0 %

Thanks a lot for being with us!
We are re-constructing our website!
Sorry for this temporary inconvenience
We are coming to you with a fresh look and design from 1 January 2022!
Till then! Stay connected!

আমরা শাহীনে ছিলাম-৪





আমরা শাহীনে ছিলাম (৪র্থ অংশ)

টিচার্স রুমে বসে থাকা ৪-৫ জন টিচার নিজেদের কাজ করতে করতে হাসান স্যার এর কথা  শুনছিলেন । 
আজিজুল স্যারঃ আমি ভালো করেই দেখেছি স্যার, ওটা সিগারেটেরই প্যাকেট । 
হাসান স্যার আর কিছু বলতে পারলেন না । উনি রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেন । একটা ছেলের ব্যাগে পাওয়া গেলে তা-ও একটা কথা ছিল । কিন্তু একটা মেয়ের ব্যাগে! কি করে হয়ে পারে এটা? অনেকক্ষণ ধরে হাসান স্যার কোন জবাব না দেয়ায় আজিজুল স্যার বললেন,
আজিজুল স্যারঃ হ্যালো স্যার, লাইনে আছেন?
হাসান স্যারঃ জী স্যার আমি আসছি । 
বলেই হাসান স্যার চলে গেলেন । টিচার্স রুমে বসে থাকা উজ্জ্বল স্যার আর নিমাই স্যার কথা বলতে লাগলেন ।
নিমাই স্যারঃ হঠাৎ কি এমন হল, হাসান স্যার এমন তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো?
উজ্জ্বল স্যারঃ মনে তো হল উনার ক্লাসে কিছু হইসে । ইবারের কিলাস টেনের ব্যাচটা খুব বাজে একখান ব্যাচ । খালি লাথি মারে, লাভ লেটার দিয়া ইয়ার্কি করে,  আবার কি হইলো কিডা জানে  । 
নিমাই স্যার কিছু বললেন না । যতদূর পর্যন্ত দরজা দিয়ে হাসান স্যার এর যাওয়া দেখা যায়, ততক্ষন হাসান স্যার এর যাওয়া দেখতে লাগলেন । তারপর আবার নিজের কাজে লেগে পড়লেন । 
এদিকে টিচার্স রুম থেকে ক্লাসরুমের দিকে যেতে হলে পার হতে হয় হলরুম, তারপরে একটা ক্লাসরুম, তারপরে একটা সিঁড়ি যার দুপাশে টয়লেটে যাবার দরজা এবং ঐ সিঁড়ি দিয়ে নিচতলায় ও তিনতলায় যাওয়া যায়, এরপর আর দুটো ক্লাসরুম পার হবার পড়েই টেনের ক্লাস । হাসান স্যার সিঁড়ির কাছে আসতেই নিচতলা থেকে উঠে এলেন সুজিত স্যার । মুখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে হাসান স্যার এর কাছে এগিয়ে এলেন । 
সুজিত স্যারঃ কি ব্যাপার হাসান ভাই, কোথায় যাচ্ছেন?
হাসান স্যার ভাবলেন বেশি কাউকে কথাটা জানান উচিত হবে না । 
হাসান স্যারঃ এইতো । ক্লাস করাতে যাচ্ছি । 
সুজিত স্যারঃ কোন ক্লাসে? 
হাসান স্যারঃ ক্লাস টেন ।
সুজিত স্যারঃ চলুন, আমিও যাই । একটু দেখে আসি ক্লাসরুমের কি অবস্থা । ছেলেপেলে এতো বেয়াদব হয়েছে না, ক্লাসরুম পরিষ্কারই করে না । যেন ক্লাসরুমকে ওরা ডাস্টবিন মনে করে । 
হাসান স্যার কি বলবেন বুঝে পেলেন না । হাসান স্যার ক্লাসরুমের দিকে এগোতে লাগলেন, সুজিত স্যারও সাথে সাথে যেতে লাগলেন । এরপর ক্লাসরুমের কাছাকাছি আসতেই হাসান স্যার আজিজুল স্যারকে ইশারা করে বুঝালেন সুজিত স্যারকে কিছু না বলার জন্য । আজিজুল স্যারও সে কথা বুঝে হাতে থাকা সিগারেটের প্যাকেট আর গ্যাসলাইট ডেস্কের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখে পড়ানোর  ভান করতে লাগলেন । হাসান স্যার আর সুজিত স্যার আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে স্যারদের সম্মান করলো । সুজিত স্যার সবাইকে বসতে বললেন । 
সুজিত স্যারঃ তোমাদের বলেছিনা? আমি আসলে না দাঁড়াতে? এরপর থেকে আমি আসলে দাঁড়ানোর দরকার নেই । 
এরপর সুজিত স্যার ক্লাসরুম ভালো করে দেখতে লাগলেন । মির সামিয়া রহমানের চোখে তখনও পানি ছিল । আজিজুল স্যার ইশারা করে ওর চোখের পানি মুছতে বললেন । পুরো ক্লাস দেখতে দেখতে সুজিত স্যার বললেন,
সুজিত স্যারঃ বাহ! এইতো তোমরা লক্ষি ছেলেমেয়ে হয়ে গেছ । তোমরা কিন্তু খবরদার খবরদার ক্লাসরুম নোংরা করবে না । 
ধীরে ধীরে হাসান স্যার আজিজুল স্যার এর কাছে এলেন । 
সুজিত স্যারঃ কি পড়াচ্ছেন স্যার?
আজিজুল স্যারঃ এই  Changing sentences পড়াচ্ছি । 
সুজিত স্যারঃ বাহ ভালো । আপনি মাঝে মাঝে ওদের Sudden test নিয়েন । এতে ওরা বাসায় কি করে, তা বোঝা যাবে । 
আজিজুল স্যার মাথা নাড়লেন । সুজিত স্যার এর চোখ পড়লো ডেস্কের ড্রয়ারের দিকে । 
সুজিত স্যারঃ আজিজুল স্যার, একটু সরেন তো । ডেস্কের ড্রয়ারটা একটু দেখি । এরা আবার ডেস্কের ড্রয়ার খুব নোংরা করে থাকে ।
আজিজুল স্যার কি করবেন বুঝতে পারলেন না । কিছুক্ষণ হাসান স্যার এর দিকে তাকিয়ে তারপর সরে দাঁড়ালেন । সুজিত স্যার ড্রয়ার খোলার জন্য হাত বাড়ালেন  । ক্লাসের সবাই বুঝেছিল আজিজুল স্যার কেন ড্রয়ারের ভেতর প্যাকেট আর গ্যাস লাইট রেখেছিলো । সবার মনে ভয়ের সঞ্চার হল । হয়তো এখনই একটা লঙ্কা কাণ্ড ঘটে যাবে ।
সুজিত স্যার ড্রয়ারটা খুলে দেখতে পেলেন  সিগারেটের প্যাকেট আর গ্যাস লাইটটা । ভ্রু কুঁচকে উনি প্যাকেটটা হাতে নিলেন  । এরপর প্যাকেটটা খুলে দেখলেন ৬টা সিগারেট এখনও ওর মধ্যে আছে । প্যাকেটটা উচু করে তুলে ধরে রাগান্বিত গলায় বললেন,
সুজিত স্যারঃ কার এটা! কে ধূমপান করো!
কেউ কিছুই বলে না । 
সুজিত স্যারঃ তোমরা খুব বেয়াদব! আমি তো প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বলবই । 
কেউ কিছু না বললে হাসান স্যার বলেন, 
হাসান স্যারঃ স্যার ওরা কেউ এগুলো আনেনি । 
সুজিত স্যারঃ (হাসান স্যার এর দিকে তাকিয়ে) আপনি কিভাবে বুঝলেন?
হাসান স্যারঃ স্যার এটা তো কম দামি সিগারেট, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা এরা খায় । কিন্তু আপনার কি মনে হয়, এইযুগে এসে এই ছেলেমেয়েরা এতো কমদামি সিগারেট খাবে?
সুজিত স্যার এর রাগটা একটু কমে গেলো । সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বললেন, 
সুজিত স্যারঃ সেটাও ঠিক । কিন্তু (একটু থেমে) এটা এখানে এলো কিভাবে?
হাসান স্যারঃ গতকাল বিকেলে এই ক্লাসরুমে মিস্ত্রীরা এই ক্লাসরুমে এসেছিলো ভাঙ্গা বেঞ্চগুলো দেখার জন্য । ওরাই মনে হয় এসব সিগারেট খেয়ে এখানে রেখে গিয়েছে । পড়ে হয়তো ওদের খেয়াল ছিল না । 
সুজিত স্যারঃ ঠিক বলেছেন । এইসব মিস্ত্রিদের একটু ভালো করে বলা লাগবে । 
ছাত্রছাত্রীরা হাসান স্যার এর উপস্থিত বুদ্ধি দেখে একই সাথে অবাক ও খুশি ।
সুজিত স্যারঃ আচ্ছা আজিজুল স্যার, আমি এই প্যাকেট আর গ্যাস লাইট নিয়ে যাচ্ছি, আপনি ক্লাস নেন, আমি দেখি কোন মিস্ত্রী এই কাজ করসে । আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম । 
আজিজুল স্যারঃ না স্যার । সমস্যা নেই । 
সুজিত স্যার চলে গেলো । সুজিত স্যার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার পড়েই হাসান স্যার আর আজিজুল স্যার কথা বলা শুরু করলেন । 
আজিজুল স্যারঃ (মির সামিয়া রহমানের দিকে ইশারা করে) ঐ স্যার ওই মেয়েটার ব্যাগে পেয়েছি । 
হাসান স্যার মির সামিয়া রহমানের দিকে তাকালেন । তারপর মাথা নাড়িয়ে বললেন, 
হাসান স্যারঃ না না । ও এই কাজ করসে আমি বিশ্বাস করি না । ও তো ভদ্র একটা মেয়ে, সবসময় চুপচাপ থাকে । 
আজিজুল স্যারঃ জী স্যার ও নিজেও বলছিল ও এই কাজ করে নি । ওকে নাকি কেউ ফাঁসিয়েছে এই বলছে । 
হাসান স্যারঃ আর যেই ফাঁসাক, এই ক্লাসের কেউ ফাঁসায় নি এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস । 
আজিজুল স্যারঃ কিন্তু আর কে এই কাজ করবে?
হাসান স্যারঃ সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমি । (ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে) আচ্ছা তোমাদের কি কাউকে সন্দেহ হয়? আরিক ওদিকে ওর পাশে বসে থাকা প্রতীককে সেই দিন শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে একটা ছেলে আসা এবং সবার ব্যাগ চেক করার কথাটা বলছিল ।
আরিকঃ স্যারকে বল ।
প্রতীকঃ তুই বল না । 
আরিকঃ প্লিজ ভাই প্লিজ তুই বল । 
প্রতীকঃ (চিৎকার করে হাসান স্যারকে) স্যার ইশতিয়াক কিছু বলবে আপনাকে । 
আরিক বিরক্ত হয়ে প্রতীককে একটা গালি দিলো । 
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ বলো ইশতিয়াক, কি বলবে ।
আরিক বাধ্য হয়ে দাঁড়ালো । 
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ বলো কি বলবা । 
আরিকঃ ইয়ে, মানে, স্যার, যেদিন সাবিতের ব্যাগে একটা লাভলেটার পাওয়া যায়, ওইদিন আমি একটা ভাইয়াকে দেখসিলাম । সবাই শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে খেলার জন্য গেসিল, আর আমি টিফিন খাচ্ছিলাম । তখন ঐ ভাইয়াটা এসে পুরো ক্লাসে সবার ব্যাগে কি একটা খুজছিল । আমি উনাকে বাধা দিতে গেলে উলটে উনি আমাকে মারার হুমকি দেয় ।
তৃণ আর সাবিত কান খাড়া করে আরিকের কথাটা শুনছিল ।  
হাসান স্যারঃ কোন ক্লাসে পড়ে খেয়াল করেছো কি?
আরিকঃ স্যার কাধের ওপর ব্যাচ দেখলাম মনে হল সাইন্সে ফাস্ট ইয়ারে পড়ে । 
হাসান স্যারঃ ওর নাম জানো কি?
আরিকঃ না স্যার । নামটা খেয়াল করিনি । 
হাসান স্যারঃ ঠিক আছে বস ।
আরিক প্রতীক দিকে বিরক্তিভাবে তাকিয়ে বসে পড়লো । প্রতীক আরিকের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল । 
আরিকঃ হাসতেসিস ক্যান?
প্রতীকঃ তোর অবস্থা দেইখে । 
আরিকঃ মানে? 
প্রতীকঃ তোর যা অবস্থা, ফিউচারে দেখা যাবে আমাদের ফোন দিয়ে বলবি, “হ্যালো প্রতীক, আমার বউকে বলনা একটু রান্না করতে ।”
বলেই প্রতীক হালকা হাসল । প্রতীকের অন্য পাশে বসে থাকা সাকিবও কথাটা শুনেছিল । সেও হাসি ঠেকাতে পারলো না । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা ঠিক আছে । তুমি চিন্তা করো না । আমি দেখছি কি করা যায় । আর তোমরা সবাই, এই ক্লাসের বাইরে যাবার সময় এই কথাটা ক্লাসের ভেতরেই রেখে যাবে । বাইরে কারো কানে যেন কথাটা না যায় । বলেই হাসান স্যার চলে গেলেন । আজিজুল স্যার উনার ক্লাস নিতে লাগলেন । সাবিত আরিকের কথাটা শুনে খুব একটা মাথা ঘামাল না । কিন্তু তৃণ মাথা ঘামাল । ঐ ভাইয়াটাই ঋজু ভাইয়া না তো? 
আজিজুল স্যার এর ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ক্লাসে এলেন এলাহি স্যার ।  এলাহি স্যার ক্লাসে এলেন । সবাই চুপচাপ, সবার মন খারাপ  । এপর্যন্ত কখনো ওদের চুপচাপ থাকতে দেখেননি এলাহি স্যার। 
এলাহি স্যারঃ কি ব্যাপার? সবাই চুপচাপ কেন??
কেউই কিছু বলল না ।
এলাহি স্যারঃ আচ্ছা, তোমরা মনে হয় টায়ার্ড । আচ্ছা, যাও । আজকে তোমাদের কিছু পড়াবো না । একটা গল্প বলব । 
সবাই কিছু না বললেও গল্প শোনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলো । 
তৃণ সেই ফাঁকে বেঞ্চ থেকে উঠে সাকিবকে অনুরোধ করে সাকিবকে ওর সিটে বসিয়ে ও সাকিবের সিটে বসলো । এরপর ধীরে ধীরে প্রতীককে বলল, 
তৃণঃ প্রতীক, তোমার একটা খুব জরুরী সাহায্য লাগবে । 
প্রতীকঃ হুম বলো কি সাহায্য । 
তৃণঃ তোমার মনে আছে, ক্লাস সেভেনে থাকতে তুমি আমার একটা ছবি একেছিলে?
প্রতীকঃ হুম তো?
তৃণঃ এখন পারবা, ওরকম একটা চেহারা আকাতে?
প্রতীকঃ হুবহু হবে কিনা আমি বলতে পারি না, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি । 
তৃণঃ আচ্ছা চেষ্টা করে দেখ কি হয় । 
এদিকে এলাহি স্যার উনার গল্প বলা শুরু করলেন  ।
এলাহি স্যারঃ একটা ছেলে ছিল । ও কর্ণফ্লেক্স খেতে খুব পছন্দ করত । কর্ণফ্লেক্সের প্যাকেটের সাথে একটা স্টিকার পাওয়া যেত । কিন্তু স্টিকারটা প্যাকেটের একদম নিচে থাকতো । যার ফলে  স্টিকারটা পাওয়ার জন্য ওকে পুরো প্যাকেটটা শেষ করা লাগত । এখন একদিনে তো আর পুরো প্যাকেট শেষ করা যায় না । সপ্তাহখানেক লাগতো প্যাকেটটা শেষ করতে । 
তৃণ কিছু বলার আগেই প্রতীক ছবি আকা শুরু করে দিলো । 
তৃণঃ কিরে, আমি তো এখনও কিছু বলিই নি, কি আকিস তুই?
প্রতীকঃ ক্যান? তুইই তো বললি তোর ছবি আঁকতে । 
তৃণঃ আচ্ছা, আমি মনে হয় একটু ভুল বলসি । আমি তোকে বর্ণনা করবো একটা চেহারার, তুই ঐ চেহারাটা আমাকে একে দিবি । পারবি?
এলাহি স্যার প্রতীক আর তৃণকে গল্প করতে দেখে একটু রেগে গেলেন । তবে সেই রাগটা প্রকাশ না করলেন না  ।
এলাহি স্যারঃ আমার মনে হয় তোমাদের গল্প শুনতে ভালো লাগছে না । তার চেয়ে থাক তোমরা যা খুশি তাইই করো । 
তৃণ বুঝে গেলো স্যার ওদের কথা বলার কারণে এই কথাগুলো বলছেন । অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা স্যারকে গল্প চালিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করলে স্যার সবাইকে চুপ করে থাকার শর্ত দিয়ে গল্প বলা শুরু করলেন । এদিকে তৃণ আর কথা বলতে চায় না । তাই প্রতীকের খাতা আর কলম নিয়ে ওতে সব লিখতে শুরু করলো । স্যার গল্প বলা শুরু করলেন । 
এলাহি স্যারঃ ছেলেটা এই কথাটা তার বাবাকে বলল । ছেলেটার বাবা বলল, “যখন স্টিকারটা নিচেই থাকে, তাহলে প্যাকেটটা উলটো করে খুললেই স্টিকার সাথে সাথেই তুমি পেয়ে যাবে । ছেলেটার বাবা তখন প্যাকেটটা উলটো করে খুলে দিলেন, আর ছেলেটাও শুরুতেই স্টিকারটা পেয়ে গেলো । এবার তোমরা বলো তো? এই গল্পটা থেকে তোমরা কি শিক্ষা পেলে । 
স্যার কিছুক্ষণ সবার উত্তর শোনার অপেক্ষা করলেও কেউই কিছু বলতে পারলো । তবে সবাই চেষ্টা করেছিলো বলার । 
এলাহি স্যারঃ আচ্ছা, আমিই বলছি । কোন কিছু যখন সোজাভাবে সমাধান করা যায় না, তখন সেটা উলটো করে চেষ্টা করতে হয় সমাধান করার । তৃণর কানে কথাটা পৌঁছল । কিন্তু এই ক্ষেত্রে কি উলটো করে টা ও নিজেই বুঝতে পারলো না । যা হোক, স্যার এর গল্প বলা শেষ হতেই তৃণর লেখা শেষ হয়ে যায় । এরপর তৃণ খাতাটা প্রতীককে দিলো । প্রতীক সেটা পড়তে লাগলো । তাতে লেখা, “এই বর্ণনা অনুযায়ী একটা ছবি আকা । চুলগুলো ডানে খাড়া করা, চোখদুটো হালকা ছোট । ভ্রুদুটো মিলে ভি আকারের, তবে একটা ভ্রু আরেকটার সাথে লাগানো না । মুখের আকৃতি অনেকটা আরেফিন অনিকের মতো, হালকা দাড়ি মোচ । নাক চোখা  কপাল বেশ প্রশস্থ।” প্রতীক সেই বর্ণনা অনুযায়ী আকা শুরু করলো । 
এলাহি স্যারঃ তাহলে আজ আর কিছু করালাম না । একটা গল্প বললাম । ক্লাস শেষ হতে ২০ মিনিট বাকি । তোমরা আর যা খুশি করো, কিন্তু কথা বোলো না । 
বলেই এলাহি স্যার বাইরে যেয়ে দাঁড়ালেন । কেউ কোন কথা বলল না । প্রতীক নিজের কাজ করতে লাগলো । ক্লাস শেষ হবার যখন ৫ মিনিট বাকি, তখন প্রতীক ছবিটা তৃণকে দেখাল । তৃণ ছবিটা দেখল আর বুঝল ওর হতাশ হওয়া ছাড়া আর উপায় নেই । কারণ ছবিটা একটুও ঐ ঋজু ভাইয়ার মতো হয় নি । 
তৃণঃ (একটা শ্বাস ফেলে) না রে । হয় নি । তোরে শুধু সুধু কষ্ট দিলাম । 
প্রতীক আর কিছু বলল না । ওর নিজেরও খারাপ লাগলো কাজটা সঠিকভাবে না করে দিতে পারায় । হঠাৎ তৃণর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো । ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে নিয়ে আরিককে জোর করে নিয়ে বেড়িয়ে এলো এলাহি স্যার এর কাছে । আরিক আসবেই না । কিন্তু তৃণ জোর করে আনলই । আরিকও ব্যাগ নিয়ে এলো । 
এলাহি স্যারঃ কি ব্যাপার? সময় হয়েছে?
তৃণঃ না স্যার । আসলে আমাদের মাসুদ ভাই বলেছিলেন ছুটির একটু আগে উনার সাথে একটু দেখা করতে । 
এলাহি স্যারঃ ঠিক আছে যাও । ভালো থেকো ।
তৃণ আর আরিক স্যারকে সালাম দিয়ে চলে গেলো মাসুদ ভাইয়ের কাছে । 
এদিকে ক্লাসে মির সামিয়া রহমান হঠাৎ তাসনিম সুমাইয়াকে বলল,
মির সামিয়া রহমানঃ এই এই! শোন । ঐ সিগারেটটা না উলটো করে দেখা উচিত ছিল ।
তাসনিম সুমাইয়াঃ ক্যান?
মির সামিয়া রহমানঃ এইযে, এলাহি স্যার গল্প বললেন না, কোন কিছু যখন সোজভাবে সমাধান করা যায় না, তখন সেটা উলটো করে সমাধান করার চেষ্টা করতে হয়?
তাসনিম সুমাইয়াঃ আরে বোকা, ওটা আলাদা ব্যাপার । 
মির সামিয়া রহমান আর কিছু বলল না ।
ওদিকে তৃণ আরিককে নিয়ে গেলো । মাসুদ ভাইয়ের কাছে । 
তৃণঃ (একটা মিষ্টি হাসি হেসে) ও মাসুদ ভাই । 
মাসুদ ভাইঃ (হালকা বিরক্তি নিয়ে) আবার কি চাই?
তৃণঃ মাসুদ ভাই, আপনার ঘড়িটা খুবই সুন্দর । 
মাসুদ ভাইঃ দ্যাখো ছেলে, আমি বডি স্প্রেও দেই নি, শার্টও পড়িনি............মানে......সুন্দর শার্ট পড়িনি । আর ঘড়িটা মোটেও সুন্দর নয় । 
তৃণঃ জানেন মাসুদ ভাই, আমার মাসুদ নামে একটা বন্ধু আছে ।
আরিক তৃণর বলার ভঙ্গি দেখে অবাক হয়ে  তৃণর দিকে তাকিয়ে থাকল । 
তৃণঃ আমার ঐ বন্ধু এততো ভালো । কি যে বলব । শুনেছি মাসুদ নামের ছেলেরা নাকি খুব ভালো হয় । এক্কেবারে সোনায় সোহাগা । 
আরিকঃ ভাই, তোর বাগধারার প্রয়োগটা মনে হয় একটু ভুল হইসে । 
তৃণঃ আরে বাদ দে তো । আর হ্যাঁ! মাসুদ নামের ছেলেরা তো...............
মাসুদ ভাইঃ (তৃণকে থামিয়ে দিয়ে) হইসে । আর পাম না দিয়ে এবার যাও তো । 
তৃণঃ প্লিজ মাসুদ ভাই! একটা সাহায্য করেন না । 
এতক্ষণে তৃণ আসল রুপে ফিরে এলো । 
মাসুদ ভাইঃ কি সাহায্য?
তৃণঃ ঐ ঋজু ভাইয়ের ছবিটা একবার দেখান না । 
মাসুদ ভাই এবার খুব রেগে গেলেন । 
মাসুদ ভাইঃ (রেগে দাঁড়িয়ে গিয়ে) এই তোমার সমস্যা কি? বাড়ে বাড়ে আমাকে ডিস্টার্ব করো কেন? (চেয়ারে বসতে বসতে) এবার আমি তোমাকে আর কারো ছবিই দেখাব না । 
তৃণঃ (হালকা রেগে) দেখাবেন না?
মাসুদ ভাইঃ না দেখাব না ।
তৃণঃ (আরেকটু বেশি রেগে) সত্যি দেখাবেন না?
মাসুদ ভাইঃ না না না ।
তৃণঃ (কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর প্রচণ্ড রেগে) আপনার শার্টটা দেখে মনে হয় আপনি একটা মিসকিন । আপনার শরীর দিয়ে গরুর গায়ের পচা গন্ধ । আপনার ঘড়ি এ যুগের ফকিররা পড়ে ভিক্ষা করে । 
মাসুদ ভাই কিছু না বলে নিজের কাজে মন দিলেন । এমন ভান করলেন যেন উনি কিছুই শোনেন নি । 
তৃণ আর কিছু না বলে আরিককে নিয়ে বাইরে চলে এলো । ঘণ্টা পড়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই  । বাইরে এসে আরিক বলল,
আরিকঃ ভাই তুই আমারে কেন আনলি, কি করলি কিছুই বুঝলাম না ।
তৃণঃ (রেগে রেগে) এই জা তো তুই । 
আরিকঃ অমা! আমারে নিয়া আইলি, আবার আমারেই রাগ দেখাচ্ছিস? 
তৃণঃ (রাগ দমন করে) আচ্ছা, তুই যা, কাল সব বলব । 
আরিক চলে গেলো । তৃণও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলো । 
সেইদিনটাও কেটে গেলো । 
৬ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার । সকালে রাখিব স্যার এর কোচিং । ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে স্যার এর কোচিং এ আসছে শিক্ষার্থীরা । অন্যান্য দিনের মতো আজও অনেক লেট করে এসেছে মাসুম সিয়াম । দরজার কাছে এসে বলল,
মাসুম সিয়ামঃ আসবো স্যার?
রাখিব স্যারঃ আসেন আসেন । এনেছিস?
মাসুম সিয়ামঃ কি স্যার?
রাখিব স্যারঃ বিড়ি বিড়ি । রাস্তায় খেতে গিয়েই না তোর দেরি হয়ে গেলো । 
মাসুম সিয়ামঃ স্যার কি যে বলেন না । 
রাখিব স্যারঃ একা একা খেলে কি চলে? মাঝে মাঝে বন্ধুদের দিয়েও খাবি । 
মাসুম সিয়াম আর কিছু বলল না । আসলে কেউই সিগারেট খায়  না । লেট করে আসলে স্যার একটু এই ধরনের কথা শুনিয়ে অপমান করে আরকি যেন লেট না করে  । কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা, রখিব স্যার হয়তো বোঝেন না, এরা অপমানটা ব্রেইন থেকে বইয়ের মধ্যে ঢেলে দেয় । যার ফলে বইগুলো অপমানিত হয়, আর এরা পরদিন আবার লেট করে । একটু পড়ে মুখের মধ্যে মুচকি হাসি, আর হাঁটার মধ্যে জোকারের মতো ভাব নিয়ে ক্লাসে এলো সাকিব ।
সাকিবঃ ও স্যার, আসবো?
রাখিবঃ এইতো, আরেকজন এসেছে । আসেন আসেন । এনেছেন?
সাকিবঃ কি যে বলব  স্যার, আগুনটা বারবার বাতাসে নিভে যাচ্ছিলো । ফলে আমি ধরাতেই পারছিলাম না । রেগে গিয়ে আর আনতে পারিনি । এজন্য লেটও হয়ে গেলো । 
রাখিব স্যারঃ সমস্যা নাই । আমি স্কেল দিয়ে পেছনটা জ্বলায় দেবনে, সেই জ্বালানী থেকে আপনি বিড়িটা ধরায় নিয়েন । এবার ইয়ার্কি বন্ধ করে সিটে যান । 
সাকিব সিটে যেয়ে বসে পড়লো । প্রতিনিয়ত এ ধরনের ইয়ার্কি চলতেই থাকতো । দেখে মনে হবে ছেলেটা কি খারাপ । কিন্তু এই খারাপ স্বভাবের মাঝে লুকিয়ে আছে খুব ভালো একটা স্বভাব যা লোকে খুব সহজে দেখতে পায় না, কিংবা দেখতে চায় না । এরাই শাহিনের ছাত্রছাত্রি, এরাই শাহিনে ছিল । এরপর রাখিব পড়ানো শুরু করলেন । একটু পর কোচিং শেষ হলে সবাই অ্যাসেম্বলি করতে চলে যায় । প্রতীক আবার প্রাইভেট শেষ হতে না হতেই দৌড় দিত লিড দেয়ার জন্য । 
অ্যাসেম্বলি শেষ হলে সবাই ক্লাসে এসে বসলো । অহনা পানি খেতে গিয়ে অর্ধেক পানি ফেলে দিয়েছে মেঝেতে । অন্যান্যরাও এসেছে । তৃণ এসে বসে পড়লো বেঞ্চের ওপর  । মন টা খুব একটা ভালো নেই ওর । একটু সেদিন ও বসেছিল প্রতীকের সামনে । প্রতীক একটু পরে বাহির থেকে এসে ব্যাগ থেকে অনেকগুলো কাগজ  বের করে । সেই কাগজের ভেতর কারো ছবি আকা । প্রতীক তৃণর কাঁধে হাত দিয়ে ডাকল । 
প্রতীকঃ তৃণ, গতকাল তুমি যে আমার খাতায় বর্ণনা লিখে দিয়েছিলে না,  সেই বর্ণনা অনুযায়ী আমি বাসায় ১৫ টা ছবি আকসি । 
তৃণঃ ওইগুলো বাসায় যেয়ে টাঙিয়ে রাখিস । 
প্রতীকঃ দ্যাখ না । 
তৃণঃ তুই......তুমি অন্য কাউকে দেখাও । আমার দেখার ইচ্ছা নেই । তোমার সাথে তুই করে বলতেও অদ্ভুত লাগে । 
প্রতীকঃ আজকে থেকে আমাকে তুই করে বলবি । বুঝলি?
তৃণঃ আচ্ছা যা । তুই কিন্তু ভুলবা না  । 
প্রতীকঃ এইযে, তুই নিজেই  ভুল করলা । 
তৃণঃ আচ্ছা সমস্যা নাই । ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে  । এখন দেখি । কি ছবি আকলা......আকলি ।
প্রতীক ছবিগুলো তৃণর হাতে দিলো । প্রথম ছবিটা দেখে তৃণ একটা হাই তুলল । দ্বিতীয় ছবিটা দেখে তৃণ একটু হাসল । 
তৃণঃ এই ছবিটা যাদুঘরে রেখে আসিস । আর নাম দিস মোনালিসার পুরুষ ভার্সন ।
প্রতীকঃ ইয়ার্কি না করে দেখ কোনটা মিলেছে । 
চতুর্থটা দেখেও মিললো না । পঞ্চমটাও মিলল না, ষষ্টটাও মিলল না । সপ্তম টা দেখে তৃণর চোখ কপালে উঠলো । হালকা হালকা খোঁচা খোঁচা দাড়ি এই ছবিতে ফুটিয়ে তোলার কারণে এটা দেখতে অনেকটা ঋজু ভাইয়ার মতো লাগছে । কিঞ্চিত পরিবর্তন হলেও কেউ ঋজু ভাইয়ার পরিচিত কেউ দেখলেই বুঝবে এটা ঋজু । তৃণ দাঁড়িয়ে প্রতীককে জড়িয়ে ধরে একটা থ্যাংকস দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো ফাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা আরিকের কাছে । 
আরিকঃ ভাই আজকে আমি তোর লগে যামুনা । 
তৃণঃ আমি তোকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছি না । শোন............... 
কথা বলতে গিয়ে  হঠাৎ ক্লাসে এলেন হাসান স্যার । প্রথম ক্লাস হাসান স্যার এর । ক্লাসে ঢুকেই সবাই বেঞ্চে বসার জন্য ধমক দিলেন হাসান স্যার । যার ফলে আরিককে ছবিটা দেখাতে পারলো না তৃণ । নিজের সিটের দিকে যেতে গিয়ে হঠাৎই হাত ফসকে কাগজটা গিয়ে পড়ে গেলো মেঝেতে পড়ে থাকা পানির ওপর । তৃণ “ওহ শিট বলে কাগজ তুলতে যাবার আগেই হাসান স্যার এর গা কাপানি একটা ধমক শুনে ভয়ে না তুলেই নিজের সিটে চলে গেলো তৃণ । সিটে যেয়ে আফসোস করতে লাগলো । প্রতীককে কিছু বলল না । হাসান স্যারকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্যার এর মেজাজ আজ ভালো নেই । যা হোক কোনোরকমে ক্লাসটা নিয়ে স্যার চলে গেলেন । পুরোটা ক্লাস স্যার এর মুখে রাগ । পড়ার বাইরে সেদিন একটা কথাও বলেন নি । এমনকি মির সামিয়া রহমানের ব্যাগের মধ্যে খুজে পাওয়া সিগারেটের ব্যাপারেও না । ক্লাস শেষে স্যার যেতে না যেতেই ফুটবল খেলোয়াড়রা চলে গেলো প্র্যাকটিস করতে । ওদের পায়ের চাপায় কাগজের অর্ধেকটা আর ঠিক রইল না । অর্ধেক কাগজ ভিজে যাওয়ায় সেটা ছিঁড়ে অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেছে । তৃণ যেয়ে বাকি অর্ধেক কাগজ নিয়ে এলো । ওতে কেবল মুখের অংশটা দেখা যাচ্ছে । তৃণ তাড়াতাড়ি করে প্রতীকের কাছে গেলো । 
তৃণঃ প্রতীক আরেকটু কষ্ট করতে হবে তোমা.........তোকে ।
প্রতীকঃ হুম বল । 
তৃণঃ এই আর ছবিগুলো একটু দেখি । 
প্রতীক অন্যান্য ছবিগুলো তৃণকে দিলো । ওর মধ্যে থেকে একটা বেছে নিয়ে প্রতীককে দিলো । 
তৃণঃ এই ছবিটার মুখটা এই ছেঁড়া ছবির মুখের মতো করে করে দে । 
প্রতীকের পাশে বসেছিল তুর্য । 
তুর্যঃ কিরে, এ কার ছবি?
তৃণঃ (হালকা রেগে) তোর এতো......
প্রতীকঃ এটা আমাদের একটা  বন্ধুর ছবি । 
তুর্যঃ ও আচ্ছা । ওর ছবি আবার আকিস না । ও আবার তোমারে ফাঁসায় দেবেনে । তৃণ প্রতীক কেউই কিছু বলল না । যা হোক প্রতীক ছবিটা ওরকম আকা শুরু করলো । আর কেউ যেন বুঝতে না পারে সেজন্য একটা বইয়ের আড়ালে আকা শুরু করলো । ক্লাসে এলাহি স্যার চলে আসায় তৃণ নিজের সিটে বসে পড়লো । 
এলাহি স্যারঃ গতকাল তোমাদের পড়ানো হয়নি । আজ তোমাদের পড়াবো । আজকে তো উপন্যাস পড়ার কথা তাই না?
কিছু ছাত্রছাত্রী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো । 
এলাহি স্যারঃ আমি পড়ে পড়ে তোমাদের বোঝাচ্ছি, তোমরা আমার সাথে লাইন বাই লাইন পড় । 
এলাহি স্যার লেখিকা সেলিনা হোসেনের লেখা  কাকতাড়ুয়া উপন্যাসটি পড়া শুরু করলেন বোর্ডের সাহিত্যপাঠ বইটি থেকে । প্রতীক পড়ার ভান করতে করতে ছবি আঁকতে লাগলো । 
এদিকে মাঠে সবাই ফুটবল প্র্যাকটিসের জন্য এসেছে । আজ শেষ প্র্যাকটিস । দীর্ঘদিন প্র্যাকটিসের পর কাল ওরা আসল যুদ্ধে নামবে । সবাই প্র্যাকটিস করা এখনও শুরু করে নি । কেবল ওয়াশরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে এসেছে । শাহরিয়ার সোহান একটু আগেই ড্রেস চেঞ্জ করে শহিদ মিনারের কাছে বসে আর সবার জন্য অপেক্ষা করছে । এদিকে যুবায়ের শাওন ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই শাহরিয়ার সোহানকে দেখে শহিদ মিনারের কাছে এলো । তারপর শাহরিয়ার সোহানের কাছে এসে বলল, 
যুবায়ের শাওনঃ চল যাবি না?
শাহরিয়ার সোহানঃ কোথায়?
যুবায়ের শাওনঃ আরে আজকে জার্সি দেবে । কাল থেকে ম্যাচ না । 
শাহরিয়ার সোহানঃ ও আমার খেয়ালই ছিল না । কাল কার ম্যাচ রে?
যুবায়ের শাওনঃ নুরুল ইসলাম স্যার তো বললেন ইগল আর ফ্যালকন । পরশু রবিন আর মারলিন । 
শাহরিয়ার সোহানঃ ও । তাহলে আমার ম্যাচ পরশু ।
যুবায়ের শাওনঃ হুম । চল এবার । দেরি হয়ে গেলে ঠিক সাইজ আর পাবি না । 
শাহরিয়ার সোহানঃ হুম চল । 
কথাটি উঠতে উঠতে বলে যুবায়ের শাওনের সাথে জার্সি নিতে গেলো । 
ক্লাসে এলাহি স্যার ক্লাস করাচ্ছিলেন । তৃণ পেছন ফিরে  ফিস ফিস করে প্রতীককে বলল, কিরে? আকা হইসে? 
প্রতীকঃ হ্যাঁ । হইসে । 
এলাহি স্যার পড়ার মাঝে ওদের কথা বলতে দেখে ওদের কাছে গেলেন । এলাহি স্যার সবসময় সবার সাথে সুন্দর করে কথা বলতেন । কাউকে বকা দিতেন না । 
এলাহি স্যারঃ তোমরা কেন কথা বলো? গতকালও দেখেছি, আজও দেখলাম । ব্যাপারটা কি বলতো?
তৃণঃ ইয়ে মানে স্যার আমি ওকে জিজ্ঞাস করছিলাম কোন পেইজে এখন আপনি । 
এলাহি স্যারঃ মশকরা করো আমার সাথে? পেইজ নাম্বার শুনে তুমি কি করবে? তোমার  বেঞ্চে তো বইই নেই । একটা মাত্র বই তাও আবার ঐ পাশে । 
ওইপাশে কোণায় ছিল সাবিত । 
সাবিতঃ স্যার আমি ওকে জিজ্ঞাস করেছিলাম । 
তৃণ কিছু বলল না । 
এলাহি স্যারঃ (প্রতীকের দিকে  তাকিয়ে)  আর তুমি কি করছ? 
বলেই বইটা নিয়ে ছবিটা বের করে দেখলেন এলাহি স্যার ।
এলাহি স্যারঃ কার ছবি এটা?
প্রতীকঃ মানে...আমার একটা বন্ধুর । 
এলাহি স্যারঃ তো এখন আকছিলে কেন? 
প্রতীকঃ স্যার আমি এখন আকছিলাম না । আগে একেছিলাম । 
এলাহি স্যারঃ তুমিও মিথ্যে বলছো । তোমাকে আমি আকাআকি করতে খেয়াল করেছি । 
প্রতীকঃ মানে স্যার, বইয়ের ইম্পরট্যান্ট লাইনগুলো দাগাচ্ছিলাম । 
এলাহি স্যার প্রতীকের দিকে বইটা খুলে বলল
এলাহি স্যারঃ আমি যে  পেইজটা পড়াচ্ছি সেই পেইজ কিংবা এর আশেপাশের পেইজে কোনো কিছুই দাগান নেই । তুমি আবার একটা মিথ্যে বললে । 
প্রতীক এরপর আর কিছুই বলতে পারলো না । 
এলাহি স্যারঃ ছবিটা আমি রাখলাম । ক্লাস শেষে আমি দিয়ে দিব । 
বলেই ছবিটা নিয়ে ডেস্কের ওপর নাম ডাকার খাতার ভেতর রেখে দিলেন এলাহি স্যার । ছবিটা নিয়ে যযাবার সময় আরিকের নজরে এলো ছবিটা । 
আরিকঃ কি ব্যাপার? এটা ঐ ভাইয়াটার ছবি না? কিন্তু প্রতীক উনার ছবি আকলো কেন? তাহলে কি মির সামিয়া রহমানের ব্যাগে সিগারেট ঢোকানোর ব্যাপারে প্রতীকও জড়িত? না না । আমাকে একবার হাসান স্যারকে বলতে হবে ব্যাপারটা । 
ছবিটা যে স্যার নাম ডাকার খাতার ভেতর রেখেছেন না কেউ দেখতে পায় নি ।  এলাহি স্যার আবার পড়াতে শুরু করলেন । একটু পড়ে মাসুদ ভাই এলেন । 
এলাহি স্যারঃ হ্যাঁ ভাই বলেন  । 
মাসুদ ভাইঃ স্যার ঐ অনেকে ঐ অনুপস্থিতির লিস্টটা দিতে ভুলে যায় তো তাই আমি নিতে এলাম । রাখিব স্যার বললেন ওটা আর নামডাকার খাতাটা আর ঐ লিস্টটা মাঝে মাঝে ক্লাসে ক্লাসে যেয়ে নিয়ে আসতে । 
এলাহি স্যারঃ অনুপস্থিতির লিস্টটা কে করেছে?
ফারিহা বিনতে আলী দাঁড়ালো । মাসুদ ভাই ওর কাছ থেকে লিস্টটা আর ডেস্কের ওপর থেকে নাম ডাকার খাতাটা নিয়ে চলে গেলেন । এলাহি স্যারেরও খেয়াল ছিল না ছবিটা ঐ নাম ডাকার খাতাতে ছিল ।
এলাহী স্যার এর ক্লাস শেষে প্রতীক এলাহি স্যার কাছে ছবিটা চাইল । 
এলাহি স্যারঃ ওহহো! ছবিটা তো ঐ নাম ডাকার খাতার ভেতর ছিল । আচ্ছা তুমি যেয়ে হাসান স্যার এর কাছ থেকে ছবিটা নিয়ে এসো । 
বলেই প্রতীক যেই বেরোতে যাবে, ঐ সময় আরিক এলো ।
আরিকঃ স্যার আমি আনবো?
এলাহি স্যারঃ কেন? তুমি আনবে কেন?
আরিকঃ না মানে......স্যার এর সাথে আমার একটু দরকার আছে তো । 
এলাহি স্যারঃ আচ্ছা তাহলে  তুমি(আরিক) যাও, আর তুমি(প্রতীক) ক্লাসে থাক । 
প্রতীকঃ স্যার আমিও যাই ।
এলাহি স্যারঃ না । একজনের বেশি বেরোনোর দরকার নেই । তুমি এক কাজ করো, ক্লাস থেকে আর যেন কেউ বেরোতে না পারে সেটা দেখো । 
বলেই এলাহি স্যার চলে গেলেন । আরিক আগেই বেড়িয়ে গেছে । প্রতীক চেয়েছিল এলাহি স্যার চলে গেলে টিচার্স রুমে যাবে । ক্কিন্তু ওয়াশরুমের সামনে আশিস স্যার এর সাথে গল্প জুরে দিলেন এলাহি স্যার । 
ওদিকে আরিক হাসান স্যার এর কাছে যেয়ে দাঁড়ালো । 
আরিকঃ স্যার একটা কথা ছিল । 
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ রেদোয়ান বলো । 
আরিকঃ স্যার আমি রেদোয়ান না । আমি ইশতিয়াক । 
হাসান স্যারঃ ও আচ্ছা ইশতিয়াক বলো ।
আরিকঃ স্যার আমার মনে হয় প্রতীকও ঐ মেয়েটার ব্যাগে সিগারেট ভরানোর সাথে জড়িত । 
হাসান স্যার ওর কথা শুনে অবাক চোখে ওর দিকে তাকালেন  । তারপর একটু নড়েচড়ে বসে বললেন, 
হাসান স্যারঃ স্যার, প্রতীককে দেখলাম ঐ ভাইয়াটার ছবি আঁকতে, যেই ভাইয়াটা ওইদিন সবার ব্যাগে কিছু খুজছিলেন আপনাকে যে বলেছিলাম । 
হাসান স্যারঃ দ্যাখো আমি কখনো বিশ্বাস করিনা যে ঐ ক্লাসের কেউ এরকমটা করেছে । 
আরিকঃ কিন্তু স্যার যদি করে থাকে?
হাসান স্যারঃ যদির নাম নদীতে ভাসিয়ে দাও । আর তুমি প্রতীকের সাথে কথা বলে দ্যাখো । 
আরিকঃ ভালো কথা । মাসুদ ভাইয়া আপনাকে নাম ডাকার খাতাটা দিসে না? 
হাসান স্যারঃ ওতে ছবিটা আছে । দেখেন আপনি চিনতে পারেন । 
হাসান স্যার নাম ডাকার খাতাটা দেখলেন কিন্তু কিছু পেলেন না । 
হাসান স্যারঃ কোথায়? এর মধ্যে তো কিছুই নাই?
আরিকঃ কিন্তু এর মধ্যেই ছিল আমাকে এলাহি স্যার বললেন । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা তুমি যাও আমি এলাহি স্যার এর সাথে কথা বলে দেখবনে  । 
আরিক আর কিছু বলল না । চলে এলো ক্লাসে । ঠিক ঐসময় এলাহি স্যার এর কথা বলা শেষ হল । এলাহি স্যার টিচার্স রুমের দিকে না যেয়ে নিচ তলায় চলে গেলেন । আরিক টিচার্সরুম থেকে চলে এলো ক্লাসরুমে । প্রতীক দরজার কাছেই ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো । 
প্রতীকঃ ছবি দে । 
আরিকঃ ছবিটা খাতার মধ্যে ছিল না ।
প্রতীকঃ (হালকা হতভম্ব হয়ে) ছিল না মানে ?
আরিকঃ আমি ওর মধ্যে ছবিটা পাইনি ।  
প্রতীকঃ (মাথায় হাত দিয়ে) শিট! 
আরিকঃ ঐ ছবিটা দিয়ে তুই কি করছিলি বলতো?
প্রতীকঃ আরে আমার কিছু না । তৃণ আঁকতে বলেছিল । 
আরিক এবার অবাক হয়্যে যায় । 
আরিকঃ তৃণ?
প্রতীকঃ হ্যাঁ তৃণ । 
আরিক আর দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেলো তৃণর কাছে । প্রতীক কেবল আফসোস করতে লাগলো । 
আরিকঃ ঐ তৃণ? আমারে বলতো ঐ ছবিটা তুই কেন প্রতীককে দিয়ে আকাচ্ছিলি?
তৃণ সেসময় হালকা রেগেছিল ছবিটা হারিয়ে যাবার কারণে । তবুও রাগটা একটু দমন করে বলল ।
তৃণঃ আর বলিস না । আমি একটা ভাইয়াকে খুজছি । ঐ ভাইয়াটা আমাকে মিথ্যা বলে আমার সাহায্যে সবাইকে সেদিন আইসিটি ল্যাবে পাঠিয়েছিলো  । ঐ ভাইয়াটার নাম ঋজু । তুই যে বললি সাবিতের বইয়ে যেদিন লাভলেটারটা পাওয়া যায় ওইদিন একটা ভাইয়া নাকি সবার ব্যাগ খুজেছিল, আমি তাই ভাবলাম ওটাও ঋজু ভাইয়া কি না । তাই প্রতীককে বলে উনার একটা ছবি  আকিয়েছিলাম । কিন্তু ছবিটা হারিয়েই গেলো । 
আরিকঃ আমি ছবিটা  দেখেছি । এলাহি স্যার ছবিটা প্রতীকের কাছ থেকে আনার সময় আমি ছবিটা দেখেছিলাম । আর ওটা ঐ ভাইয়ারই ।
তৃণ একই সাথে অবাক ও খুশি হল । 
তৃণঃ সত্যি!
আরিকঃ আরে হ্যাঁ । শুধু তাই না । যেদিন তুই আমাদের আইসিটি ক্লাসে যেতে বলেছিলি, ওইদিনও আমি ঐ ভাইয়াটাকে দেখেছি । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছিল । 
তৃণ এবার আরও খুশি হল । 
তৃণঃ ব্যাস । আমার মনে হয় আসল দোষীকে আমি খুজে পেয়েছি । 
আরিকঃ ক্যান? উনি আবার তোর সাথে কি করলো?
তৃণঃ তুই বুঝবি না । আচ্ছা...পরে বুঝবি । 
বলেই তৃণ ওখান থেকে চলে এলো প্রতীকের কাছে । প্রতীক তৃণর কাঁধে ডান হাত রেখে বলল,
প্রতীকঃ সরি রে । আমি ছবিটা সামলে রাখতে পারলাম না ।
তৃণঃ আরে আমি যে কাজে তোকে দিয়ে ছবিটা আকিয়েছিলাম সে কাজ হয়ে গেছে । 
প্রতীকঃ (খুব খুশি হয়ে) সত্যি?
তৃণঃ হ্যাঁ রে হ্যাঁ । সত্যি । 
প্রতীকঃ যাক । গতরাতের কষ্ট আমার বৃথা গেলো না । 
তৃণঃ দাড়া, আমি রাতুলকে খবরটা জানিয়ে আসি । 
তৃণ তখন রাতুলের কাছে যেয়ে সবটা বলতে লাগলো । আরিক তখন প্রতীকের কাছে এলো । 
আরিকঃ কার ক্লাস রে? কেউ তো আসতেসে না । 
প্রতীকঃ রুবাইয়াত মেডামের ক্লাস । মেডামতো ঢাকায় । 
রাতুলঃ সত্যি? 
তৃণঃ হ্যাঁ সত্যি । ঐ ঋজু ভাইয়াই এই লাভ লেটারটা সাবিতের খাতায় রেখেছিলো আর উনিই পড়ে নিয়ে গেছেন । আর নেয়ার জন্যই উনি সবাইকে ক্লাসরুম থেকে বের করেছিলেন । 
রাতুলঃ সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু তুই এখন উনাকে খুজবি কোথায়?
তৃণ কিছু বলল না ।
রাতুলঃ সব থেকে বড় ব্যাপার উনাকে যদি পেয়েও যাস, তুই প্রমান করবি কিভাবে যে উনিই দোষী?
তৃণ চুপ করে দাঁড়িয়েই রইল । আর ভাবতে লাগলো । 
এদিকে নুরুল ইসলাম স্যার সবাইকে হাউসের জার্সি দিচ্ছিলেন । আরেফিন অনিক তাড়াতাড়ি আসায় ড্রেস চেঞ্জ করে আসতে পারে নি । তাই হাউসের জার্সি আর প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগলো আরেফিন অনিক । এদিকে খাতার ভেতর থেকে পড়ে যাওয়া সেই ছবিটা সেই সময় নিচতলার সিঁড়ির সামনে এসে পড়ে । নিচতলায় মেয়ের ওয়াশরুম । দোতলা থেকে তখন নিচে আসছিলেন ঋজু ভাইয়া । মুখে মাস্ক । হঠাৎ উনার নজরে পড়লো সেই ছবিটা । উনি নিজের ছবি কাগজে আকা দেখে যেই নেমে নিতে যাবেন, সেই সময় সিঁড়ির কাছে এলো আরেফিন অনিক । ক্লাস টেনের ছাত্রকে দেখে দৌড়ে উপরে পালিয়ে আড়াল থেকে দেখতে লাগলেন । আরেফিন অনিক তখন ছবিটা তুলে হাতে নিলো । 
আরেফিন অনিকঃ এই ছবিটা আবার কার? কই যেন দেখসি দেখসি মনে হচ্ছে?
কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর মনে পড়লো ছবিটা দেখেছিল ক্লাসরুমে পড়ে থাকা পানির ওপর পড়ে থাকা কাগজের ভেতর । 
আরেফিন অনিকঃ এটা তো তৃণর হাত থেকে পরসিলো । কিন্তু এটা তো সবার পায়ের চাপায় ছিঁড়ে গেসিল । যা হোক, ক্লাসে যেয়ে তৃণকে দেবনে ।
বলেই উপরের দিকে ওঠা শুরু করলো । ঋজু ভাইয়াও তা দেখে তাড়াতাড়ি করে একটা সানগ্লাস পড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো । আরেফিন অনিক তিন তলায় ছেলেদের ওয়াশরুমে গেলো ওয়াশরুমে যাবার দুটো দরজা । একটা বন্ধ থাকায় আরেকটা দিয়ে ঢুকল আরেফিন অনিক । ঢুকেই দেখতে পেলো সানগ্লাস আর মাস্ক পড়া একজন । আসলে ওটা ঋজু ভাইয়া যাকে আরেফিন অনিক চেনে না । অদ্ভুত লাগলেও মাথা ঘামাল না আরেফিন অনিক । ওয়াশ্রুমে তখন আরেফিন অনিক আর ঋজু ভাইয়া ছাড়া আর কেউ ছিল না । আয়নায় নিজের মুখ দেখতে দেখতে হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো আরেফিন অনিক । হঠাৎ ঋজু ভাইয়া অন্য দরজাটাও আটকে দিলেন । 
আরেফিন অনিকঃ এ কি? আপনি দরজাটা আটকে দিলেন কেন?
ঋজু ভাইয়া কিছু না বলে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে আরেফিন অনিকের দিকে এগোতে লাগলো ।  
আরেফিন অনিকঃ সমস্যা কি আপনার? কে আপনি??
কোন সাড়া  দেয় না ঋজু ভাইয়া । আরেফিন অনিক বার বার জিজ্ঞাস করতে থাকে আর পেছাতে থাকে । ঋজু ভাইয়াও কিছু না বলে রুমালটা হাতে নিয়ে এগোতে থাকে । এরপর আরেফিন অনিকের যখন দেয়ালে পিঠ লেগে যায়, তখন খুব ভয় পেয়ে যায় । ঋজু ভাইয়া এগিয়ে যেয়ে যেইই রুমাল আরেফিন অনিকের মুখে ধরতে যাবে, অমনি অনিক উনার হাতদুটো ধাক্কা দিয়ে উচু করে নিজে নিচু হয়ে অন্য দিকে দৌড় দিলো । 
কিন্তু ২-৩ কদম এগোতেই আরেফিন অনিকের হাতটা ধরে ফেললেন ঋজু ভাইয়া । আরেফিন অনিক চিৎকার করতে যাবে, সেই সময় রুমালটা ধরলো আরেফিন অনিকের মুখে । রুমালটায় আগে থেকেই chloroform মেশান ছিল । ফলে আরেফিন অনিক অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো । এদিকে মাঠের মধ্যে শেষ দিনের প্র্যাকটিস তখন শুরু হবার কথা । শাওন খেলতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলো আরেফিন অনিক এখনও আসে নি । শাওন আশেপাশে তাকিয়ে আরও খুজতে লাগলো কিন্তু আরেফিন অনিককে পেলো না  । শহিদ মিনারের পাশের একটা পেয়ারা গাছের নিচে বুটের ফিতা লাগাচ্ছিল মাসুদ । ওর কাছে গেলো শাওন । 
শাওনঃ ঐ মাসুদ, অনিকরে দেখসিস? 
মাসুদঃ নারে । আমি তো ওরে দেখলাম তাড়াতাড়ি বেরোয় গেসিল নুরুল ইসলাম স্যার এর রুম থেকে । 
মাসুদ আর কিছু না  বলে মাঠের দিকে চলে গেলো । শাওন পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে স্কুল বিল্ডিঙের দিকে তাকিয়ে রইল আর দেখতে লাগলো কোথাও আছে কি না । 
শাওনঃ বুঝতেসি না আজকে ফাইনাল প্র্যাকটিস, আর অনিক গেলো কই ।
শাওনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে গেলো শাহরিয়ার সোহান ।
শাহরিয়ার সোহানঃ কিরে? এখানে দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান?
শাওনঃ আর বলিস না । এখনও অনিক আসে নাই । কই গেসে আল্লাহই জানেন । 
শাহরিয়ার সোহানঃ কি! 
শাওনঃ হ রে । 
শাহরিয়ার সোহানঃ এখন কি করবি?
শাওনঃ বুঝতেসি না । 
শাহরিয়ার সোহানঃ চল খুজে দেখি । 
শাওনঃ আচ্ছা চল । শাওন আর শাহরিয়ার সোহান আরেফিন অনিককে খোজার জন্য মাঠ থেকে স্কুল বিল্ডিঙের দিকে চলে গেলো । ওদিকে ক্লাস নাইনের হাসিব আর তামিম ওয়াশরুমে ঢুকে আরেফিন অনিককে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখল । 
হাসিবঃ কিরে? এইটা অনিক ভাই না।
তামিমঃ হ্যাঁ অনিক ভাইই তো । 
হাসিবঃ চল কোন স্যাররে ডেকে নিয়ে আসি । 
পাশেই কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের একটা ক্লাসরুমে  ক্লাস নিচ্ছিলেন ফিসিক্সের সাইফুল স্যার । দরজার কাছে যেয়েই হাসিব স্যারকে বলল, 
হাসিবঃ স্যার, ওয়াশরুমে একটা ভাইয়া পড়ে আছে ।
সাইফুল স্যার আর উনার সাথে ফার্স্ট ইয়ারের কয়েকটা ভাইয়া ওয়াশরুমে গেলেন । ধীরে ধীরে ঐ জায়গায় ভীর জমে যায় । তিন তলার সব স্যার আর স্টুডেন্টরা তখন ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আরেফিন অনিককে দেখার চেষ্টা করছে । ভীর দেখে দৌড়ে সেখানে এলো শাহরিয়ার সোহান আর শাওন । ভীর ঠেলে কোনোরকমে ভেতরে এসে আরেফিন অনিককে দেখে ওরা স্থম্ভিত হয়ে গেলো । শাহরিয়ার সোহান অনিকের মুখে বেসিং থেকে পানি ঢালতে লাগলো আর শাওন বারবার ওকে ডাকতে লাগলো । স্যাররা সব পাশেই ছিলেন । একটু পর অনেক চেষ্টায় জ্ঞান ফিরে আসে আরেফিন অনিকের । 
শাওনঃ কিরে? কি হইসিলো তোর?
আরেফিন অনিক কিছু বলে না । 
শাহরিয়ার সোহানঃ খারাপ লাগতেসে তোর? শুবি কোথাও?
আরেফিন অনিক কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো । 
শাহরিয়ার সোহানের পাশেই ছিলেন আসিফ স্যার  । আসিফ স্যার বায়োলজির টিচার । 
শাহরিয়ার সোহানঃ স্যার, বায়োলজি ল্যাবের বেডে আমরা ওকে রাখতে পারি?
আসিফ স্যার সম্মতি জানালে ওরা আরেফিন অনিককে নিয়ে চলে যায় বায়োলজি ল্যাবে । এদিকে তৃতীয় পিরিয়ড শেষ হতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকি । পাশের ক্লাসে থাকা উজ্জ্বল স্যার এর ঝারি শুনে কেউ আর বাইরে যাবার সাহস করলো না । ক্লাসের মধ্যে কোনোরকমে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলে সময় কাতাচ্ছে । ফার্স্ট বেঞ্চে বসে কথা বলছে সাকিব আর রাহাত ।
সাকিবঃ ঐ রাহাত, তোর সনিয়ারে মনে আসে? 
রাহাতঃ কোন সনিয়া? 
সাকিবঃ আরে ক্লাস টু পর্যন্ত যে ছিল । আমরা যে ওকে নিয়ে খুব মজা করতাম আর ও যে একটু পাগল টাইপের ছিল । 
রাহাতঃ ও হ্যাঁ, মনে পরসে । একবার যে ক্লাসে কাইন্দে দিসিলো । 
সাকিবঃ হ্যাঁ । ও নাকি এখন কুর্মিটোলায় পড়ে ।
রাহাতঃ ও কেমন যেন অদ্ভুত ছিল । ও কোথায়  থাকতো, ওর পরিবারে কে ছিল কিছুই আমরা জানতাম না । 
সাকিবঃ হুম । 
রাহাতঃ টা হঠাৎ কি হইসে?
সাকিবঃ না গতকাল তামান্নার সাথে চ্যাট করতেসিলাম মেসেঞ্জারে তখন বলল ও নাকি কুর্মিটোলা শাহিনে থাকে ।
রাহাতঃ ম্যালা ভালো কথা । 
পাশের বেঞ্চেই বসে ছিল শিফা ।
শিফাঃ কিরে কি করতেসিস রে?
সাকিবঃ কথা বলি দেখতে পাচ্ছিস না?
শিফাঃ না রে । আমি দেখতে পাচ্ছি না । 
রাহাতঃ যা ভাগ । আমরা পাগলের সাথে কথা বলি না ।
শিফাঃ কি! আমারে পাগল বললি? 
দুই বেঞ্চের মাঝ দিয়ে তখন হেঁটে যাচ্ছিলো প্রতীক । 
সাকিবঃ এই প্রতীক, তোর বাড়ি পাবনায় না? 
প্রতীকঃ হ্যাঁ তো?
সাকিবঃ এই শিফারে তোদের পাবনার পাগলাগারদে নিয়া ভর্তি করাইস তো । 
শিফাঃ এই প্রতীক, দ্যাখ না সাকিব আমারে পাগল বলতেসে । 
প্রতীকঃ আমি সেদিন শুনলাম হেমায়েতপুরে নাকি একটা পাগল ভালো হয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে পাগলাগারদ থেকে চলে এসেছে । তো উনার সিটটা ফাঁকা আছে ।
সাকিব আর রাহাতের মুখে হাসি । শিফা এখন অপমানিত হতে চলেছে । আর শিফার মুখে কষ্ট । কারণটা একই । মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে প্রতীকের কথা শুনছে শিফা । 
প্রতীকঃ সেই সিটটাতে একজনকে নেয়া  হবে । তো আমি ভাবছি সেখানে সাকিবকে ভর্তি করায় দেবো । 
সাকিব আর রাহাতের মুখটা মুহূর্তের মধ্যে বাংলার পাঁচ হয়ে গেলো । আর শিফা আনন্দের সাথে বলে উঠলো, 
শিফাঃ থ্যাংকস দোস্ত ।  উচিত জবাব দিসিস ।
রাহাতঃ এই তুই আমাদের বন্ধু! যাদের বুদ্ধি হাঁটুর নিচে থাকে তাদের সাহায্য করলি?
প্রতীক কিছু না বলে হেসে হেসে চলে গেলো । আর শিফা একটা ভেংচি কেটে সেখান থেকে চলে এলো । 
পাশের বেঞ্চেই বসে কথা বলছিল বৈশাখী আর সামিয়া রহমান । সামিয়া রহমান আর মির সামিয়া রহমান দুজন আলাদা । এক মানুষ নয় ।
সামিয়া রহমানঃ আচ্ছা, তুই যে গতকাল সনিয়া নামে একজনের কথা বললি না?
বৈশাখীঃ হ্যাঁ কেন?
সামিয়া রহমানঃ ও তো আমাদের সাথে ক্লাস টু পর্যন্ত পরেছিল ।
বৈশাখীঃ তাই? তাহলে আমার খেয়াল নেই । 
সামিয়া রহমানঃ আরে হ্যাঁ । ও তো  আমাদের মজা করা সহ্য করতে না পেরে শেষমেষ আমাদের এই স্কুল থেকে চলে গিয়েছিলো । 
হঠাৎ ওদের পাশে বসতে বসতে শিমলা বলল, 
শিমলাঃ শুধু কি তাই । ও অল্প মজাও সহ্য করতে পারতো না । জানিস, আমি একবার মজা করে ওকে সামান্য  গাধা বলেছিলাম এতেই ও রেগে গিয়ে আমার হাত কম্পাস দিয়ে কেটে ফেলেছিল । 
বৈশাখীঃ শুনেছিলাম ও কোথায় থাকে, ওর পরিবারে কে কে আছেন কেউ জানে না । 
শিমলাঃ জানেনা তা না । ও কাউকে বলতে চাইতো না । কেন বলতে চাইতো না সেটা বলতে পারি না, তবে শুনেছি ওর একটা ভাই আছে । ওর ভাইও ওর মতো হালকা পাগল । 
বৈশাখীঃ ও যাই হোক । ওরা কি পৌঁছেছে?
শিমলাঃ ও হ্যাঁ, মজার কথা শোন । গতকাল বাসে তামান্না আমার সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাট করছিলো । তখন বলল, মোস্তাফজ স্যার নাকি একটা আনটির গায়ের ওপর বমি করে দিয়েছে । 
সবাই হেসে দিলো । এপাশে রাফি বসে ওদের হাসি শুনে বলে উঠলো ।
রাফিঃ আহা! সেকি হাসি । 
শিমলাঃ তাতে তোর কি রে?
রাফিঃ যে জোরে হাসতেসিস, তাতে ক্লাসের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে ।
বৈশাখীঃ চুপ থাক । তুই যে কত শৃঙ্খলা জানিস বা বা ।
রাফি আর কিছু বলল না । শুধু হাসল । 
একটু পর টিফিন পিরিয়ড এর ঘণ্টা বেজে গেছে । আরেফিন অনিক আর শাহরিয়ার সোহান টিমের ক্যাপ্টেনকে সব ঘটনা বলে আবার আরেফিন অনিকের কাছে এসেছে । হাসান স্যারও একটা ক্লাস শেষ করে খবর শুনে চলে এলো বায়োলজি ল্যাবে । হাসান স্যার আরেফিন অনিকের রুমে আসতেই আরেফিন অনিক উঠে বসতে চাইলে স্যার মানা করে ওর পাশে বসলেন । শাহরিয়ার সোহান আর  আরেফিন অনিক পাশেই দাঁড়িয়ে রইলো ।
হাসান স্যারঃ কি ব্যাপার, তোমরা দাঁড়িয়ে রইলে কেন? বসো ।
আরেফিন অনিক আর শাহরিয়ার সোহান টেবিলের নিচ থেকে দুটো টুল টেনে নিয়ে বসে পড়লো । 
হাসান স্যার অনিককে জিজ্ঞাস করলেন,
হাসান স্যারঃ কি হয়েছিলো অনিক?
অনিক কিছু বলল না । 
হাসান স্যারঃ কি হয়েছিলো বলো?
আরেফিন অনিক কিছু বলে না । কেবল মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে । 
শাওনঃ অনিক বল কি হইসিল ।
আরেফিন অনিকঃ স্যার...একটা...ছবি পেয়েছিলাম । আর......সেট আমি তৃণর হাতে দেখেছিলাম । সেটা পকেটে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে ওয়াশরুমে যাই । সেখানে সানগ্লাস আর মাস্ক পড়া একটা ভাইয়া আমার মুখে রুমাল ধরে আর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি । এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই । 
হাসান স্যারঃ ছেলেটা কে তুমি কি ভালো ভাবে বুঝেছিলে?
আরেফিন অনিকঃ না । তবে কুড়িয়ে পাওয়া ছবিটার সাথে অনেক মিল ছিল ভাইয়াটার । 
হাসান স্যারঃ আমাকে রেদোয়ান কি একটা ছবির কথা বলেছিল । হাতে আকা ছবি । 
আরেফিন অনিকঃ জী স্যার । ওটাও হাতে আকাই ছিল । 
হাসান স্যারঃ কই দেখি ছবিটা । 
আরেফিন অনিক যেই ছবিটা পকেট থেকে বের করতে যাবে, অমনি দেখল পকেটে ছবিটা নেই । 
আরেফিন অনিকঃ স্যার ছবিটা নেই  । মনে হয় ঐ ভাইয়াটাই ছবিটা আমার পকেট থেকে নিয়ে গেছে । 
হাসান স্যারঃ এই মোবাইল, যাও তো রেদোয়ানকে একটু ডেকে নিয়ে আসো তো । 
শাওনকে হাসান স্যার মোবাইল বলে ডাকতো । শাওন দৌড় দিয়ে ক্লাসে গেলো । ক্লাসে এখনও আরেফিন অনিকের খবর জানেনি । শাওন ক্লাসে যেয়ে দেখল রাহাত খাচ্ছে । 
শাওনঃ ঐ রাহাত, হাসান স্যার তোকে ডাকতেসে । 
রাহাতঃ এখনই?
শাওনঃ হ এখনই । 
শাওন রাহাতকে নিয়ে বায়োলজি ল্যাবে এলো । 
হাসান স্যারঃ কাকে নিয়ে এসেছ তুমি?
শাওনঃ স্যার আপনিই তো বললেন রেদোয়ানকে আনতে ।
হাসান স্যারঃ ও আচ্ছা । ওটা তাহলে ইশতিয়াক । যাও কষ্ট করে ইশতিয়াককে নিয়ে এসো । 
শাওন রাহাতের সাথে ক্লাসে ফিরে এলো । আসার সময় রাহাত সব ঘটনা শুনে নিলো । যাহোক শাওন ক্লাসে আরিককে ওরফে ইশতিয়াককে খুজে পেলো না । আবার ক্লাসে বায়োলজি ল্যাবে ফিরে এলো শাওন । 
হাসান স্যারঃ ওহহো । আচ্ছা যাও । তাহলে প্রতীককে  ডেকে নিয়ে এসো । 
শাওন একটু হাফিয়ে যাবার মতো শ্বাস ফেলল ।
হাসান স্যারঃ আচ্ছা মোবাইল, তুমি থাক । শাহরিয়ার তুমি যাও । 
শাহরিয়ার সোহান ক্লাসে যেয়ে প্রতীককে ডেকে আনল । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা প্রতীক, তুমি কি কোন ছবি একেছিল?
প্রতীকঃ জী স্যার । কিন্তু কেন? 
হাসান স্যারঃ কি জন্য ছবিটা তুমি একেছিলে আমি কি জানতে পারি? 
প্রতীকঃ স্যার আমি সেভাবে কিছুই জানিনা । আমাকে তৃণ কার যেন মুখের বর্ণনা দিয়ে ছবি আঁকতে বলল, তাই আমি আঁকসি । কিন্তু কেন আঁকতে বলেছিল সেটা আমি জানিনা । 
হাসান স্যারঃ শাহরিয়ার তুমি আবার কষ্ট করে তৃণকে............আচ্ছা প্রতীক তুমি যাও । যায়ে ক্লাসরুম থেকে তৃণকে বলো বায়োলজি ল্যাবে আসতে । 
প্রতীক ক্লাসে গেলো  । যেয়ে দেখল, তৃণ প্রতীকের সিটে বসে কিছু আকছে । কাছে যেয়ে দেখল, প্রতীকের ব্যাগের মধ্যে থাকা বাকি ১৩ টা ছবি থেকে একটা  নিয়ে আসল ছবির মতো করে আকার চেষ্টা করছে । 
প্রতীকঃ প্রতীককে দেখে তৃণ উঠে দাঁড়িয়ে বলল । 
তৃণঃ ও সরি । আমি তোমা...তোর ব্যাগে হাত দিয়েছি তোর অনুমতি ছাড়াই । 
প্রতীকঃ না সমস্যা নেই । আমার ব্যাগে খুলে কেউ কিছু নিলে আমি কিছু মনে করি  না । 
তৃণঃ আচ্ছ, তাই নাকি । যদি চুরি হয়?
প্রতীকঃ চুরি হলে আমার কি । যে চুরি করবে সে একটু পাপ কামাই করবে । আর তাছাড়া আমার ব্যাগে তেমন আহামরি কিছুই নেই যে চুরি করবে কেউ । 
স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তখন ঋজু ভাইয়া সব খেয়াল করছিলো । 
তৃণঃ সেটা সত্য না । কখন যে কি দামি হয় কেউই বলতে পারে না । এই যেমন তুই যে ছবিটা আকলি,  ওটা যদি চুরি হতো, তাহলে কিন্তু আমি এখন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পেতাম না । 
প্রতীকঃ বাদ দে । ইশ! তোকে জানি কি বলতে এসেছিলাম আমি ।
তৃণঃ কি বলবি? 
প্রতীকঃ ধুর মনেই পড়ছে না । এই আমার একটা দোষ । খালি ভুলে যাই । 
তৃণঃ বাদ দে । কষ্ট করে মনে করার  দরকার নেই । ছবিগুলো তোর ব্যাগে রেখে দিলাম । 
প্রতীকঃ মনে পড়েছে । হাসান স্যার তুই যে আমাকে ছবি আঁকতে বলেছিলি সে ব্যাপারে কি কথা বলবেন তাই ডেকেছেন । 
তৃণঃ কোথায় ডেকেছেন?
প্রতীকঃ বায়োলজি ল্যাবে । 
তৃণঃ ঠিক আছে । আমি যাই । 
প্রতীকঃ আচ্ছা ।  
তৃণ চলে গেলো । তৃণ  যাবার সময় ঋজু ভাই একটু আড়ালে চলে যায় । আবার তৃণ যাবার পর দরজা দিয়ে প্রতীকের দিকে তাকায় ।  ছবিগুলো তৃণ আর ব্যাগে রাখতে পারে নি । প্রতীক ছবিগুল হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখল ।
প্রতীকঃ রেখে দেই ব্যাগে । আবার এডিট করার প্রয়োজন হলে আকা যাবে  তাড়াতাড়ি ।
নিজে নিজে এই কথা বলে প্রতীক ছবিগুল ব্যাগে রেখে দিলো । একটু পর তনয় এলো ।
তনয়ঃ কিরে, সেই স্বপ্নিল আকাশ নাটকের এডিট হইসে?
প্রতীকঃ না রে । একটু বাকি আছে । 
তনয়ঃ Treat দিবি না?
প্রতীকঃ ওহহো! আমি ভুলেই গেসিলাম । আমার মাথাটা একদম গেসে । 
প্রতিক যে বেঞ্চে বসেছিল সেই বেঞ্চে তুর্য বসে টিফিন করছিলো ।
তুর্যঃ তোমার মাথা কবে ঠিক ছিল । 
প্রতীকঃ তোমার চেয়ে ভালো আছে । 
তুর্যঃ হুহ ।
প্রতীকঃ আমি ভাবছি সবার সাথে তুই করে কথা বলব । তুইও বলবি । 
তুর্যঃ আচ্ছা । 
প্রতীকঃ দাড়া তনয় । আমি একটু ক্যান্টিন থেকে আসছি ।
তনয়ঃ ঐ Treat এর ব্যাপারে ইয়ার্কি করসিলাম কিন্তু । 
প্রতীক ততক্ষনে চলে গেছে । এদিকে দরজা দিয়ে প্রতীকের ব্যাগের দিকে উঁকি দিচ্ছে ঋজু ভাই । ছবিগুলো উনি নিতে চান । কিন্তু ভেতরে গিয়ে কারো ব্যাগ হাতালে সবাই সন্দেহ করতে পারে, তাই আর ভেতরে গেলো না ।  একটু পরে শাওনের ছোট ভাই হাতে টিফিন বক্স নিয়ে ঋজু ভাইয়াকে ডাকতে শুরু করলো । শাওনের ছোট ভাই মনে করেছিলো ওটা হয়তো শাওনের বন্ধু । শাওনের ছোট ভাইকে অনেকেই চিনতো, কিন্তু সেই মুহূর্তে ওখানে ওর চেনা কেউ ছিল । 
শাওনের ছোট ভাইঃ ভাইয়া ভাইয়া, আমার ভাইয়া শাওনকে এই টিফিন বক্সটা দিতে পারবেন? 
ঋজু ভাই একটু অবাক হয়ে পিচ্চিটার দিকে তাকালেন । তারপর ভাবলেন, একে দিয়ে ঐ কাগজগুলো চুরি করানো যেতে পারে । 
ওদিকে হাসান স্যার, শাওন, শাহরিয়ার সোহান আর আরেফিন অনিক তৃণর আসার অপেক্ষা করছে । 
শাওনঃ স্যার, আমাদের তো এখন যাওয়া লাগবে । আজকে তো শেষ প্র্যাকটিস । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা যাও তাহলে । 
আরেফিন অনিক উঠে বসে বলল, 
আরেফিন অনিকঃ দাড়া আমিও যাব । 
শাহরিয়ার সোহানঃ কিন্তু তোর তো শরীর খারাপ, এভাবে খেলবি কিভাবে?
আরেফিন অনিকঃ আগে একটু খারাপ লাগছিল । এখন ঠিক আছি । 
শাওনঃ তারপরেও । তুই এভাবে খেলবি  কিভাবে? 
আরেফিন অনিকঃ প্লিজ তোরা না করিস না । আমি প্যান্ট ভাঁজ করেই না হয় আজকে খেললাম । আজ  বেশি খেলবো না । কিন্তু অন্তুত মেইন ম্যাচটা আমি খেলতে চাই । 
শাওন আর শাহরিয়ার সোহান আর না করতে পারলো না । ওরা আরেফিন অনিককে নিয়ে খেলতে গেলো । হাসান স্যার ও আরেফিন অনিককে সাবধানে খেলতে বললেন । ওরা যাবার একটু পরেই তৃণ এলো ।
তৃণঃ স্যার আসবো?
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ আসো । 
তৃণ হাসান স্যার এর কাছে গেলে হাসান স্যার ওকে বসতে বলে । তৃণ হাসান স্যার এর পাশে বসে পড়ে । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা, তুমি প্রতীককে কার ছবি আঁকতে বলেছিলে?
তৃণঃ স্যার একটা ভাইয়ার ।
হাসান স্যারঃ কিন্তু কেন?
তৃণ হাসান স্যারকে পুরো ঘটনা খুলে বলল ।
হাসান স্যারঃ হুম বুঝলাম । কি যেন বললে নামটা?
তৃণঃ ঋজু ।
হাসান স্যারঃ ঋজু । এই নামের কাউকে চিনি বলে তো আমার মনে পড়ছে না ।
তৃণঃ স্যার আমি মাসুদ ভাইয়ের কম্পিউটারে গিয়ে দেখলাম উনি গতবছর এই স্কুলেই ছিলেন । 
হাসান স্যারঃ হয় ওকে আমি অন্য নামে চিনি, আর নয় আমি ওকে খুব একটা খেয়াল করিনি । আবার এটাও হতে পারে ও ক্লাসে খুব কম আসতো । 
তৃণঃ স্যার, আপনি একটু চলেন, মাসুদ ভাইয়ের কম্পিউটারে আপনাকে উনার ছবি দেখাই । 
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ চল । এটা ভালো বুদ্ধি ।
হাসান স্যার আর তৃণ চলে গেলো মাসুদ ভাইয়ের রুমের দিকে । 
এদিকে ঋজু ভাইয়া শাওনের ভাইয়ের হাত থেকে টিফিন বক্সটা নিয়ে বলল, 
ঋজুঃ (ফিসফিস করে) তোমার ভাইয়াকে আমি এটা দিয়ে দেবো । 
শাওনের ভাইঃ আপনার নাম কি?
ঋজুঃ আমার নাম প্রতীক । 
প্রতীক যাবার সময় নেমপ্লেটে নামটা  দেখেছিল ঋজু ভাইয়া । 
ঋজুঃ আমার একটা কাজ করে দাও না ।
শাওনের ভাইঃ কি কাজ?
ঋজুঃ ঐ লাস্ট বেঞ্চে আমার ব্যাগ আছে । ঐ ব্যাগে অনেকগুলো ছবি আকা আছে । ওগুলো আনতে পারবে?
শাওনের ভাইঃ আপনি যাচ্ছেন না কেন?
ঋজুঃ আসলে আমার একটা বন্ধু আমাকে মারার জন্য ভেতরে বসে আছে । তাই যাচ্ছি না । 
শাওনের ভাইঃ আপনাকে মারে কেন? আপনি কি খুব খারাপ? 
ঋজু ভাইয়া এবার হালকা বিরক্ত হল । তা-ও বিরক্তিটা না প্রকাশ করে বলল, 
ঋজুঃ আমি খারাপ না । আমার ঐ বন্ধু খারাপ । 
শাওনের ভাইঃ আপনি খারাপ ছেলেদের সাথে থাকেন কেন?
ঋজু ভাইয়া আরও বিরক্ত হয়ে গেলেন । তা-ও না প্রকাশ করে বললেন,
ঋজুঃ আমি ওর সাথে থাকি না । ও আমার সাথে থাকতে চায় । 
শাওনের ভাইঃ তাহলে আপনি ওদের মানা করেন না কেন আপনার সাথে থাকতে? 
ঋজু আর চুপ করে থাকতে পারলো না । হালকা রেগে বলল,
ঋজুঃ তুমি যাবে? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে । 
শাওনের ভাই হালকা ভয় পেলো । আর কিছু জিজ্ঞাস না করে ক্লাসরুমের ভেতর ঢুকে প্রতীকের ব্যাগের কাছে এলো । ঐ বেঞ্চের কোণায় বসে সেই সময় আজিজুল স্যার এর বাড়ির কাজ করছিলো তুর্য । ওর পাশে তিনটা ব্যাগ । 
শাওনের ভাইঃ আচ্ছা ভাইয়া, প্রতীক ভাইয়ার ব্যাগ কোনটা?
তুর্যঃ (প্রতীকের ব্যাগ দেখিয়ে) এইযে এটা ।
শাওনের ভাই প্রতীকের ব্যাগ খুলে ছবি আকা কাগজগুলো বের করে ব্যাগের চেইনটা আবার আটকে দিলো । তুর্য শাওনের ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো, 
তুর্যঃ তুমি কি করবে এগুলো দিয়ে?
শাওনের ভাইঃ আমাকে প্রতীক ভাইয়া বলেছে এগুলো একটু উনার কাছে নিয়ে যেতে । 
তুর্যঃ কোথায় প্রতীক?
শাওনের ভাইঃ বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ।
তুর্য দরজার দিকে তাকাতেই ঋজু ভাইয়া দেয়ালের আড়ালে চলে গেলো । তুর্য ব্যাপারটাকে খুব একটা পাত্তা দিলো না । ভাবল হয়তো প্রতীকই বলেছে কাগজটা দিতে । তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো । শাওনের ভাই ঋজু ভাইয়ার কাছে যেয়ে কাগজটা দিলো । ঋজু ভাইয়া কাগজটা হাতে নিয়ে একটা দেঁতো হাসি দিলো । 
ঋজুঃ (শাওনের ভাইয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে) অনেক ধন্যবাদ । শোনো । তোমার ভাইয়া না খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে । 
শাওনের ভাইঃ মানে? 
ঋজুঃ তোমার ভাইয়া ৪টা মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়ায় । 
শাওনের ভাইঃ কি! সত্যি?
ঋজুঃ হ্যাঁ । তোমার আম্মুকে বোলো ওর দিকে একটু নজর রাখতে । 
শাওনের ভাই আর কিছু বলল না ক্লাসে চলে গেলো । ঋজু ভাইয়াও শাওনের টিফিন বক্সটা টিফিনসহ দোতলা থেকে ফেলে দিলো । ঋজু ভাইয়ের ফেলে দেয়ার ব্যাপারটা দোতলার কেউ খেয়াল করে নি । ঋজু ভাইয়া ওখান থেকে চলে এলো । 
এদিকে তৃণ আর হাসান স্যার মাসুদ ভাইয়ের রুমে এলো । আজ আর তৃণকে ঢং করে আসতে হল না । হাসান স্যার এর সাথে সাধারণভাবেই এলো । হাসান স্যারকে দেখে মাসুদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম দিয়ে সম্মান জানালো । হাসান স্যারকে বসতে বললেও হাসান স্যার বসলেন না । 
মাসুদ ভাইঃ জী স্যার বলেন কি লাগবে আপনার । 
হাসান স্যারঃ ঋজু নামের একটা ছেলের ছবি দেখতে চাই । তুমি নাকি ওকে দেখিয়েছো । 
তৃণর দিকে ইশারা করে কথাটা বললেন হাসান স্যার ।
মাসুদ ভাইঃ স্যার দেখাতে পারলে ভালো হতো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একটু আগেই এই বছর যারা এসএসসি  পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছে, তাদের সহ তাদের আগের সবার সব রকম তথ্য আমাদের এই কম্পিউটার আর ওয়েবসাইট থেকে ডিলিট করে দেয়া হইসে । 
তৃণঃ (হালকা রেগে দেয়ালে হাত দিয়ে সজোরে আঘাত করে) আমার ভাগ্যটাই খারাপ । 
হাসান স্যারঃ কোন ব্যাকআপ রাখা নেই?
মাসুদ ভাইঃ না স্যার । 
হাসান স্যার কিছু বললেন না । তৃণ মাথায় হাত দিয়ে আফসোস করতে লাগলো । হঠাৎ তৃণ হাসান স্যারকে বলল, 
তৃণঃ একটা উপায় আছে স্যার । 
হাসান স্যারঃ কি উপায়?
তৃণঃ ক্লাসে চলুন স্যার  । 
তৃণ আর হাসান স্যার ক্লাসে গেলেন । তৃণ প্রতীকের ব্যাগ থেকে কাগজগুলো বের করার জন্য ব্যাগ খুলে দেখল কাগজগুলো নেই । প্রতীকও তখন ক্লাসে ছিল না । 
তৃণঃ তুর্য, প্রতীকের ব্যাগে কিছু কাগজ ছিল সেগুলো কোথায় গেছে বলতে পারিস?
তুর্যঃ একটু আগে প্রতীক ঐ কাগজগুলো নিয়ে কোথায় যেন গেলো ।
তৃণঃ কেন? 
তুর্যঃ  জানিনা । কিন্তু ও নিজে আসে নি । একটা পিচ্চিকে পাঠিয়েছে কাগজগুলো আনার জন্য । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা তৃণ, কি করবে তুমি?
তৃণঃ স্যার প্রতীক যে ছবিটা একেছিল ওটার মতো আরও ১৩ টা ছবি আছে ওর কাছে । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা । টিফিন পিরিয়ড শেষ হতে আর মাত্র ৫ মিনিট মতো বাকি, তুমি না হয় প্রতীক এলে আমার কাছে ছবিগুলো নিয়ে এসো । আমার আবার ক্লাসে যেতে হবে । 
তৃণঃ ঠিক আছে স্যার । আসসালামু আলাইকুম । 
হাসান স্যার সালামের জবাব দিয়ে চলে গেলেন । 
তুর্যঃ কি রে? কি হইসে রে?
তৃণঃ তুই যেনে কি করবি  । তোরা তো আমাকে নিয়ে খালি ইয়ার্কিই করিস ।
তুর্যঃ তুইও কি সনিয়ার মতো হইলি নাকি?
তৃণঃ সনিয়া কে? 
তুর্যঃ মনে নাই? ক্লাস টু পর্যন্ত আমাদের স্কুলে ছিল । হালকা একটু ইয়ার্কিও সহ্য করতে পারতো না । 
তৃণঃ হ্যাঁ মনে পড়েছে ।
তুর্যঃ তুইও তো দেখি ওর মতো ইয়ার্কি সহ্য করতে পারতেসিস না । 
তৃণঃ মানে?
তুর্যঃ মানে আমরা ইয়ার্কি করছিলাম তোর সাথে । আমরাও বিশ্বাস করি তুই এরকমটা করিস নি । আর তাছাড়া এটা তো তেমন কোন ব্যাপার না । শুধু সাবিত তোর ওপর রাগ করেছে এই আরকি । 
তৃণঃ ব্যাপার সেটা না । আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে চাই । আর সাবিত আমার সাথে কথা বলছে না । আমি চাই না আমার কোন দোষ ছাড়া আমার কোন বন্ধু আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করুক । 
তুর্যঃ আচ্ছা তুই বলতো পুরো ঘটনা কি । 
তৃণ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পুরো ঘটনা খুলে বলল তুর্যকে । তুর্য পুরো ঘটনা শুনে আর কিছু বলল না । একটু পর বেবি সুইটস চানাচুর নিয়ে এলো প্রতীক । স্বপ্নিল আকাশ নাটক যারা করেছে তাদের দেবার জন্য । সবাই দেয়া শেষ হলে ব্যাগের কাছে এসে দেখে সামনের বেঞ্চে তৃণ হেড ডাউন করে বসে আছে । প্রতীক তৃণর কাঁধে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ডাকল । 
তৃণঃ ও তুই এসেছিস  । স্যার আসে নি এখনও? 
প্রতীকঃ না । রাখিব স্যার এর ক্লাস তো । স্যার মনে হয় ভুলে গেছে । 
তৃণঃ ও । ছবিগুলো দে । 
প্রতীকঃ কিসের ছবি?
তৃণঃ ঋজু ভাইয়ার ছবিগুলো ।
প্রতীকঃ তোক না বলেছি আমার ব্যাগ থেকে নিয়ে নিবি । 
তৃণঃ তোর ব্যাগে তু নাই । তুই নাকি নিয়ে গেসিস?
প্রতীকঃ আমি! আমি কখন নিলাম?
তুর্যঃ তুইই তো একটা পিচ্চিকে পাঠায় দিলি ছবিগুলো নিয়ে  যাবার জন্য । 
প্রতীকঃ না তো! আমি তো ক্যান্টিনে ছিলাম । 
তৃণঃ তাহলে কে নিলো?
প্রতীকঃ এখন আমি কি করে বলব? 
তৃণঃ আমার ভাগ্য খুবই খারাপ । কিছু বলার নাই । 
ওদিকে মাঠে খেলার মাঝে পানি আনার জন্য টিউবওয়েলের দিকে যাচ্ছিলো শাওন আর শাহরিয়ার সোহান  ।
শাওনঃ কালকে যে কি হবে আল্লাহই জানেন । 
শাহরিয়ার সোহানঃ আমার জন্যও ম্যাচটা জেতা একটা বড় চ্যালেঞ্জ । 
শাওনঃ ক্যান?
শাহরিয়ারঃ আমাকে বাদ দিয়ে জামশেদ ভাই যে আরেকজনকে ফ্যালকোন হাউজে নিলেন তার জবাব দিতে হবে । 
শাওনঃ ও । 
ওরা কলেজ বিল্ডিঙের কাছাকাছি আসতেই শাহরিয়ার সোহানের চোখে পড়লো সেই টিফিন বক্সটা যেটা ঋজু ভাই ফেলে দিয়েছিলেন । 
শাহরিয়ার সোহানঃ কিরে, এখানে কে আবার টিফিনসহ বক্স ফেলে দিসে?
শাওনঃ আমার বক্সের মতো লাগতেসে । চলতো কাছে যেয়ে দেখি । 
শাহরিয়ার সোহান আর শাওন বক্সের কাছে এলো । শাওন বক্সটা হাতে নিলো । 
শাওনঃ কিরে, এটা তো আমারই বক্স । ফেলায় দিলো কে? আমার ভাইয়ের আনার কথা ছিলো । 
শাহরিয়ার সোহানঃ হয়তো তোর ভাইই কোনভাবে ফেলে দিসে ।
শাওনঃ না তো । আমার ভাইতো কখনো এরকমটা করে না । 
শাহরিয়ার সোহানঃ তাহলে কে করলো এটা?
শাওন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল । 
শাওনঃ বাদ দে । বক্সটা নিয়ে যাই  । বাসায় যেয়ে জিজ্ঞাস করবনে কি হইসে ।
শাওন আর শাহরিয়ার সোহান পানি আনতে গেলো । 
এদিকে প্রতীক তৃণর সাথে কথা বলছিল ।
প্রতীকঃ কিন্তু কাগজটা নিলো কে? 
তুর্যঃ কে জানে ।
তৃণঃ আমার মনে হয় ঋজু ভাইয়া এই কাজ করেছে । 
প্রতীকঃ কিভাবে বুঝলি?
তৃণঃ ঋজু ভাইয়া হয়তো কোনোভাবে বুঝে গেছে আমরা উনাকে খুজছি । তাই হয়তো উনি এরকমটা করছে । 
তুর্যঃ যে ঋজু ভাইয়ের কথা আমাকে বললি উনি । 
তৃণঃ হুম । উনিই হয়তো অনিককে কোনোভাবে অজ্ঞান করে ওর কাছ থেকে অন্য ছবিটা নিয়েছে । আর কোনোভাবে জেনে তোর কাছ থেকে অন্য ছবিগুলো নিয়েছে । 
প্রতীকঃ লাভ নেই । আমার তো বর্ণনা জানা আছে । আমি আবার উনার ছবি আকবো ।
তৃণঃ তাতেও লাভ নাই । হতে পারে উনি হয়তো আর এই স্কুলে আসবেন না । অথবা অনেকদিন পর যখন সবাই এসব ঘটনা ভুলতে বসবে তখন হয়তো আসবেন । 
প্রতীক আর তুর্য কিছু বলল না । একটু পড়ে রাখিব স্যার আসলেন । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম দিয়ে সম্মান জানালো । 
রাখিব স্যারঃ বাবুরা বেবিরা কেমন আছো তোমরা?
সবাই একসাথেঃ আলহামদুলিল্লাহ আছি স্যার । আপনি কেমন আছেন?
রাখিব স্যারঃ আমিও আছি নানির দোয়ায় ভালো । এবার বস তোমরা । 
ঠিক সেই সময় রাখিব স্যার এর মোবাইলটা বেজে উঠলো । রাখিব বাইরে যেয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে ভেতরে এলেন । 
রাখিব স্যারঃ শেখ সোহান কোথায়?
শেখ সোহান উঠে দাঁড়ালো । 
রাখিব স্যারঃ তুমিই তো একটা ছেলেকে লাথি মেরেছিলে, তাই না?
শেখ সোহানঃ জ...জ...জী স্যার ।
রাখিব স্যারঃ ঐ ছেলে কাল স্কুলে আসবে । আর প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে ফোন করে বলেছেন ঐ ছেলেটা যা করতে বলবে, তোমাকে যেন সেই শাস্তি দেয়া হয় । 
শেখ সোহান কিছু বলল না । চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল । 
রাখিব স্যারঃ বসো । 
শেখ সোহান বসে পড়লো । 
রাখিব স্যারঃ এই তোমরা ছেলেমেয়েরা যে কি হবা কে জানে । তোমাদের বাপ মা এতো আদর  যত্ন করে এতো ভালো পরিবেশে রেখে এতো ভালো স্কুলে পড়াচ্ছেন,তাও তোমরা পড়ালেখা ঠিকমতো করো না । আমাদের ছোটবেলায় এরকম সুযোগ  আমরা কখনই পাইনি । প্রত্যেক দিন একটা স্কুলে পড়তে  যেতাম । স্যাররা কখনো আসতেন, কখনো আসতেন না । মাঝে মাঝে নাক ডেকে ক্লাসের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তেন । ক্লাসরুমে ফ্যান থাকতো না, কোনরকমে গরমে ক্লাস করতাম । বৃষ্টির সময় ক্লাসরুম ডুবে যেত, ওর মধ্যে ক্লাস করতাম । বৃষ্টির সময় বগলে বই খাতা নিয়ে মাথায় ছাতা নিয়ে আধ শরীর ভিজিয়ে কোনোরকমে স্কুলে আসতাম । বাসার কথা না হয় নাইই বললাম । সারাদিন ঠ্যাঙানির ওপর থাকতাম । হরলিক্স কমপ্ল্যান কিছুই ছিল না । দুধ ছিল, তাও কেউ আদর করে এসে খাওয়ায় দিত না । মোবাইল তো আরও না । আর এখন তোমরা তো ফেসবুক কোম্পানিতে  চাকরি করো । দিনে ২৪ ঘণ্টার ২৩ ঘণ্টা ফেসবুকে না বসলে তোমাদের বেতন দেবে না  । ক্লাসে যা আসো, তাও না আসার মতো  । একজন আরেকজনকে দেখি লাভ লেটার দেয়, একজনের লিপস্টিক হারায় যায় । সেদিন তোমাদের জুপিটার শাখার একটা মেয়ের লিপস্টিক হারিয়ে গিয়েছিলো । পড়ে আবার একটা লিপস্টিক পেয়েছে, ওটা ওর লিপস্টিকের মতোই দেখতে, কিন্তু ওর না । যদিও ও সেটা নেয় নি, তবু আমার কথা হল এসব স্কুলে আনার দরকার কি? এখানে পড়ালেখা, হয়, স্টাইল মারা না । আবার তো লাথি মারার ঘটনা আছেই । শুধু শুধু এসব বললাম । বলে কি লাভ । তোমাদের তো আর কানে ঢোকে না কথা । 
বলেই রাখিব স্যার থেমে গিয়ে ডাস্টার দিয়ে হোয়াইট বোর্ড মুছতে লাগলেন । অন্য সবাই স্যার এর কথা শুনে Boar হয়ে গেছে । কারণ আজ প্রথম স্যার এসব কথা বলে নি । এর আগেও  স্যার এসব কথা বলেছেন । পকেট থেকে মার্কারটা বের করে হোয়াইট বোর্ডে “ভেক্টরের উপপাদ্য ৩) লিখে একটা ত্রিভুজের ছবি আকলেন । 
রাখিব স্যারঃ ৮৭ পৃষ্ঠা বের করে এই উপপাদ্য পড় । আমি একটু পরে বুঝিয়ে দিচ্ছি । 
সবাই ৮৭ পৃষ্ঠা বের করে পড়তে লাগলো । বৈশাখীঃ ইশ! এমন একটা লাইফ যদি পেতাম, যেখানে পড়ালেখা বলে কিছুই নেই । নেই কোন বকাঝকা খাওয়ার ঝামেলা, সারাদিন খাব, ঘুরবো আর ঘুমাবো, তাহলে যে কততো মজা হতো । 
সামিয়া রহমানঃ আসলেই । আর এরকম ক্লাসরুমে পড়তে পড়তে বোরিং হয়ে যাওয়াটা ভালো লাগে না । এর চেয়ে বাসায় ঘুমানোই ভালো ।  
বৈশাখীঃ কিছু করার নেই । এই জন্যই তো কে জানি লিখে গেছেন । শিক্ষা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত । 
সামিয়া রহমানঃ আচ্ছা, তুই যে সনিয়া আপুর কথা বললি, ও তো আমাদের ক্লাসের ।
বৈশাখীঃ কয়বার বলবি একই কথা । 
সামিয়া রহমানঃ বলেছিলাম?
বৈশাখীঃ তা নয় তো কি 
সামিয়া রহমানঃ এক নাম্বারের পাগল ছিল । সুন্দর হলে কি হবে । 
বৈশাখীঃ বাদ দে তো । ওর কথা শুনে কি করবো । 
সামিয়া রহমানঃ গতকাল একটা ছেলে আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে । 
বৈশাখীঃ কিভাবে?
সামিয়া রহমানঃ আমি একটা ছেলের সাথে ইয়ার্কি করে বলেছিলাম আমাকে অন্যরকমভাবে প্রপোজ করতো দেখি । 
বৈশাখীঃ তা ছেলেটা কি বলল? 
সামিয়া রহমানঃ ছেলেটা বলল, “একটা কুকুর যেমন একটা কুকুরনীকে ভালবাসে, তেমন ও আমাকে ভালবাসতে চায় ।”
বৈশাখী আর থেমে থাকতে পারলো না । হাহা করে একটা হাসি হেসে দিলো । রাখিব স্যার এর কানে সেই হাসিটা পৌঁছে গেলো । সে সময় রাখিব স্যার পড়া বুঝাচ্ছিলেন । 
রাখিব স্যারঃ কে রে? এরকম ছাগলের মতো হাসছে?
বৈশাখী কোনোরকমে হাসিটা থামাল । 
রাখিব স্যারঃ বেশি হেসো না । পড়ে কিন্তু কাদিতে হবে । 
বলেই রাখিব স্যার আবার বোঝাতে শুরু করলো । একটু পরে বৈশাখী একটু ফিসফিস করে বলল, 
বৈশাখীঃ তা ছেলেটা কে ছিল রে?
সামিয়া রহমানঃ কেউ না । আমি জোকস বানালাম । তা দেখলাম ভালোই হয়েছে । 
বৈশাখীঃ ফালতু হয়েছে ।
বলেই বৈশাখী পড়ায় মন দিলো । সামিয়া রহমান কিছুক্ষণ হালকা রাগ নিয়ে বৈশাখীর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও পড়ায় মন দিলো । 
একটু পর রাখিব স্যার এর ক্লাস শেষ হয়ে যায় । তৃণ আসে সাকিবের কাছে । তুষার চলে যাওয়ায় সাকিব এখন ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করছে । 
তৃণঃ সাকিব আমি বাইরে গেলাম । প্লিজ আমার আজকে খুব দরকার আছে । 
সাকিবঃ কি দরকার? 
তৃণঃ খুব জরুরী একটা দরকার আছে । প্লিজ আমাকে বাইরে যেতে দে । একদম আজকের স্কুল শেষে আমি ক্লাসে আসবো । 
সাকিবঃ দাড়া। আমিও যাবো । 
তৃণঃ আরে, তুই গেলে ক্লাস সামলাবে কে? 
সাকিবঃ যেই সামলাক, আমি যাব । 
তৃণঃ তুই বুঝতে পারছিস না । তুই তো ক্যাপ্টেন । তোকে না পেলে স্যার এর কাছে যদি কোনোভাবে ধরা পড়ে যাস, তাহলে খবর আছে । রিকের কথা  মনে নাই । 
সাকিবঃ আমি তাও যাব । 
তৃণঃ (হালকা বিরক্ত হয়ে) আরে!!! তাহলে ক্লাসটা সামলাবে কে?
হঠাৎ প্রতীক এসে দাঁড়ালো ওদের মাঝে । 
প্রতীকঃ আমি সামলাবো । 
তৃণ আর সাকিব দুজনেই অবাক হয়ে প্রতীকের দিকে তাকালো । 
তৃণঃ তুম......তুই সামলাবি?
প্রতীকঃ হ্যাঁ আমি ।
সাকিবঃ কিভাবে?
প্রতীকঃ যেভাবে প্রত্তেকদিন সামলাই ।  
বলেই প্রতীক সামনে গিয়ে একটু উচু পাটাতনে উঠে দাঁড়ালো । 
প্রতীকঃ বন্ধুরা । কে কে জোকস শুনতে চায় । 
কেউ আগ্রহী, কাউ আগ্রহী না ।
প্রতীকঃ শুরু করছি । একটা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হচ্ছে । একজন বুড়ো, একজন নেতা, একজন তোতলা, একজন হাসিওয়ালা, একজন কান্নাওয়ালা আর একজন হিজরা এসেছে ...............
সাকিব আর তৃণ বুঝলো কিভাবে ক্লাস সামলাতে চলেছে প্রতীক । তাই ওরা বেড়িয়ে গেলো ক্লাস থেকে । 
সাকিবঃ আচ্ছা তুই কি করবি আমাকে বলতো । 
তৃণঃ একজনকে খুঁজবো । 
সাকিবঃ কাকে?
তৃণঃ তোকে বলি নি কিছু?
সাকিবঃ বললেও মনে নেই । 
তৃণ সাকিবকে সবটা বলল । 
সাকিবঃ তার মানে তোর ধারনা ঐ ঋজু ভাইয়া আজকের পর নাও আসতে পারে?
তৃণঃ হ্যাঁ । তাই আমার হাতে আজকেই উনার দেখা পাবার একটা শেষ সুযোগ । 
সাকিবঃ মানে? 
তৃণঃ মানে হল উনি আজকের পর আর নাও আসতে পারেন ।
সাকিবঃ তুই কিভাবে বুঝলি?
তৃণঃ এতদিন ধরে আমি একটা বিষয় নিয়ে ঘুরছি । আর আমি বুঝবো না কখন কি হয়?
ঠিক তখন  একটা ছেলে হঠাৎ তৃণর আর সাকিবের কাছে এলো । ছেলেটাকে দেখে মনে হল ৭-৮ এ পড়ে । 
ছেলেটাঃ আপনারা কি ক্লাস টেন এ পড়েন?
তৃণঃ হ্যাঁ কেন?
ছেলেটাঃ আপনাদের প্রতীক ভাইয়া ২৬ নাম্বার রুমে ডাকছে । 
বলেই কিছু জিজ্ঞাস করবার আগেই ছেলেটা চলে গেলো । 
সাকিবঃ প্রতীক ডাকছে ২৬ নাম্বার রুমে?
তৃণঃ কিন্তু আমরা তো ওকে আমাদের রুমে রেখে আসলাম? 
সাকিব তখন দেখল আজিজুল স্যার টিচার্স রুম থেকে বেরোচ্ছেন । 
সাকিবঃ চল ২৬ নাম্বার রুমে যেয়ে দেখি কাহিনী কি । আজিজুল স্যার ক্লাসের দিকে যাবেন । এখন ক্লাসের দিকে গেলে আর বেরোতে পারব না ।
তৃণ আর সাকিব তাড়াতাড়ি ২৬ নাম্বার রুমে গেলো । ২৬ নাম্বার রুম স্কুলের সবচেয়ে বড় রুম । এই রুমে ঢোকার ৪টা দরজা । এর মধ্যে ৩টা দরজা লাগানো । আজিজুল স্যার যেন দেখতে না পারেন তাই সাকিব আর তৃণ ঢুকেই দরজাটা আটকে দিলো । তারপর সামনে তাকিয়ে দেখলো জানালার কাছে জানালার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে । আর পুরো রুমে কেউ নাই । ওরা ভাবল হয়তো এই ছেলেটাই ডেকে পাঠিয়েছে । কিন্তু এটা যে প্রতীক নয় এটা ওরা একদম নিশ্চিত । 
তৃণঃ তুমি তো প্রতীক না, কে তুমি?
পেছন ফিরে তাকাল ছেলেটা । সেটা আর কেউ না ঋজু ভাই । 
ঋজু ভাইঃ হ্যাঁ । এটা আমি । 
তৃণঃ আচ্ছা আপনার সমস্যা কি? আপনি কেন আমাদের সাথে এমনটা করছেন?
ঋজু ভাইঃ তোমাদের কি সমস্যা ছিল? তোমরা কেন ওর সাথে অমন করতে? 
তৃণঃ কার সাথে?
ঋজু ভাইঃ সেটা তো বলব না । 
তৃণঃ তবে আপনি কেন আমাদের সাথে এমন করছেন? 
ঋজু ভাইঃ এ তো কেবল শুরু । আরও দেখো কি হতে চলেছে । 
তৃণঃ আপনি আমার বন্ধুর বইয়ের ভেতর লাভ লেটার কেন রেখেছিলেন?
ঋজু ভাইঃ শুনতে চাও সব?
তৃণ আর সাকিব কিছু বলল না । কেবল মাথা নাড়ল । 
ঋজু ভাইঃ তবে শোনো । আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি । মেয়েটা এই স্কুলেই পড়ে ।  কিন্তু ওকে কখনো আমি দেখিনি । ও আমাকে বলেছে এই বছরের শেষের দিকে ও আমার সাথে দেখা করবে । কিন্তু ও আমাকে একটা ছেলের খাতায় লাভ লেটার দিতে ঐ ছেলেটার কাছ থেকে ও নিয়ে নেবে । কিন্তু আমি ভুল করে তোমার বন্ধু সাবিতের খাতায় ঐ লাভ লেটারটা দিয়েছিলাম । কিন্তু পড়ে আমাকে মেয়েটা লাভ লেটার দেবার পরেই আমি ওয়াশরুমে যেয়ে ওকে ফোন দেই । সেইদিন ও স্কুলে না আসায়  ছেলেটার ব্যাগে রাখতে বলেছিল । কিন্তু পড়ে ওর কাছ থেকে জানতে পারি আমি ভুল ছেলেকে লাভ লেটারটা দিয়েছি । পড়ে আমি ঐ ক্লাসে যেয়ে সাবিতের ব্যাগ চেক করে যখন লাভ লেটারটা পাই না, তখন্সবার ব্যাগ চেক করা শুরু করি । চেক করার সময় অনেকের নাম আমার জানা হয়ে যায় । পরে ওকে জানালে ও আমাকে বলে তোমাদের অপর প্রতিশোধ নেবার জন্য । 
সাকিবঃ প্রতিশোধ? কিন্তু কিসের প্রতিশোধ?
ঋজু ভাইঃ সেটা বলে বারণ ।
তৃণঃ আপনিই কি সেজন্য মির সামিয়া রহমানের ব্যাগে সিগারেটের প্যাকেট...............
ঋজু ভাইঃ হ্যাঁ । আমিই রেখেছিলাম । 
তৃণঃ কিন্তু এসব করে আপনার কি লাভ হচ্ছে?
ঋজু ভাইঃ ভালোবাসা বাড়ছে । 
তৃণ কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সাকিব কথা বলল । 
সাকিবঃ হাসিব  আর শেখ সোহানের ব্যাপারেও কি আপনি আছেন? 
ঋজু ভাইঃ না । সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না । 
তৃণঃ দেখুন ভালবাসা মানে কিন্তু অন্য কাউকে ক্ষতি করে অর্জন করা নয় । 
ঋজু ভাইঃ শুধু যে ভালবাসার জন্যই আমি এসব করছি তা কিন্তু নয় । নিজের জন্যও করছি । অনেক আগেই করতাম । শুধু সুযোগ খুজতাম এবং সুযোগও পেয়ে গেছি । 
তৃণঃ আচ্ছা, আমরা আপনার কি ক্ষতি করেছি?
ঋজু ভাইঃ তোমরা আমাকে এতিম করেছো, নিঃস্ব করেছো । 
সাকিবঃ মানে? 
ঋজু ভাইঃ কিছুই বলব না । কেবল এটুকুই জানালাম । আরও জানিয়ে রাখি, অনেক ক্ষতি করবো তোমাদের । অনেক ক্ষতি । 
তৃণঃ আপনি কি আমাদের এসব কথা বলতে এসেছেন?
ঋজু ভাইঃ না তো । হালকা রহস্য তোমাদের উন্মোচন করে দিয়ে আরও বিভ্রান্তিতে ফেলতে এসেছি । 
সাকিবঃ মানে? 
ঋজু ভাইঃ আজকের পর থেকে আরও বড় কিছু আছে তোমাদের জন্য । মারব না । কিন্তু মরার মতো কষ্ট দেবো । পারলে আমাকে ধরিয়ে দিয়ো । 
বলেই ২৬ নাম্বার রুমের শেষের দরজার দিকে দৌড় দিলো তৃণ আর সাকিবও দৌড় দিলো ঋজু ভাইয়ের পেছনে । প্রথমে নিচতলা দিয়ে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমের সামনে দিয়ে গেলো  । তৃণ আর সাকিবও যাচ্ছিলো ।  গেইটের কাছে চেয়ারের ওপর বসে ছিল দারোয়ান । ঋজু ভাই তৃণ আর সাকিবের থেকে অনেক সামনে ছিল । দারোয়ান ঋজু ভাইকে থামাতে চাইলেও পারলো না । কারণ ঋজু ভাই দারোয়ান চেয়ার থেকে ওঠার আগেই ঋজু ভাই চলে গিয়েছিলেন গেইটের বাইরে । কিন্তু দারোয়ান যখন খেয়াল করলেন পেছনে আরও দুজন আসছে, তখন তাড়াতাড়ি করে গেইটটা দিলেন আটকে । তৃণ আর সাকিব অনেক চেষ্টা করেও পারলো না দারোয়ানকে বলে বাইরে যেতে । শেষমেষ ওরা আবার ২৬ নাম্বার রুমে চলে গেলো । দুজন দুটো বেঞ্চের ওপর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো । দুজনেই ঘেমে গেছে , হাত দিয়ে নিজেদের মুখের ঘাম মুছছে । 
তৃণঃ সত্যিই । ব্যাপারটা আমাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে গেলো এবার । 
সাকিবঃ কিন্তু এসব করে উনার আর উনার গার্লফ্রেন্ডের কি লাভ হচ্ছে?
তৃণঃ সেটা তো আমি নিজেও বুঝতে পারছি না । 
সাকিবঃ এক কাজ কর সব কথা হাসান স্যারকে বল ।
তৃণঃ লাভ নেই । 
সাকিবঃ কেন?
তৃণঃ স্যারকে বললেও আমি না কিছু প্রমান করতে পারবো, না উনাকে ধরিয়ে দিতে পারবো । 
সাকিবঃ তাহলে এখন কি করবি?
তৃণঃ আবার কোন একদিন উনার দেখা পাবার অপেক্ষা । 
সাকিবঃ আর ততদিন?
তৃণঃ ততদিন সাবিতের কাছে আমি দোষী । 
সাকিব আর কিছু বলল না । ঐ পিরিয়ড শেষ হলে তৃণ আর সাকিব ক্লাসে চলে এলো । সাকিব সেই পিরিয়ড সাবিতের পাশে বসেছিলো । এই ক্লাস ছিল আল আমিন  আমিন স্যার এর ধর্ম ক্লাস । পুরোটা ক্লাস তৃণর এক রকম অমনোযোগিতার ভেতর কাটল । মনের ভেতর কেমন যেন লাগছে ওর । খালি ভাবছে আদৌ কোনোদিন ঐ রিজু ভাইয়াকে ধরতে পারা যাবে কি না । কিংবা ধরা গেলেও সবকিছু প্রমান করতে পারবে কি না । আবার কি বিপদ সামনে এই ব্যাচের ওপর আসতে চলেছে তাও সে জানেনা । এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ক্লাসটা শেষ হয়ে গেছে নিজেও খেয়াল করেনি । ক্লাস শেষ হলে আল আমিন স্যার চলে যান । ক্লাসে শেষ দিনের প্র্যাকটিস সেরে ক্লাসে আসে ফুটবল প্লেয়াররা । সাবিত হঠাৎ তৃণর পাশে এসে বসে । তৃণ সবিতকে কিছু বলল না । কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাবিত নিজেই মুখ খুলল । 
সাবিতঃ কি খবর?
তৃণ কিছু বলল না । ওর কাছে সব কিছু স্বপ্নের মতো  মনে হল । 
সাবিতঃ তুই ঠিকই বলেছিলি । একটা পাপড়ি ছিঁড়ে গেলে ফুলটা খুব কষ্ট পায় । 
তৃণ এবার অবাক হয়ে সাবিতের দিকে তাকাল । সাবিতও তৃণর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো, 
সাবিতঃ আমিও কষ্ট পাচ্ছি । কারণ আমার এতোগুলো বন্ধুর মধ্যে আমি ভেবেছিলাম একজনকে ছাড়া অনায়াসে থাকতে পারব । 
তৃণ একটু হেসে বলল শেষমেষ বুঝতে পারলি । 
সাবিতঃ বোঝার কি আছে রে । এতদিন গালি দেয়ার মতো কাউরে পাইতেসিলাম না । 
তৃণঃ দে গালি । এতদিনও তো দিচ্ছিলি । 
সাবিতঃ বিশ্বাস কর । আমি নিজেও ভাবতাম তুই এমন করতেই পারিস না । কিন্তু তাও কেমন মনে হতো । তুই যখন নিজে থেকে সব স্বীকার করে নিলি, তখন আমি ভেবেছিলাম সত্যিই বোধ হয় তুই এমনটা করসিস । কিন্তু তাও ভাবলাম ইয়ার্কিই তো । কিন্তু আবার কেমন লাগত । তুই যদি আমাকে সত্যিটা বলতি, তাহলে আমি বিশ্বাস করতাম । কিন্তু তুই না বলে নেকামি করলি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে তারপর সবার সামনে নির্দোষ হবি । আজকে সাকিব যদি না বলতো তাহলে আমি কিছুই জানতাম না । 
তৃণঃ (ভ্রু কুঁচকে) কি! সাকিব তোকে সব বলসে?
সাবিতঃ হুম । কেন?
তৃণঃ ওরে আমার বলাই ভুল হইসিল । দাড়া আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন । 
বলে যেইই তৃণ উঠতে যাবে, অমনি সাবিত তৃণর হাত ধরে জোর করে বসিয়ে বলল, 
সাবিতঃ বাদ দে না । ভালোই তো করসে । তুই এখন তোর আর টিচারদের কাছে দোষী । আর আমরা সবাই ঐ ঋজু ভাইয়ের অত্যাচারের ভুক্তভোগী । তাই আমাদের সবাইকেই এই বিপদের মোকাবিলা করতে হবে । 
তৃণ চারপাশে তাকিয়ে দেখল ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে তৃণর দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে । মানে সবাইকে কোনোভাবে সাকিব জানিয়ে দিয়েছে । সামনে প্রতীক যেয়ে চিৎকার করে বলল, 
প্রতীকঃ সবাই একসাথে বলো ।
এরপর সবাই একসাথে গান ধরলো ।
“চাইলেই দিয়ে দেবো কলিজার হাফ, বন্ধুর বেলাতেই সব দোষ মাফ।
মাস্তিতে, ফুর্তিতে, গলা ছেড়ে গাই,
বন্ধুরা থাকলে জিতবে সবাই............” 
হঠাৎ গানের মাঝে জসিম স্যার এসে হাজির । ক্লাসে ঢুকতে ঢুকতে স্যার বললেন, 
জসিম স্যারঃ হইসে তোমাদের গান গাওয়া?
স্যারকে ঢুকতে দেখে যে যার সিটে যেয়ে দাঁড়িয়ে স্যারকে সম্মান জানালো । 
জসিম স্যারঃ (ডেস্কের ওপর বই রাখতে রাখতে) এবার বস সবাই । 
সবাই বসলো । 
জসিম স্যারঃ গতকাল যে পড়াটা দিয়েছিলাম কে কে করেছো?
কেউ দাঁড়ালো না । 
জসিম স্যার কিছুক্ষণ চারপাশে তাকিয়ে সবার চেহারা একবার করে দেখলেন । 
জসিম স্যারঃ আচ্ছা । বুঝিসি তোমরা কেউ দাড়াবা না । তাইলে এবার দাঁড়াও কে কে পড়নি । 
প্রথমে অর্ধেকের বেশি ছেলেমেয়ে দাঁড়ালো । ওদের দেখে কিছু ভালো শিক্ষার্থী ছাড়া বাকিরা দাঁড়ালো । একটু পর ওদের দেখে ভালোরাও দাঁড়িয়ে গেলো । 
জসিম স্যার সবার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন ।
জসিম স্যারঃ বসো । 
সবাই বসে পড়লো । জসিম স্যার এপ্রনের পকেট থেকে মার্কারটা বের করে বোর্ডে লিখলেন, “অ্যালকিন”  তারপর ডেস্কের পাশে সামনে দাঁড়িয়ে বইটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখতে লাগলেন । তারপর সবার দিকে তাকিয়ে ইয়ার্কি করে বললেন, 
জসিম স্যারঃ তোমাদের কলিজাটা মনে হয় বেশি বড় হয়ে গেসে, যার জন্য হাফ দিলেও প্রবলেম হয় না । 
সবাই স্যার এর কথা বুঝে হেসে দিলো । এটা ছিল ওইদিনের শেষ ক্লাস । বেশ ভালভাবেই শেষ ক্লাসটা শেষ হল । ৭ মার্চ ২০১৮ । সকালেই সব ফুটবল প্লেয়াররা এসে অপেক্ষাগারে হাসান স্যার এর প্রাইভেটের জন্য এসে হাজির । আজ ঈগল আর ফ্যালকন হাউজের ম্যাচ হবে টিফিন পিরিয়ড থেকে শুরু হবে । ঈগল হাউজের অনিক আর শাওন খুবই এক্সাইটেড । ধীরে ধীরে অন্যান্যরাও আসা শুরু করলো । একটু পড়ে হাসান স্যার এলে প্রতিদিনের সবাই দিলো দৌড় । হাসান স্যার ক্লাসে এসে বোর্ডে লেখলেন “অ্যালকেন, অ্যালকিন, অ্যালকাইন।” ঠিক সেই সময় বুক ভরা ভয় নিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো বাপ্পি । যেইই হাসান স্যার এর প্রাইভেটে দেরি করে আসতো, তারই বুকের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়ে যেত । না জানি স্যার কি বলবে । অনেক কষ্টে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাপ্পি মুখ খুলল, 
বাপ্পিঃ স্যার, আসবো?
হাসান স্যার বাপ্পির দিকে না তাকিয়ে কিছুক্ষণ লিখতে লাগলেন । লেখা শেষ হয়ে গেলে স্যার মার্কারটা লাগিয়ে ডেস্কের সামনে দাঁড়ালেন । এরপর বাপ্পির দিকে তাকালেন । 
হাসান স্যারঃ কয়টা বাজে?
বাপ্পি কিছু বলে না । মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে ।
হাসান স্যারঃ আমি নিজেই আজকে লেট করে এসেছি । আর তোমরা যদি আরও লেট করো তাহলে কি বলব আমি?
বাপ্পি তাও কিছু বলল না । কিছুক্ষণ বাপ্পির দিকে তাকিয়ে থাকলেন হাসান স্যার । 
হাসান স্যারঃ ঢোকো । 
বাপ্পি ভেতরে ঢুকল । লেট করে আসায় আর দেয়ালের পাশে বসতে পারলো না বাপ্পি । অন্য পাশের কোণায় বসলো বাপ্পি । 
হাসান স্যারঃ তোমাদের গত তিন দিন ধরে একই জিনিস মুখস্থ করাচ্ছি । শহরে এসব শেষ করে আরও অনেক দূরে চলে গেছি । আর তোমাদের পড়াচ্ছি জান প্রাণ দিয়ে এখনও । দেখি কি মুখস্থ করসো তোমরা । সাকিব দাঁড়াও ।
সাকিব দাঁড়ালো । 
হাসান স্যারঃ মিথেন থেকে বলা শুরু করো । 
সাকিবঃ মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন, পেনটেন, হেক্সেন, হেপটেন, অকটেন, ননেন, ডেকেন, আনডেকেন, ডোডেকেন, ট্রাইডেকেন, টেটরাডেকেন, পেনটাডেকেন, হেক্সাডেকেন, হেপটাডেকেন, অকটাডেকেন, ননাডেকেন, আইকোসেন ।
হাসান স্যারঃ ঠিক আছে বসো । বাপ্পি দাঁড়াও । 
বাপ্পি উঠে দাঁড়ালো । 
হাসান স্যারঃ লেট তো করে এসেছো এবার দেখি পড়া কেমন পারো । বলো ।
বাপ্পিঃ কি বলব স্যার? 
হাসান স্যারঃ (ডেস্ক থেকে বাপ্পির দিকে এগোতে এগোতে) আরে! সাকিব যা বলল সেসব।
বাপ্পিঃ মিথেন, ইথেন, অকটেন............
আবার বেধে গেলো বাপ্পি । এবার হাসান স্যার বাপ্পির পিঠে হাত দিয়ে মারলেন । এতো জোরে মারলেন যে পুরো ক্লাসের সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলো । পুরো ক্লাস শব্দে কেঁপে উঠলো । হাসান স্যারও চরম রেগে গেলেন । 
হাসান স্যারঃ (রেগে রেগে) কি করো তোমরা? বাসায় কি একটুও পড়তে ইচ্ছা করে না? সামান্য একটা জিনিস তিন দিন ধরে পড়াচ্ছি কিন্তু তাও বলতে পারো না? তোমরা কি দিয়ে তৈরি? ক্লাস টু এর বাচ্চাকেও এগুলো বলতে বললে তো সেও বলতে পারবে । তোমরা খালি পারো ইয়ার্কি করতে । পড়াশুনা কিচ্ছু করতে পারো না । 
অনেকক্ষণ ধরে পুরো ক্লাস চুপ । হাসান স্যার রাগি মেজাজে কেবল শিট এর দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে লাগলেন । একটু পর পড়ানো শুরু করলেন । 
পড়ানো শেষ হলে প্রতীক দৌড় দিলো অ্যাসেম্বলির লিড দেবার জন্য । শহরের শিক্ষার্থীরা ভেতরে এলো । বাপ্পি তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল । ওকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ওর কাছে ওয়াসি । 
ওয়াসিঃ কিরে, এমনে বসে আসিস ক্যান? যাবি না অ্যাসেম্বলিতে?
বাপ্পিঃ হ রে দোস্ত । পানি আছে তোর কাছে? আমি পানি আনতে ভুলে গেছি । 
ওয়াসিঃ হ্যাঁ আছে । 
তারপর কাঁধে থাকা ব্যাগ থেকে পানির পটটা দিলো বাপ্পির হাতে । বাপ্পি পানি খেলো । এরপর সবাই অ্যাসেম্বলিতে চলে গেলো । বাপ্পি তখন আরেফিন অনিকের সামনে দাঁড়িয়ে । আরেফিন অনিকের চুল বড় । তাই বারবার হাত দিয়ে চুল নামিয়ে ছোট দেখানোর চেষ্টা করছে । ওকে চুল নামাতে দেখে কল্যান স্যার এলেন ওর কাছে । 
কল্যান স্যারঃ কিরে? চুল এমন করে বারবার নামায় দিতেসো ক্যান?
আরেফিন অনিকঃ (একা ইয়ার্কিসূচক হাসি দিয়ে) এমনি স্যার । আজকে ফুটবল ম্যাচ তো । হেড শট দিলে মাথায় যদি ব্যাথা লাগে, তাই চুল বড় রাখসি । 
কল্যান স্যারঃ সমস্যা নাই । আমার হাতও ঐ কাজটা খুব সুন্দর করতে পারে । কাল যেন ছোট চুল দেখি । 
বলেই কল্যান স্যার চলে গেলেন সারির পেছনে । অ্যাসেম্বলি শুরু হল । প্রথমে কুরআন তেলাওয়াত, তারপর শপথ গ্রহন, তারপর জাতীয় সংগীত পাঠ । সব শেষে যখন রাখিব স্যার কিছু মূল্যবান বক্তব্য দিতে এলেন, তখন হঠাৎ বাপ্পি অজ্ঞান হয়ে গেলো । পাশ আনিকের এক্তুব দুরেই পেছনের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন আলআমিন স্যার । স্যারকে ডাকল আরেফিন অনিক ।
আরেফিন অনিকঃ স্যার, বাপ্পি অজ্ঞান হুয়ে গেছে । 
আল আমিন স্যারঃ কল্যান স্যার একটু আসেন তো । ছেলেটাকে নিয়ে একটু ক্লাসরুমে নিয়ে যাই । 
কাল্যান স্যার আর আল আমিন স্যার এসে বাপ্পিকে নিয়ে সামনের ক্লাসরুমে নিয়ে গেলেন । এদিকে আরেফিন অনিক ওর পেছনে থাকা আরিককে বলল,
আরেফিন অনিকঃ হাসান স্যার মারসিলো এর জন্য হইসে না কি?
আরিকঃ যাই হোক, কিন্তু হাসান স্যার ওকে যে মারসে এর যুক্তি আছে । স্যার এতো করে মুখস্থ করাইসেন তবুও যদি না পারে, কিছু বলার নাই । 
আরেফিন অনিকঃ আসলেই । আমার নিজেরও রাগ ধরতেসিলো । আর তেমন কঠিন কিছুও তো ছিল না । 
আরিকঃ হুম । 
একটু পরে অ্যাসেম্বলি শেষ হয়ে গেলো । সবাই ক্লাসে ফিরে এলেও শেখ সোহান চলে গেলো রাখিব স্যার এর রুমে । দরজার কাছে আসতেই দেখলো একটা চেয়ারের ওপর বসে আছে হাসিব । মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো । চেহারাটা দেখে খুব একটা দুর্বল মনে না হলেও বোঝাই যাচ্ছে অসুস্থ । ওর সামনে বসে বিভিন্ন কথা বলছে রাখিব স্যার । দরজার কাছে এলো শেখ সোহান ।
শেখ সোহানঃ আসবো স্যার?
রাখিব স্যারঃ হ্যাঁ আসো । 
শেখ সোহান ভেতরে ঢুকল মাথা নিচু করে । হাসিবের দিকে না তাকিয়েই রাখিব স্যার এর পাশে দাঁড়ালো । রাখিব স্যার ওকে একটা চেয়ারে বসতে বললেন । কিন্তু হাসিব শেখ সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে । যেন শেখ সোহানের কাছে ও নিজে দোষী । 
রাখিব স্যারঃ হ্যাঁ বাবা, তুমি বলো । ওকে আমরা কি শাস্তি দেবো । 
হাসিব কিছু বলে না । শেখ সোহানের দিকে তাকিয়ে থাকে । শেখ সোহান মাথা নিচু করে বসে থাকে । কিছু বলে না । 
রাখিব স্যারঃ বলো বাবা । আমাদের প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলেছেন তুমি যা বলবে ওকে তাই শাস্তি দেয়া হবে । 
হাসিবঃ ওকে কেন শাস্তি দেবেন আপনারা, ওর তো কোনো দোষ নেই । 
শেখ সোহান অবাক হয়ে হাসিবের দিকে তাকাল । অন্যান্যরাও হাসিবের দিকে তাকালো । 
রাখিব স্যারঃ মানে? 
হাসিবঃ আসলে স্যার, ওইদিন আমাকে ও যখন বলে একটু দূরে যেয়ে দাঁড়াতে, তখন আমি দূরে গিয়েছিলাম ঠিকই । কিন্তু আমি মনে মনে একটা দুষ্টুমি করার চিন্তা করি । সেটা হল আমি চেয়েছিলাম ও যখন আমাকে মারতে যাবে, তখন আমি সামনের দিকে হেলে যাব । যখন আমার গায়ে লাগবে, তখন একটু ইয়ার্কি করবো । কিন্তু ব্যাপারটা যে এতটাই সিরিয়াস হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি । ও যে এতো জোরে মারবে আমি ভাবতেও পারিনি । যা হবার তাই হল । আমার মাথায় লেগে আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই । 
কিছুক্ষণ রাখিব স্যার চুপ করে একবার হাসিবের দিকে, একবার শেখ সোহানের দিকে তাকাল । 
রাখিব স্যারঃ (কেশে উঠে) যাই হোক । ওরও তো দোষ ছিল । ও কেন এরকম করবে?
হাসিবঃ দোষ তো আমারও ছিল স্যার । আমি কেন ওকে আটকাই নি । 
রাখিব স্যারঃ না, সেটা তো প্রধান দোষ ছিল না ।
হাসিবঃ তাহলে আপনারা তাজকে এনেছিলেন কেন?
রাখিব স্যার কিছু বললেন না । 
হাসিবঃ দেখুন স্যার, আপনিই বললেন আমি যাই বলব তাইই হবে । আমি বললাম ওকে কিছুই না করতে । তাওও আপনারা কেন আমাকে জোর করছেন?
রাখিব স্যারঃ (কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে) ঠিক আছে । তুমি যা খুশি তাইই করো । (শেখ সোহানকে) এই, তুমি যাও ক্লাসে ।
হাসিবঃ স্যার আমরা দুজন একসাথে যাই । 
রাখিব স্যার কিছু বললেন না । হাসিব আর শেখ সোহান ক্লাসরুমের দিকে এগোলো । 
শেখ সোহানঃ তুই আমার ওপর রাগ করসিস?
হাসিবঃ না রে । দোষটা তো আসলে আমারই ছিল । 
শেখ সোহানঃ ও । 
হাসিবঃ তোর কি বক্সার হওয়ার ইচ্ছা?
শেখ সোহানঃ ইচ্ছা আছে বলে তো আর লাভ নেই । ইচ্ছা করলেও আমার বাবা মা আমাকে তা হতে দেবেন না । 
হাসিবঃ মানুষ চাইলে সব করতে পারে । 
শেখ সোহান কিছু বলল না । ওর নিজেকে কেমন মনে করতে লাগলো । 
হাসিবঃ জানিস, আমাদের এই ব্যাচের সবাই মিলে অ্যাভেঞ্জারসএর মতো । 
শেখ সোহানঃ মানে?
হাসিবঃ এই যেমন ধর, পৃথিবীর যতো ক্রীড়া আর সাংস্কৃতিক বিষয় আছে, সেসবের কেউ না কেউ আমাদের এই ব্যাচে আছে । 
শেখ সোহানঃ ঠিক বুঝলাম না । 
হাসিবঃ এই যেমন ক্রিকেটার, ফুটবলার, ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার, নর্তকী, গায়ক, নায়ক, ডিরেক্টর, লেখক, ডিবেটর, সাইন্টিস্ট, বক্সিং প্লেয়ার প্রায় সবই । 
শেখ সোহান কেবল মাথা নাড়ল । কিছু বলল না । 
ক্লাসে পৌঁছতেই সব হাসিবের খোঁজ খবর নেয়া শুরু । ক্লাসে তখনও স্যার আসেননি । সবার প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে হাসিব নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়লো । খানিক বাদে হাসান স্যার এলেন । সবাই প্রতিদিনের মতো দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে সম্মান দিলো, স্যারও সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন । ডেস্কের ওপর বই আর নাম ডাকার খাতার রাখার পর স্যার হাসিবের কাছে গেলেন । 
হাসান স্যারঃ কি ব্যাপার হাসিব, কেমন আছো এখন? 
হাসিবঃ আছি স্যার । আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । 
হাসান স্যারঃ কার সাথে এসেছ?
হাসিবঃ বাবার সাথে ।
হাসান স্যারঃ বেড রেস্ট নিতে আরও কয়েকদিন ।
হাসিবঃ না স্যার । এখন আমি প্রায় ভালো আছি । 
হাসান স্যারঃ তাও । এখনও পুরপুরি সুস্থও তো হও নি । 
সাকিবঃ স্যার জানেন বাপ্পি আজকে জ্ঞান হারিয়ে অ্যাসেম্বলির সময় পড়ে গিয়েছিলো । 
হাসান স্যারঃ কি?
আরেফিন অনিকঃ জী স্যার । আমার সামনেই ছিল বাপ্পি । 
হাসান স্যারঃ মারলে কি কেউ অজ্ঞান হয়? আর তাছাড়া তোমরাই বলো, এতদিন ধরে একটা জিনিস মুখস্থ করাচ্ছিলাম, তাও যদি বলতে না পারে তাহলে কারই বা রাগটা ধরবে না? সাকিব কি সুন্দর বলে দিলো । অথচ ও পারলো না । তার ওপর আবার লেট করে এসেছে । তাহলে রাগ না ধরে যায় কোথায়? আমি তোমাদের মারতে চাই না । কিন্তু তোমরা আমাকে মারতে বাধ্য করো । 
আর কিছু বলেলেন না হাসান স্যার । সামনে যেয়ে ফিসিক্স পড়াতে লাগলেন ।
হাসান স্যার এর ক্লাস শেষ হল । এরপর ছিল আশরাফুল স্যার এর ক্লাস । বায়োলজি । সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলো, স্যারও জবাব দিয়ে বসতে বললেন । 
আশরাফুল স্যারঃ এই যে ব্যান্ডেজ মাথায়, কি অবস্থা তোমার এখন?
হাসিবঃ (দাঁড়িয়ে) জী স্যার, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । 
আশরাফুল স্যারঃ আচ্ছা বসো (হাসিব বসলো) তোমাদের সবাইকে জানিয়ে দেই । আসলে একজনকে সবার কাছে দোষী রাখা ভালো না । ভালো না বলতে উচিত না । যে ছেলেটা ওকে  মেরেছিলে সে একটু দাঁড়াও তো । 
শেখ সোহান দাঁড়ালো । 
আশরাফুল স্যারঃ এই ছেলেটাকে তোমরা সবাই মনে করছ খুব বড় দোষ করে ফেলেছে । হ্যাঁ দোষ সে করেছে কিন্তু  খুব বড় কোন দোষ না । আসলে সেদিন হয়েছিলো কি...............
আশরাফুল স্যার পুরো ঘটনা সবাইকে জানালেন । সবাই বুঝতে পারলো পুরো ব্যাপারটা । 
আশরাফুল স্যারঃ যা হোক । তোমরা সবাই সবসময় ইয়ার্কি করো না । আর ইয়ার্কির একটা লিমিট রেখো । এমন ইয়ার্কি কোরো না যেটা কারো জন্য ঝুঁকিপূর্ণ  । যা হোক এখন আসল কোথায় আসি । গতকাল কিডনির কাজ পড়তে বলসিলাম । কে কে পারবা? 
একজনও উঠে দাঁড়ালো । না । 
আশরাফুল স্যারঃ ও ভালো কথা । সকালে জসিম স্যার তোমাদের গল্প বলছিলেন । তোমরা নাকি কি কলিজার হাফ  গান গাচ্ছিলে, তারপর পড়া ধরার সময় সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলে সে ব্যাপারে । 
সবাই একটু হেসে দিলো  । চিকন আশা মাঝ থেকে হঠাৎ বলে উঠলো, 
চিকন আশাঃ স্যার এটা আপনিও কি দেখতে চান?
আশরাফুল স্যারঃ না বাবা । ওটা আমার দেখার দরকার নাই । (ইয়ার্কি  করে) আমি এমনভাবে ধরবো, কলিজা চুপসে যাবে । দেয়তো দুরের কথা । আচ্ছা । যারা পড়া পারবা না, আমি তাদের পরীক্ষায় ৫ মার্ক কম দেবো । খাতায় রোলটা নিয়ে যাবো । এবার দাঁড়াও । 
এবারও সবাই দাঁড়ালো কেবল সেকেন্ড বেঞ্চে আরিক বসে আছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে । 
আশরাফুল স্যারঃ কিরে! সত্যিই তো দেখি তোমাদের কলিজা খুব বড়! (আরিকের দিকে নজর পড়তেই) যাক, একজনেকে পাইসি যে পড়া পারবে । 
আরিক সেই সময় উঠে দাঁড়ালো । 
আশরাফুল স্যারঃ কি, পড়া বলবেন নাকি?
আরিকঃ না স্যার । পারব না । 
আশরাফুল স্যারঃ (ইয়ার্কি করে) সাইজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কলিজা ছোট । তাই মনে হয় ভয় পাচ্ছিল । দিতে পারবে নাকি পারবে না । 
সবাই আশরাফুল স্যার এর কথা শুনে হেসে দিলো । আশরাফুল স্যার সবাইকে বসতে বলে ব্ল্যাক মার্কার নিয়ে হোয়াইট বোর্ডে যেইই লিখতে যাবেন, অমনি দরজার কাছে এসে পরোখ ভাই বললেন, 
পরোখ ভাইঃ স্যার আসবো? 
আশরাফুল স্যারঃ হ্যাঁ কলিজা আসো...........মানে......কে এসেছো?
সবাই হেসে দিলো । পরোখ ভাইও না বুঝেই মুচকি হেসে দিলেন । 
আশরাফুল স্যারঃ কি চাই?
পরোখ ভাইঃ স্যার ঐ ফুটবল প্লেয়ারদের নিতে এসেছি । ওদের আজকে প্রথম ম্যাচ । 
আশরাফুল স্যারঃ তুমি কোন হাউজ?
পরোখ ভাইঃ স্যার রবিন হাউজের ক্যাপ্টেন । 
আশরাফুল স্যারঃ আজকে তো রবিনের খেলা নাই ।
পরোখ ভাইঃ না থাকলেও সব খেলোয়াড়দের থাকতে বলেছেন মাঠে । 
আশরাফুল স্যারঃ ঠিক আছে যাও । 
সব প্লেয়াররা চলে গেলো রেডি হতে । এরপর সাইফুল স্যার এর গনিত ক্লাস । কিন্তু স্যার কুর্মিটোলা শাহিনে আন্ত শাহিন প্রতিযোগিতার জন্য যাওয়ায় গ্যাপ ক্লাসে এসেছেন জসিম স্যার । সবাই দাঁড়িয়ে সালাম জানালো, স্যারও সালামেরর জবাব দিয়ে বসতে বললেন । 
জসিম স্যারঃ কি খবর তোমরা আছো কেমন?
সবাই একসাথেঃ পড়া না করলে থাকি যেমন । 
জসিমঃ রোজ রোজ পড়া কেন করে আসো না?
সবাই একসাথেঃ স্যার আজকে ম্যাচ আছে না?
জসিম স্যারঃ আছে  তো সেটাতে তোমাদের কি?
সবাই একসাথেঃ ওর জন্য পড়াটা দিসি ফাঁকি । 
ঠিক সেই সময় মাঠ থেকে মাইকের আওয়াজ এলো । সবাইকে মাঠে ডাকা হচ্ছে খেলা দেখার জন্য । 
জসিম স্যারঃ ধুর । এখনই ডাকতেসে । যাও তোমরা । খেলা দেখতে ।
সবাই মাঠে চলে গেলো খেলা দেখতে । জসিম স্যারও গেলেন । ক্লাসে একটু কাজের জন্য রয়ে গেলো সামি আর এশরার । এশরার সামি এশরারের কাছে রুবিস্কিউব শিখছে । এশরারের ব্যাগ থেকে রুবিস্কিউব বের করতে গিয়ে দেখল একটা কাগজ ভাঁজ করে রাখা । খুলে দেখল একটা লাভ লেটার । 
সামিঃ কিরে এশরার? তোর ব্যাগে এটা কার লাভ লেটার?
এশরারঃ বলিস কি তুই? দেখি দেখি কই? 
সামিঃ না না! আগেই দেবনা, শুনি আগে আছে কি ছলনা ।
এশরারঃ ছলনা করছিনা ভাইয়া, আমার মতো ছেলেরে পছন্দ করবে কোন মাইয়া?
সামিঃ সেটাই তো কথা । তোর তো একখানা ছাগলের মাথা । 
ঠিক সেই সময় বাইরে থেকে ক্লাসরুমে এলেন আসিফ স্যার । 
আসিফ স্যারঃ তোমরা কেন ভেতরে, সবাই যখন বাহিরে?
সামিঃ এইতো স্যার যাচ্ছি । 
এশরারঃ আমি টিফিন খাচ্ছি । 
আসিফঃ টিফিন বাদ দাও, খেলা দেখতে যাও । 
এশরারঃ এইতো স্যার যাচ্ছি, (সামিকে) তোকে পরে দেখছি । 
সামি আর এশরার চলে গেলো । 
মাঠে খেলা এখনও শুরু হয় নি । শুধু মাঠে নেমেছে ঈগল আর ফ্যালকন । ফ্যালকন হাউজে ক্লাস টেনের কেউ নেই । ঈগল হাউজে শুধু শাওন আর আরেফিন অনিক আছে । দুজনেই মাঠে নেমেছে । এদিকে মাঠের সামনে টাঙানো ছাউনির নিচে সব স্টুডেন্টরা কেউ বসে কেউবা দাঁড়িয়ে খেলাটা উপভোগ করছে । 
আরিফঃ আজকে যে কি হবে । 
আরিকঃ তো তাতে কি হবে? 
আরিফঃ তাও তো এক কথা । 
আরিকঃ তুই রবিন হাউজ গাধা । 
খেলার ভাষ্যকার অপু স্যার আর তাসলিমা মেডাম । অপু স্যার ইংরেজিতে আর তাসলিমা মেডাম বাংলায় কমেন্ট করছেন । এদিকে মেয়েদের এপাশে কানিজ, তাহিয়া আর নাজিফা । ওদের পড়তে দেখে ফারিহা বিনতে আলী এলো । 
ফারিহা বিনতে আলীঃ (ইয়ার্কি করে) কি ব্রিলিয়ান্ট রে বাবা । 
কানিজঃ মাইর খাবি না থাবা?
নাজিফাঃ তোরা এখন থামতো ।
তাহিয়াঃ (একটু দূরে চাদের আলো ঐশীর হাতে থাকা) একটা বইয়ের দিকে ইশারা করে ফারিহা, ঐ বইটা একটু আনতো । 
এপাশে রাতুল, তৃণ, সাবিত, ওয়াসি, তুর্য, নওশাদ আর মহিদুল দাঁড়িয়ে আছে । 
তৃণঃ বাড়ির কাজ করসিস রাতুল?
রাতুলঃ খাতা নিসে মহিদুল । 
মহিদুলঃ আমি দিয়া দিসি । 
রাতুলঃ তাইলে নিসে ওয়াসি । 
ওয়াসিঃ ভাই আমার করা বাকি আছে । 
তৃণঃ হইলে দিস আমার কাছে । 
নওশাদঃ ভাই আমারেও দিস  ।
তৃণঃ আচ্ছা, আমার হলে নিস । 
ওদিকে আসিফ, যুবায়ের, ফারিহা ঐশী আর ফাইহি কথা বলছে । 
ফারিহা ঐশীঃ দোস্ত, জিতবে যে কোন টিম! 
ফাইহিঃ খাবি কেউ পরোটা ডিম?
আসিফঃ কি? তুই টিফিন আনসোস? 
ফাইহিঃ এতক্ষন পরে দেখসোস? 
যুবায়েরঃ ওর তো কাজের মধ্যে দুই, শুধু খাই আর শুই । 
এপাশে সাকিব আর রাহাত গল্প করছে । 
সাকিবঃ প্রতীক কই গেসে?
রাহাতঃ মাঠের ওইপাশে । 
সাকিবঃ কি করতাসে ও?
রাহাতঃ ম্যাচটা করবে ভিডিও । 
সাকিবঃ এ দিয়ে কি করবে? 
রাহাতঃ একটা গল্প নাকি লিখবে । 
সাকিবঃ গল্পের দিসে কি নাম?
রাহাতঃ আমরা শাহিনে ছিলাম ।
সাকিবঃ ও যে কি বলে না । সামনে ওর পরীক্ষা । আচ্ছা, ভিডিওর সাথে গল্প লেখার সম্পর্ক কি?
রাহাতঃ ঐ ডা আন্দাজে কইসি আর কি । গল্প লিখবে, কিন্তু ভিডিও করতেসে ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানোর জন্য । 
সাকিবঃ ভালো তো । তা তুই কি করিস?
রাহাতঃ তুই যা করিস  তাই । 
সাকিবঃ আমি লাইন মারতেসি । তার মানে রাহাত তুইও শেষ পর্যন্ত লাইন মারা শুরু করলি?
রাহাতঃ ক্যান? তোরাও যেমন ইয়ার্কি মারা লাইন মারিস, আমিও তেমন ইয়ার্কি মারা লাইন মারতেসি আরকি । 
ঠিক তখন পাওয়া গেলো বাঁশির শব্দ । খেলা শুরু হয়ে গেছে । ঈগল হাউজে রোহিত ভাই আর ফ্যালকন হাউজে ড্যানি ভাই ক্যাপ্টেন । শাহরিয়ার সোহানের আজকে খেলা না থাকলেও আজকে ওর টিমের খেলা । শুরু থেকেই ও খুব খুশি । সব প্লেয়াররা আলাদা একটা ছাউনিতে বসেছে । মাসুদ শাহরিয়ার সোহানকে খুশি দেখে বলল,
মাসুদঃ কিরে? তুই এতো খুশি ক্যান?
শাহরিয়ার সোহানঃ খুশি হবো না? আমি ফ্যালকন হাউজের আর আমি খেলবো রবিন হাউজে । 
মাসুদঃ তা এতে খুশির কি হল? 
শাহরিয়ার সোহানঃ খুশি অবশ্য সে জন্য না ।
মাসুদঃ তাহলে?
শাহরিয়ার সোহানঃ ফ্যালকন হাউজের ক্যাপ্টেন জামশেদ ভাই আমাকে বাদ দিয়ে যেই জামশেদ ভাইকে নিলো, সেই জামশেদ ভাই আজকে স্কুলেই আসেনি । প্লেয়ার নিয়ে ড্যানি ভাই বিপাকে পরে গেছেন । কারণ যদ্দুর জানি প্ল্যান অনুযায়ী জামশেদ ভাইকে ডিফেন্ডার রাখা হয়েছিলো । 
মাসুদঃ কোন টিম জিতলে খুশি হবি? 
শাহরিয়ার সোহানঃ আপাতত যেহেতু রবিন হাউজের হয়ে খেলছি, সেহেতু রবিন হাউজ জিতলেই খুশি হবো । রাগ তো আমার ড্যানি ভাইয়ের মধ্যে থাকা স্বজনপ্রীতির নামক দুর্নীতিটার সাথে । না ড্যানি ভাইয়ের সাথে, না আমার ফ্যালকন হাউজের সাথে । 
মাসুদঃ আজকে কোন টিম জিতলে খুশি হবি?
শাহরিয়ার সোহানঃ বললাম না, শুধুমাত্র এই ফুটবল খেলার জন্য আমি রবিন হাউজ । তাই আজকের ম্যাচে কে জিতল আর কে হারলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না । তবে এর মধ্যে যেই টিমই জিতুক আমার হালকা কষ্ট লাগবে । 
মাসুদঃ কেন?
শাহরিয়ার সোহানঃ কাল যদি কোনোভাবে জিতে যাই, তাহলে ফাইনালে হয় এই দুই টিমের মধ্যে আমাকে খেলতে হবে আমাকে অপমানকারী ড্যানি ভাইয়ের টিমের সাথে, আর নয়তো আমাকে খেলতে হবে আমার বন্ধু শাওন আর আরেফিন অনিকের টিমের সাথে ।
মাসুদঃ ও । কাল যে তুই আমাদের সাথে খেলবি সেটা?
শাহরিয়ার সোহানঃ ফাইনালে ওঠার একটা আলাদা মজা থাকে । তাই ফাইনালের আগের ম্যাচগুলোতে বাদ পড়লে যে কষ্ট লাগে, ফাইনালের দিন বাদ পড়লে আলাদা কষ্ট লাগে । 
মাসুদ আর কিছু বলল না । খেলা দেখতে লাগলো । ফুটবল ম্যাচ । যখন বল নিয়ে ঈগলরা গোলপোস্টের কাছাকাছি থাকে তখন ফ্যালকন হাউজের শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে উৎসাহ দেয়, আবার ফ্যালকন হাউজের টিম বল নিয়ে গোলপোস্টের কাছাকাছি থাকলে ফ্যালকন হাউজের শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে উৎসাহ দেয় । প্রথম অর্ধেকে ফ্যালকন হাউজের ড্যানি ভাই আর নাইনের একটা ছেলে গোল দেয় । তাই প্রথম অর্ধেক সময় শেষে ফ্যালকনের সংগ্রহে ২ গোল, আর ঈগলের সংগ্রহে শুন্য । প্রথম অর্ধেক সময় শেষে ১৫  মিনিটের বিরতি । ড্যানি ভাই সেই ভাব নিয়ে চলছে । মাঝে মাঝে শাহরিয়ার সোহানের দিকে তাকাচ্ছে আর নিজের মুকের দিকে একবার তর্জনী আঙ্গুল তাক করে তা ঘুরিয়ে আবার শাহরিয়ার সোহানের দিকে সেই  আঙ্গুল তাক করছে । এদিকে আবার রোহিত ভাই সবার ওপর খুব রাগ করেছেন । সবাইকে ভালো মতো আবার সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন । আরেফিন অনিককে প্রথম অর্ধেকে নামানো হয়নি । দ্বিতীয় অর্ধেকে নামানো হল । দ্বিতীয় অর্ধেকের খেলা হবার ৩ মিনিটের মাথায় একটা গোল করলো আরেফিন অনিক । স্কোর ফ্যালকন ২  আর ঈগল ১ । ড্যানি ভাই একবার শাহরিয়ার সোহানের দিকে তাকালেন । শাহরিয়ার সোহান মুচকি হাসছে । খুব দূর থেকে ড্যানি ভাই ঠিকমতো দেখতে না পারলেও বুঝতে পারলো ঠিকই । এরপর ম্যাচ আবার একবার ঈগলের গোলপোস্টের দিকে, আরেকবার ফ্যালকনের গোলপোস্টের দিকে যায় । ৭৫ মিনিটের সময় আরেকটা গোল করেন রোহিত ভাই । দুই টিমেরই স্কোর লেভেল হয়ে যায় । এরপর আবার সেই বল এ টিম, ও টিমের গোলপোস্টের কাছে ঘুরতে থাকে । এক্সট্রা টাইম শুরু হয়ে যায় । যখন খেলা শেষ হতে আর ১ মিনিট বাকি, তখন ঈগলের গোলপোস্টের কাছে শাওন বল নিয়ে গেছে  । ওর সামনে তিনটে প্লেয়ার ওর দিকে এগিয়ে আসলে ডানপাশে আরেফিন অনিকের দিকে পাস করে দেয় । খেলা শেষ হতে আর মাত্র ৩০ সেকেন্ড বাকি । সবার মনে টানটান উত্তেজনা । কি হবে হবে । হয় ঈগল জিতবে, নয় ম্যাচ ড্র । আরেফিন অনিকের সামনে ১টা প্লেয়ার আর তার পেছনে গোলকিপার । ডানে আরও দুটো প্লেয়ার । বামে আরও একটা প্লেয়ার । আরেফিন অনিক কাউকে যে বলটা পাস করে দেবে তারও সুযোগ নেই । শেষমেষ যখন চিন্তা করলো সামনে যে একজন আছে ওকে কাটিয়ে গোলটা দেবে । যেই আরেফিন অনিক এজন্য পা বাড়াতে যাবে, অমনি কোত্থেকে ড্যানি ভাই এসে বলটা মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিলেন । ঠিক তখনই বাজলো নুরুল ইসলাম স্যার এর বাশি । 
তাসলিমা মেডামঃ ১-১ গোলে হ্যাট্রিক করলো । ম্যাচ ড্র । 
অপু স্যারঃ Now the winner of today's match will be determined by penalty. 
ড্যানি ভাই পিছন দিকে শাহরিয়ার সোহানের দিকে তাকিয়ে আবারও একই কাজ করলো । প্রথমে নিজে মুখের দিকে তর্জনী আঙ্গুল তাক করে তারপর শাহরিয়ার সোহানের দিকে তাক করলো । শাহরিয়ার সোহানকে দেখে কিছু মনে না হলেও আসলে ও খুব রেগে আছে । কিছু করতেও পারছে না । এবার পেনাল্টি । ১টা করে বল কিক দেবে দুই টিমের মোট ৬টা প্লেয়ার ।  প্রত্যেকটা টিম তিনটা করে গোল দেবার সুযোগ পাবে । প্রথমে এলো ঈগল হাউজের আরেফিন অনিক । বল ছুঁড়ে মারতেই গোল । ১ গোল হল ঈগল হাউজের । এরপর ফ্যালকন হাউজের একটা ছেলে এসে বলে কিক করে এবং গোল হয় । এবারে ঈগল হাউজের ক্যাপ্টেন আসে গোল দিতে । রোহিত ভাই । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গোলটা মিস করেন তিনি । এবার ফ্যালকন হাউজ থেকে একটা ছেলে আসে গোল দিতে । সেও গোল দিতে সক্ষম হয় । এবার ঈগল হাউজের শেষ গোলটা দিতে হবে । শাওনের পালা এবার । ম্যাচটা অন্তত ড্র করতে হলে শাওনকে গোল দিতেই হবে । ওর বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে । সবাই খুব চিন্তায় আছে । বিশেষ করে ঈগলের শিক্ষার্থীরা । কারণ এই গোল না হলে ঈগল হারবে  । যদিও জেতার চান্সও নেই । কারণ এর পরের গোল যদি করতে পারে, তাহলে ফ্যালকন জিতে যাবে । নাইলে পেনাল্টিতেও ম্যাচ ড্র । মাঠের চারপাশ থেকে আওয়াজ আসছে । “শাওন! শাওন!” শাওন জার্সিটা টেনে বুকে একটু ফু দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে দৌড়ে এসে দিলো বলে কিক । বলটা যেয়ে ঢুকে গেলো গোলপোস্টে । সবাই আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলো । কারণ জেতার আশা এখনও আছে । কিন্তু হারার আশাটাও শেষ হয়ে যায় নি । ফ্যালকনের ক্যাপ্টেন ড্যানি ভাই কিছু একটা কারণে নার্ভাস ছিলেন । এজন্য উনি নিজে গোল না দিয়ে শেষ বার অন্য একটা ছেলেকে পাঠালেন । সবাই খুব চিন্তায় । ছেলেটা দৌড়ে বলটা ছুঁড়ে মারল এবং গোল আর হল না । ঈগলের সবাই খুব খুশি । জেতার আশা  এখনও যায় নি । এবার সিদ্ধান্ত হল দুই টিম থেকে মাত্র একজন  একবার বল কিক করবে এবং আগের যে ৩ জন বল কিক করেছে ওরা আর পেনাল্টি করতে পারবে না । অগত্যা ফ্যালকনের ক্লাস নাইনের একটা ছেলে গেলো গোল করতে । ভাগ্যের জোরে গোলটা হয়ে গেলো । এবার ড্যানি ভাই আর বসে থাকতে পারলেন না । উনি এবার বলে কিক করবেন । যেহেতু পেনাল্টি হচ্ছিলো, তাই সব দর্শকরা গোলপোস্টের তিনদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল । শাহরিয়ার সোহান ছিল গোলপোস্টের পাশে । ড্যানি ভাই বলে কিক করার জন্য যেইই দৌড় দিলো, অমনি নজর পড়লো শাহরিয়ার সোহানের দিকে । শাহরিয়ার সোহান তখন ঐ একই ভঙ্গি করলো, যেমন ড্যানি ভাই করেছিলো শাহরিয়ার সোহানের দিকে । ড্যানি ভাই এটা দেখে যেন আরও নার্ভাস হয়ে যায় । আর নার্ভাস হয়ে উনি বল ছুঁড়ে মারে গোলপোস্টের বাইরে । ঈগলের সবাই আনন্দের চিৎকার দিয়ে উঠলো । সবাই খুব খুশি শুধু ফ্যালকনের দর্শকরা বাদে । খেলা শেষে সবাই ক্লাসে চলে যায় । ফুটবল প্লেয়াররা ওয়াশরুমে যায় ড্রেস চেঞ্জ করতে । দুই টিমের ক্যাপ্টেন নুরুল ইসলাম স্যার এর সাথে স্যার এর কথা অনুযায়ী দেখা করতে যায় । 
নুরুল ইসলাম স্যারঃ তো, কেমন লাগলো তোমাদের খেলা?
ড্যানি ভাইঃ মোটেও ভালো না স্যার ।
নুরুল ইসলাম স্যারঃ দ্যাখো ড্যানি, খেলায় হার জিত থাকেই । এতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই । আর তাছাড়া তোমরা ভালো চেষ্টা করেছো । এটাই অনেক । আর রোহিত এর জন্য রইল শুভকামনা । 
রোহিত ভাইঃ থ্যাঙ্ক ইউ স্যার । 
ড্যানি ভাইঃ স্যার আমি আজকে লাস্টের গোলটা দিতেই পারতাম । কিন্তু আমি দৌড় দেয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে রবিন হাউজের ঐ সোহান নামের ছেলেটা কেমন অঙ্গভঙ্গি করে, আমি আমার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায় । 
নুরুল ইসলাম স্যারঃ তোমার কি মনে হয়, তোমার মনোযোগ নষ্ট করা উচিত ছিল, নাকি মনোযোগটা টিকিয়ে রাখা উচিত ছিল?
ড্যানি ভাই কিছু বললেন না । 
নুরুল ইসলাম স্যারঃ উল্টা পাল্টা যুক্তি না দিয়ে ইন্টার শাহিন ফুটবল খেলার জন্য প্র্যাকটিস করো । তখন কিছু তুমি ফ্যালকনের প্লেয়ার না, যশোর শাহিনের প্লেয়ার থাকবে । 
এদিকে প্লেয়াররা সব ওয়াশরুমে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরোচ্ছে । শাওন একটা বলে শাওন ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখলো প্রতীক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আরেফিন অনিকের সাথে কথা বলছে । 
প্রতীকঃ অস্থির খেলসিস তোরা । সাবাশ । যদিও আমি ফ্যালকন হাউজে । 
আরেফিন অনিকঃ ক্লাসে যাবি না তুই?
প্রতীকঃ হ্যাঁ যাব । ভেতরে সাকিব আর তৃণ আছে । 
শাওন তখন প্রতীকের কাছে এলো । 
শাওনঃ আমি ভুলেই গেসিলাম  তোকে বলতে, গতকাল আমার আম্মা তোর জন্য আমারে কতো রাগ ঝারসে জানিস?
প্রতীকঃ কেন?
শাওনঃ তুই আমার ভাইয়ের কাছে উল্টা পাল্টা কি বলসিস?
প্রতীকঃ তোর ভাইয়ের সাথে তো গতকাল আমার দেখাই হয় নি । 
শাওনঃ ভাব লস?
আরেফিন অনিকঃ কি হইসে রে?
শাওনঃ আরে প্রতীক আমার ভাইরে কইসে আমি নাকি মেয়েদের সাথে প্রেম করে বেড়াই । আমার ভাই আবার সেইটা যাইয়া আমার বাসায় বইলা দিসে । কোনোরকমে আমি ম্যানেজ করসি । এটা কি ধরনের স্বভাব বলতো? 
আরেফিন অনিকঃ তুই এই কথা বলসিস? 
প্রতীকঃ না তো । 
শাওনঃ টিফিন পিরিয়ডে আমার ভাই আমার টিফিন ওর কাছে দিসে ও আমার টিফিন আবার ফেলায়ও দিসে । 
প্রতীকঃ এক মিনিট, আমি তো টিফিন পিরিয়ডে ছিলামই না । আমি তো তখন ক্যান্টিনে ছিলাম চানাচুর কেনার জন্য । 
আরেফিন অনিকঃ হ্যাঁ ও সত্যি বলতেসে । তনয় আমারে পরে আমার চানাচুর দিসিল । 
প্রতীকঃ ভালো কথা । নাটক বানানো আজকে শেষ করে সামিউল স্যার এর প্রাইভেটে তনয়কে দেবো । 
আরেফিন অনিকঃ কয় মিনিট হইসে?
প্রতীকঃ প্রায় ২২ মিনিটের মতো । 
শাওনঃ ধুর । আগে এটা তো বল, প্রতীক যদি বক্সটা না ফেলায় দেয় তাহলে কে ফেললো বক্সটা?
সেই সময় ওদের দিকে আসছিলো সাকিব আর তৃণ । শাওনের কথাটা শুনে তৃণ বলল, 
তৃণঃ ওটা ছিল ঋজু ভাই । 
শাওনঃ ঋজু ভাই? মানে তোরা গতকাল যার কথা সবাইকে বললি?
ওরা সবাই ক্লাসরুমের দিকে হাটা শুরু করলো । 
তৃণঃ হুম । উনি প্রতীকের ব্যাগ থেকে কিছু ছবি নেয়ার জন্য নিজে প্রতীক সেজেছিলো । 
শাওনঃ ও । তাহলে উনিই মিথ্যা কথা বলেছে?
সাকিবঃ হতে পারে । তারপরেও যদি তোর বিশ্বাস না হয়, তাহলে তোর ভাইকে এনে বলিস, এর কাছে টিফিন দিয়েছিলো কি না । 
ওরা তিন তলা থেকে দোতলা আসতেই দেখল ক্লাসরুমের সামনে প্রচুর ভীর জমেছে । একটু পরে দেখল রাহাত আর তুর্য ওয়াসিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর ওয়াসি অজ্ঞান হয়ে আছে । ওদের সাথে হাসান স্যার ও ছিলেন । ওদের নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালের দিকে । ওয়াসিকে নিয়ে যাওয়ার পর শাওন, তৃণ, সাকিব, প্রতীক, আরেফিন অনিক ক্লাসরুমের সামনে এলো । 
আরেফিন অনিকঃ কি হইসে রে?
রাতুলঃ ওয়াসি হঠাৎ  অজ্ঞান হয়ে গেছে  । 
সাকিবঃ এক দিনে দুইজন অজ্ঞান?
শাওনঃ এটা ঐ ঋজু ভাইয়ার কোন প্ল্যান না তো?
সাকিবঃ সেটা কি করে হয়? উনি তো আজকে স্কুলেই আসেন নি? 
রাতুলঃ তুই কিভাবে বুঝলি?
সাকিবঃ উনি গতকাল আমাদের বলেছিলেন ।
রাতুলঃ বললেই তো হয় না । হয়তো এসেছে, আর আমরা সবাই বাইরে যাওয়ায় হয়তো কিছু একটা করেছে । 
সাকিবঃ কি করতে পারে? 
সাবিত তখন ভেতরে ছিল । বাইরে এসে বলল, 
সাবিতঃ আর তাছাড়া যদি Chloroform দিয়ে কিছু করতো তাহলে তো মাঠেই অজ্ঞান হয়ে যেত আর আমরাও তো  উনাকে দেখতে পারতাম । ক্লাসে যে এমন করবে তাও তো না । কারণ ও তো আমাদের সবার সামনে অজ্ঞান হয়েছে । 
শেষমেষ রহস্যের কোন কিনারা করতে পারলো না ওরা ক্লাসে চলে গেলো । ফুটবল ম্যাচের জন্য একটা ক্লাস শেষ হয়েছিল । এরপর রাখিব স্যার এর ক্লাস ছিল । তারও প্রায় অর্ধেক শেষ হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু রাখিব স্যার আসেন নি । তখনই ঘটে ওয়াসির জ্ঞান হারানোর ঘটনা । ওয়াসি জ্ঞান হারালে হাসান স্যারকে ডাকা হয় এবং হাসান স্যার এসে ওদের রাহাত আর তুর্যর মাধ্যমে ওয়াসিকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে । এই ক্লাস শেষ হতে প্রায় ১৫ মিনিট মতো বাকি । এরপর আজিজুল স্যার এর ক্লাস । বাড়ির কাজ দিয়েছিলেন । তাই সবাই এখন বাড়ির কাজ করতে ব্যাস্ত । খানিক বাদে আজিজুল স্যার এলেন । সবাই যা করার কথা করলো । স্যার বাড়ির কাজ দেখলেন । আজ মোটামুটি সবাই বাড়ির কাজ করেছে । দুজন শুধু করতে পারে নি, আরেফিন অনিক আর শাওন । তা বেচারারা কষ্ট করে এতক্ষন খেলে এসেছে, তাই আর কিছু বললেন  না  আজিজুল স্যার । ক্লাস নিলেন । ক্লাস শেষে চলে গেলেন । এদিকে আব্দুস সামি বেঞ্চের ওপর বসে এশরারকে পাঠানো সেই লাভ লেটারটা দেখছিল । এশরার তখন ক্লাসে ছিল না । বারান্দায় ছিল । একটু পর সামি খেয়াল করলো, সবাই কথাবার্তা বলায় ব্যাস্ত, অথচ নাফিজ তখন এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে । সামি এসে ওর পাশে দাঁড়ালো ।
সামিঃ কিরে? কি ভাবিস?
নাফিজঃ এই শোন, পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলিস না । সামনে দাঁড়িয়ে কথা বল । 
সামি সামনে দাঁড়ালো । 
সামিঃ পাশে দাঁড়ালে কি সমস্যা?
নাফিজঃ আমার কেমন যেন লাগে । অন্য কিছু মনে করিস না । 
সামিঃ কি ভাবছিলি?
নাফিজঃ রহস্য ।
সামিঃ কি রহস্য?
নাফিজঃ বাপ্পি আজকে সকালে ওয়াসির কাছ থেকে পানি খাওয়ার একটু পড়েই মাঠে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়, আবার ওয়াসিও ফুটবল খেলা দেখে ফিরে পানি খাওয়ার একটু পরেই জ্ঞান হারাল । 
সামিঃ মানে?
নাফিজঃ হুম আমি দেখসি । এই! আমাকে আবার ভাবিস না আমি কিছু করসি। 
সামিঃ আরে আজব, তোর কথা কেন বলতে যাব?
নাফিজঃ না তোরা আবার সন্দেহ করতে পারিস তাই বললাম আরকি । 
সামিঃ  কিন্তু কে করতে পার এই কাজ? 
বাইরে আর সবার সাথে তৃণও ছিল । ক্লাসে ঢোকার সময় বেঞ্চের ওপর সামির রাখা সেই লাভ লেটারটা নজরে পড়ল তৃনর । হাতে নিলো সেটা । সাবিতকে যেই লাভলেটারটা দেয়া হয়েছিলো, হুবহু সেই হাতের লেখা এবং সেই লাভলেটারের মতোই এটায় কারো নাম উল্লেখ নেয় কে পাঠিয়েছে, কাকে পাঠিয়েছে । ঠিক তখন সামি এলো ওর কাছে । 
সামিঃ কিরে, তুই কি দেখিস?
তৃণঃ এইযে, এটা । 
সামিঃ এটা আমি এশরারের ব্যাগে পাইসি। 
তৃণঃ কি? 
সামিঃ হ্যাঁ । ওর ব্যাগে কিভাবে আসলো ও নিজেও জানেনা । 
তৃণ আর কিছু বলল না । কারণ ও নিজেও জানে কোন না কোন ভাবে কাগজটা এশরারের হাতে দিয়েছে । কিন্তু এবারে সাবিতের মতো স্যার এর কাছে ধরা খায় নি এশরার । কাগজটা সামির হাতে দিয়ে চলে গেলো নিজের সিটে । একটু দূরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা দেখছিল সাকিব । ভাবল, তৃণ হয়তো বোকামি করছে । তাই চলে গেলো হাসান স্যার এর কাছে । এটা শেষ পিরিয়ড ছিল । শেষ ক্লাস শারীরিক শিক্ষা । কিন্তু কোন স্যার আসেননি কারণ আজ ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করে কালকের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কাজে ব্যাস্ত ছিলেন উনারা । হাসান স্যার তখন টিচার্স রুমে বসে ইয়ারফোন কানে দিয়ে কেমিস্ট্রির একটা ভিডিও দেখছিলেন । সাকিবকে আসতে দেখে কান থেকে ইয়ারফোনটা নামালেন । 
হাসান স্যারঃ কি কিছু বলবা?
সাকিবঃ স্যার আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে । 
হাসান স্যারঃ কি বলবে?
সাকিব সেইদিন তৃণর সাথে ২৬ নাম্বার রুমে যেয়ে ঋজু ভাইয়ার সাথে দেখা পাওয়া এবং এর পরবর্তী সব ঘটনা খুলে বলল ।
হাসান স্যারঃ প্রমান আছে কোন?
সাকিবঃ না স্যার । কিন্তু স্যার, বিশ্বাস করেন, পুরোটাই সত্য । 
হাসান স্যারঃ করলাম । Even আমি তোমাদের বিশ্বাস করি । কিন্তু আর কাকে বিশ্বাস করাবে তুমি? সবাই ঘটনার সত্যতা জানতে চাইবে । কি বলব তখন?
সাকিব কিছুক্ষণ চুপ করে রইল । কিছু বলল । তারপর হঠাৎ বলল,
সাকিবঃ স্যার, একটা উপায় আছে । 
হাসান স্যারঃ কি উপায়?
সাকিবঃ সিসি টিভি ফুটেজ ।
হাসান স্যারঃ আসলেই! আমি তো আগে ভাবিনি! 
সাকিবঃ তাহলে স্যার, এখন আপনিই কিছু একটা করেন । ঐ ভাইয়াটা যদি মারাত্মক কিছু করে বসে? আমাদের সকলের চিন্তা ঐ ঋজু ভাইয়ার কোন এক চালাকির জন্য আজকে বাপ্পি আর ওয়াসি অজ্ঞান হয়েছে । এখন আপনিই দেখুন কি করা যায় । 
হাসান স্যারঃ হুম । এক কাজ করো । কাল অ্যাসেম্বলির পরে তুমি, তৃণ, আর সাবিত এসো । আমি আজকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে উনার রুমে যেয়ে সিসিতিভি ফুটেজ দেখবো এবং তোমাদের সাহায্যে ।
সাকিবঃ থ্যাঙ্ক ইউ স্যার ।
এরপর সাকিব ক্লাসে ফিরে আসে । আশিস স্যার ততক্ষনে চলে এসেছেন । 
সাকিবঃ আসবো স্যার?
আশিস স্যারঃ কোথায় গিয়েছিলে?
সাকিবঃ স্যার হাসান স্যার ডেকেছিল । তাই উনার কাছে গিয়েছিলাম । 
আশিস স্যারঃ আসো ।
সাকিব যেয়ে নিজের সিটে না বসে সাবিতের পাশে যেয়ে বসলো । 
সাবিতঃ কিছু বলবি?
সাকিবঃ হ্যাঁ । কাল তোকে আমাকে আর তৃণকে হাসান স্যার যেতে বলেছেন ।
সাবিতঃ কোথায়?
সাকিবঃ উনার কাছে । উনি আমাদের প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমে যাবেন সেই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর জন্য ।
সাবিতঃ বাহ! ভালো তো । কালই চোরের মুখোশ খুলে যাবে । 
সাকিবঃ চোরের না ঋজু ভাইয়ের । যাই হোক, আজকে মাঠে নিয়ে যাবে না?
সাবিতঃ স্যারকে অনেক বললাম । কিন্তু স্যার রাজি হলেন না । বললেন আমরা গেলেই কেউ না কেউ অজ্ঞান হয়ে যায় তাই আর বের করলেন না আমাদের ।
সাকিব কিছু বলল না । ওইদিনের ক্লাসটা শেষ হয়ে গেলো । 
৮ মার্চ ২০১৮
সকালে রাখিব স্যার এর প্রাইভেট । প্রাইভেট শেষে অ্যাসেম্বলি করার পরই সাকিব, তৃণ আর সাবিত এলো হাসান স্যার এর রুমে । ওরা খুব খুশি । কারণ আজ আসল পর্দা ফাঁস হবে । কিন্তু হাসান স্যার কপালে হাত ঠেকিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বসে আছেন ।
সাকিবঃ স্যার, আমরা এসেছি?
হাসান স্যারঃ (রেগে গিয়ে) না আসলে খুব ভালো হতো । কি হইসে কি তোমাদের? 
সাবিতঃ কে...কে...কেন স্যার? কি হয়েছে?
হাসান স্যারঃ তোমাদের ক্লাসের মহিদুল নামের একটা ছেলে প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে মেসেঞ্জারে উল্টাপাল্টা গালিগালাজ করেছে ।
ব্যাপারটা খুবই সাংঘাতিক হলেও ওদের একটু হাসি পাচ্ছে । কারণ মহিদুলের মতো হাবাগোবা ছেলের মুখে গালি? ওর মুখে কেউ কোন দিন কুত্তা গালিটা শুনেছে কি না সন্দেহ । আর নাকি উল্টাপাল্টা গালি গালাজ করেছে তাও আবার প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে? তৃণ তো হালকা হেসেও দিলো । সাকিব আর সাবিত কোনোরকমে হাসি থামিয়ে রেখেছে । 
হাসান স্যারঃ হাসছ কেন?
তৃণঃ না স্যার এমনি । 
হাসান স্যারঃ তোমাদের লজ্জা বলে কিছুই নাই । 
সাকিবঃ স্যার, গতকালই তো বললেন আপনি আমাদের বিশ্বাস করেন । তাহলে আপনি কি করে ভাবলেন আমাদের কেউ এমন করতে পারে? তাও আবার প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর সাথে । 
হাসান স্যারঃ আমি তো বিশ্বাসই করতে পারি না তোমাদের কেউ এমন কাজ করতে পারে । সেটা আর কেউ না জানুক আমি ঠিকই জানি । 
সাবিতঃ কেমনে?
হাসান স্যারঃ তোমরা যা চালাক, নিজের আসল আইডি দিয়ে তোমরা কখনই এ কাজ করবে না আমার ভালো করেই জানা আছে ।
সাকিবঃ স্যার এখন সিসিটিভি ফুটেজ?
হাসান স্যারঃ আরে রাখো তোমার সিসিটিভি ফুটেজ । স্যার এই ব্যাপারটা নিয়ে কি কষ্ট পেয়েছেন  জানো? 
সাকিব, তৃণ আর সাবিত কিছু বলল না ।
হাসান স্যারঃ ভাগ্যিস স্যার যশোরে নেই । কিন্তু স্যার আবার এসব কিছুর একটা ব্যাবস্থা করতে বলেন রাখিব স্যারকে । উনি যে কি করবেন আল্লাহই জানেন । আর যদি সুজিত স্যার এর কানে একবার কথাটা যায়, ওর আর রক্ষা নাই । 
সাকিবঃ তাহলে এখন আমরা কি করবো স্যার?
হাসান স্যারঃ কি আর করবে । ক্লাসে যাও । 
সাকিব, তৃণ আর সাবিত মনটা খারাপ করে চলে গেলো ক্লাসে । একটু পর হাসান স্যার এর কাছে এলেন রাখিব স্যার । হাসান স্যার ভাবলেন হয়তো গালিগালাজ করার ব্যাপারে কোন কথা বলতে এসেছেন । কিন্তু হাসান স্যার এর ধারণাকে মিথ্যা প্রমান করে দিয়ে রাখিব স্যার বললেন, 
রাখিব স্যারঃ স্যার, এপ্রিলে ক্লাস টেনদের মডেল টেস্টের প্রশ্ন বানিয়েছে? 
হাসান স্যারঃ লাস্ট ডেট কবে?
রাখিব স্যারঃ কালকের মধ্যে জমা দিতে বলেছে বোর্ড । পুরো যশোর বোর্ডে সব শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশ্ন নিয়ে সেখান থেকে কিছু কিছু ভালো প্রশ্ন যুক্ত করে প্রশ্ন বানানো হবে আর পুরো যশোর বোর্ডে একই প্রশ্নে পরীক্ষা হবে  । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা স্যার, কাল দেবনে ।
রাখিব স্যারঃ আচ্ছা ।
বলেই রাখিব স্যার যেইই চলে যাবেন, তখনই হাসান স্যার আবার ডাকলেন  রাখিব স্যারকে । রাখিব স্যার পিছু ফিরে তাকালেন । 
রাখিব স্যারঃ কিছু বলবেন?
হাসান স্যারঃ আপনাকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার কোন দায়িত্ব দিয়েছেন কি?
রাখিব স্যারঃ কই না তো । 
হাসান স্যারঃ ও আচ্ছা । যান । 
বলেই রাখিব স্যার চলে যেতে গিয়ে আবার ঘুরে হাসান স্যার এর দিকে তাকাল । 
রাখিব স্যারঃ বলছি হাসান স্যার, কেউ ক্লাস টেনের কেউ কি প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে গালিগালাজ করেছে কি?
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ, কিন্তু আপনি এ কথা কি করে জানলেন?
রাখিব স্যারঃ সুজিত স্যার দেখলাম ক্লাস টেনের দিকে যাচ্ছেন । পথে জিজ্ঞাস করলে উনি বলেন ক্লাস টেনের একটা ছেলে প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে গালিগালাজ করেছে । তাই প্রিন্সিপ্যাল স্যার ঐ ছেলের একটা ব্যাবস্থা করার জন্য সুজিত স্যারকে দায়িত্ব দিয়েছেন । 
হাসান স্যারঃ (বিড় বিড় করে) ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি  রাজিউন । 
বলেই হাসান স্যার উঠে চলে গেলেন ক্লাস টেনের দিকে । এদিকে সাকিব, তৃণ আর সাবিত তখন ক্লাস রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েই দেখল ভেতরে কাউকে চড় মারার আওয়াজ । ভয়ে আর ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইতে পারলো না । দরজার আড়াল থেকেই দেখতে লাগলো । ভেতরে সুজিত স্যার মারছে মহিদুলকে । 
সুজিত স্যারঃ তোমাদের মতো ছেলেরা কি আমার ভালো করেই জানা আছে । আমরাও তোমাদের বয়স পার করে এসেছি । 
কথাটা শুনে তৃণ আড়াল থেকে সরে হালকা হেসে দিলো । 
সাবিতঃ হাসতেসস কেন?
তৃণঃ স্যার সব জানে, স্যার একসময় এই বয়সি ছিলেন, মানে স্যারও একসময় এই কাজ করতেন প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর সাথে । 
সাবিতঃ হুট । ইয়ার্কি বাদ দে তো । 
তৃণ তখন খেয়াল করলো হাসান স্যার দ্রুতপদে আসছেন ওদের দিকে । 
তৃণঃ দ্যাখ, হাসান স্যার আসছেন । 
সাকিব আর সাবিত দুজনেই হাসান স্যার এর দিকে তাকাল । একটু পর হাসান স্যার ওদের কাছে এলেন । 
হাসান স্যারঃ সুজিত স্যার কি ভেতরে?
সাকিবঃ জী স্যার । মহিদুলকে মারধর করছেন । 
হাসান স্যার ভেতরে গেলেন । 
হাসান স্যারঃ কি হয়েছে সুজিত স্যার?
সুজিত স্যারঃ স্যার আপনি খুব ভালো করেই জানেন সবটা । সকালে আপনাকে ক্লাস নাইনের কোচিং  করানোর সময় প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে দেখেছি আমি । 
হাসান স্যারঃ আরে আমি ঐ ব্যাপারের কথা বলছি না  । আমি বলছি আপনার হয়েছে টা কি? ওকে তাই বলে আপনি এতো মারবেন? 
সুজিত স্যারঃ তেমন তো মারিনি? শুধু মিথ্যে বলেছিল দেখে মেরেছি । 
হাসান স্যারঃ মিথ্যে বলেছিল? কি মিথ্যে?
সুজিত স্যারঃ ও বলেছে ও নাকি এই কাজ করে নি । 
ক্লাসে তখন আশরাফুল স্যার ছিলেন বায়োলজি ক্লাসের জন্য । বললেন 
আশরাফুল স্যারঃ কিছু যদিনা মনে করেন স্যার, আপনি ক্লাসরুমের বাইরে যদি ওকে বকাঝকা করতেন, আমি একটু ওদের ক্লাস করাতে পারতাম । 
সুজিত স্যার কিছু না বলে মহিদুলকে হহাত ধরে জোর করে বের করে ক্লাসের বাইরে আনলেন । হাসান স্যার কিছু বলতে গিয়েও বললেন না । মহিদুল কেবল কাঁদতে কাঁদতে একটাই কথা বলছে । “স্যার আমি কিছু করিনি......বিশ্বাস করুন......আমি কিছু করিনি” হাসান স্যার সাকিব সাবিত আর তৃণ সুজিত স্যার এর সাথে সাথে যেতে নিলে সুজিত স্যার হঠাৎ দাঁড়িয়ে যেয়ে বলেন,
সুজিত স্যারঃ দেখুন হাসান স্যার, ওকে শাস্তি দেবার দায়িত্ব প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে দিয়েছেন । আপনি দয়া করে খবরদার খবরদার এর ভেতর নাক গলাতে আসবেন না । 
বলেই  সুজিত স্যার চলে গেলেন । হাসান স্যার না কিছু বলতে পারলেন, না সুজিত স্যার এর সাথে যেতে পারলেন । 
সাকিবঃ এখন কি হবে স্যার?
হাসান স্যারঃ দাঁড়াও । আমি কিছু একটা করি । 
বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে ফোন দিলেন হাসান স্যার । 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ জী হাসান স্যার, বলুন ।
হাসান স্যারঃ স্যার কিছু মনে করবেন না । আপনি যে সুজিত স্যার এর ওপর ব্যাপারটা ছেড়ে দিলেন সেটা.................. 
প্রিন্সিপ্যাল স্যার হাসান স্যার এর কথা শেষ না হতেই বললেন, 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ দেখুন হাসান স্যার, আমি ঘটনাটার সত্যতা যাচাই করার জন্য এই কাজটা করেছি । 
হাসান স্যারঃ সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মানে?
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ সুজিত স্যার মানুষ ভালো । শুধু সুজিত স্যার না, আমাদের এই শাহিনের সব স্যার মেডামরা খুব ভালো । তবে সুজিত স্যার খুব কড়া আর রাগি একজন মানুষ । উনার সামনে সবাই ওদের দোষ স্বীকার করতে বাধ্য । মানে ওরা সুজিত স্যারকে এতোটা ভয় পায় যে ওরা সুজিত স্যারকে সত্যটা বলবেই । ছেলেটা যদি সত্যি কাজটা করে থাকে তাহলে ওর দোষ স্বীকার করবেই । আর যদি না করে থাকে, তাহলে বুঝবো, ও আসলেই এ কাজ করেনি । 
হাসান স্যারঃ কিন্তু স্যার, ও যদি কিছু না করার পড়েও ভয়ে স্বীকার করে?
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ সকালে আপনার সাথে কথা বলার একটু পড়েই আমি তামজিদের সাথে কথা বলেছিলাম । ওর কাছ থেকে যতটা জানতে পারি, ঐ ছেলেটা যাই হোক, মিথ্যে বলার মতো না । So, আশা করি আপনি বুঝেছেন আমি কেন সুজিত স্যারকে কাজটা করতে বললাম?
হাসান স্যার একটু হাসলেন । তারপর প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে সালাম দিয়ে ফোনটা রাখলেন । 
সাকিবঃ কি বললেন প্রিন্সিপ্যাল স্যার?
হাসান স্যারঃ অনেক কিছু বললেন । তবে তোমাদের প্রিন্সিপ্যাল স্যার খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ ।
ওদিকে সুজিত স্যার মহিদুলকে উনার রুমে নিয়ে ওকে চেয়ারে বসিয়ে ওর সামনে আরেকটা চেয়ারে বসেছেন । 
সুজিত স্যারঃ কেন স্বীকার করছ না তুমি?
মহিদুলঃ স্যার আমি এ কাজ করিনি তো স্বীকার করবো কেন?
সুজিত স্যারঃ আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো তুমি এও কাজ করো নি ।
মহিদুলঃ স্যার আমি অনেক মাস ধরে আমার ফেসবুকে ঢুকিই না । 
সুজিত স্যারঃ তাই? লগ ইন করো ।
মহিদুলঃ কোথায়?
সুজিত স্যারঃ ফেসবুকে । 
মহিদুলঃ কিন্তু মোবাইল?
সুজিত স্যার উনার মোবাইলের ফেসবুক অ্যাপ ওপেন করে মহিদুলের হাতে দিলেন । 
সুজিত স্যারঃ আমার মোবাইলে তোমার আইডিতে লগ ইন করো । 
মহিদুল কিছু না বলে সুজিত স্যার এর কাছ থেকে মোবাইলটা নিলো । 
ওদিকে হাসান স্যার সাকিব, সাবিত আর তৃণর সাথে কথা বলছিলেন ।
হাসান স্যারঃ (মনে মনে) আচ্ছা, আমাকেও তো সবাই ভয় পায় । একটু দেখি তো এরা আমাকে কেমন ভয় পায় । 
সাকিবঃ স্যার, কি ভাবছেন?
হাসানঃ (রাগান্মিত গলায়) যাও তোমরা! এখনও এখানে কি করছো? ক্লাসে যাও । 
তিনজনেই স্যারকে হঠাৎ রেগে যেতে দেখে উলটো ঘুরে দিলো এক দৌড় ক্লাসরুমের দিকে । হাসান স্যার মুচকি মুচকি হাসলেন । তারপর টিচার্স রুমের দিকে চলে গেলেন । যাওয়ার সময় হঠাৎ হাসান স্যার এর কাছে রাখিব স্যার  ফোন এলো । 
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ রাখিব স্যার বলেন । 
রাখিব স্যারঃ স্যার, গতকাল যে দুটো ছেলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো ওরা এসেছে । আপনার সাথে একটু কথা বলতে চায় । 
হাসান স্যারঃ কোথায় আপনারা?
রাখিব স্যারঃ ক্যান্টিনে চলে আসুন ।   
ওদিকে মহিদুল ফেসবুকে লগ ইন করতেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো । সত্যি সত্যি ম্যাসেজ সেকশনে প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে অনেক আজে বাজে ভাষায় গালিগালাজ দেয়া । সুজিত স্যার হঠাৎ ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো । 
সুজিত স্যারঃ খুব চালাক না? ভাবছিলে ডিলিট করবে?
মহিদুলঃ না স্যার । আমি ভাবছি কিভাবে হল এটা?
সুজিত স্যারঃ সব চোররাই একই কথাই বলে । 
বলেই মোবাইলটা নিয়ে ওর ফেসবুকে দেখলেন সত্যি সত্যি প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে অনেক গালিগালাজ করা ।  
সুজিত স্যারঃ ইশ! কি সব ভাষা রে বাবা । এসব ভাষা আমি জীবনেও মুখে আনা দুরের কথা মনে মনেও ভাবতে পারি না । তা কেন এমনটা করলে শুনি?
মহিদুলঃ সত্যি স্যার, আমি এমনটা করিনি ।
সুজিত  স্যারঃ এই তোমার এই করিনি করিনি শুনতে শুনতে আমি হাফিয়ে গেছি । খবরদার খবরদার আর এ কথা না বলে স্বীকার করে নাও । কারণ তোমার প্রমান এখন আমার হাতে । 
মহিদুলঃ স্যার আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কেউ আমার আইডি হ্যাক করেছে । 
সুজিত স্যারঃ প্রমান কি?
ঠিক তখন প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর কাছে একটা ফোন এলো । 
সুজিত স্যারঃ হ্যালো স্যার, আসসালামু আলাইকুম । 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম । খবর জানতে ফোন দিলাম । 
সুজিত স্যারঃ জী স্যার । আমিও মাত্রই ফোন দিতে যাচ্ছিলাম । ঐ ছেলেটা এখন আমার সামনেই আছে । 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ কি বলছে ছেলেটা?
সুজিতঃ স্যার ও তো প্রথমে কিছুই স্বীকার করতে চাচ্ছিলো না । পড়ে ওর ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম সত্যি সত্যি ওর আইডি থেকে ম্যাসেজগুলো পাঠানো । 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ আপনি একটু ওর ফেসবুকের নোটিফিকেশনে যান তো । 
সুজিত স্যার ফেসবুকের নোটিফিকেশনে গেলেন । 
সুজিত স্যারঃ জী স্যার, গেছি । 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ দেখুন তো, ওখানে an unauthorized login attempt টাইপের কিছু লেখা আছে কি না?
সুজিত স্যারঃ জী স্যার, আছে । 
প্রিসিপাল স্যারঃ হুম । ছেলেটাকে একটু ফোনটা দিনতো । 
সুজিত স্যার মহিদুলকে ফোনটা দিলেন । 
মহিদুলঃ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম স্যার ।
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম  । আচ্ছা মহিদুল, তুমি শেষ কবে ফেসবুকে ঢুকেছিলে? 
মহিদুলঃ বিশ্বাস করুন স্যার, আমি এটা করিনি ।
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ আহা, তুমি আগে আমার কথার জবাব দাও । শেষ কবে তুমি  ফেসবুকে ঢুকেছিলে । 
মহিদুলঃ স্যার কয়েক মাস আগে ঢুকেছিলাম । বিশ্বাস করেন স্যার, আমি সত্যি কিছু করিনি । 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ ভয় পেয় না । সুজিত স্যারকে ফোনটা দাও । মহিদুল সুজিত স্যারকে ফোনটা দিলো । 
সুজিত স্যারঃ হ্যাঁ স্যার বলেন?
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ আপনি কি ক্লাসের সবার সামনে ছেলেটাকে কিছু বলেছেন?
সুজিত স্যারঃ জী স্যার বলেছি, কিন্তু কেন?
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ তাহলে এখনই ক্লাসে যেয়ে ওকে ক্লাসে দিয়ে আসুন আর সবাইকে বলে আসুন ও নির্দোষ । 
সুজিত স্যারঃ কেন স্যার?
ওদিকে হাসান স্যার ক্যান্টিনে এলেন । তিনটা চেয়ারের ওপর তিনজন বসে ছিল । হাসান স্যারও যেয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন । 
প্রিন্সিপ্যাল স্যারঃ হ্যাঁ বলো কি বলবে । 
বাপ্পিঃ স্যার  গতকাল আমি স্কুল থেকে বাসায় ফিরে যখন ডাক্তারের কাছে যাই, ডাক্তার আমাকে বলেন আমি নাকি এমন কিছু একটা খেয়েছিলাম যা আমার অজ্ঞান হবার জন্য দায়ী । পরে আমি ওয়াসির অজ্ঞান হওয়ার কথা শুনে ওয়াসিকে ফোন দেই । ওয়াসিও তখন ওর ভাইয়ের সাথে হাসপাতালে যেয়ে ডাক্তারের কাছে শোনে, ওয়াসিও নাকি এমন কিছু একটা খেয়ে ফেলেছিল যার জন্য ও অজ্ঞান হয়ে গেছে । 
হাসান স্যারঃ অদ্ভুত ব্যাপার তো । তোমরা দুজনেই কি কিছু খেয়েছিলে?
ওয়াসিঃ পানি খেয়েছিলাম । 
হাসান স্যারঃ পানি?
ওয়াসিঃ জী স্যার । পানি । গতকাল সকালে বাপ্পির মাথা ব্যাথা করছিলো । তখন ও আমার কাছ থেকে আমার বোতলের পানি নিয়ে খায় । তারপরেই বাপ্পি অ্যাসেম্বলিতে অজ্ঞান হয় । আর আমি পানি খাই ফুটবল ম্যাচ দেখে এসে । আর তার কিছুক্ষণ পড়েই আমিও অজ্ঞান হয়ে পরে যাই । 
রাখিব স্যারঃ তোমার বোতলে কি ছিল?
ওয়াসিঃ পানি ছাড়া আর কিছুই ছিল না স্যার । 
হাসান স্যারঃ তাহলে হল কেন এমনটা?
ওয়াসিঃ সেটাই তো না বুঝতে পেরে আপনাদের সাথে একটু কথা বলতে এলাম । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা, সেই পানির বোতলটা আছে তোমার কাছে?
ওয়াসিঃ জী স্যার আছে । 
কথাটি বলতে বলতে পানির বোতলটা হাসান স্যার এর হাতে দিলো ওয়াসি । 
হাসান স্যারঃ ঠিক আছে । আমি বোতলটা রাখলাম আমার কাছে । কাল তো স্কুলে আসছ তাই না?
বাপ্পিঃ স্যার কাল তো ছুটি । 
হাসান স্যারঃ ও আচ্ছা । কাল তো শুক্রবার । পরশুদিনও ছুটি । ফাইনাল ফুটবলের ম্যাচের জন্য । আচ্ছা তোমরা একটা কাজ করো । আজকে সিভিল ড্রেসেই ক্লাস করো । আমি তোমাদের সময়মতো সব জানাবো । 
ওয়াসি আর বাপ্পি ক্লাসে চলে এলো । প্রথম পিরিয়ড শেষ  । আশরাফুল স্যার বেড়িয়ে আসার পড়েই ওরা ক্লাসে ঢোকে । টিচার্স রুমের কাছাকাছি আসতেই আশরাফুল স্যার এর কাছে হাসান স্যার এর একটা ফোন আসে ।
আশরাফুল স্যারঃ জী হাসান স্যার, বলেন । 
হাসান স্যারঃ স্যার আপনার কি এখন কোন ক্লাস আছে??
আশরাফুল স্যারঃ না স্যার । 
হাসান স্যারঃ আপনি কি এখনই একটু কেমিস্ট্রি ল্যাবে আসতে পারবেন?
আশরাফুল স্যারঃ আচ্ছা স্যার । আমি আসছি । 
একটু পরে আশরাফুল স্যার গেলেন হাসান স্যার এর কাছে । 
হাসান স্যারঃ স্যার, এই বোতলের পানির সাথে কিছু মেশানো আছে কি না আপনি বলতে পারবেন কি? 
আশরাফুল স্যারঃ আপনিই তো পারবেন ।
হাসান স্যারঃ আমার এখন ক্লাস আছে । আর একটু তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয় । তাই আপনাকে ডাকলাম । 
আশরাফুল স্যারঃ আচ্ছা স্যার । আমি দেখছি কি করা যায় । 
হাসান স্যার চলে এলেন ।  
এদিকে সুজিত স্যার এলেন ক্লাসরুমে । ক্লাসরুমে তখন ক্লাস করাচ্ছিলেন তানিয়া মেডাম ।
সুজিত স্যারঃ মেডাম একটু আসি । 
এরপর সুজিত স্যার মহিদুলকে নিয়ে ভেতরে এলেন । 
সুজিত স্যারঃ সবাই শোনো । বেচারা ছেলেটা নির্দোষ । ও কিছুই করেনি । আমি শুধু শুধুই ওকে বকেছিলাম । 
তখনই সুজিত স্যার এর চোখে পড়ে সামি একটা কাগজ খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে । কাছে যেয়ে হঠাৎ ওর হাত থেকে কাগজটা কেড়ে নেয় । সামি হঠাৎ চমকে যায় । সুজিত স্যার দেখল এটা একটা লাভ লেটার ।
সুজিত স্যারঃ (রেগে গিয়ে) কি? এই বয়সে প্রেম করছো?
সামিঃ (ভয় পেয়ে) না স্যার, আমি এটা (এশরারের দিকে ঈশারা করে) এর ব্যাগ থেকে পেয়েছি । 
এশরারঃ না স্যার, এটা মোটেও আমার ব্যাগে ছিল না । 
সামিঃ কি! তুই মিথ্যে বলছিস কেন? স্যার আমি নিজে দেখেছি । ওকে একটা মেয়ে এটা দিয়েছে । 
এশরারঃ সামি! ভালো হচ্ছে না কিন্তু । উদর পিণ্ডি বুদর ঘাড়ে দিবি না কিন্তু । 
সামিঃ এশরার! খারাপ হচ্ছে কিন্তু । নিজের গার্লফ্রেন্ড আমার গার্লফ্রেন্ড বানাবি না ।
ইতোমধ্যে ওদের ঝগড়া শুনে সব ছাত্রছাত্রীরা হাসাহাসি শুরু করে দিলো । তানিয়া মেডামও হাসি আটকে রাখতে পারলেন না । মুচকি মুচকি হাসলেন । সুজিত স্যার ক্রমাগত বিরক্ত হচ্ছেন । 
এশরারঃ তুই একটা হারামি ।
সামিঃ তুই একটা গর্দভ ।
এশরারঃ তুই একটা কুত্তা । 
সামিঃ তুই একটা কাউয়া ।
এশরারঃ তুই একটা হুতুম ।  
সামিঃ এশরার! মুখ খারাপ করাইস না আমার! সবার সামনে আমাকে বাজে গালি দিতে বাধ্য করিস না কিন্তু!
এশরারঃ সামি! বাজে গালি আমিও কিন্তু কম পারিনা কিন্তু! শুরু করলে এই ক্লাসে আর কেউ থাকতে পারবে না কিন্তু । 
সুজিত স্যারঃ এই তোমরা কি শুরু করলে? থামো । 
সামিঃ স্যার, বিশ্বাস করেন, আমি কিছুই জানি না ।
এশরারঃ স্যার সত্যি বিশ্বাস করেন । আমিও কিছু জানি না । 
সামিঃ মিথ্যা । তুই সবই জানিস । 
এশরারঃ না । তুই সব জানিস । 
সামিঃ এশরার! খারাপ হচ্ছে কিন্তু! 
এশরারঃ সামি! ভালো হচ্ছেনা কিন্তু! 
সুজিত স্যারঃ আহ! আবার শুরু করলে । খবরদার খবরদার । দুজনেই চুপ থাক । 
দুজনেই চুপ করলো । 
সুজিত স্যারঃ এর আগেও একটা ছেলের কাছে এরকম চিঠি পেয়েছিলো আরেকটা ছেলে । এই ক্লাসেই । ওকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার কি করেছেন আমি জানি না । আমি ভাবছি কেন তোমরা বার বার এই লাভ লেটারের কেসে ধরা খাচ্ছ? কেন তোমরা? আর কেউ নয় কেন?
সুজিত স্যার আর কিছু বললেন না । মহিদুল ততক্ষনে নিজের সিটে যেয়ে বসে পড়েছে । ঠিক তখন সুজিত স্যার এর কাছে একটা ফোন এলো । 
সুজিত স্যারঃ হ্যালো?
ফোনের ওপাশ থেকে নুরুল ইসলাম স্যার বললেন,
নুরুল ইসলাম স্যারঃ হ্যালো স্যার, আপনি কোথায়?
সুজিত স্যারঃ স্যার আমি তো ক্লাস টেনে আছি । 
নুরুল ইসলাম স্যারঃ আহা, আপনাকে বলেছিলাম না আজকের ম্যাচটায় একটু তাড়াতাড়ি মাঠে আসতে, তাড়াতাড়ি আসেন । 
সুজিত স্যার কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলেন নুরুল ইসলাম স্যার  । সুজিত স্যার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, 
সুজিত স্যারঃ তোমাদের আমি পরে দেখছি ।
বলেই সুজিত স্যার চলে গেলেন মাঠের দিকে । তানিয়া মেডাম সামি আর এশরারকে বসতে বললেন । ঠিক তখনই মাঠ থেকে মাইকে বলা হল সব খেলোয়াড়দের মাঠে আসতে । সব খেলোয়াড়রা মাঠে চলে গেলো । 
ক্লাস শেষ হতেই সব শিক্ষার্থীরাও চলে গেলো খেলা দেখতে । সামি ক্লাসে বসে এশরারের সাথে ঝগড়া করছে । 
সামিঃ তুই মিথ্যা কইলি ক্যান?
এশরারঃ মিথ্যা তো তুইও কইসোস ।
সামিঃ প্রথম কথা তো ঠিকই বলসিলাম । তোর ব্যাগেই তো আমি ওইটা পাইসি । 
এশরারঃ একটু তুই বন্ধুর জন্য চুপ থাকতে পারলি না?
সামিঃ ক্যান? আগে আপনি বাচলে বাপের নাম । কিংবা চাচা আপন পরান বাঁচা এসব প্রবাদ শুনিস নি?
এশরারঃ সমরে আমরা শান্তিতে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এই প্রবাদ শুনিস নি?
সামিঃ আসলেই । প্রবাদগুলা বোঝা একটু ঝামেলা । 
এশরারঃ বাদ দে বন্ধু । চল যাই । খেলা দেখতে যাই । তুমি রবিন, আর আমি মারলিন । খেলা হপ্পে । 
বলেই দুজনে চলে গেলো মাঠের দিকে । 
এদিকে হাসান স্যার ক্লাস শেষে চলে এলেন আশরাফুল স্যার এর কাছে । 
হাসান স্যারঃ স্যার কিছু পেলেন??
আশরাফুল স্যার তখন টেস্টটিউবে কি একটা পদার্থ নিয়ে ঝাকাচ্ছিলেন আর গন্ধ নিচ্ছিলেন । 
আশরাফুল স্যারঃ স্যার, যদ্দুর মনে হল, এতে কোন ঘুমের ওষুধ মেশান ছিল যেটা খেলে খুব শীঘ্রই কেউ ঘুমিয়ে  পরবে । 
হাসান স্যারঃ কিন্তু ওয়াসি কেন ঘুমের বোতলসহ পানি আনতে যাবে? 
আশরাফুল স্যারঃ আচ্ছা স্যার, কাহিনীটা কি বলেন তো । 
হাসান স্যার সব কাহিনী আশরাফুল স্যারকে খুলে বললেন । 
আশরাফুল স্যারঃ ও হ্যাঁ, গতকাল একটা ছেলেকে আমি আর কল্যান স্যার অ্যাসেম্বলি থেকে ক্লাসরুমে এনেছিলাম । ওর পরে আবার ক্লাসেও একজন অজ্ঞান হয়েছিলো?
হাসান স্যারঃ জী স্যার । 
আশরাফুল স্যারঃ কিন্তু ঐ ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কেই বা স্কুলে আসবে বলুন তো?
হাসান স্যারঃ সেটাই তো বুঝতে পারছিনা ।
আশরাফুল স্যারঃ আচ্ছা বাদ দেন । পরে ভাইবেন এটা নিয়ে । আগে চলুন, মাঠে যেয়ে খেলা দেখে আসি ।
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ চলুন ।
মাঠে খেলা হচ্ছে । রবিন আর মারলিন । আজকে শাহরিয়ার সোহানের যে করেই হোক জিততে হবে । সেটাই হবে ড্যানি ভাইকে ওকে ফ্যালকন হাউজ থেকে বের করে দেবার জবাব । 
খেলা শুরু হল । মারলিনে ক্লাস টেনের তিনজন আছে  । রিদু, জিম, আর মাসুদ । প্রথম অর্ধেকে ২টা গোল করলো মারলিন । একটা করেছে মাসুদ, আরেকটা ক্লাস নাইনের একটা ছেলে । এরপর ১৫ মিনিট বিরতি ।
পরোখ ভাইঃ কি করছো? তুমি গোল দিতে পারছ না কেন?
শাহরিয়ার সোহানঃ ভাই টিমে তো ভালো খুব একটা প্লেয়ার নেই । আমাকে বল পাস দিতে বললে ওরা ঠিকঠাক মতো পাস দেয় না ।
পরোখ ভাইঃ তাও ঠিক । তোমাকে বলে কি হবে । টিমের প্রায় অর্ধেক প্লেয়ারই তো ঠিকঠাক মতো খেলতে পারে না । 
শাহরিয়ার সোহানঃ চিন্তা করবেন না ভাই । আমরা আর যারা ভালো খেলোয়াড় আছি, এদের নিয়েই ম্যাচটা জিততেই হবে । 
পরোখ ভাই আর কিছু বললেন না । 
খেলা আবার শুরু হল । শুরু হবার সাথে সাথেই বল নিয়ে কাটিয়ে কাটিয়ে কাউকে পাস না দিয়ে একটা গোল করে ফেলল শাহরিয়ার সোহান । 
এরপর ৭৫ মিনিটের মাথায় আরেকটা গোল করলেন পরোখ ভাই । এরপর খেলা চলতে লাগলো । কখনো রবিনের গোলপোস্টের কাছে বল আসে, কখনো মারলিনের গোলপোস্টের কাছে আসে । ৮৮ মিনিটে আরেকটা গোল করে রবিনের একটা ছেলে । একটু পর শুরু হয়ে যায় এক্সট্রা সময় । খেলা শেষ হতে যখন ২ মিনিট বাকি, তখনই মাসুদ বল নিয়ে দেয় একটা দৌড় । রবিনের গোলপোস্টের কাছে গোল কিপার আর দুজন প্লেয়ার ছিল । মাসুদ একটু দূর যেয়ে বলটা পাস দেয় রিদুর কাছে । রিদু বলটা নিয়ে গোলপোস্টের কাছাকাছি যেতেই একটা ছেলে ওর সামনে চলে আসে । রিদু বলটা পাস করে দেয় জিমের কাছে  । জিমের সামনে ফাঁকা কেউ নেই । কেবল গোলকিপার । বল ছুঁড়ে মারলে গোলকিপার ধরতে না পারলে ইজি গোল । একটু দুর থেকে যেই-ই বলটা কিক করতে যাবে, অমনি কোত্থেকে শাহরিয়ার সোহান জীমের পা থেকে বলটা কেড়ে নিয়ে পাঠিয়ে দিলো আরেক পাশে ৷ একটু পর বাশি বাজলে খেলা শেষ হয়ে যায় ৷ জয়ী হয় ফ্যালকন ৷ নিয়ম অনুযায়ী মাঠে অন্যপাশের ছাউনীতে ড্যানি ভাই বসে বসে শাহরিয়ার সোহানের দিকে তাকিয়েছিলেন ৷ উনার মুখটা দেখে শাহরিয়ার সোহানের বেশ হাসি পাচ্ছিলো ৷ কিন্তু সেই হাসিটা প্রকাশ করলো না ৷ ড্যানি ভাইয়ের চেহারাটা দেখার মতো ছিলো ৷ খেলা শেষে পরোখ ভাই উনার টিমকে নিয়ে মাঠে একপাশে কিছুক্ষণ কথা বললেন ৷ তারপর সবাইকে ক্লাসে যেতে বলে উনি শাহরিয়ার সোহানের সাথে কথা বললেন ৷ 
পরোখ ভাই: কী করবো বলোতো ৷ টিমে তো তেমন ভালো প্লেয়ার নেই ৷ পরশু কীভাবে কী খেলবো?
শাহরিয়ার সোহান: খেলার কী দরকার ৷ জেনেই নিন হারবো ৷ 
পরোখ ভাই: কীভাবে বুঝলে?
শাহরিয়ার সোহান: ঈগল হাউজের বেশিরভাগই ভালো ভালো খেলোয়াড় ৷ ওদের সাথে আমাদের মতো এই দুর্বল টিমের খেলা জেতাটা এতো সহজ না ৷ 
পরোখ ভাই: কিন্তু এর জন্য কী আমি দ্বায়ী?
শাহরিয়ার সোহান: অবশ্যই আপনি দ্বায়ী ৷ শুরুতে যদি বেশি ভালো প্লেয়ার পাওয়ার ধান্দায় ভালো খেলোয়াড়গুলোকে বাদ না দিতেন, তাহলে কখনোই এরকমটা হতো না ৷
পরোখ ভাই: (হালকা রেগে) বড়দের মুখে মুখে তর্ক কোরো না ৷ পরিণতি খারাপ হবে কিন্তু ৷
শাহরিয়ার সোহান: আপনার কাছে খারাপ লাগলে মাফ চাইছি ৷ কিন্তু সত্যিই দোষটা আপনার ৷ শুধু যে বাছাই পর্বে বাদ দেয়া তা না ৷ আপনি পুষ্পকে বাদ দিয়েও আরেকটা ভুল করেছেন ৷ ও থাকলেও আরেকটা আশা ছিলো ৷
পরোখ ভাই: (প্রচুর রেগে) তোমার চেয়ে আমি বড় ৷ সুতরাং কী ভালো সেটা আমি ভালো বুঝবো ৷
শাহরিয়ার সোহান: মাঝে মাঝে বড়রাও ভুল করে এবং ছোটরা তা শুধরে দেয় ৷
পরোখ ভাই: (প্রচুর রেগে) পরশু তুমি ফাইনাল খেলবে না ৷
শাহরিয়ার সোহান: কিন্তু........
পরোখ ভাই: (শাহরিয়ার সোহানের কথা শেষ করতে না দিয়েই) কিন্তু হ্যাঁ ৷ মনে কোরো না, আমি আমার তোমাকে খেলায় ডাকবো ৷ আমি কাউকে বাদ দিয়ে আবার ডাকার মানুষ না ৷ হারি কি জিতি তাতে আমার কিছু যায় আসে না ৷ 
বলেই পরোখ ভাই সেখান থেকে চলে গেলেন ৷ শাহরিয়ার সোহান সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ৷ বলার ভাষা খুঁজে পেল না ৷
এদিকে সবাই ক্লাসে বসে আছে ৷ জেসি রহমান আর সানজিদা রহমান কথা বলছে ৷
জেসি রহমানঃ আচ্ছা, ঢাকায় যারা গেলো, ওদের খবর কি রে?
সানজিদা রহমানঃ কি জানি । যদ্দুর শুনেছিলাম, সাইফুল স্যার নাকি খাট ভেঙে পরে গেছেন । 
জেসি রহমানঃ সত্যি! 
সানজিদা রহমানঃ হ্যাঁ রে । আর শনি বার ওদের ফাইনাল । রবিবার ওরা চলে আসবে আর সোমবার ওদের সাথে আমাদের দেখা হবে ।
জেসি রহমান: ভালো কথা, মীর সামিয়ার পরে কিছু হয়েছিল?
সানজিদা রহমান: কীসের পর?
জেসি রহমান: ওই যে, ব্যাগের ভেতর সিগারেটের প্যাকেট পাওয়া গেলো যে ৷
সানজিদা রহমান: না ৷ এরপর ওকে আর কিছুই বলা হয় নি ৷ 
জেসি রহমান: ও আচ্ছা ৷ 
৫ম পিরিয়ড ৷ ক্লাস তখন ইংরেজী ২য় জাফর সাদেক স্যারের ৷ স্যার আসার পর সবাই প্রতিদিন যা করে তা করলো ঠিকই কিন্তু কথা ঠিকই চালিয়ে গেল ৷ জাফর স্যার বইটা ডেস্কের ওপর রেখে ডেস্কের সাথে হেলান দিয়ে চুপ করে সবার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইলেন ৷ সবাই কথা বলার ফাঁকে স্যারকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চুপ করলো ৷ ধীরে ধীরে পুরো ক্লাস চুপ হয়ে গেলো ৷ 
জাফর স্যার: তোমাদের মুল্যবান কথাবার্তা শেষ হলে আমি আমার সস্তা পড়াশুনা শুরু করতে পারি?
সবাই স্যারের কথা শুনে হেসে দিলো ৷ স্যার হঠাৎ ধমকের স্বরে বললেন,
জাফর স্যার: আমি কোন হাসির কথা বলছি না ৷ একটা serious কথা বলছি ৷ সব কিছুতে ইয়ার্কি কেন খোঁজ তোমরা?
সবাই চুপ হয়ে গেল ৷ কেউ কিছু বললো না ৷ 
জাফর স্যার: খাতা কলম বের করো ৷
এরপর স্যার ক্লাস করানো শুরু করলেন ৷ ক্লাসে মাঝখানে একজন কর্মচারী আন্টি হাতে একটা নোটিশ নিয়ে এলেন ৷
জাফর স্যার: কি এটা খালা?
আন্টি: স্যার এইডা ছুডির নটিশ ৷ পইড়া দ্যাহেন ৷
জাফর স্যার নোটিশটা হাতে নিলেন এবং সকলকে পড়ে শোনালেন ৷
জাফর স্যার: সকলের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, আগামি ১০ মার্চ ২০১৮ আন্ত হাউজ ফুটবল খেলার ফাইনালের জন্য সকলের স্কুল বন্ধ থাকবে ৷ খেলা হবে বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে ৷ শহর থেকে বাস ৩টা ৪৫ এবং কলেজ থেকে বাস ৬টা ১৫ মিনিট ৷
এরপর স্যার আন্টির হাতে নোটিশটা দিলেন এবং আন্টি নোটিশ নিয়ে চলে গেলেন ৷ জাফর স্যার ক্লাস করিয়ে চলে গেলেন ৷ এবার রাখিব স্যারের কাজ ৷ কিন্তু আজও স্যার ব্যাস্ত ৷ ক্লাসে অন্যান্য দিনের মতো সেই কথাবার্তা ৷ ঠিক সেই সময় হাসান স্যার আর আশরাফুল স্যারকে আসতে দেখে সবাই ক্লাসে চলে গেল ৷ হাসান স্যার আর আশরাফুল স্যার ক্লাসে আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো ৷
হাসান স্যার: বসো সবাই ৷
সবাই বসলো ৷ হাসান স্যার মহিদুলের কাছে এলেন ৷
হাসান স্যার: সুজিত স্যার কি বলেছেন?
মহিদুল: প্রথমে তো ঝারি দিয়েছিলেন, কিন্ত পরে আবার প্রিন্সিপাল স্যার এসে কি বললেন, আর আমাকে ক্লাসে দিয়ে বললেন আমি নির্দোষ ৷
হাসান স্যার: আচ্ছা ঠিক আছে ৷
লাস্ট বেঞ্চে বসে ছিলো সিভিল ড্রেস পরিহিত ওয়াসি আর বাপ্পি ৷
হাসান স্যার: ওয়াসি আর তেল.....মানে বাপ্পি এসো আমাদের সাথে ৷ 
ওয়াসি আর বাপ্পি গেলো স্যারের সাথে ৷ মহিদুল তখন বসে বসে কি যেন ভাবছিলো ৷ 
নওশাদ: এই মহিদুল ৷
মহিদুল ভাবনা থেকে ফিরে এলো ৷
মহিদুল: হ্যা বল ৷
নওশাদ: তুই কী সত্যই এই কাজ করসিস?
মহিদুল: আরে না ৷ আমি তো ফেসবুকেই ঢুকি না অনেকদিন হয়ে গেল ৷
নওশাদ: আচ্ছা তৃণ যে ঋজু নামের একটা ভাইয়ার কথা বলেছিল এটা উনারই কোনো চালাকি নয়তো? 
মহিদুল: জানি না ৷ কিন্তু উনি যদি সত্যিই এ কাজ করে থাকেন তাহলে কেন করেছেন? তৃণ যে বলল মির সামিয়া রহমানের ব্যাগে সিগারেট নাকি ওই ঋজু ভাই-ই রাখসে, উনার সমস্যাটা কি? আমাদের সাথে উনার কীসের এতো শত্রুতা?
নওশাদ আর কিছু বলল না ৷ কারণ ওর কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই ৷ এদিকে শাহরিয়ার সোহান তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছে ৷ পরশু ফাইনাল আর আজই পরোখ ভাই ওকে টিম থেকে বের করে দিলো ৷ যদিও হঠাৎ করে টিম থেকে কাউকে বের করে দেয়া নুরুল ইসলাম স্যার মেনে নেবেন কি না কে জানে ৷ ভাবতে ভাবতে ও যখন ক্লাসরুমের দিকে তাকালো, তখন দেখলো নাফিজকে ৷ নাফিজ তখন এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আর কি যেন ভাবছে ৷ নাফিজের হাতে থাকা কলমটা যেন নাফিজের অজান্তেই খাতার ওপর কী সব লিখছে ৷ ঠোঁটটা দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ও হাসছে না কাদছে ৷ শাহরিয়ার সোহান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে নাফিজের দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ তারপর ওর কাছে গেল ৷ বিড় বিড় করে কি সব বলছে ৷ শাহরিয়ার সোহান একটু মনোযোগ দিয়ে সব শুনলো ৷ 
নাফিজ: রহস্য৷ সবই রহস্য ৷ এ রহস্য আমাদের ছাড়বে না ৷ রহস্যের মায়াজালে আটকে গেছি আমরা ৷ 
শাহরিয়ার সোহান: কী রে? তুই বিড় বিড় করে কি সব বলছিস?
নাফিজ এমন একটা ভান করলো যে ও এতক্ষণ শাহরিয়ার সোহানকে দেখেই নি ৷
নাফিজ: কী রে? তুই কি করিস এখানে?
শাহরিয়ার সোহান: ইয়ার্কি বন্ধ কর ৷ পাগল হইসিস নাকি?
নাফিজের পাশেই ছিলো আরিক ৷ এতক্ষণ শাহরিয়ার সোহান আর নাফিজের কথোপকথন শুনছিলো ৷
আরিক: ওর কথা বাদ দে তো ৷ ও যে কি শুরু করতেসে ৷ ওর পরীক্ষা এবার খারাপ হবে ৷ 
শাহরিয়ার সোহান: ক্যান? কি হইসে রে?
আরিক: আরে ধুর ৷ সারাদিন কি সব ভাবে ৷ ওর আদৌ পরীক্ষায় ভালো করার ইচ্ছা আছে কি না আল্লাহই জানেন ৷
শাহরিয়ার সোহান: শোন নাফিজ ৷ তোর এইসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে একটু পড়ায় মন দে ৷ 
নাফিজ: আরে, আমি তো সব সময় চিন্তা.........
শাহরিয়ার সোহান: উহু ৷ এস এস সি মানে সব সময় চিন্তা নয় ৷ এস এস সি মানে সেকেন্ডারী স্কুল সার্টিফিকেট ৷
বলেই সেখান থেকে চলে এলো শাহরিয়ার সোহান ৷ নাফিজ আবার এই "সব সময় চিন্তা" আর "সেকেন্ডারী স্কুল সার্টিফিকেট শব্দ দুটি নিয়ে চিন্তায় মশগুল হয়ে গেল ৷ এপাশে বসে কথা বলছে আদ্রিতা আর ফারিহা বিনতে আলি ৷ 
আদ্রিতা: এরপর কার ক্লাস?
ফারিহা বিনতে আলি ব্যাগ থেকে ডায়েরীটা বের করে খুজতে লাগলো রুটিন লেখা পাতাটা ৷ তারপর বলল,
ফারিহা বিনতে আলি: কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা ৷ বাহারুল স্যারের ৷ 
আদ্রিতা: ও আচ্ছা ৷ বলেই চলে গেল নিজের সিটে ৷ হঠাৎ চোখ পড়লো লামিয়া মেয়েটা কাদছে ৷ বেচারীকে কাদতে দেখে বেশ মায়া হচ্ছে ৷ তাই ওর কাছে যেয়ে বসলো ৷
আদ্রিতা: কী রে? কাঁদছিস কেন?
লামিয়া: (কাঁদতে কাঁদতে) কাল নানা বাড়ি যাচ্ছি ৷
কিছুদিন আগে শুনেছিলো ওর নানা অসুস্থ ৷ হয়তো উনাকেই দেখতে যাচ্ছে ৷ বেচারী মনে হয় ওর নানাকে খুব ভালোবাসে ৷ 
আদ্রিতা: আচ্ছা কাঁদিস না ৷ বাড়তে যা, দেখবি তোর নানা সুস্থ হয়ে যাবে ৷
লামিয়া: নানা আবার কবে অসুস্থ ছিলো?
আদ্রিতা: ওই যে, একবার বলেছিলি না ৷
লামিয়া: সে তো কবে সুস্থ হয়ে গেছে ৷ 
আদ্রিতা: বাহ! তা তো সুখবর ৷ তাহলে তুই কাদছিস কেন?
লামিয়া: বাড়িতে তো একটা টিভি ৷
আদ্রিতা: (অবাক হয়ে) তো?
লামিয়া: আমার নানু খালি ওই ডাব্লু ডাব্লু মারামারি দ্যাখে ৷ 
আদ্রিতা: দ্যাখে তো, অনেকেই দ্যাখে ৷ যদিও আমি দেখি না ৷ আমার ভালো লাগে না ৷ 
লামিয়া: সেটাই তো ৷ আমারও তো ভালো লাগে না ৷ 
আদ্রিতা: তো এতে কাঁদার কী হলো?
লামিয়া: কাঁদছি তো সেজন্য না ৷ কাদছি কারণ........
হঠাৎ চুপ হয়ে গেল লামিয়া ৷ আদ্রিতাই একটু পর বলে উঠলো,
আদ্রিতা: কী রে? বল ৷ 
লামিয়া: কারণ আমি বাড়ি যেয়ে একটা হিন্দি সিরিয়ালও দেখতে পারবো না ৷ কতগুলো পর্ব মিস করবো বল ৷
বলেই আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো লামিয়া ৷ আদ্রিতা কিছু না বলে হালকা কেশে সেখান থেকে চলে এলো ৷ 
ওদিকে বায়োলজি ল্যাবে হাসান স্যার আর আশরাফুল স্যারের সামনে বসে আছে বাপ্পি আর ওয়াসি ৷
হাসান স্যার: শোনো ওয়াসী ৷ তোমার বোতলের পানিতে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিলো ৷
ওয়াসী: স্যার মানে কী! আপনিই বলেন আমি কেন ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানি আনতে যাবো?
হাসান স্যার: না না ৷ সমস্যা তো সেটা না ৷ আমরা তোমাকে সন্দেহ করছি না ৷ 
আশরাফুল স্যার: স্যার এই ওষুধ কিন্তু নেশা করতেও ব্যবহৃত হয় ৷ 
হাসান স্যার: কিন্তু ওর পানিতে আসলো কীভাবে?
আশরাফুল স্যার: কে জানে ৷ ব্যাপারটা মনে হয় অমিমাংসীত রয়ে যাবে ৷
হাসান স্যার: কেন?
আশরাফুল স্যার: আপনিই বলেন, এই ব্যাপারটার কি কূলকিনারা করবেন? আমাদের হাতে তেমন কোনো প্রমান নেই যে কে এতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছে তা খুঁজে বের করবো ৷ 
হাসান স্যার: সেটাও একটা কথা ৷
বলেই হাসান স্যার নড়ে চড়ে বসলেন ৷ 
তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন
হাসান স্যার: তোমরা এক কাজ করো, বাসায় চলে ৷ এ ব্যাপার নিয়ে আসলেই মাথা ঘামিয়ে কোনো লাভ নেই ৷
ওয়াসী: কিন্তু স্যার, একবার ঘটেছে বলে আবার যে ঘটবে না, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই ৷ এরপর অন্য কেউ Victim হতে পারে ৷ আবার ঘুমের ওষুধের জায়গায় বিষও মিশিয়ে দিতে পারে ৷
হাসান স্যার: হুমম ৷ তোমরা পরদিন থেকে বাসা থেকে আর পানি আনার দরকার নেই ৷ যদ্দুর মনে হয় তোমরা যখন বাসা থেকে বের হও, তখনই কেউ তোমাদের বুঝতে না দিয়ে তোমাদের পানির বোতলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছে ৷ আর আমার যদ্দুর মনে হয় যে এই কাজটা করেছে সে হলো ঋজু ৷
ওয়াসী: তৃণ আর সাকিব যার কথা বলেছিলো?
হাসান স্যার: হুমম ৷ ছেলেটার যে কী সমস্যা বুঝতেই পারছি না ৷ ও কি পাগল, নাকি অটিস্টিক ৷
আশরাফুল স্যার: যাই হোক স্যার, আমার এখন যাওয়া লাগবে ৷ ক্লাস আছে ৷ শেষ পিরিয়ড তো এখন ৷
হাসান স্যার: জী স্যার আমিও যাবো ৷ আমারও ক্লাস আছে ৷ ওয়াসী আর বাপ্পি, তোমরা একটা কাজ করো ৷ তোমরা বাসায় না যেয়ে ক্লাসেই যাও ৷ একটু পরেই তো ক্লাস শেষ হবে, তোমরা না হয় তখনই বাসায় গেলে ৷ 
বাপ্পী: থ্যাঙ্ক ইউ স্যার ৷ আপনাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম আর অনেক কষ্ট দিলাম স্যার ৷ আপনাদের এই মূল্যবান সময় হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারবো না কিন্তু একটা ধন্যবাদ অন্তত দিতে পারি স্যার ৷ 
ওয়াসী: আহা! সাহিত্যিকভাবে তেল দেয়া শুনলাম প্রথমবার ৷ 
এরপর ওয়াসি আর বাপ্পি চলে গেলো ক্লাসে । ক্লাসে তখন বাহারুল ইসলাম স্যার এসেছে । 
ওয়াসিঃ স্যার আসবো?
বাহারুল স্যারঃ তোমরা কোথায় ছিলে? আর তোমরা সিভিল ড্রেসে কেন?
ওয়াসি আর বাপ্পি তারপর স্যারকে সব খুলে বলল । 
বাহারুল স্যারঃ ঠিক আছে ভেতরে এসো। কিন্ত এরপর থেকে যে কারনেই আসো না কেন, স্কুল টাইমে কখনো সিভিল ড্রেসে এসো না  
ওয়াসি আর বাপ্পি ভেতরে চলে গেলো । 
বাহারুল স্যারঃ তোমাদের কারো কাছে সি এস বইটা আছে?
হঠাৎ একপাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো, “স্যার সিএস কি?”
বাহারুল স্যারঃ কে বলল কথাটা?
কেউ দাঁড়ালো না ।
বাহারুল স্যারঃ কে বলল বলো, আমি কিছু বলব না । 
মেয়েটা তাও দাঁড়ালো না । হয়তো ভয় পেয়েছে । আসলে কথাটা বলেছিল ফাইহি । 
বাহারুল স্যারঃ আচ্ছা যেইই বলো না কেন, এতদিন ধরে তোমরা একটা সাবজেক্ট পড়ছ, মানে একসময় পড়তে । তোমাদের ক্লাস টেনে তো এই সাবজেক্টটা নেই । যাই হোক, এতদিন পড়তে তাও-ও জানো না সিএস কি । আচ্ছা আমি আরেকবার বলি । সি এস হল ক্যারিয়ার স্টাডিস এর সংক্ষিপ্ত রুপ । আর ক্যারিয়ার স্টাডিস বাংলা আশা করি জানো । তাও বলি, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা । 
ফাইহিই আবার মাঝ থেকে বলে উঠলো,
ফাইহিঃ স্যার, বইটা কই আছে তাই-ই তো জানি না । 
বাহারুল স্যারঃ তোমরা অনেকেই বইটাকে অবহেলা করো । কিন্তু বইটা তোমাদের ক্যারিয়ারের জন্য খুবই উপকারি । তাই তোমরা না আনলেও আমি বই এনেছি, আমি তোমাদের পড়াবো । 
এরপর স্যার পড়ানো শেষ করলেন । স্যার এর পড়ানো শেষে ক্লাস ছুটি হয়ে যায়, সবাই যে যার বাসায় চলে যায় । 
পরদিন ছিল শুক্রবার । তারপর দিন শনিবার প্রতি সপ্তাহে ক্লাস থাকলেও সেদিনের জন্য ছুটি । কারণ সেদিন ১০ মার্চ ২০১৮ এবং ফুটবল ম্যাচের ফাইনাল । সবার মাঝেই টান টান উত্তেজনা । কারণ অবশেষে চলে এলো ১০ তারিখ ৷ সেই সময় যার জন্য এতো দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা ৷ আন্ত হাউজ ফুটবল ম্যাচের ফাইনাল ৷ ঈগল আর রবিন ৷ সবাই মাঠে নামলো ৷ মাঠের একপাশে মন খারাপ করে বসে আছে শাহরিয়ার সোহান ৷ ঈগল হাউজের ক্যাপ্টেন রোহিত ভাই খুব খুশি ৷ রবিনকে হারানো খুবই সহজ ৷ ভালো প্লেয়ার তো নেই বললেই তো চলে, তার মধ্যে আবার পরোখ ভাই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । গতকালতো উনি অনেক কথাই শাহরিয়ার সোহানকে শোনালেন, তারপর ওকে আবার মাঠে নামানো উনার জন্য ছিল অপমানজনক, তার মধ্যে না নামালে হার নিশ্চিত এসব ভেবে ভেবে উনি চিন্তায় অসুস্থ । ঈগলের শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই উল্লাস করছে । রবিনের শিক্ষার্থীরা রাগ করে ক্যান্টিনে চলে গেছে । নুরুল ইসলাম স্যার এর বাঁশির শব্দে শুরু হল খেলা । বল নিয়ে এগিয়েই প্রথম ১ মিনিটে গোল করে দিলো ঈগল । এরপর আবার খেলা শুরু । ২৫ মিনিটের দিকে ঘটে গেলো আরেক মারাত্বক ঘটনা । রবিনের আরেকটা মোটামুটি ভালো প্লেয়ার ছিল সে ঈগল হাউজের একটা ছেলের সাথে রেগে যেয়ে মারামারি শুরু করে দেয় । আর যতো অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকে । এক পর্যায়ে রবিনের ছেলেটার কপালের বা পাশে আর ঈগলের ছেলেটার নাক দিয়ে রক্ত পর্যন্ত বেড়িয়ে যায় । এমন একটা অবস্থা হয়, যে সবাই খেলা বাদ দিয়ে ঐ মারামারি থামানতে ব্যাস্ত হয়ে যায় । যা হোক, রবিনের ছেলেটাকে রেড কার্ড দেখিয়ে  দুজনকেই নিয়ে যাওয়া হয় ফার্স্ট এইড দেবার জন্য । এরপর একটু পরে আবার খেলা শুরু । রবিনের না পারা খেলোয়াড়গুলো আন্দাজে খেলতে খেলতে শুধু ফাউল করে, আর ঈগল পেনাল্টি পায় । ৭৬ মিনিটের কাছে যেয়ে ঈগল হাউজের আরেফিন আরেকটা গোল করে । শেষ ১ মিনিটের সময় আবার শাওন একটা গোল করে । তারপর বাঁশির আওয়াজ পড়ার সাথে সাথে ঈগল হাউজের শিক্ষার্থীদের মাঝে উল্লাস শোনা যায় । সবাই খুব খুশি । ৩-০ গোলের ব্যাবধানে একটা বড় জয় অর্জন করেছে ওরা । রবিন চ্যাম্পিয়ন না হলেও রানারস আপ হয় । এরপর পুরস্কার বিতরণী । 
পুরস্কার বিতরণী শেষে সবাই বাসার দিকে যাচ্ছিলো । পরোখ ভাই হঠাৎ শাহরিয়ার সোহানের কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,
পরোখ ভাইঃ সরি । পারলে মাফ করে দিয়ো । 
বলেই পরোখ ভাই মাঠে থেকে চলে যান । শাহরিয়ার সোহান ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে । একটু পর ওর মুখে একটা অজানা হাসি ফুটে ওঠে । সাকিব তখন ওর কাছেই আসছিলো । ওর মুখের ঐ অজানা হাসি দেখে বলল, 
সাকিবঃ কিরে, তোর সাথে দুই দুইবার অবিচার করার পরেও তুই এতো খুশি কেন?
শাহরিয়ার সোহানঃ কারণ আমি আমার অবিচারকারী ড্যানি ভাইও উচিত শিক্ষা পেয়েছেন আর আমার বন্ধু শাওন আর আরেফিন অনিকও জিতে গেছে । 
সেদিন শেষ হয়ে গেলো এতদিনের প্র্যাকটিস করা সেই ফুটবল ম্যাচ । 
১১ মার্চ রবিবার । সকালে রাখিব স্যার এর প্রাইভেট শেষে অ্যাসেম্বলির পর সবাই আবার ক্লাসে । প্রথম ক্লাস হাসান স্যার এর ফিসিক্স । হাসান স্যার ক্লাসে এলেন । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালেন, স্যারও সবার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন । এরপর নাম ডাকার খাতাটা খুলে সবার উপস্থিতি দেখলেন । এরর খাতাটা বন্ধ করে ফারিহা বিনতে আলীর কাছে এলেন । 
হাসান স্যারঃ যারা ঢাকায় গেছে ওরা আসবে কবে?
ফারিহা বিনতে আলীঃ স্যার আজকে মনে হয় আসবে আর কাল স্কুলে আসবে । 
হাসান স্যারঃ প্রতিযোগিতায় রেজাল্ট কি হইসে জানো কি?
ফারিহা বিনতে আলীঃ ডিবেটেও রানার্স আপ, স্পেলিং এও রানার্স আপ । 
হাসান স্যারঃ আর কুইজে কিছু হয় নি?
ফারিহা বিনতে আলীঃ না স্যার । কুইজে চতুর্থ হয়েছে কিন্তু পুরস্কার তো কেবল ১ম ২য় আর ৩য়দের দেয় । 
হাসান স্যারঃ ও আচ্ছা । সবাই ফিসিক্স বইটা বের করো । 
কথাটি বলেই হাসান স্যার বোর্ডে কিছু লিখতে যাবেন, ঠিক সেই সময়, 
বৈশাখীঃ আ!!!!!!!!!!!
এক চিৎকারে চমকে উঠে সবাই বৈশাখীর দিকে তাকাল । বৈশাখী তখন ব্যাগ ঢিল মেরে ক্লাসরুমের পেছনে ফাঁকা জায়গার দিকে পাঠিয়ে দিলো । 
হাসান স্যারঃ কি হইসে?
বৈশাখীঃ স্যার, আমার ব্যাগে সাপ । 
হাসান স্যারঃ What! 
বৈশাখীঃ জী স্যার । 
ক্লাসের সবাই ভয় পেয়ে গেছে । ব্যাগের ভেতর সাপ, কিভাবে । 
হাসান স্যারঃ দাঁড়াও, প্রতীক, এক দৌড়ে ইব্রাহিমকে একটু ডেকে আনো তো । 
প্রতীক দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো । 
হাসান স্যারঃ কিভাবে আসলো সাপ?
বৈশাখীঃ স্যার আমি নিজেও জানি না । আমার বাসায় তো সাপ ওঠা অসম্ভব । 
হাসান স্যারঃ তাহলে কিভাবে কি? 
ঠিক তখন প্রতীক এলো । 
প্রতীকঃ স্যার আসবো?
হাসান স্যারঃ হ্যাঁ আসো । 
সাথে ইব্রাহিম আঙ্কেলও হাতে একটা লাঠি নিয়ে এসেছে ।  উনি আমাদের স্কুলের একজন কর্মচারী । 
ইব্রাহিম আঙ্কেলঃ স্যার কই সাপ?
হাসান স্যারঃ বৈশাখীর পরে থাকা ব্যাগের দিকে ইশারা করে) ঐ ব্যাগের ভেতর । 
ইব্রাহিম আঙ্কেল ঐ ব্যাগের কাছে গেলেন । লাস্ট বেঞ্চে কয়েকজন বসেছিল ।
ইব্রাহিম আঙ্কেলঃ তুমরা একটু দুরি সরি যাও তো । 
ওরা বেঞ্চ থেকে উঠে সরে গেলো । ইব্রাহিম আঙ্কেল ব্যাগটা হাতে নিয়ে উলটো করে ব্যাগের ভেতর থেকে সাবধানে সব মেঝেতে ফেলে দিলেন সব কিছু পড়ার পর পড়লো ঐ সাপটা । মেয়েরা তো দেখেই এক চিৎকার । এতো জোরে চিৎকার শুনে পাশে ক্লাসের কল্যান স্যার পর্যন্ত চলে এসেছে । ইব্রাহিম আঙ্কেল লাঠি দিয়ে সাপটাকে বাড়ি দিলেন । কিন্তু সাপটার কিছুই হচ্ছে না, এমনকি নড়াচড়াও করছে না । একটু পর ইব্রাহিম আঙ্কেল সাপটাকে হাতে নিলেন । সাপটাকে হাতে নিতে দেখে মেয়ে আরও জোরে দিলো একটা চিৎকার । 
হাসান স্যারঃ (হালকা বিরক্ত হয়ে) আরে আজব তো! এতো চিৎকার কেন করছ তোমরা?
ইব্রাহিম আঙ্কেলঃ (সাপটাকে উচু করে ধরে) স্যার, এইডা তো পেলাস্টিকের খেলনা সাপ । 
কল্যান স্যারঃ খেলনা সাপ দেখে এতো ভয় । 
হাসান স্যারঃ ভয় তো পাবেই । দেখতে তো প্রায়ই আসল সাপের মতো । 
কল্যান স্যারঃ কিন্তু ওইটা ওর ব্যাগে গেলো ক্যামনে?
হাসান স্যারঃ সেইটাই তো অদ্ভুত ব্যাপার । 
কল্যান স্যারঃ তোমরা কেউ আবার মজাটজা করো নাই তো?
কয়েকজন বলে উঠলো, “না স্যার ।” 
কল্যান স্যারঃ তেল এসছে নাকি?
বাপ্পি উঠে দাঁড়ালো । 
কল্যান স্যারঃ (ইয়ার্কি করে) আমি তো তেল বলসি বাপ্পি না । তাইলে আজকে প্রমান হইলো তুমি তেল দাও । নাকি?
সবাই হেসে দিলো । বাপ্পি বেচারা লজ্জায় মুচকি হাসলো । 
কল্যান স্যারঃ যাই হোক । তোমার কাছে না এরকম একটা দেখসিলাম প্রাইভেটে এনেছিলে?
বাপ্পিঃ জী স্যার । কিন্তু এটা আমার না । 
কল্যান স্যারঃ হুট! আমি কি বলসি এটা তোমার? মানে কথা না বুঝেই কথা বলো খালি । 
সবাই আবার হেসে দিলো । 
কল্যান স্যারঃ বসো । 
বাপ্পি বসলো । 
হাসান স্যারঃ আচ্ছা ইব্রাহিম, ওটা একটু আমার ড্রয়ারে রেখে দিয়ে এসো । ইব্রাহিম আঙ্কেল চলে গেলেন । 
হাসান স্যারঃ (যারা বেঞ্চ থেকে সরে গিয়েছিলো) তোমরা বসো । আর বৈশাখী, তোমার ব্যাগ নিয়ে এসো । 
দাঁড়িয়ে থাকা সবাই বসলো আর বৈশাখী যেয়ে ওর ব্যাগ এনে নিজের জায়গায় বসলো । কল্যান স্যারঃ স্যার ঐ পিকনিকের ব্যাপারটা কি করলেন?
হাসান স্যারঃ হুম আমি আজকে ওদের সাথে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু আজকে তো আসল আসল সবাই নেই । ইন্টার শাহিন প্রতিযোগিতা থেকে বাকিরা আসুক তারপর কত্থা বলি ওদের সাথে । 
কল্যান স্যারঃ আচ্ছা স্যার । আসি তাহলে । 
কল্যান স্যার চলে গেলেন । হাসান স্যার বাকি ক্লাস নিয়ে চলে গেলেন । ২য় ক্লাস আশরাফুল স্যার এর । স্যার এলো, সবাই দাঁড়িয়ে সালাম জানালো, স্যারও সবার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন । আশরাফুল স্যার বোর্ডে ব্যাবহারিক লিখলেন ।
আশরাফুল স্যারঃতোমরা আলোকমুখী চলন ব্যাবহারিকটা করে আমাকে দেখাবে । একটা গাছ সংগ্রহ করবে যেটা বোতলের পানিতে শিকড়সহ রাখলে বাচতে পারে । এরপর সেটা পানির ভেতর রেখে জানালার পাশে রেখে দিবে প্রায় ৩-৪ দিন । দেখবা ঐ গাছটা বাইরের দিকে অর্থাৎ আলর দিকে বেকে গেছে । ৩-৪ দিন পর আমাকে দেখাবে । 
এরপর স্যার উনার ক্লাস করানো শুরু করলেন । একটু পড়িয়ে বললেন, 
আশরাফুল স্যারঃ আগেরদিন যা পড়িয়েছিলাম টা কে কে পারবা?
কেউই দাঁড়ালো না । 
আশরাফুল স্যারঃ দ্যাখো, সবসময় ইয়ার্কি করো না । কলিজার হাফ ওসব গানে, সিনেমায় এসব জায়গায় দেয়া যায় । বাস্তবে দেয়া যায় না । তোমরা দয়া করে একটু ভালো করে পড়াশুনা করো । অন্যথায় আমি দেখি তোমাদের ক্লাস থেকে যেতে পারি কি না । 
সবাই চুপ করে আছে । কেউ কোন কথা বলল না ।
আশরাফুল স্যার একটু চুপ থাকার পর আবার পড়ানো শুরু করলেন । ৯টা ৪০এ শেষ হল উনার ক্লাস । ক্লাস থেকে চলে গেলেন আশরাফুল স্যার । সেদিন সেকেন্ড বেঞ্চে হাসিব আর প্রতীক পাশাপাশি বসেছিল । 
হাসিবঃ প্রতীক, ইংরেজি ১ম খাতাটা আনসো?
প্রতীকঃ (ইয়ার্কি করে) আমার খাতা খুন হইসে ।
হাসিবঃ মানে?
প্রতীকঃ গতকাল রাগ করে আমার খাতা কম্পাস দিয়ে ছিঁড়ে ফেলসি । 
হাসিবঃ তাহলে আজকের বাড়ির কাজ করবা না?
প্রতীকঃ হ্যাঁ করবো । কিন্তু কোথায় করবো তাই ভাবছি । অন্য খাতায় করলে তো আবার আজিজুল স্যার বকা দেন । 
হাসিবঃ আচ্ছা ২১শে ফেব্রুয়ারির দিনে কি ঘটেছিলো তোমার মনে আছে?
প্রতীকঃ কি ঘটেছিলো?
হাসিবঃ আরে মনে নাই? একটা আঙ্কেল রিককে মারতে চাইসিলো । 
প্রতীকঃ কবে?
হাসিবঃ আরে বাবা, ২১শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে । 
প্রতীকঃ আমার না কিচ্ছু মনে থাকে না । যতসব আলতু ফালতু কথা মনে থাকে ভালো কিছু মনেই থাকে না । হ্যাঁ তো কি হইসে । 
হাসিবঃ ঐদিন উনাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবার পর ওইদিনই উনার ফাঁসী দেয়া হয় ।
প্রতীকঃ আহারে । এটা কি উচিত । কি করসিলেন উনি?
হাসিবঃ (হালকা রেগে) উফ! কেবলই তো  বললাম । আর উনি একজন সিরিয়াল কিলার ছিলেন ।
প্রতীকঃ আর উনার মেয়েটা?
হাসিবঃ সুইসাইড করেছিলো । 
প্রতীকঃ ইশ । আচ্ছা মানুষ এতো পাগল কেন? 
হাসিবঃ আসলেই । 
প্রতীকঃ প্রেম করে, ব্রেকাপ হলে সুইসাইড । 
হাসিবঃ হ্যায় । 
প্রতীকঃ যে বাবা মা ওদের সারাজীবন কোলেপিঠে মানুষ করে, আর স্বপ্ন দেখে আমার ছেলে বা মেয়েটা অনেক বড় ভালো মানুষ হবে, আমাদের দেখে শুনে রাখবে, সেই বাবা মাকে ভুলে গিয়ে সেই বাবা মার স্বপ্নের কথা চিন্তা না করে সামান্য কয়েকদিনের প্রেমের জন্য সুইসাইড করে । 
হাসিবঃ আহারে । 
প্রতীকঃ সেই সুইসাইডের আবার কত প্রকারভেদ । কেউ ছার থেকে লাফ দেয়, কেউ হাতের রগ কাটে, কাউ ফাঁসী দেয়, কেউ নিজেকে পুড়িয়ে দেয় । 
হাসিবঃ বড়ই কষ্টকর । 
প্রতীকের পাশে ছিল সাকিব । 
সাকিবঃ এই প্রতীক আজিজুল স্যার এর বাড়ির কাজ করসিস?
প্রতীকঃ না রে । 
সাকিবঃ করবি না?
প্রতীকঃ করবো তো অবশ্যই । 
সাকিবঃ কখন?
প্রতীকঃ দেখি, কখন করা যায় । 
সাকিবঃ করলে আমাকে বলিস । 
প্রতীকঃ আচ্ছা । 
এরপর প্রতীক হাসিবের দিকে মুখ ফেরালো  
প্রতীকঃ তারপর শোনো ।
হাসিবঃ হ্যাঁ বলো । 
প্রতীকঃ কি যেন বলতেসিলাম?
হাসিবঃ কি?
প্রতীকঃ দ্যাখ, আমি আবার ভুলে গেছি । 
হাসিবের মনে ছিল ঠিকই, কিন্তু ইয়ার্কি করে কিছু বলল না । 
প্রতীকঃ ধ্যাৎ! পরে মনে পড়লে বলবনে । 
হাসিবঃ আচ্ছা ।
ঠিক তখন ক্লাসে এলেন জাফর সাদেক স্যার । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যারও সালামের জবাব  দিয়ে সবাইকে বসতে বললেন । সবাই বসলো । 
জাফর স্যারঃ শোনো, এইদিন আমার একটা ক্লাস থাকে ঐ ইংলিশ ভার্সন বিল্ডিং এর ৩ তলায় । এজন্য আসতে একটু দেরি হয় । এর মধ্যেই যদি তোমরা চিল্লাপাল্লা করো, তাহলে কার কখন কিভাবে কেমনটা লাগে তোমরা আশা করি বুঝেছ । না বুঝলে বোঝার দরকার নাই, শুধু এটুকু বুঝে রাখো, তোমরা এ সময়টায় শান্ত থাকবা । শান্ত না থাকলেও কথা বলবা না । কথা বললেও আস্তে বলবা না । আস্তে না বললেও  বাইরে যাবা না । বাইরে গেলেও একজনের বেশি যাবা না । তোমরা কি এটা মেনে চলবে?
অনেকেই হাসতে হাসতে হ্যাঁ বললেও মাঝখান থেকে  ৪-৫জন আবার না বলেছে । যদিও এতোগুলো হ্যাঁ এর মাঝে ৪-৫টা না স্যার এর কানে পৌঁছোয় নি । এরপর জাফর স্যার ক্লাস নেয়া শুরু করলেন । দেখতে দেখতে ১০টা ২০ বেজে যায়, এবং টিফিন পিরিয়ড শুরু হয় । আরিক ব্যাগ থেকে টিফিন বের করছিলো । ওর পাশে ছিল শেখ সোহান । শেখ সোহানও টিফিন খাচ্ছিল । হঠাৎ খেয়াল করলো, আরিক খাচ্ছে ঠিকই সাথে কি যেন ভাবছে আর মনমরা হয়ে আছে । 
শেখ সোহানঃ কিরে মুটা? মন খারাপ ক্যা?
আরিকঃ আজকেই শেষ দিন ।
শেখ সোহানঃ কি! আজকে তুই মারা যাবি!
আরিকঃ হুর । মইরে যাওয়ার কথা কইসি নাকি । আজকে আনন্দের শেষ দিন । 
শেখ সোহানঃ কিসের আনন্দ?
আরিকঃ টিফিন খাওয়ার । 
শেখ সোহানঃ ক্যান?
আরিকঃ কালকে তুষার পুষ্প আসতেসে । ওরা আমার টিফিন আগে অর্ধেক খাইয়ে তারপর খাবে । 
শেখ সোহানঃ হ তো কি হইসে? আমি তো কাউরেই মানা করি না । 
আরিকঃ ইয়ে মানে, মানা করা মা করারা কথা কিডা কইসে । আসলে আমার ভুরিটা তো একটু দেখা উচিত ওদের । হতে পারি লম্বায় ছোট । কিন্তু আমি তো চওড়ায় বড় । এটা বুঝে একটু অল্প খাইলেই তো হয় । 
আরিকের কথা শুনে হাসিটা আর আটকে রাখতে পারলো না শেখ সোহান । 
আরিকঃ অমা? তুই হাসতেসিস ক্যান?
শেখ সোহানঃ (হাসতে হাসতে) চওড়ায় বড় । 
বলে আবার হাসা শুরু করলো শেখ সোহান । আরিক আর কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ শেখ সোহানের দিকে তাকিয়ে আবার টিফিন খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিলো । দরজা দিয়ে তখন ভেতরে এলো জুপিটার শাখার চিকন সাদিক । ঢুকেই চলে এলো তাজের কাছে । তাজ তখন ব্যাগের ভেতর টিফিন বক্স ঢোকাচ্ছিল । 
চিকন সাদিকঃ ঐ তাজ, যাবি?
তাজঃ কোথায়?
চিকন সাদিকঃ টয়লেটে । 
তাজঃ তোর কি ডাইবেটিস হইসে? এই না ২য় পিরিয়ডেও তুই টয়লেটে গেসিলি?
চিকন সাদিকঃ তোরে কে কইসে?
তাজঃ বুড়ো গেসিল । ও কইসে । 
চিকন সাদিকঃ আরে, তখন তো ক্লাস ফাঁকি মারতে গেসিলাম । চল না দোস্ত । 
তাজঃ (একটা শ্বাস নিয়ে) চল । 
তাজ চিকন সাদিকের সাথে ওয়াশরুমে গেলো । চিকন সাদিক একটা টয়লেটে ঢুকলো। আর তাজ ওয়াশরুমের আয়নায় চুল ঠিক করতে লাগলো । টয়লেটে সে সময় কেউ ছিল না । একটু পর সাদিক গান গাইতে গাইতে বেড়িয়ে এলো । 
চিকন সাদিকঃ উলালা, আই লাভ টু মাই সোনিয়া, উলালা ও সোনিয়া............... 
তাজঃ কিরে? কিসির গান গাচ্ছিস? সোনিয়া কিডা?
চিকন সাদিকঃ আরে এইডা একটা গান । 
তাজঃ গান একটু বুইঝে শুইনে গাবি । আই লাভ টু মাই সোনিয়া কি এইসব সাদিক?
চিকন সাদিকঃ আরে ধুর, ইয়ার্কি করিস না তো । 
তাজঃ না সাদিক, তুই টাল তো টাল-ই থাইকা গেলি । 
চিকন সাদিকঃ তোর সেই সোনিয়ার কথা মনে আছে? আমাদের শাহিনে ক্লাস টু পর্যন্ত ছিল?
তাজঃ কিডা সে?
চিকন সাদিকঃ আরে তোর মনে নাই? মাথায় একটু সমস্যা ছিল, খালি আতলাম করতো, আমরা সেই পচাইতাম, মনে নাই?
তাজঃ ও আচ্ছা । মনে পরসে । ও তো আরেক টাল । তাইলে এক টাল আরেক টালের কথা চিন্তা করতেসে আরকি । 
চিকন সাদিকঃ ধুর শোননা । 
তাজঃ শুনতেসি বল । 
চিকন সাদিকঃ ঐ সোনিয়া নাকি এখন কুর্মিটোলায় আছে । 
তাজঃ ভালো তো কচি করে আমি কি করবো? 
চিকন সাদিকঃ ওর পরিবার নাকি যশোরেই আছে । ও নাকি তখন একাই কুর্মিটোলায় গেসিলো । 
তাজঃ তা আমারে কইতেসস ক্যান? আমি কি নাচবো?
চিকন সাদিকঃ না তা করতে বলিনাই । দোস্ত একটা গেম নামায় দিতে পারবি?
তাজঃ শুরু হইলো আল্লাহর ওয়াস্তে তোর চাওয়া  । 
চিকন সাদিকঃ বেশি কিছু না । অল্প কয়েকটা গেম
তাজঃ কচি করে বল শুনি । কি কি লাগবে তোর 
সাদিকঃ প্রিন্স অব পার্সিয়া ২, নিড ফর স্পীড মোস্ট ওয়ান্টেড, কল অফ ডিউটি ৪ মরডান ওয়ারফেয়ার, ডেঞ্জার জোন, ডার্ক উড, ডন অফ ওয়ার ৩, রাইসিং স্ট্রম ২, দ্যা ওয়াকিং ডেড, ফিফা ১৮ ।
তাজঃ (অবাক হয়ে) আর কিছু বাকি আছে?
চিকন সাদিকঃ হ্যাঁ । আমার ছোট বোনের জন্য ছোট ছোট গেম, বারবি গেম, এলিয়েন শুটার, সাপের গেম, পাজেল এগুলো । 
তাজঃ ভাই তুই আমার বাসায় একদিন আইসে সব গেম নামায় নিয়ে যাইস । 
চিকন সাদিকঃ কিন্তু.................. 
তাজঃ (চিকন সাদিকের কথা শেষ করতে না দিয়ে) কিন্তু, এর কোন গেমের নাম মুখে উচ্চারন করিস না । এবার ক্লাসে চল । 
কথাটি বলে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ফুয়াদের সাথে দেখা । 
ফুয়াদঃ এই তাজ, তোর সাথে একটা কাজ ছিল । 
তাজঃ কি? কচি করে সামিউল স্যার এর HW?
ফুয়াদঃ না, HW করা শেষ । 
তাজঃ তাইলে? 
ফুয়াদঃ আমারে ৭টা মুভি ডাউনলোড কইরে দে । 
তাজঃ (একটা শেষ ফেলে) কচি করে জীবনটা বেদনা ।
এদিকে রাগিব আর সাকিব মাঠে হাঁটছে । 
রাগিবঃ এই সুইমিং পুল যাবি?
সাকিবঃ না রে । চল ক্লাসে যাই । 
রাগিবঃ আরে আরেকটু  হাঁটি । 
সাকিবঃ না রে । খুব রোদ । 
রাগিবঃ তাতে কি?
সাকিবঃ কালো হয়ে যাবো । 
রাগিবঃ (একটু হেসে) আচ্ছা, চল । 
রোদ থেকে স্কুলের বারান্দায় চলে এলো ওরা ।
রাগিবঃ যাবি সুইমিং পুলে?
সাকিবঃ না । 
রাগিবঃ  ক্যান? ওইখানে তো আর তোর চেহারা নষ্ট হবে না । 
সাকিবঃ ঠান্ডা লাগবে । 
রাগিব কিছু বলল না । হালকা বিরক্ত হল । একটু পর- 
রাগিবঃ চল লাইব্রেরীতে যাই । 
সাকিবঃ না । 
রাগিবঃ ক্যান? ওখানে গেলে চেহারাও নষ্ট হবে না, ঠাণ্ডাও লাগবে না  । 
সাকিবঃ এখন লাইব্রেরীতে অনেক মেয়ে আছে । 
রাগিবঃ তো? ওরা ওদের মতো বই পড়বে আমরা আমাদের মতো বই পড়ব । 
সাকিবঃ সেটা সমস্যা না । 
রাগিবঃ তাইলে?
সাকিবঃ আমার ওপর ওদের নজর লাগবে । 
রাগিবঃ (বিরক্ত হয়ে) ভাই তুই এইখানেই থাক, আমি গেলাম । তোর সাত্থে আর আমি নাই । 
বলেই সেখান থেকে চলে এলো রাগিব । সাকিব সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল হাত মুচকি মুচকি হাসল । 
এদিকে ক্লাসে বসে আজিজুল স্যার এর HW করার পর খাতাটা ব্যাগে রেখে লাস্ট বেঞ্চে থাকা মাসুদের কাছে গেলো রাহাত । 
রাহাতঃ HW করসিস?
মাসুদঃ হ করসি । 
রাহাতঃ দে তো । 
মাসুদ ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে রাহাতকে দিলো । রাহাত খাতা খুলে দেখল এটা আজিজুল স্যার এর HW 
রাহাতঃ উফ! কি এসব?
মাসুদঃ HW । 
রাহাতঃ আরে গাধা! আমি সামিউল স্যার এর HW চাইসি । 
মাসুদঃ অ তাই বল । তুই করিস নি?
রাহাতঃ আরে গাধা, আমি করলে তোর কাছে চাইতাম?
মাসুদঃ ও আচ্ছে । 
মাসুদ তারপর ব্যাগ থেকে সামিউল স্যার এর HW খাতাটা দিলো । রাহাত সেই খাতা খুলে দেখল এটা সামিউল স্যার এর HW-ই । তারপর নিজের সিটে এসে বাড়ির কাজ শুরু । ঠিক তখনই টিফিন পিরিয়ড শেষ হবার ঘণ্টা পরে গেলো । সবাই একে একে ক্লাসে আসতে শুরু করলো । ক্লাস এখন গনিত । কিন্তু সাইফুল স্যার এখন বাসে । আন্ত শাহিন প্রতিযোগিতা থেকে ফিরছেন । এদিকে ক্লাস গ্যাপ । এলেন রোকনুজ্জামান স্যার । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যার ও সবার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন । 
রোকনুজ্জামান স্যারঃ কেমন আছো তোমরা? 
অর্ধেক ভালো আর অর্ধেক ভালো না বলে উঠলো । 
রোকনুজ্জামান স্যারঃ আচ্ছা, সমস্যা নেই । ভালো খারাপ নিয়েই আমাদের এই দুনিয়া । যেখানেই ভালো, সেখানেই খারাপ থাকে । এটা নিয়ে  দুশ্চিন্তার কিছু নেই । কার ক্লাস ছিল এটা?
ফারিহা বিনতে আলীঃ স্যার সাইফুল স্যার এর । 
রোকনুজ্জামান স্যারঃ গনিত?
ফারিহা বিনতে আলীঃ জী স্যার । 
রোকনুজ্জামান স্যারঃ তোমাদের একটা গল্প বলি । 
সবাই রাজী হয়ে গেলো, গল্পও শুরু হল । ১১টা ৩০এ শেষ হয়ে গেলো ক্লাস । রোকনুজ্জামান স্যার চলে গেলেন । রাহাতের বাড়ির কাজ করা শেষ  । মাসুদের খাতাটা নিয়ে চলে গেলো মাসুদের কাছে । 
রাহাতঃ (মাসুদের দিকে খাতা এগিয়ে দিয়ে) এই নে তোর খাতা । 
মাসুদঃ (খাতাটা নিয়ে) তুই করিস নি ক্যান  এতদিন? 
রাহাতঃ আসলে আমি HW করসিলাম । কিন্তু খাতাটা খুজে পাচ্ছিলাম না । 
মাসুদঃ ও, তার মানে আমি তোর খাতা দেখে HW করসি । 
রাহাতঃ (চমকে উঠে) মানে? 
মাসুদঃ না । গতকাল ভুল করে আমার ব্যাগে ভুল করে একটা খাতা চলে আসছিল । ভাবসিলাম ওইটা তোর কিন্তু শিওর ছিলাম না । 
রাহাতঃ (রেগে) তুই আগে বলবি না! তোর জন্য আমার আবার করা লাগলো একই অঙ্ক! 
মাসুদঃ ভালো হইসে । তোর আরেকবার প্র্যাকটিস হয়ে গেলো । 
রাহাতঃ উফ! আমার কতগুলা সময় নষ্ট হইলো জানিস?
মাসুদঃ আচ্ছা যা সিটে যা । 
রাহাত সিটে চলে গেলো । এদিকে আফিয়া সানজিদা, নোভা আর শিফা গল্প করছে । 
আফিয়া সানজিদাঃ দোস্ত, গতকাল রাতে আমি সেই ভয় পাইসি । 
নোভাঃ ক্যান রে?
আফিয়া সানজিদঃ আর বলিস না । রাতে ঘুমাচ্ছিলাম আর তখনই হঠাৎ দেখি আমার হাতের ওপর একটা ইদুর ।
শিফাঃ আমিও জানিস, একদিন রাতে দেখি আমার হাটতে একটা বিষ পিঁপড়া । আমি ভয়ে সেদিন খেতেও পারিনি । 
ওদের গল্প কানে গেলো তৃণর । শিফার কথা শুনে হাসিটা আর আটকে রাখতে পারলো না । ওর পাশে বসে ছিল সাবিত, আর সামনে প্রত্যয় । 
সাবিতঃ হাসিস ক্যান? 
তৃণঃ ওরা ঘুম থেকে ওঠার পর ক্যামনে ভয় পার আলোচনা করতেসে । 
প্রত্যয় ওদের কথা শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে ছিল । 
সাবিতঃ আমিও একবার পাইসিলাম । রাতে ফোন চালাইতে চালাইতে ঘুমাইসিলাম, সকালে উঠে দেখি আমার ফোন নাই । আমার পুরো রুমেও পাইনি । ভয় পাইসিলাম খুব । পরে পাইসিলাম আব্বুর রুমে । 
তৃণঃ আমিও একবার ভয় পাইসিলাম । রাতে চশমা পাশে রেখে ঘুমাইসিলাম, সকালে উঠে দেখি আমার চশমা নাই । আমার পুরো রুমে পাইনি । পরে দেখি আমার ছোট ভাই আমার চশমা নিয়ে আয়নার সামনে স্টাইল মারতেসে । 
প্রত্যয়ঃ আমিও একবার ভয় পাইসিলাম । 
তৃণ আর সাবিত একসাথেঃ ক্যামনে?
প্রত্যয়ঃ রাতে লুঙ্গি পরে ঘুমাইসিলাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার লুঙ্গি নাই । 
তৃণ আর সাবিত প্রত্যয় এর দিকে তাকিয়ে রইলো । মনে মনে বলল, “ব্যাপারটা আসলেই খুব ভয়ের ।”
একটু পরে সাত্তার স্যার এলেন । সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম জানালো, স্যার ও সবার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন । 
সাত্তার স্যারঃ কি ব্যাপার? কেমন আছো তোমরা? 
সবাই একসাথেঃ ভালো ।
সাত্তার স্যারঃ শনিবার ম্যাচটা কেমন ছিল? 
অনেকে বলল ভালো, অনেকে বলল জোস ছিল । 
সাত্তার স্যারঃ দেখতে হবে না, ঈগল হাউজে কোন স্যার দায়িত্বে আছেন?
সবাই একটু হাসল । 
সাত্তার স্যারঃ কি ব্যাপার? তোমরা হাসছো কেন?
সবাই চুপ হয়ে গেলো ।
সাত্তার স্যারঃ আচ্ছা যাই হোক । গতকালকের পড়া করে এসছে কে কে?
এবার আর কারো মুখে কোন কথা নেই । 
সাত্তার স্যারঃ এবার তো কারো মুখে কথা নাই । কেউ হ্যাঁ বলল না ।
সাত্তার স্যারঃ এইতো! মুখ বন্ধ হয়ে গেলো । আর কোন কথা নাই মুখে । যাই হোক । বই বের করো । 
সবাই বেঞ্চে বসে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো । স্যার আর আজ কিছু বলবেন না  । স্যার হঠাৎ বোর্ডে কিছু লিখতে গিয়ে পেছন ফিরে তাকালেন । 
সাত্তার স্যারঃ ভালো কথা, তোমরা বই আনোনি কারা কারা? একটু দাঁড়াও তো ।
এইবার কয়েকজনের মুখের হাসি গেলো বন্ধ হয়ে । কিন্তু কেউ দাঁড়ালো না । 
সাত্তার স্যারঃ কি ব্যাপার? দারাচ্ছ না কেন? একটু দেখি মুখটা । 
প্রায় অনেকে দাঁড়ালো । 
সাত্তার  স্যারঃ বা বা । এ তো দেখি অর্ধেক ডালই কালো । প্রথমে তো আমি ভাবসিলাম ডাল মে কুচ কালা হে । 
কয়েকজন হালকা হেসে দিলো । এর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনও ছিল । 
সাত্তার স্যারঃ এহ! আবার হাসে । লজ্জাও নাই । তোমরা পুরোটা ক্লাস দাঁড়িয়ে থাকো । যাবার সময় ডাইরিতে ব্যাড কমেন্টস লিখে দেবো । 
আরিক হঠাৎ মুখটা উলটো ইউ এর মতো করে পাশে থাকা রাহাতকে বলল, 
আরিকঃ ঐ, কমেন্ট না ফেসবুকে দেয়?
 সাত্তার স্যার এর কানেও পৌঁছে গেলো কথাটা । 
সাত্তার স্যারঃ হ্যাঁ তো । এখন তোমার ডাইরিটাও আমার কাছে ফেসবুকের কমেন্ট বক্স । যাতে আমি কমেন্ট করবো আর তোমাদের বাবা মা তাতে রি-অ্যাক্ট দিয়ে আমাকে রিপ্লাই দেবেন । রিপ্লাইটার সাথে একটা সইও কিন্তু লাগবে । 
বলেই স্যার ক্লাস করানো শুরু করলেন ক্লাসের শেষে স্যার সবাইকে বসতে  দিয়ে চলে গেলেন । আর সবাইকে এও বলেন গেলেন এরপর থেকে যেন বই আনতে না ভুলে যায় । 
এরপর শারীরিক শিক্ষা ক্লাস । আশিস স্যার এর ।  সবাই মাঠে চলে গেলো । সাধারণত এই ক্লাসে সবাই বাইরে যায় ও ফুটবল খেলে । এইদিনও  তার ব্যাতিক্রম হল না । সবাই মাঠে গেলো । আরেফিন অনিক আর তৃণ যেয়ে নুরুল ইসলাম স্যার এর রুম থেকে ফুটবল আনলো । যারা ফুটবল খেলছে না, ওদের মাঝে কেউ কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ কেউ গাছের নিচে বসে আছে । গাছের নিচে বসে থাকা অনেকের মধ্যে একজন শাহরিয়ার সোহান । ওরা যেই গোলপোস্টের কাছে ছিল, ঐ গোলপোস্টের গোলকিপার ছিল সাকিব । শাহরিয়ার সোহানকে দেখে ওর কাছে এলো । 
সাকিবঃ কিরে, খেলবি না?
শাহরিয়ার সোহানঃ না রে । ইচ্ছা করছে না । 
সাকিবঃ আরে খেল না । দ্যাখ, টাউন আর বেজ দুই টিম । 
শাহরিয়ার সোহানঃ প্লিজ সাকিব, জোড় করিস না । 
সাকিবঃ আচ্ছা । 
বলেই সাকিব চলে গেলো । সেখানে আরও বসে ছিল প্রতীক, আরিক, শেখ সোহান, নাফিজ, রাতুল আর রাহাত । 
আরিকঃ গতকাল একটা সাইন্স ফিকশন পড়া শেষ করলাম । 
শেখ সোহানঃ ধুর। বাদ দে তো । গতকাল জোন সিনা আর ডিনেম্ব্রস এর ম্যাচ ছিল । দেখসিলি? 
রাহাতঃ ধুরু! তোর মারামারি । গতকাল আমি প্রিন্স অব পার্সিয়া শেষ করলাম । 
প্রতীকঃ তোর খালি গেম আর গেম । চল গানের কলি খেলি । 
রাতুলঃ বাদ দে । এরপর আজিজুল স্যার এর ক্লাস । তোরা HW করসিস? আমার কিন্তু করা শেষ । তোরা নিবি না?
নাফিজঃ এই রে । আমার করা হয় নি । রাতুল, তোর খাতাটা কই রে? 
রাতুলঃ আমার খাতা প্রতীক নিসিল । 
প্রতীকঃ আমার কাছ থেকে রাহাত নিসে । 
রাহাতঃ আমার কাছ থেকে শেখ সোহান নিসে । 
শেখ সোহানঃ আরে আমার কাছ থেকে আরিক নিসে । 
আরিকঃ অ হ্যাঁ । আমার কাছেই তো আছে । 
রাহাতঃ শালা মুটা! আগে বলতে পারিস না!

আরিকঃ সরি সরি! খেয়াল ছিলো না । 
প্রতীকঃ চল না । গানের কলি খেলি । 
রাহাতঃ চল খেলি । আর কি করবি । 
আরিকঃ ক কি দিয়া শুরু করমু । 
রাহাতঃ উরে! তুই গাবি গান! তাও আমাদের সামনে! 
আরিকঃ এতে কি এমন হইলো?
রাহাতঃ  আজকে সূর্য কোনদিকে উঠসিলো রে?
শেখ সোহানঃ দক্ষিন দিকে মনে হয় । 
আরিকঃ (হালকা রাগ করে) এই যে । খেলার মাঝে এইসব ইয়ার্কি কিন্তু ভালো লাগে না ।
প্রতীকঃ আচ্ছা বাদ দে । তুই ব দিয়া একটা ভাব । 
আরিকঃ কিরে! তুই ব কেন বাছলি? ব্যাপার কি?
প্রতীকঃ ধুর! ইচ্ছা হল তাই বললাম । গা তো । কাউন্ট ডাউন শুরু করলাম । 
আরিকঃ একটু ভাবতি তো দে । 
প্রতীকঃ গ১, গ২, গ৩............ 
আরিকঃ বাড়িয়ে দাউ তুমার হাত, আমি আবার তুমার আঙ্গুল ধরতে চাই, বাড়িয়ে দাও তোমার হাত, আমি আবার তোমার পাশেই হাটতে চাই, বাড়িয়ে দাও তুমার হাত, তুমার হাত । 
রাহাতঃ ওরে কি গান!
আরিকঃ এবার তুই গাবি । এ দিয়া । গা । 
রাহাতঃ এ দিয়া কি গান আছে রে প্রতীক?
প্রতীকঃ আমি তো বলব না । খুজে নে । 
প্রতীক, আরিক ও শেখ সোহানঃ এ১, এ২, এ৩, এ৪............
রাহাতঃ Every night in my dreams I see you, I feel you That is how I know you, go on। 
আরিকঃ ওরে বাবা! ইংলিশ গান? 
রাহাতঃ তোর কিরে মুটা । 
আরিকঃ আমার কিছু না । 
প্রতীকঃ নে এবার শেখ সোহানের পালা । 
আরিকঃ কি ভাইয়া? তুমি গাবা না?
শেখ সোহানঃ এই আসলেই । অ ফাঁকি দিসসে । 
রাহাতঃ হ্যাঁ প্রতীক, তুই শ দিয়া কিছু গা । 
প্রতীকঃ শ দিয়া কি গান আছে? 
রাহাত, আরিক আর শেখ সোহানঃ শ১, শ২, শ৩, শ৪, শ৫, শ৬...............
প্রতীকঃ Show me the meaning of being lonely……… so many words for the broker heart, It’s  hard to see, in a crimson love, so hard to breath, walk with me if only . অনেক গাইসি । এইবার শেখ সোহানের পালা । 
রাহাতঃ হ্যাঁ, এবার, শেখ সোহান তুই গা । 
শেখ সোহানঃ কিন্তু আমি তো জাতীয় সংগীত ছাড়া কিছুই পারি না । 
রাহাতঃ এক কাজ কর, জাতীয় সংগীতের প্রথম অক্ষর আ । তুই আ দিয়েই কিছু বল, কিন্তু জাতীয় সংগীত না । আমরা কাউন্ট ডাউন শুরু করি । 
ওরা কাউন্ট ডাউন শুরু করলো, কিন্তু শেখ সোহান কিছুই বলতে পারছে না । শুধু ভাবছে । 
রাহাত, প্রতীক ও আরিকঃ আ৬, আ৭,  আ৮, আ৯.........
হঠাৎ পাশে বসে থাকা শাহরিয়ার  সোহান গাওয়া শুরু করলো, 
শাহরিয়ার সোহানঃ Abhi abhi to mile the Phir juda ho gaye Kya thi meri khataa Tum sazaa ho gaye Mujhe khone ke baad ik din Tum mujhe yaad karoge Phir dekhna milne ki mujhse Tum fariyad karoge........................
কেউ ওকে বাধা দিলো না । ও নিজেও পুরো গানটা গাইলো । 
আরিকঃ ওরে দোস্ত! তোর তো সেই গলা!
প্রতীকঃ পুরাই জোস!
রাহাতঃ আসলেই!
শেখ সোহানঃ দোস্ত, অস্থির  গলা!
শাহরিয়ার সোহানঃ থ্যাংকস । 
আরিকঃ তুই এবার পিকনিকে গান গাবি কিন্তু । 
সেই সময় ঘণ্টা পরে গেলো । 
শেখ সোহানঃ চল ক্লাসে যাই । এরপরে লাস্ট ক্লাস । 
আরিকঃ হ্যাঁ চল । আমার HW করা একটু বাকি আছে । 
সবাই চলে গেলো । শাহরিয়ার সোহান বসেই রইল । ওরা যখন একটু দূরে চলে গেলো, তখন শাহরিয়ার উঠে দাঁড়াতেই হঠাৎ কোত্থেকে ড্যানি ভাই এসে দাঁড়ালো ওর সামনে । জোরে আওয়াজ করে হাসছেন উনি । 
শাহরিয়ার সোহানঃ কি ব্যাপার ভাই? আপনি এভাবে হাসছেন কেন?
ড্যানি ভাইঃ মনে বড় আনন্দ তো তাই । 
শাহরিয়ার সোহান উনাকে এড়িয়ে চলে আসতে চাইলে উনি শাহরিয়ার সোহানের হাত ধরে আটকালেন । শাহরিয়ার সোহান ঘুরে উনার দিকে তাকালো । 
ড্যানি ভাইঃ কষ্ট হচ্ছে?
শাহরিয়ার সোহানঃ কেন? 
ড্যানি ভাইঃ হেরেছি আমিও, হেরেছো তুমিও । 
শাহরিয়ার সোহান  কিছু বলল না । শুধু হাসলো । 
ড্যানি ভাইঃ হাসছো তুমি?
শাহরিয়ার সোহানঃ কারণ আপনি হেরেছেন আর হেরেছেন । আমি হেরেছি আর জিতেছি । 
ড্যানি ভাইঃ মানে? 
শাহরিয়ার সোহানঃ আপনি যেখানে হেরেছেন, সেখানে  আমি জিতেছি । পরদিন ম্যাচে কিন্তু আমিই জিতেছি । আর শেষ দিন আমি হেরেছি ঠিকই, কিন্তু আমার বন্ধুরা জিতেছে আর তাতেই আমি জিতেছি । 
ড্যানি ভাই কিছু বললেন না । ক্লাসে চলে গেলেন । শাহরিয়ার সোহানও কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো । একটু পর আজিজুল স্যার ক্লাসে এলেন ।  সবাই খুব ভয়ে আছে । আজ অনেকেই HW  করে নি । আজিজুল ক্লাসে এসে বইটা ডেস্কে রাখলেন । তারপর স্টেজের ওপর উঠলেন । ক্লাসরুমে একটা ১ফুট মতো উচু  কাঠের স্টেজের মতো ছিল । স্যার সবার দিকে একবার করে তাকালেন । সত্যিই অনেকে HW করে সেটা স্যার ওদের দেখেই বুঝতে পারলেন । একটু পর বলে উঠলেন,
আজিজুল স্যারঃ তোমরা কে কে HW করেছো?
কিছুক্ষণ কেউই দাঁড়ালো না । এক সময় মেয়েদের মধ্যে থেকে একজন উঠে দাঁড়ালে বাকিরাও উঠে দাঁড়ালো । কেবল ১০-১২ জন বসে ছিল । 
আজিজুল স্যারঃ তোমরা খুব ভাগ্যবান । 
সবাই অবাক হয়ে গেলো । বলল, “কেন?”
আজিজুল স্যারঃ আজ আমি বাড়ির কাজ দেখবো না । 
সবাই আনন্দে একটা চিৎকার করে উঠলো । 
আজিজুল স্যারঃ বসো সবাই । 
সবাই বসলো । 
আজিজুল স্যারঃ আজকে আমি তোমাদের পড়াবো না । তোমাদের সবার কাছ থেকে বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা শুনবো । 
সবাই খুব আনন্দিত । 
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ দেখি, কে আসতে চায় প্রথমে ।
কেউই  প্রথমে আসতে চাইলো না । 
আজিজুল স্যারঃ আচ্ছা, তামজিদ তো নাই, এখন ছেলেদের ফার্স্ট বয় কে?
রাহাত দাঁড়ালো । 
আজিজুল স্যারঃ তুমি এসে কিছু বলো । 
রাহাতঃ (মুখটা উলটো ইউ এর মতো করে) আমি! 
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ তুমি । কেন? তোমার জীবনে কোন ঘটনা নাই সবাইকে বলার মতো?
রাহাতঃ ইয়ে মানে......না মানে......হ্যাঁ মান........আছে......। 
আজিজুল স্যারঃ তাহলে এসো, তোমাকে দিয়েই শুরু করি । 
রাহাত কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে তারপর আসলো । 
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ শুরু করো । 
রাহাত: শুরু করবো স্যার?
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ বললাম তো শুরু করতে । 
রাহাতঃ আচ্ছা । কোত্থেকে শুরু করি? আচ্ছা ঠিক আছে । গত বছরের কথা । আমি সেবার ঈদে নানু বাড়ি যাচ্ছিলাম । বাসের মধ্যে একটা লোক আসে । বলে, উনি নাকি সবার মনের কথা  বলতে পারেন । তো একটা বুড়ো আঙ্কেল কে বললেন, উনার কাছে ১০০০ টাকার নোট আছে । সত্যি সত্যি উনার কাছে ১০০০ টাকার নোট ছিল এরপর আরেকটা আন্টিকে বললেন উনার অসুস্থ মাকে দেখতে যাচ্ছেন, পরে দেখা গেলো সত্যি সত্যি উনার কথাটা মিলে গেছে । এভাবে আরও অনেককে জিজ্ঞেস করলো, সবার কথাই মিলে গেলো । আমরা যেখানে বসেছিলাম, আমাদের সামনে একটা ভাইয়া উনার বাবার সাথে যাচ্ছিলেন । একটু পর উনার কাছে এসে লোকটা বলল, “তোর প্রথম প্রেম কখনো সার্থক হবে না । এরপর শুরু হইলো উনার ছেলেকে নিয়ে ঝগড়া । সারা রাস্তা উনি উনার ছেলেটাকে নিয়ে ঝগড়া করসে । এই ছিল আমার ঘটনা । 
আজিজুল স্যারঃ আচ্ছা ঠিক আছে । যাও তাহলে । 
রাহাত চলে এলো । এরপর স্যার  এর নির্দেশে এলো আজমল ফুয়াদ । 
ফুয়াদঃ স্যার শুরু করবো?
আজিজুল স্যারঃ হ্যাঁ শুরু করে দাও । 
ফুয়াদ বলার আগেই হাসা শুরু করে দিলো । ওর হাসি দেখে অন্যান্যরাও হাসা শুরু করে দিলো । 
আজিজুল স্যারঃ কি ব্যাপার? বলার আগেই হাসলে কি চলবে?
ফুয়াদঃ জী স্যার, বলতেসি । 
একটু পর হাসিটা কোনোরকমে থামিয়ে ফুয়াদ গল্প বলা শুরু করলো ।