আমরা শাহীনে ছিলাম - ১
আমরা শাহীনে ছিলাম
ট্রিং ট্রিং ট্রিং… ……
ঘড়ির অ্যালার্ম বাজছে ৷ কিন্তু কিছুতেই ঘুম ভাঙছে না শাওনের ৷ ঠাস করে ঘড়ি দিল ফেলে ৷ তারপর আবার ঘুম ৷ ৫ দিন আগে স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার দৌড় দিতে গিয়ে ব্যাথা পায় ছেলেটা ৷ এখন যদিও ব্যাথাটা কমেছে ৷ হঠাৎ ওর মা এলো ৷
শাওনের মা: এই শাওন ওঠ, স্কুলে যাবি না, ওঠ ৷
শাওন:(ঘুমন্ত অবস্থায়) দেরী আছে আম্মু ৷ একটু পরে উঠতেসি ৷
শাওনের মা: ওরে বদমাইশ, ৭:৪৫ বাজে ৷ হাসান স্যারের কোচিং এ তো গেলিই না, একন স্কুলও মিস করবি ৷
শাওন: (চমকে গিয়ে উঠে পড়লো) কী!!!
তাড়াতাড়ি করে উঠে ড্রেস পড়া শুরু করলো ৷
শাওনের মা: কী রে, খাবি না?
শাওন: না আম্মু ৷ তুমি টিফিন নিয়ে স্কুলে এসো ৷
ড্রেস পড়ে সাইকেল নিয়ে রওনা হলো শাওন ৷ স্কুলে পৌঁছে গ্যারেজে সাইকেল রেখে ক্লাস রুমের সামনে যখন এলো, তখন শুনতে পেল কেউ ক্লাসরুমে গান গাচ্ছে ৷ ক্লাসে ছিলো হাসান স্যার ৷
"ইও ইও চিকি বুম বুম মামা, বড় বড় প্যান্ট আর ছোট পায়জামা………"
কন্ঠ শুনেই বোঝা গেল আলভী গাইছে ৷ সে আবার বিভিন্ন ভাষার ডি জে গানের গায়ক ৷ শাওন দরজায় এলো
শাওন: আসবো স্যার ?
হাসান স্যার: আসেন মোবাইল ভেতরে আসেন ৷
আলভি তখন গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ৷
হাসান স্যার: কোচিং এ আসছিলেন স্যার?
শাওন: না স্যার ৷
হাসান স্যার: ক্লাসে লেট কেনো?
শাওন: স্যার হয়ে গেলো আর কী ৷
হাসান স্যার: তাইলে তো শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে ৷
শাওন: কি শাস্তি স্যার?
হাসান স্যার: গান গাইতে হবে ৷
তখন শাওন বুঝলো, আলভীও লেট করেছে ৷ আলভী শহরে থাকে শাহীনের অর্ধেক স্টুডেন্ট বিমান বাহিনী বেইজে থাকে, আর বাকি অর্ধেকের কিছু স্টুডেন্ট শহরে, কিছু স্টুডেন্ট বেইজের আশেপাশে থাকে ৷
শাওন বেইজের আশেপাশে থাকে এবং সাইকেল নিয়ে আসে ৷ অবশেষে আলভীর গান শেষ হলে শাওনও গান গেলো ৷ এরপর হাসান স্যার নাম ডাকা শুরু করলো ৷
হাসান স্যার: রোল ১…………রোল ১……… কী ব্যাপার, আমার তামজীদ কাপ্তান কই?
তিথি: স্যার তুষার ওই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটা নাচের কার্ডের ডিজাইন করার জন্য কৃত্তিবাস স্যার কে হেল্প করতে গেছে ৷
তামজীদ ক্লাসের ফার্স্ট স্টুডেন্ট ৷ ছোট বেলা থেকেই রোল ১ ৷ অন্য নাম তুষার ৷ কিন্তু ওই নামে ও কে কোন স্যার ম্যডাম চেনে না ৷
হাসান স্যার: কে গেছে?
তিথি: মানে স্যার তামজীদ ৷ তুষার ওর অন্য নাম ৷
হাসান স্যার ক্লাস করে বেরিয়ে গেল ৷ লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা ইকবাল উঠে এলো শাহরিয়ার সোহানের কাছে ৷
ইকবাল: দোস্ত ওয়াস রুমে চল ৷ গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজি ৷
পাশে বসে রিদু ছবি আঁকছিলো ৷ খাতাটা বন্ধ করে বলল
রিদু: চল ইকবাল, একটু ঘুইরে আসি ৷ জীম আর রিক রেও ডাক ৷
ইকবাল: তুমি কিডা মিয়া?
রিদু: পিটবান বোলো {মারবো কিন্তু}
শাহরিয়ার সোহান: থাক ইকবাল ৷ আর কথা বলিস না ৷ চল যাই ৷
রিক: ক্লাস কার এখন?
জীম: তাহের স্যারের ৷
শাহরিয়ার সোহান: ধুর, তাহের স্যার টেরই পাবে না ৷
শাহরিয়ার সোহান, ইকবাল, রিক ,রিদু, জীম বেড়িয়ে গেলো ক্লাস থেকে ৷ ঠিক সেই সময় জুপিটার শাখা থেকে নাবিলা এলো ৷ জুপিটার আর্টস কমার্স দের শাখা ৷
নাবিলা:(দরজায় দাঁড়িয়ে) এই লামিয়া শোন ৷
লামিয়া:(মন খারাপ করে) পারবো না ৷
নাবিলা: আয় না ৷
লামিয়া: বললাম তো পারবো না ৷
নাবিলা: আরে শোন না ৷
লামিয়া: উফ! বল ৷
নাবিলা: আমার লিপস্টিক টা হরিয়ে গেছে ৷
লামিয়া: আমারটাও না একটু আগে হারিয়ে গেছে ৷
রুমের অন্য দরজা দিয়ে তখন ভেতরে ঢুকলো তুষার ৷
তুষার: ফারিহা, লাল রং লাগবে ৷ তুমি সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করো কারো কাছে আছে না কি ৷
ফারিহা ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল আর তিথি সেকেন্ড গার্ল ৷
ফারিহা: কেনো?
তুষার: ধুর তাড়াতাড়ি করো ৷ তাহের স্যার চলে আসবে ৷
ফারিহা সামনে দাড়িয়ে বললো
ফারিহা: কারো কাছে লাল রং আছে?
কেউ কিছু বললো না ৷ ফারিহা বলতেই লাগলো ৷ এপাশে লামিয়া আর নাবিলাকে দেখে নুর জাহান এলো ৷
নুৱ জাহান: কি রে, তোরা কী নিয়ে কথা বলছিস রে?
নাবিলা: আরে আমাদের লিপস্টিক হারিয়ে গেছে রে ৷
নুর জাহান: ও আমার কাছে লাল লিপস্টিক আছে দেখবি?
বলেই পকেট থেকে লিপস্টিকটা বের করলো ৷ ঠিক তখন তুষারের চোখ পড়লো লিপস্টিকটার দিকে ৷ তখন " পাইসি!!!!!!!" বলে একটা চিৎকার দিয়ে লিপস্টিক টা ছো মেরে নিয়ে দিলো একটা দৌড় ৷
নুর জাহান: (কাদতে কাদতে) আমার লিপস্টিক!!!!!!!!!!
ঠিক তখন রুমে ঢুকলো তাহের স্যার ৷ স্যার কে দেখে যে যার সিটে যেয়ে বসে পড়লো ৷ নাবিলাও চলে গেলো নিজের ক্লাসে ৷ স্যার ক্লাস করানোর জন্য যখনই স্টেজে উঠলেন, তখনই চোখ পড়লো সোহান, রিক, জীম, রিদু, ইকবাল ও তুষারের ব্যাগের দিকে ৷
তাহের স্যার: তামজিদ কোথায়?
ফারিহা:(দাঁড়িয়ে) লাইব্রেরীতে গেছে স্যার ৷ কৃত্তিবাস স্যার কে হেল্প করতে ৷
তাহের স্যার: বাকি ব্যাগ গুলো কাদের?
ফারিহা: জানিনা স্যার ৷
তাহের স্যার: ছেলেদের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন কই?
ছেলেদের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন ছিলো রিক ৷
ফারিহা: ও নিজেও এদের দলে স্যার ৷
তাহের স্যার: আয় হায়! থার্ড ক্যাপ্টেন?
ফারিহা:(রাহাতকে) এই রাহাত দাঁড়াও ৷
রাহাত দাঁড়ালো৷
তাহের স্যার: এরা তোমাকে বলে গেসে?
রাহাত: ইয়ে মানে না স্যার ৷
তাহের স্যার: ক্লাস শেষে তামজীদ বাদে বাকিদের ব্যাগ আমার রুমে দিয়ে আসবা ৷ ওদের আজকে হবে ৷
রাহাত: কী হবে?
তাহের স্যার: ধোলাই ৷
ওদিকে কলেজ বিল্ডিংয়ের তিনতলায় দাড়িয়ে স্কুল বিল্ডিংয়ের তিনতলার ক্লাস রুমের দিকে তাকিয়ে আছে ওই পাঁচজন ৷ কলেজ বিল্ডিংয়ের তিনতলা থেকে স্কুল বিল্ডিংয়ের তিনতলার ক্লাসরুমগুলো মোটামুটি ভালোই দেখা যায় ৷
শাহরিয়ার সোহান: দোস্ত দ্যাখ, ক্লাস এইটের ওই রুম টায় রুবাইয়াত ম্যাডাম ৷
রিক: ধুর৷ ম্যাডাম ক্লাস রুম থেকে কিচ্ছু দেখতে পারবে না ৷
ওদিকে রুবাইয়াত ম্যাডাম ওদের দেখে মনে মনে বলল, " কীরে, ওদের চেনা চেনা মনে হচ্ছে, ধুর আজকে কেন যে চোখে কম দেখছি"
তখন ম্যাডাম ক্লাসের রিপন নামের একটা ছেলেকে ডাকলো ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: এই রিপন, শোনো তো ৷
রিপন: (কাছে এসে) জী ম্যাম বলুন
রুবাইয়াত ম্যাডাম: দ্যাখো তো, কলেজ বিল্ডিংয়ের তিন তলার ওয়াশরুমের সামনে বারান্দায়ে কারা দাড়িয়ে আছে?
রিপন:(ভালো করে দেখে) ম্যাম, একটা রিক ভাই৷ বাকিদের চিনি না ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: হুমমম……… ক্লাস শেষ হলে দেখছি রিককে ৷
সেকেন্ড ক্লাসও শেষ ৷ তাহের স্যার ব্যাগ নিয়ে চলেও গেছেন টিচার্স রুমে ৷ রুবায়াত ম্যাডাম টিচার্স রুমে ঢোকার সময় খেয়াল করলেন তুষার লাইব্রেরি থেকে বোরোচ্ছে ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: এ ই তামজীদ ৷ শুনে যাও ৷
তুষার: (কাছে এসে) জী ম্যাম বলেন ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: লাল রং পাইসিলা?
তুষার: না ম্যাডাম ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: তাহলে কাজ করলা কী দিয়ে?
তুষার:(হালকা হেসে) লাল লিপস্টিক দিয়ে ম্যাডাম ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: ও ৷ ভালো হইসে ৷ আচ্ছা শোনো ৷ ক্লাসে যাচ্ছো?
তুষার: জী ম্যাডাম ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: তাহলে রিককে এ কটু আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ো ৷
এদিকে ক্লাসরুমে বসে গল্প করছিলো রাতুল, আরিফ ও লাল লাবিব ৷ ক্লাসে দুটো লাবিব আছে ৷ একটা লাল, আরেকটা বুড়ো ৷
আরিফ: এ রাতুল, নেক্স্ট ক্লাস কার রে?
রাতুল: রাকিব স্যারের ৷
লাল লাবিব: স্যার মনে হয়ে আজকেও ভুলে গেছে ৷ এতো ব্যাস্ত থাকে ৷
ঠিক ওই সময় রিক, রিদু, জীম, সোহান আর ইকবাল ক্লাসে ঢুকলো ৷ ব্যাগ খুজলো কিন্তু পেলো না ৷
রিদু: এ ব্যাগ কই রে?
রিক: আসলেই তো, এই আরিফ, ব্যাগ কই রে আমাদের?
আরিফ: তোদের ব্যাগ তো তাহের স্যার নিয়ে গেসে ৷
শাহরিয়ার সোহান: কী!!!!
ঠিক ওই সময় তুষার ঢুকলো ক্লাসে ৷
তুষার: রিক, তোরে রুবাইয়াত ম্যাডাম ডাকসে ৷
রিক: কেনো?
তুষার: আমাকে কিসু বলে নাই ৷
জীম: ম্যাডাম আমাদের দেখে ফেলে নাই তো?
তুষার: কী দেখছে?
সোহান: কিছু না ৷
তুষার: রিক তুই যা ৷
রিক চলে গেলো ৷
তুষার: তোরা আবার গেসিলি তিন তলার বারান্দায়?
শাহরিয়ার সোহান: তুই কেমনে বুঝলি আমরা প্রতিদিন তিনতলার বারান্দায় যাই ?
তুষার: আরে রিক যে মেয়েকে পছন্দ করে ওই মেয়ের বান্ধবী রুবাইয়াত ম্যাম কে সব বলে দিসে ৷
রিদু: তোকে কে বলসে?
তুষার: ওদের ক্লাস ক্যাপ্টেন ৷ একটু আগেই আমার সাথে কৃত্তিবাস স্যারের কাজে হেল্প করছিলো ৷
এমন সময় রুমে ঢুকলো তাপস স্যার ৷
তাপস স্যার: Dear students, তোমরা একটু চুপ করো কিছু কথা বলবো ৷
সবাই চুপ করে বসলো ৷
তাপস স্যার: ক্লাস কার?
তিথি: স্যার রাকিব স্যারের ৷
তাপস স্যার: ও স্যার ওই প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলছেন ৷ আচ্ছা আমি বেশি সময় নেব না ৷ পরশু তোমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তোমরা জানো ৷ এরপর আমাদের স্কুলের বিল্ডিং কন্স্ট্রাকশন এর জন্য প্রায় ১ মাস স্কুল ছুটি থাকবে ৷
সবাই আনন্দে ইয়ে………… বলে লাফিয়ে উঠলো ৷
তাপস স্যার: এত আনন্দিত হবার কিছু নেই ৷ কারণ তোমাদেরই ক্ষতি ৷ যা হোক, ক্লাস খুলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি ৷ তো তোমরা জানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি তোমাদের স্কুলে প্রতিবছর নাটক অনুষ্ঠিত হয় ৷ তোমরা যারা অংশগ্রহণ করতে চাও তারা ১৮ তারিখেই আমার সাথে দেখা করবা ৷ বুঝতেই তো পারছো, সময় খুব কম ৷ তাহলে থাকো স্যার খুব ব্যাস্ত আছে ৷
তাপস স্যার চলে গেল ৷
তাজ: কী রকম নাটক হবে রে?
অারেফিন অনিক: সে তো ২১ শে ফেব্রুয়ারি related গল্পে হবে ৷
তাজ: চল কচি করে অংশ নেই ৷
আসিফ: পারিস তুই নাটক করতে?
তাজ:(ইয়ার্কি করে) না, বড় রা যখন কথা বলে বাচ্চাদের তখন কথা বলতে হয় না ৷
আসিফ:[ইয়ার্কি করে] তুনমি কি ভাইয়া? বুড়া?
এপাশে আদ্রিতা আর সামিয়া কথা বলছিলো ৷
আদ্রিতা: দোস্ত, ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে কেমন নাটক হতে পারে?
সামিয়া: কেমন আবার, ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিষয়ক
আদ্রিতা: যাবি?
সামিয়া: দেখি কি করা যায় ৷
এদিকে রিক রুবাইয়াত ম্যাডামের কাছে গেল ৷
রিক: ম্যাডাম আসসালামু আলাইকুম ৷
রুবাইয়াত ম্যাডাম: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ৷
রিক: আমাকে ডাকসেন ম্যাডাম?
রুবাইয়াত ম্যাডাম: ডাকসি ঠিকই ৷ অনেক কিছু বলতেও চাইসিলাম ৷ কিন্তু আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগতিসে ৷ যা হোক, শুধু এটুকু বলব ছোট আছো, ছোটই থাকে, বেশি পেকে যেও না ৷ ক্ষতি তোমারই হবে ৷
রিক: ম্যাডাম এসব কথা কেন বলছেন?
রুবাইয়াত ম্যাডাম: বুঝেও না বোঝার ভান কোরো না ৷ যাও ক্লাসে যাও ৷
রিক শিক্ষিকাদের রুম থেকে বেব়োতেই দেখলো শিক্ষক দের রুম থেকে শাহরিয়ার সোহান, ইকবাল, জীম, রিদু বেরোচ্ছে ৷ কাঁধে ব্যাগ ৷ বুঝলো, তাহের স্যারের কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে এসেছে ৷
রিক:[কাছে যেয়ে] কী রে আমার ব্যাগ কই?
শাহরিয়ার সোহান: স্যারের কাছে ৷ যেয়ে নিয়ে আয়, তোর সাথে কথা আছে ৷
রিক: কী কথা?
শাহরিয়ার সোহান: আগে ব্যাগ নিয়ে আয় তারপর বলবো ৷
রিক ভেতরে গেল ৷
রিক: আসসালামু আলাইকুম স্যার ৷
তাহের স্যার: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ৷ কী ব্যাগ নিতে আসছো?
রিক: জী স্যার ৷
তাহের স্যার: রোল কত?
রিক: দুই স্যার ৷
তাহের স্যার: তুমি সেকেন্ড ক্যাপ্টেন?
রিক: জী স্যার ৷
তাহের স্যার: তুমি যদি এমন করো, তাহলে ক্লাসের অন্যান্যরা তো এমনিই প্রশ্রয় পাবে ৷
রিক: সরি স্যার ৷
তাহের স্যার: গার্জিয়ান ফোন দিতে চাইসিলাম ৷ কিন্তু দিলাম না ৷ এই নাও তোমার ব্যাগ ৷ এরপর থেকে যেন আর কখনও ক্লাস ফাঁকি দিতে না দেখি ৷
রিক ব্যাগ নিয়ে চলে এলো ৷ ক্লাস রুমের সামনে এসে দেখলো, শাহরিয়ার সোহান, রিদু, ইকবাল ও জীম দাড়িয়ে ৷
শাহরিয়ার সোহান: ম্যাডাম কি বলল?
রিক : বলল ওই বারান্দায় না দাড়াতে ৷ কেন যেন মনে হলো আমি যে মেয়েটাকে পছন্দ করি ম্যাডাম সেটা জাইনে গেসে ৷
ইকবাল: ম্যাডাম আসলেই সব জানসে ৷
রিক: (চমকে উঠে) কী!
রিদু: হ্যা ৷ ম্যাডাম সব জেনে গেসে ৷
রিক: তোরা ক্যামনে জানলি?
শাহরিয়ার সোহান: তুষার বলল ৷ ও কে ওদের ক্লাসের ক্যাপ্টেন বলসে ৷
রিক: কী বলসে?
শাহরিয়ার সোহান: তুই যারে পছন্দ করিস, ওর বান্ধবি রুবাইয়াত ম্যাডাম কে সব বলে দিসে ৷
রিক: কিন্তু আমি তো আজ পর্যন্ত ওর চেহারাই দেখিনি ৷ ফেসবুকেই শুধু চ্যাট করসি ৷
ইকবাল: কী জানি ৷
রিক: বাঁশতো খাইলাম একটা ৷ কী করবো এখন?
ইকবাল: টিফিনের ঘন্টা দিয়ে দিসে তোর আম্মু আমার কাসে টিফিন দিয়ে গেসে ৷ আগে টিফিন করে নে ৷
রুম থেকে ওই সময় অনিক , সাজিদ আর তাজ বেরোলো ৷
তাজ: কী রে আরেফিন অনিক, সে নাইন দের সাথে ফুটবল ম্যাচ হওয়ার কথা তার খবর কী?
আরেফিন অনিক: ধুর ৷ ওদের কে তো পাচ্ছিই না ৷ দেখি কারও সাথে দেখা হইলে জিজ্ঞাসা করবোনে ৷
তাজ: তোরা যাইতে আমি একটু কচি করে ওয়াশরুম থেকে ঘুরে আসি ৷
তাজ চলে গেল ৷ ওইসময় নুরুল ইসলাম স্যার এদিকে আসছিলেন ৷
সাজিদ: দোস্ত, নুরুল ইসলাম স্যার রে দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলবে ৷
আরেফিন অনিক: আসুক দেখি কী বলে ৷
নুরুল ইসলাম স্যার ওদের কাছে আসলে ওরা স্যারকে স্যারকে সালাম দেয় ৷ স্যারও উত্তর দেন ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: এইযে অনিক ৷
আরেফিন অনিক: জী স্যার বলেন ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: আর তোমার নাম কি?
সাজিদ: স্যার আমার নাম সাজিদ ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: ১০ মার্চ থেকে তোমাদের আন্ত হাউস ফুটবল ম্যাচ শুরু হবে ৷ তো তোমাদের সিলকশন আর প্র্যাকটিস তো করানো লাগবে ৷ সমস্যা হচ্ছে স্কুল তো ছুটি, এখন কী করবো?
অারেফিন অনিক: স্যার ১৮ তারিখ থেকে তো স্কুল খুলবে ৷ তখন থেকে শুরু করেন ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: হুমম ৷ এছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না ৷ তাহলে ক্লাসে সবাই কে বলে দিও ৷
আরেফিন অনিক: আচ্ছা স্যার ৷
অনিক আর সাজিদ স্যার কে সালাম দিয়ে চলে গেল ৷
ক্লাসে বসে গল্প করছিলো আশা, কানিজ, তিথি আর তাহিয়া ৷ ক্লাসে দুটো আশা আছে ৷ একটা বুড়ি আশা, অন্যটাকে কেউ অন্য কোনো নামে না ডাকলেও প্রতীক ও কে চিকন বলে ইয়ার্কি করতো ৷ কানিজ যদিও পড়ছিলো ৷
তিথি: কানিজ তুই আর পড়িস না ৷ তুই তো এবার অস্থির রেজাল্ট করবি ৷
চিকন আশা: আমরা কানিজের কথা বাদ দেই ৷ ওরে ১০০ টাকা দিলেও ও পড়া থামাবে না ৷
তিথি, চিকন আশা আর তাহিয়া হেসে উঠলো ৷ রিক বন্ধুদের সাথে বসে টিফিন খাচ্ছিলো ৷ হাসি শুনে বলল,
রিক :(ইয়ার্কি করে) ওরে হাসি ৷
তিথি: তাতে তোর কী রে?
চিকন আশা: শুনলাম তুমি না কি বাঁশ খাইসো?
রিক (একটু চমকে) তোমরা কীভাবে জানলা?
চিকন আশা: জানি জানি ৷ আমরা আবার সবজান্তা ৷
রিকের মনটা ভেঙে গেল ৷
ইকবাল: ওরা এইসব জানলো কীভাবে?
রিক: নিশ্চয়ই তুষার বলসে ৷ ওর তো মানুষের অপমান না করলে পেটের ভাত হজম হয় না ৷
এরপর টিফিন পিরিয়ড শেষ হলো এবং দেখতে দেখে বাকি ক্লাস গুলোও শেষ হয়ে গেলো ৷ সাবিত আর রিভলি বাসের দিকে যাচ্ছিল ৷
সাবিত: দোস্ত, একটু চল তাড়াতাড়ি করে মনোহরপুর থেকে ঘুরে আসি ৷
রিভলি: ক্যান কী করবি?
সাবিত: কাল থেকে তো একমাস স্কুল ছুটি ৷ আমি নতুন শার্ট বানাতে দেব তাই পকেটের মনোগ্রাম কিনতে হবে ৷
রিভলি: আমার টাইম নাই ৷ তুই যা ৷
সাবিত: আয় না দোস্ত ৷
পাশ দিয়ে তখন নিরব যাচ্ছিলো ৷
রিভলি: এইযে নিরব রে নিয়া যা ৷
সাবিত:(নিরবকে) দোস্ত চল না একটু মনোহর পুর বাজারে ৷
নিরব: টাইম নাই রে ৷ (পাশে জিহান কে দেখে) এইযে ইলু রে নিয়া যা ৷
জিহানকে সবাই মজা করে ইলু ডাকতো ৷
সাবিত: ইলু, দোস্ত, চল না একটু মনোহরপুর যাই ৷
জিহান: ভাই সত্যি কথা, বাস স্টপেজে ফ্রেন্ডদের সাথে কাজ আসে (পাশে রাফিকে দেখে) এই যে রাফি রে নিয়া যা ৷
রাফি: কই যামু?
সাবিত: চলনা একটু মনোহরপুর বাজারে যাই?
রাফি:তুই কিডা?
সাবিত: ধুর চল না?
রাফি: (হাসিব কে দেখে) এ হাসিব, যা তো সাবিতের লগে ৷
হাসিব: কই যামু?
সাবিত: চল একটু মনোহরপুর যাই ৷
হাসিব: যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে ৷
সাবিত: মানে কী?
হাসিব: মানে কি, একলা যা (তৃণকে দেখে) আর নাইলে তৃণরে নিয়া যা ৷
সাবিত: ভাই, আমার আর কাউরে বলার দরকার নাই ৷ আমি একলাই যাই ৷
পেছন থেকে ডেকে উঠলো তৃণ ৷
তৃণ: সাবিত দোস্ত, চল একটু মনোহরপুর যাই ৷
সাবিত: এতক্ষণে আইলি ৷ তাড়াতাড়ি চল নাইলে বাস মিস করমু ৷
সাবিত আর তৃণ মনোহরপুরে গেলো ৷ ক্লাস থেকে সবাই চলে গেছে ৷ শুধু ব্যগ কাঁধে বসে আছে রিক ৷ তুষারের ব্যাগটা বেঞ্চের নিচে পড়ে আছে ৷ রিক বেড়োতে নেবে, ঠিক ওই সময় তুষার ভেতরে ঢুকলো ৷
তুষার: কীরে, তুই এখনও বাড়ি যাস নি?(ব্যাগের কাছে যেয়ে ব্যাগ তুলে) ধুরু ৷ ব্যাগটা যে কে ফেলে দিলো (ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রিকের কাছে যেয়ে) চল বাসায় যাই ৷
দুই কদম এগিয়ে তুষার পেছন ফিরলো ৷ কারণ রিক ওই এক জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে ৷
তুষার: (রিকের কাছে এসে) কি রে, মন খারাপ?
রিক :( রাগান্বিত স্বরে) তিথিকে বইলে ঢং করতেসিস ৷
তুষার: কি বলসি আমি তিথিরে?
রিক : তোর সাথে কথা নাই ৷ বাড়ি যা ৷
রিক চলে এলো ৷ তুষার কিছু বুঝতে পারলো না ৷ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চলে এলো ৷ ওদিকে মনোগ্রাম কিনে যেই সাবিত আর তৃণ বের হবে, ওই সময় ভেতরে ঢুকছিলো তিথি ৷
তিথি: ওই তৃণ, স্পোর্টস এর pic গুলা fb তে পাঠায় দিস ৷
তৃণ: কীসের pic?
তিথি: আরে তুই যে ইভেন্টের pic গুলা তুললি ৷
সাবিত: দোস্ত, তাড়াতাড়ি চল ৷ বাস মিস করবি ৷
তৃণ: আচ্ছা দেবনে ৷
তৃণ আর সাবিত হাটতে শুরু করলো ৷ তখন রিক ওদের দিকেই আসছিলো ৷ এদিক দিয়েই রিক বাসায় যায় ৷ হঠাৎ সাবিত দেখলো একটা বাস ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে ৷
সাবিত: দৌড় দে দোস্ত ৷
সাবিত আর তৃণ দৌড় দিলো ৷ দৌড়ানোর সময় রিক কে তৃণ "কী অবস্থা বললেও রিক কোনো পাত্তা দিলো না ৷ তাড়াতাড়ি যেয়ে বাসে উঠে সিটে বসলো ৷
সাবিত: যাক ৷ বাসটা মিস করি নাই ৷
তৃণ: রিকের কি হইসে রে?
সাবিত: আল্লাহই জানে ৷
তৃণ: দেখলাম মন খারাপ ৷
সাবিত: তাহের স্যার স্যার ব্যাগ নিয়া গেসিলো তো, হয়তো কিসু বলসে ৷
এদিকে তুষার বাসায় যাবার সময় তিথিকে মনোহরপুর থেকে বের হতে দেখে ডাক দিলো ৷
তিথি:(কাছে এসে) বল কী বলবি ৷
তুষার: কীরে তিথি, আমি তোকে কী বলসি রিক আমার ওপর রাগ করসে ৷
তিথি: কই? তুই আবার আমাকে কী বলতে যাবি?
তুষার: রিককে কে কি বলসিস তোরা ৷
তিথি: ওই তো আমাদের হাসি দেখে মজা করতেসেলো তাই আমরা ওকে মজা করে বলসিলাম তাতে তোর কী আর কিসু বলি নি তো ৷
তুষার: ও ৷ আচ্ছা ঠিক আছে ৷
তিথি: ও হ্যাঁ আশা বলসিলো "তুই নাকি বাঁশ খাইসিস"
তুষার: এই কথা বলসিস ক্যান ?
তিথি: আরে রিকের ব্যাগ তাহের স্যার নিয়ে গেলো না, আবার শুনলোও রিক সেকেন্ড বয় ৷ তাই মজা করতেসিলাম ৷
তুষারব: হুমম ৷ বুঝসি ৷
তিথি: কী বুঝসিস?
তুষার: না কিছু না ৷ বাসায় যা ৷
একমাস ছুটির পর স্কুল খুললো ১৮ ফেব্রুয়ারি ৷ অনেকদিন পর আবার সবাই একত্রিত হয়েছে ৷ প্রথমে হাসান স্যারের ক্লাস ছিলো ৷ ক্লাস শেষে স্যার চলে যায় ৷
তাজ: এ রাতুল ভাই, কচি করে বলতো, পরের ক্লাসটা কার ৷
রাতুল: রুবাইয়াত ম্যাডামের ৷
আসিফ: ইয়েস, গ্যাপ ক্লাস ৷
রাতুল: ক্যান?
আসিফ: ম্যাম ঢাকা গেসে ৷
তুষার ক্লাস সামলাচ্ছিলো ৷ হঠাৎ নুরুল ইসলাম স্যার এলো ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: এই, অনিক কই?
আরেফিন অনিক: এই যে স্যার ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: ক্লাস টেন এ যারা ফুটবল খেলবে ওদের নিয়ে মাঠে এসো ৷
আরেফিন অনিক: আচ্ছা স্যার ৷
নুরুল ইসলাম স্যার চলে গেলো ৷ অনিক ওর সাথে শাহরিয়ার সোহান, তাজ,রিদু, জীম,ইকবাল,আসিফ, পুষ্প, মাসুদ, শাওন, শাহীন আর জুপিটার শাখার যুবায়ের কে সাথে নিয়ে গেলো ৷ আদ্রিতা তখন প্রতীককে ডেকে সামিয়া কে নিয়ে বারান্দায় এলো ৷
প্রতীক: কী বলবা বলো ৷
আদ্রিতা: আচ্ছা তুমি ২১ শে ফেব্রুয়ারির নাটক করবা?
প্রতীক: হ্যা করবো ৷ কেনো?
আদ্রিতা: আমরাও নাম দেব ৷
প্রতীক: ভালো, তাপস স্যার ডাকলে চলে এসো ৷
আদ্রিতা: কী ধরণের নাটক হবে?
প্রতীক: আগেরবার তো "একুশের গল্প" নামের গল্প অবলম্বনে হইসিলো ৷ দেখা যাক, এবার কী হয় ৷
আদ্রিতা: আচ্ছা, যাও ৷
প্রতীক: ওরে আল্লাহ! খালি এই শোনার জন্য ক্লাসরুম থেকে বাইরে আনলা ৷
আদ্রিতা: আচ্ছা সরি ৷
প্রতীক: না, সরিতে কাজ হবে না, ট্রিট দিতে হবে ৷
আদ্রিতা: আচ্ছা যাও ৷ দেব ৷
প্রতীক: এই! মজা করলাম কিন্তু ৷ আবার সত্যি সত্যি আইনো না ৷
আদ্রিতা:(ইয়ার্কি করে) আরে, এটা আবার বলা লাগে, আনবো বললেই আনে নাকি সবাই ৷
প্রতীক:(অবাক হয়ে) অ্যাঁ !!!
ওদিকে অনিক সবাইকে নিয়ে মাঠে স্যারের কাছে গেল ৷ স্যার তখন রবিন হাউস টিমের ক্যাপ্টেন পরোখ ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলেন ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: তাহলে পরোখ, যেভাবে বললাম সেভাবে দেখো কাজ হয় কি না ৷
পরোখ ভাই: আচ্ছা স্যার, তাহলে আসি ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: আচ্ছা যাও ৷
তারপর পরোখ ভাই তার টিম সিলেকশনের জন্য গেলেন ৷
আরেফিন অনিক: স্যার এইযে ৷ এরা ক্লাস টেন ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: তোমরা ফুটবল খেলতে পারবা তো?
পুষ্প: স্যার আমার পায়ে একটু ব্যাথা আছে কিন্তু তাও আমি খেলবো ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: পায়ে ব্যাথা টা তো সমস্যা না, তোমার টিম কে জেতানোই আসল কথা ৷ তুমি যদি এই পা নিয়ে টিম জেতানোর জন্য খেলতে পারো, তাহলে সমস্যা নেই ৷ যাও তোমরা যে যার হাউজে যাও যেয়ে দেখো, সিলেক্ট হও কি না ৷
এরপর সবাই যে যার হাউজে গেল ৷ রিদু, জীম, ইকবাল, মাসুদ ছিলো মার্লিন হাউজ ৷ শাহীন, শাওন, অনিক ছিলো ঈগল হাউজ ৷ যুবায়ের, তাজ , পুষ্প ছিলো রবিন হাউজ আর সোহান একা ছিলো ফ্যালকন হাউজ ৷ সব হাউজের ক্যাপ্টেন ছিলেন কলেজের প্রথম বর্ষের ভাই রা ৷ রবিন হাউজে ছিলেন পরোখ ভাই, মার্লিন হাউজে নাঈম ভাই, ফ্যালকন হাউজে জামশেদ ভাই আর ঈগল হাউজে রোহিত ভাই ছিলেন ক্যাপ্টেন ৷ সিলেকশনে ইকবাল, শাহীন, যুবায়ের আর তাজ চান্স পায় না ৷ তাজ রাগ করে ক্লাসে চলে আসে ৷ তখন প্রতীকের সাথে দেখা ৷ সাথে আলভী এবং এশরারও ছিলো ৷
প্রতীক: কীরে তাজ, সিলেক্টেড হস নি?
তাজ: না রে কচি করে পারলাম না ৷ তুই কই যাস?
প্রতীক: নাটকের জন্য ৷ যাবি নাকি ?
তাজ: আলভিও কী নাটকে না কি?
আলভী: হ রে মামা ৷
তাজ: ওরে বাবা, সে এশরার তুইও নাটক করবি নাকি?
এশরার: হ্যা বন্ধু ৷ এরকম সুযোগ বারবার আসে না ৷
তাজ: এ প্রতীক, এখন কোন পিরিয়ড রে?
প্রতীক: ৫ম পিরিয়ড ১০ মিনিট আগেই শুরু হইলো ৷
তাজ: কার ক্লাস রে?
প্রতীক: বাংলা গ্যাপ ক্লাস ৷
তাজ: গ্যাপে কিডা আইসে?
প্রতীক: আমি আসার সময় তো কাউরে আসতে দেখি নাই ৷ মনে হয় আসে নাই ৷ কেন?
তাজ: সে আবার সাত্তার স্যারের HW করা লাগবে ৷
প্রতীক: শিট! আমি তো ভুলেই গেসি ৷ বাচছি যে আজকে নাটক ছিলো ৷
তাজ: তুই তো শালা ফাঁকিবাজ ৷ আচ্ছা যা দোস্ত ৷
প্রতীক: আচ্ছা যা ৷
ক্লাসে এলো তাজ ৷ গ্যাপে কেউ আসে নি ৷ সাকিব তখন সবার কাছে সাত্তার স্যারের HW খুঁজছিলো ৷
রিক : এ আরিফ, সাত্তার স্যারের HW করসিস?
আরিফ: আমার খাতা রাতুল নিসে ৷
রিক :(রাতুলকে) কতক্ষণ লাগবে তোর?
রাতুল:মাত্র শুরু করলাম ৷
আরিফের পাশে তুষার ছিলো ৷ তুষারের খাতা রিকের সামনে ধরে বলল,
আরিফ: এই যে তুষারের খাতা নিবি?
রিক :(হালকা রেগে) আমি যার তার খাতা নেই না ৷
বলেই রিক চলে গেলো ৷
আরিফ: কী হইসে রিকে র?
তুষার: জানি না ৷
বলেই উঠে স্কুলের বারান্দায় চলে এলো ৷ চিকন আশা তখন এদিকেই আশছিলো ৷
তুষার: এই আশা শোনো ৷
চিকন আশা: হ্যা ভাইয়া বলো ৷
চিকন আশা আবার সবার সাথে মজা করতো আবার ভাই বলে ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ করতো ৷
তুষার: তোমরা মনে হয় রিককে লাস্ট ক্লাসে ক্ষেপাই সিলা, তাই না?
চিকন আশা: ধুর, আমরা তো ওর সাথে ইয়ার্কি করতেসিলাম ৷
তুষার: কিন্তু তোমরা যে বিষয়টা নিয়ে ইয়ার্কি করসো রিক সেটা বুঝতে পারে নি ৷
চিকন আশা: মানে ৷
তুষার সব কথা চিকন আশাকে বুঝিয়ে বললো ৷
চিকন আশা: ওহহো! আচ্ছা আমি ওকে সব বলতিসি ৷
তুষার: না ৷ এভাবে বললে রিক বিশ্বাস করবে না ৷
চিকন আশা: তাহলে?
তুষার: আমি তোমাকে সব বলছি ৷ যেভাবে বলছি সেভাবে কাজ করবে ৷
তুষার চিকন আশাকে সব বলল ৷ এদিকে সিলেক্টেড যারা হয়েছে, তারা ইতিমধ্যে প্র্যাকটিসও শুরু করে দিয়েছে ৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পরোখ ভাই এর টিম অর্থাৎ রবিন হাউজে এখনও চারজন প্লেয়ার দরকার ৷ সোহান ফ্যালকন হাউজে টিকেছে এবং দুর্দান্ত প্র্যাকটিস করছে ৷
পরোখ ভাই:(মনে মনে) কি অস্থির প্লেয়ার ৷ আমার টিমে যদি এরকম প্লেয়ার থাকতো ৷
এদিকে ফ্যালকন হাউজের ক্যাপ্টেন জামশেদ ভাইয়ের কাছে এলো প্রথম বর্ষের আরেক ভাই, ড্যানি ভাই ৷
ড্যানি ভাই: এ জামশেদ আমারে টিমে নে ৷
জামশেদ ভাই: দোস্ত, টিমে তো ৪ জন এক্সট্রা সহ ১৬ জন নেয়া শেষ ৷
ড্যানি ভাই: কাউরে বাদ দে ৷
জামশেদ ভাই: কারে বাদ দিমু, সবাইতো আমাদের ফ্রেন্ড ৷ খালি একটা আছে ক্লাস টেন এ পড়ে ৷
ড্যানি ভাই: তাইলে ও রে বাদ দে ৷
জামশেদ ভাই: কিন্তু ও তো ম্যালা ভালো খেলে ৷
ড্যানি ভাই: গুল্লি মারি তোর ভালো খেলার ৷ ওরে বাদ দিয়া আমারে নে ৷
জামশেদ ভাই: (শাহরিয়ার সোহানকে) এ ছোট ভাই, এদিকে আসো ৷
শাহরিয়ার সোহান:(কাছে এসে) জি ভাই বলেন ৷
জামশেদ ভাই: তুমি খেইলো না ৷ যাও ক্লাসে যেয়ে ক্লাস করো ৷
শাহরিয়ার সোহান: কিন্তু ভাই আমি তো খারাপ খেলছি না ৷
ড্যানি ভাই: এ! বড়দের মুখে মুখে কথা বলিস কেন! যা ক্লাসে যা ৷
শাহরিয়ার সোহান আর কিছু না বলে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো ৷ এত ভালো খেলার পরেও ছেলেটাকে চলে যেতে দেখে ওর কাছে যায় পরোখ ভাই ৷
পরোখ ভাই: কী ব্যাপার, তুমি চলে যাচ্ছ কেনো? তুমি তো অনেক ভালোই খেলছো ৷
শাহরিয়ার সোহান: কি জানি ৷ জামশেদ ভাই কেনো যেন আমাকে বাদ দিয়ে দিলো ৷
পরোখ ভাই: আমাদের টিমে লোক পাচ্ছি না ৷ আমাদের টিমে খেলবা?
শাহরিয়ার সোহান: কিন্তু আমি তো রবিন হাউজের না ৷
পরোখ ভাই: সেটা কোনো ব্যাপার না ৷ খেলবে কি না বলো ৷
শাহরিয়ার সোহান: পরে যদি কেনো সমস্যা হয়?
পরোখ ভাই: কিছু হবে না ৷ তুমি আমাদের টিমে খেলো ৷
সোহান আর কিছু বলল না ৷ রবিন হাউজে প্র্যাকটিস শুরু করলো ৷ ওদিকে ক্লাসে রিকের কাছে যেয়ে তুষারের কথা মোতাবেক রিকের সাথে কথা বলল চিকন আশা ৷
চিকন আশা: কী খবর ভাইয়া? বাঁশ খাওয়ার পর কী হইলো?
রিক : প্লিজ আমার পার্সোনাল ব্যাপারে কথা বলবে না ৷
চিকন আশা: কই পার্সোনাল? তাহের স্যার তো সবার সামনেই তোমাকে বাঁশ দিলো ৷
রিক : তাহের স্যার?
চিকন আশা: হ্যাঁ, তাহের স্যার তোমার ব্যাগ নিয়ে যেয়ে বাঁশ দিলো না?
রিক : তোমরা সেদিন এর কথা বলতেসিলা?
চিকন আশা: হ্যাঁ, কেন?
রিক : তুষার তোমাদের কিছুই বলে নি?
চিকন আশা: কই , তুষার আবার কী বলবে?
রিক : ওহহো! আচ্ছা তুমি তুষার কে দেখসো?
চিকন আশা: হ্যাঁ ও লাইব্রেরিতে গেছে ৷
রিক আর কিছু বলল না ৷ চলে গেল লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে ৷
এদিকে ২১ শে ফেব্রুয়ারির নাটকের সবকিছু বুঝিয়ে দিলেদিলেন তাপস স্যার ৷ "মাগো ওরা বলে" কবিতা অবলম্বনে নাটক হবে ৷ ইংলিশ ভার্সনের নবম শ্রেণীর ছেলেমেয়েরাও নাটকে আছে ৷ এছাড়া কলেজের প্রথম বর্ষের দুজন আপুও আছে ৷ স্যার সবাইকে সব বুঝিয়ে দিলেন ৷
দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আদ্রিতা পেল জামেনার বান্ধবী ৷ জামেনা খোকার বোন ৷ সামিয়া হলো ভাষা আন্দোলনকারী ছাত্রী ৷ প্রতীক আর এশরার হলো পাকিস্তানি হানাদার আর আলভী ওদের লিডার ৷ নবম শ্রেণীর ইংলিশ ভার্সনের নাদিম হলো খোকা , রাইয়ান হলো ডাক পিয়ন, সাবাবা হলো জামেনা আর ওয়াইস, জিয়ন, ফারিহা নৌশিন হলো ভাষা আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রী ৷ কলেজের প্রথম বর্ষের আপুগুলোর মধ্যে রেহানা আপু হলো খোকার মা আর সেবতি আপু হলো জামেনার আরেক বান্ধবী ৷ এদের দিয়ে করা হবে নাটক ৷
নাদিম: ও আল্লাহ! শেষমেষ আমিই খোকা?
আলভী: আর আমরা রাজাকার!
এশরার: রাজাকার না, হানাদার ৷
আলভী: ওই হলো একটা ৷
তাপস স্যার: আচ্ছা, তাহলে রিহার্সেল শুরু করা যাক ৷
এদিকে তুষার লাইব্রেরীতে বসে আছে রিকের অপেক্ষায় ৷ লাইব্রেরীয়ান লুৎফুন্নেসা ম্যাম তখন প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে ৷ উঁকি দিয়ে দেখতে দেখতে যখনই দেখলো রিক আসছে, তাড়াতাড়ি করে বই নিয়ে পড়ার অভিনয় করা শুরু করলো ৷ রিক ভেতরে এসে তুষারের পাশে রাখা চেয়ারে বসে তুষারের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল,
রিক : দোস্ত, সরি দোস্ত ৷
তুষার: সরি কেন?
রিক : ওই যে তোর ওপর রাগ করসিলাম ৷
তুষার: ও , ব্যাপার না ৷ বন্ধুত্বের মাঝে মান-অভিমান হতেই পারে ৷
রিক : বল কী খাবি ৷ চল ক্যান্টিনে যাই ৷
তুষার: থাক ৷ কিসু খাওয়ানো লাগবো না ৷
রিক : আরে চল না ৷
তুষার: সত্যি?
রিক : হ সত্যি ৷
তুষার: লাল লাবিবের কাছ থেকে ২০ টাকা ধার নিয়া টিফিন খাইসিলাম ৷ টাকাটা ওরে দিয়া দিস ৷
বলেই দাঁত বের করে হেসে চলে গেল তুষার ৷ রিক কিছু না বলে মুখটা উল্টো U এর মতো করে বসেই থাকলো ৷
ঐদিন ক্লাস শেষ হয়ে যায় ৷
পরদিন ৩য় পিরিয়ডে সবাই আবার খেলতে নেমে যায় ৷ রবিন আর ফ্যালকন হাউজ নিজেদের মাঝে ছোট একটু সীমানায় জুতো দিয়ে গোলপোস্ট বানিয়ে Friendly football match খেলার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ খেলায় সোহানের দুর্দান্ত খেলা দেখে অবাক হয়ে যায় জামশেদ ভাই ৷ খেলা শেষে জামশেদ ভাই আসে পরোখ ভাইয়ের কাছে ৷
জামশেদ ভাই: এ পরোখ, এই পোলারে তুই নিসোস ক্যান?
পরোখ ভাই: তুই বাদ ক্যান এরে? পোলা তো ভালোই খেলে ৷
জামশেদ ভাই: আমার ইচ্ছা হইসে তাই আমি বাদ দিসি ৷ এতে তোর কী রে? তুই-ই তো নিয়ম ভেঙে ও কে তোর টিমে নিসোস ৷
পরোখ ভাই: নিয়ম ভেঙে মানে?
জামশেদ ভাই: ও আমাদের হাউজের পোলা, আর খেলতাসে তোদের হাউজে ৷
পরোখ ভাই: কোন নিয়মে লেখা আসে এক হাউজের ছেলে অন্য হাউজে খেলতে পারবে না?
ঠিক তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন নুরুল ইসলাম স্যার ৷ জামশেদ ভাই স্যার থামিয়ে বললেন,
জামশেদ ভাই: দেখেন স্যার, ফ্যালকন হাউসের হয়ে রবিনে খেলতেসে ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: কেন এমন করলে পরোখ?
পরোখ ভাই: স্যার টিমে লোক কম ৷ কাউকে পাচ্ছি না ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: তোমার টিমে তো কতজন কে দেখলাম খেলার জন্য এসেছিলো ৷
পরোখ ভাই : স্যার ওরা অত ভালো খেলে না ৷ ভাবসিলাম আরও ভালো প্লেয়ার পাবো ৷ কিন্তু এখন লোকই খুঁজে পাচ্ছি না ৷ তাই ও কে নিলাম ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: সেটা তুমি নিতেই পারো ৷ কিন্তু ও কে ফ্যালকন হাউজ থেকে কেন নিয়ে এসেছো?
পরোখ ভাই: আসলে স্যার……
শাহরিয়ার সোহান: আসলে স্যার আমি ওই টিমে সিলেক্টেড হবার পর ভালো খে লার পরও আমাকে জামশেদ ভাই বাদ দিয়ে দিসে ৷ এজন্য আমি এই টিমে এসেছি ৷
নুরুল ইসলাম স্যার: (আড় চোখে জামশেদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে) জামশেদ?? কথাটা কী সত্যি?
জামশেদ ভাই: ইয়ে… মানে… স্যার ও খেলুক ৷ কোনো সমস্যা নাই…… স্যার একটু কাজ আছে ৷ গেলাম স্যার ৷
বলেই জামশেদ ভাই তাড়াতাড়ি করে চলে গেল ৷
শাহরিয়ার সোহান: স্যার আমি খেলবো?
নুরুল ইসলাম স্যার: খেলো ৷ কিন্তু কাউকে বোলো না তুমি ফ্যালকন হাউজে ৷ নাহলে অন্যরা রাগ করতে পারে ৷
সোহান: আচ্ছা স্যার ৷
ওরা খেলা শুরু করলো ৷
এবারে ঈগল আর রবিন একটা Friendly ম্যাচ খেললো ৷ মাঝ পর্যায়ে অনিকের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিতে গিয়ে ব্যাথা পায় পুষ্প ৷ মাটিতে শুয়ে পা ধরে চিৎকার করতে লাগলো ৷ টিমের সবাই পুষ্প কাছে এলো ৷
পরোখ ভাই: পুষ্প, তুমি খুব ভালো খেলতে পারো ৷ তাই তোমার পায়ে ব্যাথা সত্ত্বেও তোমার অনুরোধে তোমাকে টিমে নিয়েছি ৷ সমস্যা হলে বলো এখনও সময় আছে ৷ তোমাকে নিতে গিয়ে আমি আমার টিমকে হারাতে চাই না ৷
পুষ্প: প্লিজ ভাইয়া, আমাকে বাদ দিয়েন না ৷ আমি ভালো খেলবো ৷ প্রমিজ করছি ৷
পরোখ ভাই: পারবে তো ৷
পুষ্প: পারতে তো আমাকে হবেই ৷
পরোখ ভাই: তোমাকে ভরসা করলাম ৷ যাও ক্লাসে যেয়ে একটু রেস্ট নাও ৷
পুষ্প উঠে দাঁড়ালো ৷
পুষ্প: না ভাইয়া আমি ক্লাসে যাবো না ৷
পরোখ ভাই: কেন?
পুষ্প: আমি এই পা নিয়েই প্র্যাকটিস করবো আর টিমকে জেতাবোই ৷
পরোখ ভাই পুষ্পর দিকে কিছুক্ষণ তাকালো ৷ তারপর কাঁধে হাত রেখে বললো
পরোখ ভাই: হুমম…৷ তোমাকে দিয়েই হবে ৷ যাও প্র্যাকটিসে যাও ৷
পুষ্প প্র্যাকটিসে গেলো ৷
ঐদিনও দেখতে দেখতে ক্লাস শেষ হয়ে গেলো ৷ পরদিন টিফিন পিড়িয়ডের কথা ৷ ফুটবল প্লেয়াররা চলে গেছে প্র্যাকটিসে ৷ লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্প করছিলো তুর্য আর অনঘ ৷
তুর্য: ফুটবল খেললি না ক্যান এবার?
অনঘ: আরে দোস্ত, কী যে বলি ৷ আমি এ কয়েকদিন স্কুলেই আসিই নি ৷ কখন যে নিয়েছে সবাইকে আমি জানিই না ৷
ফার্স্ট বেঞ্চে বসে আরিক তখন ব্যাগের আড়ালে টিফিন খাচ্ছিলো ৷ আর কেউ যোন টের না পায় তাই লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছিল ৷
তুষার: (আরিকের সামনে এসে) কী রে আরিক? কী খাস?
আরিক: (চমকে উঠে) ইয়ে……মানে……ব্যাগ……
তুষার: ও তোর ব্যাগ তুলবো ৷ আচ্ছা ৷
আরিক: না…মানে……মানে…ইয়ে……
বলতে বলতে ব্যাগ তুলল তুষার ৷ দেখলো নুডলস ৷
তুষার: কী রে? তুই নুডলস আনসোস আর আমাদের না দি দিয়া খাইতেসোস?
আরিক: (হেসে হেসে) না…মানে……
তুষার: (টিফিন বক্স টা হাতে নিয়ে) মানে এখন আমি খাবো ৷
চামচে নুডলস নিয়ে খাওয়া শুরু তুষারের ৷
আরিক: অ মামু, বেশি খাইস না ৷ আমি না খাইতে পারলে পেট ভরবে না ৷
তুষার : আমি আবার বেশি খাই না ৷ চিন্তা করিস না ৷
তুষার খেতে লাগলো আবার আরিকও চোখ বড় বড় করে দেখছিলো ৷ কিছুক্ষণ পর বক্সটা আরিকের হাতে দিলো ৷ আরিক দেখলো, তুষার বক্সটা নেবার সময় যতটুকু ছিলো, এখন তার অর্ধেক অবশিষ্ট আছে ৷
আরিক: শেষ না করার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ ৷
তুষার: কী? শেষ করতে হবে? আচ্ছা দে ৷ বক্স দে ৷
আরিক: না!……কিসু বলি নাই মামু
তুষার: আরে খা খা ৷
আরিক খেতে লাগলো ৷ এমন সময় তুষারকে ডাক দিয়ে তুষারের কাছে এলো প্রতীক ৷
প্রতীক: এই তুষার, রিককে না কি রুবাইয়াত ম্যাডাম বাঁশ দিসে?
তুষার: তুমি এসব কোত্থেকে জানলা?
প্রতীক: ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতেসিলো ৷ তখন শুনলাম ৷ কারণটাও কিন্তু সত্যি কি না তা জানি না ৷
তুষার: কাউ কে বল নি তো?
প্রতীক: বলসি ৷ আকাশ, তনয়, পিয়াল, তৃণ, বৈশাখী, কানিজ, ফারিহা………
তুষার : (প্রতীকের কথা শেষ না করেই হালকা রেগে ) তোরে যে থাবা দিয়ে কী করতে ইচ্ছা করে ৷
প্রতীক: ক্যান?
তুষার: ক্যান মানে? এইসব ছড়ায় বেড়ানোর মতো কথা? ও একটু অভিমানী তুমি জানো, তাও এসব ছড়ায় বেড়াচ্ছো কেন? ও আমাকে এই বিষয়ে ভুল বুঝে প্রায় একমাস আমার সাথে কথা বলে নি ৷ যদি জানতে পারে তুই ছড়াচ্ছিস তোর অবস্থা খারাপ করে ফেলবে ৷
প্রতীক: ধুর কিছুই করবে না ৷
তুষার: দেখিস, কী করে ৷ মনে নাই, একবার তোকে পুকুরে ফেলে দিতে যাচ্ছিলো ৷ একটা গাছ ছিলো বলে বেচে গেসিলি ৷
প্রতীক: ধুর ধুর ৷ সে কবেকার কথা ৷
তুষার: তবুও ৷ কাজটা কিন্তু ঠিক করোনি ৷
প্রতীক: আচ্ছা বাবা আর কাউকে বলবো না ৷ হ্যাপি?
তুষার: বাদ দে ৷
এপাশে দরজা দিয়ে একটা নীল খাতা হতে রুমে ঢুকলো বৈশাখী ৷ আরিনা তখন বসে বসে বাড়ির কাজ করছিলো ৷
বৈশাখী: উফ! আর ভালো লাগে না ৷
আরিনা: কেন? ওজন বাড়সে?
বৈশাখী: বদমাইশ কি যে সব বলিস না ৷
আরিনা: বাদ দে ৷
ঠিক তখন পাশ দিয়ে রিক যাচ্ছিলো ৷
আরিনা: এই রিক, বাড়ির কাজ করসো?
রিক: না করিনি ৷
বৈশাখী: এই তোমাকে না কি রুবাইয়াত ম্যাম খুব বকসে?
রিক:( চমকে গিয়ে) কে বলসে?
বৈশাখী: প্রতীক সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে ৷
রিক কিছু বললো না ৷ কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ৷
লাইব্রেরী থেকে ক্লাসে আসছিলো প্রতীক ৷ হঠাৎ রিক এসে প্রতীকের হাত ধরে নিয়ে গেল একটা ফাকা ক্লাসে ৷ রিক দরজাটা আটকে দিলো ৷
প্রতীক: কী রে, দরজা আটকালি কেন?
রিক কিছু বলল না ৷ ওর চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে ৷ রাগে মুখ কাঁপছে ৷
প্রতীক: কিরে! আমার ওপর রাগছিস কেন?
রিক কিছু বলে না ৷ শুধু এগোতে থাকে ৷ প্রতীকও পেছাতে থাকে ৷ এক সময় প্রতীকের পিঠ দেয়ালে আটকে যায় দেয়ালে ৷ যাবার জায়গা নেই ৷ একদম রুমের কোণায় এসে গেছে ৷ ভয়ে প্রতীকের পা কাঁপছে ৷ শরীর দিয়ে ঝরছে ঘাম ৷ রিক ধীরে ধীরে চলে এলো ৷ রিক প্রতীকের একদম কাছে চলে এসেছে ৷ রিক শার্টের হাতা গুটিয়ে নিলো ৷ এখনও মুখ কাঁপছে ৷ হঠাৎ রিক ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ৷ প্রতীক ভয়ে চোখ বন্ধ করলো ৷ ভাবলো, জীবনের শেষ মুহুর্তটা বোধ হয় চলে এসেছে ৷ আর হয়তো বেঁচে থাকা হবে না ৷