্ধবীর মাধ্যমে রুবাইয়াত ম্যামকে সব বলে দেয় ৷ আমি আজকে সব সত্যিটা জানতে পেরেছি ৷ প্লিজ ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিন ৷
রিক কিছু বলতে পারে না ৷ বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৷
রিকঃ তুমি কি করেছো সেটা কি তুমি নিজেও বুঝতে পারছ কত বড় ধরনের একটা ঝামেলা হতে পারতো ?
কুনালঃ হ্যাঁ ভাইয়া । আর তাইতো আমি আসার সময় রুবাইয়াত মেডাম কে সব বলে এসেছি ।
রিকঃ শুধু কি রুবাইয়াত মেডাম ? ঐ মেয়েটা কি ভাববে এখন ? ও তো এখন আমাকে ভুল বুঝবে ।
কুনালঃ মাফ করবেন ভাইয়া । ঐ মেয়েটাকে কিছু বলার সাহস আমার নেই ।
রিকঃ তুমি মেডাম কে সব বলেছ , অথচ একটা মেয়ে যে কিনা তোমার ক্লাস মেট তাকে বলার সাহস নেই তোমার ?
কুনালঃ ঐ মেয়েটার বাবা যে মেডাম এর থেকেও ভয়ানক ।
রিকঃ কেন?
কুনালঃ আমাদের এলাকার সবচেয়ে বড় যে খুনি তিনি ঐ মেয়েটার বাবা। আর যতদূর শুনেছি মেয়েটা ওর বাবাকে সব বলে দিয়েছে । আর মেয়েটার বাবা নাকি কাল ২১ শে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে কিছু একটা ঘটাবে ।
রিকঃ কে বলেছে তোমাকে ?
কুনালঃ আমার আরেকটা বন্ধু আছে যার বাবা ঐ মেয়েটার বাবার বন্ধু । ও বলেছে ।
শাহরিয়ারঃ দোস্ত , তুই তো আজই চলে যাচ্ছিস । এখন এই বিপদ থেকে কিভাবে বাঁচাবো স্কুল টাকে ?
কুনালঃ সব হয়েছে আমার জন্য ।
রিকঃ (প্রচণ্ড রেগে) তাহলে এখানে গাধার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন ? এইসব ফালতু কাজ করার আগে খেয়াল ছিল না ? এখন কি করবা তুমি ? কাল তামাশা দেখে এসো । সারাদিন আউ ফাউ কাজ ছাড়া কিছু পার না ? খালি ফেইক আইডি খোলা আর ফাজলামো করা ?
কুনাল আর কিছু বলল না । দুহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে কাদতে কাদতে দিল একটা দৌড় কলেজ বিল্ডিঙের তিনতলার দিকে । রিক আর ওর দিকে তাকাল না । ও চিন্তায় পড়ে গেল এই বেপার টা নিয়ে । কাল কি হবে এই নিয়ে ভাবছে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ এবার কি করবি?
রিকঃ চল ক্লাসরুমে যেয়ে কয়েকজন মিলে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলি ।
রিক আর শাহরিয়ার সোহান যখনি ক্লাসরুমে ঢুকতে নেবে অমনি ওরা শুনতে পেল একটা শব্দ । যেন তিনতলার বারান্দা থেকে ভারি কিছু একটা পড়ে গেলো। সাথে বিকট চিৎকার ।
শাহরিয়ার সোহানঃ কিসের আওয়াজ হল?
রিক আর শাহরিয়ার সোহান পেছন ফিরে দেখল , অন্যান্য ক্লাসরুম থেকে সব শিক্ষার্থী আর শিক্ষকরা কলেজ বিল্ডিঙের দিকে দৌড়ে আসছে । রিক আর শাহরিয়ার সোহান কিছু করতে পারল না কেবল দাঁড়িয়ে রইল । কুনালের কান দিয়ে রক্ত পরছিল । সবাই যে যার কাজ ছেড়ে ভিড় জমাল এখানে । কেবল বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল শাহরিয়ার সোহান আর রিক । কিছুক্ষণ পর প্রিন্সিপাল স্যার এলেন । তারপর অ্যাম্বুলেন্স ডাকলেন । কিছুক্ষণ পর অ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে গেলো কুনালের বডি । ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো ।
ক্লাস শেষ । ব্যাগ কাঁধে বাড়ি ফিরছিল প্রতীক । হঠাৎ ওর সামনে এসে দাঁড়ালো শাহরিয়ার সোহান।
শাহরিয়ার সোহানঃ দোস্ত, বিকালে কোন কাজ আছে?
প্রতিকঃ হ্যাঁ আমার একটু টাউন এ যেতে হবে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ Cancel করে দে ।
প্রতিকঃ কেন?
শাহরিয়ার সোহানঃ খুবই জরুরী কাজ আছে একটা
প্রতীকঃ কি কাজ ?
শাহরিয়ার সোহানঃ সেটা তখন আসলেই বুঝতে পারবি ।
প্রতিকঃ কিন্তু আমার যে টাউন এ যেতেই হবে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ প্লিজ ।
প্রতীকঃ কিন্তু কেন ?
শাহরিয়ার সোহানঃ বিকালে রুবাইয়াত মেডাম আমাদের বেইজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিটিং করবেন।
প্রতীকঃ কিসের মিটিং?
শাহরিয়ার সোহানঃ আরে বাবা বিকালে আসিস তারপরে বুঝবি । প্লিজ তোকেই সবচেয়ে বেশি দরকার ।
প্রতীকঃ ঠিক আছে । আসব।
শাহরিয়ার সোহানঃ আসিস কিন্তু । এটা কিন্তু জীবন মরণের ব্যাপার ।
বলেই শাহরিয়ার সোহান চলে গেলো ।
বিকালের কথা । ২৬ নাম্বার রুমে রুবাইয়াত মেডাম ১০ম শ্রেণির যেসব শিক্ষার্থী বেইজে থাকে, তাদের নিয়ে একটা মিটিং এ বসলেন সবাই উপস্থিত হলে মেডাম মিটিং এর কারণটা বললেন । প্রতীক আর শাহরিয়ার সোহান পাশাপাশি বসে ছিল ।
প্রতীকঃ ও । এখন বুঝলাম । কিন্তু ২১ শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে ঝামেলা করে ঐ খুনি লোকের লাভ কি?
কথাটা রুবাইয়াত মেডাম এর কানে পৌঁছে গেলো ।
রুবাইয়াত মেডামঃ আরে প্রতীক, তুমি বুঝলে না? খুনিদের কাজ ঝামেলা করা । তোমরা তো জানো না । ঐ মেয়েটা পরাশুনা কিছুই পারেনা । আমরা যে স্কুল থেকে ওকে বাদ দেব সেই সুযোগ ও নেই । ঐ ক্লাসের ক্লাস টিচার কে উনি মরার হুমকি দিয়ে মেয়েকে পাশ করান । উনাকে আজ পর্যন্ত কোন পুলিশ ধরতে পারেনি । কিভাবে যে মানুষ মারে কেউ টেরও পায় না । আজ যাবার সময় রিক আমাকে সব বলেছিল । কাল যদি আমরা কিছু একটা প্ল্যানিং করে করতে পারি, তাহলে আমরা স্কুলটাকে তো বাঁচাতে পারবোই সাথে ঐ খুনিটাকেও ধরতে পারবো ।
তিথিঃ আপনারা ঐ লোকটার ব্যাপারে প্রিন্সিপাল স্যার কে কিছু বলেন নি কেন ?
রুবাইয়াত মেডামঃ বলেছি । কিন্তু স্যার এ কথা বিশ্বাস ই করেন না । উলটো আমাদের বলেন একটা নিষ্পাপ ছাত্রীর পিতামাতার ব্যাপারে এসব কথা না বলতে ।
রাফিয়াঃ কিন্তু মেডাম মেয়েটার খাতা প্রিন্সিপাল স্যার কে দেখান না কেন?
রুবাইয়াত মেডামঃ ঐ লোকটা খুব ই বুদ্ধিমান । উনি যে কি করছেন আমরা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারছি না । তোমরা নিশ্চয়ই আলোক স্যার এর খুনের কথা শুনেছ?
তুষারঃ জি মেডাম, শুনেছি । কিন্তু উনি তো সুইসাইড করেছিলেন ।
রুবাইয়াত মেডামঃ না । সুইসাইড করেন নি । ঐ মেয়েটাকে পরীক্ষায় নাম্বার না দেয়ায় উনাকে ঐ মেয়ের বাবা খুন করেছিলো । এ কথা আমি আর আমার স্বামী ছাড়া আর কেউ জানে না । কাউকে বলিও নি । কারণ ঐ লোকটা এমন ভাবে লাশটা রেখেছিলো যে কেউ বিশ্বাস ই করবে না ।
সৃষ্টিঃ তাহলে কালকের বিষয়টা কি করব ?
রুবাইয়াত মেডামঃ বলছি । শোন ।
এরপর রুবাইয়াত মেডাম সবাইকে পুরো পরিকল্পনাটা সবাইকে বললেন ।
প্রতীকঃ কিন্তু আদ্রিতার ফোন নাম্বার পাব কোথায় ?
রুবাইয়াতঃ আমি তোমাদের ইব্রাহিম আঙ্কেল কে বলে অফিস রুম থেকে জোগাড় করছি । তুমি কেবল আদ্রিতাকে সবটা বুঝিয়ে বলবে ।
পরদিন সকাল শুরু হল সবাই এসে গেছে । বেইজের শিক্ষার্থীরা দেখছে কাউকে সন্দেহজনক পাওয়া যায় কি না । মেডামের কথা অনুযায়ী নাটক সবার আগে করা হয়েছে । নাটক ঠিক ঠাক ই চলছিলো ।
আলভী: সীপাহীও, গলি কারদো ৷
প্রতীক আর এশরার খেলনা গুলি নিয়ে গুলি করার অভিনয় করলো ৷ এরপর নাদিম আর আদ্রিতা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ৷ বাকিরা স্টেজের পেছনে চলে গেল ৷
তাপস স্যার: কী ব্যাপার? আদ্রিতা পড়ে গেল কেন? কাহিনী তো এমন না?
সাবাবা: স্যার, ও অসুস্থ ছিলো ৷ অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে হয় ৷
তাপস স্যার: এখন কী করবো?
প্রতীকঃ Cool sir, সব ঠিক হয়ে যাবে ।
নাটক আর এগোচ্ছে না । ইতিমধ্যে দর্শক কথা বার্তা শুরু করে দিয়েছে । হঠাৎ রাহাতের নজরে পড়লো কালো কোট প্যান্ট আর হ্যাট পড়া একজন লোক বসে আছে । তার হাতে একটা পিস্তল । রাহাত সস্টেজের পেছনে গেলো । তারপর প্রতীক কে ডাকল ।
প্রতিকঃ কি কোন খবর আছে ?
রাহাতঃ হ্যাঁ । একটা লোককে দেখলাম হাতে পিস্তল নিয়ে ।
প্রতীকঃ চলতো দেখি ।
রাহাত প্রতীককে নিয়ে বেরোল । প্রতীক নাটকে হানাদার ছিল । তাই হানাদারের ড্রেস পড়ে ছিল । ওকে দেখে কিছু পিচ্চি হাসাহাসি করা শুরু করল “দ্যাখ দ্যাখ ঐ নাটকের হানাদার ........................দ্যাখ দ্যাখ ..................।“
লোকটার কানেও ওদের এই চিল্লাপাল্লার কথা গেলো । লোকটা তখন প্রতীকের দিকে তাকাল ।
রাহাতঃ (প্রতীকের দিকে তাকিয়ে) দ্যাখ ৩ নাম্বার সারিতে লোকটা বসে আছে । তোর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
প্রতিকঃ হুম । দেখলাম তো । দাড়া। একটা কাজ করি ।
পাশ দিয়েই তিথি যাচ্ছিলো ।
প্রতীকঃ ঐ তিথি ।
তিথিঃ বল ।
প্রতীকঃ শোন । ঐ ৩ নাম্বার সারির লোকটাকে দেখতে পাচ্ছিস?
তিথিঃ হুম । আয় হায় , লোকটার হাতে তো পিস্তল ।
প্রতীকঃ হুম । শোন তোকে একটা কাজ করতে হবে ।
তিথিঃ কি কাজ?
প্রতীক তিথি কে সব বলল । এরপর তিথি সেই অনুযায়ী কাজ করল । ঢুকে পড়লো সেই সারিতে । লোকটা এমন ভাবে পিস্তল টা ধরে ছিল যে ভালভাবে তার দিকে না তাকালে কেউই বুঝতে পারবে না যে তার হাতে পিস্তল আছে । তিথি লোকটার কাছাকাছি যেতেই লোকটার হাত থেকে পিস্তলটা কেড়ে নিয়ে স্টেজের ওপর দিলো একটা দৌড় । তারপর মাউথ পিস হাতে নিল ।
তিথিঃ (লোকটার দিকে ইশারা করে) ঐ লোকটা একজন খুনি । আপনারা ঐ লোকটাকে পালাতে দেবেন না ।
ছাত্ররা তো মহাখুশি । বন্ধুর হাতে তো গন নামের মাইর টা অনেক খেয়েছে । তাহলে এবার একটা খুনিকে গন দেয়া যাক । তাই সবাই লোকটার দিকে এগিয়ে গেলো । হঠাৎ লোকটা তার কোমর থেকে পিস্তল টা বের করল আর উঠে দাঁড়ালো । গুলি করার ভয় দেখিয়ে ছাত্র ছাত্রি দের সামনে থেকে সরাল । তারপর স্টেজের দিকে এগোল । তিথি যেই স্টেজ থেকে নামতে যাবে, অমনি লোকটা তিথির দিকে পিস্তল তাক করে বলল
লোকটাঃ না । পালাবে না । গুলি করে দেব একদম ।
সবাই এবার দাঁড়িয়ে গেলো । এরপর লোকটা তিথির কাছে যেতেই তিথির হাত পেছন দিকে ধরে ওর মাথায় ঠেকাল। হঠাৎ আদ্রিতা পেছন থেকে যেয়ে পিস্তলটা নিল কেড়ে । এরপর রুবাইয়াত মেডাম পুলিশ নিয়ে এলো । পুলিশ এসেলক্তাকে গ্রেফতার করল ।
অফিসারঃ আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ এই খুনিকে ধরিয়ে দেবার জন্য ।
রুবাইয়াত মেডামঃ না অফিসার । ধন্যবাদ আমাকে না । এই শিক্ষার্থীদের দিন । ওরা না থাকলে এটা সম্ভব ই হতো না ।
তখন প্রিন্সিপাল স্যার এলেন ।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ কি ঘটলো আমি তো কিছুই বুঝলাম না ।
পুলিশঃ শুনুন স্যার । আমাকে রুবাইয়াত মেডাম সব বলেছেন । আসলে এই লোকটা একজন খুনি যার খুন করতে হাত কাঁপে না । উনি যে কোথায় কোথায় উনার পিস্তল রাখেন আপনি নিজেও টের পাবেন না । কখন খুন করে আপনি নিজেও টের পাবেন না । উনার মেয়েকে আপনাদের স্কুলে আপনাদের স্কুলের সুনাম দেখে ভর্তি করান । কিন্তু উনার মেয়ে উনার মতই মাস্তান টাইপের হয় । কিন্তু আরেকটা অদ্ভুত বিষয় উনার যেয়ে একটা মেয়ে আছে সেটা আমরা নিজেরাও জানতাম না । শুধু এটা জানতাম উনার স্ত্রী কে উনি খুন করেছিলেন । যতদূর জানতে পেরেছি কুনাল নামের একটা ছেলে যে গতকাল আপনাদের স্কুলেই সুইসাইড করেছিলো, তার কাজ ছিল মেয়েদের নামে ফেইক আইডি খোলা আর সবার সাথে মজা করা । এ পর্যন্ত ওর ২৭ টা ফেইক আইডি পেয়েছি । তার মধ্যে একটা ঐ মেয়ের নামে খোলা হয়েছিল যেই আইডি দিয়ে ও রিকের সাথে রিলেশন করে মজা করে । কিন্তু ও জানত না এই মেয়ে ঐ খুনিটার । পড়ে ঐ খুনির বন্ধুর ছেলে ওকে সব বলে । প্রথম প্রথম ও ব্যাপার টা লুকতে চাইলেও পড়ে যখন জানতে পারে রিক কে মারার জন্য ২১ শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে ঝামেলা করবে , তখন ও রুবাইয়াত মেডাম ও রিক কে সব বলে দেয় । পড়ে রুবাইয়াত মেডাম ও আপনার ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই বিপদ হবার আগেই আপনাদের রক্ষা করে । এর সহচর গুলোকেও আজ সকালে ধরেছি ।
হাসান স্যারঃ এরা নিরাপত্তা ভেদ করে স্কুল এ আসলো কিভাবে?
পুলিশঃ কলেজ স্টুডেন্ট সেজে এসেছিলো । মেয়ের স্কুল বাস কার্ড দেখে নিজের নামে একটা ফেইক কার্ড বানিয়ে স্কুল বাসে এসেছে ।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা , তোমাদের জন্য আজ আমি সত্যি খুব আনন্দিত । বল । তোমরা কি চাও ।
কিছুক্ষণ সবাই চুপ করে রইল ।
আরিকঃ(রাহাতকে) এক সপ্তাহ স্কুল ছুটি দিলে মেলা ভালো হইত রে ।
কথাটা পৌঁছে গেলো প্রিন্সিপাল স্যার এর কান অবধি।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ ঠিক আছে যাও । তোমাদের ১ সপ্তাহ স্কুল ছুটি ।
আরিকঃ অ মা ! আমার কথা শুনল ক্যামনে??
সবাই ইয়ে ইয়ে করে উঠলো । পুলিশ খুনিকে ধরে নিয়ে গেলো । সবাই বাকি অনুষ্ঠান আনন্দের সাথে উপভোগ করলো । তারপর যে যার বাসায় চলে গেলো ।
১ সপ্তাহ কেটে গেছে । ১ মার্চ ২০১৮ । সকালে অপেক্ষাগারে বসে আছে আরিক । কিছুক্ষণ পর এলো সবুজ । রাখিব স্যার এর কোচিং । কিছুক্ষণ পর সবুজ ওর সাইকেল নিয়ে এলো । সাইকেল অপেক্ষাগারের সামনে রেখেই গিয়ে বসলো আরিকের পাশে ।
সবুজঃ কিরে, কি অবস্থা?
আরিকঃ কি আর হইব । মেলা দিন ছুটি পাইসিলাম । আইজকা আবার ক্লাস শুরু হইয়া গেলো ।
সবুজঃ কি আর করার । ছুটির মধ্যে কি করলি?
রাহাত তখন সবুজের সাইকেলের পাশে ওর সাইকেল রেখে অপেক্ষাগারে উঠছিল ।
রাহাতঃ এ মুটার আবার ছুটি । বাড়ি বইসে সারা দিন রাত পরসে ।
আরিকঃ ইয়ে.........মামু.........তুই কিন্তু আমারে লজ্জা দিতেসস ।
রাহাতঃ উরি বাবা তুই আর লজ্জা । ঠিক তখন রাখিব স্যার মোটর সাইকেল নিয়ে এলো । অপেক্ষাগারের সাম্নেই ছিল দ্বিতীয় গেইট । স্যার ওখান দিয়ে ঢুকল আর ঢোকের সময় প্রতিদিনের মতো একটা হর্ন বাজিয়ে ঢুকল ।
রাহাতঃ সবুজ চল ।
সবুজঃ এত তাড়া কেন মামা , হাসান স্যার এর কোচিং তো আর না যে কোণা ধরার ঝামেলা আছে ।
রাহাতঃ আরে গাধা, সাইকেল রাখতে হবে না ।
সবুজঃ ও তাও তো ঠিক ।
ওরা স্যার এর প্রাইভেট এ গেলো । প্রাইভেটে ধীরে ধীরে সবাই আসলো । একসময় প্রাইভেট শেষ হয়ে গেলো । হঠাৎ তুষার প্রতীককে ডাকল ।
তুষারঃ আজ কে ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতার সিলেকশন আছে । তুই না গনিতে দিতে চাইসিলি?
প্রতীকঃ হ্যাঁ । কখন হবে ?
তুষারঃ টিফিনের পর ২৬ নাম্বারে আসিস ।
প্রতীকঃ আচ্ছা ।
এরপর সবাই অ্যাসেম্বলি তে গেলো । অ্যাসেম্বলি শেষে প্রথম ক্লাস হাসান স্যার এর । স্যার ফিজিক্স ক্লাস নিচ্ছেন ।
হাসান স্যারঃ ও ভালো কথা । বেইজের স্টুডেন্টরা তোমাদের জৈব যৌগ চ্যাপ্টার টা শুরু করবো তবে তার আগে তোমাদের একটা পরিক্ষা নেবো ভাবছি ।
চিকন আশাঃ কবে স্যার ?
হাসান স্যারঃ কালকেই নিলে............(কথা শেষ হয় নি)
সব স্টুডেন্টসরা একসাথে না...না...না... বলে চিৎকার করে উঠলো । ঐ সময় স্যার সবাইকে চুপ করানোর জন্য “ আস্তে......পাশে ক্লাস হচ্ছে......থাম...... “ বলছিল । ঠিক তখন পাশের ক্লাস থেকে ডালিয়া মেডাম এলেন ।
ডালিয়া মেডামঃ (ইয়ার্কি করে) কিরে স্যার , আপনি কি উর্দুতে কেমিস্ট্রি নেয়ার কথা বলেছিলেন না কি যে ওরা আন্দোলন করছে ।
হাসান স্যারঃ (হাল্কা হাসিমুখে) কি যে বলেন মেডাম । ওদের তো পরীক্ষা দেবার সাহসই নাই আর এরা করবে আন্দোলন । মজা দিলেন ।
ঠিক তখন রাখিব স্যার অনেকগুলো কাগজ নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন ।
রাখিব স্যারঃ হাসান স্যার পরীক্ষা পরীক্ষা করছেন আর এদিকে পরীক্ষার খবর নিয়ে আমি রাখিব স্যার হাজির ।
হাসান স্যারঃ এইতো স্যার আসছে । তা স্যার নানি ভালো আছে ?
রাখিব স্যারঃ হ্যাঁ নানি তো আলহামদুলিল্লাহ আছে । (স্টুডেন্টসদের) তা বাবুরা বেবিরা তোমরা কেমন আছো ?
সবাই একসাথেঃ নানির দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ আছি স্যার ।
রাখিব স্যারঃ খুব ভালো । কিন্তু এখন যে খবর দেব তা তোমাদের খারাপ লাগবে ।
সবাই একসাথেঃ কি খবর স্যার ?
রাখিব স্যারঃ আগামী ২০ মার্চ থেকে তোমাদের প্রথম মডেল টেস্ট ।
লামিয়াঃ অ্যাঁ! এত তাড়াতাড়ি !
রাখিব স্যারঃ কেন ? সময় কি তোমার নানি দেবে ?
তিথিঃ স্যার সিলেবাস কি ?
রাখিব স্যারঃ এ পর্যন্ত স্যার মেডাম রা যতদূর পড়িয়েছেন ততদুর ।
তিথিঃ স্যার আর কয়েকদিন পরে নিলে হয় না ?
রাখিব স্যারঃ না বাবু । আবার এপ্রিলে তোমাদের পিকনিক করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে তো তাই এত আগে পরীক্ষাটা নেয়া হচ্ছে ।
ফারিহাঃ পিকনিক?
রাখিব স্যারঃ হ্যাঁ ।তোমাদের হাসান স্যার প্রিন্সিপ্যাল স্যার কে বলছেন । দেখা যাক কি হয় । এবার তামজিদ বাবু , এই রুটিন গুলো সবাইকে দিয়ে দাও তো ।
হাসান স্যারঃ (রুটিন গুলো নিয়ে) না স্যার । আমার ক্লাস শেষ হবার পর নেবে । এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়েছে ।
তুষারঃ তাহলে স্যার পরীক্ষা কি হবে ?
হাসান স্যারঃ আচ্ছা যাও তোমাদের পরীক্ষা পরের শুক্রবারে নেবো ।
সবাই ‘’ইয়ে’’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো । রাখিব স্যার চলে গেলো । হাসান স্যার এর ক্লাস ও দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো । এরপর সব ফুটবল খেলোয়াড় রা চলে গেলো ফুটবল খেলতে । ঠিক তখন মোটা সাদিক এলো। স্কুলে দুটো সাদিক আছে । একটা মোটা , একটা চিকন । চিকন সাদিককে সবাই মজা করে টাল সাদিক বলে ডাকতো । মোটা সাদিক এসে তনয়কে ডাকল । তনয় ওর কাছে এলো ।
তনয়ঃ কিরে কি হইসে ?
মোটা সাদিকঃ আজকে বিকালে টাউনএ জামু । তুই যাবি?
তনয়ঃ টাউন এ কি করতে যাবি?
মোটা সাদিকঃ গরুর ডিম আর মুরগীর দুধ খাইতে যামু ।
তনয়ঃ (মোটা সাদিকের কপালে হাত দিয়ে) কিরে তোর জ্বর টর আসে নাই তো । এসব উল্টা পাল্টা বকতাসস কেন ?
মোটা সাদিকঃ আরে গাধা, আমরা টাউন এ কি করতে যাই ?
তনয়ঃ ও আবার জার্সি কিনবি?
মোটা সাদিকঃ তো কি ?
তনয়ঃ তোর জার্সি গুলারে দেইখা মায়া হয় ।
মোটা সাদিকঃ কেন ?
তনয়ঃ তোর এত মোটা শরিরে জোর কইরা পরস , জার্সিটারও তো কষ্ট হয় ।
মোটা সাদিকঃ বদমাইশ!!
এদিকে ইংলিশ ভার্সনের আশিক এলো । এসেই আদ্রিতাকে ডাকল ।
আশিকঃ কিরে দ্রিতা , কি খবর?
আশিক আদ্রিতাকে দ্রিতা বলে ডাকতো ।
আদ্রিতাঃ চলতেসে একভাবে । তোর কি অবস্থা?
আশিকঃ সেম ।
তখন তৌফিক এলো ওদের আড্ডার মাঝে ।
তৌফিকঃ আরে আশিক ভাই? কি খবর?
আশিকঃ চলতেসে রে ভাই ।
তৌফিকঃ শুনলাম তুই নাকি সুইসাইড করতে নিসিলি?
তৌফিক আবার সবার সাথে উল্টা পাল্টা কথা বলে সবার সাথে ফাজলামো করে ।
আশিকঃ ভাই, আমি এখন বিয়া করি নাই, মরতে যামু কেন ?
পাশ দিয়ে তখন হেঁটে যাচ্ছিলো সামি আর এশরার ।
সামিঃ কিরে, সেদিন তো অস্থির নাটক করলি ।
এশরারঃ টা আর বলতে । কাল্পনিক নাটক দিয়ে বাস্তব জীবনের নাটকেরও সমাধান করলাম ।
সামিঃ দ্যাখ ফুটবল প্র্যাকটিস হচ্ছে?
এশরারঃ আমি কি তোর মতো কানা যে দেখতে পাইনা ?
ওদিকে ফুটবল খেলা হচ্ছে । একটা বল কিক মারতে গিয়ে পুষ্প পায়ে ব্যাথা পেলো ।
পুষ্পঃ ভাই আমি আজ কে আর প্র্যাকটিস করতে পারবো না । অনেক জোরে লাগসে ।।
পরোখ ভাইঃ ফাইনাল খেলাগুলোর দিনও কি একি কথা বলবে?
পুষ্পঃ ভাই আজকে পারিনি বলে এই না যে ফাইনালে পারবো না ।
পরোখ ভাইঃ তুমি একটা কাজ করো । বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নাও । এতে তোমার স্বাস্থ্যেরও ভালো হবে, আমাদের টিমেরও ভালো হবে ।
পুষ্পঃ ভাইয়া প্লিজ ।
পরোখ ভাইঃ বলতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি । তুমি আমাদের টিমে খেলছ না ।।
পুষ্পঃ ভাইয়া আমাকে এভাবে বাদ দেবেন আপনি ?
পরোখ ভাইঃ আমার আর কিছু করার নাই ।
এরপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল ।
পরোখ ভাইঃ এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই । ক্লাসে ফিরে যাও ।
বলেই পরোখ ভাই চলে গেলেন । পুষ্প কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পরোখ ভাইয়ের চলে যাওয়া দেখল । তারপর ও নিজেও চলে গেলো । পুষ্পকে চলে যেতে দেখে অনিক পরোখ ভাইয়ের কাছে এলো ।
অনিকঃ ভাই পুষ্প চলে যাচ্ছে কেন ?
পরোখ ভাইঃ ওকে বাদ দিয়েছি তাই ।
অনিকঃ কেন ভাই? ও তো ভালই খেলতে পারতো ।
পরোখ ভাইঃ (হালকা রেগে) নিজের টিমের প্লেয়ারদের খোজ নাও । অন্য টিমে নাক গলাতে এসো না ।
অনিকও আর কিছু বলল না । শাহরিয়ার সোহান তখন টয়লেট থেকে ফিরেছে। পুষ্পকে চলে যেতে দেখে অনিকের কাছে এলো । অনিক শাহরিয়ার সোহান তখন অনিকের কাছ থেকে সব শোনে । এরপর ও নিজেই পরোখ ভাইয়ের কাছে যায় ।
শাহরিয়ার সোহানঃ পরোখ ভাই , পুষ্পর পায়ের অবস্থা তো ভালো না । তাও ও খেলতে চাচ্ছে । কিন্তু শুনলাম আপনি নাকি ওকে বাদ দিচ্ছেন ?
পরোখ ভাইঃ এছাড়া আমার উপায় নেই । ওর পায়ের কিছু হলে এর দায়ভার কে নেবে ? তাছাড়া আমাদের উদ্দেশ্য টিম জেতানো । কাউকে খেলায় নেয়া নয় ।
শাহরিয়ার সোহানঃ ভাইয়া আপনি আমার চেয়ে বড় । সুতরাং আপনি আমার চেয়ে সব ভাল বোঝেন । তবুও বলছি । আপনার টিমে কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলো না বলে আপনি ওকে রাখলেন । এখন ওকে আরেকজনকে পেয়ে ওকে কষ্ট দেয়াটা কি উচিত হল ?
পরোখ ভাইঃ আমি বুঝতে পারছি তোমার কথা টা । কিন্তু তুমিই বল । ও যদি পায়ে ব্যাথা পায় আর তার জন্য যদি আমাদের খেলা নষ্ট হয় তাহলে আমরা কি করবো ? একসাথে দুটো বিপদ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ আমাদের এক্সট্রা প্লেয়ার তো আছেই । ওরা সামলাবে ।
পরোখ ভাইঃ ওরা আর কদ্দুর সামলাবে । তুমি তো জানোই টিমে তুমি আমি ছাড়া ভালো প্লেয়ার নাই ।
শাহরিয়ার সোহানঃ দোষ টা তো আপনারই । কেন আপনি প্রথমে যারা মোটামুটি খেলে তাদের নিলেন না ?
পরোখ ভাইঃ কিন্তু কি হল ? পড়ে আপনি ভালো কাউকেই পেলেন না । উলটো যাদের বাদ দিয়েছিলেন তারাও আর খেলতে চাইল না । তাজ কে যে আপনি বাদ দিলেন ও কিন্তু খারাপ প্লেয়ার ছিল না ।
পরোখ ভাইঃ কিন্তু এখন তো একজন ভালো প্লেয়ার পেয়েছি । পুষ্প কে নিয়েছিলাম কারণ আমি আর কোন ভালো প্লেয়ার পাইনি তাই । আর আজ বাদ দিয়েছি কারণ আজ আমি ভালো প্লেয়ার পেয়েছি । হতে পারে পুষ্পর মতো ভালো খেলে না , কিন্তু পুষ্পর মতো সমস্যাগ্রস্থ না ।
শাহরিয়ার সোহানঃ আপনি যা ভালো বোঝেন তাই করেন । আমি আর কিছুই বলব না ।
এরপর ওরা প্র্যাকটিস শুরু করলো । এদিকে টিফিনের ঘণ্টা বেজে গেছে । পুষ্প ওর বেঞ্চের ওপর মাথা নিচু করে শুয়ে আছে । আরিক ওর টিফিন টা খুলে আবার লাগিয়ে আশপাশ টা ভালো করে দেখল । পুষ্প টা আছে কিনা । তারপর চোখ পড়লো পুষ্পর দিকে । তারপর ভাবতে লাগলো আজ হঠাৎ ওর কি হল , টিফিন খেতে আসলো না ? এরপর আরিক ওর নিজের টিফিনের দিকে তাকাল । অনেক টিফিনই আছে । দ্বিতীয় পিরিয়ডের পর অর্ধেকটা খেয়ে বাকিটা রেখে দিয়েছে । আবার পুষ্পর দিকে তাকাল । ভাবল ওর মন খারপ । হঠাৎ পুষ্প তাকাল আরিকের দিকে । পুষ্পর কষ্ট মাখা চেহারা আরিকের হৃদয়ের গভীরটা ছুয়ে দেয় । আরিক আবার টিফিনের দিকে তাকাল । এতোগুলো টিফিন ও না খেলে টিফিনগুলো মাইন্ড করবে । আবার পুষ্পর দিকে তাকাল । পুষ্প তখন আবার মাথা নিচু করে শুয়ে পড়েছে । ছেলেটা যখন আজ নিজে থেকে টিফিন খেতে চাইল না তখন দেয়াই যায় । টিফিনের বক্স টা পুষ্পর কাছে নিয়ে গেলো আরিক । তার হাত হাত দিয়ে পুষ্পকে ডেকে তুলল । পুষ্প ওর দিকে তাকালে ও বলল , “খাবি?”
পুষ্প আর কিছু বলল না। খিদে ওরও কম পায় নি । সকালে খেতে পারে নি । যা হোক মানা করলো না ।
টিফিন শেষ । আন্ত শাহিন ম্যাথ প্রতিযোগিতার জন্য পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়েছে যারা পরীক্ষা দিয়েছে । সবার সাথে প্রতীক আর তুষারও বেরিয়েছে ।
তুষারঃ পরীক্ষা কেমন হল ?
প্রতীকঃ খুব একটা ভালো হয়নি । তুমি কোথায় যাচ্ছ?
তুষারঃ ডিবেট সিলেকশনে । তুমি যাবা ?
প্রতীকঃ ওইখানে তো সব প্রতিযোগিতা একসাথে হবে । তাহলে আমি কি ম্যাথ আর ডিবেট একসাথে দিতে পারবো?
তুষারঃ না এমনি তে তো দেয়ার কোন নিয়ম নেই । কেন ?
প্রতীকঃ যদি আমি ম্যাথ এ টিকি তখন কি করবো ?
তুষারঃ তাহলে তুই ভেবে দ্যাখ কি করবি ।
প্রতীকঃ না থাক । পড়ে ডিসিশন নিতে সমস্যা হবে তুই মেডাম কে বুঝিয়ে বলিস ।
তুষারঃ আচ্ছা । আমি একটু ক্লাসে যাই । ওখান থেকে যাব ।
প্রতীকঃ আচ্ছা যাও ।
তুষার ক্লাসে এলো । এসে দেখল পুষ্প একা একা বসে আছে । কাছে যেয়ে ওর পাশে বসে কাঁধে হাত রাখল ।
তুষারঃ মন খারাপ ক্যান ?
পুষ্পঃ না এমনি ।
তুষারঃ পায়ে ব্যাথা বেড়েছে ?
পুষ্পঃ মোটামুটি ।
তুষারঃ (ইয়ার্কি করে) আমি একটু বাড়ায় দিমু ?
পুষ্পঃ (হালকা রাগ করে) দে , ব্যাথা আরও বাড়ায় দে । পারলে মাইরা ফেল ।
তুষারঃ (ঘাড়ে হাত রেখে) রাগ করস কেন দোস্ত , ক না কি হইসে ?
পুষ্প তুষারকে সব বলল ।
তুষারঃ তাইলে চল । ডিবেট করে আসি ।
পুষ্পঃ কিসের ডিবেট ?
তুষারঃ আন্ত শাহিন ডিবেট । যাবি ?
পুষ্পঃ চল যাই ।
তুষার আর পুষ্প চলে গেলো । ক্লাসে তখন ফারিহা ইসলাম আর নওশিন বসে গল্প করছিলো ।
ফারিহা ইসলামঃ দোস্ত ,আর ভালো লাগে না রে । ডেইলি এইসব ক্লাস আর ভালো লাগে না ।
নওশিনঃ আসলেই রে । বাসায় যেয়েও শান্তি নাই । আম্মা খালি কয় , পড়তে বয় ।
ফারিহা ইসলামঃ আমি যদি ৩ ঘণ্টাও পড়ি, তাও আমার আম্মু কইবো তুই পরস না কেন ।
নওশিনঃ তোর তো ৩ ঘণ্টা । আর আমি ২৪ ঘণ্টা বই নিয়ে বসে থাকলেও আমার আম্মা কয় তুই পরস না । খালি ফাঁকি দেস ।
ফারিহা ইসলামঃ কি আর কমু আব্বা আম্মা তো বোঝে না , জীবন তো একতাই ।
ঠিক তখন ফুটবল খেলোয়াড় আর লাইব্রেরীর সবাই ছাড়া বাকি স্টুডেন্ট ক্লাসে এলো ।
ফারিহা ইসলামঃ স্যার আসচে মনে হয় রে , চল যাই ।
নওশিনঃ চল যাই ।
ওরা নিজেদের জায়গায় চলে গেলো । ক্লাসে এলো সাত্তার স্যার ।
সবাই দাড়িয়ে স্যার কে সম্মান জানালো ।
সাত্তার স্যারঃ সবাই বাড়ির কাজ করেছো ?
সবাই চুপ । কেবল ৪/৫ জন বলল জি স্যার করসি ।
স্যারঃ আচ্ছা , তোমরা তো জানোই , হাসিলে কাদিতে হয় , তো আগে আমি তোমাদের একটা কৌতুক শোনাই , তারপর বাড়ির কাজ চেক করি । যেন মাইর টা নিয়মমাফিক হয় । এক লোক আরেক লোক কে বলতেসে , ভাই আপনাদের এলাকায় কি কারেন্ট যায়? যাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো ঐ লোক বলল , না তো ভাই , কারেন্ট তো যায় না , মাঝে মাঝে আসে ।
সবাই হাসল । আরেকটা শোনারও অনুরোধ করলো ।
সাত্তার স্যারঃ আরেকটা শুনবা? আচ্ছা শোনাচ্ছি । এক লোক সৌদি আরব থেকে ঘুরে এসেছে । তার এক বন্ধু তাকে বলল সৌদি আরব যেয়ে দিনকাল কেমন গেলো ? সে তার বন্ধু কে বলল , আরে ভাই , ওরা যে আরবিতে কি কি বলে কিছুই বুঝি । খালি নামাজের আগে মসজিদের আজানটা বাংলায় দেয় ।
সবাই এবারও হাসলো ।
সাত্তার স্যারঃ মানে আমরা এখন কেমন হয়ে গেছি ? কোনটা বাংলা কোনটা আরবি তাই বুঝি না ।
সবাই স্যার এর কাছ থেকে আরও একটা কৌতুক শোনার অনুরোধ করলো ।
স্যারঃ না না । আজ কে আর কোন কৌতুক না । আমার কৌতুক ফুরল নটে গাছ টি মুড়ল । এখন সেই নটে গাছের ডাল নিয়ে মারব , যদি কাল তোমরা বাড়ির কাজ না করো । আজকে মাফ করে দিলাম ।
সবাই খুব খুশি । স্যার এর ক্লাস দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো । নাজিফা আর কানিজ বসে গল্প করছিলো ।
কানিজঃ দোস্ত তুই ডিবেট করবি ?
নাজিফাঃ হুম । তুই যে করবি না তা আমি জানি ।
কানিজঃ কেমনে বুঝলি ?
নাজিফাঃ তুই গেলে পরীক্ষার পড়া পড়বে কে ?
কানিজঃ না রে । আমার না পড়াই হচ্ছে না রে । দিনের মাত্র ৮ ঘণ্টা পড়া হয় ।
নাজিফাঃ ৮ ঘণ্টা মাত্র ?
ঠিক উই সময় তুষার এলো ।
তুষারঃ কিরে নাজিফা, যাবি না ?
নাজিফাঃ এখন ?
তুষারঃ এখন মানে ? টিফিন পিরিয়ডের পর পরই তো শুরু হয়ে গেছে । তাকিয়া আপু তোকে ডাকতে পাঠাল ।
নাজিফাঃ আচ্ছা চল ।
নাজিফাকে নিয়ে তুষার যখনই যেতে নিল , ঠিক তখনই পুষ্প এলো ।
পুষ্পঃ একটা কথা বলব ?
তুষারঃ
পুষ্পঃ আমি গেলে আমাকে ডিবেট এ নেবে ?
তুষারঃ হ্যাঁ কেন নেবে না ?
পুষ্পঃ না আমি তো এত ভালো ডিবেট পারিনা তাই বললাম আরকি ।
তুষারঃ চেষ্টা তো করে দ্যাখ ।
পুষ্পঃ দাড়া একটু ভাবি ।
তুষারঃ এত ভাবার সময় নাই । চল যাই ।
পুষ্পঃ আচ্ছা চল ।
পুষ্প চলে গেলো তুষারের সাথে । সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল রাতুল আর নিরব ।
নিরবঃ কার ক্লাস রে ?
রাতুলঃ রাখিব স্যার এর ।
নিরবঃ এইচ ডব্লিউ করসিস ?
রাতুলঃ হ্যাঁ । কি তুই করিস না ?
নিরবঃ না ।
রাতুলঃ করেও লাভ নাই , না করলেই লাভ ।
নিরবঃ কেন ?
রাতুলঃ স্যার মনে হয় আজকেও আসবে না ।
নিরবঃ তুই কেমনে বুঝলি ?
রাতুলঃ সকালে স্যার পিকনিকের কথা বলল না , স্যার মনে হয় ঐ ব্যাপারে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর সাথে কথা বলতেসেন ।
নিরবঃ হাসান স্যার না থাকলে আমরা এই পিকনিক করতেই পারতাম না ।
রাতুলঃ হ্যাঁ । হাসান স্যার ই তো সবার আগে কথা তুলেছেন ।
নিরবঃ এরপর কার ক্লাস রে ?
রাতুলঃ বাংলা ক্লাস ।
নিরবঃ ওইটাও গ্যাপ ক্লাস ।
রাতুলঃ আজকে নাকি নতুন একজন স্যার আসবেন ক্লাস নিতে ?
নিরবঃ কে বলল তোকে ?
রাতুলঃ তাই তো শুনলাম । তুষার বলল ।
এদিকে লাস্ট বেঞ্চে বসে কথা বলছিল আসিফ আর ফাইহি । ওরা প্রতিদিন লাস্ট বেঞ্চে বসে আর কথা বলে । খুব ভালো বন্ধু ওরা । তবে ওইদিন ফাইহির একটু মন খারাপ ছিল ।
আসিফঃ টিফিন খাইসস ?
ফাইহিঃ হুম ।
আসিফঃ এহন কি অবস্থা ?
ফাইহিঃ কিসের ?
আসিফঃ তোর নাকি জ্বর আইসিল ?
ফাইহিঃ কে কইসে তোরে
আসিফঃ শুনলাম ।
ফাইহিঃ তুই যে কোত্থেকে কি সব শুনস , সেইদিন কইলি মাসুদের নাকি পেট খারাপ হইসে , আজ কে কইতাসস আমার জোর আইসে ।
আসিফ আর কিছু বলল না । বুঝল ফাইহির মন খারাপ ।
আসিফঃ কিরে, তোর মন খারাপ কেন ?
ফাইহিঃ আর বলিস না । আম্মা বকসে ।
আসিফঃ কেন ?
ফাইহিঃ আমার বোন শ্রেয়া রে সকালে মারসি বইলা ।
আসিফঃ মারস কেন পিচ্চিটারে ? ও তো আর তোর মতো বদমাইশ না ।
ফাইহিঃ আর কইস না । ও আমার ফোন নিয়া ফ্রিজের মধ্যে রাইখা দিসিল । আমি দেখসি বইলা কিছু হয় নাই ।
আসিফঃ কিছু হয় নাই তাইলে মারসস কেন ?
ঠিক তখন মাসুদ এসে আসিফের গলা জড়িয়ে বলল
মাসুদঃ কি হইসে রে দোস্ত ?
আসিফঃ ঐ......ফাইহির মন খারাপ ।
মাসুদ আসিফকে ছেড়ে হাসা শুরু করে দিলো ।
আসিফঃ ও নাটক করতাসে ।
ফাইহিঃ জাবড়া , বেশি কইতাসস কিন্তু ।
মাসুদঃ(ইয়ার্কি করে) আসলেই দোস্ত , তোরে না স্টার জলসার যে সিরিয়ালগুলা হয়না , ঐ গুলার ভিলেন চরিত্রে দেয়া লাগবো ।
ফাইহিঃ(হালকা রেগে) জাবড়া , বেশি বেশি হইতেসে কিন্তু ।
মাসুদঃ(ইয়ারকি করে) না না, যার যা গুন তা তাকে বলতে হয় । তা না হলে সে ঐ গুন টা হারিয়ে ফেলে ।
ফাইহিঃ(চরম রেগে) জাবড়া !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ওদিকে দেখতে দেখতে চতুর্থ পিরিয়ডও শেষ । এবার পঞ্চম পিরিয়ড ।
লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্প করছে সাবিত তৃণ আর তুর্য ।
সাবিতঃ মডেল টেস্ট এর রুটিন পাইসিস ?
তৃণঃ না রে ।
তুর্যঃ মডেল টেস্ট ? কবে থেকে ?
সাবিতঃ ২০ মার্চ ।
তুর্যঃ ও ।
সাবিতঃ চল রুটিন আনতে যাই ।
তৃণঃ চল যাই ।
তুর্যঃ আমিও যাব । চল ।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো হাসিব, ফুয়াদ আর রাগিব ।
ফুয়াদঃ এ শোন এবারেও গ্যাপ ক্লাস চল একটু ক্যান্টিন থেকে ঘুরে আসি ।
রাগিবঃ (ইয়ার্কি করে) ওটা ক্যান্টিন , কোন সিনেমা হল না ।
হাসিবঃ মানে ?
রাগিবঃ (ইয়ার্কি করে) না ফুয়াদ আবার ২৪ ঘণ্টার ১২ ঘণ্টাই সিনেমা দেখে কাটায় ।
ফুয়াদঃ (ইয়ার্কি করে) এ ! কিসসে ? উল্টা পাল্টা কথা কস ক্যা ?
রাগিবঃ (ইয়ার্কি করে) কি ভাই ? মিথ্যা কি কইলাম ? তোর দাড়ি কাইটটা দেয়া উচিত ।
ফুয়াদঃ (ইয়ার্কি করে) ধইরা দ্যাখ । তোরে মাইরা মহিলা বানায় দিমু ।
রাগিবঃ (ইয়ার্কি করে) You tiny mouse! How dare you changing my gender!
হাসিবঃ ভাই তোরা থাম , Gender চেঞ্জ করতে গিয়া Danger হইস না ।
ফুয়াদঃ ঐ ডা রাগিবরে ক ।
ঠিক তখন একজন স্যার ক্লাসরুমের অন্য দরজা দিয়ে ঢুকছিল আর ঢোকার সময় ওদেরও ঢুকতে বলল । এরপর ওরা ভেতরে গেলো ।
সবাই একসাথেঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার
স্যারঃ অয়ালাইকুমুস সালাম । বস সবাই ।
সবাই বসলো ।
স্যারঃ কেমন আছো সবাই ?
সবাই একসাথেঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি স্যার । আপনি কেমন আছেন ?
স্যারঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আমি রওশন এলাহি । তোমাদের নতুন বাংলা টিচার । কি পড়াবো ?
এদিকে ডিবেট চলছে লাইব্রেরীতে । লাইব্রেরিয়ান মেডাম লুতফুন্নেসা ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ তোমাদের প্রথমবারের সিলেকশন শেষ । কিন্তু সবার জন্য একটা সুখবর আছে যেটা শেষে বলব ।
তুষারঃ এখন বলেন না মেডাম ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ না সোনামণি , এখন বললে তোমাদের ডিবেট করার জোশ থাকবে না ?
তিথিঃ কি এমন কথা মেডাম যে জোশ হারায় যাবে ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ সেটা তো পরেই জানতে পারবে । আগে এই বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দিতে হবে । শিক্ষাই পারে দুর্নীতিকে রক্ষা করতে ।
এদিকে ফুটবলের প্র্যাকটিসের মাঝখানে সবাই বিরতি নিয়েছে । অনিক, সোহান আর যুবায়ের শাওন টিউবওয়েল এর দিকে যাচ্ছে একটু পানি খাওয়ার জন্য ।
যুবায়ের শাওনঃ আমাদের ফাইনাল ম্যাচ কবে রে ?
আরেফিন অনিকঃ এমনি সিলেকশন ম্যাচই শেষ হইল না তুই ফাইনাল ম্যাচ এর কথা ভাবতেসিস ?
শাহরিয়ার সোহানঃ ১০ তারিখ ।
যুবায়ের শাওনঃ অনেক দেরি । আজ তো মাত্র ১ তারিখ ।
শাহরিয়ার সোহানঃ ৭ আর ৮ তারিখ সিলেকশন ম্যাচ ।
আরেফিন অনিকঃ ঐ সোহান, তোদের রবিনে তো তুই একাই তাই না ?
শাহরিয়ার সোহানঃ হুম ।
আরেফিন অনিকঃ তুই তো আবার রবিনের কেউ না হয়েও রবিনে খেলতেসস ।
শাহরিয়ার সোহানঃ হুম ।
আরেফিন অনিকঃ আর যাই বল জামশেদ ভাই এই ডা ঠিক করে নাই ।
ঠিক ঐ সময় ঘণ্টা পড়লো ।
যুবায়ের শাওনঃ পঞ্চম পিরিয়ড শেষ । এখন কার ক্লাস ছিল রে ?
অনিকঃ বাংলা ক্লাস ছিল । বাংলার তো স্যার ই নাই । মনে হয় গ্যাপ ছিল ।
এদিকে বাংলা ক্লাস শেষে এলাহি স্যার বেরিয়ে যাচ্ছিলেন । ছেলেমেয়েরাও ক্লাস শেষে বাইরে বেরোনো শুরু । বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছে ফারিহা মুস্তারি আর ফারিহা ঐশী ।
ফারিহা মুস্তারিঃ এলাহি স্যার কেমন রে ?
ফারিহা ঐশীঃ অনেক ভালো রে ।
ফারিহা মুস্তারিঃ আমারও অস্থির লাগসে ।
ফারিহা ঐশীঃ স্যার রে ডেমো ক্লাসে দেখেই বুঝসিলাম স্যার অস্থির ।
ফারিহা মুস্তারিঃ ডেমো ক্লাস আবার কবে হল ?
ফারিহা ঐশীঃ নাইনে । মনে নাই ?
ফারিহা মুস্তারিঃ না রে ।
ফারিহা ঐশীঃ তুই মনে হয় ওইদিন আসিস নি ।
ফারিহা মুস্তারিঃ হতে পারে । এখন কার ক্লাস রে ?
ফারিহা ঐশীঃ আজিজুল স্যার এর ক্লাস ।
ফারিহা মুস্তারিঃ আয় হায় ! প্যারাগ্রাফ HW দিসিল করসিস ?
ফারিহা ঐশীঃ করসি । তুই করিস নি ?
ফারিহা মুস্তারিঃ না রে । কি কি যেন দিসিল ?
ফারিহা ঐশীঃ Tree Plantation আর Tea stall .
ফারিহা মুস্তারিঃ হায় রে। পরের দিন মনে হয় আমাকে এই দুইটা দুইবার করে করতে হবে।
ফারিহা ঐশীঃ সাথে আজকে যে দুইটা দেবে ঐ দুইটাও করতে হবে ।
ওদিকে তৃণ, সাবিত আর তুর্য এলো ক্লাসে ।
তৃণঃ রাফি , ক্লাসে কে আসছিলো রে ?
রাফিঃ নতুন স্যার । এলাহি স্যার ।
তৃণঃ ব্যাগ নিয়া যায় নাই তো ?
রাফিঃ না ।
তৃণঃ আজিজুল স্যার এর ক্লাস না এখন ?
রাফিঃ হ । HW করসিস ?
তৃণঃ না রে । আমি তো আগের দিন আসি নি ।
এদিকে বারান্দায় -
ফারিহা মুস্তারিঃ (টিচার্স রুমের দিকে ইশারা করে) ঐ দ্যাখ স্যার আসতেসে ।
ফারিহা ঐশীঃ চল ।
ফারিহা ঐশী আর ফারিহা মুস্তারি ক্লাসে চলে গেলো । স্যার ক্লাসে এলো । সবাই দাঁড়িয়ে স্যার কে সম্মান দিলো । স্যার ও ওদের বসতে বলে স্যার এর সেই ডায়রি টা বের করলো ।
আজিজুল স্যারঃ আপনারা ভালো আছেন ।
সবাইঃ আলহামদুলিল্লাহ আছি স্যার।
আজিজুল স্যারঃ (ইয়ার্কি করে) বাহ , আপনাদের রাখিব স্যার এর ডায়লগ দেখি আপনাদেরও ধরে ফেলেছে । টা HW করসিলেন ?
কেবল ৭\৮ জন বাদে সবাই বলল করেছে ।
আজিজুল স্যারঃ বেশ ভালো । তো এবার আপনাদের চেহারাটা দেখে একটু মনটা জুড়াই , একটু দাঁড়ান ।
মেয়েদের মধ্যে ৪ জন আর ছেলেদের মধ্যে ৩ জন দাঁড়ালো ।
আজিজুল স্যারঃ (ইয়ার্কি করে) মেয়েদের বেশি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় বলে ওরা মনে হয় আজ কাল পড়াশুনা কম করছে । যা হোক আপনাদের রোলগুলো একটু বলেন আমার ডায়রি টায় লিখে রাখি ।
সবাই সবার রোল বলল আর আজিজুল স্যার সেটা ডায়রি তে লিখে রাখল ।
আজিজুল স্যারঃ আর এই মালিক হীন ব্যাগ গুলোর মালিক কোথায় ?
রাহাতঃ স্যার ফুটবল খেলতে গেছে ।
আজিজুল স্যারঃ এতজন গেছে ? আবার মেয়েদেরও খেলার সুযোগ দিসে নাকি নুরুল ইসলাম স্যার?
ফারিহা বিনতে আলীঃ না স্যার , অনেকে ডিবেটে গেছে ।
আজিজুল স্যারঃ কি পড়ানোর কথা ছিল আজকে ?
ওদিকে ডিবেটে সবার পক্ষে বিপক্ষে মতামত দেয়া শেষ ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ হুম সবার তাই ভালো লেগেছে ।
তামান্নাঃ মেডাম , এবার তাহলে সুখবর টা বলেন ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ সুখবর টা হল................................................তোমরা যারা ডিবেট সিলেকশন এ এসেছ , তারা সবাই হয়তো ডিবেট করতে পারবা না , তবে ..........................................সবাই ঢাকায় ঘুরতে যাবে ।
মেডাম এর কথা শুনে সবাই খুব খুশি ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ তবে একটা ঝামেলা আছে ।
সবাই একসাথেঃ আবার কি ঝামেলা মেডাম ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ ঢাকায় যেয়ে ডিবেট করুক আর না করুক এখানে কিন্তু ডিবেট করতেই হবে ।
সবাই রাজি ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ তাহলে , কালকে সকালে অ্যাসেম্বলি করেই তোমরা চলে এসো । আর তোমাদের কালকের বিষয় “ মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক শিক্ষাই পারে সকলকে প্রকৃত শিক্ষা দান করতে’’ এটার পক্ষে ও বিপক্ষে তোমাদের মতামত লিখে আনবে কাল লটারি করে তোমাদের মতামত নেবো । এখন তোমরা ক্লাসে যাও , ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এদিক ওদিক ঘুরলে কিন্তু তাকে ঢাকা নিয়ে যাব না ।
সবাই চলে যেতে লাগলো । যেতে যেতে সবাই মেডাম কে সালাম দিলো আর মেডাম সবার সালামের উত্তর দিলো । থেকে গেলো শুধু তুষার ।
তুষারঃ মেডাম একটু কথা ছিল ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ হ্যাঁ তামজিদ , বল ।
তুষারঃ মেডাম আপনি যে সবাইকে নিলেন , সবাইকে ডিবেট করতে তো দেবে না আপনি জানেন ওরা যদি কষ্ট পায় ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ না না , ওরা একটু মজা করবে , ডিবেট যেখানে হবে ওরা ওদের বক্তৃতা না দিক কিন্তু ডিবেট এর যে আলাদা একটা মজা আছে ওটা ওরা পাবে । আর তাছাড়া তোমরা সবাই মিলে কুর্মিটোলা শাহিনে যাবা এটাও তো মজা তাই না ?
তুষারঃ ও আচ্ছা মেডাম ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ ঠিক আছে যাও ।
এদিকে ষষ্ঠ পিরিয়ডও শেষ । তুষার ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো । হঠাৎ ওকে ডাকল ফেরদৌস লাবিব । তুষার ওর জন্য দাঁড়ালো । ফেরদৌস লাবিব আন্ত শাহিন কুইজের সিলেকশনে গিয়েছিলো ।
ফেরদৌস লাবিবঃ কি রে , কি অবস্থা ?
তুষারঃ এইতো । তুই কি , টিকসিস ?
ফেরদৌস লাবিবঃ হুম । কুইজ বেশি কেউ দিতে আসেনি ।
তুষারঃ ও । এমনিতেও তোর টেকার কথা । চল ক্লাসে যাই ।
এরপর ওরা ক্লাসে গেলো । দেখতে দেখতে ওইদিনের ক্লাস শেষ । তারপর ব্যাগ কাঁধে সবাই চলে গেলো বাসায় । চোখে মুখে ক্লান্তি । সবার মতো যাচ্ছিলো অনঘ পিয়াল , তনয় আর মোটা সাদিক ।
অনঘ পিয়ালঃ দোস্ত , এরকম আর ভালো লাগে না রে , কবে যে এস এস সি দিয়া বাইর হমু ।
মোটা সাদিকঃ হ রে । ম্যালাদিন ধইরা শান্তিতে একটু ঘুমাইতেও পারিনা ।
অনঘ পিয়ালঃ ঐ , সামিউল স্যার এর HW করসিস?
তনয়ঃ না রে । আজ কে পড়া কয়টায় রে?
অনঘ পিয়ালঃ আজ কে বৃহস্পতিবার না ?
তনয়ঃ হ ।
অনঘ পিয়ালঃ আজ কে ৮ টায় পড়া । আসিস কিন্তু । আগের দিন স্যার তোরে ফোন দিসিল ।
এদিকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তামান্না আর শিমলা । দুজনেই স্কুল বাসে বসে আছে । বাস এখন ছাড়েনি ।
তামান্নাঃ আজকে এলাহি স্যার রে অস্থির লাগসে ।
শিমলাঃ হুম ওর মতো ।
তামান্নাঃ কার মতো ?
শিমলাঃ আমার ক্রাশ ।
তামান্না শুরু করে দিলো অট্টহাসি ।
শিমলাঃ হাসতেসিস ক্যান?
তামান্নাঃ তোর কথা শুনে ।
শিমলাঃ আমার কথা শুনে হাসার কি হল?
তামান্নাঃ না তোর স্বপ্নের রাজকুমার রে একটু কল্পনা করলাম ।
শিমলাঃ এই এই বলনা , সে কেমন ।
তামান্নাঃ সে অনেক মোটামুটি লম্বা ।
শিমলাঃ আর ?
তামান্নাঃ স্টাইলিশ।
শিমলাঃ আর ?
তামান্নাঃ সুন্দর করে কথা বলে ।
শিমলাঃ আর আর ?
তামান্নাঃ ঠোঁট গুলো দেখে মনে হবে লিপস্টিক লাগানো ......মানে খুব সুন্দর ।
শিমলাঃ আর বলনা । আর?
তামান্নাঃ আর ............
শিমলাঃ কি আর ?
তামান্নাঃ ( ৩ সেকেন্ড চুপ থেকে) তোর মতো গাধা।
আবার তামান্না শুরু করলো অট্টহাসি ।
শিমলাঃ বদমাইশ ! যা! তুই ডিবেট এ কিছু পারবি না !!!!
তামান্নাঃ (ইয়ার্কি করে) শকুনির অভিশাপে গাভী মরে না ।
এবার তামান্না একা নয় , দুজনেই শুরু করে দিলো অট্টহাসি । দেখতে দেখতে ঐ দিনটাও চলে গেলো । ৩ মার্চ ২০১৮ । সবাই ক্লাসে এসেছে । হাসান স্যার এর প্রাইভেট শেষ । এরপর অ্যাসেম্বলি , তারপর ডিবেটের সবাই চলে গেলো লাইব্রেরীতে । মেডাম এরপর ঠিক করে দিলেন কে কে পক্ষে মতামত দেবে আর কে কে বিপক্ষে । পুষ্পর ভাগ্যে বিপক্ষে মতামত দেয়ার সুযোগ হল । শুরু হল বিষয়টির পক্ষের দলের একজনকে দিয়ে । এরপর নিয়ম অনুযায়ী বিপক্ষের একজন মতামত দিলো । এভাবে একদম শেষে মতামত দিলো বিপক্ষে দলের পুষ্প ।
পুস্পঃ.................................আমরা বিভিন্ন মুভি দেখি । মুভির কিন্তু একটা শিক্ষণীয় বিষয় থাকেই কিন্তু আমরা কি সেই শিক্ষণীয় বিষয়টা নেই ? আমরা কিন্তু দেখি কে কি রকম পোশাক পড়লো, কে কি রকম চুলের স্টাইল করলো এগুলো দেখি আর কপি করি । অথচ যে শিক্ষণীয় বিষয় টা আমরা পেলাম সেটা কিন্তু আমরা বুঝলেও বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ করি না ।
পুষ্পর যুক্তি শুনে হাসতে হাসতে সবার অবস্থা খারাপ । যা হোক । ওইদিনের ডিবেটে সবার মতামত দেয়া শেষ হল ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ এইযে , কি জানি নাম ...... পুস্প । তুমি তো খুব সুন্দর যুক্তি দিলে । একদম আমাদের হাসিয়ে ছাড়লে । দারুন ছিল তোমার যুক্তি টা ।
পুষ্পঃ থ্যাঙ্ক ইউ মেডাম ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ তুমি সুন্দর যুক্তি দিয়েছ , কিন্তু তোমার একটু বেধে বেধে যাচ্ছে । তুমি আমাদের সাথে এমনি ঘুরতে যেও আর ওদের কোন যুক্তি প্রদানে সাহায্য করো ।
পুষ্পঃ ঠিক আছে মেডাম ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ রাগ করলে না তো ?
পুষ্পঃ না মেডাম , রাগ করবো কেন ?
ওদিকে ১ম ক্লাস হচ্ছে । বাংলা ১ম । নতুন স্যার টা এসেছে । এলাহি স্যার । স্যার এর আসতে অনেক দেরি হয়ে গেছে । ক্লাস শেষ হবার আর মাত্র ১০ মিনিট ।
এলাহি স্যার । তোমাদের কি কি পদ্য পড়ানো হয়েছে ?
একেকজন একেক কথা বলছে । কেউ বলছে কপোতাক্ষ নদ , ঝর্ণার গান , কেউ কেউ বলছে জুতা আবিষ্কার , বঙ্গবাণী , আরও একেজন একেক কথা বলছে । স্যারও কিছু বুঝতে পারছে না উলটো ক্লাসে এক প্রকার কোলাহল সৃষ্টি হয়েছে ।
এলাহি স্যারঃ আচ্ছা ঠিক আছে । সবাই একটু চুপ করো, পাশে ক্লাস হচ্ছে । ........................ঠিক আছে ঠিক আছে , সবাই চুপ করো ।
সবাই চুপ করলো ।
এলাহি স্যারঃ তোমরা সবাই নাইনে তো প্রায় অর্ধেক টা পদ্য গদ্য শেষ করেছো । আমি তাহলে শেষ থেকে শুরু করি । তোমাদের শেষ কবিতা টা হল ............(স্যার বইয়ের পাতা উলটাচ্ছেন)............হ্যাঁ, সাহসী জননী বাংলা । এটা তোমরা পড় । আমি তোমাদের ধরবো বহু নির্বাচনী ।
কেউ কেউ পড়তে লাগলো কেউ কেউ গল্প করতে লাগলো ।
শাহরিয়ার সোহান আর রিদু গল্প করছে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ কিরে রিকের কি অবস্থা, খোঁজ খবর নেয় ?
রিদুঃ ঐ যে ২১শে ফেব্রুয়ারির পরদিন শুধু কথা বলসিল । আর বলে নাই ।
শাহরিয়ার সোহানঃ ও ।
রিদুঃ মাঠে যাবি না ?
শাহরিয়ার সোহানঃ এখন কেন ? এই ক্লাস শেষ হোক ।
রিদুঃ হুম ।
শাহরিয়ার সোহানঃ এরপর কার ক্লাস ?
রিদুঃ আই সি টি । তানিয়া মেডাম এর ।
শাহরিয়ারঃ ইশ , আজকে না ল্যাবে যাওয়ার কথা?
রিদুঃ হুম ।
শাহরিয়ার সোহানঃ ল্যাবের ক্লাস টা মিস করমু ।
ওদিকে লাইব্রেরীতে সবাই আরেকটা বিষয় এর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দেয়ার জন্য মতামত লিখছে । বিষয়টা হল দারিদ্রতাই মানুষকে দুর্নীতি করতে বাধ্য করে । একদল পেয়েছে পক্ষে মতামত দেবার সুযোগ , আরেক দল পেয়েছে বিপক্ষে মতামত দেবার সুযোগ । তুষার আর তাকিয়া আপু সামনাসামনি বসেছিল । তাকিয়া আপু ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে ।
তাকিয়া আপুঃ এই তুষার , বলনা কি লিখসিস ।
তাকিয়া আপু ছিল বিপক্ষের দলে আর তুষার ছিল পক্ষের দলে ।
তুষারঃ কি যে বলেন না আপু, আপনি কি লিখসেন সেটা না দেখে আমি কিভাবে আমি কি লিখসি সেটা আপনাকে দেখাতে পারবো ?
এদিকে লুতফুন্নেসা মেডাম ওদের কথা শুনে ফেলল ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ কিরে , কোন পক্ষ ঘরের শত্রু বিভীষণ হচ্ছে রে ? তামজিদ না তাকিয়া ?
তাকিয়া আপুঃ না মেডাম এখানে বাইরের শত্রু বিভীষণ ।
এদিকে প্রথম ক্লাস শেষ । ঘণ্টা বেজে গেছে ।
এলাহি স্যারঃ আজকে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো বলে ক্লাস টা ভালো করে নিতে পারলাম না । তোমরা সাহসী জননী বাংলা টা কাল পড়ে এসো , পরের দিন এখান থেকে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন ধরবো ।
এরপর স্যার চলে গেলো । স্যার যাবার সাথে সাথে সব কথা বার্তা শুরু । ফুটবল খেলোয়াড়রা সব চলে গেলো খেলতে । ষষ্ঠ বেঞ্চ থেকে উঠে ৩য় বেঞ্চে আরিফের কাছে এলো রাতুল ।
রাতুলঃ আজকে সাত্তার স্যার এর HW করসিস?
আরিফঃ ই!! ভুইলা গেসি রে । তুই করসিস ?
রাতুলঃ হ্যাঁ ।
আরিফঃ তাইলে খাতা টা দে ।
রাতুলঃ আমার খাতা হাসিব নিসে ।
আরিফঃ এ মুটা (আরিক) তুই করসিস ?
আরিকঃ হ করসি ।
আরিফঃ খাতা টা দে ।
আরিকঃ আমার খাতা টা রাহাত নিসে ।
পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো হাসিব ।
আরিফঃ এ হাসিব, বাংলা ২য় HW করসিস?
হাসিবঃ হ্যাঁ দোস্ত । করসি ।
আরিফঃ খাতা টা দে ।
হাসিবঃ দোস্ত আমার খাতা রাফি নিসে রে ।
লাস্ট বেঞ্চে বসে ছিল সাবিত ।
আরিফঃ ঐ সাবিত .........ঐ সাবিত .........
সাবিত জিহানের সাথে গল্প করছিলো বলে শুনতে পারছিলো না । এরপর আরিফই উঠে গেলো ।
আরিফঃ ঐ সাবিত , বাংলা HW করসিস ?
সাবিতঃ হ্যাঁ দোস্ত , করসি ।
আরিফঃ খাতাটা দে ।
সাবিতঃ আমার খাতা তৃণ নিসে রে ।
সামনের বেঞ্চেই ছিল রাগিব । রাগিব কিছু লিখছিল ।
আরিফঃ কিরে HW করসিস ?
রাগিবঃ You tiny mouse , can’t you see I’m doing my home work at this moment ?
আরিফঃ (ইয়ার্কি করে) ভাই ইংলিশ বুঝি না । বাংলায় একটু তেরানশেলেশন করে দেবেন পিলিয ?
রাগিবঃ তেরানশেল্লেশন কি ?
আরিফঃ Translation .
রাগিবঃ ভাগ । আর আমাকে HW করতে দে ।
আরিফ ওর বেঞ্চে চলে গেলো ।
আরিকঃ এ আরিফ , বাংলা বইতেই না অনুচ্ছেদ টা আছে ।
আরিফঃ (ইয়ার্কি করে আরিকের পিঠে একটা থাবা দিয়ে ) এতক্ষন ঘুইরে আসার পর কইলি শালা মুটা !!!
আরিকঃ ইয়ে মানে আমি ভুলে গেসিলাম ভাই............সরি সরি ।
ঠিক সেই সময় ক্লাসে এলো তানিয়া মেডাম । সবাই দাঁড়িয়ে মেডাম সালাম দিয়ে সম্মান জানালো । মেডামও সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বলল ।
তানিয়া মেডামঃ আজকে কি পড়ানোর কথা ছিল ?
ফারিহা বিনতে আলীঃ মেডাম চতুর্থ অধ্যায় ।
তানিয়া মেডামঃ পরীক্ষা নেবার কথা ছিল না ?
ফারিহা বিনতে আলীঃ ছিল? মেডাম আমি আগের দিন আসি নি তো জানতাম না ।
তানিয়া মেডামঃ ও । ছেলেদের ক্যাপ্টেন কোথায় ?
ফারিহা বিনতে আলীঃ মেডাম ডিবেট করতে গেছে ।
তানিয়া মেডামঃ ও । সেকেন্ড ক্যাপ্টেন কোথায় ?
ফারিহা বিনতে আলীঃ এই রাহাত ।
রাহাত দাঁড়ালো ।
রাহাতঃ জি মেডাম বলেন ।
তানিয়া মেডামঃ আজ কে পরীক্ষা নেবার কথা ছিল ?
রাহাতঃ ইয়ে মানে না মানে হ্যাঁ মেডাম ছিল ।
তানিয়া মেডামঃ কত অধ্যায় ?
রাহাতঃ চতুর্থ অধ্যায় ।
তানিয়া মেডামঃ ফারিহা যে বলছে চতুর্থ অধ্যায় পড়ানোর কথা ছিল?
ফারিহা বিনতে আলীঃ মেডাম আমি আগের দিন আসি নি ।
তানিয়া মেডামঃ তাহলে আজকে কি পড়ানোর কথা ?
রাহাতঃ পঞ্চম অধ্যায় ।
তানিয়া মেডামঃ ঠিক আছে পঞ্চম অধ্যায় বের করো ।
ফারিহা বিনতে আলীঃ পরীক্ষা নেবেন না মেডাম ?
তানিয়া মেডামঃ না । তোমাদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোমরা পড়ে আসো নি । বই বের করো ।
এদিকে মাঠে খেলার প্র্যাকটিস হচ্ছে । মারলিন হাউসের জিম, রিদু আর মাসুদ নিজেরা নিজেরা একটু প্র্যাকটিস । কিছুক্ষণ খেলার পর ওরা একটু রেস্ট নেবার জন্য শহিদ মিনারের পাশে পেয়ারা গাছের নিচে বসলো ।
মাসুদঃ মেলা কষ্ট রে ।
জিমঃ কষ্ট তো করাই লাগে । তা ও যদি না জিততে পারি তখনই তো আসল কষ্ট লাগবে।
রিদুঃ এ জিম পুস্প নাকি ডিবেট করতে যাচ্ছে ।
মাসুদঃ কি পুষ্প যাচ্ছে ?
জিমঃ হুম আমিও শুনসি ।
মাসুদঃ পুষ্প পরোখ ভাইয়ের টিমে না ?
জিমঃ ওরে বাদ দিসে তুই জানিস না?
মাসুদঃ না রে সত্যি জানিনা ।
রিদুঃ পিটবান বোলো মাসুদ , এতদিন পরে তুই এ কি বলতেসিস ?
মাসুদঃ সত্যি দোস্ত , আমি জানতাম না । কি হইসিল ?
রিদুঃ ওর পায়ে ব্যাথা বেড়ে গেসিল । তাই বাদ দিয়ে দিসে ।
মাসুদঃ পরোখ ভাইয়ের টিমে নাকি প্লেয়ার ই খুজে পায় না , আবার বাদ দিলো কাকে নিসে?
জিমঃ নাইনের একটা ছেলেকে নিসে । অনেক ভালো নাকি খেলে ।
মাসুদঃ একদিক দিক দিয়ে ভালো হইসে আরেক দিক দিয়ে খারাপ হইসে ।
জিমঃ যেমন?
মাসুদঃ এই ধর পুষ্প যদি খেলার মাঝখানে পায়ে ব্যাথার কারণে যদি খেলতে না পারে তাহলে একটা ঝামেলা না।
রিদুঃ আর খারাপ কি হইসে ?
মাসুদঃ এইযে ওর অনেক ইচ্ছা ছিল খেলার । পোলা ডার মন ডা ভাইঙ্গা গেলো ।
রিদুঃ না । আবার ডিবেট করতে যাইয়া জোড়া লাইগে গেসে ।
একটু পরে টিফিনের ঘণ্টা বাজল । শনিবার ৯ টা থেকে ক্লাস শুরু হয় । ৯ টা থেকে ৯ টা ৪০ পর্যন্ত প্রথম পিরিয়ড ছিল । আবার ৯ টা ৪০ থেকে ১০ টা ২০ পর্যন্ত আরেকটা ক্লাস । তার পরেই টিফিন । ক্লাস থেকে তানিয়া মেডাম পড়া দিয়ে চলে গেলেন । হঠাৎ “ইয়ে!” বলে একটা চিৎকার দিয়ে ক্লাসে ঢুকল নাবিলা । এসে লামিয়া নিয়ে নাচানাচি শুরু । সবাই তো একদম অবাক । কি হচ্ছে টা কি ?
লামিয়াঃ কি রে , কি হইসে রে?
নাবিলাঃ আমি আমার লিপস্টিক পেয়ে গেছি ।
লামিয়াঃ কই পাইসিস রে ?
নাবিলাঃ আমি সেদিন ভুল করে আমাদের ক্লাস রুমের ডেস্কের ভেতর রাখসিলাম । এতদিন দিন পর খুজে পাইলাম । কি যে মজা লাগতেসে ।
লামিয়াঃ খালি আমার টাই খুজে পাইলাম না রে ।
ঠিক তখন ওদের মাঝে এলো নুর জাহান ।
নুর জাহানঃ আর আমার টা তো তুষারই অর্ধেক শেষ করে দিসে ।
এদিকে অহনা বসে বসে টিফিন খাচ্ছিল । ঠিক তখন প্রতীক পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো । অহনা প্রতিককে ডাকল । প্রতীকও দাঁড়ালো ।
অহনাঃ এই প্রতীক , তোমরা কি আর কোন নাটক করতিস ?
প্রতীকঃ হ্যাঁ । একটা করতেসি তো ।
অহনাঃ কি নাম ?
প্রতীকঃ স্বপ্নিল আকাশ ।
অহনাঃ কে কে আছে?
প্রতীকঃ আছে , ঐ তনয় , ইকবাল , আনিক আর সোহান ।
অহনাঃ সোহান মানে , সেতুর বোন ?
প্রতীকঃ বোন না, ভাই ।
অহনাঃ ও হ্যাঁ ভাই ।
প্রতীকঃ হুম ।
অহনাঃ আচ্ছা তোমাদের নাটকে কোন মেয়ে নাও না কেন?
প্রতীকঃ আমাদের এই এলাকা টা Restricted তো , যদি কোন মেয়েকে নিয়ে ফিল্ম বানাই তাহলে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত আঙ্কেল এসে আমাকে গার্ডরুমে ধরে নিয়ে যাবে ।
অহনাঃ কেন ?
প্রতীকঃ ঐ আঙ্কেল বলবে আমি আর ঐ মেয়ে প্রেম করছি । পরে যত প্যারা আমার উপর দিয়ে যাবে ।
অহনাঃ কেন আঙ্কেল মিথ্যা বলবে ?
প্রতীকঃ খুশির ঠেলায় , পদোন্নতির আশায় ।
অহনাঃ ও আচ্ছা ।
প্রতীকঃ আচ্ছা তুমি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় নাম দেবে না ?
অহনাঃ কবে ?
প্রতীকঃ এইতো ১৫ মার্চ । গজল প্রতিযোগিতাও আছে ।
অহনাঃ কি উপলক্ষ্যে ?
প্রতীকঃ ২০ মার্চ শিশু দিবস আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ।
অহনাঃ গজল কবে হবে ?
প্রতীকঃ ১৮ তারিখ ।
অহনাঃ আমি মনে হয় দিতে পারবো না ।
প্রতীকঃ কেন ?
অহনাঃ ২০ তারিখ থেকে মডেল টেস্ট শুরু হচ্ছে না ।
ওদিকে ডিবেট সিলেকশন হচ্ছে । তিথি বক্তব্য দিচ্ছে ।
তিথিঃ .....................সব শেষে এটাই আমি বলব আপনারা যদি দারিদ্রতাকেই দুর্নীতির প্রধান উৎস মনে করেন তাহলে আপনারা সেই সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের অপমান করছেন যারা যারা অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজের গায়ের জোরে খেটে অর্থ উপার্জন করে । ধন্যবাদ মাননীয় বিচারক মণ্ডলী ধন্যবাদ সকলকে ।
তিথি যেয়ে নিজের সিটে বসে পড়লো । এই সময় লুতফুন্নেসা ম্যাদামের মোবাইলে একটা কল এলো ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ হ্যালো .........আচ্ছা .........আচ্ছা ঠিক আছে । (ফোনে রেখে) এই তামজিদ একটু শুনবে ।
তামজিদঃ (মেডাম এর কাছে এসে) কুর্মিটোলা থেকে ফোন এসেছিলো । কত জন ডিবেট এর জন্য এক্সট্রা যেতে পারবে সেটা বলল । কিন্তু আমাদের এখানে যতজন আছে তার মধ্যে থেকে এখন এক জন কে বাদ দেয়া লাগবে । আমি বলি কি তুমি একটু পুষ্প কে বল ব্যাপার টা । ও সবার পরে এসেছে তো ।
তুষার এক পলক্ক পুষ্পর দিকে তাকাল । সবার সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে । গতকাল মাঠে ওর সাথে যা ঘটেছিলো সব যেন প্রায় ভুলেই বসেছে । এখন আবার নতুন করে যদি ওকে কষ্ট দেয়া হয় তবে ও নিশ্চিত মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বে ।
তুষারঃ মেডাম আর কোন উপায়ে ওকে অন্তত ওকে আমাদের সাথে যাবার সুযোগ করে দেয়া যায় না ?
এদিকে প্রতীক অহনার সাথে কথা বলছিল ।
প্রতীকঃ আচ্ছা তোমার কি মনে হয় না মডেল টেস্ট টা এবার খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে ?
অহনাঃ তোমার এই তাড়াতাড়ি কথা শুনে আমার একটা কথা মনে পরে গেলো ।
অহনা তখন ব্যাগ থেকে একটা খাবার সহ টিফিন বক্স বের করে প্রতীকের হাতে দিয়ে বলল
অহনাঃ এটা তুমি একটু তাড়াতাড়ি তুষারকে দিয়ে আসতে পারবা ?
প্রতীকঃ কার এটা ?
অহনাঃ তুষারের । ও ডিবেট করতে গেসে তো তাই টিফিন নিতে আসতে পারে নি । আনটি আমার কাছে দিসে । তুমি একটু ওকে দিয়ে আসতে পারবা ?
প্রতীকঃ (ইয়ার্কি করে) ইশ! নিজে যেতে পার না ?
অহনাঃ প্লিজ যাও না । আমি সাত্তার স্যার এর HW করতেসি । তুমি একটু যাও না ।
প্রতীকঃ ওকে ।
প্রতীক তুষার টিফিন নিয়ে যাচ্ছিলো । তখন দেখা হয় ২১শে ফেব্রুয়ারির নাটকে পরিচয় হওয়া নাদিম আর জিয়ন এর সাথে ।
নাদিমঃ Hey bro কি অবস্থা ?
প্রতীকঃ এইতো চলতেসে । তোমার কি অবস্থা?
নাদিমঃ এইতো আমার ।
প্রতীকঃ কিরে জিউ , তোর কি অবস্থা ?
প্রতীক জিয়ন কে জিউ বলে ডাকতো ।
জিয়নঃ এই তো দাদা ।
প্রতীকঃ কি Inter shaheen spelling competition এর জন্য যাচ্ছ ?
জিয়নঃ হ্যাঁ দাদা ।
প্রতীকঃ বিজি মনে হচ্ছে ?
নাদিমঃ Yep bro , কিছুটা ।
প্রতীকঃ আচ্ছা যাও তাহলে ।
জিয়ন আর নাদিম চলে গেলো । প্রতীক লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছিলো । তখন ২৬ নাম্বার রুম থেকে বের হল ফেরদৌস লাবিব ।
ফেরদৌস লাবিবঃ এই প্রতীক , কোথায় যাচ্ছ ?
প্রতীকঃ তুষারকে টিফিন দিতে যাচ্ছি ।
ফেরদৌস লাবিবঃ রাগিবকে দেখস?
প্রতীকঃ না তো ।
ফেরদৌস লাবিবঃ রাগিবকে কোথায় পাব বলতে পার কি?
প্রতীকঃ দেখো আশেপাশে কোন ঝোপ ঝাড়ে টয়লেট করতেসে হয়তো ।
ফেরদৌস লাবিবঃ প্রতীক , এখন ইয়ার্কি করো না । ওকে খুব দরকার ।
প্রতীকঃ কি দরকার?
ফেরদৌস লাবিবঃ আমাদের কুইজ প্রতিযোগিতার জন্য একজন এক্সট্রা লাগবে । তাই ভাবলাম রাগিব যদি যায় । তুমি যাবা ?
প্রতীকঃ আমি ! আমি তো ম্যাথ এ দিচ্ছি ।
ফেরদৌস লাবিবঃ আচ্ছা আমি যাই ।
প্রতীকঃ আচ্ছা যাও ।
বলেই প্রতীক লাইব্রেরীর দিকে গেলো । লাইব্রেরীর কাছে যেয়ে দরজা খুললে মেডামকে বলল
প্রতীকঃ আসসালামু আলাইকুম মেডাম ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ অয়ালাইকুমুস সালাম সোনামণি । কেমন আছো ?
প্রতীকঃ জী মেডাম আলহামদুলিল্লাহ । ভালো । আপনি ভালো আছেন ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ হ্যাঁ সোনামণি । ভালো আছি । কিছু বলবে ?
প্রতীকঃ জী মেডাম । তুষারকে এই টিফিন টা দিতে এসেছি ।
তুষারঃ মেডাম আমি টিফিন টা খেয়ে আসি ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ সেকি , তুমি এখন টিফিন খাও নি ? টিফিন পিরিয়ড শেষ হতে তো আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি ।
তুষারঃ না মেডাম ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ ঠিক আছে যাও ।
তুষার বেরিয়ে এলো । তারপর প্রতীককে নিয়ে একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে যেয়ে টিফিন খাওয়া শুরু করলো ।
তুষারঃ খাবি ?
প্রতীকঃ না । মন খারাপ তোমার?
তুষারঃ আরে না রে ।
প্রতীকঃ মেডাম এর সাথে ক্কথা বলতেসিলি মনে হচ্ছিলো দুজনেরই মন খারাপ ।
তুষারঃ ঝামেলা হইসে রে । আমাদের যতজন ডিবেট করতেসে তাদের একজনকে বাদ দিতে হবে ।
প্রতীকঃ কেন?
তুষারঃ লোকসংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে । মেডাম বলতিসে ওকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবার কোন উপায় নাই ।
প্রতীকঃ একটা উপায় আছে ।
তুষারঃ কি উপায়?
প্রতীকঃ তুমি টিফিন খাও আমি আসতেসি ।
বলেই প্রতীক চলে গেলো ২৬ নাম্বার রুমে । দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে ফেরদৌস লাবিব কে দেখল । এরপর দরজার পাশের একজনকে বলে ফেরদৌস লাবিবকে ডেকে বাইরে আনল ।
প্রতীকঃ রাগিবকে পাইসো ?
ফেরদৌস লাবিবঃ না
প্রতীকঃ যাক বাচলাম । পুষ্প কে তাহলে নাও ।
ফেরদৌস লাবিবঃ লাভ নাই ।
প্রতীকঃ কেন?
ফেরদৌস লাবিবঃ কলেজের আরেকটা ভাইয়া ঐ জায়গায় আসছে ।
এদিকে ইন্টার হাউজ ফুটবল খেলার প্র্যাকটিস হচ্ছে । ইংলিশ ভার্শন বিল্ডিং এর সিঁড়িতে বসে আছে শাওন আর জিম ।
শাওনঃ ম্যাচ টা খুব অদ্ভুত হবে রে ।
জিমঃ ক্যান?
শাওনঃ আরে লটারি করে প্রথমে দুইটা টিমের মধ্যে ম্যাচ হবে । পরের দিন বাকি দুইটা টিমের ম্যাচ হুবে । এই দুই ম্যাচ এ যে দুই টিম জিতবে , ঐ দুই টিম ফাইনালে যাবে ।
জিমঃ এই সিস্টেম করসে ক্যান?
শাওনঃ কি আর করবে । টাইম নাকি নাই ।
টিফিন পিরিয়ডের ঘণ্টা পড়ে গেছে । এপাশে টিউবওয়েল থেকে বোতলে পানি ভরছিল শাহরিয়ার সোহান । পানি ভরা শেষে পানি খেলো । তখন ওর কাছে এলো ইকবাল ।
ইকবালঃ কিরে কি অবস্থা ?
শাহরিয়ার সোহানঃ এই ! তুই এইখানে ?
ইকবালঃ হ । ম্যালাদিন তিন তলার ঐ বারান্দায় যাওয়া হয় না ।
শাহরিয়ার সোহানঃ সাত্তার স্যার এর ক্লাস না এখন ?
ইকবালঃ হ ।
শাহরিয়ার সোহানঃ স্যার ব্যাগ নিয়া যাবে না ?
ইকবালঃ সমস্যা নাই ।
শাহরিয়ার সোহানঃ ক্যান ?
ইকবালঃ আমার ব্যাগ বুড়োর ব্যাগের মধ্যে ঢুকায় রাইখে আসছি ।
বুড়ো লাবিব তখন এইদিকেই আসছিলো ।
শাহরিয়ার সোহানঃ কিন্তু বুড়ো তো তোর এইদিকেই আসতেসে । তোর পিছে তাকায় দ্যাখ ।
ইকবাল পিছে তাকায় দেখে সত্যি সত্যি বুড়ো লাবিব এইদিকে আসতেসে ।
ইকবালঃ আয় হায় ! স্যার যদি আমার বাসায় ফোন দেয় তাইলে আমি আজকে গেসি ।
শাহরিয়ার সোহানঃ তে তুই আসছিস ক্যান ?
ইকবালঃ আরে আমি HW করিনাই বলেই তো আসছি ।
ওদিকে প্রতীক ফেরদৌস লাবিবের সাথে কথা বলছিল ।
প্রতীকঃ ইশ ! এখন পুষ্পর কি হবে ।
ফেরদৌস লাবিবঃ কেন ?
প্রতীকঃ পুষ্পকে ফুটবল খেলা থেকে বাদ দিয়ে দিসে জানো না ?
ফেরদৌস লাবিবঃ হ্যাঁ জানি তো ।
প্রতীকঃ এখন মেডাম ওকে ডিবেট টিমের সাথেও ওকে রাখতে পারতেসে না ।
ফেরদৌস লাবিবঃ কেন ?
প্রতীকঃ লোকসংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে ।
রুম থেকে তখন বেরিয়ে এলো কুইজের লিডার ভাইয়া অলিক ।
অলিক ভাইঃ কি ব্যাপার লাবিব , তুমি এতক্ষন বাইরে ক্যান , ভেতরে চল ।
ফেরদৌস লাবিবঃ ভাইয়া আরেকজন এক্সট্রা নেয়া যাবে কি ?
অলিক ভাইঃ আরেকজন এক্সট্রা , হ্যাঁ । পেলে তো ভালোই হয় । কে ?
প্রতীকঃ ভাইয়া পুষ্প নামের একটা ছেলে ।
অলিক ভাইঃ আচ্ছা । ওকে তাহলে আসতে বল, আর লাবিব , তুমি ভেতরে আসো ।
প্রতীক তখন তুষারের কাছে গেলো ।
প্রতীকঃ কাজ হইসে ।
তুষারঃ কি কাজ ?
প্রতীকঃ পুষ্প ডিবেট টিমের সাথে না যেতে পারলেও কুইজ টিমের সাথে যাবে ।
তুষারঃ বাহ ! ভালো তো ! চল তাইলে লাইব্রেরীতে যাই ।
টিফিন বক্সে অর্ধেকটা টিফিন রেখে দিয়ে তুষার বক্স টা আটকে প্রতীকের সাথে লাইব্রেরীতে গেলো । কিন্তু লাইব্রেরীতে ঢুকে পুষ্পকে পেলো না ।
তুষারঃ মেডাম পুষ্প কোথায় ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ তোমার আসতে দেরি হচ্ছিলো বলে আমি ওকে সব বলে দিসি । বেচারা খুব মন খারাপ করে চলে গেসে ।
তুষারঃ ইশ ! আচ্ছা মেডাম পুষ্প কোথায় গেছে বলতে পারেন ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ সেটা তো বলত্তে পারি না ।
তুষারঃ আচ্ছা মেডাম আমি একটু আসছি । বলেই প্রতীক আর তুষার চলে গেলো পুষ্পকে খুজতে ।
প্রতীকঃ পুষ্প কোথায় থাকতে পারে ?
তুষারঃ জানি না । চল ক্লাসে যেয়ে দেখি ।
প্রতীকঃ ক্লাসে যে পুষ্প যায় নি এটুকু Sure .
তুষারঃ ক্যান?
প্রতীকঃ এখন সাত্তার স্যার এর ক্লাস । HW তো Sure করে নি । আর তাও যদি যায় সাত্তার স্যার ওকে অন্তত ঢুকতে দেবে না । চল কলেজ বিল্ডিং এর তিন তলায় যাই ।
তুষারঃ না চল । ফুটবল খেলার ওখানে যাই ।
প্রতীকঃ চল ।
এদিকে বুড়ো লাবিব ইকবালের কাছে এলো ।
বুড়ো লাবিবঃ কি রে , তোরা খেলা বাদ দিয়া কি ক্রস এখানে ?
শাহরিয়ার সোহানঃ তুই ক্লাস বাদ দিয়া কি করিস ?
বুড়ো লাবিবঃ সাত্তার স্যার এর HW করি নাই । তাই ফাঁকি দিচ্ছি ।
ইকবালঃ কিরে তুই ব্যাগ কই রাখসিস ?
বুড়ো লাবিবঃ যেখানে থাকে ।
ইকবালঃ আরে ধুর স্যার তো ব্যাগ নিয়ে যাবেনে ।
বুড়ো লাবিবঃ কি ? সাত্তার স্যার ব্যাগও নিয়ে যায় ?
ইকবালঃ তা কি ? তুই তো বাশ খাইলিই আমারেও খাওয়াইলি । এইবার কি করি ?
বুড়ো লাবিবঃ মরসি রে । স্যার যদি আরও দ্যাখে ব্যাগের মধ্যে আরেকটা ব্যাগ তাইলে কিন্তু আরও খবর আছে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ যা । তোরা এবার মরসিস ।
বুড়ো লাবিবঃ যা , চিন্তা করিস না । স্যার ভাববে নে আমরা খেলায় বা ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতায় আছি ।
ইকবালঃ এই হ্যাঁয় । স্যার ব্যাগ নেবেনে ক্যামনে । স্যার তো ভাববেনে আমরা প্রতিযোগিতায় ।
কিছুক্ষনের মধ্যে তুষার আর প্রতীক এলো ওদের কাছে । একটু দৌড় দিয়ে এসেছে বলে হাফাচ্ছে ।
প্রতীকঃ সোহান , পুষ্পরে দেখসিস ?
শাহরিয়ার সোহানঃ(কলেজ বিল্ডিং এর তিনতলার সিঁড়ির দিকে ইশারা করে) ঐ যে , ও তো কলেজ বিল্ডিং এর তিন তলায় উঠছে ।
তুষারঃ (কলেজ বিল্ডিং এর তিন তলার বারান্দার দিকে তাকিয়ে) প্রতীক , তাড়াতাড়ি চল , আবার কুনালের মতো কিছু করে না বসে ।
তুষার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল প্রতীক ইতোমধ্যে দৌড়ে প্রায় মাঝ মাঠে পৌঁছে গেছে । তুষারও দৌড় দিলো । শাহরিয়ার সোহান , বুড়ো লাবিব আর ইকবাল ওদের ডাকল কিন্তু ওরা শুনল না । তিনতলার বারান্দায় উঠে প্রতীক দেখল পুষ্প রেলিং এর ওপর উঠছে । প্রতীক পুষ্প বলে একটা চিৎকার দিয়ে পুষ্পকে থামানর জন্য দিলো একটা দৌড় । পুষ্প ডাক শুনে প্রতীকের দিকে তাকাল । ক্লাস রুম গুলতে স্যার মেডাম রা ক্লাস নিচ্ছিলেন সবাই বেড়িয়ে এলেন । প্রতীক পুষ্পকে ধরে টেনে নিয়ে এলো রেলিং থেকে দূরে । তিন জন স্যার বেড়িয়ে এসেছিলেন । অপু স্যার , আকরাম স্যার আর সাইফুল স্যার ।
অপু স্যারঃ এখানে হচ্ছেটা কি ?
প্রতীকঃ ইয়ে মানে স্যার ওকে নিতে আসলাম কুইজ প্রতিযোগিতার জন্য ।
সাইফুল স্যার আর আকরাম স্যার ক্লাসে চলে জ্ঞেলেন ।
অপু স্যারঃ তা ও কি নিজে নিজে যেতে পারে না ?
প্রতীকঃ মানে .........স্যার ও তো নিজেই জানে না ও প্রতিযোগিতায় নাম দেবে ।
অপু স্যারঃ (প্রচুর জোরে ধমক দিয়ে) কি ?
স্যার এর ধমকে পুরো ক্লাসরুমের সবাই চমকে উঠলো ।
এদিকে ক্লাসরুমে সাত্তার স্যার ক্লাস করাচ্ছে ।
সাত্তারঃ আজ কে তো সবাই ভালোই HW করে এনেছ । তা এই মালিকহীন ব্যাগের সব মালিকই কি ফুটবল আর প্রতিযোগিতার জন্য গেছে নাকি কেউ কেউ ফাঁকি দিতে গেছে ?
কেউ কোন কথা বলে না ।
সাত্তার স্যারঃ কি ব্যাপার , সবাই চুপ কেন ? জবাব দাও ।
এবারও কেউ কোন কথা বলে না ।
সাত্তার স্যারঃ বুঝেছি । আজকে তোমাদের নাম ডাকা হইসে কোন ক্লাসে ?
ফারিহা বিনতে আলীঃ স্যার নাম ডাকাই হয় নি আজ কে ।
সাত্তার স্যারঃ আচ্ছা এই ব্যাগ গুলো আমার কাছে দিয়ে আসবা । ফুটবল খেলোয়াড়রা তো জার্সি পরেই ফুটবল খেলতেসে । ওদের বলবে জার্সি পরে আমার কাছে এসে ব্যাগ ফেরত নিতে । আর যারা ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতায় আছে ওদের বলবা লুতফুন্ননেসা মেডাম এর কাছ থেকে সাক্ষর করে আনতে । আর রাহাত ,তুমি এই মালিক হীন ব্যাগগুলো আমার রুমে দিয়ে আসবা ।
রাহাতঃ ইয়ে মানে স্যার আমি ?
সাত্তার স্যারঃ হ্যাঁ তুমি ।
এদিকে প্রতীক পুষ্পকে নিয়ে অপু স্যার এর সাথে কথা বলছিল ।
অপু স্যারঃ ও জানে তো তুমি ওকে নিয়ে যাচ্ছ কেন ? আচ্ছা বুঝলাম নিয়ে যাচ্ছ , তাহলে এভাবে ক্লাসের সামনে চিৎকার করার মানে কি ?
প্রতীক কিছু বলতে পারে না ।
অপু স্যারঃ (পকেট থেকে ফোন বের ক্করে) দাঁড়াও আমি প্রিন্সিপ্যাল স্যার কে ফোন দিচ্ছি ।
প্রতীকঃ স্যার আপনি আমাদের চেনেন ?
অপু স্যারঃ আবার মুখে মুখে কথা বলছ ? তোমাদের চিনি না তো কি হয়েছে , প্রিন্সিপ্যাল স্যার তোমাদের চিনে নেবে ।
প্রতীকঃ আমাদের চেহারা দেখে চিনতে পারবেন?
অপু স্যারঃ মানে ?
প্রতীকঃ তাহলে টাটা ।
বলেই প্রতীক পুষ্পকে নিয়ে দিলো ঝেড়ে এক দৌড় । তুষার তখন নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল । অপু স্যার কথা বলছিল দেখে আর উপরে ওঠে নি । প্রতীক তুষারকে দৌড়াতে দৌড়াতে “লাইব্রেরীতে চল” বলল । এক দৌড়ে তিন জন্ন লাইব্রেরী পৌঁছে গেলো ।
এদিকে সাত্তার স্যার এর ক্লাস শেষ । স্যার বের হয়ে টিচার্স রুমের দিকে যাচ্ছেন । রাহাত স্যার এর পিছে পিছে ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে । ক্লাসে বসে কথা বলছে মির সামিয়া রহমান আর সাবরিনা ।
সাবরিনাঃ দেখসিস তুই আমাকে বলসিলি না এই ক্লাস তা ফাঁকি দিতে , দ্যাখ ফাঁকি দিলে কি হইত ।
মির সামিয়া রহমানঃ কিছুই হইত না ।
সাবরিনাঃ হুহ.........এটা স্কুল । মামা বাড়ি না ।
মির সামিয়া রহমানঃ আচ্ছা আমাদের মডেল টেস্ট এতো আগে কেন হচ্ছে রে ?
সাবরিনাঃ জানিনা রে ।
মির সামিয়া রহমানঃ এপ্রিলে পিক্কনিক । পিকনিকের পরে না হয় পরীক্ষাটা নিত ।।
সাবরিনাঃ রাখিব স্যার কে বলবি ?
মির সামিয়া রহমানঃ এখন যাবি ?
সাবরিনাঃ কার ক্লাস এখন?
মির সামিয়া রহমানঃ আজিজুল স্যার এর ।
সাবরিনাঃ নাহ , এই ক্লাসেও বের হওয়া যাবে না ।
মির সামিয়া জামানঃ হুম ।
এদিকে বুড়ো লাবিব, ইকবাল ও শাহরিয়ার সোহান কথা বলছিল ।
বুড়ো লাবিবঃ ক্লাস শেষ হইসে । চল যাই ।
ইকবালঃ কার ক্লাস রে এখন?
বুড়ো লাবিবঃ আজিজুল স্যার এর ।
ইকবালঃ শিট ! আমি তো আজিজুল স্যার এর HW ও করি নাই ।
বুড়ো লাবিবঃ আমি করসি ।
ঐ সময় রিদু এলো ।
রিদুঃ কইরেও লাভ নাই বুড়ো । সাত্তার স্যার ব্য্যাগ নিয়ে গেসে ।
বুড়ো লাবিবঃ কি ?
রিদুঃ হ । এবার তোরা গেসিস ।
বুড়ো লাবিবঃ তুই ক্যামনে দেখলি ?
রিদুঃ আমি পানি আনতে গেসিলাম তখন দেখি সাত্তার স্যার টিচার্স রুমে যাচ্ছে আর পিছনে রাহাত সবার ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ সবার ব্যাগ ?
রিদুঃ হ্যাঁয় । আমাদেরও ব্যাগ নিয়ে গেসে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ আমরা তো খেলতে আসছি । তাইলে আমাদের ব্যাগ নেয়ার মানে কি ?
রিদুঃ স্যার বলসে যারা ফুটবল খেলতেসে তারা জার্সি পড়েই যেন ব্যাগ আনতে যায় আর যারা ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতার জন্য গেসে তারা যেন লুতফুন্নেসা মেডাম এর কাছ থেকে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে যায় ।
শাহরিয়ার সোহানঃ এই ঘামা শরীর নিয়ে হাফ প্যান্ট পড়া অবস্থায় আবার টিচার্স রুমে যাব ?
রিদুঃ কিছু করারা নাই ।
তখন মারলিন হউজের লিডার ভাই সবাইকে ডাকল ।
রিদুঃ আমি যাই রে । (সিঁড়ি থেকে জিম আর মাসুদকে ডেকে) ঐ জিম-মাসুদ, ভাই ডাকতেসে ।
বুড়ো লাবিবঃ এইবার কি করবো ?
ইকবালঃ আমি কিছু জানি না । তোর ব্যাগের মধ্যে আমার ব্যাগ , তুই ভালোয় ভালোয় আমার ব্যাগ ফেরত দিবি ।
বুড়ো লাবিবঃ তুই রাখসিলি ক্যান আমার ব্যাগে ? আমি কি রাখতে বলসিলাম ?
ইকবালঃ আউ ফাউ কথা না বইলে ভাব ব্যাগ ক্যামনে ফেরত আনবি ।
বুড়ো লাবিবঃ ভাবতে দে । কোন উপায় আসে কি না ।
ইকবালঃ কোন উপায় নাই ভাই । তুই যাইয়ে তোর ব্যাগ নিয়া আসবি, আর আসার পর আমার ব্যাগ ফেরত দিবি ।
বুড়ো লাবিবঃ একটা উপায় আছে ।
এদিকে প্রতীক লাইব্রেরীতে লুতফুন্নেসা মেডামকে সব খুলে বলল ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ সবই বুঝলাম তবে তুমি যদি দৌড়ে না এসে স্যার কে বলতে আমার সাথে কথা বলতে তাহলেও হতো ।
প্রতীকঃ কিন্তু মেডাম স্যার যদি প্রিন্সিপ্যাল স্যার ক্কে ফোন দিত তাহলে তো আরও ঝামেলা হতো ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ ঠিক আছে , আমি স্যার এর সাথে ক্কথা বলবনে । এবার তুমি ক্লাসে যাও । এতো কাহিনী করতে যেয়ে আর আমাকে বলতে যেয়ে পুরো একটা ক্লাস নষ্ট করলে ।
তুষারঃ এখন আজিজুল স্যার এর ক্লাস না ?
প্রতীকঃ হ্যাঁ । কিন্তু মেডাম , আমাকে স্যার ঢুকতে দেবে না । আপনি যদি একটা কাগজে আপনার সই করে দিতেন , তাহলে ভালো হতো ।
লুতফুনেসা মেডামঃ আচ্ছা , দিচ্ছি ।
এরপর লুতফুন্নেসা মেডাম একটা প্যাড থেকে কাগজ ছিঁড়ে তাতে সই করে প্রতীককে দিলেন । প্রতীক সেটা নিয়ে ক্লাসে গেলো ।
পুষ্পঃ আচ্ছা মেডাম , আমি তাহলে কুইজের জন্য যাই ।
লুতফুন্ননেসা মেডামঃ ঠিক আছে , সোনামণি , তুমি যাও ।
পুষ্পও চলে গেলো কুইজের জন্য । প্রতীক ক্লাসে যেয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
প্রতীকঃ স্যার আসবো ?
আজিজুল স্যারঃ এসে এখানে দাঁড়ান ।
প্রতীক ভেতরে যেয়ে দাঁড়ালো ।
প্রতীকঃ লাইব্রেরী গিয়েছিলাম স্যার । এইযে লুতফুন্ননেসা মেডাম এর সই আছে ।
আজিজুল স্যারঃ ঠিক আছে । HW করেছেন ?
প্রতীকঃ জী স্যার । করেছি ।
আজিজুল স্যারঃ খাতাটা এনে আমাকে দেখিয়ে যাও ।
প্রতীক সিটে গেলো । যেয়ে দেখল ওর ব্যাগ নেই । প্রতীকের পাশেই বসেছিল শেখ সোহান ।
প্রতীকঃ কিরে শেকু , আমার ব্যাগ কই রে ?
প্রতীক শেখ সোহান কে শেকু বলে ডাকতো ।
শেখ সোহানঃ সাত্তার স্যার সবার ব্যগ নিয়ে গেসে ।
প্রতীকঃ ইশ ! এখন কি করি?
শেখ সোহানঃ তোর কাছে লুতফুন্ননেসা মেডাম এর সই আসে না ?
প্রতীকঃ হ্যাঁ ।
শেখ সোহানঃ ওটা নিয়ে সাত্তার স্যার এর কাছে যা , ব্য্যাগ ফেরত দেবেনে ।
প্রতীকঃ মানে ?
শেখ সোহান সব প্রতীককে খুলে বলল ।
প্রতীকঃ ও । বলার জন্য থ্যাংকস ।
প্রতীক তখন আজিজুল স্যার এর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে সাত্তার স্যার এর কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে ক্লাসে এলো ।
এদিকে ঐ দিনের মতো ফুটবল খেলা শেষ । সবাই যে যার ক্লাসে ফিরে গেলো । ক্লাস টেনের জিম , রিদু , শাহরিয়ার সোহান, আরেফিন অনিক আর শাওন ওদের ব্যাগ সাত্তার স্যার এর কাছ থেক্কে ফেরত নিয়ে আসলো । এরপর ওরা ওয়াশ রুমে গেলো ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য । স্কুল ড্রেস পড়ে শাহরিয়ার সোহান যখন বেরোল , তখন বুড়ো লাবিব ওয়াশ রুমের দরজা থেকে শাহরিয়ার সোহানের কাছে এলো ।
বুড়ো লাবিবঃ সোহান এক কাজ কর তোর জার্সিটা খুললে আমাকে দে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ হাফ প্যান্ট লাগবে না ?
বুড়োঃ ধুর , এতো ঝামেলা করে কিডা । তুই দে তো ।
বুড়ো লাবিব তখন জার্সিটা পড়লো ।
বুড়ো লাবিবঃ তুই ক্লাসে যা । আমি বিকালে তোকে জার্সিটা ফেরত দেবনে ।
শাহরিয়ার সোহানঃ আচ্ছা ।
এরপর শাহরিয়ার সোহান ক্লাসে চলে গেলো । বুড়ো লাবিবও গেলো সাত্তার স্যার এর কাছে ।
সাত্তার স্যারঃ কি , তুমিও ফুটবল খেলায় আসো নাকি ?
বুড়ো লাবিবঃ জী স্যার ।
সাত্তার স্যারঃ ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা ?
বুড়ো লাবিবঃ স্যার স্পেন পছন্দ ।
সাত্তার স্যারঃ সত্যি তুমি ফুটবল খেলস ?
বুড়ো লাবিবঃ জী স্যার ।
সাত্তার স্যারঃ তাহলে তোমার হাফ প্যান্ট ক্কই ? শুধু জার্সি পরে আছো কেন ?
বুড়ো লাবিবঃ আমি প্রথমে জানতাম না স্যার , পড়ে ড্রেস চেঞ্জ করে শুনলাম এই ঘটনা । পরে শুধু জার্সিটা পড়ে আসছি । আর প্যান্টটা আরেকটা বন্ধুর ব্যাগে রেখে আসছি ।
সাত্তার স্যারঃ সত্যি তো ?
বুড়ো লাবিবঃ জী স্যার ।
সাত্তার স্যারঃ যারা আসছিলো সবাই তো ঘামা ছিল , তুমি ঘাম নি কেন ?
বুড়ো লাবিবঃ ঐ যে স্যার, ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে ঘাম শুকায় গেছে । আর সবাই জানত বলে খেলা শেষ করেই চলে আসছে ।
সাত্তার স্যারঃ আচ্ছা ঠিক আছে । কোনটা তোমার ব্যাগ ?
বুড়ো লাবিবঃ (একটা ব্যাগের দিকে ইশারা করে ) স্যার এই যে এই কালো ব্যাগ টা ।
সাত্তার স্যার ব্যাগটা তুলে হাতে নিতেই অবাক ।
সাত্তার স্যারঃ কি ব্যাপার ? তোমার ব্যাগ এর মোটা আর ভারি কেন ?
বুড়ো লাবিব এবার ঘাবড়ে গেলো । কি বলবে বুঝতে পারল না ।
সাত্তার স্যারঃ এতো ভারি ব্যাগ ক্লাসে নিয়ে আসতে কে বলেছে ?
বুড়ো লাবিবঃ না মানে ............ প্রুতিদিন ৭ টা করে ক্লাস থাকে তো , তাই আরকি এতোগুলো বই আর খাতা আনতে গিয়ে এতো ভারি হয়ে গেসে ।
সাত্তার স্যারঃ ঠিক আছে যাও । এরপর থেকে এতো ভারি ব্যাগ আনার দরকার নেই । যেগুলো দরকার শুধু সেগুলো আনলেই তো হুয় ।
বুড়ো লাবিবঃ (ব্যাগ নিয়ে) ঠিক আছে স্যার । আসসালামু আলাইকুম ।
সাত্তার স্যার ওর সালামের জবাব দিলো । বুড়ো লাবিব বেড়িয়ে দেখল একটু দূরে ইকবাল দাঁড়িয়ে । তারপর ইকবালের কাছে গেলো ।
ইকবালঃ ওহ , বাইচে গেসি ।
বুড়ো লাবিবঃ বাচলি তো আমার জন্যে ।
ইকবালঃ তোর জন্য তো আবার মরতেও নিসিলাম ।
বুড়ো লাবিবঃ তো চল এবার ক্লাসে ।
ইকবালঃ না । ব্যাগ যখন পাইসি তখন চল কোন একটা ফাঁকা ক্লাসে গল্প করি ।
বুড়ো লাবিবঃ আমরা দুইজন কি গল্প করবো ?
ইকবালঃ আমরা দুইজন কই ? সোহান , জিম , রিদু , শাওন , অনিক কেউই ক্লাসে যায় নাই । সাত্তার স্যার এর কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে ৩ নাম্বার রুমে গল্প করতেসে ।
বুড়ো লাবিবঃ চল যাই ।
বুড়ো লাবিবও চলে গেলো । এদিকে অপু স্যার ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন পুষ্পকে খুঁজতে । হাটতে হাটতে চলে এলেন ২৬ নাম্বার রুমে যেখানে পুষ্প ছিল আর কুইজের সিলেকশন হচ্ছিলো ।
অপু স্যারঃ তাপস স্যার , আমি কুইজ প্রতিযোগিতার এখানে একটা ছেলেকে খুজতে এসেছি ।
তাপস স্যারঃ জী স্যার , কাকে খুজছেন ?
অপু স্যারঃ নাম জানি না , তবে চেহারা দেখলে চিনতে পারি ।
অপু স্যার আশে পাশে তাকিয়ে দেখল কিন্তু পুষ্পকে পেলেন না ।
অপু স্যারঃ ঠিক আছে স্যার , আসি ।
তাপস স্যারঃ লাইব্রেবিতে যান । ওখানে থাকতে পারে ।
অপু স্যারঃ ঠিক আছে ।
বলেই অপু স্যার চলে গেলেন । অপু স্যার লাইব্রেরীর দিকে গেলেন । তাপস স্যার তখন টেবিলের নিচ থেকে পুষ্পকে ডাকল । পুষ্প তখন টেবিলের নিচ থেকে বেড়িয়ে এলো ।
পুষ্পঃ থ্যাঙ্ক ইউ স্যার ।
তাপস স্যারঃ ঠিক আছে । আমাকে লুতফুন্নেসা মেডাম সব বলেছেন । আর তাই তো আমি অপু স্যার কে লাইব্রেরীতে পাঠিয়ে দিলাম ।
এদিকে অপু স্যার লাইব্রেরীতে গেলেন ।
অপু স্যারঃ মেডাম , আমি একটা ছেলেকে খুজতে এসেছি ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ পুষ্পকে?
অপু স্যারঃ নাম জানিনা মেডাম ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ যে ছেলেটা আপনার কথা না শুনে বন্ধুর সাথে দৌড়ে পালিয়ে এসেছে ওকে ?
অপু স্যারঃ হ্যাঁ মেডাম কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ জী স্যার । আপনি একটু আমার সাম্ননে বসেন ।
অপু স্যার মেডাম এর সামনে চেয়ার নিয়ে বসলেন ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ শোনেন স্যার । একটা ছেলের আন্ত হাউজ ফুটবল খেলার অনেক ইচ্ছা ছিল । কিন্তু ওর অনেক পায়ে ব্যাথা ছিল । যার জন্য ওকে টিম থেকে বাদ দেয়া হয় । ফলে ও মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ে । এরপর সে আসে ডিবেট করতে । কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় ওকে এখান থেকেও বাদ দেয়া হয় । এবারও ওর মন অনেক ভেঙে পড়ে । এরপর আরেকটা ছেলে খবর নিয়ে আসে যে কুইজে ওকে নেয়ার জন্য । অন্তত এদের সাথে ঢাকা যেয়ে একটু মজা করতে পারে সে জন্য । খুজতে খুজতে ছেলেটাকে কলেজ বিল্ডিং এর তিন তলায় পায় আর ভাবে হয়তো মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ছেলেটা সুইসাইড করার চেষ্টা করছে । তাই এক দৌড় দিয়ে ওকে বাঁচানোর জন্য যায় । ওকে থামানোর জন্য ওর নাম ধরে জোরে চিৎকার দেয় ।
অপু স্যারঃ কিন্তু আমাকে এসব শোনাচ্ছেন কেন ?
লুতফুন্নেসা মেদামঃ কারণ ওর চিৎকার শুনে আপনিই বেড়িয়ে এসে ওকে ধমক দিয়েছিলেন ।
অপু স্যারঃ ও আচ্ছা । আচ্ছা, মানলাম এটাই কারণ । ও তো আমাকে বলতেও পারতো । অভদ্রের মতো চলে এলো কেন ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ আপনি ওদের কিছু বলার সুযোগই দেন নি । ওরা বলবে কিভাবে ।
অপু স্যারঃ হুম । বুঝেছি । কিন্তু ছেলে দুটো কোথায় ?
লুতফুন্নেসা মেডামঃ একজন ক্লাসে , আরেকজন কুইজ কম্পিটিশনে ।
অপু স্যারঃ কুইজ কম্পিটিশনে ? কই আমি তো গিয়েছিলাম । কাউকে পাই নি ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ (হেসে) আপনাকে আসতে দেখে তাপস স্যার ওকে টেবিলের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলো । আমি অনেক আগেই তাপস স্যার কে সব বলে রেখেছিলাম কিন্তু আপনি আসতে অনেক দেরি করেছেন ।
অপু স্যারঃ কি বলব মেডাম , ক্লাস ছিল তো , তাই আসতে দেরি হল । ঠিক আছে মেডাম , আমি তাহলে টিচার্স রুমে যাই । আপনাকে একটু ডিস্টার্ব করলাম ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ না না স্যার , ঠিক আছে ।
অপু স্যারঃ আর আমার পক্ষ থেকে ওদের সরি বলে দিয়েন ।
লুতফুন্নেসা মেডামঃ ঠিক আছে স্যার ।
আজিজুল স্যার এর ক্লাস শেষ । অর্থাৎ চতুর্থ পিরিয়ড শেষ । সেদিন তৃণ প্রথম বেঞ্চে বলে ছিল । আর সাবিত ছিল লাস্ট বেঞ্চে । তৃণর প্রাইভেটের ফিসিক্স পড়া ছিল । কিন্তু ওইদিন ফিসিক্স ক্লাস না থাকায় বই আনে নি । এদিকে সবার কাছে খুজে বেরাচ্ছে ফিসিক্সন বই আছে কি না । খুজতে খুজতে চলে গেলো শেষ বেঞ্চে বসে থাকা সাবিতের কাছে । সাবিত তখন রাফির সাথে কথা বলছিল ।
তৃণঃ সাবিত , তোর কাছে ফিসিক্স বই আছে?
সাবিতঃ হ্যাঁ দোস্ত ।
তৃণঃ একটু দে তো । আমার একটু লাগবে ।
সাবিত ব্যাগ থেকে বই বের করে তৃণর হাতে দিলো । তৃণ বইটা নিয়ে চলে গেলো ।
রাফিঃ কিরে ? আজকে ফিসিক্স ক্লাস নাই তাও তুই বই নিয়া আসছিস ?
সাবিতঃ আর বলিস না । এখন জসিম স্যার এর ক্লাস না ?
রাফিঃ হ ।
সাবিতঃ এই জসিম স্যার এর কেমিস্ট্রি বই আনতে গিয়ে ভুল করে ফিসিক্স বই আইনা ফেলসি ।
রাফিঃ ও আচ্ছা ।
এদিকে তৃণ যখন ফিসিক্স বই পড়ছে তখন ওকে আশিশ স্যার ডাকলেন । তৃণ স্যার এর ক্লাসে গেলো ।
তৃণঃ জী স্যার বলেন ।
আশিশ স্যারঃ তামজিদ তো নাই না ?
তৃণঃ জী স্যার , ও ডিবেট করতে গেছে ।
আশিশ স্যারঃ আচ্ছা তোমাদের আজকে শেষ ক্লাস শারীরিক শিক্ষা না ?
তৃণঃ জী স্যার ।
আশিশ স্যারঃ আচ্ছা । আমি তো একটা কাজে যাচ্ছি , তোমরা সবাই মাঠে যেয়ে ফুটবল খেলো, নুরুল ইসলাম স্যার এর রুমে যেয়ে আমার কথা বলে ফুটবল এনে খেলতে যেও । আর সবাইকে বোলো যেন শৃঙ্খলা নষ্ট না করে ।
তৃণঃ ঠিক আছে স্যার ।
এপাশে কলেজের একটা ভাইয়া ভেতরে ঢুকল । খুব ঘেমে ছিল । যেন খুব ভয়ে আছে । হঠাৎ তৃণ যেখানে বসেছিল , সেখানে গেলো । তারপর পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সাবিতের সেই ফিসিক্সের বইয়ের ভেতর ঢোকাল । উনি যে বইয়ের মধ্যে কাগজ ঢুকিয়েছেন তা কেউ টের পায় নি । তারপর ক্লাস থেকে চলে গেলন । এদিকে তৃণ স্যার এর সাথে কথা বলতে বলতে উজ্জ্বল স্যার এলেন ক্লাসে ।
আশিশ স্যারঃ স্যার এখন আপনার ক্লাস ?
উজ্জ্বল স্যারঃ না আমি গ্যাপ এ আয়িসি ।
আশিশ স্যারঃ আচ্ছা স্যার । (তৃণকে) ঠিক আছে , তুমি তাহলে ক্লাসে যাও ।
তৃণঃ আচ্ছা স্যার ।
এরপর তৃণ ক্লাসে এসে সিটে বসলো । স্যার এসেছে বলে আর বইটা খুলল না ।
উজ্জ্বল স্যারঃ কি ব্যাপার সবাই কেমন আসেন ?
সবাইঃ জী স্যার , ভালো ।
উজ্জ্বল স্যারঃ এখন মনে হয় তোমাদের কেমিস্ট্রি ক্লাস ছিল । তা জসিম স্যার কি একটা কাজে গেসে , এইজন্যি আমারে গ্যাপ এ দিসে । তো তোমাদের একটু ফিসিক্স এর কয়েকটা Important প্রশ্ন শিখাই ।
ঠিক তখন দরজার কাছে এসে শাহরিয়ার সোহান, ইকবাল , বুড়ো লাবিব , শাওন , জিম , রিদু আর মাসুদ “স্যার আসবো” বলল ।
উজ্জ্বল স্যারঃ কি ব্যাপার বাপ ? তোরা কই ছিলি ?
মাসুদঃ স্যার আমরা ফুটবল খেলায় ছিলাম ।
উজ্জ্বল স্যারঃ ফুটবল খেলা তো সেই কখন শেষ হইসে । তোরা সাত্তার স্যার এর কাছ থেকে যাইয়ে ব্যাগ আনলি ।
মাসুদঃ মানে আরকি আমরা ওয়াশরুমে ড্রেস চেঞ্জ করতেসিলাম স্যার ।
উজ্জ্বল স্যারঃ তে ওয়াশ রুমিতিই থাকতি । ও তো ম্যালা শান্তির জায়গা। ঝারু পানি সব আসে একটু ধুইয়ে থুয়ে আসতি । তাও তো একটু কাজ শেখা হইত । সবাই তো ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার হইলে চলে না । কাউকে তো এইসব কাজও শিখতে হবে । যাও সিটে যাইয়ে বোসো ।
ওরা সিটে গেলো ।
উজ্জ্বল স্যারঃ কারো কাছে ফিসিক্স বই টা কি আছে ?
তৃণ তখন সাবিতের বইটা স্যার কে দিলো । স্যার বইটা হাতে নিতেই কাগজটা পড়ে গেলো । স্যার কাগজটা তুললেন । এরপর সেটা খুলে পড়তে লাগলেন । পুরোটা পড়লেন । এতো মনোযোগ দিয়ে পড়লেন যে স্যার ভুলেই গেছেন স্যার কার কাছ থেকে বই নিয়েছেন ।
উজ্জ্বল স্যারঃ বইটা কার ?
তৃণ সাবিতকে দাঁড়াতে বলল । সাবিত দাঁড়ালো ।
উজ্জ্বল স্যারঃ তুমি যাওয়ার সময় আমার সাথে একটু কথা বলে যেও ।
সাবিতঃ আচ্ছা স্যার ।
রাফিঃ কিরে ?
সাবিতঃ আমিও তো কিছু বুঝলাম না কি হইল ।
রাফিঃ তোর বইয়ে কিসের কাগজ ছিল ?
সাবিতঃ আমি নিজেও তো জানি না । আর ফিসিক্স বইতে আমি কোন কাগজ রাখসি বলে মনেও তো পড়ছে না ।